পশুখামার (বারো), মূল: জর্জ অরওয়েল, অনুবাদ: তীরন্দাজ

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: শনি, ১৭/১১/২০১২ - ২:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শেষ পর্ব:
সময় পেরিয়ে যায়। সময়ের সাথে ঋতু আসে ঋতু যায়, সেই সাথে কাটে পশুদের স্বল্পকালীন জীবন। তুলসীপাতা, বেনজামিন, কাক মোসেস ও কয়েকটি শুয়োর বাদে বিপ্লবের সেই পুরনো দিনগুলোর কথা কেউ মনে করতে পারে না।

মুরিয়েল মারা গেছে। গ্লকেনব্লুমে, জেসি, খাবলাও মারা গেছে। জোনসও নেই আর। দেশের অন্য প্রান্তে কোনো এক শুঁড়িখানায় মৃত্যু হয় তার। তুষারবলকে ভুলে গেছে সবাই। যে কয়েকজন চিনত, তারা বাদে বক্সারের কথাও কেউ মনে করেনা আর। বয়েসের কারণে তুলসীপাতার শরীর ভারি, পায়ের গিটে বাত আর নীচের দিকে ঝুলে পড়া চোখ। অবসরের সময় পেরিয়ে আরও দুবছর বয়েস বেড়েছে তার। তবে আজ অবধি কোনো পশুই অবসরে যেতে পরে নি। বুড়ো পশুদের অবসরের জন্যে বড়ো মাঠে একটি আলাদা জায়গা করার পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে অনেক আগেই। নেপোলিয়ন এখন তিনশো কিলোগ্রাম ওজনের বিশাল এক শুয়োর। চাপাবাজ এমনই মোটা, যে চোখ খুলে তাকাতেও পারে না প্রায়। শুধুমাত্র বুড়ো বেনজামিন অনেকটা আগের মতোই, যদিও ঘাড়ের পাকা চুল আগের চাইতে কিছুটা বেড়েছে। বক্সারের মৃত্যুর পর থেকে তার মেজাজ আরও বেশী খিটমিটে, কথা বলে আগের চাইতে আরও কম।

খামারে এখন অনেক পশুর বাস, যদিও বৃদ্ধির হার আগের বছরগুলোতে যে রকম ভাবা হয়েছিল, তার চাইতে কম। নতুন প্রজন্মের কাছে পশু বিপ্লব মুখে প্রচলিত ধোঁয়াটে কোনো এক কাহিনী। যাদেরকে নতুন কিনে আনা হয়, তারা আগে সে কাহিনী কখনোই শোনেনি। তুলসীপাতা ছাড়াও খামারে আরও তিনটি ঘোড়া। তাদের প্রত্যেকেরই বিশাল শরীর, প্রত্যেকেই কর্মঠ ও বন্ধু হিসেবে চমৎকার, কিন্তু সবাই হদ্দ বোকা। এ পর্যন্ত তাদের কেউই “বি” অক্ষরটি পেরিয়ে আর কিছু শিখতে পারে নি। বিপ্লব ও পশুতন্ত্রের নীতি নিয়ে যা বলা হয় তাদের, বিশেষ করে তুলসীপাতা যদি বলে, অনায়াসে মেনে নেয় তারা। শিশুর মতো সরল অনুভূতি নিয়ে ওরা তুলসীপাতার কথা শোনে। কিন্তু সে কথা কতটা বুঝতে পারে, সে সন্দেহ প্রতিবারই থেকে যায়।

খামারের আর্থিক প্রতিপত্তি আগের চাইতে ভালো ও কাজকর্মের ধরণও উন্নত। পিলকিংটনের কাছ থেকে দুটো ক্ষেত কেনায় আরও বিস্তারিত খামারের পরিধি। বাতাসকলের কাজও সাফল্যের সাথে সমাপ্ত। আগাছা সাফ করার মেশিন, খড়ের গাদা জমানোর গাড়িও কেনা হয়। এসবের পাশাপাশি নতুন দুটো খামারবাড়িও তৈরি। উইমপার নিজেও একটা কুকুর টানা গাড়ি কেনে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে বাতাসকলের কোনো ব্যাবহার নেই। শস্য ভাঙ্গার কাজে এর ব্যাবহার খুব লাভজনক। বলা হয়েছিল, বাতাসকলের কাজ শেষ হবার পর ডায়নামো বসান হবে, পশুরাও হাড়ভাঙা খাটুনী খেটে শেষ করে কাজ। কিন্তু বিদ্যুতে আস্তাবল আলোকিত, গরম জল করা ও সপ্তাহে তিনদিন মাত্র কাজের যে স্বপ্ন তুষারবলের কাছে শেখে পশুরা, কাজ শেষে তার বাস্তবায়নের কথা মনে রাখে না কেউ। নেপোলিয়ন এসব স্বপ্ন পশুতন্ত্রের মূল নীতির পরিপন্থী বলে ফতোয়া দেয়। বলে, কঠিন পরিশ্রম আর সাধারণ জীবনযাপনেই সত্যিকারের আনন্দ।

