অন্তর্লীনা

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ১৫/০৭/২০০৯ - ৮:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাতের পাতায় চোখ ঢাকে লীনা-" সরিয়ে নাও, শিগগির সরিয়ে নাও ঐ ছবি। আমার ভয় লাগছে।"

সামনে দাঁড়ানো ঋত্বিক অবাক হয়ে যায়, কিসের ভয় সামান্য একটা ছবিকে? কিন্তু লীনার মুখে সত্যি সত্যি ত্রাস,"কই সরিয়েছ? এতক্ষণ লাগছে? এখনো সরালে না?"

সমুদ্রের পরাক্রান্ত হাওয়া উড়ে আসে জানালা দিয়ে। ঋত্বিক মুগ্ধ চোখে দেখে তার হাওয়ায় এলোমেলো চুলের প্রিয়তমাকে। লীনা এত সুন্দর! হিমবিদ্যুতের মতন ওর জ্বলজ্বলে রঙ। হাতের আঙুলগুলো পর্যন্ত নিখুঁত, যেন মাখনে গড়া। চোখ, নাক, গাল, চিবুক--সব যেন অতি যত্নে কে গড়েছে। কপালের উপরে এসে পড়া চুলের কোঁকড়ানো লতাটি পর্যন্ত যেন এইমাত্র তৈরী করেছে কে। হাত ছোঁয়াতে ভয় হয়, এই বুঝি মিলিয়ে যায়।

ঋত্বিক একটা চেয়ার নিয়ে এসে দেয়ালে টাঙানো ছবিটার সামনে রাখে, তারপর ওটাতে উঠে ছবিটা পেড়ে আনে--হিংস্র শিকারী পাখীর ছবি। ছবিটাকে কাগজে সম্পূর্ণ মুড়ে না ফেলা পর্যন্ত লীনা চোখ ঢেকে থাকে। ছবিটা মোড়া হয়ে গেলে হাত সরিয়ে বলে, " চলো, এবার সী-বীচে ঘুরে আসি।"

"লিন, তুমি বড্ড ভীতু। সামান্য একটা ছবিকে ভয় পাবার কি আছে?"

"ঋ, তুমি জানো না। ওটা দেখেই আমার কেমন সারা গা শিরশিরিয়ে উঠেছিল। দেখো, এখনো কাঁটা দিচ্ছে।"

ঋত্বিকের হাত ধরে নিজের কন্টকিত বাহুর উপরে রাখে লীনা। ঋত্বিকের খুব অপ্রস্তুত অবস্থা। দেখে লীনা হাসে। বলে, " তুমিও ভীতু, বোকা ছেলে একটা।"

***
উর্বী, ঋত্বিকের বোন, একেবারে ওর ঘরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো। "লীনাদিকে তুই বলে দিবি দাদা? বলিস নারে, বলিস না। কাকীমা খুব কাঁদছিলেন। বল, বলবি না?"

ঋত্বিক প্রথমে চুপ করে থাকে। তারপরে আর পারলো না। প্রতিশ্রুতি দিল বলবে না। পরের দিন যখন দেখা করতে গেল, তখন লীনা ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল। ঋত্বিককে দেখেই লীনা খুশী হয়ে বললো, "এই যে ঋ, এসেছ, জানতাম আসবে তুমি। খুব ভালো হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে যে নিজেদের মধ্যে যে আমরা সবসময় সত্যি কথা বলার শপথ নিয়েছিলাম, তাতে কি ভালই না হয়েছে। এঁরা সব বলছেন যে আমার নাকি এমনি জ্বর হয়েছে, সেরে যাবে। কিন্তু হসপিটালে তো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পরীক্ষা করে দেখতে যে লিউকেমিয়া কিনা। ঋ, তুমিও সেখানে ছিলে, তুমি জানো। বলো, কি হয়েছে আমার আসলে?"

