সময়ের উজানে

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: শনি, ০৪/০৪/২০০৯ - ৪:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাঠকক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম,বারান্দা থেকে সঙ্গে সঙ্গে অয়স্কান্ত উঠে এসেছে৷সে কিছুতেই আমাদের সঙ্গছাড়া হবে না৷ কিজানি, সেইভাবেই হয়তো প্রফেসর ওঁকে প্রোগ্রাম করে দিয়েছেন, আমায় তো সব খুলে কন নি আর৷

অপূর্ব দিনাবসান, পশ্চিমে মেঘগুলি রঙের মায়ায় ভরে দিয়েছে আকাশ মাটি গাছপালা সবই৷ বহুদিন আগের একটি এমনি আবীর মাখা শরত্সন্ধ্যা মনে পড়লো, সেইখানে মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছিলো, মাঝের সুরকী বেছানো পথটা দিয়ে বাড়ী ফিরছিলো কত ক্লান্ত লোক, সবাই ঐ রঙে নেয়ে উঠে কেমন অপার্থিব হয়ে গেছিলো!

বাইরে এসে উপরের দিকে তাকালাম, এত মধুর নরম বাতাসের ছোঁয়া আগে কোথাও পেয়েছি কি? কেন সমুদ্রের কথা মনে হয়? কেন সেই কবির নৌকাযাত্রা মনে পড়ে? মনের মধ্যে গুণ্‌গুণ করে,"আঁধার রজনী আসিবে এখনি মেলিয়া পাখা/সন্ধ্যা আকাশে স্বর্ণ-আলোক পড়িবে ঢাকা "

হয়তো আমারই স্বপ্ন সব, হয়তো এই অতীতও এখুনি এখুনি তৈরী হওয়া অতীত! হয়তো আমাদের স্মৃতিও আসলে কেউ কপি করে দিয়েছে৷ আমি ভাবছি আমার স্মৃতি, সত্যি কি তাই? আমি ভাবছি সময়ভ্রমণ, কয়েক সহস্র বত্সর পিছনবাগে চলে এসেছি, সত্যি কি? যদি সময়ভ্রমণের মেশিন সত্যিও হয়, তবু আমার বর্তমানবিন্দু থেকে পিছিয়ে অজস্র সম্ভাবনার কোন্ বিন্দুতে এসেছি? প্রত্যেক ঘটনার কত কত কপি ছিলো? সত্যিকারের সত্য কি তা কে জানে!

বড্ড ক্লান্ত লাগলো, কেমন অদ্ভুত্ অবসাদ! যেন দু'হাতের মধ্যে ধরে দেখতে চাইছি আলোর স্রোতকে, সে অনায়াসে হাত ভেদ করে চলে যাচ্ছে৷ বাচকণবী আমার হাত ধরে সন্ধ্যারতির স্থানটির দিকে নিয়ে যেতে যেতে কোমল গলায় বললেন, "ঋ, আমি তো এইসব যন্তর পরে সন্ধ্যারতিতে অংশ নিতে পারবো না, কিন্তু তাহলে কিভাবে তুমি বুঝবে মন্ত্রে কি গাওয়া হচ্ছে?"

আমি ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,"আমিও খুলে ফেলছি, কিছু দরকার নেই ট্রানফর্মেশানের৷ ধ্বনিগুলো শুনতে পেলেই হবে,অর্থের দরকার নেই দেবী৷ আমি সুর শুনতে পেলেই ধন্য হবো৷" বলতে বলতে খুলে ফেললাম কানের যন্ত্র, উনিও খুলে আমার হাতে দিলেন, অয়স্কান্ত ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো, আমি ওর দিকে ক্লান্তভাবে চোখ ফেরালাম,বললাম,"অয়স, ব্যস্ত হয়ো না, শান্ত হও৷ আমি জানি তুমি ভাবছো আমার অসুবিধে হবে, কিন্তু আমার অসুবিধে হবে না৷"

অয়স্কান্ত চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, সন্ধ্যারতির স্থানের জ্বলে জ্বলে ওঠা প্রদীপশিখার আলো ওর ধাতব চোখের মণিতে কেমন তরল মায়া তৈরী করেছে, আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম৷

