বাংলা কাব্যে বিশেষ সময়ের একটি বিশেষ ধারা: কবিগান

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি
লিখেছেন প্রৌঢ় ভাবনা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০৪/০২/২০১৫ - ৯:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নমুনা

শুরুতেই বলি, এটা কোন গবেষণালব্ধ লেখা নয়। অতি সাধারণজনের উপলব্ধজাত ব্লগর ব্লগর যা কিনা পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠকদের সামনে পেশ করছি। লেখাটির দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে আপনার মতামতটিও প্রকাশ করুন, যাতে করে মোটামুটি একটা বিশ্লেষণ দাঁড়ায়। বিষয়টি নিয়ে আমারও জানার কৌতুহল প্রচুর। আশা করছি পাঠকদের সহযোগিতায় এবং সংযোজনে লেখাটি পূর্ণতা লাভ করবে।

কবিগানের প্রকৃতি :
কবিগান হচ্ছে, উতর-চাপানের মাধ্যমে দু'জন কবিয়াল বা দুটো দলের মধ্যে এক ধরনের গানের লড়াই। সাঙ্গীতিক বিতর্ক বললেও ভুল হয় না। কবিগান প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দলের দ্বারা গীত হয়। প্রত্যেক দলে একজন নেতা বা মূল গায়েন থাকেন। তিনিই 'কবিয়াল' বা 'সরকার'। একজন কবিয়ালের অবশ্যই বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যকীয়। তাছাড়া প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, অভিনয় দক্ষতা, সাবলীল প্রাণবন্ত শারীরিক ভাষাও
একজন কবিয়ালের প্রয়োজনীয় গুণ। দলে কয়েকজন সহকারী গায়কও থাকেন। তাঁদের বলা হয় 'দোহার'। এঁরা সাধারণত মূল গায়েন অর্থাৎ কবিয়ালের কথাগুলিকেই দোহরান বা পুণরাবৃত্তি করেন। আরথাকেন, বাদকদল বা যন্ত্রী। কোন কোন কবিয়ালের বাঁধনদারও থাকেন বটে। অর্থাৎ যে সকল কবিয়াল নিজেরা তাৎক্ষণিক গান বাঁধতে পারেন না তাঁরা এই বাঁধনদারের সহায়তা নেন।

সজনীকান্ত দাশ ছিলেন একজন কবি। তিনি অনেকগুলো পত্রিকার সম্পদকের দ্বায়িত্বও পালন করেছেন। তার মধ্যে 'শনিবারের চিঠি' অন্যতম। তিনি তাঁর “বাংলার কবিগান” বইতে লিখেছিলেন- “বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত বিভিন্ন সাংগীতিক ধারার মিলনে কবিগানের জন্ম। এই ধারাগুলির নাম বহু বিচিত্র – তরজা, পাঁচালি, খেউড়, আখড়াই, হাফ আখড়াই, ফুল আখড়াই, দাঁড়া কবিগান, বসা কবিগান, ঢপকীর্তন, টপ্পা, কৃষ্ণযাত্রা, তুক্কাগীতি ইত্যাদি।”

কবিগানের শুরু হয় 'বন্দনা'র মাধ্যমে। এই অংশে কবিয়াল বিভিন্ন দেবদেবী ও উপস্থিত দর্শক, শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তাঁর শ্রদ্ধা তর্পন করে কবিগানের সূচনা করেন। একে উদ্বোধনীও বলা যায়। এর পরেই গাওয়া হয় ভবানী বিষয়ক গান। একে কেউ কেউ আবার 'আগমনী'ও বলে থাকেন।

কবিগানের পর্ব সমূহ :
১) বিজয়া বা ভবানী ('আগমনী) বিষয়ক : উমা বা দুর্গার বন্দনাসূচক গান।
২) সখি সংবাদ : রাধাকৃষ্ণের ব্রজলীলা বিষয়ক।
৩) বিরহ : সাধারণ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ বিরহ সংগীত।
৪) খেউড় : দেবদেবীদের নিয়ে লেখা কল্পিত মাঝে মধ্যে রীতিমত অশ্লীল গীতসম্বৃদ্ধ গান।
৫) লহর : একদম নির্ভেজাল ব্যক্তিগত আক্রমন। অশ্লীল শব্দ চয়নে গান গেয়ে প্রতিপক্ষকে অপমানকর আক্রমন করা।