ঋত্বিকের মুখ একমুহূর্তের জন্য সাদা হয়ে গেল। তারপরে বললো, " না না লিন, তোমার তা হয় নি। এমনি জ্বর, সেরে যাবে।"

সেই পাখীটার জায়গায় একটা সুন্দর ঝলমলে ময়ূরের ছবি, ঐ যে চীনা উপকথায় যে মোরগটি ময়ূর হয়ে গিয়েছিল, সেই ময়ূর। সে ছিল আসলে ময়ূর-দ্বারা প্রতিপালিত এক মোরগছানা, যার মা মরে গিয়েছিল তার তখন ডিমের ভিতরে থাকা অবস্থা তখনি। সাপের ছোবলে মুরগীমায়ের প্রাণ গিয়েছিল। এক ময়ূর এসে সাপটিকে মেরে ডিমটিকে বাঁচায় এবং তারপরে তা দিয়ে দিয়ে ডিমটিকে ফোটায়। ছোট্টো মোরগ ভেবেছিল ঐ ময়ূরই বুঝি তার বাবা। কিন্তু সে জলে নিজের ছায়া দেখে বুঝেছিল সে তো তার মতো দেখতে নয়, তার তো অত ঝলমলে রূপ নেই। ময়ূর যখন বৃদ্ধ হয়ে মরে যাচ্ছে তখন বললো যে তারও অমন ঝলমলে রূপ হবে যদি সে সারাজীবন পরের উপকার করতে পারে। আগুনের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে ঝলমলে এক ময়ূর। এটা ছিল সেই গল্পের শেষ দৃশ্য। সে একজনকে বাঁচাতে আগুনের ভিতরে ঢুকেছিল নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে। বেরিয়ে এল মোরগ নয়, দারুণ সুন্দর এক ময়ূর, তার দীর্ঘ পুচ্ছে সপ্তবর্ণ ঝলকাচ্ছে। লীনা সে ছবিটা দেয়ালে টাঙিয়েছে।

ঋত্বিক তো মুগ্ধ," এ ছবিটা পেলে কোথায়?"
লীনা হাসে," সুন্দর না, বলো?"
" খুব সুন্দর।" বলে বটে ঋত্বিক, কিন্তু কেন যে একটা হিমঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় তার শিরদাঁড়া বেয়ে সে বুঝতেই পারে না। বড়ো বেশী সুন্দর। এত সুন্দর যেন এই হিংস্র পৃথিবীতে থাকতে পারে না।

"কোথায় চলে যাবি সখী, আমায় এখানে ফেলে রেখে একা একা? রাজার বাড়ী যেথা অচিনপুর?" ঐ নীল আকাশের ভিতরে অনেক অনেক দূরে কি কোথাও আছে সেই রূপকথার রাজার বাড়ী? সেইখানেই চলে যায় এই সুন্দরেরা পৃথিবীতে ক্ষণেকের জন্য দেখা দিয়ে? সে জগতেই সেই কোমল সুকুমার প্রাণগুলি কেবল থাকতে পারে? তবে কেন আসে ওরা? কেন ভালোবাসে, ভালোবাসতে দেয়? তারপরে নিষ্ঠুরের মতো হৃদয় নিংড়ে নিয়ে চলে যায়, সারাজীবনের শূণ্যতা ফেলে রেখে পিছনে?

হায়, কেন বোকার মতো ওকে ভালোবাসতে গিয়েছিলি ঋ? ঋত্বিক নিজেকেই বলে একা একা। লীনার হাসিমুখ এখনো ফুটে আছে ওর সামনেই। কিন্তু ও দেখে সেখানে শুধু একখন্ড নীল আকাশ। ওর চোখ ঝাপসা হয়ে যায়--

****

প্লেটখানা ঘুরতে ঘুরতে নিচে পড়ছে। ঋত্বিক চেয়ে আছে। প্লেটের উপরে আঁকা প্রতীকটাও ঘুরছে। ঋত্বিকের ভিতরে অনেক দিনের একটা বদ্ধ জলায় একটা ছোট্ট ঘুর্ণী দেখা দিল প্রথমে, তারপরে তার স্মৃতির ভিতরে। কি যেন সে ভালোবাসতো, অনেক ছোট্টোবেলায়? যখন দেখা হয় নি লীনার সঙ্গে? কী সে জিনিস? ঐ ঘুরতে ঘুরতে নীচে পড়া প্লেটখানার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক? আরো আরো গভীরে তার নিজের সঙ্গে,তার জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে? আকাশের ভিতরে অনেক দূরে, ঐ অন্ধকারের উপরকার সব তারার সঙ্গে?