সন্ধ্যারতির বর্ণনা করতে পারবো না, আমি এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখ কান ইত্যাদি সংবেদনযন্ত্রগুলো দিয়ে ঐ বিপুল ব্যপ্ত প্রার্থনার অতি সামাণ্যই ধরতে পেরেছিলাম৷ সেইটুকু অনুভবও বর্ণনা করতে পারি সে ভাষার জোর নেই৷ শুধু মাঝে মাঝে মনে পড়ছিলো," জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার ওগো রয়েছ দাঁড়ায়ে ... নীরব নিশি তব চরণ নিছায়ে/ আঁধার কেশভার দিয়েছে বিছায়ে ... "

অদ্ভুত আশ্চর্য সুরেলা মন্ত্রে ওঁরা প্রার্থনাগান গাইছিলো, বাতাসের সঙ্গে আকাশের সঙ্গে মিশে মিশে যাচ্ছিলো সেই শব্দ সুর ও ছন্দ তাললয় ... আমার বিভ্রম হচ্ছিলো, মনে হলও ঐ শত শত প্রদীপশিখাও যেন গান গাইছে, আলোর ভাষায়, দীপ্তির সুরে ... মনে হলো একটি একটি করে ঐ যে গগণে তারাগুলি ফুটে উঠছে, তাও এই সুরের সঙ্গে সাড়া দিয়ে দিয়ে৷ " আকাশ জুড়ে শুনিনু ঐ বাজে / তোমারি নাম সকল তারার মাঝে .. "

সন্ধ্যারতির শেষে আকাশ ভরে ফুটে ওঠা হাজার হাজার তারার নীচে অত্যন্ত আবিষ্ট চিত্তে ঘুমন্ত ঘাসেদের উপরে বসে পড়লাম আস্তে আস্তে৷অয়স্কান্তও বসে পড়লো কাছেই৷ কী অপূর্ব হাওয়া আসছে কোথা থেকে! টলটলে জলের মধ্যে ছায়ার কাঁপুনির মতন উজল তারাগুলো বাতাসের মধ্যে কাঁপছে,"সাগর থেকে ফেরা" মনে পড়ছে, "হাওয়া বহে শনশন তারারা কাঁপে/হদৃয়ে কী জং ধরা পুরানো খাপে? ... "

অত হাজার বছর আগে কনস্টেলেশানগুলি একটু একটু অন্যরকম ছিলো,তাও চেনা চেনাই লাগে৷ আস্তে আস্তে সন্ধ্যা আরো গাঢ় হলে ছায়াপথ ফুটে উঠলো, হাল্কা শুভ্র ওড়নার মতন উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে গেছে৷ এত স্পষ্ট এত অনাবিল এত কোমল দীপ্তিতে উদ্ভাসিত কখনো দেখিনি আমার সময়ে, সেখানে বায়ুদূষন আলোক দূষন সবসময়েই ঢেকে রেখেছে ওর জ্যোতির্ময় দুর্দর্শরূপ৷ স্পেস টেলিস্কোপ থেকে যে ছবি আসতো তা অবশ্য হাই কোয়ালিটির, কিন্তু সেতো সরাসরি দেখা না, ইমেজ দেখা!