কোনো না কোনো ভাবে খামারের সম্পদ বাড়লেও শুয়োর আর কুকুর বাদে অন্য পশুদের অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। হয়তো খামারে শুয়োর ও কুকুরদের সংখ্যাধিক্যই এর একটি কারণ। তারা যে কাজ না করে অলস সময় কাটায়, এ কথা বলা যায়না। নিজেদের ক্ষমতার সাথে মানাসই কাজই করে ওরা। খামারের প্রশাসনিক পরিচালনা ও দেখাশোনার কাজে সীমাহীন পরিশ্রম, একই কথার বারবার বলায় কোনো ক্লান্তি নেই চাপাবাজের। বলে, বাকী পশুরা বোকা বলেই এই কাজকর্মের বেশীরভাগই বুঝতে পারে না। উদাহরণ দেখিয়ে বলে চাপাবাজ, প্রতিদিনই শুয়োরদেরকে বিভিন্ন গোপন “দলিল”, “অভিযোগ-পত্র”, “প্রটোকল” ও “বিজ্ঞপ্তি” নিয়ে অসম্ভব খাটাখাটি করতে হয়। বড়ো বড়ো আকারের অসংখ্য কাগজ ছোট ছোট ঘন লাইন লিখে পূরণ করতে হয় ও শেষে সব চুলোতে পুড়িয়ে ফেলতে হয়। খামারের মঙ্গলের জন্যে এসব কাজের গুরুত্ব অপরিসীম, জানায় চাপাবাজ। তা স্বত্বেও এই কাজ করে শুয়োর ও কুকুর সরাসরি কোনো খাবার উৎপাদন করতে পারে না। অথচ তাদের সংখ্যা যেমন অনেক বেশী, খাবারের রুচিও বেশী।

বাকীদের জীবন আগে যেমন ছিল তেমনই রয়ে যায়। তারা আগের মতোই ক্ষুধার্ত থাকে, আগের মতোই খড়ের গাদায় ঘুমোয়, আগের মতোই হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটে মাঠে ও আগের মতোই শীতের সময় ঠাণ্ডায় ও গরমের সময় মাছির উপদ্রবে কষ্ট পায়। এদের ভেতরে যাদের বয়েস বেশি, তারা পুরনো দিনের স্মৃতি হাতড়ায়। খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, এখনকার তুলনায় বিপ্লবের মাধ্যমে জোনসকে তাড়ানোর পরবর্তী সময়টি ভালো ছিল না মন্দ ছিল। কিছুই মনে করতে পারে না তারা। চাপাবাজ কাগজে সংখ্যার পর সংখ্যা লিখে খামারের অবস্থা আগের চাইতে ভালো বলে প্রমাণ করাতে বদ্ধপরিকর। এই সংখ্যার চাতুরী ছাড়া তাদের এই মুহূর্তের জীবনের পাশাপাশি পাল্লায় মাপার মতো কিছুই খুঁজে পায় না পশুরা। এমনি এক ধাঁধার মুখোমুখি সবাই, যার কোনো সমাধান জানা নেই। তাছাড়া এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার সময়ও তাদের হাতে নেই। শুধুমাত্র বুড়ো বেনজামিনের বিশ্বাস, জীবনের যে কোনো মুহূর্তে সে কোনো সময়ের কথা মনে করতে পারে সে। সেই মতে, জীবন আগে কখনোই খুব বেশী ভালো ছিলনা, খুব মন্দও ছিলনা। এখনও খুব বেশী ভালো নয়, মন্দও নয়। ক্ষুধা, কষ্ট আর প্রবঞ্চনা জীবনেরই অপরিবর্তনশীল নিয়ম।

