অণুগল্প-১৯। এক্সটারমিন্টর।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: শনি, ০১/০৮/২০০৯ - ১০:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘জয়নাল ভাই- আমরার কাজডা কি ঠিক হইতাছে?’

আজকে গরম পড়েছে বেশ। রোদের ঝাঁজে গোটা শহরটি যেন তাইতাই করে ফুটছে। কিন্তু তাই বলে তো আর সবকিছু থেমে থাকবে না। কাজ-কাম তো বাদ দেওয়া যাবে না।
বোশেখ-যষ্টি মাসে গরম যে পড়বে, সে তো সবারই জানা। কিন্তু এখন আষাঢ়ের প্রায় শেষ, এখনো যদি বৃষ্টি শুরু না হয় তাহলে জয়নালকে তো কাজে যেতেই হবে।
গরম গত কয়েক দিন ধরে চলছে, কিন্তু আজকে একদম সকালেই টের পাওয়া যাচ্ছিল যে আজকে গরমে সবার খবর হয়ে যাবে।

বেরোনোর সময় কুলসুম মিউ মিউ করে বলেছিল,‘আইজ কামে না গেলে হইতো না? আফনের শরীলডাও তো বেশী ভালা না। তার উফর পড়ছে এই মরার গরম।’
এমনিতেই শরীর খারাপ, তার উপর কুলসুমের কথা তার ভালো লাগছিল না। জয়নাল ধমকে উঠেছিল,‘আমি চাকরি করি কার? সরকারের নাকি তোর বাপের? ইচ্ছা হইলে কামে গেলাম, ইচ্ছা হইলে কামে গেলাম না।’
‘তা মাইনষের কি শরীল খারাপ অয় না? তহন তারা কি করে? তহনও তারা কামে যায়?’

কুলসুমের সাথে কথা বলাই উচিত না। আসলে মেয়ে মানুষের সাথেই কথা বলা উচিত না। সময় নষ্ট। বেরোনোর সময় প্রতিদিন আশপাশের ঘরগুলো থেকে মেয়েমানুষের গলা কানে আসে। কি কর্কশ গলায় তারা কথা বলে, মনে হয় যেন চব্বিশ ঘন্টাই ঝগড়ার মধ্যে আছে। বস্তির পানির লাইনে ঝগড়া, ঘরের চালের উপরে শুকোতে দেওয়া কাপড় নিয়ে ঝগড়া, কার বাচ্চাকে কার বাচ্চা মেরেছে তাই নিয়ে ঝগড়া।

একমাত্র আল্লাহ মাবুদই জানেন কেন তিনি মেয়ে মানুষের মতো একটা জিনিস বানিয়েছিলেন।

আবার উলটো জিনিসটা দেখো। এই যে কদম আলী গত তিন ঘন্টা তার সাথে সাথে এই রোদের মধ্যে ঘুরছে, এর মধ্যে সে কয়বার কথা বলেছে? বেশী হলে তিন-চার বার। কেন? কেননা কদম আলী জানে এই রোদের মধ্যে মানুষের কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। ছেলেটার মাথায় বুদ্ধি আছে। এর চাইরভাগের এক ভাগ বুদ্ধিও যদি আল্লাহ মেয়ে মানুষকে দিতো!

হাঁটতে হাঁটতে জয়নাল এইসব কথা ভাবছিল। ঠিক এমনি সময়ে কদম আলী কথা বলে ওঠে।

‘জয়নাল ভাই- আমরার কাজডা কি ঠিক হইতাছে?’

অন্যমনস্ক থাকার কারণে প্রথমে সে ঠিক বুঝতে পারেনি যে কদম আলী কি বললো।
‘কি কইলি?’
‘কইলাম আমরার কাজডা মনে অয় ঠিক হইতাছে না।’
‘আমরার কোন কাজডার কতা কস তুই?’
‘এই যে আফনে যা করতেসেন, তার কথা কই।’

জয়নাল কাজ করে মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে। তার কাজ হচ্ছে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নর্দমা আর ছোটখাটো ডোবাগুলোতে নানান ধরণের কীটনাশক স্প্রে করে বেড়ানো। বর্ষাকাল আসবার আগে তার কাজ বেড়ে যায়, আবার বর্ষার তোড় কমলেও তার ডাক পড়ে। ওই সময়গুলোতে বদ্ধ জলাশয়ে জন্ম নেয় মশা আর অন্যান্য পোকা মাকড়। ঠিক সময়মতো না মারতে পারলে গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে তারা। তখন তাদেরকে দমন করা একশ গুণ বেশী কঠিন। অর্থাৎ অসম্ভব।