বাচকণবী এসে হাত বাড়িয়ে মাইক্রোফোন হেডফোন চাইলেন,আবার আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য৷ আমি স্বয়ংচালিত যন্ত্রের মতন হাত বাড়িয়ে ওসব ওঁকে দিলাম, নিজেরগুলো পরে নিলাম৷ ছায়াপথের ওড়নাওড়া আকাশের নীচে কোমল রাত্রিবাতাসে ভিজে যেতে যেতে আমি বাচক্ণবীকে বললাম,"দেবী, ঐ যে ছায়াপথ,এখনো আমরা ছায়াপথই বলি, আমরা এখন জানি ও ছায়াপথ হলো হাজার হাজার কোটি তারার সমাহার, ওর কেন্দ্রে,ঐ যে ঐদিকে ওর কেন্দ্র" আমি ধনুরাশির দিকে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে বলি," আমাদের জ্ঞানীরা বলেন ওর কেন্দ্রে আছে আমাদের সূর্যের চেয়ে শতকোটিগুণ বেশী ম্যাস এর কৃষ্ণগহ্বর৷ সেসব নিয়ে অনেক অনেক গবেষণা চলছে৷ কিন্তু একদিন নতুন মানুষেরা এসে হয়তো আবার অন্যরকম বলবে৷ আমরা, আমাদের জানা ও অজানা আমাদের ধ্যান ও ধারণা সব বন্দী হয়ে আছে আমাদের নিজের নিজের যুগে৷ কালেকটিভভাবে দেখলেও আমরা সকলেই কালবন্দী৷ আপনি বলুন দেবী, আপনারা ঐ ছায়াপথকে কি মনে করেন? আমরা গল্প শুনেছি নচিকেতার, শুনেছি দেবযান পথ, সেই পথের কথা বলুন দেবী৷"

উনি ওঁর সুরেলা মনোরম গলায় মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়ে বলতে থাকেন দেবযানপথের কথা, সেই আদিত্য-উপাসনা, সেই প্রজ্ঞাময় সূর্য, সেই দিবারাত্রিচক্র ভেদ করে চলে যাওয়া-যখন দিবারাত্রির মালা ঘুরে যেতে থাকে চোখের সামনে ... দ্যাবাপৃথিবীর কথা, নীলকান্তমণির মতন যে পৃথিবী অন্ধকার মহাকাশের বুকে দুলছে ... ঘাসের উপরে চিত্ হয়ে শুয়ে পড়ে ছায়াপথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শুনতে থাকি৷ শনশন করে রাত্রি বয়ে যায়৷

অয়স্কান্তের গলার মধ্যে আলো জ্বলে ওঠে, দপদপ করে প্রথমে উজল সবুজ, তারপরে বাদামী৷ প্রফেসর কথা বলতে চাইছেন আইটিসিএম এর মাধ্যমে৷ উঠতে ইচ্ছে করে না, এই মন্ত্রমুগ্ধ নক্ষত্ররাত্রি ছিঁড়ে যন্ত্রের মধ্যে যেতে ইচ্ছে করে না, হেডফোন মাইক্রোফোনও বিরক্তিকর লাগে, তবু আমি উঠে বসি,"সামান্যক্ষণ ক্ষমা করুন দেবী, আমায় যিনি সময়ভ্রমণে পাঠিয়েছেন, তিনি কথা বলতে চাইছেন৷"

বাচকণবী চুপ করে গেছিলেন আগেই, এখন কৌতূহল-স্ফুরিতমুখে চেয়ে আছেন৷ অয়স্কান্ত এগিয়ে এসেছিলো,ওর গলার ছোট্টো খুপরি খুলে বার করে আনি ইন্টার টেম্পোরাল কন্ট্যাক্ট মেশিন,মুখের কাছে এনে বলি,"হ্যালো৷"

প্রফেসরের গলা শোনা গেলো-"ঋ?"

"হ্যাঁ তো,নইলে কে হবে?"

--"ক্লান্ত নাকি? গলাটা কেমন শোনাচ্ছে যেন!"

"আপনি গলা শুনে ক্লান্তি বুঝতে পারেন নাকি? বড়ো অসময়ে ফোন করলেন আজ৷এখন আমি গর্গের আশ্রমে, বাচকনবীর কাছে দেবযানপথের কথা শুনছি৷"

---"তাই নাকি? কেমন দেখছো সব?”

" খুব ভালো,আজকে সকাল থেকে সারাদিন আমি আর অয়স্কান্ত এখানে৷আপনার চিন্তা নেই,অয়স্কান্তকে খুব ভালো প্রোগ্রাম করেছেন, ও কিছুতেই আমার থেকে মিটার দুয়েকের বেশী দূরে যায় না৷ ”

--কি হলো ঋ, রাগ করেছ নাকি? তুমি তো এক্সপেরিমেন্টের নিয়ম সব জানোই, তবে কেন ভুল বুঝছো?