তারপরও কখনোই আশা ছাড়ে না পশুরা। পশুখামারের সদস্য হিসেবে তাদের যে সন্মান ও সৌভাগ্য, এই বিশ্বাসে মুহূর্তের জন্যেও কোনো চিড় ধরে না তাদের। এই পুরো এলাকায়, পুরো ইংল্যান্ডে তাদের খামারই একমাত্র খামার, যার মালিক পশুরা ও সে খামার পশুদের হাতেই পরিচালিত। তাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে নিজেদের সৌভাগ্যে অবাক না হয়। যার বয়েস সবচাইতে কম বা যে একেবারে নতুন এই খামারে, দশ-কুড়ি মাইল দূরের খামার থেকে কেনা হয়েছে মাত্র, সবার বেলায় এই একই কথা প্রযোজ্য। শুলির শব্দ শুনে বা স্তম্ভের ডগায় তাদের সবুজ পতাকা বাতাসে উড়তে দেখে অপরিসীম গর্বে ফুলে ওঠে ওদের বুক। তারপরও সমস্ত স্মৃতিধারা পুরনো দিনগুলো ঘিরেই প্রবাহিত, জোনসকে তাড়িয়ে দেয়া, সাতটি দফা দেয়ালে লেখা ও সেই দুটো যুদ্ধ, যেখানে দখলদার মানুষদের বিরুদ্ধে বিজয়ী পশুরা। পুরনো স্বপ্নের কোনোটাই বাদ দেয়া হয় না। এখনও “পশু রিপাবলিকের” প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস। মেজর যে স্বপ্নের কথা বলেছিল, একদিন ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো মানুষকে পা রাখতে দেয়া হবে না, তাদের সে স্বপ্ন এখনও অটুট। একদিন সে সময় আসবে, হয়তো খুব তাড়াতাড়ি নয়, এখন যারা আছে, তারা বেঁচে থাকতে হয়তো নয়, কিন্তু একদিন আসবেই সেই দিন। “ইংল্যান্ডের পশু” গানটিও মাঝে মাঝে এদিক সেদিক লুকিয়ে চুরিয়ে গুনগুন করা হয়। খামারের প্রতিটি পশুই এই গানটি জানে, যদিও প্রকাশ্যে গাওয়ার সে সাহস নেই কারো। হতে পরে, কঠিন তাদের জীবন ও তাদের আশা পরিপূর্ণ হয়নি। কিন্তু তারা যে সবার চাইতে আলাদা, এই বিশ্বাস এখনও অটুট।

তাদের বেঁচে থাকা, অত্যাচারী মানুষের জন্যে বেঁচে থাকা নয়, তাদের কঠিন পরিশ্রম শুধুমাত্র নিজেদের জন্যেই। তাদের ভেতর এমন কেউ নেই, যে দুপায়ে হাটে, এমন কেউ নেই, যাকে প্রভু বলে ডাকতে হয়। সব পশুরাই সমান!

কোনো এক গ্রীষ্মের শুরুতে ভেড়াদের একসাথে ডেকে নিজেকে অনুসরণ করার আদেশ দেয় চাপাবাজ। তাদেরকে নিয়ে খামারের অন্য প্রান্তে ওক গাছের আড়ালে ঢাকা একটি তৃণভূমিতে যায়। ভেড়ার দল চাপাবাজের তত্বাবধানে সারাদিন সেখানে থেকেই ঘাসপাতা খায়। বিকেলে চাপাবাজ খামারে ফিরে এলেও ভেড়াদেরকে গরম আবহাওয়ার অজুহাতে সারারাত সেই জায়গাতেই থাকতে বলে। বাকী পশুদের সাথে আলাদা হয়ে সবসুদ্ধ এক সপ্তাহ ওখানেই কাটায় ভেড়ারা। চাপাবাজও নিজেও বেশীরভাগ সময় ভেড়াদের সাথেই থাকে। কোনো বাঁধার মুখোমুখি না হয়ে একটি নতুন গান শেখার সে তাদেরকে।

ভেড়ার দল খামারে ফিরে এসেছে মাত্র। পশুরাও তাদের সারাদিনের কাজের শেষে আস্তাবলে ফেরার পথে। তখনই খামারের উঠোনে এক ঘোড়ার ভয়ার্ত উত্তেজিত চীৎকার শোনা যায়। থমকে দাঁড়ায় হতবাক পশুর দল। তুলসীপাতার গলার আওয়াজ না? আবার চেঁচিয়ে ওঠে সে। সবাই মিলে খামারের দিকে ছুটে উঠোনে ঢোকে। তুলসীপাতা যা দেখছে সে দৃশ্য চোখে পড়ে ওদের।

পেছনের দুপায়ে হাঁটছে এক শুয়োর!

