সাংগ্রিলা (১ ও ২ )

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৭/২০০৯ - ৮:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।

গুঁড়ো গুঁড়ো বৃষ্টির মধ্যে ডুবে যেতে থাকে বাড়ীঘর মাঠ পাহাড় নদীতীরের পাথর বালি ক্যাকটাস, আমি তুলি ঝেড়ে জল ফেলি আরো আরো আরো৷ ফোঁটা ফোঁটা জল৷ ওয়াশ ছবি বলে একে, এ ছবির অনেক অনেক ডিমান্ড আজকাল৷ ঐ যে যখন ঠিকানাহীনেরা দৌড়ে যেতো বৃষ্টি আসা মাঠের উপর দিয়ে নৌকার দিকে, ছইয়ের উষ্ণ করতলে আশ্রয়ের আশায়, পিছনে বৃষ্টিকে মনে হতো জাপানী ছবি--সেই সময় থেকে এতদূরে আমরা, এখন দূরবীণ কষেও সেসব আর দেখা যায় না৷ তাই ছবিই একমাত্র ভরসা৷ আহা, জাপানী ছবি! কবে তলিয়ে হারিয়ে গেছে সব,তবু নামটি বেঁচে আছে, কীর্তি এক আশ্চর্য জিনিস, কিকরে শত বিপর্যয় মহাতান্ডব সব পেরিয়ে বেঁচে থাকে কীর্তি!

শিল্পায়িত দুনিয়া ক্রমে বৃক্ষহীন হতে হতে একসময় তেড়ে উঠে রুখে দাঁড়ালো, মহাবন্যায় সব ভেসে গেলো উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণমেরু৷ কয়েকটা জেগে থাকা উচ্চভূমিখন্ডে টিঁকে রইলো সরল পাহাড়ী মানুষেরা, উপকূলের ক্ষুরধারবুদ্ধি বোধিনগরগুলি জলের তলায় চলে গিয়ে করতে থাকলো তখনো না-মেটা হিসেবনিকেশ৷

ডুবোজাহাজে চড়ে চড়ে দুনিয়া ঘোরে যেসব গূঢ়পুরুষ ও গূঢ়নারীরা, তারা নাকি এখনো ওসব জলমগ্ন শহরে শুনতে পায় নানারকম ম্যানেজমেন্টের ক্লাস হচ্ছে, নানারকম তর্ক চলছে আবদ্ধ ডিসকাসন রুমে রুমে৷ ওরা ভয় পায়, পালিয়ে আসে, ওদের জন্য যেসব মনোবিদ ছিলেন, তারা নিজেরাই পাগল হয়ে গেছেন অনেক আগেই৷ হো হো হো হো করে অকারণে হাসেন, গ্লাসে গ্লাসে ঠোকা মেরে চলকে ফেলেন মদ, কখনো ভেঙে ফেলেন গ্লাস, চুল ছিঁড়তে ছিঁড়তে গান করে ওঠেন সব লাল হো জায়েগা---এভরিথিং উইল বি রেড, রেড, রেড .... বাড়াবাড়ি হলে ওদের ধরে বেঁধে নৌকায় তুলে পাহাড়ী ডাঙায় পাঠিয়ে দেয় অন্যেরা, সেখানে কিছু কিছু অ্যাসাইলাম করা হয়েছে আজকাল, কারা যে তাদের চিকিত্সা করে কেজানে৷

একটি দেশের আজকাল খুব নাম---সাংগ্রিলা, আগে নাকি নাম ছিলো তিব্বত৷ সেখানে এখন সভ্যতা স্ফুরিত হয়েছে নতুন সব আইডিয়া নিয়ে, উচ্চাকাঙ্খী তরুণ তরুণীরা জাহাজে করে দলে দলে সাংগ্রিলাতে যায় যোগতত্ত্ব শিখতে৷ তবে সবাই যেতে পারেনা, সেখানে যাবার অনুমতি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, নানারকম পরীক্ষা টরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়, সেসব যোগ ও তন্ত্রের পরীক্ষা, খুব বাছা বাছা পরিবারের ছেলেমেয়েরাই সেসব শেখার সুযোগ পায়৷ সাংগ্রিলার ভাষাও আলাদা, তবে সেই ভাষাতে লেখাপড়া শেখার কিছু কিছু স্কুল আছে, অবস্থাপন্ন বাবামায়েরা ছেলেমেয়েদের সেইসব স্কুলেই দেন যাতে ওদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়৷

