গল্প। জলের ভুবন।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: শুক্র, ০৬/১১/২০০৯ - ১২:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এখানে দেখা যায়না তাকে। শুধু জল গড়িয়ে পড়ার আবছা শব্দে টের পাওয়া যায় নদীটির অস্তিত্ব।

পাহাড় এখানে সমতলভূমিকে স্পর্শ করেছে। বিভিন্ন রকমের ঝোপঝাড় এবং লতাগুল্মে স্থানটি কিছুটা অন্ধকার। বিকেলের দিকেই সূর্য্য পাহাড়টির অন্যপাশে ঢলে পড়ে। এখানে সন্ধ্যা নামে অনেক আগেই।

নদীটির জন্ম পাহাড়ের চূড়ায়। তিনটি ছোট ঝর্নাধারা একসাথে মিশে তৈরী হয়েছে ক্ষীণকায়া এই নদীটি। এখন শীতকাল বলে নদীটিকে শীর্ণ বলে মনে হয়, যদিও জলে স্রোতের ধার আছে। লতাগুল্মের আড়ালে আড়ালে নদীটি আপন মনে বয়ে যায়, নিজের চলার পথ সে অনেক আগেই তৈরী করে নিয়েছে।

সূর্য্য এখনো পাহাড়ের আড়ালে ঢলে পড়েনি। সবুজ গাছেদের মাথায় সূর্য্যরশ্মির মুকুট লালচে হয়ে এসেছে। পাখিরা কোন মন্ত্রবলে যেন টের পায় সন্ধ্যা আসছে, তারা বাতাসে ভর করে ভেসে আসা মেঘেদের সাথে উড়ে আসে আপন গৃহে।

আচমকা পাহাড় থেকে খসে পড়ে একটি পাথর, নদী তাকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেয়। পানির স্রোতে কিছুদুর গড়িয়ে যায় পাথরটি, তারপর একসময় জলের মধ্যে আপন স্থানটি খুঁজে পায়।

এই সবকিছুই প্রতিদিনই ঘটে। কোনকিছুই নতুন নয়। নদীটি তাই আর আগের মতোন হেসে ওঠেনা, পাথরটিকে শুধোয়না,‘কোথা থেকে এলে ভাই?’

বহুদিন ধরে নতুন কিছু ঘটেনা। নদীটি তাই আলস্যভরে বয়ে চলে।

প্রাচীন তেঁতুল গাছটির নীচে বাঁক ঘোরে নদীটি। আজ সে একটু থমকালো। নতুন একটি দৃশ্য চোখে পড়লো তার। এমনটি বহুদিন ঘটেনি।

পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্য্যের আলো সরু হয়ে এসে পড়েছে তরুণটির মুখে। হঠাৎ দেখলে মনে হয় অতিশয় দক্ষ কোন ব্যাধের লক্ষভেদী তীর বিদ্ধ করেছে ছেলেটিকে।
একটি বড় গাছের নিচের চৌকোনা পাথরটিতে বসে আছে সে। ঠিক যেন পাথরের যুবক। তার চোখের দৃষ্টি আকাশে, আবার ঠিক যেন আকাশেও নয়। সে তাকিয়ে আছে বহুদূরে, যেখানে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। তার দীর্ঘ চুলে শ্রাবণ মেঘের বিষন্নতা, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তাতে ঠিকরে যায় আলোর তীক্ষ্ন শর, মনে হয় চূর্ণ চূর্ণ স্বর্ণের আবীর। ছেলেটির পোশাক এলোমেলো, অবশ্য সে নিজেই আরো এলোমেলো।

বিস্ময়ে নদীর গতি কমে আসে।

চারপাশের প্রকৃতি ছেলেটিকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করেনি। সে ভাবছিল পিছনে ফেলে আসা গৃহের কথা, লোকালয়ের কথা এবং তার স্বপ্নের কথা। কেন সে পথে নেমেছে তা সে নিজেও জানেনা। তার কোন গন্তব্যও নেই। সে শুধু একটি জিনিষ জানে, তার হৃদয়ে কোন সুখ নেই, কোন আনন্দ নেই। কোনকিছুতেই তার কোন আকর্ষণ নেই। কেন সে এই জনমানবহীন অরণ্যে এসেছে, জানেনা সে। মাঝে মাঝে ছেলেটি ভাবে একদিন বোধহয় সে বোধশক্তি হারিয়ে গাছেদের মতো নির্বাক হয়ে যাবে।

আচমকা পাথরে ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে উঠলো একটি ছোট্ট সোনারঙ্গা মাছ। সেই শব্দে ছেলেটির চমক ভাঙ্গে। সে তাকায় নদীটির দিকে।