হ্যাঁ, চাপাবাজই বটে! নিজের শরীরের বিশাল ওজন নিয়ে দুপায়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে সোজা রাখতে বেশ অনভ্যস্তই দেখায় তাকে। কিন্তু তারপরও শরীরের ভারসাম্য পুরো বজায় রেখে উঠোনে হেঁটে বেড়ায়। এক মুহূর্ত পরই একের পর এক শুয়োর খামারবাড়ি থেকে দুপায়ে হেঁটে হেঁটে বেরিয়ে আসতে থাকে। কেউ একজন আরেকজনের চাইতে ভালো হাঁটে। কেউ কেউ এতো বেশী টলতে শুরু করে যে, মনে হয় একটি লাঠিতে ভর রাখতে পারলেই বেশি সুবিধা পেত। কিন্তু তারপরও তাদের প্রত্যেকেই একবারও মাটিতে না লুটিয়ে পুরো উঠোনটি কমপক্ষে একবার হলেও ঘুরে আসতে সক্ষম হয়। অবশেষে জোর হাততালি ও সেই কালো জোয়ান মোরগের পরিত্রাহি চীৎকারের মাঝে বেরিয়ে আসে স্বয়ং নেপোলিয়ন। সোজা হয়ে রাজকীয় চালে দুপায়ে হেঁটে সবার দিকে গর্বের দৃষ্টিতে তাকায় সে। তাকে ঘিরে লাফায় তার পোষা কুকুরের দল।

তার সামনের পায়ে একটি চাবুক ধরা।

মৃত্যুর নীরবতা পশুদের মাঝে! অবাক, হতবাক পশুরা ভয়ে একে অন্যের গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে, কি ভাবে সারি সারি শুয়োর উঠোন পরিক্রম করে। মনে হয়, পশুদের মাথার উপর পৃথিবীটা উল্টে ফেলেছে কেউ। তাদের কয়েক বছরের অর্জিত অভ্যাস, যাই ঘটুক না কেন, কোনো প্রতিবাদ, সমালোচনা না করা। তারপরও একটি মুহূর্ত আসে, যখন অভ্যাস ভুলে প্রতিবাদে কিছু বলার জন্যে তৈরি হয় কেউ। ঠিক সেই মুহূর্তেই ভেড়ার দল যেন কোনো ইশারা পেয়েই বিকট ভাবে চেঁচিয়ে ওঠে, “চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা আরও বেশি ভালো! চারপেয়েরা ভালো, দুপেয়েরা আরও বেশি ভালো!”

বিরতিহীন পাঁচ মিনিট ধরে চলে ভেড়াদের এই চীৎকার। যখন থামে, প্রতিবাদের সমস্ত সুযোগ পুরো বন্ধ তখন। ততক্ষণে শুয়োরের দলও খামারবাড়ির ভেতরে অদৃশ্য।

বেনজামিনের কাঁধে নাক দিয়ে পেছন থেকে ছোটো ধাক্কা দেয় কেউ। সে পেছন ফিরে তুলসীপাতাকে দেখে।
তুলসীপাতা কোনো কথা না বলে ইশারায় আস্তাবলের পেছনের বড়ো দেয়ালের কাছে নিয়ে যায় তাকে। সেখানে সাতটি দফা লেখা। দুতিন মিনিট ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে সাদা রঙে লেখা পবিত্র দেয়ালটির দিকে তাকিয়ে থাকে দুজনে।

“চোখে ভালো দেখিনা আজকাল”, বলে তুলসীপাতা। “বয়েস কম ছিল যখন, তখনও পড়তে লেখাগুলো পারতাম না। কিন্তু তারপরও আমার কাছে একটু অন্যরকম লাগছে দেয়ালটি। সাতটি দফা কি আগের মতোই আছে বেনজামিন?”

এই প্রথমবারের মতো নিজের নিয়ম ভাঙতে তৈরি বেনজামিন। দেয়ালে যা লেখা, সেটি পড়ে শোনায় তুলসীপাতাকে। একটি মাত্র দফাই পরিবর্তিত। সেখানে লিখা,

“সব পশুরা সমান, কিন্তু কিছু কিছু পশু আর বেশী সমান”