কবিগানের কাল ও বিশিষ্টতা:
বাংলায় কবিগানের প্রারম্ভিক কাল হিসাবে, ড: সুশীল কুমার দে, যিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী, ভারতীয় ভাষা এবং সংস্কৃতের লেক্‌চারার ছিলেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর রীডার ও ক্রমে সংস্কৃতের প্রধান অধ্যাপক হিসেবেও নিযুক্ত হন তিনি। লণ্ডন স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজে সংস্কৃত অলঙ্কার সাহিত্যের
ইতিহাসের অভিসন্দর্ভের জন্য 'ডি.লিট' উপাধি পান। তিনি বলেছেন, 'অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে, এমনকি সপ্তদশ শতাব্দীতেও কবিগানের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।'

কবিগানের আরম্ভের পূর্বে প্রায় চারশো বছর সেই পঞ্চদশ শতক হতে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বৈষ্ণব পদাবলীর। তখনতো কানু বিনে গীত ছিলনা। কী বৈষ্ণব, সনাতনী আর বা মুসলমান, অনেক পদকর্তাই বৈষ্ণব পদাবলী রচনা করেছেন। বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস এঁরা বৈষ্ণব পদাবলী রচয়িতাদের মধ্যে বিশিষ্ট জন।

''সই কেমনে ধরিব হিয়া।
আমার বঁধুয়া আন বাড়ি যায়
আমার আঙিনা দিয়া।।''

অথবা,
"চলে নীল সাড়ি নিঙাড়ি নিঙাড়ি
পরান সহিতে মোর।
সেই হৈতে মোর হিয়া নহে থির
মন্মথ জ্বরে ভোর ।।"
---চন্ডীদাসের এ পদগুলিতো এখনও মানুষেয় স্মৃতিতে ভাস্বর।

আর বৈষ্ণব পদাবলীর সংজ্ঞাইতো দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো,
"আত্মেন্দ্রীয় প্রীতি ইচ্ছা তারে বলি কাম
কৃষ্ণেন্দ্রীয় প্রীতি ইচ্ছা ধরে প্রেম নাম ।।"

অপ্রাসঙ্গিক হলেও সপ্তদশ শতাব্দীর কবি আবদুল হাকিমের সেই বিখ্যাত পঙতিগুলি উদ্ধৃতির লোভ সামলাতে পারলাম না।

"যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপ নিরঞ্জন।।
সর্ব বাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।
বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।।
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে-সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।
মাতাপিতামহক্রমে বঙ্গেত বসতি।
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।"

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক কালে অর্থাৎ যে সময়কাল পর্যন্তকে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ বলা হয়েছে তখন 'মঙ্গলকাব্য' নামে এক ধরনের ধর্মবিষয়ক আখ্যানও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। মঙ্গলকাব্যের প্রধান তিনটি ধারা, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও ধর্মমঙ্গল।
সর্পদেবী মনসার মাহাত্ন্যকথা মনসামঙ্গল কাব্যের উপজীব্য বিষয়। মনসামঙ্গলের প্রায় শতাধিক কবির নাম পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে কানাহরি দত্ত, বিজয় গুপ্ত, নারায়ন দেব, বিপ্রদাস পিপিলাই, দ্বিজ বংশীদাস ও কেতকদাস ক্ষেমানন্দ সমধিক পরিচিত।

দেবী চণ্ডীর মাহাত্ন্যকথা চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের উপজীব্য বিষয়। দেবী চণ্ডীর বিভিন্ন নাম আছে। দূর্গা, সারদা, অন্নদা ইত্যাদি। তাই অন্নদামঙ্গল ও সারদামঙ্গল কাব্য চণ্ডীমঙ্গলধারাভুক্ত, পৃথক কোন ধারা নয়। কবি মানিক দত্ত, কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম, দ্বিজ মাধব, ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর চণ্ডীমঙ্গলধারার প্রধানকবি।

ধর্মঠাকুরের মাহাত্ন্যকথা ধর্মমঙ্গল কাব্যের উপজীব্য বিষয়। রামাই পন্ডিতের ‘শুন্যপুরান’ ও ময়ূর ভট্টের ‘হাকন্দপুরান’ ধর্মমঙ্গলধারার দুটি বিখ্যাত কাব্য।ময়ূরভট্ট, রামাই পন্ডিত, মানিকরাম গাঙ্গুলী, রূপরাম চক্রবর্তী ধর্মমঙ্গলকাব্যধারার প্রধানকবি।