যুবকটির বুক ভেঙ্গে দীর্ঘশ্বাস এলো।
নদীটি যুবকের কষ্ট টের পেল। মানুষেরাই কেবল এতটা কষ্ট পেতে পারে এবং একমাত্র মানুষেরাই এতটা কষ্ট দিতে পারে।
ধীরে ধীরে সূর্য্যের আলো কমে আসছে। যুবকটি সম্বিত ফিরে চার পাশে তাকালো। কোথাও কেউ নেই। নির্জনতাই এই মুহুর্তে তার একমাত্র সহচর। অনন্ত চরাচর জুড়ে দিনশেষের বিষন্নতা, প্রকৃতির মুখে ভাষা নেই। মৃতের শহরের মধ্যে যেন সে বসে আছে। একমাত্র নদীটি ছাড়া আর কোন গতি নেই, তার বয়ে চলার শব্দটুকুই যেন জীবনকে ধারণ করে আছে।
যুবকটির হঠাৎ মনে হোল, নদীটি যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। দু চোখ ভরে দেখছে তাকে।
যুবকটির আবার বুক ভেঙ্গে দীর্ঘশ্বাস এলো। আহা- নদীটির সাথে যদি একটু কথা বলা যেতো।
ঈশ্বর বোধকরি যুবকটির কথা শুনতে পেলেন এবার। আচমকা মানুষের গলায় কথা বলে উঠলো নদীটি।
‘এতো দুঃখ কেমন তোমার?’
যুবকটি হয়তো প্রচন্ড অবাক হয়, কিন্তু তার চোখমুখ দেখে কিছুই বোঝা যায়না। যেন সে জানতো যে নদীটি তার সাথে কথা বলবে। পায়ের কাছ থেকে একগোছা ঘাস টেনে তুললো সে। তারপর ছুঁড়ে ফেললো দুরে।
‘আমি জানিনা। শুধু ভেতরটা জ্বলে সর্বক্ষন।’
জলের শব্দে নদীটির আবছা হাসি ঢাকা পড়ে যায়। মানুষেরা বড় বেশী এলোমেলো কথা বলে।
‘তোমার চোখে হতাশা, কপালের ভাঁজে ক্লান্তি আর দুশ্চিন্তা। তোমার হাতের আঙুলে পরিশ্রমের কাঠিন্য। তুমি কি তোমার যোগ্য পুরষ্কার পাওনি?’
‘আমি শুধু একটু সুখ চেয়েছিলাম, আনন্দ চেয়েছিলাম। আমি কারো চোখের তারায় বসবাস করতে চেয়েছিলাম।’
নদীটি এবার বোধহয় ক্রোধান্বিত হয়। পাথরে আছড়ে পড়ে জল। যুবকটি আবার কথা বলে।
‘বিশ্বাস করো, আমি অরণ্যে সুখ সন্ধানে আসিনি। আমি দিশেহারার মতো খুঁজছি কি আমার প্রয়োজন। লোকালয়ের জীবনে আমিও আর দশজনের মতো অভ্যস্ত হতে চেয়েছিলাম। আমারো বন্ধু ছিল, কর্ষণের উপযুক্ত ভূমি ছিল, আবাসের জন্য গৃহ ছিল। কিন্তু তবুও আমি সম্পূর্ণ হতে পারিনি।’
‘তুমি এতো অস্থির কেন? গৃহীদের তো অস্থিরতা থাকেনা।’
‘আমি বোধহয় কখনোই গৃহী হতে পারিনি। আমার আঙ্গিনার তুলসীতলায় কোনদিন সন্ধ্যাদীপ জ্বলেনি। তৃষ্ণার্ত হয়ে ঘরে ফিরে দেখেছি আমার পানপাত্র মদিরাবিহীন। আমার ঘরই আমাকে বারবার ঠেলে দিয়েছে বাইরে। অনন্তের দিকে।’
‘তাহলে তোমার শুধুমাত্র ঘরই ছিল। সেখানে কোন লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান হয়নি।’
যুবকটির মুখখানি আরো বিষন্ন দেখায়। পথ হারিয়ে যাওয়া শিশুর মতো সে বেভুল হয়ে তাকিয়ে থাকে নদীটির দিকে। সে জানেনা তাকে কোথায় যেতে হবে। সংসারে ভালবাসা ব্যতীত বেঁচে থাকা বড় কষ্টের। নদীর বুক তোলপাড় করে ওঠে।
‘পুরুষের অস্থিরতা একমাত্র রমণীরাই বোঝে। তাদের কাছেই পুরুষের একমাত্র নির্বান।’
‘আমার জন্যে কেউ নেই। আমার যন্ত্রণা আমাকেই একা ক্রুশের মতো বয়ে বেড়াতে হবে।’
‘তুমি নারীর কাছে যাও যুবক। তারা তোমায় ভালবাসা দেবে, দেবে সংসার এবং একদিন তুমি ঘরে ফিরে দেখবে সে তোমায় দিয়েছে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। তোমার সন্তান।’
‘নারীরা আমার দিকে ফিরেও চায়নি। যারা এসেছিল তারা হয়তো আমার উপযুক্ত ছিলনা। আমি যার প্রতীক্ষায় আছি, তার দেখা হয়তো আমি কোনদিনও পাবোনা।’

