রোদ্দুর মহল

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ১৫/০৩/২০০৯ - ৬:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালের কোমল নীল আকাশ থেকে হাল্কা বাতাস বেয়ে টুসটুসে কমলাসোনালী আলোর দানা ঝরে পড়ে টুপটাপ। আমলকী গাছের ছায়ায় জংলাপ্রিন্টের শাড়ীর মতন রোদ্দুর, তুরতুর করে শিশিরভেজা আলোছায়ার উপর দিয়ে দৌড়ে যায় কাঠবিড়ালি, ভোমরা গভীর গুঞ্জন করে উড়ে বেড়ায় আমের বোলে বোলে, শীত ফুরিয়ে আবার এলো নতুন প্রাণের দিন।

এইসব দিনগুলোতে অনুরাধার মনকেমন করে, উনুন ধরাতে ধরাতে, আনাজ কুটতে কুটতে, রাঁধতে রাঁধতে মনে পড়ে কতদিন সেই তাড়াহুড়া নেই, তখন অভি আর ঝোরা স্কুলে যেতো, ওদের বাবা যেতো অফিসে-সকালগুলোয তখন অনুরাধার নি:শ্বাস ফেলার সময় থাকতো না। এদিক থেকে অভি-"মা, কোথায় রাখলে জুতো?" ওদিকে থেকে ঝোরা, "মা, সেফটিপিনগুলো রাখো কোথায়, দরকারের সময় কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না!" অনুরাধা তো একজন, দশজন তো না, কতদিক সামলাবে সে? তবু সে না গেলে কিছুই খুঁজে পেতো না কেউ, না ছেলেমেয়ে না তাদের বাবা-কেউ ই কিছু খুঁজে পেতো না। অনুরাধা তরকারির কড়াই আগুন থেকে নামিয়ে দৌড়ে গিয়ে খুঁজে দিয়ে ফিরে আসার সময় বলতো "দুই আঙুলের বেশী কেন দেখ না তোমরা?" কোথায় গেলো সেইসব দিন?

রান্নাঘরের জানালার বাইরে রোদ্দুরছায়ার খেলা চলতো এরকমই। মনকেমন করা বসন্তদিনগুলো এসেছে আর চলে গেছে, কাজের ভীড়ে ওদের দিকে চোখ পড়লেও মনে আসন দেবার সময় ছিলো না। সকলে ইস্কুলে আপিসে চলে গেলে আস্তে আস্তে বাড়ীটা শান্ত হয়ে আসতো। তবু ঘরদোর ধুয়েমুছে কাপড় কাচাকুচি সব করে স্নানটান সেরে উঠতে উঠতে বেলা হয়ে যেতো অনেক। পুজো দেওয়া সেরে দুপুরের খাওয়া খেতে খেতে আরো দেরি। চুল শুকাতে ছাদে গিয়ে চোখে পড়তো চারিদিকে গাছে গাছে নতুন পাতা, সজনের ফুল ছাদ থেকে হাত বাড়িয়েই পাড়তো সে, ঝোরা সজনেফুলের বড়া খেতে ভালোবাসতো, বিকালে সে ফিরলে ভেজে দিতো বেসন দিয়ে।

তার সব কিছু ভাবনা ছিলো সংসারকে ঘিরে-প্রিয়জনেদের ভালোলাগা না লাগা নিয়ে। নিজের মনের মধ্যে যে ফুলগুলো ফুটতো, মনের বাগানের মাটিতেই ঝরে গেছে তারা,কাব্যমালায় গাঁথা হয় নি তাদের। ঝোরা বা অভি বা তাদের বাবা-কেউ কি জানতো অনুরাধা ডাইরি লিখতো একসময়? কবিতাও কিছু সে লিখেছিলো বিয়ের আগে, মামারবাড়ী থেকে আনা সুটকেসের মধ্যে কাপড়ের রাশির নীচে রয়ে গেছে আজও তাদের হলদে হয়ে যাওয়া পাতা। কেউ কি কোনোদিন খুঁজে পাবে তাদের?

বুকের কাছের সন্তানেরা কত দূরে আজ! একজন দূর সাগরপাড়ে নিজের নতুন সংসার পেতেছে, অন্যজন হাজার মাইল দূরে পাহাড়ী শহরে চলে গেছে চাকরি নিয়ে। যাক, যাক, জীবনের প্রয়োজনে মানুষকে তো চলে যেতেই হয়, তাদের কেন আটকাতে চাওয়া? ওদের বাবা রিটায়ার করে অবসরজীবন যাপন করতে করতে পরিকল্পনা করছে একবার গ্রামে নিজেদের ভিটেমাটি যেখানে ছিলো দেখতে যাবে। অনুরাধা ও যাবে সাথে। কিন্তু তার কোনো স্পষ্ট স্মৃতি নেই, অতি শৈশবে সে পিতৃহীনা হয়, তখনই গ্রাম ছেড়ে মাদিদিমাদাদামশায়ের সংগে চলে এসেছিলো, গ্রামের স্মৃতি তার কাছে গতজন্মের মতন আবছা।

(চলবে কিনা কেজানে! )


মন্তব্য

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চমতকার !!
চারিদিকের পশুর মেলায় (!!) একমাত্র আপনিই আমার মত এখনো মানুষে আস্থা রাখছেন।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, শব্দশিল্পী।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

ফারুক হাসান এর ছবি

অবশ্যই চলবে। চলুক
খুবই মায়াকাড়া গদ্য। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি নামিয়ে ফেলুন, অসাধারণ লাগছিল পড়তে।
*********************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ রইলো ফারুক হাসান।
পরের পর্বের নিজের আসতে ইচ্ছা হইলে তবে তো! হাসি
মাঝে মাঝে হুট করে বন্ধ হয়ে যায় আসা। মন খারাপ
বহু আগে ইতিহাসবৃত্তের পর্বগুলো আসতেছিলো,একসময়ে নিজে থেকেই বন্ধ হইয়া গেলো। আর কাহিনী আগাইলো না। অথচ শুরু করার সময় পরিষ্কার একটা বিরাট মহাকাহিনী মনে মনে আঁকা ছিলো। কোথায় যে গেলো! চিন্তিত
ভালো থাকবেন, মায়াকাড়া গদ্য কথাটা শুনে ভারী খুশী লাগলো। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

রানা মেহের এর ছবি

অবশ্যই চলবে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ রানা মেহের।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুলিরেখা এর ছবি

আপনের দাঁতগুলি ইনসিওর করা তো? দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।