অণুগল্প: টিংপু, মংপু ও এক নববিবাহিত দম্পতি

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৫/২০০৮ - ৪:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গল্প এক:

টিংপুর মুক্তি চাই, টিংপুর মুক্তি চাই বলে শ্লোগান দিল একঝাক মৌমাছি। একটু দুরে মিহি সুতোয় বাঁধনে টিংপুর শরীর। সে বাঁধনকে আরো পেঁচিয়ে আরো বেশী শক্ত করছে বিকট চেহারার এক মাকড়শা। শিকারকে পুরো নিজের আয়ত্বে আনতে আর আর বেশী দেরী নেই তার।

টিংপুর মুক্তি চাই, টিংপুর মুক্তি চাই বলে আবার জোর শ্লোগান দিল মৌমাছির দল।

কিন্তু তাতে লাভ কিছুই হলোনা। বরং আরেকটু শক্ত হলো সুতোর বাঁধন। টিংপুর ছটফটানোও কমে গেল অনেকটা।

- এভাবে মরবে টিংপু? আমাদের কি কিছুই করার নেই? বলে চেঁচিয়ে উঠলো মংপু নামের এক কমবয়েসী মৌমাছি।
- আর কি করতে পারি আমরা? উত্তর দিল একজন।
- কেন? আমাদের তো হুল আছে। হুল ফুটিয়ে তো সবাই হারামজাদা মাকড়শাকে জব্দ করতে পারি। উত্তর দিল মংপু।
- আরে হাদারাম! মাকড়শার শরীরে যদি বিষ থাকে, তাহলে তো মরবোই। আমাদের হুল যদি তার শরীরে আটকে যায়, তাহলেও যে মরবো, তা ভেবেছিস একবার? বলে ধমক দিল আরেকজন।

টিংপুর মুক্তি চাই, টিংপুর মুক্তি চাই বলে অন্য মৌমাছিদের সাথে এবার আরো জোরে গলা মেললো মংপু।

গল্প দুই:

বোষ্টন থেকে লস এন্জেলস ওড়ার পথে হাইজ্যাক হলো এক উড়োজাহাজ। এগারোই সেপ্টেম্বরের মৃত্যজজ্ঞের সুচনা করে সন্ত্রাসীরা এভাবেই। আরো কিছু বিমান দখলে নিয়ে নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারের সাথে সংঘর্ষ বাঁধায়।

কিন্তু এর আগে সেদিনই বোষ্টন বিমান বন্দরে একটি ঘটনা ঘটে। কোন খবরের কাগজে, বা টেলিভিশন ইন্টারভিউতে সে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি।

এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি ‘লাস্ট মিনিট ফ্লাইটের’ এর খোঁজে বোষ্টন এয়ার পোর্টের কাউন্টারে। কথা বলছে সুঠাম শরীরে আটোসাটো পোষাক পরা এক সুন্দরী তরুনীর সাথে। তরুনীর মুখে মাপা পেশাদারী হাসি।

- দু:খিত লস এন্জেলস এর ফ্লাইট পুরো বোঝাই। একটি সিটও খালি নেই আর।
- প্লিজ, আরেকবার দেখুন না মিস! গতকালই বিয়ে করেছি আমরা। লস এন্জেলসএ হানিমুন করা অনেকদিনের শখ। এসময়ে টিকেটে পেতে ঝামেলা নেই শুনে, হোটেলও বুক করে ফেলেছি।
- সাধারণত: এসময়টায় বেশী যাত্রী থাকার কথাও না। শুধুমাত্র হলিউডের এই অনুষ্ঠানটির কারনেই। আজতো নয়ই, কাল বা পরশুরও কোন টিকেট নেই।
- আমাদেরই ফাটা কপাল!

বলে শুকনো ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিল নবদম্পতি। কিছুদুর এগিয়ে যেতেই পেছন থেকে ডাকলো কাউন্টারের সুন্দরী।

- হ্যালো, হ্যালো, শুনুন একবার!

ওরা দুজন ফিরে এলো আবার। কিছুটা আশায় দোদুল্যমান মন।

- এই মাত্র এক দম্পতি ফোন করলেন। কোন সমস্যার কারনে ফ্লাইট বাতিল করতে চান। তবে নিশ্চিত ভাবে জানাবেন ঘন্টাখানেক পর। আপনারা কি ততক্ষন অপেক্ষা করতে পারবেন।
- অবশ্যই!