ঋত্বিক চোখ বুজলো। কোথা থেকে যেন নীল আলোর ঝাপটা এসে লাগছে চোখে, বুজে ফেললেও সে আলো যাচ্ছে না। কিসের আলো? তার চোখে কি হলো? সে এমন নীল আলো তো আগে কখনো দেখে নি! এমন স্নিগ্ধ অথচ এত তীব্র? একবার দেখেছিল বটে, কিন্তু সেটা ছিল রক্তাভ বেগুণী, তারপরে তীব্র সাদা, তারপরে অনেক অনেক রঙ। সেটা মোটেই স্নিগ্ধ ছিল না, তাতে চোখে আর মাথায় ব্যথা করেছিল। কিন্তু এই নীল আলোতে তো ব্যথা করছে না!

সে পেরিয়ে যাচ্ছে অনেক অনেক সময়, অতীতের দিকে। সে যখন একটি ছোট্টো ছেলে--বাবার আঙুলগুলোকে নিজের কচি মুঠিতে ধরে বেড়াতে যাচ্ছে বনে। বাবার বাড়িয়ে দেওয়া ডান বাহুতে এসে বসেছে একটা কি বিরাট প্রজাপতি! বাবা সেটার নাম বলে দিচ্ছেন তাকে। একঝাঁক পাখি উড়ে গেল জল ছুঁয়ে, বাবা বলছেন পরিযায়ী পাখিদের গল্প, সেই যে দিগন্তপ্রিয় পাখিরা- যারা দেশ থেকে দেশান্তরে উড়ে যায় হাজার হাজার মাইল পার হয়ে।

আরো অনেক ছোটোবেলায়--একটা ছোট্টো বিছানায় নরম তোয়ালেজড়ানো একটা ছোট্টো বাচ্চা--ওর ভাই হয়েছে বলেছিল সবাই, ও জিজ্ঞেস করছিল কি করে বুঝলে বোন নয়, ভাই? সেই ভাইটা খুব ছোটোবেলাতেই মরে গেছিল।

ঋত্বিকের মনে পড়ছিল তার বেড়ালটার কথা। সেটাও কোথায় হারিয়ে গেছিল একদিন। একটা ছোট্টো রেডিও, বেরিয়ে থাকা তারগুলো সব এলেমেলো- মনে পড়ছে সব কিছু। কেউ কি তাকে কিছু নেশার জিনিস খাইয়ে দিল নাকি না জানিয়ে? নয়তো এতসব এত স্পষ্টভাবে মনে পড়ছে কেন?

সে উঠে দাঁড়ালো, হ্যাঁ, ঠিকঠাকই দাঁড়াতে পারছে। এবার যেতে পারবে তো ঘরে? ক্লান্তি নয়, কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে ওর। এক্ষুণি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়া দরকার, অন্তত মাথাটা রাখতে হবে টেবিলের উপরে। নিজের ঠান্ডা হাত দিয়ে উত্তপ্ত কান দুটোর উপরে বুলালো ও, কিছু যেন ছিটকে বেরিয়ে পড়তে চাইছে ওর ভিতর থেকে, কিন্তু কি তা ও বুঝতে পারছে না।

কোনোক্রমে ঘরে গিয়েই বিছানার উপরে নিজেকে ঢেলে দিল ও। সঙ্গে সঙ্গে নিথর ঘুম আর তার ভিতরে তার অথৈ কান্না-- এবার সেই নীল আলো স্নিগ্ধ ওড়নার মতো ঢেকে দিচ্ছে তাকে। ছাড়িয়ে নিচ্ছে তাকে যতো অপ্রিয় স্মৃতির ভিতর থেকে, জড়িয়ে নিচ্ছে প্রিয় স্মৃতির ভিতরে।