যুবকের দীর্ঘশ্বাস বাতাসে মিশে যায়। অরন্যের গাছে গাছে আছড়ে পড়ে তার হাহাকার ধ্বনি। নীড়ে সদ্য ফিরে আসা পাখিরা সে যন্ত্রণায় পাখা ঝাপটায়।

নদীটির কোমল হূদয় দুঃখে আচ্ছন্ন হয়ে আসে। সে আর সহ্য করতে পারেনা।

‘আমি তাকে খুঁজে দেব তোমায়। তোমার রক্তে দহনের প্রলয়শিখা। আমি খুঁজে আনবো সেই মেয়েটিকে যার শুভ্র করতলই তোমার প্রকৃত নির্বান। সেইই তোমার হূদয়ের একমাত্র স্নিগ্ধ চন্দনপ্রলেপ।’
যন্ত্রণাক্ত মুখেও যুবকটি একটু হাসে। ‘তুমি তাকে কিভাবে আনবে, নদী? তুমিতো তাকে চেনোনা। এমনকি আমিও তাকে চিনিনা।’
নদীটি দৈবজ্ঞের প্রশান্তি এবং দৃঢ়তা নিয়ে হাসে।
‘তোমার সর্বাঙ্গে যে তারই ছবি আঁকা। তোমার নিদ্রাহীন চোখের তারায় ফুটে আছে তার অপরূপ মুখচ্ছবি। তোমার বেদনার্ত কথার আড়ালে আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি সেই মেয়েটির কণ্ঠস্বরের জলতরংগ। তোমার অবিন্যস্ত চুলের ভিতরে আমি দেখতে পাচ্ছি তার করতলের মায়াময় পাঁচটি আঙুল।’
‘আমার ভিতরে সে লুকিয়ে আছে?’ যুবকের গলায় ফুটে ওঠে আশার আভাস।
‘হ্যাঁ- সেই কারণেই তো তুমি তাকে এতদিন দেখতে পাওনি। আমি তাকে তোমার কাছে নিয়ে আসবো। তুমি শুধু একটিবার আমার কাছে এসে দাড়াও। আমার জলে তোমার প্রতিবিম্বটি পড়ুক। সেই ছবিটি আমি বয়ে নিয়ে যাবো মেয়েটির কাছে। তাকে বলবো তোমার কথা। তোমার মতো সেও তোমাকে খুঁজছে।’
ধীরপায়ে যুবকটি নদীর জলে পা রাখে। ম্লান সুর্য্যের আলোয় স্বল্প আলোকিত মুখখানির প্রতিচ্ছবি এসে পড়ে নদীর বুকে। নদী সেই প্রতিচ্ছবিটিকে তার বুকে ধারণ করে রাখে।
‘আমি এবার যাই। তুমি এখানেই অপেক্ষা করো আমার জন্যে। আমি তোমার স্বপ্নমানুষীকে নিয়ে আসবো তোমার কাছে।’
জলের শব্দে নদীটির গলা মিলিয়ে যায় ক্রমশঃ। কিছুক্ষন পরই শুধু বাতাসের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায়না।

যুবকটি হঠাৎ করে চারিদিকে তাকায়। তার যেন ঘোরমুক্তি হোল। চারপাশের আলো আধারিতে প্রকৃতিকে বড় রহস্যময় মনে হয় তার কাছে। সে ঠিক বুঝতে পারেনা পূর্বেকার কথোপকথনটি যথার্থ ঘটেছিল কিনা।

সে নদীটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,‘তুমি কে? তুমি কি কোন অশরীরি আত্মা, নাকি আমার মনের কল্পনা? আমি কি প্রকৃতই তোমার সাথে কথা বলেছিলাম? নাকি এ কোন নিষ্ঠুর প্রতারনা? চুপ করে থেকোনা, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।’

তার এই প্রশ্নের কোন উত্তর আসেনা। নির্বাক জলরাশিরা শুধু আপন মনে বয়ে চলে। যুবকটি অস্থির পায়ে দলিত করতে চায় তাদের তরল গতিময়তাকে। ব্যর্থ হয়ে একসময় সে ক্লান্ত পায়ে উঠে আসে ভূমির উপর। আরও কিছুক্ষন সে অপেক্ষা করে। তারপর মন্থর গতিতে সে ফিরে যায় ফেলে আসা লোকালয়ের দিকে।

যোজনদুরে বয়ে যেতে যেতে নদীটি যুবকের প্রস্থান টের পায়। সে ম্লান হাসে আপন মনে। মানুষেরা বড় চঞ্চল এবং দুর্বলচিত্ত। তাদের কাছে আস্থা এবং ধৈর্য্য প্রত্যাশা করাটা ঠিক হয়নি।