ভারতচন্দ্র রায়গুনাকরের ‘অন্নদামঙ্গল’, মঙ্গলকাব্যের একটি বিশেষ কাব্যগ্রন্থ। অন্নদামঙ্গল্ কাব্য তিনটি খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ড ‘অন্নদামঙ্গল’; দ্বিতীয় খন্ড ‘বিদ্যাসুন্দর’ও তৃতীয় খন্ড ‘মানসিংহ’।

কবিওয়ালদের প্রকৃত বিকাশকাল হিসাবে ধরা হয়, ১৭৬০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যবর্তী সময়কে। এই সময় বাংলা কাব্যের ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক উপাদানগুলি ফিকে হয়ে আসতে শুরু করেছিল। বাংলা কাব্যও বৈষ্ণব কবিতার ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল।

তো, ঠিক এই সময়েই কলকাতা ও তার আশপাশের মানুষের কাছে এই বৈষ্ণব পদাবলী ও মঙ্গলকাব্যের আবেদন অনেকটাই ফিকে হয়ে আসতে শুরু করে। আর সেই শুন্যতা পুরণের অভিপ্রায়েই কবিগানের সূচনা। বাংলার সাহিত্যাসরে প্রায় শত বছর কাল এই কবিগান প্রাধান্য বিস্তার করে বাংলা সাহিত্যের ক্রমধারাকে বজায় রাখে।

ড. সুশীল কুমার দের মতে, কবিয়ালদের অধিকাংশই ছিলেন সমাজের নিচু তলার মানুষ। সমাজের নিচু তলার মানুষদের মধ্যেই ছিল এঁদের জন্ম ও বিচরণ। তাই এই সমাজের চিন্তাভাবনা অনুভূতিগুলি তাঁরা ভালই বুঝতেন। নিচু তলার মানুষদের মধ্যে এঁদের জনপ্রিয়তাও ছিল অবিসংবাদী।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙ্গালী কবি ও সাহিত্যিক। তিনি 'সংবাদ প্রভাকর' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ১৮৫৪ সালে সর্বপ্রথম ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কবিগান সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি তাঁর এই পত্রিকায় কবিগান ও কবিয়ালদের সম্পর্কে নানাবিধ তথ্য প্রকাশ করেন। এভাবেই পত্রিকাটির মাধ্যমে কবিগানের বিস্তৃতি ঘটতে শুরু করে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ও ড. হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের মতো খ্যাতনামা সাহিত্য গবেষকরা কবিগান নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন।

কবিওয়ালাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হচ্ছেন : গোঁজলা গুঁই, রাসু-নৃসিংহ, হরু ঠাকুর, ভবানী বেনে, কেষ্টা মুচি, নিলু ঠাকুর, ভোলা ময়রা, নিতাই বৈরাগী, রাম বসু, এন্টনি ফিরিঙ্গি, যজ্ঞেশ্বরী,নিধুবাবু, দাশরথি রায় প্রমুখ।

আগেই বলেছি, কবিয়ালদের অধিকাংশই ছিলেন সমাজের নিচু তলার মানুষ। কবিয়ালগণ তাৎক্ষণিকভাবে মুখে মুখে কবিতা রচনা করে গেয়েছেন বটে, তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাঁরা কখনোই এগুলো লিখে রাখেননি বা এসব গান সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার দিকটি উপলব্ধি করতে পারেননি। ঐ সময় কোন ছাপাখানাও ছিল না। তাছাড়াও তাদের পৃষ্ঠপোষকগণও কখনো এই গানগুলি সংগ্রহ বা সংরক্ষণের কথা ভাবেননি। তৎকালে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে কবিগানের আসর বসতো, এবং এ আসর বসার মাঝেই ছিল কবিগানের স্বার্থকতা।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কবিগানের আয়োজকেরা ছিলেন, রাজা-মহারাজা বা জমিদার অথবা ধনিক-বণিক শ্রেণীর মানুষ। সাধারণ জনগণও সেই সব আসরে দর্শক-শ্রোতা হিসাবে উপস্থিত থেকে আসরের আনন্দ উপভোগ ও বর্ধনও করার সুযোগ পেতেন বটে। সত্যি বলতে কী, এই সাধারণ জনগণই ছিলেন তৎকালে কবিগানের সমঝদার এবং আসরের প্রাণস্বরূপ।