গত দুদিন ধরে কদম আলীকে তার সাথে দেওয়া হয়েছে। বড় সাহেব বলেছেন,‘বুঝলা জয়নাল মিয়া, তুমি হচ্ছো ওর গুরু। সবকিছু ভাল করে শিখিয়ে দাও। কদম আলী ছেলেটা ভালো, ওরে ভালমতো ট্রেনিং দিয়া দিবা।’

বড় সাহেব এই অফিসে আছেন প্রায় তিরিশ বছর। কতকিছু দেখছেন তিনি, কত জায়গায় ঘুরছেন। তাঁর কথা জয়নাল কখনোই অমান্য করে না। কয়েক মাস আগে তিনি গেছিলেন বিদেশে তার ছেলের কাছে বেড়াইতে। ফিরে আসবার পর জয়নালকে ডাকলেন তার ঘরে।
‘জয়নাল, এদিকে আয়। তোর সাথে একটু কথা আছে।'
জয়নালের সাথে কথা! জয়নালের বিস্ময়ের আর অবধি থাকেনা।

‘তোর কথা আমেরিকায় গিয়ে খুব মনে হচ্ছিল। কেন জানিস?’
জয়নাল বোকার মত মাথা নাড়ে। সে কিভাবে জানবে?
‘আমার ছেলে যেখানে থাকে সেটা একটু গরম জায়গা। গরম জায়গায় কি হয় জানিস? বেজায় পোকা মাকড়। ছেলেটার বাড়িতে তেলাপোকা ঘোরে, মাকড়সা ঘোরে, ছাদে বাসা বাঁধে বোলতা। আমি একদিন ছেলেটাকে বললাম, আমাদের জয়নাল যদি এখানে থাকতো তাহলে আজ আর একটারও রক্ষা থাকতো না। ছেলে বলে জয়নাল কে? সে কি করে? আমি বললাম, জয়নাল হচ্ছে গিয়ে আমাদের পোকা-মাকড়ের যম। ছেলে বললো, আমেরিকায় ঐইসব লোকদের নাকি এক্সটারমিন্টর না কি যেন বলে। আমি বললাম, আরে আমাদের জয়নাল মিয়া হচ্ছে গিয়ে এক্সটারমিন্টর চ্যাম্পিয়ন।’

কদম আলী পাশ থেকে বলে,‘জয়নাল ভাই-তোমার শরীল ভালা তো? কেমুন যেন ছাড়া ছাড়া লাগে তোমারে।’
জয়নাল সম্বিত ফিরে পায়। ‘কি যেন বলছিলি তুই?’
‘আমি কইলাম যে তোমার এই পোকামাকড় মারা জিনিসডা কি ভালো? এরাও তো আল্লাহর জীব, নাকি? এদের বানাইছে আল্লা, মারবেও আল্লা। পোকা-মাকড় বইলা কি ওদের জীবনের কোন দাম নাই? আমরার ওগো মারতে যাওয়া ঠিক না।’

ছোকরা বলে কি? এর কি মাথা-টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?

কাঁধের উপরে বেল্ট দিয়ে পিঠে ঝুলছে বিষের ট্যাংক। তার থেকে বেরিয়ে এসেছে সরু নল। তার হাতলে চাপ দিলে ঝরনার মতো মিহি ফোঁটায় বের হয় বিষ। স্প্রে করার সময় মুখে হয় গামছা নাহয় একটা মাস্ক পরে জয়নাল।

কদমের শরীলে কি ওই বিষ ঢুকলো নাকি? এমন হাবাজাবা কথা কয় কেন ছেলেটা?

‘আমারে মৌলভী সাব কইছে যে নবীজী যখন কাফেরদের হাত থেইকা বাঁচবার জইন্য পাহাড়ের গের্ত লুকায় ছিলেন, তখন মাকড়সা আইসা সেই গর্তের মুখ জাল বুইনা দিছিলো। তাই নবীজী ধরা পড়েন নাই। তাই মাকড়সা মারা কবিরা গুনা। এখন তোমার এই বিষে যদি কোন মাকড়সা মরে, তাইলে তুমি গুনাগার কেন হইবা না এই কথাডা আমারে বুঝাইয়া কও।’

জয়নাল একটা গাছের ছায়ায় বসে। পিঠ থেকে ট্যাংকটি নামিয়ে পাশে রাখে। গামছা দিয়ে মুখ মোছে।