নদীটি তবু বয়ে চলে। তাকে বহুদুরে একজনের কাছে পৌছুতে হবে।

-------------**********************----------

মিরির আজকে মন ভাল নেই। আজকে সে ইউনিভার্সিটিতে যায়নি। অথচ আজকে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। নোমান স্যারের ক্লাস সাধারণতঃ কেউই বাদ দেয়না। তার উপর স্যার বলেছিলেন আজ একটা নোট দেবেন।
মিরিদের বাড়ীটা বেশ পুরনো আমলের। মিরির দাদা আকবর মীর্জা এই বাড়ী কিনেছিলেন পার্টিশনের পরপর। তখন এই বাড়ীর নাম ছিল ‘অরন্য কুটির’। মিরির বাবা একবার চিন্তা করেছিলেন সে নামটা তুলে নতুন নাম দেবেন বাড়ীটার। মাসখানেক বিস্তর অভিধান ঘাঁটাঘাঁটি করে নাম ঠিক করা হোল ‘স্বল্পাবাস’। তার ব্যাখ্যা ছিল, যেহেতু আমরা সবাই এই পৃথিবীতে অল্প সময়ের জন্যে বসবাস করি, বাড়ীর নামের মধ্যেও সেই জিনিসটা সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া উচিত। মিরির দাদা তখনো বেঁচে ছিলেন এবং এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিলেন বলেই সেটা শেষপর্যন্ত কার্য্যকর হয়নি।
নাম নিয়ে খেলা করাটা মিরির বাবার বহু পুরনো স্বভাব। ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল বেরনোর পর জানা গেল, যে রেজিস্ট্রেশনের সময় তিনি গোপনে তার মীর্জা ইশতিয়াক রহমান নাম বদলে সুহৃদ সুকুমার করেছেন। তার মতে এই নামটাই নাকি তার স্বভাবের সাথে বেশী মানায়। ফল হিসেবে পরীক্ষায় দুর্ধর্ষ ভাল রেজাল্ট করেও তাঁকে প্রায় একমাস বাড়ীর বাইরে কাটাতে হয়েছিল। পরে মিরির দাদী তার স্বামীর হাতে পায়ে ধরে ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে আনার অনুমতি আদায় করেন।
মিরিদের নামের বেলাতেও সুকুমার সাহেব তার মুনসীয়ানার ছাপ রেখেছেন। মিরির বড় ভাইয়ের নাম আলোকিত অরিত্র, মিরির ছোট বোনের নাম সুশ্রী সুনয়নী। মিরির নাম রাখা হয়েছিল মূর্ছনা মায়াবতী। পরে দেখা গেল বাবার পদাংক অনুসরন করে রেজিস্ট্রেশনের সময় মিরিও তার নাম বদলে মিরি মীর্জা করেছে।
খবরটা জানাজানি হবার পর মিরির দাদা খুব খুশী হয়েছিলেন। মিরির হাত ধরে বলেছিলেন,‘এতদিনে উল্লুকটার যোগ্য শাস্তি হয়েছে। কথায় বলে, তোমাকে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।’
সেই থেকে মিরির বাবার নাম নিয়ে বাড়াবাড়ি বন্ধ হয়েছে, শুধু সুশ্রীর রেজিস্ট্রেশনের সময় তিনি গম্ভীর মুখে নিজে স্কুলে গিয়ে ফর্মটা ফিল-আপ করে এসেছিলেন।

মিরি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই বাড়ির কোণায় কোণায় কত স্মৃতি লুকিয়ে আছে। কত হাসি, কত মন খারাপ, কত মজা। এই বাড়ি ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয়না কোথাও। কিন্তু সেটাই হতে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে বাসায় মিরির বিয়ের কথা চলছে। সন্বন্ধটা মিরির বড় খালা এনেছেন। ছেলেটি বিদেশে থাকে, পিএইচডি করছে ইউনিভার্সিটি অফ মেরীল্যান্ডে। ছেলের মা বড়খালার ছোটবেলার বান্ধবী। খালার মতে এই রকম ছেলে নাকি কোটিতেও একটা মেলেনা। যেমন দেখতে তেমনই গুণের।

ইতিমধ্যে ছেলের মা একদিন এ বাড়ীতে বেড়াতেও এসেছিলেন ‘কতদিন তোদের সাথে দেখা হয়না’ মার্কা অজুহাত দিয়ে। ছেলের আসবার কথা দু সপ্তাহ পরে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে একমাসের মধ্যেই বিয়েটা কমপ্লিট হয়ে যাবে।

