সাত্যকি(৬)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ৩০/১২/২০০৯ - ১২:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখানে আগের পর্ব

কয়েকদিন কেটে গেছে, সত্যক আর রুবেন সারাদিন একসঙ্গে কাজ করে। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে সত্যক নিজেই একসময় বলে," আর তো পারা যায় না, চলো চা আর ঝালমুড়ি খেয়ে আসি৷"

সন্ধ্যার চা-ঝালমুড়ির আড্ডা বেশ ভালো লাগে মনে হয় দুজনেরই, কোনো কোনোদিন এর সঙ্গে থাকে বড়ো বড়ো সিঙারা৷ কোনোদিন চায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি থাকে না, থাকে কচুরি আলুরদম৷ সত্যকের শেফ-রোবটের নাম শেফু, সে এত ভালো রাঁধে, এত ভালো রাঁধে যে একদিন রুবেন বলেই ফেললো, "স্যর, আপনার শেফুর জন্যই আমার এখানে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতেও খারাপ লাগবে না৷ "

একমুঠো ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে সত্যক ইয়ার্কি করে কইলো, " তা জানি৷ এদের জন্যই তোমার কোনোরকমে সহ্য হয়ে যায়, নইলে শুধু আমি থাকলে মনোকষ্টেই এতদিনে অর্ধেক হয়ে যেতে৷ আমি কিনা মালিক আর তুমি দাস, রোজ তো তোমায় ছেঁচা দিই আর ছ্যাঁকা দিই, এছাড়া দাসমালিকরা আর কীই বা করতে পারে বলো?"

হেসেই বলেছিলো সত্যক, কিন্তু রুবেন নিভে গেলো একেবারে, মুড়িও আর নিলো না, চা অর্ধেক খাওয়া হয়ে গেছিলো, বাকীটাও খেতে হবে, তাই চুমুক দিলো, কিন্তু ওর মুখ দেখে সত্যকের মনে হলো হঠাৎ চা টা চিরতার রস হয়ে গেছে!

" আরে সত্যি না, ইয়ার্কি করে বললাম, তুমি কিরকম মানুষ, ইয়ার্কি বোঝো না?"

রুবেন কিছু বলে না, নীরবে চায়ে চুমুক দেয়, মুখ নীচু করে রাখে৷

"কী হলো, মুড়ি আর খাবে না? "

" মাফ করুন, আর ইচ্ছে করছে না৷ "

" ছি ছি তোমার খাওয়া নষ্ট করে দিলাম৷ তাহলে আমিও আর খাবো না৷ শেফু, এই শেফু, এসব নিয়ে যাও৷ " সত্যকের গলা খুব চড়া শেষ লাইনে৷

রুবেন আস্তে আস্তে বলে," ঠিক আছে খাবো, ইচ্ছে না করলেই বা কি৷ আপনি আপসেট হয়ে যাচ্ছেন, খুব খারাপ হচ্ছে৷ আমি শুরুতেই তো বলে নিয়েছিলাম আপনার ইচ্ছাই শেষ কথা৷"

"এই তো ভালো ছেলে৷ শেফু, এখনি নিতে হবে না রে, আমরা এখনো খাওয়া শেষ করিনি৷ "

শেফু এসে দাঁড়িয়েছিলো আদেশ পেয়ে, সে এখন অন্যরকম নির্দেশ পেয়ে রাগ-রাগ মুখে বললো," আপনারা মানুষেরা খুব গন্ডগোলের জীব৷ কী যে বলেন আর কী যে করেন কোনো মাথামুন্ডু নেই৷ " শেফুর এমন সিরিয়াস মন্তব্য শুনে হাসতে হাসতে সত্যক আর রুবেনের পড়ে যাবার মতন অবস্থা৷

এদের এত হাসতে দেখে খুব অবাক হয় শেফু, সে বিশেষ হাসে টাসে না, যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে রান্না করা ছাড়া অন্য কিছুই সে বিশেষ পছন্দ করে না৷ অথচ শেফুর ভোকাবুলারি খুব সমৃদ্ধ, বিশেষ নির্দেশ দিয়ে সত্যক ওর নির্মাতাগ্রুপকে শেফুর উচ্চমানের ভোকাবুলারি দিতে বলেছিলো৷

শেফু এদের হাসতে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে, "আদিখ্যেতা দেখে বাঁচি না, এত হাসির কথাটা কী বললাম আমি? এই মানুষ জীব যে কি আজব জীব খোদায় মালুম৷" বলতে বলতে একটা হতাশ ভঙ্গী করে চলে যাচ্ছে শেফু আর রুবেন ও সত্যক দুজনের হাসতে হাসতে বিষম টিষম খেয়ে একেবারে সাংঘাতিক অবস্থা!

দু'জনে আবার গল্প করতে করতে খাচ্ছে, তর্তিয়ানা কোত্থেকে ওদের জন্য দু'খানা তোয়ালে নিয়ে হাজির! সত্যক অবাক, রুবেন আরো বেশী অবাক, এরকম তো হবার কথা না৷ নির্দেশ দেওয়া না থাকলে রোবট কেমন করে নিজে নিজে কাজ করবে?

সত্যকের কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে যায়, সে আগে থেকে একটা প্ল্যান করে বেমালুম ভুলে গেছিলো৷ এখন লাফিয়ে উঠে বললো, " চলো সাঁতার কাটি বাগানের পুকুরে৷ আগামীকালের পরদিন তো আবার তোমার হাইপারড্রাইভের জন্য তৈরী হতে কন্ডিশনিং সেন্টারে চলে যেতে হবে৷ তারপরে তোমার স্পনসরদের ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে হপ্তা ঘুরে যাবে৷ ফিরে কদিন বিশ্রাম নিয়েই তো আবার আমাকে টিনিয়াম দেখাতে নিয়ে যাবে৷ এরকম সাঁতার কাটার সুযোগ আর বিশেষ মিলবে না, চলো৷"

সবুজ বাগানে অপূর্ব টলটলে জলের পুকুর, দু'জনে সাঁতরাতে সাঁতরাতে এপার ওপার করে ফেললো কয়েকবার৷ জলসিক্ত মুখে হাসতে হাসতে রুবেন বললো, " ঈশ, যদি রোজই এমন করা যেতো! ছোটোবেলা সাঁতার ক্লাবে অনেক সাঁতরেছি, লোকে আমায় বলতো মাছখোকা, তারপরে কবে থেকে যেন সেসব বন্ধ, মাছখোকা জল ছেড়ে মহাকাশে রওনা হলো৷ " দুজনের সম্মিলিত হাসির আওয়াজে পাড়ের বকগুলো বিরক্ত হয়ে পাখা মেলে উড়াল দিলো৷


মন্তব্য

তুলিরেখা এর ছবি

স্নিগ্ধাজীঈঈঈঈঈই, আপনে কই? হাসি

-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

স্নিগ্ধা এর ছবি

এই তো, এখানে! পড়ছি সাত্যকি, সবগুলোই পড়েছি এবং পড়ছি হাসি দাঁড়ান দেখি কোনদিকে নিয়ে শেষ করেন, তাপ্পর মুখ খুলবো দেঁতো হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

এরকম করে যদি কিছুই না বলেন তাইলে তো মহাশয়া পরের কিস্তি আর আসবে না! চিন্তিত
----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।