তার পরদিনই যখন ক্ষেতের কাজ তত্বাবধানে শুয়োরেরা চাবুক পায়ে ধরে বেরোয়, অবাক হয় না কেউ। শুয়োরেরা যখন একটি রেডিও স্টেশন খোলার কথা জানায়, তাতেও অবাক হবার কিছু রইল না। টেলিফোন সংযোগেরও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়। “ডেইলি মিরর” সহ আরও কয়েকটি পত্রিকাও নিয়মিত আসা শুরু করে খামারে। পাইপ মুখে নেপোলিয়নকে খামারের বাগানে পায়চারী করতে দেখেও, সে দৃশ্য কারো কাছে অপরিচিত মনে হয় না আর। এমনকি যখন জোনসের আলমারি থেকে পোশাক বের করে গায়ে চড়ানো শুরু করে শুয়োরেরা, সেটিও বরাবরের মতোই স্বাভাবিকই মনে হল। নেপোলিয়ন পরে একটি কালো জ্যাকেট, হলদেটে ধুসর রঙের হাঁটু অবধি লম্বা প্যান্ট ও চামড়ার বুটজুতো। বাক্স থেকে জোনসের বউয়ের প্রতি রোববারের পোশাক, একটি ডোরাকাটা সিল্কের ফ্রক বের করে পরে বেড়ায় নেপোলিয়নের সবচাইতে প্রিয় মাদি শুয়োর।

এরই এক সপ্তাহ পরের বিকেলে বেশ কয়েকটি কুকুর টানা গাড়ী এসে খামারে ঢোকে। পরিদর্শনের জন্যে পাশাপাশি খামারের চাষিরা নিমন্ত্রিত অতিথি। ঘুরে ফিরে খামারের সবই দেখান হয় তাদের। দেখে বিস্ময়ে মুগ্ধ অতিথিরা। তবে বাতাসকল ওদেরকে সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ করে। বাকী পশুরা তখন গাজর ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত। দ্রুত কাজ করে যায় ওরা, মাটির উপর থেকে চোখ তোলে না বললেই চলে। শুয়োরদের, নাকি মানুষ জাতীয় অতিথিদের প্রতি বেশি ভয়, সেটি বোঝারও ক্ষমতা আর নেই ওদের।

সেই সন্ধ্যায় খামার বাড়ির ভেতর থেকে জোর হাসিঠাট্টা ও কথাবার্তার গুঞ্জন ভেসে আসে। এই গোলমাল কৌতূহলী করে তোলে পশুদের। কী চলছে ভেতরে, যখন মানুষ আর পশু একই কাতারে আজ? সবাই মিলে যতটা নিঃশব্দে সম্ভব, খামারবাড়ির বাগানে ঢোকে। দরজার কাছাকাছি এসে ইতস্তত করে পশুরা, অনেকেই আরও এগুতে ভয় পায়। কিন্তু তুলসীপাতা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সামনে। পায়ের আঙুলের ডগায় ভর করে খামারবাড়ির দিকে যায় সবাই। যে পশুরা আকারে যথেষ্ট বড়, ওত পাতে খাবারঘরের জানালার সামনে। ওদের সামনেই, লম্বা টেবিলটি ঘিরে আধ ডজন চাষি ও আধ ডজন প্রভাবশালী শুয়োর বসে। টেবিলের শেষ প্রান্তের সম্মানীয় আসনে বসে নেপোলিয়ন। শুয়োররা বেশ আরামেই বসেছে চেয়ারে! সবাই মিলে তাস খেলায় ব্যস্ত। কিন্তু কারো সন্মানে মদের গ্লাস ঢোকার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্যে খেলা বন্ধ করা হয়। একটি বড়ো মগ একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে যায়, নেই সাথে পরিপূর্ণ হয় বিয়ারের গ্লাস। বাইরের বিস্ময়ে অবিভুত পশুদের দিকে কারোরই নজর পড়েনা।

শেয়ালগড়ের পিলকিংটন বিয়ারের গ্লাস পূর্ণ করে হাতে তুলে ধরে। বলে, এক্ষুণি অভ্যাগতদের সন্মানে “চিয়ার্স” বলে গ্লাস ঠোকাঠুকির আহ্বান জানাবে সে। তবে তার আগে নিজের দায়িত্ব হিসেবে ছোটোখাটো বক্তব্য রাখতে চায়।