আমি আন্ডিজের একপ্রান্তে ছোট্টো একটি জনপদে জন্মেছি সেই পৃথিবীপ্লাবনের অনেক পরে, সব শুনেছি গল্পে, পড়েছি ইস্কুলের বইয়ে, কিছু দেখেছি স্ক্রীণে৷ এখানে এখনো চলছবি মুভি এইসব আছে, বইও৷ শুনেছি শিগগিরি এসব নাকি লুপ্ত হয়ে যাবে, সাংগ্রিলার অ্যাডভান্সড সভ্যতা শিক্ষা ও কমুনিকেশানের এইসব পুরানো ব্যবস্থাকে বর্বরতা মনে করে৷

আমার ছবিটা হয়ে গেছিলো আঁকা৷ স্ট্যান্ড থেকে সাবধানে খুলে নিয়ে টেবিলের উপরে পেতে রেখে চারকোনে চারটে পাথর চাপা দিই৷ ছবি শুকোতে দিয়ে জানালার কাছে যাই, পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাই, শীত কমে গেছে কবেই, এখন স্বল্পায়ু বসন্তও শেষ হয়ে এলো৷ ঘরের দেওয়ালে ক্যালেন্ডার ওড়ে বাইরে থেকে আসা হাওয়ায়, ক্যালেন্ডারে ক্যালেন্ডুলা আর পিটুনিয়ার ছবি৷ সমুদ্র থেকে লোনা হাওয়া এতদূরে আসে না, আমাদের জনপদটি বন্ধুর পার্বত্যভূমিতে শ্যেনপক্ষীর নীড়ের মতন৷

বসন্তের পাখিরা ডাকতে ডাকতে এতদিনে ডাক খানিক কমিয়ে ফেলেছে, ইদানীং তারা ব্যস্ত বাসা তৈরীতে৷ আমার জানালার বাইরে ক্ষুদ্র বাগান, বাগানটুকু পেরিয়েই এলোমেলো পাথর সাজানো সীমানারেখা, তারপরেই পথ আর শস্যক্ষেত্র৷ শস্যক্ষেত্র শুরু হবার আগেই বিরাট বিরাট কতগুলো গাছ, টকটকে লাল ফুলে ভরে গেছে এখন সেগুলো৷ এগুলো তুলো গাছ, কিছুদিন পরেই এই ফুল থেকে ফল হবে উপগোলক আকারের, পাকলে ফল ফেটে যায়, ভেতর থেকে তুলো বেরিয়ে আসে উজ্জ্বল শরৎ মেঘের মতন সাদা, রেশমের মতন কোমল৷ আগে এ গাছ এখানে ছিলো না, কিভাবে জানি পাখির আনা বীজের থেকে এই সতেজ প্রাণময় গাছগুলি জন্মে তর করে বেড়ে উঠে যৌবনে উপনীত হয়েছে! তাই ঠিক জায়গামতন না হলেও ওদের কেটে ফেলার কথা কেউ বলে নি৷

আমাদের জনপদে গাছপালা লাগানো হয়েছে ঋতুচক্রের সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে, এক অংশে গ্রীষ্মের, এক অংশে বর্ষার এক অংশে শরতের-এইরকম করে৷ যদিও এখন ঋতুবৈচিত্র্য অনেক কম, তেমন করে শীত পড়েই না, ক্রান্তীয় আর নিরক্ষীয় আবহাওয়ার মতন হয়ে গেছে সব৷ তবুও যেটুকু পাওয়া যায় তাকেই যথাসম্ভব দর্শনযোগ্য করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে৷ এখন যেখানে বসন্ত আর গ্রীষ্মের বর্ডার, সেখানে লাল আর বাসন্তী ফুল ফুটেছে, উড়ে যাচ্ছে রেণু, ভোমরা মৌমাছিরা ব্যস্ত হয়ে উড়ছে, জনপদের বর্ষা অংশ এখন চুপ৷ সেখানের সবুজ গাছেদের পাতায় পাতায় শান্ত অপেক্ষা৷ আর কিছুদিন পরেই ওদের দিন আসবে, সমুদ্র থেকে আসা নবধারাজল, ওরা স্নান করবে সর্বাঙ্গ মেলে দিয়ে-আআআআহ!