কোলকাতার রাজা নবকৃষ্ণ দেব আর তাঁর ছেলে রাজকৃষ্ণ এই সব গানের খুব উৎসাহ দিতেন। নবকৃষ্ণ দেবের সভাসদ, কুলুইচন্দ্র সেন রাগ-রাগিনী আর বেশ কিছু বাজনার সাহায্য নিয়ে এই খেউড় গানকে শুদ্ধ করে তোলেন। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন কুলুইচন্দ্র সেনের খুবই নিকট আত্মীয়, রামনিধি গুপ্ত বা নিধুবাবু।

এই কবিগানের মধ্য দিয়েই উঠে আসেন নিধু বাবু ও তাঁর টপ্পাগান। তাঁর এই টপ্পাগান তখনকার রক্ষণশীল সমাজ সহজে মেনে নিতে পারেনি। তখন পর্যন্ত দেব-দেবীর প্রেমাখ্যানই বৈষ্ণব পদাবলী বা মঙ্গলকাব্যের বিষয়বস্তু ছিল।কবিয়ালেরাও সেই ধারা বজায় রেখেই গান করতেন। নিধুবাবু তাঁর টপ্পাগানে মানব-মানবীর প্রেমকে উপজীব্য করে গান রচনা করে গানের ধারায় পরিবর্তনের সূচনা করেন। তবে সে সময়ে কলকাতার বাবুসমাজে ও সুধীসমাজে এবং বড়বাড়ির অন্দরমহলে নিধুবাবুর টপ্পা খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

তাঁর সেই বিখ্যাত দেশপ্রেমের গান,
"নানান দেশের নানান ভাষা।
বিনে স্বদেশীয় ভাষে পুরে কি আশা
কত নদী সরোবর কিবা ফল চাতকীর
ধরাজল বিনে কভু ঘুচে কি তৃষা॥"

নিধুবাবুর টপ্পা কিন্তু আজও কমবেশি প্রিয়। তাঁর একটি জনপ্রিয় গান

চারণকবি মুকুন্দ দাস প্রকৃতপক্ষে ছিলেন একজন কবিয়াল। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুকুন্দ দাসের গান সাধারন মানুষদের দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল।

সে সময়ের কয়েকজন প্রসিদ্ধ কবিয়াল:

গোঁজলা গুঁই:
ইনি কবিগানের আদি গুরু হিসেবে পরিচিত। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত গোঁজলা গুঁই এর গান থকেই কবিগানের সূচনা ধরেছেন। তিনি সে সময়ে পেশাদার দল গঠন করে ধনিগৃহে অর্থের বিনিময়ে এ গান গেয়ে বেড়াতেন।দুর্গাদাস লাহিড়ি তাঁর সম্পাদিত "বাঙালীর গান" ১৯০৫ বইতে গোঁজলা গুঁই সম্পর্কে উচ্চধারনা পোষণ করেছেন।

হরু ঠাকুর:
কলকাতার এক ব্রাহ্মণ পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতৃদত্ত নাম হরেকৃষ্ণ দিঘাড়ী। 'কবিয়াল' খ্যাতি লাভের পর তিনি ‘হরু ঠাকুর’ নামে পরিচিত হন। শুরুর দিকে হরু ঠাকুর সৌখিন গায়ক হিসেবে পারিতোষিক নিতেন না। পরে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান গেয়ে প্রচুর অর্থের মালিক হন। তিনি কলকাতা, বর্ধমান, কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুর প্রভৃতি স্থানে ধনাঢ্যদের গৃহে গান পরিবেশন করতেন। বিশেষত কলকাতার শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণের পৃষ্ঠপোষকতা ও সভাসদের আসন লাভ করে তিনি মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন।

হরু ঠাকুরের এই কবিগানটি বিমল মিত্রের 'আসামী হাজির' উপন্যাসে উল্লেখিত হয়েছে।

৹৹ মহড়া:
আগে যদি প্রাণসখি জানিতেম,
শ্যামের পিরিত গরল মিশ্রিত
কারো মুখে যদি শুনিতেম।।
কুলবতী বালা হইয়া সরলা,
তবে কি ও বিষ ভখিতেম!