"নাহ, রাগ না,এমনি৷ এখন নিজে এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে এসে পড়ে মনে হচ্ছে সব অর্থহীন৷ কোনো মানেই হয় না এইসবের৷”

---"কী সর্বনাশ! তোমার কি হয়েছে ঋ ?”

"কি আবার হবে? কিছুই হয় নি৷"--আমি আশ্বস্ত করি প্রফেসরকে, কিন্তু কিছুতেই গলার স্বরে রিল্যাক্সড ভাব আসে না অনেক চেষ্টা সত্বেও৷
উনি বলেন,"ঋ, কখন ফিরে আসবে? আমি সত্যি সত্যি উদ্বিগ্ব৷"

সত্যিই ওঁর গলায় অন্যরকম মোচড়৷ আমি এবারে হাসলাম, বললাম,"আচ্ছা প্রফেসর, যদি আর নাই ফিরি আমি আর অয়স্কান্ত, তাহলে কি হবে? সত্যি কি পাল্টে যাবে আমাদের বর্তমান, যেখানে আমি আপনি টাইম-মেশিন কিছুই নেই?"

"ঋ!!!! কিসব বলছো! সত্যি ব্যাপার সিরিয়াস মনে হচ্ছে, তোমাদের ফিরে আসা প্রয়োজন যত দ্রুত সম্ভব৷"

আমি ওঁর উদ্বেগস্বর উপভোগ করে বললাম,"মাফ করুন প্রফেসর, আমি এমনি ঠাট্টা করছিলাম, এখান থেকে আগামীকাল আমরা ফিরে যাবো সকালে যখন দৈবরাতি আমাদের নিতে আসবেন৷ ফিরে গিয়েই ওখানে আরেকদিন থেকে আমরা রওনা দেবো ফিরতি কালের পথে৷ এবারে ঠিক আছে তো, প্রফেসর?"

উনি ক্ষীণ গলায় বললেন,"ঠিক আছে, তাই এসো৷"

আমি আইটিসিএমের সুইচ অফ করে অয়সের গলার খুপরিতে ঢুকিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে দিলাম৷

তারপরে বাচক্ণবীর দিকে ফিরে আস্তে আস্তে বললাম,"হ্যা ঁদেবী, আপনি যে বলছিলেন দেবযানপথের সেই আলোর কথা, ঐ আলো হদৃয়ে লুকিয়ে থাকা পরম আলো, অনাবিল দীপ্তি, সেইকথা আবার বলুন৷"

উনি চুপ করে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন খানিকক্ষণ৷ তারপর বললেন," তুমি কিছুক্ষণ আগে বললে না যে মানুষেরা সম্মিলিত ভাবেও কালবন্দী, তা কিন্তু ঠিক নয়৷ কালের গন্ডী পার হয়ে যেতে পারে মানুষ, না কোনো যন্ত্রে না, অন্যভাবে৷"

আমি বিস্ময়বিশাল চোখ ওঁর চোখের উপরে মেলে বললাম,"কিভাবে? কিভাবে?"

কোমল হেসে মিঠে গলায় উনি বললেন,"তুমি কোন্‌টা শুনবে ? দেবযান পথের কথা নাকি কালের গন্ডী পেরিয়ে যাবার কথা?"

আমি চুপ করে ওঁর মুখের দিকে চেয়ে রইলাম, কথা বলতে পারছি না,এই নক্ষত্রবিভাময় অন্ধকারের মধ্যে বসে বসে সব কেমন অলীক লাগছে৷ আমি ওঁর হাতের উপরে নত হয়ে কপাল ঠেকিয়ে বললাম,"যেটা আপনার ইচ্ছে দেবী, যেটা আপনার ইচ্ছে৷"

আমি শুয়ে পড়লাম ফের ঘাসের উপরে, কোথা থেকে রাত্রে ফোটা ফুলের মিষ্টি গন্ধ আসছে৷ কি ফুল? শিউলি কি?