আমাদের এই জনপদটির এক অদ্ভুত কাহিনি আছে, শুনেছি মহাপ্লাবনের আগে আন্দিজের উপরে এই জনপদটি ছিলো একটি পরিত্যক্ত জনপদ, পাহাড়ের মালার মাঝে উচ্চ মালভূমিতে একলা একলা লুকিয়ে ছিলো মনুষ্যচক্ষুর অগোচরে, মাঝে মাঝে ভবঘুরে কিছু পশুচারক এই জায়গার অদ্ভুত সব বাড়ীঘর আর পাথরের মূর্তির খবর নিয়ে যেতো, লোকে অবাক হয়ে শুনতো আর পরে যখন এসব নিয়ে বলতো তখন নিজেদের কল্পনা মিশিয়ে আরো পুষ্পিত-পল্লবিত করে নাকি বলতো এসবের কথা৷ তাই জনগোষ্ঠীর চেতনায় এই লুক্কায়িত জনপদ ছিলো কল্পিত স্বর্গের মতন সুন্দর অথচ অপ্রাপ্য৷

মহাপ্লাবনের সময় কাছাকাছি অঞ্চলের লোকে এইদিকে চলে আসে, ক্রমে জল যখন বাড়তে থাকলো,তখন দুর্গমতার বাধা না মেনে অল্পসংখ্যক দু:সাহসী গিরিপথের গোলোকধাঁধায় ঘুরতে ঘুরতে একসময় এখানে এসে পৌঁছায়৷ এখানকার জঙ্গলে চাপা পড়া পাথরের বাড়ীঘর, আশ্চর্য মূর্তি, পাথরে বাঁধানো পথ, জলের কুন্ড সব ধীরে ধীরে তারা আবিষ্কার করে একটু একটু করে, অনেক বছর ধরে৷ বর্তমান জনগোষ্ঠী সেই সাহসী শরনার্থীদেরই উত্তরপ্রজন্ম৷ প্রথম আসা লোকেদের নিয়ে ইতিমধ্যেই এখানকার লোককথায় জন্ম নিয়েছে নানা বিশ্বাস্য অবিশ্বাস্য মিথ৷কোথাও কোথাও তারা প্রায় দেবমর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন, মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পাওয়া তো সোজা ব্যাপার না! ঈশ্বরের খুব অনুগৃহীতরাই কেবল পেতে পারে সেই অভাবিত সৌভাগ্য৷

তারা সঙ্গে করে অনেককিছু এনেছিলো, অদ্ভুত অদ্ভুত সব চাকতি, অদ্ভুত অদ্ভুত সব ছোট্টো ছোট্টো সিলিন্ডারের মতন দেখতে জিনিস, চৌকো চৌকো কিছু বাক্সের মতন যন্ত্র৷ সব রাখা আছে সযতনে আমাদের এখানকার মিউজিয়ামে, কি যে ওসবের ব্যবহার ছিলো বা এখনো সেসব ব্যবহারযোগ্য আছে কিনা, জানা যায় নি, হয়তো কোনোদিন জানা যাবে না আর৷ ওরা যেসব বইপত্র এনেছিলো তার কিন্তু পাঠোদ্ধার হয়েছে, সেইসব বইয়ের কাহিনি প্রায় অবিশ্বাস্য মনে হয়৷ কিন্তু খুব থ্রিলিং, মানুষে চাঁদে নেমেছিলো সেই বর্ণনা৷ মানুষ মঙ্গলগ্রহে গেছিলো, সেই কথা৷ মহাকাশে মানুষ বহু বহু কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছিলো পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনের খবর দেবার জন্য, যোগাযোগের জন্য, এক দেশ অন্য দেশের উপরে নজর রাখার জন্য----

কখনো কখনো পূর্ণিমার গোল চাঁদ বা শুক্লপক্ষের ফালি চাঁদের দিকে চেয়ে ভাবি, গল্প হোক বা সত্যি হোক, যদি ওখানে যাওয়া যেতো! বইয়ে বলেছে যারা ওখানে নেমেছিলো তারা দেখেছিলো শুধু শুকনো পাথর, জল নেই, বাতাস নেই, কোনো শব্দ নেই, আকাশে অজস্র তারা ধূলিহীন তীব্রতায় ঝকঝক করছে! সত্যি ওখানে যদি যাওয়া যেতো!