এই সম্মিলন তার নিজের ও উপস্থিত বাকীদের জন্যে অতীব আনন্দের। অনেকদিন যাবত যে অবিশ্বাস আর ভুল বোঝাবুঝি বিদ্যমান, তার অবসান হতে যাচ্ছে আজ। একটি খারাপ সময় ছিল, সে সময়ের কথা এখানে উপস্থিত কেউ না বললেও, সময়টি ছিল। সে সময়ে এই পশুখামারের সম্মানিত মালিককে তার মানুষ প্রতিবেশীরা শত্রুর দৃষ্টিতে না হলেও নিদেনপক্ষে অবিশ্বাসের চোখে অবশ্যই দেখত। এই ভুল বোঝাবুঝি ও পরস্পরবিরোধী চিন্তা দুঃখজনক। শুয়োরদের দখলকৃত ও প্রশাসিত একটি খামার যে কোনো কারণেই অস্বাভাবিক ও প্রতিবেশীদের মাঝে অশান্তি পাকানোর উৎস হিসেবে ধরা হতো। অনেক চাষিই কোনো রকম প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ছাড়াই ভেবে নিয়েছে, এই ধরণের এক খামারে বল্গাহীন ও নিয়মবহির্ভূত অনাচারই চলাই স্বাভাবিক। এর সম্ভাব্য প্রভাব তাদের খামারের পশুদের, এমনকি তাদের খামারে কর্মরত মানুষদের উপরও পড়তে পারে বলে ভয় ছিল তাদের। কিন্তু আজ আর তাদের সে ভয় থাকার কথা নয়। আজ সে আর তার সঙ্গীরা মিলে পশুখামারের প্রতিটি ইঞ্চির ইঞ্চি নিজের চোখে পরিদর্শন করেছে। শুধুমাত্র অত্যাধুনিকতার কারণেই নয়, পশু পালন ও সুশৃঙ্খলতার প্রশ্নেও এই খামার বাকী চাষিদের জন্যে একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। সে অপার বিশ্বাসে বলতে পারে, এই এলাকায় যত খামার আছে, তাদের মাঝে পশুখামারের ছোটজাতীয় পশুরা সবচাইতে কম খেয়ে সবচাইতে বেশী কাজ করে। তাদের খামারগুলোতেও খুব দ্রুত একই নিয়ম চালু করা দরকার। এই কথায় সে নিজে ও তার সাথে যারা এসেছে, সবার একই মত।

তার বক্তৃতার শেষ দিকে বলে পিলকিংটন, পশুখামার ও তার প্রতিবেশী খামার গুলোর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চায় সে। শুয়োর ও মানুষের মাঝে আগেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, আজ অবধি যাই ঘটুক কেন, সামনেও থাকার কথা নয়। তারা সবাই একই সমস্যা ও যুদ্ধে জড়িত। শ্রমিক সমস্যা নিয়ে কি সবখানেই একই যুদ্ধ চলে না? বক্তৃতার এই জায়গাতে এসে পিলকিংটন খুব সাবধানে অনেক আগেই তৈরি করে রাখা একটি কৌতুক বলতে চাইল। সেটি মনে করে নিজেরই এত হাসি পায় যে, বলতেও সমস্যা হয়। বার বার হাসির দমকে মুখমণ্ডল ও গলার রগে গোলাপি রঙ ধরে। তারপরও কোনোভাবে বলতে সক্ষম হল। “আপনাদেরকে নীচের শ্রেণীর পশুদের সাথে ঝগড়া করতে হয়! আর আমরা ঝগড়া করি আমাদের নীচের জাতের সাথে!” শুনে সবাই হেসে ওঠে জোরে। কম খাদ্যে বেশী কাজ আদায় করায় শুয়োরদের যে সাফল্য ও পশুখামারে সার্বিক শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে আবার অভিনন্দন জানায়।

অবশেষে উপস্থিত সবাইকে উঠে দাঁড়িয়ে বিয়ার ভর্তি মগের সদ্গতি করার জন্যে অনূরোধ জানায়। নিজের মগটি উপরে তুলে বলে, “আমি পশুখামারের আরও সমৃদ্ধি কামনা করি!”

উল্লাসিত কণ্ঠে “পশুখামার জিন্দাবাদ” বলে ও পা মেঝেতে ঢুকে অভিনন্দন জানায় সবাই। নেপোলিয়ন এতই আনন্দিত যে, নিজের জায়গা ছেড়ে টেবিল ঘুরে পিলকিংটনের সাথে মগ ঠোকাঠুকির জন্যে এগিয়ে আসে। তারপর খালি করে মগ।

সবার শুভকামনার উল্লাস শেষ হবার পর নিজের টেবিলে ফিরে আসে নেপোলিয়ন। সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করে।