মিরি পায়ে পায়ে নীচে নেমে এলো।

একতলার একপাশের বারান্দা ঘিরে রান্নাঘর বানানো হয়েছে। মিরির মা সেখানে বসে নতুন কাজের মেয়েটিকে বটী দিয়ে কলমী শাক কোটা শেখাচ্ছেন।
‘কলমী শাক কোটা জিনিষটা খুবই ধৈর্য্যের ব্যাপার। শাকটা কুটতে হবে একদম কুচিকুচি করে, ঠিকমত খেয়াল না করলে শাকের মাপটা কিন্তু ঠিক হবে না। শাকের মাপ বড়ছোট হলে রান্নার সময়ে ভাল ভাবে সিদ্ধ হবেনা। তখন সেই শাক আর গরুর জাবনার মধ্যে কোন তফাত নাই। আমরা হলাম মানুষ, আল্লাহ্‌র সেরা সৃষ্টি। গরুর খাবার কি আমরা খেতে পারি?’
কাজের মেয়েটির মুখে স্পষ্ট বিরক্তি। তারপরও সে সম্মতির ভংগীতে মাথা নাড়ে।

বাড়ীর পিছনদিকে ছোট একটা পুকুর আছে। মিরির বাবা সুকুমার সাহেব এর নাম দিয়েছেন ‘স্নানোদক জলাশয়’। পুকুরটি একসময় হয়তো স্নানের কাজে ব্যবহৃত হোত, কিন্তু এখন সেটা নিছক জলাশয়। সাধারণতঃ বাড়ীর লাগোয়া পুকুরগুলোর চারপাশ ঘিরে অনেক গাছপালা থাকে। কিন্তু এই পুকুরটির চারপাশই ফাঁকা, শুধু ঘাটের কাছে একটা বড় তালগাছ।

গতরাতে অনেক বৃষ্টি হয়েছে বলে ঘাট এখনো বেশ পিছল। মিরি সাবধানে পা টিপে টিপে ঘাটের একদম শেষ সিঁড়িতে বসলো। মিরির এটি একটি প্রিয় জায়গা। দিনের এই সময়টিতে তালগাছটির ছায়া এসে পড়ে ঘাটের উপর। ক্লাস থাকার কারণে এই সময়টিতে মিরি সাধারণতঃ আসেনা পুকুর ঘাটে। আজ অনেকদিন পর এসে ভাল লাগছে।

পরনের শাড়ী অল্প তুলে মিরি পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসলো। জলের অবয়ব নড়েচড়ে ওঠে।
আমেরিকাতে কি এত সুন্দর কোন জায়গা আছে? এমন একান্ত নির্জনতা, এমন নিজস্ব জলরাশিতে পা ডুবিয়ে বসার মতো স্বাধীনতা? কেমন হবে সেই নাম না জানা মানুষটি? তার মুখটি স্বপ্নে দেখা সেই মুখখানির মত বিষন্ন সুন্দর হবে?

মাঝে মাঝে মিরির মনে হয় তার যেন দুরে কোথাও যাবার কথা ছিল। লোকালয়ের অন্তর্গত নয় এমন কোথাও। সেখানে একটি মানুষ যেন তার প্রতীক্ষায় অনন্তকাল ধরে বসে আছে। যার সব আনন্দ বাঁধা রয়েছে মিরির মধ্যে। স্বপ্নের মধ্যে মিরি কয়েকবার সেই মানুষটিকে দেখেছে। তার নিদ্রাহীন চোখের পাতায় প্রতীক্ষার ক্লান্তি, তার ঠোঁটের কাঁপুনিতে জমা হয়েছে শতাব্দীর অভিমান, তার শব্দহীন বিষন্নতা যেন শুধু মিরিকেই ডাকছে।

অকস্মাৎ মিরির চোখে জল এলো। একেই কি তবে ভালবাসা বলে?

মিরির একুশ বছরের জীবনে কোনদিন কেউ এসে ডাকেনি, হাত বাড়িয়ে দিয়ে কেউ বলেনি, এসো আমার সাথে। কে সেই মানুষটি যে বারবার শুধু স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেছে তার কাছে? মিরির তার কাছে যেতে বড় ইচ্ছে করে।

মিরি মাথা নামিয়ে জলের দিকে তাকালো। নীল আকাশের মধ্যে সাদা মেঘের দল ছুটে চলেছে কোন অজানা ভুবনে। সেই ক্যানভাসে মিরির মুখের ছায়া পড়েছে জলের বুকে। আবছা বাতাসে দুলে দুলে উঠছে সেই মুখখানি।

চোখের জলে মিরির দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়ে আসে। বুকের ভিতর তোলপাড় করে ওঠে থইথই কান্না। জলের বুকে ফুটে ওঠা প্রতিবিম্বটিকে অষ্পষ্ট মনে হয়। অতি পরিচিত নিজের মুখখানিকেও মনে হয় অচেনা। ছায়ার মতো কে যেন আসে জলের ভিতর। কে যেন মুছে দেয় মিরির প্রতিচ্ছবিটি। আস্তে আস্তে সেখানে ফুটে ওঠে আর একটি চেনা মুখ।

