সহমত

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৫/০৯/২০১৩ - ৪:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত সপ্তাখানেক ধরে মাথাটা একদম এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল, রাজ্যের চিন্তায়। এমনিতে আমার মাথায় চুল পরাজিত সৈনিকের মত পিছু হটেছে। চকচকে ভাবটা ঢাকবার জন্যে গুটিকয় যা অবশিষ্ট আছে, মেজাজ খারাপের চোটে তাও ছিঁড়ে ফেলবার যোগার। এই মুহূর্তে রাগ প্রশমিত হয়েছে সচলে সাক্ষী সত্যানন্দের দিনপঞ্জিকা খানা আর তাতে চ উ'র খাসা মন্তব্যটি পড়ে। কেউ যখন একটি বিষয় নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে নিজেকে বড্ড অসহায় বোধ করতে থাকে আর তখন যদি অন্য কারো মানসিকতায় নিজের চিন্তাধারার প্রতিবিম্ব দেখতে পায়, এ কি পথহারা মুসাফিরের সরাইখানার সন্ধান পাওয়া নয়? খুলে বলি-

অনেকেই বলে থাকেন মুক্তিযুদ্ধে যার বাবা মারা গেছে কিংবা আপন বোন ধর্ষিতা হয়েছে তারাই স্বজন হারানোর বা সম্ভ্রম হারানোর মর্ম বোঝে। সারা দেশ রাজাকারদের আর পাকিস্তানীদের ক্ষমা করলেও ঐ মানুষটি কখনই তা করবে না। অনেকের এই বহুব্যাক্ত কথাটায় আমার ঘোর আপত্তি আছে। এবার ছোট্ট একটি কনফেশন- সরকারী চাকরীর সুবাদে ৬৯ সাল থেকে আমার বাবা মা ভাই বোন এবোটাবাদে থাকতো। মুক্তিযুদ্ধের পর ৭২ এ তারা দেশে ফিরে আসে। আমার চাচারা তখন থাকতেন জার্মানে, ফুপুরা লন্ডনে, খালা, মামা ১৪ গুষ্টির মধ্যে একমাত্র আমার বড় মামা ছাড়া আর কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি বা দেশে না থাকবার কারণে সে সুযোগ পায়নি। বড় মামা যুদ্ধে আহতও হয়নি। মোদ্দা কথা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন কেউ কিছুই হারায়নি। তাই বলে কি আমি রাজাকারদের ঘৃণা করবো না? পাকিদের গালি দেবো না? আমার বিশ্বাস সচলে সচল হাচল অতিথি মিলে ঝিলে যেকজন কলম যুদ্ধে নেমেছে তাদের বেশীর ভাগেরই আমার মত অবস্থা; নিজ পরিবারের কোনো ক্ষতি না হলেও ত্রিশ লক্ষ্য প্রাণকে তারা নিজ রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় জ্ঞান করে, দুই লক্ষ্য নারীকে সহোদরা মনে করে। আমাদের এই উপলব্ধির পেছনে আছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অর্জিত জ্ঞান আর পারিবারিক সত্য চর্চা। আমার