তারপর বলে,‘শোন, তাইলে তোরে একটা কতা কই। ক’ দেহি আমি কেডা?’
কদম আলী হকচকিয়ে যায়। এত আবার কি জাতীয় প্রশ্ন হোল।
‘তুমি কেডা? তুমি আমাগো জয়নাল ভাই।’
জয়নাল গামছা দিয়ে গায়ে মাথায় বাতাস করতে করতে হাসে।
‘জানোস- বড় সাহেব আমারে কি বইলা ডাকে? বড় সাহেব আমারে ডাকে এক্সটারমিন্টর চ্যাম্পিয়ন।’
‘সে আবার কি?’
‘আমি হইলাম এক্সটারমিন্টর। পোকা-মাকড়ের যম। আমার সামনে পোকা মাকড়ের কোন রক্ষা নাই। আমি যহন ওই বিষের ট্যাংকি কান্ধে নিয়া খাড়াই, তখন আমার দিলে কোন মায়া নাই, মহব্বত নাই। পোকা-মাকড়ের বংশ শেষ না কইরা আমি থামি না। সেই পোকারে কে বানাইছে তার খোঁজ আমি করিনা, আমি শুধু জানি যে ওই পোকারে না মারা পর্যন্ত আমি শুধু বিষ স্প্রে কইরাই যামু। আমারে এই জন্যেই বড় সাহেব কয় এক্সটারমিন্টর চ্যাম্পিয়ন। এখন বুঝছস?’
কদম আলী বলে,‘এইডা একটা কতা হইলো জয়নাল ভাই?’
‘হ, হইলো। বড় সাহেব আমারে কইছে আমেরিকায় যদি আমি থাকতাম তাইলে নাকি লোকে আমারে ভাড়া কইরা তাগো বাড়ী লইয়া যাইতো। আমি গিয়া সব শালার পোকা মাকড় মাইরা উজাড় কইরা দিতাম।’

কদম আলী মনে হয় জয়নালের কথায় একটু ঘাবড়ে যায়। সে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে জয়নালের দিকে।

‘জয়নাল ভাই-আমাগো গেরামে আছিল এক ডাকাইত। তার নাম আছিলো ভোলা। এক বাড়ীতে ডাকাতি করতে গিয়া সে সাতজনেরে মাডার করছিলো। সেই সাতজনের মইধ্যে মাইয়া মানুষ ছিল, একটা দুধের বাচ্চাও আছিলো। পরে তার যহন বিচার হইলো, তহন জজসাব তারে জিগায়- ভোলা, তুই এতগুলা মানুষরে খুন করলি ক্যান? ভোলা তহন কইছিলো, জজসাব আমার মাতায় তহন খুন চাপছিল, সাতটা ক্যান, তহন সামনে যদি পাঁচশো মানুষও খাড়াইতো, তো সেদিন আমি পাঁচশো জনরেই খুন করতাম।’
‘এই কিসসা আমারে শুনায়তেছিস ক্যান?’
‘একটু আগে তোমারে দেইখা মনে হইতেছিল তুমি য্যান সেই ভোলা ডাকাইত। তোমার মাথার কোন ঠিক নাই। আমার কি মনে হয় জানো? আমার মনে হয় এই রইদে ঘুরাঘারির পর তোমার মাতা গরম হইয়া গেছে। যাও-তুমি বাড়িত যাও। বাড়িত গিয়া বিশ্রাম নেও। কাইল আবার পোকা মারনের কাজ কইরো।’

কদমের কথা শোনার পর জয়নালের নিজের কাছেও মনে হয় যেন তার মাথা ঝিমঝিম করছে। গায়ে কি তার জ্বরও এলো নাকি? এখন মনে হচ্ছে সকালে কুলসুমের কথা শোনাই উচিত ছিল। লোকের কি আর জ্বরজারি হয়না?

কদমই একটা রিকশা ঠিক করে তাকে উঠিয়ে দিল। বিষের ট্যাংকটাও সে নিয়ে গেল। কালকে মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে ওটা নিয়ে যাবে কদম।

রিকশায় করে যেতে যেতে জয়নালের মনটা একটু ফুরফুরে হয়ে গেল। মনে পড়লো আবারো কুলসুমের কথা। আহা-সকাল বেলায় খামাখা তার সাথে চেঁচামেচি করেছে সে। বেচারী সবসময় জয়নালের দিকে খেয়াল রাখে। সে তুলনায় জয়নাল কথায় কথায় তাকে শুধু মনে কষ্ট দেয়।