আকাশভরা ছায়াপথকে মনে হয় সত্যিই কোনো শ্বেতাভ পথ, দূ উউ রে কোথায় চলে গেছে ঐ আকাশের ঘন গভীর মগ্ন বুকের মধ্য দিয়ে আরো আরো আরো গভীরতায়৷ আকাশের গভীরতা পৃথিবী থেকে বোঝা যায় না, ঐ যে উজল বা ক্ষীণ আভার তারাগুলো-সব কেউ হয়তো কাছে, কেউ দূরে, কিন্তু এখান থেকে মনে হয় সবাই আকাশের ঔ উলটানো বাটির ভেতরের গায়ে আটকানো৷

বাচকণবী মধুর স্বরে বলে যাচ্ছেন তাঁদের সঞ্চিত জ্ঞান ধ্যান ও ধারণার কথা, কখনো গানের মতন লাগে কখনো মন্ত্রের মতন-আমার অপূর্ব বিভ্রম হয়-মনে হয় আমি পড়ে যাচ্ছি ঐ তারাময় অন্ধকারের বুকের মধ্যে৷ আমার উপরে নীচে সামনে পিছনে ডাইনে বাঁয়ে ফুলঝুরির মতন তারারা উচ্ছ্রিত হয়ে উঠছে, ঘূর্ণী লেগেছে তারার রাশিতে৷

কে যেন বলেছিলো বিশ্বের বাঁশীতে নাচের ছন্দ বেজে ওঠে,সেই ছন্দে বস্তুর ভার হাল্কা হয়ে যায়? সেই ছন্দের তালে তালেই গ্রহনক্ষত্রের দল ভিখারী নটবালকের মতন আকাশে আকাশে নেচে চলেছে?--- কে বলেছিলো? কে বলেছিলো? মনে পড়ে, পড়ে, তবু পড়ে না৷

যেন টলটলে জলের মধ্য থেকে চেয়ে আছি ছায়াপথের দিকে, হাওয়ায় হাওয়ায় টলমল করে কাঁপছে ঐ ফিনফিনে মহাকাশীয় ওড়না৷
কে যেন বলেছিলো রাত্রি কখনো সূর্যকে পায় না, কিন্তু তাতে ওর দু:খ নেই, রাত্রির আছে অনন্ত নক্ষত্রবীথি৷---কে বলেছিলো কে বলেছিলো? কিছুতেই মনে পড়ে না৷ স্মৃতি কি হারিয়ে ফেলছি? এরপরে কি ভ্রষ্টস্মৃতি মানুষের মতন খুঁজে ফিরবো কে আমি, কোথায় আমি, কোথায় আমি ছিলাম, কোথায় আমি যাবো?

বাচক্ণবী বেদমন্ত্র বলছেন,আমি হেডফোনের মধ্য দিয়ে ট্রান্সফর্ম্ড অর্থ শুনছি--"বসুরা গায়ত্রী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক, রুদ্ররা ত্রিষ্টুপ ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক, আদিত্যরা জগতী ছন্দে তোমাকে স্নিগ্ধ করুক"---এই "তুমি" কে? কে তাকে স্নিগ্ধ করবে,কেন করবে,কিভাবে করবে? অসহায় লাগে আমার খুব,অদ্ভুত্ শীতে কেঁপে উঠি৷ আমাদের সকল যুগের সঞ্চিত জ্ঞান কি হারিয়ে যায়? নতুন যুগে সেই অর্জিত জ্ঞানই পুনরাবিষ্কার করতে হয়? ঘুরে ঘুরে একই খেলা চলছে আর চলছে আর চলছে? সময়ের মহাবৃত্ত? আমাদের স্মৃতি ও কি বারে বারে তৈরী হয় নতুন করে? আমরা কি বারে বারে ফিরে ফিরে আসি পুনর্জাত হয়ে? এই মহাবিশ্বও কি পুনর্জাত হয়?


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

অসাধারণ ! এমনটি যদি লিখতে পারতাম ! বা এর এক শতাংশ!

তুলিরেখা এর ছবি

কী যে বলেন!
(কান এত বেগুনী হয়ে গেছে প্রায় বেগুনী ভেজে ফেলা যায়। হাসি )
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।