প্রতিবারের মতো এবারেও নেপোলিয়নের বক্তৃতা এবারও সাজানো ও সংক্ষিপ্ত। সে নিজেও খুব আনন্দিত যে, পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটেছে আজ। অনেকদিন ধরেই নানা ধরণের গুজব রটে ও উদ্দেপ্রণোদিতভাবে ছড়ানোও হয়। সে ও তার সহকর্মীদের দৃঢ় বিশ্বাস, এসব গুজরের মুলে ছিল এক শত্রু, বিপ্লবের ধুয়ো ধরে সবার ক্ষতিই করাই যার একমাত্র উদ্দেশ্য। প্রতিবেশী খামারের পশুদের মাঝেও তথাকথিত এই বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সত্যের কাছ থেকে এসব গুজবের অবস্থান অনেক অনেক দূর! পাশাপাশি খামারগুলোর সাথে শান্তি ও স্বাভাবিক ব্যাবসায়িক সম্পর্ক রাখাই নেপোলিয়নের একমাত্র উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য আগেও ছিল, আজও অপরিবর্তিত। সে জানায়, এই খামারটি পরিচালনার যে সম্মানিত দায়িত্ব তার হাতে, সেটি একটি সমবায় সমিতি। যে দলিল তার দখলে, সে দলিল অনুযায়ী সমস্ত শুয়োর একসাথে এই খামারের মালিক।

আগের অবিশ্বাসের কিয়দংশ আজও টিকে থাকতে পারে বলে বিশ্বাস করে না সে। তারপরও পারস্পরিক বিশ্বাস যাতে আরও সুদৃঢ় হয়, সেজন্যে এই খামারের নিয়মকানুনে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই অবধি পশুখামারে পরস্পর পরস্পরকে “কমরেড” বলে ডাকার এক অর্থহীন নিয়ম ছিল। সে নিয়মটি আজ থেকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হল। অনেকদিন ধরেই অকারণে প্রচলিত ছিল আরেকটি নিয়ম। প্রতি রোববার সকালে বাগানের এক গাছে পেরেক বিদ্ধ এক শুয়োরমুন্ডুকে প্রদক্ষিণ করা। এই নিয়মটিও বাতিল করা হল। মুণ্ডুটিও মাটির নীচে পুঁতে ফেলা হয়েছে। খামার পরিদর্শনে জন্যে যারা আজ এখানে, তাদের চোখে নিশ্চয়ই সবুজ পতাকাটি চোখে পড়েছে। যদি পতাকাটি চোখে পড়ে থাকে, তাহলে এটিও চোখে পড়ার কথা যে, সবুজের মাঝে আঁকা সাদা ঘোড়ার ক্ষুর আর গরুর শিঙ নেই আর। এখন থেকে পতাকার রঙ নিরেট সবুজ।

মিঃ পিলকিংটনের প্রশংসনীয় ও প্রতিবেশী-সুলভ বক্তব্যের একটি মাত্র ভুলের সমালোচনা করে নেপোলিয়ন। মিঃ পিলকিংটন তার বক্তৃতায় বারবারই পশুখামারের কথা বলে এসেছেন। যেহেতু নেপোলিয়ন এই ঘোষণাটি এই প্রথম, তার জানারও কথা নয়। আজ থেকে এই খামারের নাম আর পশুখামার থাকছে না। আগের মতোই এটি “পুরুষ খামার” হিসেবে পরিচিত থাকবে। তার বিশ্বাস, এই নামটি সঠিক ইতিহাস বিচারে ন্যায়সঙ্গত।

নেপোলিয়ন এই বলে তার বক্তব্য শেষ করে। “উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গন! আমি আগের শুভকামনাই একটু পরিবর্তন করে প্রকাশ করছি। তার আগে আপনাদের পানপাত্র কানায় কানায় ভর্তি করে নিন। আসুন সবাই মিলে পুরুষ খামারের আরও সমৃদ্ধি কামনা করি!”

আগের মতোই জোর আওয়াজে শুভকামনার উল্লাস চলে। মদের মগও মুহূর্তেই খালি! কিন্তু ভেতরেই এই ঘটনা বাইরের পশুদের দৃষ্টিতে ক্রমশই অপরিচিত হয়ে ওঠে। শুয়োরদের চেহারায় এত পরিবর্তনের রহস্য কী? তুলসীপাতার বয়েসের ভারে ক্লান্ত, ঘোলাটে চোখের দৃষ্টি একজনের চেহারা ছেড়ে আরেকজনকে হাতড়ে বেড়ায়। কোনো কোনো শুয়োরের যেন পাঁচটি খুতনী, কারো চারটি বা কারো তিনটি। কিন্তু কী এক পরিবর্তনের প্রভাবে সবগুলো চেহারা মিলেমিশে একই রকম। হাততালি শেষ হবার পর তাসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভেতরের সবাই। পশুরা নীরবে ফেরার পথ ধরে।