চিতেন:
যখন মদনমোহন আসি
রাধা রাধা বলে বাজাতো বাঁশি
যদি মন তায় না দিতেম!
সই, আমিও চাতুরী করিয়া সে হরি
আপন বশেতে রাখিতেম।।

অন্তরা:
হইয়ে মানিনী যতেক গোপিনী
বিরহ জ্বালাতে জ্বলিতেম।
সেই ষড়জাল সম সে বঙ্ক নয়ন জানিলে কি তায়
এ কোমল প্রাণ সমর্পণ করিতেম।।
আগে গুরুজনে বুঝালে যখনে তা যদি গ্রহণ করিতেম,
রিপুগণো বশে রহিত অনাসে, মনের হরিষে থাকিতেম।। (কবিয়াল হরুঠাকুর)

রামবসু:
রামমোহন বসু অল্প বয়সেই কবিগান রচনা শুরু করেন। ছিলেন আধুনিক মানসিকতায় লালিত। তাঁর গানে ছিল আধুনিক জীবনধারার ছোঁয়া। মানবমুখী বাস্তবতা তাঁর গানের বৈশিষ্ট।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের 'তিন সঙ্গী' গল্পগ্রন্থে হরি ঠাকুর ও রাম বসুর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে বইতে ননীমাধব চরিত্রের উত্তম পুরুষের বয়ানে কবিগুরু লিখেছেন, 'অনেকদিন আগে ছেলেবেলায় হরু ঠাকুর কিংবা রাম বসুর যে গান শুনে ভুলে গিয়েছিলুম, যে গান আজ রেডিওতে বাজেনা, গ্রামোফোনে পাড়া মুখরিত করেনা, জানি নে কেন মনে হল সেই গানর সহজ রাগিণীতে ঐ বাঙালি মেয়েটির রূপের ভুমিকা--- মনে রইল সই মনের বেদনা।'

৹৹ মহড়া:
মনে রৈল সই মনের বেদনা।
প্রবাসে যখন যায়গো সে,তারে বলি,বলি
বলা হলোনা।
শরমে মরমের কথা কওয়া গেলনা।
যদি নারী হয়ে সাধিতাম তাকে
নিলজ্জা রমনী বলে হাসিত লোকে।
সখি,ধিক্ থাক আমারে,ধিক সে বিধাতারে,
নারী জনম যেন করেনা।

চিতেন:
একে আমার যৈবনকাল তাহে কালবসন্ত এলো,
এ সময় প্রাণনাথ প্রবাসে গেল।
যখন হেসে হেসে সে আসি বলে,
সে হাসি দেখে ভাসি নয়নের জলে।।
তারে পারিকি ছেড়ে দিতে, মন চায় ধরিতে,
লজ্জা বলে, ছিঃছিঃ ধরোনা, ধরোনা।।

অন্তরা:
তার মুখ দেখে, মুখ ঢেকে, কাঁদিলাম স্বজনি
অনাসে প্রবাসে গেল সে গুণমনি।
একি সখি হল বিপরীত, রেখে লজ্জার মান,
মদনে দহিছে এখন এ অবলার প্রাণ।। (কবিয়াল রামবসু)

ভোলা ময়রা:
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ভোলানাথ মোদক। তাঁর পারিবারিক পেশা ছিল ময়রাবৃত্তি। কলকাতার বাগবাজারে পিতা কৃপারামের মিষ্টির দোকান ছিল। ভোলানাথ সামান্য শিক্ষালাভ করে পিতার দোকানে কাজ করতেন। পরে কবিয়ালরূপে খ্যাতি লাভ করলে তিনি ভোলা ময়রা নামে পরিচিত হন। তাঁর জীবন নিয়ে 'ভোলা ময়রা' নামে একটি চলচচিত্র নির্মিত হয়। নাম
ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন, তৎকালের বাংলার জনপ্রিয় নায়ক উত্তমকুমার।

কবিগানের লোকমনোরঞ্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভোলা ময়রাকে সমকালের প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করে বলেছেন, '‘বাঙ্গালা দেশের সমাজকে সজীব রাখিবার জন্য মধ্যে মধ্যে রামগোপাল ঘোষের ন্যায় বক্তার, হুতোম প্যাঁচার ন্যায় রসিক লোকের এবং ভোলা ময়রার ন্যায় কবিওয়ালার প্রাদুর্ভাব হওয়া নিতান্ত আবশ্যক।’'

রাজা-মহারাজাদের পছন্দ এবং আগ্রহের কারণে এক সময়ে কবিগানে অশ্লৃলতা বা খেউড় যুক্ত পদ গীত হতে শুরু করে। ভোলা ময়রা ছিল এই অশ্লৃলতার বিরুদ্ধে। তিনি সেই মর্মপীড়া থেকে এই গানটি রচনা করেছিলেন।

পরে অবশ্য দর্শক-শ্রোতার চাহিদার কারণে তিনিও খেউড় শুরু করেন এবং এই খেউড়ে যথেষ্ট বুৎপত্তিও লাভ করেন।