মা বাবা বড় ভাই বোনকে সর্বদা দেখেছি রাজাকারদের কুকুর সম ঘৃণা করতে। তা দেখে দেখেই আমার বেড়ে উঠা। গত ফেব্রুয়ারির শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকেই ফেসবুকে, সচলে টুকটাক লিখছি, অন্যদের লেখা শেয়ার করছি। এই কয়েক মাসে সে কারণে অনেক কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে উপহাস শুনেছি। তবু হাল ছাড়িনি। তবে সার্বিক দিক বিচার করে যা দেখলাম তাতে ফলাফল প্রায় শূন্যের কোঠায়। আমার লেখা, আমার চিন্তাধারা শুধুমাত্র অনলাইনে আবেগ ঘন কিছু ফন্ট; সে ফন্ট সঞ্চারিত হয়নি ধানের ক্ষেতে, নদীর ঘাটে, সে ফন্ট চৈত্রের সোনা রোদের মত ছড়িয়ে পড়েনি অগণিত মানুষের মিছিলে মিছিলে। যারা অনলাইনে লিখি আর যারা পড়ি, আমার ও আমাদের ফন্ট শুধুমাত্র সেই অনলাইন ব্যাবহারকারীদেরই হাসি কান্নার খোঁড়াক হবে সে উদ্দেশ্য কাউরো ছিল না। শুধু পড়েই আমরা ক্ষান্ত হয়নি, ভাল একটি গঠনমূলক লেখা নিয়ে আমরা অফলাইনে বন্ধুদের আড্ডায়, আত্মীয় বাড়ীর নেমতন্নে আলাপ করেছি। চ উ'র ত্যানা প্যাঁচানো, বাতের বালা, লছাগু গছাগু আলাপ করতে করতে প্রায় মুখস্তই হয়ে গেছে। লাভের লাভ বিচাকলা। শুনার সময় হাসতে হাসতে একেকজন গড়িয়ে পড়ে, অথচ দিন কয়েক বাদে দেখা হতেই বলে বসে- মুসুল্লিগুলিরে কানে ধরাইয়া এম্নে বেজ্জতি না করলেই পারতো। দিন যায়, দিন ও দিনের সমষ্টিতে সপ্তা এমনকি মাসও যেতে থাকে আর সেই অনুপাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমতে থাকে আমার বন্ধু সংখ্যা এবং সাপ্তাহিক নেমন্তন্ন। তাতে বিচলিত হয়নি। কিন্তু সপ্তা খানেক ধরে যেন বড্ড হাপিয়ে উঠেছি। মনে হচ্ছে আমাদের এই লেখনী যুদ্ধের ফলপ্রসূ কোনো দিক নেই। আমাদের মিশে যেতে হবে ধানের ক্ষেতে, নদীর ঘাটে, মানুষের মিছিলে মিছিলে; তবেই সঞ্চারিত হবে চেতনা। আমরা পাঁচ কি দশ পারসেন্ট লোকে চাইলে রাজাকারের বিচার হবে না। গঠন করতে হবে জনমত; সে লক্ষেই অনলাইন যোদ্ধারা কাজ করে যাচ্ছে, আর তার প্রভাব কিছুটা হলেও জনমনে পড়ছে। কিন্তু আমার ঘর, আমার বন্ধুমহল, আমার আত্মীয় স্বজন সবাইকে কি একমতে আনতে পেরেছি? অন্তত আমি পারিনি। লিখবার সাথে সাথে আমাদের বাস্তব জীবনে সত্যের চর্চাটা বজায় রাখাও অত্যন্ত জরুরী। তবেইতো তৈরি হবে একটি পরিবেশ, একটি পরিমণ্ডল।