নাহ-আজ থেকে সে কুলসুমের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। পারলে সামনের ছুটির দিনে ওকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। আর ফেরার পথে কাবাব পরোটা খেয়ে তবে ঘরে ফিরবে। বেচারা কতদিন ভালমন্দ খাবার খায় নি। জয়নালের যা মেজাজ তার সামনে সে সর্বক্ষণ ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে।

বড় রাস্তার মুখে সে রিকশা ছেড়ে দিল। এখন ছোট গলিটা সে হেঁটেই পার করে দেবে। রিকশাওয়ালাকে পয়সা দেবার সময়েই কানে এলো শব্দটা। যেন মৌমাছির গুঞ্জন। হঠাৎ করেই বুকের মধ্যে কিসে একটা টান দিল জয়নালের। তার মনে হোল কুলসুমের যেন খারাপ কিছু একটা হয়েছে।

প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতেই সে পার হয় গলিটি। কানে আসা গুঞ্জনটি ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে। সে বুঝতে পারে এই আওয়াজটি হচ্ছে অনেক লোকের কথা বলার শব্দ। অনেকে যেন চিৎকার করে কাঁদছে। বিলাপ করছে। কি হয়েছে? ভয়ে জয়নালের মুখ শুকিয়ে আসে।

গলিটি পেরিয়ে মোড় ঘুরতেই সে দেখতে পায় দৃশ্যটি।

বেশ কিছুদিন থেকেই বস্তিতে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। বস্তির মালিক তাদেরকে উচ্ছেদ করতে চায়। বস্তি সরিয়ে সে এখানে বড় ইমারত বানাবে। বস্তির নেতারা বেশ কয়েকবার মালিকের বাড়িতে গিয়ে তার হাতে পায়ে ধরে এসেছে। তাতে যে কোন কাজ হয়নি তা বোঝা যাচ্ছে।

আজ মালিক তার লোকজনদের নিয়ে এসেছে বস্তিটিকে উঠিয়ে দিতে। তার লোকেরা ঘরে ঘরে গিয়ে জিনিসপত্র ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিচ্ছে। বাধা দিতে গেলে পড়ছে লাঠির বাড়ি। এই সময়টিতে সাধারণতঃ পুরুষেরা ঘরে থাকেনা বলেই তারা এখন এসেছে।

গোটা জায়গাটি জুড়ে শুধু মানুষের আহাজারী। মাথায় হাত চাপড়ে কাঁদছে পাশের ঘরের আকবর মিস্ত্রীর বুড়ো মা। জুতা সেলাই করা নিয়ামতের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। জয়নালের চোখ খুঁজে বেড়ায় কুলসুমকে। কোথায় গেল কুলসুম? কোথায় গেল তার কোলের বাচ্চাটি?

এরই মধ্যে বস্তির উত্তর দিকে কয়েকটা ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। কালো ধোঁয়ার মধ্যে জয়নাল দেখতে পায় যে বস্তির অপর দিকের রাস্তা দিয়ে ধীর গতিতে একটি বুলডোজার এগিয়ে আসছে। জয়নাল বুঝতে পারে যে আজকে সন্ধ্যার মধ্যে এই বস্তিতে পুরো গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। কিন্তু তার কুলসুম কোথায় গেল? কোথায় গেল দেড় বছরের শিশু জব্বার?

এমন সময় তার চোখে পড়ে কুলসুমকে। সে জব্বারকে কোলে নিয়ে পাগলের মতো ছুটছে। জয়নাল গলা তুলে ডাকে,‘কুলসুম, ও কুলসুম। আমি এহানে।’

কুলসুম সে ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায়। কালো ধোঁয়ায় তখন আস্তে আস্তে সূর্য্যের আলোও আর দেখা যায়না। জয়নালকে দেখে যেন কুলসুমের দেহে প্রাণ ফিরে আসে। সে দৌড়ে আসে জয়নালের কাছে। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে,‘ও জব্বারের বাপ-ওরা আমাগো সব কিছু ভাইংগা ফালাইতেছে। তুমি কিছু একটা করো।’

বাপকে দেখে জব্বারও হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

জয়নাল কুলসুমকে জড়িয়ে ধরে। ‘কান্দিস না। আমি দেখতাছি দেহি কি করণ যায়।’