***

সুনীতার সঙ্গে ঋত্বিকের প্রথম দেখা হেয়েছিল একটা হিল-স্টেশনে, কমলা রঙের ফুলে ভরা একটা ঝাঁকড়া গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল সুনীতা। সাদা জ্যাকেট আর নীল জীন্‌স পরে। গলায় ছিল একটা স্কার্ফ, সাদা।

ঋত্বিকই এগিয়ে গিয়ে আলাপ করেছিল। সুনীতা অত্যন্ত স্মার্ট। কয়েক মিনিটেই আলাপ জমিয়ে ফেলল। ওর বন্ধুদের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিল। বন্ধুরা অন্যদিকে ছিল বলে প্রথমে সুনীতাকে একলা দেখেছিল ঋত্বিক।

ঋত্বিকের ঠিকানা নিজেই চেয়ে নিল সুনীতা। নিজেরটাও দিল। এসব ক্ষেত্রে যা হয় , দুপক্ষই ভুলে যায়, তা কিন্তু হয় নি। যোগাযোগ হলো, ক্রমে ঘনিষ্ঠতা, পরে বিয়ে। দুজনেরই বিদেশে সুযোগ এল, একসঙ্গেই পাড়ি দিল তারা।

প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে তাদের সাজানো সংসারে সমুদ্রের হাওয়া খেলা করে। ছোটো ছোটো দুটো কচি ছেলেমেয়ে খেলে বেড়ায়।বুবকা আর রিম্পা। ঋত্বিক ব্যস্ত অধ্যাপক, সুনীতার চাকরি একটা কোম্পানীতে। ব্যস্ত দুজনেই খুব।

মাঝে মাঝে কোনো বিরল অবসরে ঋত্বিকের মনে পড়ে একটা ভুলে যাওয়া মুখ। এক কিশোরী, সুন্দর তার টলটলে দুটি চোখ। দীর্ঘপক্ষ্ম পল্লব, কুঞ্চিত চুলের রাশি পিঠে ছড়ানো, হাসিমুখে চেয়ে আছে। পরাক্রান্ত সমুদ্রের হাওয়া তার চুলগুলি এলোমেলো করে দিচ্ছে।

সুনীতা জানেনা লীনার কথা, বলার অবসরই হয় নি কখনো। সেরকম সময়ও আসে নি । কেবলই সময় কমে কমে গেছে, দুজনের জীবন থেকেই। মুহূর্তগুলো কিরকম তীব্রস্রোত নদীর মতো বয়ে যায়।

প্রবাসে সবই বদলে গেছে, সেই কৈশোরের স্বপ্ন, সেই সুদূরপিয়াসী মন, সেই প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি। সময় নেই, কারুর দিকে ফিরে তাকাবার সময় নেই আর। তারুণ্য থেকে স্থবিরতার দিকে ঢলে পড়ার মাঝে এই অবিরাম ছুটে চলা। কি যে মানুষ ধরতে চায় তার দুহাতের মুঠিতে আর তা কেবলই পিছলে পড়ে যায়!

কিন্তু সেই কিশোরী যে একদিন হঠাৎ থেমে গেছিল এক শরতের ভোরবেলায়। তারপরে থেকে তো আর সময় তাকে বড়ো করতে পারে নি, ক্ষয় করতে পারে নি! অমলীনা কিশোরী হয়ে সে তো সেই শিউলিঝরা শরতের ভোরের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে আজও।

***

কেন যে হঠাৎ সেমেস্টারের মাঝখানে ছুটি নিয়ে ঋত্বিক দেশে চলল তা অনেক ভেবেও সুনীতা কিছুতেই বুঝতে পারলো না। তার নিজের অবশ্য এখন কিছুতেই ছুটি নেওয়া সম্ভব নয় তাই ওর আর দেশে যাওয়া হলো না আপাতত। ঋত্বিক একাই চললো। " তোমারে কি গিয়েছিনু ভুলে?/ তুমি যে নিয়েছ বাসা জীবনের মূলে,/ তাই ভুল। "

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ, ভরা শরৎ। ঋত্বিক বাড়ীতে ফেরায় তো বাড়ীর লোকেরা দারুণ অবাক আর খুশী। এভাবে হঠাৎ করে?