‘আমার কষ্ট দিয়ে, আমার স্বপ্ন দিয়ে
যে আমার নিভৃত নির্মান
সেই তুমি-হে আমার বিষন্ন সুন্দর’

যুবকটি গহীন অরন্যের ভিতর দাঁড়িয়ে আছে। তার দীর্ঘ চুলের অবিন্যাস কাতর স্বরে মিরির করস্পর্শ প্রার্থনা করছে। তার দৃষ্টি প্রক্ষেপন করছে গভীর বিষাদ, মুখের কোনায় কোনায় লেগে থাকা অপার নিঃসঙ্গতা, বুকের পেশীতে জমে থাকা শ্রমের অপচয়। হূদয়ের অতলে লুকিয়ে থাকা গোপনতম যন্ত্রণায় একজন বিদ্ধ মানুষ। দিগন্তে প্রসারিত হাতের ভংগীতে অংশীদারীত্বের আমন্ত্রন।

তার ওষ্ঠযুগল নিস্পন্দ অথচ মিরির কানে পরিস্কার বেজে ওঠে একটি পবিত্র উচ্চারন,
‘তুমি কি তার বেদনার সাথী হবে, মিরি?’

কে কথা বলছে? মিরির বোধের সজ্ঞানতা এই প্রশ্নের জবাব খোঁজে। একি তবে স্বপ্নের ভুবন?

আবার শোনা যায় সেই স্বর, ‘তুমি আজীবন এই মানুষটিকে অন্বেষন করেছো। তুমি কি এখন তোমার স্বপ্নের দায়ভার নেবার জন্য প্রস্তুত?‘
মিরি এই রহস্যের কিছুই বুঝতে পারেনা। সে শুধু ফিসফিস করে বলে,‘কে তুমি কথা বলো এমন করে? কেমন করে তুমি আমার গোপন সত্যের কথা জানো?’
স্বরটি হেসে ওঠে। ‘আমি তোমার সব কথাই জানি। আমি সবার সব কথা জানি।’
‘কেমন করে?’
‘তুমি যে এখন আমার অন্তর্গত,তাই তুমি এখন আমার কাছে উন্মুক্ত।’
‘আমি তোমার কথা বুঝতে পারিনে। তুমি কে?’
‘আমি এই পৃথিবীর সমগ্র জলরাশি। আমার কাছে মানুষের সব গোপনীয়তার উন্মোচন। আমি কখনো তরংগমুখর নদী, কখনো শ্রাবনের বৃষ্টিধারা, কখনো গতিমুগ্ধ প্রস্রবন, আবার কখনো বা শান্ত অলস জলাশয়। মানুষেরা আমার কাছে আসে। আমি বুক পেতে তাদের কথা শুনি।’
মিরি আবার তাকায় জলের দিকে। তার নিজের প্রতিবিম্বের সাথে উন্মনা যুবকের মুখচ্ছবি দুলে উঠছে।
‘আমি এই যুবকের বার্তা নিয়ে এসেছি তোমার কাছে। আমি জানি একমাত্র তুমিই তার নির্ধারিত নির্বান। সে তোমারই জন্যে তৃষ্ণার্ত হয়ে প্রতীক্ষা করছে। তুমি কি যাবে আমার সাথে তার কাছে?’
‘আমি কেমন করে যাবো বলো? আমিতো তাকে চিনিনে। কোথায় থাকে সে? কি নাম তার? অচেনা মানুষের কাছে আমি কি ভাবে যাই? সমাজ কি বলবে?’
জলরাশি বিদ্রুপের সুরে বলে, ‘তোমরা চিরকালই চিরচেনাকে দুরে সরিয়ে অচেনা মানুষের হাত ধরেছো। তোমাদের সমাজ হৃদয়ের অনুশাসন অনুসরন করেনা। জলের ভুবনে উঁচুনীচু ভেদ নেই তোমাদের মতোন।’
মিরি কাঁদতে থাকে। চোখের জলে ভেসে যায় শাড়ীর আঁচল।
‘তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখিও না। আমি একজন তুচ্ছ মানুষ। স্বপ্নকে বুকে জড়িয়ে নেবার মত সাহস আমার নেই।’

মিরির মা পুকুরের ঘাটে এসে দাঁড়ালেন। তিনি অবাক হয়ে দেখলেন মিরি একরাশ রোদের মধ্যে পুকুরের জলে পা ডুবিয়ে কাঁদছে। সেদিকে তাকিয়ে মায়ের চোখেও জল এলো। ঘর আলো করে থাকা এই মেয়েটি আর মাত্র ক’দিন পরেই পরের ঘরে চলে যাবে। আবার কবে সে এমনি ভাবে জলে পা ডুবিয়ে বসবে? আবার কবে সে মায়ের গায়ের গন্ধ নেবে?