আমরা এখানে আমাদের খাদ্য উত্পাদন করি প্রধানত কৃষিকাজ, পশুপালন আর সমুদ্রে মত্স্যশিকার করে৷ জীবন আমাদের বেশ সাদাসিধে এমনিতে, তবু ঐ যে! দূর সাংগ্রিলার অসহ্য ঐশ্বর্য্যের খবর এসে পৌঁছে আমাদের তরুণ ডানাকে চঞ্চল করে তোলে!

২।

আরেনুশ! আমার বন্ধু৷ ওর বাড়ী অধিত্যকার দক্ষিণসীমায়৷ ওদিকটা বাড়ীঘর অল্প, পাহাড় বেশী রুক্ষ বলে চাষবাসও ওদিকে বেশী চলে না, ওদিকটা শহরের জনপদের হেমন্ত অংশ৷

আরেনুশ ও ছবি আঁকে, তবে বেশী না, ওর আঁকা ছবি কেমন অদ্ভুত! আমার কাছে হিজিবিজি বলে মনে হয়৷ ও আমায় বুঝিয়েছে আগে ওসবকে বলতো নাকি বিমূর্ত শিল্প৷ যাতে মানুষ,গাছ, বাড়ী,পশুপাখিফুল মেঘনদী কিছুই থাকবে না, অথচ সবই থাকবে বিমূর্ত হয়ে৷ দর্শককে কল্পনা করে নিতে হবে ঐসব এলোমেলো দাগ আর হিজিবিজির মধ্য থেকে৷ যাই বলুক,ওসব বিমূর্ত ছবি আমায় টানে না,আমি বুঝতেই পারি না৷

তবে ওর আগ্রহ মূর্তি বানানোয়৷ অসাধারণ সুন্দর সব ছোটো ছোটো মাটির আর পাথরের মূর্তি বানায় ও! ক্ষুদ্র মূর্তিতে এত সূক্ষ্ম কারুকাজ কিকরে করে সে এক দারুণ ব্যাপার! মূর্তি টুর্তি তো আর বিমূর্ত হতে পারে না, নাকি তাও পারে? আমি একদিন আরেনুশকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,ও বলেছিলো তাও পারে৷ বলে ওর ঘরের কোণায় একজায়গায় কাপড়ের ঢাকা সরিয়ে দেখিয়েছিল অদ্ভুত এক পাথরখন্ডের মধ্যে এলোমেলো গর্ত খাঁজ এসব করা,ও নাকি বিমূর্ত ভাস্কর্য! আমি তেমন ভালো বলতে পারিনি, অথচ ফের ঢেকে দেবার আগে যেন মনে হলো এক মুহূর্তের জন্য আলোছায়ার খেলার মধ্যে দেখলাম পাথর থেকে দুই কিশোর কিশোরী হাসিমুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে!

আরেনুশ একদিন আমায় এক পাহাড়ের গুহায় নিয়ে গিয়েছিলো, সেখানে গুহার দেয়ালে অদ্ভুত সব চিত্রমালা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম৷ ও বলেছিলো এসব বহু বহু হাজার বছর আগের ছবি, এই নতুন জনপদ হবার বহু আগে এখানে মানুষেরা ছিলো-অন্যরকম মানুষেরা,অতিকথায় যারা আশ্চর্য সব রূপ নিয়েছে৷

হাঁটাপথে প্রায় তিন ঘন্টা লাগে সমুদ্রতীরে পৌঁছতে, গিরিপথের বন্ধুর যাত্রা৷ আমরা দুজন বাই-সাইকেল নিই, পিছনের ক্যারিয়ারে প্যাক করা ছবি আর মূর্তির বোঝা, হাঁটার চেয়ে বাইসিক্লে একটু তাড়াতাড়িও হয়৷ সমুদ্রতীরে ঘাট, সাইকেল রাখার জায়গা আছে, আমাদের মাসকাবারী ব্যবস্থা করা আছে, প্রায়ই যেতে হয় কিনা ছবি আর মূর্তি নিয়ে, তাই৷ ঘাট থেকে ফেরীযান ছাড়ে প্রত্যেক ঘন্টায়৷ ফেরীযানগুলো কাছাকাছি দ্বীপগুলোতে যায়, সব দ্বীপই আসলে ডুবে যাওয়া মহাদেশের উচ্চতম অংশগুলো৷ আমাদের সব মহাসড়ক এখন মহাসমুদ্রে৷ যেহেতু আমরা এই অবস্থা ঘটার অনেক পরে জন্মেছি, আমাদের কাছে আশ্চর্য মনে হয় না, শুধু একজন দুজন খুব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখনো তাদের দাদু ঠাকুমাদের কাছে শোনা গল্পের কথা বলেন, কী বিরাট মহাদেশ ছিলো, মাইলের পর মাইল গাড়ী চালাতে চালাতে, দিনের পর দিন গাড়ী চালাতে চালাতেও যার কিনা কূলকিনারা মিলতো না!