লীনাদের বাড়ীটা একই পাড়াতে। ওর ভাই বিয়ে করে কানাডায় সেটলড। বাবামাকেও সেখানে নিয়ে গেছে। তবে ওরা মাঝে মাঝে আসেন দেশে। বাড়ীটা বিক্রি করেন নি। পড়ে আছে একলা। বাগানে আগাছার জঙ্গল। কিন্তু আশ্চর্য, সেই শিউলি গাছটা কিন্তু এখনো আছে। এই শরতে কানায় কানায় ফুলে ভরা। সে যেন এইসব কিছুর ভিতরে -- এই টলটলে নীল আকাশে উপুরঝুপুড় রোদ্দুরের ভিতরে, সজনে পাতার ছন্দোময় দোলনের ভিতরে, এই কমলা বোঁটা সাদা গা নরম শিউলিগুলির অবিরাম টুপটাপ ঝরে পড়ার ভিতরে ওতপ্রোত হয়ে মিশে আছে। " ঐ বসেছ শুভ্র আসনে/ আজি নিখিলের সম্ভাষণে/ আহা শ্বেতচন্দনতিলকে / আজি তোমারে সাজায়ে দিল কে?"

কিসের জন্য দেশ ছেড়ে, স্বজন বন্ধুদের ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে পৃথিবীর ঐপারে পড়ে আছি আমি? ঋত্বিক একবার ভাবলো, তারপরেই বন্যার মতো তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো তীব্র ও নিষ্ঠুর বর্তমান।

***

" কেন এত অল্পদিনের জন্য এলি খোকা? মাত্র চারদিনের জন্য অতদূর থেকে, অত কাঠখড় পুড়িয়ে--" ঋত্বিকের মায়ের গলায় বিষন্নতা।

" কিন্তু মা, উপায় তো নেই! ফিরে গিয়েই ডবল খেটে এই সময়টুকু শুধরে নিতে হবে।"

" পরেরবার যখন আসবি তখন অনেকটা সময় নিয়ে আসিস। তোকে এতদিন পরে দেখে এত অল্পে মন জুড়োয় না। আর বুবকা-রিম্পা আর সুনীতাকে আনবি তো তখন?"

" আনবো, আনবো। সুনীতারই তো ছুটি পেতে বেশী অসুবিধে। তাই তো এবার ওদের আনতে পারলাম না।"

" সেই কবে দেখেছি, নাতিনাতনী দুটোকে। বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে।"

ঋত্বিক বলে, " এবার তোমাদের দুই বুড়োবুড়ীকে ঐ দেশটা দেখিয়ে আনবো। কতবার তোমাদের নিতে চাইলাম, কেন যেতে চাও না ? "

শেষ কথাতে মণিকুন্তলা হাসেন। " এই বুড়ো বয়সে আর দেশ দেখে কি করবো। তার চেয়ে তোরা সবাই মিলে অনেক দিনের ছুটি নিয়ে আয়। তোদের দেখেই আমাদের প্রাণ জুড়োবে।"

যথাসময়ে গাড়ী এসে যায়। মাবাবাকে প্রণাম করে ঋত্বিক উঠে পড়ে। বিদায় নিয়ে এবার হাওয়াই বন্দরের দিকে যাত্রা। তাহলে কোনটা তোমার দেশ ঋ? কোনটা প্রবাস?" ফিসফিস করে শরতের হাওয়া।

আর কোনো স্বদেশ নেই আমার। আমি চিরপথিক। চিরপ্রবাসী। পরিযায়ী পাখিদের মতো কেবলই উড়ে চলা আর উড়ে চলা-- ঋত্বিক ভাবে।

এও কি আরেক পথের পাঁচালি? অনি:শেষ পথযাত্রার গান? আকাশে গভীর নীলের মধ্যে যেন ছড়িয়ে আছে তার টলটলে দুই চোখ। সে চেয়ে আছে অনেক অনেক দূর থেকে, অপেক্ষা করে আছে কবে পথিক পৌঁছবে তার শেষ ঠিকানায়।

***
(শেষ)


মন্তব্য

স্বপ্নহারা এর ছবি

মনটা ছুঁয়ে গেল!...বিষণ্ণ লাগছে।
চমৎকার...আরো চাই!