মা আস্তে আস্তে মিরির কাছে এসে দাঁড়ালেন। ‘মিরি, ঘরে চল। এত রোদে তোর মাথা ধরবে।’
মায়ের হাত ধরে মিরি পায়ে পায়ে চলে গেল।
যাবার সময় তারা দুজনে কেউই লক্ষ্য করলোনা যে পুকুরের জলে মিরির প্রতিফলনটি রয়ে গেল। সে মিরির চোখে কোন অশ্রু নেই, তার হাতে কোন প্রত্যাখান নেই।

প্রত্যাখাত নদী ফিরে চলে।
মানুষের জীবন বড়ই কষ্টের। সমাজ, লোকাচার, ভাষা নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করে। মানুষেরা তাই তাদের সারা জীবন ধরে খুঁজেও প্রার্থিত স্বপ্নটিকে পায়না। এমনকি পাওয়ার পরেও গ্রহন করার মত সাহস থাকেনা তাদের। নদী বড় আশা করে ছিল যে সে অন্তত এই দুটি হূদয়কে এক করতে পারবে।

সহসা হাসির শব্দে নদীর চমক ভাঙ্গে।
নদীর জলের মধ্যে দুটি মানব-মানবীর প্রতিবিম্ব দৌড়ে যাচ্ছে। যুবকটির মুখে যন্ত্রণার লেশমাত্র নেই, সে মিরির হাত ধরে অনর্গল কথা বলে যায়। মিরি মোহমুগ্ধের মত যুবকটির দিকে তাকিয়ে থাকে, তার মুখে ভালবাসা মোমের মতো গলে গলে পড়ে।

নদী হঠাৎ বুঝতে পারে সবকিছু। জলের ভুবনে সবকিছুই সম্ভব, জলের ভুবনে প্রেম সর্বদাই মিলনে রূপ নেয়। মানুষের দুরত্ব এখানে মিখ্যে, সমাজের অনুশাসন এখানে অবাস্তব। মানুষের প্রতিবিম্বের জীবন তাই কেবলই ভালবাসার।

নদী এই মহাসত্যটি বুঝতে পেরে আপন মনে হাসে।

এরপর বহুদিন কেটে গেছে।

মিরিরা সম্প্রতি আমেরিকার নেব্রাস্কায় মুভ করেছে। তার স্বামী নির্বিকার প্রকৃতির মানুষ। সবকিছুই তাই হিসেব করা। মাপমত আনন্দ, মাপমত দুঃখ। মাঝে মাঝে স্বপ্নে সেই যুবকটি আসে মিরির কাছে। তার যন্ত্রণাক্ত মুখখানি দেখে ঘুমের মধ্যেও মিরির বুকের মধ্যে উথালপাথাল করে ওঠে। চোখের জলে বালিশ ভিজে যায়। পাশে শুয়ে থাকা মানুষটি তার কিছুই টের পায়না।

বহুদূরে একটি ঘরে চুপ করে বসে থাকে একজন মানুষ। সারাদিন সে কঠিন পরিশ্রম করেছে ভূমিকর্ষনে। ক্লান্তিতে শরীর নুয়ে পড়লেও তার ঘুম আসেনা। একটি শুভ্র হাতের ছোঁয়ার প্রতীক্ষায় সে জেগে থাকে। তার এলোমেলো চুলে পরাজিত প্রেম, তার নিদ্রাহীন চোখের তারায় নতজানু জীবন।

নদীটি আর মানুষের সাথে কথা বলেনা। প্রাচীন পিতামাহীর মতো সে শুধু প্রতিবিম্বদের লালন করে স্নেহে। জলের ভুবনে ছায়ামানুষেরা সুখের সংসার করে। তাদের ভালবাসায় জন্ম নেয় প্রেমজ সন্তান। জলের ভুবন ক্রমে ক্রমে পূর্ণ হয়ে আসে।

এই রহস্যময় ভুবনের কথা কেউ জানেনা। শুধু দুঃখী মানুষেরা কোন এক অজানা টানে ছুটে আসে জলের কাছে। মাথা নুইয়ে তারা জলের দিকে তাকায়। চোখের কোনায় অপুর্ণতা অশ্রু হয়ে টুপটাপ ঝরে। তারপর একসময় তারা আবার ফিরে যায় তাদের আবাসে, প্রেমহীন শয্যায় তারা কেবলই এপাশ-ওপাশ করে।

নদী পরম মমতায় তাদের ফেলে যাওয়া প্রতিবিম্বটিকে বুকে তুলে নেয়। তারপর ছুটে যায় পৃথিবীর অন্য প্রান্তে, যেখানে আরও একটি অসুখী হৃদয় অপেক্ষা করে আছে।