বিশ কদমও যায়নি, যেন মাটিতে আটকে গেছে পা, সেভাবেই দাঁড়িয়ে পড়ে সবাই। খামারবাড়ি থেকে জোর চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে। দ্রুত ফিরে জানলায় চোখ রাখে পশুরা। প্রচণ্ড ঝগড়াঝাঁটি চলছে ভেতরে। জোর চেঁচামেচি, টেবিলে ঘুষি, তীব্র অবিশ্বাসের দৃষ্টিপাত আর বাকবিতন্ডার ঝড় বইছে সবার মাঝে। এই ঝগড়ার কারণটি স্পষ্ট। খেলায় একই সাথে ইসকাপনের টেক্কা বের করেছে নেপোলিয়ন ও পিলকিংটন।

বারোটি প্রাণীর ক্ষিপ্ত চেঁচামেচি ও একযোগে পরস্পরকে দোষারোপ! শুয়োরদের চেহারার পরিবর্তনটি ধরা গেল এবার! বাইরের পশুরা একবার শুয়োর থেকে মানুষ দেখে ও পরে মানুষ থেকে শুয়োর ও পরমুহূর্তেই দেখে আবার শুয়োর থেকে মানুষ। কিন্তু ততক্ষণে কে শুয়োর আর কে মানুষ, সেটি চেনার উপায় থাকে না আর।

নভেম্বর ১৯৪৩ – জানুয়ারি ১৯৪৪

পশুখামার (এক)
পশুখামার (দুই)
পশুখামার (তিন)
পশুখামার (চার)
পশুখামার (পাঁচ)
পশুখামার (ছয়)
পশুখামার (সাত)
পশুখামার (আট)
পশুখামার (নয়)
পশুখামার (দশ)


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শেষের দুই লাইল অসাধারণ
জুলফিকার আলি

কীর্তিনাশা এর ছবি

তীরু'দা, এই অনুবাদটা বই আকারে পড়ার আশা রাখি।

অনুবাদ চলুক দুরন্ত গতিতে !!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পুতুল এর ছবি

১ একই কথার বারবার বলায় কোনো ক্লান্তি নেই চাপাবাজের।
২ অথচ তাদের সংখ্যা যেমন অনেক বেশী, খাবারের রুচিও বেশী।
৩ শুলির শব্দ শুনে বা স্তম্ভের ডগায় তাদের সবুজ পতাকা বাতাসে উড়তে দেখে অপরিসীম গর্বে ফুলে ওঠে ওদের বুক। তারপরও সমস্ত
৪ চাপাবাজও নিজেও বেশীরভাগ সময় ভেড়াদের সাথেই থাকে।
৫ কোনো বাঁধার মুখোমুখি না হয়ে একটি নতুন গান শেখার সে তাদেরকে।
৬ কিন্তু কারো সন্মানে মদের গ্লাস ঢোকার উদ্দেশ্যে কিছুক্ষণের জন্যে খেলা বন্ধ করা হয়।
৭ নেই সাথে পরিপূর্ণ হয় বিয়ারের গ্লাস।
৮ এই ধরণের এক খামারে বল্গাহীন ও নিয়মবহির্ভূত অনাচারই চলাই স্বাভাবিক।
৯ আজ সে আর তার সঙ্গীরা মিলে পশুখামারের প্রতিটি ইঞ্চির ইঞ্চি নিজের চোখে পরিদর্শন করেছে।
১০ শুয়োর ও মানুষের মাঝে আগেও কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, আজ অবধি যাই ঘটুক কেন, সামনেও থাকার কথা নয়।
১১ কম খাদ্যে বেশী কাজ আদায় করায় শুয়োরদের যে সাফল্য ও পশুখামারে সার্বিক শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে আবার অভিনন্দন জানায়।
১২ প্রতিবারের মতো এবারেও নেপোলিয়নের বক্তৃতা এবারও সাজানো ও সংক্ষিপ্ত।
১৩ অনেকদিন ধরেই নানা ধরণের গুজব রটে ও উদ্দেপ্রণোদিতভাবে ছড়ানোও হয়।
১৪ যেহেতু নেপোলিয়ন এই ঘোষণাটি এই প্রথম, তার জানারও কথা নয়।
১৫ কিন্তু ভেতরেই এই ঘটনা বাইরের পশুদের দৃষ্টিতে ক্রমশই অপরিচিত হয়ে ওঠে।
১৬ তুলসীপাতার বয়েসের ভারে ক্লান্ত,

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

প্রচুর ভুলভ্রান্তি রয়েছে। মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। পরে ঠিক করে নেব।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

দীপ্ত এর ছবি

পুরোটাতেই সাথে ছিলাম। এতো বড় অনুবাদের পরিশ্রম এবং ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ। অনুবাদ পড়েও আরাম পেয়েছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।