----------------------------------
হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ স্বপ্নহারা।
তবে বেশী বিষন্ন হবেন না।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মূলত পাঠক এর ছবি

অসাধারণ!!! আপনার লেখায় এ কথা রোজই বলি, কিন্তু এটার মতো মন-ছোঁওয়া লেখা আপনার হাতেও আগে পড়ি নি। জিজ্ঞেস করবো না কী কর লেখেন এমন। আমাদের এই বারো ভূতের পাতে এমন রাজভোগ দিচ্ছেন কী আশায় সেইটাই কৌতূহল। এ জিনিস তো সব পাঠকের জন্য, যাঁরা ব্লগ পড়েন না তাঁরা যে বঞ্চিত হলেন।

তুলিরেখা এর ছবি

পঞ্চভূতের ফাঁদে
কে যেন পড়ে কাঁদে? হাসি

রাজভোগ বলে যদি খান তবে রাজভোগ, বিদুরের ঘরের মনে করে যদি খান তবে খুদ, আর ময়দানে গোল হয়ে বন্ধুবান্ধবে মিলে যদি খান তবে ফুচকা, আলুকাবলি, চটপটি। হাসি

জানি ব্লগ বহু লোকে পড়তে পারেন না, তাদের নেটে অ্যাক্সেস নেই, কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছাবার সোজা রাস্তা যে নাই আর বাঁকা রাস্তায় যে অনেক পাহারা,
তোমার ডাক শুনে সাঁই চলতে না পাই-
রুইখা দাঁড়ায় বড়দায় বড়দিতে। মন খারাপ
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

মামুন হক এর ছবি

এও কি আরেক পথের পাঁচালি? অনি:শেষ পথযাত্রার গান? আকাশে গভীর নীলের মধ্যে যেন ছড়িয়ে আছে তার টলটলে দুই চোখ। সে চেয়ে আছে অনেক অনেক দূর থেকে, অপেক্ষা করে আছে কবে পথিক পৌঁছবে তার শেষ ঠিকানায়।

--মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা!!

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।
অ্যালকেমিস্ট এর অনুবাদটা আবার কবে থেকে দেবেন? অপেক্ষায় থাকি।
ভালো থাকবেন।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

দীর্ঘশ্বাস পড়লো একটু।।। চলুক

তুলিরেখা এর ছবি

জীবনটাই তো দীর্ঘশ্বাস আর ক্ষুদ্রশ্বাসের যুগলবন্দী।
ভালো থাকবেন, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আপনার অন্যান্য লেখার থেকে এই লেখাটা একদমই আলাদা ... ---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

তুলিরেখা এর ছবি

আলাদা বুঝি? হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

লীনা ফেরদৌস এর ছবি

Lina Fardows

ইসসসসস !! আমিও আছি দেখি এই গল্পে....।।...।। খুব সুন্দর

Lina Fardows

তুলিরেখা এর ছবি

হাসি
আপনিও আছেন।

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা। অনেক ভাল লাগা রেখে গেলাম

নিবন্ধন নাম- মেঘলা জীবন

ইমেইল -

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ মেঘলা জীবন।
বৃষ্টি দিয়ে যান, গরমে লোকে ভারী হাঁসফাঁস করছে কিনা! : -)
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তানবীরা এর ছবি

তুলিদি, তুমি রোজ এমন মন খারাপ করা প্রেমের গল্প লিখো নাতো। একটা মন ভালো করা প্রেমের গল্প লিখো এবার, শুধু আমার জন্য হাসি
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তুলিরেখা এর ছবি

আগে তুমি একটা মিষ্টি মিষ্টি ভরাভর্তি ভালোবাসার গল্প বলো, নিশির গল্প লিখে তো দুঃখ পাইয়ে দিয়েছ, এইবারে নিশি পোহাইয়া রাইকিশোরীর হাসি দেখাও। হাসি
তারপরে আমি তোমার জন্য সেই মন ভালো করা প্রেমের গল্পটা লিখবো। হাসি
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।