যজ্ঞেশ্বরী :
সে সময়ের মহিলা কবিয়াল। তাঁর নিজের কবিগানের দল ছিল এবং তিনি নিজেই গান রচনা করতেন। তিনি বেশ স্বপ্রতিভ এবং বুদ্ধিমতী মহিলা ছিলেন। কবিয়াল হিসাবেও তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন।

এ্যন্টনী ফিরিঙ্গি:
পুরো নাম, হ্যান্সমান এ্যন্টনী। বিখ্যাত কবিয়াল এ্যনটনী ফিরিঙ্গি ছিলেন জন্মসূত্রে পর্তুগিজ। তাঁর জীবনী অবলম্বনেও একটি জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এই ছবিতে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি অভিনেতা উত্তম কুমার। শুরুর দিকে এ্যন্টনী নিজে তাৎক্ষণিক গান বাঁধতে পারতেন না। তাঁর বাঁধনদার ছিল গোরক্ষনাথ। পরে অবশ্য এ্যন্টনী নিজেই গান বাঁধতে শুরু করেন এবং তাঁর আগমনী পর্যায়ের একটি গান অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়।

এ্যন্টনী একজন অন্যভাষী হয়েও তিনি বাংলার বিভিন্ন ধর্ম, শাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি সম্বন্ধে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বাঙালির
সমস্ত রীতি-নীতি, সমাজ দরশনও আত্মস্থ করেছিলেন। তাঁর জীবনাচরণ থেকে ধারণা পাওয়া যায়, তিনি সত্যিই কোন ধর্মানুসারী ছিলেন না।
মানুষের ধর্মকেই তিনি নীতিজ্ঞানে পালন করেছেন। তাইতো তার উপলব্দজাত সেই বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পঙতি, 'খ্রীস্টে আর কৃষ্টে কিছু তফাৎ নাইরে ভাই, শুধু নামের ফেরে মানুষ ফেরে এ কোথাও শুনি নাই।'

এ্যন্টনীর নির্মিত কলকাতার বৌবাজারের কালীমন্দিরটি 'ফিরিঙ্গি কালীমন্দির' নামে এখনও এ্যন্টনীর অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

ভোলা ময়রা ও এ্যন্টনী ফিরিঙ্গির মধ্যে কবিগানের লড়াইয়ের গানগুলি তৎকালে মানুষের মুখে মুখে ফিরতো।

বৈষ্ণব পদাবলী ও মঙ্গলকাব্যের ক্ষয়িঞ্চু সময়কাল থেকে পরবর্তী বাংলা সাহিত্য-সংগীতের অন্যতম পঞ্চ-প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাধ সেন এবং কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাবের মধ্যবর্তী প্রায় শতবর্ষকাল যাবত এই অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কবিয়ালেরা যা কিছু রচনা করেছেন, যে সকল গানের মাধ্যমে মানুষের মনোরঞ্জন করেছেন, তা সে হোকনা কেন স্থূল, শ্লীল-অশ্লীল, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই সময়কালকে শূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করে এক সেতুবন্ধ রচনা করে গিয়েছেন, তাতো কোন হিসাবেই ফেলনা নয়। আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, আমরা সেই সব কীর্তিগাঁথাকে সংরক্ষণ করতে পারিনি।

তবে এটাও সত্য যে ঐ সময়ে প্রচলিত দু-একটি বচন থেকে উঠতি বাবুসমাজের স্খলনের চিত্রটি ভাল ভাবেই ফুটে উঠেছে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আশির্বাদ পুষ্ট হুতোমের ছড়া,
"আজব শহর কলকেতা, রাঢ়িবাড়ি-জুড়িগাড়ি মিছে কথার কী কেতা!
এটা ক্ষ্যামা খানকির কোঠাবাড়ি আর ভদ্রভাগ্যে গোলপাতা।৷"


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

এক লহমা এর ছবি

হাততালি চমৎকার!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

আয়নামতি এর ছবি

উঁকি দিয়ে গেলাম। পরে এসে পড়বো ভাইয়া হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

উঁকি দিয়ে পোস্টের অবয়ব দেখে আর ঝুঁকি নিলেন না, তাইতো! হাসি

আয়নামতি এর ছবি

না বাপু, সময় ছিল না তখন সত্যিই। বলি আপনি আজ্ঞে কেন রেগে টং

লাল কমল এর ছবি

সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত "জাতিস্মর" ছবিতে আপনার লেখার বিষয় গুলো খুব সুন্দর ভাবে দেখানো হয়েছে। যদি না দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই দেখবেন।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