কালো ধোঁয়ার মধ্যে নিঃশব্দ বুলডোজারটি এগিয়ে আসতে থাকে। কুলসুম তার দিকে হাত তুলে বলে,‘তুমি ওই গাড়ীডারে থামাও জব্বারের বাপ। আমাগো সবকিছু নাশ হইয়া গেল।’
জয়নাল বুলডোজারটির দিকে এগোয়। ‘দেহি আমি গাড়ীডারে থামায়তে পারি কিনা।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে কুলসুমও তার পেছন পেছন যায়।

কিছুদূর এগিয়ে জয়নাল হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিস্প্রাণ পাথরের মূর্তির মতো সে তাকিয়ে থাকে বুলডোজারটির দিকে।

কুলসুম জয়নালের এই রকম থেমে যাওয়া দেখে ভয় পেয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে। ‘ও জব্বারের বাপ-তুমি কিছু একটা করো। গাড়ীডারে থামাও। ও জব্বারের বাপ- তুমি কথা কওনা কেন? জব্বারের বাপ- ও জব্বারের বাপ।’

জয়নালের কানে এসব কথার কিছুই যায়না। সে আগের মতোই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনে। কেননা একটু আগেই তার চোখ পড়েছিল বুলডোজারের চালকের আসনে বসে থাকা মানুষটির চোখে। সে মানুষটির দৃষ্টি তার অতি পরিচিত। সে দৃষ্টিতে আছে কেমন একটা খুনে খুনে ভাব।

জয়নাল বুঝতে পারে যে ওই মানুষটিও তারই মতো একজন এক্সটারমিন্টর। ওই মানুষটির কাছে এই বস্তির হাজার মানুষেরা পোকামাকড় ছাড়া আর কিছু নয়। এদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস না করা পর্যন্ত সে বুলডোজারটি চালাতেই থাকবে।


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

জাহিদ ভাই, আগেরগুলোকে অসাধারন বলেছিলাম, আমার ভান্ডারে আপনার এ লেখাটিকে দেবার মত বিশেষন নেই, কাজেই অসামান্য অসাধারন বলতে হচ্ছে আবার। আপনার কোন তুলনা নেই, গুরু গুরু

চলুক

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুমম। বলার মতো কিছু নেই। আপনি আসলেই ফর্মে আছেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অণূগল্পের ধারণাটিকে বোধহয় আপনি একটা ক্লাসিক্যাল জায়গাতে নিয়ে যাচ্ছেন আস্তে আস্তে

তবে মাঝে মাঝে মনে হয় কলেবর বোধহয় অণুগল্পের আকার ছাড়িয়ে যাচ্ছে

০২

গল্পটা চমৎকার

মামুন হক এর ছবি

যাদুকরী গল্প। আপনি নেশা ধরিয়েই ছাড়লেন। তবে শেষ প্যারাটা না দিলেও চলত।

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার লাগলো। রোজ রোজ এমন গল্প লিখতে গেলে শুধু প্রতিভায় হয় না। আপনার অবজার্ভেশনেরও তুলনা নেই।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ফাটাফাটি হইছে!!!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আকতার আহমেদ এর ছবি

চমত্কার গল্প!

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

চমৎকার! তবে আমিও মামুনভাইয়ের মত বলি, শেষ প্যারাটা না হলেই কী নয়?

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

রোজ রোজ কিকরে এত সুন্দর গল্প লিখেন?

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দূর্দান্ত... স্রেফ দূর্দান্ত...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাইফ তাহসিন এর ছবি

আজকে দুপুরে সচলে ঢুকে যখন আপনার লেখা পেলাম না, ফিরে আসতে হল আগের লেখায়, আপনার লেখা ছাড়া ভালো লাগছে না, দেন না জাহিদ ভাই মন খারাপ, অপেক্ষায় রইলাম।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ভুতুম এর ছবি

আগেই বলেছি আপনার লেখায় আর ভালো কিছু লিখব না। এজন্য লেখার আর কিছু খুঁজে পেলাম না। শিঘ্রী খারাপ কিছু লেখা দেন, যদি পারেন আর কি।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

স্বপ্নহারা এর ছবি

চমৎকার ভাইয়া...মন ছুঁয়ে গেল! শেষ প্যারাটা না হলেও হত...এই কথার সাথে একমত!

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনাদের সবার মন্তব্য পড়ে খুব খুব খুশী লাগছে।
ভাল থাকুন সবাই!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কি চমৎকার একটা গল্প।
আপনি আর লেখেন না কেন ভাইয়া? মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

কাঠমিস্ত্রি এর ছবি

খুবই ভাল লাগলো গল্পটি। আপনার বেশ কয়েকটি লেখাই আমার কাছে ভাল লেগেছে। আজকাল কি আর লেখেন না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।