কণাজগত ৫

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৬/১০/২০০৮ - ১১:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিরাকের এই সমুদ্র ব্যাপারটা বহুকাল লোকের কাছে খটকা হয়ে ছিলো। ঠাসাঠাসি ভর্তি হয়ে থাকা নেগেটিভ এনার্জীর এই ব্যাপারটা খুব বাস্তবসম্মত ঠেকে না, নিতান্ত কোনো উপায় না থাকায় তখন ডিরাক এই ব্যাখা দেন। কেউ কেউ প্রস্তাব দেন নেগেটিভ এনার্জী স্টেটের সলুশানগুলো আনফিজিকাল বলে বাতিল করা হোক। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যে কমপ্লিট সেট লাগে! তাই বাতিল সম্ভব না।
প্রথমদিকে কোয়ান্টাম-গবেষকদের কাছেও এই তত্ব ছিলো দু্র্বোধ্য, অনেককিছুই গ্রহনযোগ্য মনে হতো না। একটা কেমন আধা স্বপ্ন আধা বাস্তব ব্যাপার যেন! সেই সময়কার গবেষণাপরিবেশের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন এক গবেষক-সকলের এমন ঘোর উত্তেজিত অবস্থা যে নাকি নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হতো।
কিন্তু দিন বসে থাকে না, দিন চলে যায়। নবীন বিস্ময়ভরা চোখ সময়ের রোদেবানে সীজনড হয়ে যায়। এরপরে আবার লেগে গেলো লড়াই-বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। যুদ্ধের আগখানেই আবার অটোহান আবিষ্কার করে বসেছেন এক সাংঘাতিক জিনিস। চেইন রিয়্যাকশন। নিউট্রন দিয়ে টোক্কা দিয়ে ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস ভাঙতে গেলেই প্রায় সমান সমান দুইটা টুকরা হয়ে যায় আর তিনটা নিউট্রন ছিটকে বেরোয়,তারা আবার গিয়ে আরো তিনটা ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াস ভাঙে আর প্রত্যেকটা থেকে তিনটা করে নিউট্রন বেরোয়। ব্যাপারটা গুণোত্তর হারে চলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোটি কোটি নিউট্রন বেরিয়ে মারাত্মক বিস্ফোরণ।
আবিষ্কার করে তো তিনি মশগুল কিন্তু এই জিনিস যুদ্ধবাজ লোকের হাতে পড়লে কি হবে! "একেই নাচইন্যা বুড়ী/ তায় পড়সে ঢোলে বাড়ি।" লড়াই শুরুই হয়ে গেছে!
তারপরের কথা তো আজ ইতিহাস। মরুপাহাড়ের দেশে তৈরী হলো গোপণ প্রোজেক্ট-কেমন করে বিজ্ঞানীদের নিয়ে আসা হলো সেখানে, কেউ কেউ নিজেরাই পালিয়ে পালিয়ে গেলেন সেখানে। প্রোজেক্টের ভিত্তি এক দু্র্বোধ্য থিওরি, প্রেরণা ও তাড়না শত্রুর হাতে ধ্বংস হয়ে যাবার ভয় আর লক্ষ্য সেই ভয়ানক অস্ত্র যার মারত্মক বিস্ফোরণে জ্বলে যায় গোটা শহর বন্দর। ওই যে চেইন রিয়্যাকশনে যেমন হবার কথা।
হলোও তাই। মরুভূমিতে পরীক্ষা করে দেখেই শিউরে উঠলেন সবাই। মানুষের উপরে এর ব্যবহার একদম না যেন হয়, বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে এই আবেদন করা হলো। কিন্তু কেমনে কী! ঠিক সেটাই করা হলো!
আজ সেসব লিখিত ইতিহাস। মানুষের অপরিসীম মেধা, কঠিন পরিশ্রম আর অপরিসীম নির্বুদ্ধিতার ইতিহাস! কোনো অপার্থিব উন্নততর সভ্যতা যদি আমাদের পৃথিবীর সভ্যতাকে পর্যবেক্ষণে রাখে তাহলে ঐ সময়েই তারা আমাদের উপরে সব আশাভরসা হারিয়ে মনিটর করা ছেড়ে দিয়েছে কিনা কেজানে!
কিন্তু এইভাবেই আস্তে আস্তে গা-সহা হয়ে এলো সেই দু্র্বোধ্য কোয়ান্টামও। ওই প্রোজক্টেই ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান। যুদ্ধের পরে তিনি অধ্যাপনায় যোগ দেন।
পরবর্তীকালে তিনিই সেই ডিরাক সমুদ্র ধাঁধার সমাধান করেন।
তাদের ব্যাখা অনুযায়ী নেগেটিভ এনার্জীর দরকার নেই। সমীকরণটাকেই এমনভাবে লেখা হয় যাতে এর চারখানা আলাদা সমাধান আসে। দুইখানা সমাধান কণার জন্য(স্পিন আপ আর ডাউন), দুইখানা বিপরীত-কণার জন্য(স্পিন আপ আর ডাউন)। প্রত্যেকের এনার্জী পজিটিভ, কারুর নেগেটিভ না । তাহলে ওই মাইনাস সাইনটা?ওই যে বর্গমূল থেকে আসছিলো? তার কি হলো? সেটা অ্যাবসর্ভ করে নেওয়া হলো কণার ওয়েভ ফাংশনে। বিপরীত কণার তরঙ্গ-অপেক্ষকে ঢুকে গেলো সেটা। ব্যস। আর ডিরাক সমুদ্রের দরকার নেই! সেট কমপ্লিট হয়ে যাচ্ছে যুক্তিসিদ্ধ উপায়ে।
পরে এই ফেইনম্যান আর আরো কজনে মিলে আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন কোয়ান্টাম-ইলেকট্রোডায়নামিক্স যা আরো বহুকিছুর সঠিক সমাধান দেয়।
(চলবে)


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

একটার পর একটা ছাড়তে থাকেন। আরও তাড়াতাড়ি। নিয়মিত পড়ছি। দেরী হলে খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা আছে।
রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরই আমার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয় কণা পদার্থবিজ্ঞান। বুঝতেই পারছেন, এই লেখাগুলো থেকে কতটা উপকৃত হচ্ছি।

অনিকেত এর ছবি

একমত শিক্ষানবিসের সাথে।

আসতে থাকুক----

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

আপনারা যে আগ্রহ করে পড়ছেন,এই অনেক। সামান্য গল্পের মতন করে বলা, বলতে ইচ্ছা করে তাই বলি। এ জিনিস বেশী লিটারেলি নেবেন না। যেখানে অংক দরকার,সমীকরণ দরকার, প্লীজ বইয়ে দেখে ভেরিফাই করে নেবেন। কোথাও যদি ভুলভাল লিখে থাকি, ধরিয়ে দেবেন প্লীজ।
ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।