কবিগান বিষয়ক অনেকগুলো ছবি যেমন, 'কবি' 'ভোলা ময়রা', 'এ্যান্টনী ফিরিঙ্গি', 'পলাতক', 'জাতিস্মর' সবগুলোই দেখেছি।
ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্য। হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

সত্তর-পচাত্তর বছর আগে পর্যন্ত এসে থেমে গেলেন কেন? এর পরেও তো অনেক জন, অনেক কথা, অনেক গান আছে। আলেক দেওয়ান, খালেক দেওয়ান, কানা আবুল সরকার, সফিউদ্দিন সরকাররা তো এখনো গেয়ে যাচ্ছেন। পালা গান, বৈঠকি গান এখনো নিঃশেষিত হয়ে যায়নি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তা ঠিক। তবে কিনা পোস্টের অবয়ব অনেক বড় হয়ে যাওয়া আর সত্যি বলতে কী, আমি সেই আমলটাকেই ছুঁতে চেয়েছিলাম।
ধন্যবাদ, পড়া এবং মন্তব্যের জন্য। হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আরে মিঞা, কথা নাই, বার্তা নাই, একবার আঙ্গুল দিয়া গুঁতান, একবার পপকর্ন দেখান, বিষয়ডা কি! হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

টাইম নাই প্রৌঢ়দা, এখন বইমেলায় যাইতাছি, আইসা ব্লগামুনে দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

তুমি একটা চুর, তুমি একটা চুর ওওও চুর শয়তানী হাসি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

অ্যাঁ আঁই কি কইচ্চি? চিন্তিত

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

শান্ত এর ছবি

ভালো লেগেছে। আরোও লিখুন কবি গান নিয়ে।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, উৎসাহ যোগাবার জন্য। হাসি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

চলুক । এই তো, আবার ফর্মে ফিরেছেন, বেশ! বেশ!!
আমি ঘটনাক্রমে বারকয়েক এ যুগের কবিয়াল কাঙালিনী সুফিয়াকে দেখেছি কবি গানের মঞ্চ আসরে। মঞ্চে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে একজন জব্বার কবিয়ালের নাম মনে আছে। আমার দেখা কবিগানের অনুষ্ঠানে প্রতিবারই তর্কের বিষয়বস্তু ছিল নারী কিংবা পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব। কাব্যিক তর্কের মাঝে ধর্ম এবং নীতিশাস্ত্রের বিভিন্ন তত্ত্ব এবং সে সবের ব্যাখ্যারাজীর সাবলীল উপস্থাপনের নৈপুণ্য দেখে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাবনত না হয়ে পারা যায় না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সেই সত্তরের দশকে বিভিন্ন মফস্বল শহরের আনাচে কানাছে ঘুরে ঘুরে কবিগান, যাত্রাপালা, ঝুমুরপালা, খেমটা ইত্যাদি দেখে বেড়াতাম। (আমার চারিত্রিক গুণাবলীর পরিচয়তো আগেই পেয়েছেন।) লইজ্জা লাগে
তখনই জেনেছি, একজন যোগ্য কবিয়ালকে বিভিন্ন ধর্ম, শাস্ত্র, দর্শন, নীিশাস্ত্র, সমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও স্বশিক্ষিত বটেন।
ধন্যবাদ, বিষদে মন্তব্যের জন্য। হাসি

আয়নামতি এর ছবি

ভোলা ময়রার জন্মস্হান নিয়ে গিঠ্ঠু লাগলো তো!এটা দেখেন ওখানে বেশ কিছু কবি গানের নমুনা পাবেন।
এক সময়ে এই কবিগান সমাজে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে পড়ে যে বাংলাসাহিত্যের কিছু শাখা নাকি ত্রাহি মধুসূদন ডাক ছেড়েছিল? এ বিষয়ে কিছু জানা থাকলে লিখুক না প্লিজ!