আশায় বুক বেঁধে হয়ে জানালেন দু’জন। প্রায় চল্লিশ মিনিট অপেক্ষার পর ডাকা হলো ওদেরকে। অন্য দম্পতি তাদের ফ্লাইট বাতিল করছেন না, তা জানানো হলো।

- বলেছিলাম না, আমাদের ফাটা কপাল বিয়ে করার পরও জোড়া লাগার নয়!

বলে মুখ চুন করে আক্ষেপ করতে করতে বিদায় নিলেন ওরা।


মন্তব্য

জাহিদ হোসেন এর ছবি

দুই নম্বরেরটায় বেশী মজা পেয়েছি। ভাল কথা-টিংপু আর মংপুর কথা তো শুনলাম। কিন্তু রিংপু কে তাতো জানলাম না।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

তীরন্দাজ এর ছবি

মংপুই রিংপু হয়ে গিয়েছিল নাজের অসাবধানতায়। ধরিয়ে দেয়ার জন্যে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

জাহিদ হোসেন এর ছবি

এইবার ঠিক আছে। কিন্ত নাজ কে?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

তীরন্দাজ এর ছবি

নাজ কে, তাতো জানিনা! খুজেও পেলাম না কোথাও। প্রায় রাত একটা বাজে জার্মানীতে। ঘুমের ঘোরেই হচ্ছে এসব? জানিনা...।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

জাহিদ হোসেন এর ছবি

"মংপুই রিংপু হয়ে গিয়েছিল নাজের অসাবধানতায়।" লেখা দেখেই জিজ্ঞেস করলাম।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍চমত্কার। তবে দ্বিতীয় গল্পে প্রথম দুই প্যারার কোনও প্রয়োজন আছে বলে অন্তত আমার মনে হলো ন। বাদ দিয়ে দিলেই অণুগল্পের বাঁধনটি কি আরও আঁটোসাটো হয় না? শেষ বাক্যের ব্যাপারেও একই মতামত।

নিজে লিখতে না পারি, তবে সমালোচনা করায় উত্সাহের অন্ত নেই হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার সমালোচনা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিলাম। রাত সাড়ে বারোটা বসে বসে লেখা। চোখে ঘুম, পাশে জোরসে টিভি!

অনেক ধন্যবাদ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তারেক এর ছবি

দুটো অণুগল্পই খুব মজার।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দ্বিতীয় গল্প নিয়েঃ ফাটা কপালের দাম্পতিরা যে 'সেই' ফ্লাইটেরই যাত্রী হতে চেয়েছিলেন, তার কোনো প্রমাণ কি মিলেছে?

প্রথম গল্প নিয়েঃ "অনেক শক্তিশালী আর আননৌন উইক পয়েন্টের শত্রুদেরও কোথাও না কোথাও দূর্বল জায়গা আছে, আঘাতটা করতে হয় সেখানেই"- হাউজ অফ দ্য ডেড খেলতে গিয়ে শিখেছি এই কথাটা। হাউ এ্যাবাউট মাকড়শার চোখ! পরপর কয়েকটা বল্লা পুটুশ করে হুল ফুটিয়ে দিলেই হয়। কিংবা "টিংপুর মতো আজ-নয়তো-কাল" তার পাকানো দড়িতে ঝুলে পড়ার আগে ন্যুনতম এক সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকটা দল মাকড়শার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খোঁচা দিয়ে দেখতে পারে। সাফল্যের হার অনুযায়ী পরবর্তী এ্যাটাক!

কিন্তু যা দরকার তা হলো, টিম ওয়ার্ক। নিরাপদ দূরত্বে থেকে শ্লোগান দেওয়া বল্লারা বোধহয় এই জিনিষটার ধার খুবেকটা ধারে না। হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

তীরন্দাজ এর ছবি

- প্রমান মেলে নি। বীরবলের গল্পের কথাটি মনে আছে? দিল্লী শহরে কাকের সংখ্যা। ...... বিশ্বাস না হলে গুনে দেখুন!