জলের ভুবনে সবাই তাদের আপনজনকে খুঁজে পায়।
_____________________________________
১। এই রচনায় ব্যবহৃত পংক্তিমালা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্‌র কবিতা ‘আমার বিষন্ন সুন্দর’ থেকে নেওয়া।
২। এই লেখাটি বেশ কয়েক বছর আগে উৎর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত "পড়শী" পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। নতুন কিছু হাতে নেই বলে এটাই চালিয়ে দিলাম।


মন্তব্য

জাহিদ হোসেন এর ছবি

জনৈক ভুখা-নাংগা পাঠকের দাবী মেটাতে এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

জাহিদ ভাই, মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে গেলাম আপনার লেখাটা, প্রথমার্ধে নদীর সাথে যুবকের কথোপকথন যেন চোখের সামনে বাস্তব হয়ে ফুটে উঠল, যেন হলোগ্রাম দেখছি। একই সাঠে ২য় ভাগে যেমন হাসি ঠাট্টার পাশাপাশি বিষাদ এত সুন্দর করে লেখলেন যে বারে বারে তা আমাকে ছুয়ে গেল। এই লেখাটা পড়ে আমি ভাব প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেললাম।

জনৈক পাঠকের দাবি রক্ষা করতে লেখা দিলেন, সেই সুবাদে অসাধারন একটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য হল। জানি না আবার কত দিন শীত নিদ্রায় যাবেন, তবে এটুকু জেনে যান যে, এখানে আপনার একজন একনিষ্ঠ পাঠক বসে থাকবে আপনার লেখা পড়ার জন্যে আর এসে খুঁজবে আপনার লেখা।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ফাহিম এর ছবি

মনটা আবারও এতো খারাপ করিয়ে দিলেন ভাই। কেন এমন করেন?

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

মূলত পাঠক এর ছবি

ভয়ানক রকমের ভালো। স্টাইল নিয়ে পণ্ডিতি মেরে দু-চার কথা বলা যেতো, কিন্তু গল্প শেষ করে যে অনুভূতি হলো তারপর ও সব সামান্য কথা অর্থহীন মনে হয়। গল্পের কনসেপ্টটাই এমন অভিনব যে সব কিছু অনুষঙ্গ ছাপিয়ে তাতেই মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়।

আপনি কেন যে লেখেন না মাঝে মাঝে!

মৃত্তিকা এর ছবি

খুব ভালো লেগেছে গল্পটা!

অনিকেত এর ছবি

পাথর করে দিলেন, জাহিদ ভাই----
আপনি লুক্টা খ্রাপ, খুপ খ্রাপ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সমাজ, লোকাচার, ভাষা- এগুলোর হয়তো কোনো একদিন পরিবর্তন হবে। সেদিন জলের ভুবনের মতো আমাদের ভুবনেও চারদিকে কেবল মিলনের গল্পই রচিত হবে। কাউকে আর প্রেমহীম শয্যায় এপাশ ওপাশ করতে হবে না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

হরেকৃষ্ন এর ছবি

পড়তে গিয়ে বিষাদের সুরটি পরিচিত মনে হচ্ছিল, ঠিক ধরতে পারছিলাম না। পড়শীর উল্লেখে বুঝতে পারলাম। পড়ে মন ভরাক্রান্ত হোল, আবারো ভালো লাগলো। চমৎকার গল্প, মমতায় ভরা।

ভুতুম এর ছবি

জনৈক ভুখা-নাঙ্গা পাঠককে অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

মানুষেরাই কেবল এতটা কষ্ট পেতে পারে এবং একমাত্র মানুষেরাই এতটা কষ্ট দিতে পারে।

খুবই ভাল লাগল।
অসাধারণ ভাবনার গল্প !

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
... থিমটা অসাধারণ।

______________________________________________________

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ব্যস্ততার কারণে সবার মন্তব্যের আলাদা করে জবাব লিখতে পারছিনা। পরে হবে কোন এক সময়ে। আপাততঃ সবাইকে লেখাটি পড়বার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি।
ভাল থাকুন।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

শিহরণ [অতিথি] এর ছবি

এক কথায় এটা একটা দুর্ধর্ষ কাহিনী। পড়ার পর ২ মিনিট ‍"থ" মেরে বসে থাকলাম ...

রাধা [অতিথি] এর ছবি

গল্পটা ভীষণ ভালো।

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

অসাধারণ!

অনেকদিন সচলে আপনার লেখা দেখছিনা। আশাকরি ভাল আছেন।

m0nami hossain এর ছবি

অসাধারন।
মনামি

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তিথীডোর এর ছবি

এই লুক্টা খ্রাপ, খুব খ্রাপ। কী সব লিখত! গুরু গুরু
এখন আর লেখে না, তাই পুরোনো গুলোই বার বার পড়ি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

পাহাড় এর ছবি

এই গল্পটি খুবই ভালো লাগলো।

এক লহমা এর ছবি

তিথীডোর-এর সাথে সহমত। কোন একদিন আবার লিখবেন এই আশায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।