--------

তৎকালীন সমাজের নাক সিঁটকানো বাবুদের হাতে আমাদের লালন ফকিরও কমবেশি নাকাল হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৃষ্ঠপোষকতায় লালনের তথাকথিত ভদ্র সমাজের উঠোনে পা রাখার পথটা সহজ হয়। অথচ মজার ব্যাপারটা দেখেন অনেক কবিয়াল তাদের গানের আসর দিয়ে রাজা বা জমিদারদের বৈঠকখানার জৌলুশ বাড়ালেও ওদেরকে ছোটজাত, অচ্ছুৎ ইত্যাদি বাগাম্বড়ে পিছিয়ে থাকেনি বাবুসমাজ। স্ববিরোধীতা আর কাকে বলে! এসব ভাঁড়ামো না করে যদি তাৎক্ষণিক রচিত সেই সব কবিগানগুলো লিখে ফেলার ব্যাপারে এট্টু সচেতন হতেন রাজাবাবু কিংবা জমিদারবাবুরা তাহলে আজকে বাংলা কবিগানের ভাণ্ডার কেমন হতো ভাবুন!
--------
আমাদের দুখু কবিও তো লেটোর দলে ছিলেন কিছুদিন। এটা কবিগান জাতীয় ব্যাপারই তো, নাকি ভুল জানি( ভুল হলে শুদ্ধ করার অনুরোধ থাকলো)?
বাংলাদেশের ময়মনসিং, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী ইত্যাদি অঞ্চলে বেশ কবি গানের বিস্তার-বিকাশ ঘটে এবং সেসব খুব কমমাত্রায় হলেও এখনো বহমান। এসব নিয়েও আরেকটা পর্ব আসতে পারে। গম্ভীরা কি কবিগানের মধ্যে পড়বে? জানিনা সঠিক।
এ সম্পর্কে তেমন জানি না, তবে জানার আগ্রহ ব্যাপক। পোস্ট পড়ে শেষ হইয়াও হইল না শেষের অতৃপ্তি থেকেই গেলো কিন্তু!
এর আরো কিছু পর্ব আসতে পারে কিন্তু ভাইয়া। পোস্টের মেদভূঁড়ি কিংবা কেউ পড়বে না ইত্যাদি মাথায় না রেখে লিখে ফেলুন যে কয় পর্ব পারা সম্ভব। অন্তত আমার মত যারা এ বিষয়ে নিরেট মাথার তাদের কথা ভেবে হলেও লেখা উচিৎ হাসি
বাংলাদেশের কবিগান বিষয়েএটা হয়ত কাজে আসতে পারে।
------
যাত্রাপালা নিয়েও আমার ভীষণ আগ্রহ আছে। আস্তে আস্তে এই শিল্পটাও মরতে বসেছে কেমন। এটা নিয়ে একটু ভাবুন, ভাবনা শেষে লিখে ফেলুন। সাহায্য-সহযোগিতার প্রয়োজন হইলে আওয়াজ দেবেন। 'সঙ্গে আছি, এগিয়ে চলুন' বলে যথা সময়ে সঁটকে পড়বো দেঁতো হাসি ভালো থাকবেন ভাইয়া।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। বাবুরা নাক সিঁটকান এমন আরো দুটো জিনিস - পক্ষীর গান আর খ্যামটা নাচ। এ'দুটো 'নাই' হয়ে গেছে। বেদেদের নাচ-গান, বাঁদর নাচ, ভালুক নাচ এমন আরো অনেক নাক সিঁটকানো জিনিস অচিরেই 'নাই' হয়ে যাবে।
২। যাত্রাপালার মরণ সম্ভবত ঠেকানো যাবে না। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি শহুরে মঞ্চে চালালে হয়তো আরো কিছুদিন তার প্রাণ ধুকপুক করে বাঁচবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

সত্তরের দশকে যাত্রাপালা দেখার জন্য দিগ্বিদিক দৌড়ে বেড়াতাম। আমি 'নট্য কোম্পানী'র যাত্রাপালাও দেখেছি। বিগত দীর্ঘকাল আর যাত্রা দেখা হয়না। মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ঘ্যাচাং

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দুঃখিত দিদি, কবিগান নিয়ে আর এগুবোনা। অন্য কয়েকটা বিষয় নিয়ে শুরু করেছি। দেখি কবে নাগাদ নামাতে পারি!
বিষদে কথনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদগো দিদি হাসি

আয়নামতি এর ছবি

আব্দার না রাখলে কেম্নে হাসি মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এই এমনে [img]হাসি by Kabir Ahmed 26, on Flickr[/img]

আয়নামতি এর ছবি

দিলাম হাসি দেঁতো হাসি খুশি?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

দিলখুশ!

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

চমৎকার পোস্ট।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ। হাসি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আমার খুব প্রিয় একটা বিষয় পৌঢ়দা। অনেক অনেক ভালো লাগল।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধন্যবাদ, উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যের জন্য। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।