এই প্রসঙ্গে একটি সত্য ঘটনার উল্লেখ করি… (তথ্যসূত্রঃ ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’- যতীন সরকার; অংশটুকু হুবুহু লেখকের ভাষাতেই উল্লেখ করলাম)

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের আরেক অগ্রজপ্রতিম বন্ধু নাইব উদ্দিন আহমেদ। তিনি অধ্যাপক নন, আলোকচিত্র শিল্পী। আলোকচিত্র শিল্পে তার খ্যাতি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিস্তৃত। স্বাধীনতার পরে দেশে ফিরে এসে তার মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক অভিজ্ঞতার কথা শুনেছিলাম। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী হিসাবে বিভিন্ন স্থানে তাকে আলোকচিত্র তুলতে যেতে হয়েছে। এই সুত্রে তাকে পাকহানাদার বাহিনীর অফিসারদের সংস্পর্শেও আসতে হয়েছে। ওদের ক্যামেরা মেরামত করে দেয়ার ছলে ওদের অপকীর্তির অনেক ছবি ওদের ক্যামেরার ভেতর থেকে বের করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। ওগুলোই পরে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবান দলিল হয়ে গেছে।

ক্যামেরার খুঁটিনাটি বুঝে নেয়ার জন্যেই পাঞ্জাবি মেজর কাইয়ুম আসতো নাইব উদ্দিন সাহেবের বাসায়। নাইব উদ্দিনের ছেলে নিপুণের বয়স তখন মাত্র পাঁচ। মেজর তার পিস্তলটি টেবিলের উপর রেখে গল্প করছিলো। বালক নিপুণের কৌতূহল ওই পিস্তলটির প্রতি। সে সেটি নিতে চায়। মেজর নিপুণকে আদর করে কাছে টেনে নেয়। জিজ্ঞেস করে, ‘এই পিস্তল নিয়ে তুমি কি করবে?’ নিপুণ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, ‘একটা পাঞ্জাবি মারুম।’ মেজরের মুখ অন্ধকার। আর সস্ত্রীক নাইব উদ্দিন সাহেব ভয়ে একেবারে কাঠ।

যাইহোক মেজর আর কিছুই করে না। শুধু যে কথা বলে সে চলে যায় তার নির্গলিতার্থ হলো- ‘যে দেশের একটি অবুঝ বালকের পর্যন্ত পাকিস্তানি পাঞ্জাবিদের প্রতি এত ঘৃণা, সে দেশের মানুষকে কেউ পাকিস্তানের ঘেরাটোপে আটকে রাখতে পারবে না। তারা স্বাধীন হবেই।’

একজন পাঁচ বছরের শিশুর নিশ্চয়ই পাঞ্জাবি, পাঞ্জাবিদের কর্মকাণ্ড আর সেই কর্মকাণ্ডের শাস্তিস্বরূপ পাঞ্জাবিকে খুন- এই বিষয়গুলো বুঝবার কথা নয়। তবে? বিষয়টি হচ্ছে নাইব উদ্দিন ও তার স্ত্রীর পাঞ্জাবিদের প্রতি যে তিব্র ঘৃণা এবং সর্বদা তার চর্চা; তা দেখেই শিক্ষা পেয়েছে পাঁচ বছরে শিশু নিপুণ। আমাদের সেই চর্চাটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ঘরে ঘরে রাজাকারদের প্রতি তীব্র ঘৃণার বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি জনমত, একটি সহমত, একটি ঐক্যমত- এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই সপ্তাখানেক ধরে মস্তিস্ক কোষে হাজার হাজার পাখির ডানার ঝাপটা ঝাপটি। আজ সাক্ষী সত্যানন্দের লেখাটির ৭ নম্বরে উল্লেখিত প্রস্তাবটি বেশ মনে ধরেছে। সঙ্গে চ উ'র মন্তব্যটি মিলিয়ে মিশিয়ে বলা যায়- দুর্ভাগ্যবশত আমরা হয়তো বেশিরভাগ রাজাকারেরই বিচার দেখে যেতে পারবো না। রাজাকারের বিচারের সঙ্গে যেটি জরুরী সেই সার্বিক ভাবে রাজাকারের প্রতি ঘৃণা আমরা দেখে যেতে পারবো কিনা জানিনা। আমাদের দেশে রাজাকারের বিচারের বিরুদ্ধে হরতাল পালিত হয়, ভোটের স্বার্থে রাজাকারেরা রাজনীতির হাতিয়ার হয়। টকশোতে রাজাকারদের আড়াল করতে বেশ্যার মত নিজেকে বিকিয়ে দেয় এককালের ডাকসাইটে বাম নেতারা, বঙ্গের বীরেরা। আমরা খুব ভুল সময়ের মধ্যে নিজেদের বইয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আমরা বেঁচে আছি অন্যদের সময়ে। আমরা দেখে যেতে না পারলেও আমাদের একটি দায়বদ্ধতাতো আছে দেশের প্রতি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি। ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের শিক্ষায় শিক্ষিত এমন একটি প্রজন্ম গড়ে উঠবে যাদের হাতে থাকবে সত্যের প্রদীপ। আমরা আর কিছু নাই পারি, সেই ভবিষ্যৎ প্রদীপের সলতে পাকানো শুরু করি। সেই ক্ষেত্রে সাক্ষী সত্যানন্দের প্রস্তাবটি অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। আর শিশুতোষ বুড়োতোষ লেখনীর সাথে সাথে হাঁটে মাঠে ঘাটে চেতনাকে কিভাবে ছড়িয়ে দেয়া যায় সে চেষ্টাও অব্যাহত থাকুক।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ঠিক এমন করেই ভেবেছি,আপনার লিখার সাথে তাই সহমত,ঐকমত।লেখাটা উত্তম জাঝা! হয়েছে।