কী জানি কেমন ছিলো! কী হবে সেসব ভেবে? মানুষ বর্তমানে বাঁচে, অন্তত তাই আমি জানতাম, কিন্তু একদিন আরেনুশের সঙ্গে ঐ একটেরে গুহায় গিয়ে আধো-আলো আধো-অন্ধকার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের দুইদেয়ালে আঁকা অসংখ্য ছবি আর খোদাই দেখে আমার ধারনাটা কেমন টাল খেয়ে গেছে৷ কারা ওরা, কত হাজার বছর আগে ওখানে এঁকেছে ঐসব চিত্রমালা? কেমন ছিলো ওদের মুখচোখচেহারা? কেমন ছিলো ওদের কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা, ভালোবাসা ঘৃণা, স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গ? কোনো কোনো ছবিমালা যেন গল্পের মতন লেগেছিলো, অথচ ঠিকমতো তাও নয় যেন! কিছু কিছু অদ্ভুত চিহ্নও ছিলো কোথাও কোথাও,ওগুলো কি ওদের অক্ষর? ওদের শব্দ? কিছুতেই কি বোঝা যাবে না কোনোদিন?

আমি আরেনুশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ঐ গুহা আর ছবির কথা আর কেউ জানে কিনা৷ ও বলেছিলো হয়তো কেউ কেউ জানে, কিন্তু গুরুত্ব দেয় না, কি হবে গুরুত্ব দিয়ে? এখনের জীবনযাত্রায় ওসব মূল্যহীন, কার এত সময় আছে পাহাড়ের গুহায় পাওয়া কতগুলো অদ্ভুত ছবির পুরাতত্ব নিয়ে ভাববে? এই দিয়ে টুরিস্টদের আকর্ষণও করা সম্ভব নয়৷ এখন সাংগ্রিলার সংস্কৃতি দুনিয়াকে আচ্ছন্ন করেছে, সেই কালচারে সবকিছুই অন্যরকম৷

কথা বলতে বলতে এগোতে এগোতে বাতাসে সমুদ্রের গন্ধ পেতে থাকি, কাছিয়ে আসছি৷ আর একটা বাঁক ঘুরলেই, আহ! এতকাল ধরে এ পথে আসতে যেতে আসতে যেতে সব চেনা হয়ে গেছে, তবু এই বাঁকটার ম্যাজিক কোনোদিন আমি ঠিক করে বুঝতে পারিনা, এখানে এসে সমুদ্র দেখার সঙ্গে সঙ্গেই এক নামহীন আনন্দে ভিতর বাহির পরিপ্লুত হয়ে যায়! আরেনুশকে জিজ্ঞেস করতে হবে একদিন, ওরও এমনই হয়, নাকি এ আমারই শুধু হয়৷

নেমে পড়ে সাইকেল রাখার জায়গার দিকে চলতে থাকি, আজকে খুব পরিষ্কার দিন, জ্বলজ্বল করছে জল, টলটল করছে নীল আকাশ, সূর্য আকাশে তীব্রোজ্জ্বল চক্ষু মেলে দেখছে পৃথিবীকে৷

(চলবে)


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

দারুণ হচ্ছে, চলুক। মেইলে পড়েছিলাম, তাও আবার পড়তে ভালো লাগলো।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠক, আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার ও ভালো লাগলো।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

চলুক..

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

তুলিরেখা এর ছবি

আশা তো করি চলবে। সচলেরা পড়ে কমেন্ট না করলে হয়তো খুঁড়িয়ে চলবে। খাইছে

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তানবীরা এর ছবি

আমিতো স্প্যানিশ ড্রিঙ্ক "sangria" এর কাজিন হবে ভাবলাম। তুলিদি তুমি খেয়েছো সাংগরিয়া? দারুন খেতে, কলুম্বার মতো।

লেখা দারুন
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

তুলিরেখা এর ছবি

নাহ, কলুম্বাও খাই নি, সাংগ্রিয়াও না।
কলুম্বাটা কিরকম?
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।