- আপনার পজিটিভ চিন্তার শক্তি দেখে জোর পেলাম মনে। মৌমাছিদের সাথে দেখা করে জানিয়ে দেবো। কিন্তু ততক্ষনে হয়তো টিংপু.....। তবে সামনের টিংপুদের কথাও ভাবা দরকার!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শামীম এর ছবি

২য় অনুগল্পের প্রতিক্রিয়ায় অনু-স্মৃতিচারণ:

সময়টা ১৯৮৮ সালের দিকে সম্ভবত।

নরসিংদিতে সেজ চাচার বাসায় বেড়িয়ে ঢাকায় ফিরছিলাম আমি আর মেজচাচা। রিকশাওয়ালা সমেত আমরা ৩ জন তুমুল পিছু ডাক সত্ত্বেও ঢাকার বাসটা ১৫ সেকেন্ডের জন্য মিস করলাম। আফসোস করতে করতে পরের বাসটায় উঠলাম।

কে জানতো আর ঘন্টাখানেক পরেই রাস্তায় থামতে হবে পাশের খাদে উল্টে ডুবে থাকা ঐ বাসটির উপর বুকপানিতে দাঁড়িয়ে থাকা উদ্ধারকারীদের দড়ি দেয়ার জন্য।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

তারেক এর ছবি

খাইছে শামীম ভাই, দুইটা মুরগী সদকা দেন।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

১৯৯১-৯২।
বৃষ্টি ভেজা পথে একা একা আসছিলাম। পাশ থেকে হঠাৎ রাসেদ মামা বললো - 'ভাইগ্ন্যা, আসো - আমার সাইকেলের পেছনে ওঠো।' কী মনে করে উঠলাম না।
বাড়ী ফিরে দেখি মামা সাইকেলকে পুকুরে গোসল করাচ্ছে। কী হলো?
পিচ্ছিল পথে স্লিপ করে সাইকেলসহ তিনি রাস্তার পাশের খালে অন্তর্জলি যাত্রা।
আমি মনে মনে বললাম - 'আল্লা বাচাইছে' চোখ টিপি
________

তীরু'দার লেখায় (বিপ্লব)

তীরন্দাজ এর ছবি

একটু পরেই ফ্রাংকফুর্ট রওয়ানা হচ্ছি। শাহীন যে মুরগি রান্না করবে, তা আপনার নামে সদকা হিসেবে দিতে বলে দিয়েছি।

আমি ছোটবেলায় একবার আব্বার সাথে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে ফরিদপুর গিয়েছিলাম। ওটা পরদিনই একই সময়ের ফ্লাইটে ক্র্যাশ করে। সবাই (২১ জন) নিহত!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রায়হান আবীর এর ছবি

পড়লাম...ভালো লাগছে।
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

১৯৯৬-৯৭ সাল। আমার ছোট ভাইয়ের নানা সতর্কবানী সত্ত্বেও ঢাকা সদরঘাট থেকে যাত্রী-টইটুম্বর লঞ্চের ছাদে উঠে বাড়ি রওয়ানা হলাম। গন্তব্য বরগুনা। লঞ্চ বেতাগী পর্যন্ত পৌঁছে বিগড়ে গেলো। তারপর শুরু হলো নিয়তির খেল। আপনারা সবাই বাচতে পারলেও সেইবার আমার দুর্দশা চরমে উঠেছিলো। ৪ ঘন্টার লঞ্চের পথ ট্রলারে, নৌকায়, রিক্সায়, মোটরসাইকেলে, পায়ে হেটে, ঘাটে ঘাটে অপেক্ষা করতে করতে ১৮ ঘন্টা পরে বাড়ি পৌঁছলাম। রাত তখন ৪টা বাজে। পরদিন সকালে ঈদ। অমলিন স্মৃতি। মনেপড়ে গেলো। ধন্যবাদ তীরন্দাজ ভাই।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান

নজমুল আলবাব এর ছবি

দুটি গল্পই ভাল লেগেছে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লক্ষ্যভেদ করেছে দুটো গল্পই হাসি

শাহীন হাসান এর ছবি

ভাল-লাগলো ...।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

পরিবর্তনশীল এর ছবি

তীক্ষ্ণ!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।