মাসুদ সজীব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

খাইছে... নিজের নামটা দেখে লজ্জা পাচ্ছি লইজ্জা লাগে

লাভের লাভ বিচাকলা। শুনার সময় হাসতে হাসতে একেকজন গড়িয়ে পড়ে, অথচ দিন কয়েক বাদে দেখা হতেই বলে বসে- মুসুল্লিগুলিরে কানে ধরাইয়া এম্নে বেজ্জতি না করলেই পারতো। দিন যায়, দিন ও দিনের সমষ্টিতে সপ্তা এমনকি মাসও যেতে থাকে আর সেই অনুপাতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কমতে থাকে আমার বন্ধু সংখ্যা এবং সাপ্তাহিক নেমন্তন্ন। তাতে বিচলিত হয়নি। কিন্তু সপ্তা খানেক ধরে যেন বড্ড হাপিয়ে উঠেছি। মনে হচ্ছে আমাদের এই লেখনী যুদ্ধের ফলপ্রসূ কোনো দিক নেই। আমাদের মিশে যেতে হবে ধানের ক্ষেতে, নদীর ঘাটে, মানুষের মিছিলে মিছিলে; তবেই সঞ্চারিত হবে চেতনা। আমরা পাঁচ কি দশ পারসেন্ট লোকে চাইলে রাজাকারের বিচার হবে না। গঠন করতে হবে জনমত; সে লক্ষেই অনলাইন যোদ্ধারা কাজ করে যাচ্ছে, আর তার প্রভাব কিছুটা হলেও জনমনে পড়ছে। কিন্তু আমার ঘর, আমার বন্ধুমহল, আমার আত্মীয় স্বজন সবাইকে কি একমতে আনতে পেরেছি? অন্তত আমি পারিনি।

একদম চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আমার মনে হয় চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার কাজ অব্যাহতই আছে। আপনি আপনার সমদর্শী মানুষ কম দেখছেন, এটা আসলে সব সময়ই কম ছিল। এখনকার তুলনায় আগে অনেক কম ছিল।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের সংগ্রাম চলবেই-

ফাহিম হাসান এর ছবি
চরম উদাস এর ছবি

সহমত। সহমত। বুইড়া-স্বচ্ছ-আন্তর্জাতিক-নিরপেক্ষ-অরাজনৈতিক সুশীল দিয়ে কোন পরিবর্তন সম্ভব না। এক যুদ্ধে অনেক দ্রুত জিতে গেছি আমরা - মাত্র নয় মাসে। অন্য যুদ্ধে হারি নাই এখনো। আরও নয় বছর লাগতে পারে, নব্বই বছরও লাগতে পারে। অনেকেই অনেকবার হেরে যাবে, কিন্তু সেইখান থেকে নতুন কেউ এসে আবার নতুনভাবে শুরু করবে।

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

প‌রিপূর্ণ সহমত।
চলুক

যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ,
প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল।

অতিথি লেখক এর ছবি

কে,,কবে,কখন,কি করেছে বা করবে জানি না।

আমার কথা একটাই!!

সব শালারা দৌড়ের উপরে থাক আর মাঠা দিয়া খৈ খাক।

আমার ভাষা একটাই

লীগ,দল,পার্টি বুঝিনা। আমরা বুঝি ৭১।

লেখার সাথে সম্পূর্ণ একমত।

শাকিল অরিত

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত চলুক

গান্ধর্বী

অতিথি লেখক এর ছবি

একদম মনের কথা বলেছেন, গত কয়েক মাসে পরিচিতদের এমন একটা চেহারা দেখেছি , এত বন্ধুবিচ্ছেদ হয়েছে যে এদানিং কারো সাথে কথা বলতেই ভয় পাই।
ইসরাত

আরেফিন এর ছবি

ভাইরে দুঃখের কথা আর কি বলবো? আপনার এই কথাগুলোই এতদিন কাউকে বোঝাতে পারলামনা। মাঝে মাঝে খুব টায়ার্ড লাগে।

আস্তিকতা, নাস্তিকতা, সরকার দলীয় সখ্যতা, এগুলো কোন কিছুই আমার গায়ে লাগেনা। কারনটা হচ্ছে ৭১ এ ৩০ লাখ শহীদদের, ৪ লাখ অত্যাচারিত মা বোনদের আমি আমার নিজের বাবা, মা, ভাই, বোন মনে করি। আর এইজন্যই আমাকে এতো সহজেই বিভাজিত করা যাবেনা। আমি চাই বিচার। আমার বাবা, মা, ভাই, বোনদের হত্যাকারীদের ফাঁসিই আমার একমাত্র চাওয়া। সেটা যেভাবেই হোক না কেন।

আসলে আমরা যত উচ্চ শিক্ষিত হই, ততই হাইপোথেটিকাল কথা বলতে পছন্দ করি। মাঠ পর্যায়ের মানুষের দুখ কষ্ট গুলোকে বার্ডস ভিউ, টপ ভিউ এঙ্গেল থেকেই দেখে যাই। একালের বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে দেশের কখনও কোন উপকার হয়নাই শুধুমাত্র টিভি চ্যানেলগুলোর TRP বাড়ানো ছাড়া। হবেওনা। উন্নতি হয় গার্মেন্টসের ওই গাধা মেয়েগুলোকে দিয়ে, উন্নতি হয় গ্রামের ওই খ্যাত কৃষকদের দিয়ে, উন্নতি হয় দেশের বাইরে থাকা ওই গাধা শ্রমিকদের দিয়ে। শহরের আমরা যারা রবার্ট সাহেব আছি, তাদের দিয়ে কোন লাভ নাই। গ্রামের গনি মিয়া, সলিম মিয়ারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আমার মা বোনকে রেপ করে পার পেয়ে যাবে আর আমি তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলব, কি দরকার এগুলো মনে রেখে, ভুলে যাও। এখন সময় সামনে এগুবার। আমি এটা পারবোনা। সরি। কারন আমি মানুষ। আমি সত্যি বুঝিনা, ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা, ৪ লাখ অত্যাচারিত মা বোন এদের বিচার চাইতে গেলে দেশ পিছিয়ে যাবে কেন? এগুলোর মানে কি? আজকে আমার বাবা কে কেউ হত্যা করল, সেটা ৪২ বছর কেন ৪২০০ বছর পরও তো আমি বিচার চাব। আশ্চর্য ব্যাপার, মানুষজন এগুলো কিভাবে বলে? আমরা যতই উপরের দিকে উঠতে চাই না কেন কোন লাভ নাই যতক্ষণ পর্যন্ত না নিচের ভীত শক্ত না হয়।

এই দেশের মানুষকে নিয়ে আমি সত্যি আর কোন আশা দেখতে পাইনা বোধহয় চাইওনা। তা না হলে কিভাবে এই ২০১৩ তে এসেও রাজধানীর মানুষ চাঁদে সাইদীকে দেখে? আর ভালো লাগেনা

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

সহমত জানিয়ে গেলাম।
আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে---

-নিয়াজ

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

চলুক

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।