(অণু)গল্প-১৮। যুদ্ধ।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: শুক্র, ৩১/০৭/২০০৯ - ১০:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সাধারণতঃ বাড়ী ফিরতে রাত দশটা বেজে যায় প্রতিদিন। আজকে তার চেয়ে একটু বেশী দেরী হোল।
তার পরের শিফটে কাজ করে ভারতীয় ছেলে মনোজ। আজকে সে আসতে প্রায় কুড়ি মিনিট দেরী করেছে। তাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে তারপর বেরোতে বেরোতে দেরী হয়ে গেল।
এত রাতে গোটা পাড়াটিই নিঝুম হয়ে যায়। ড্রাইভওয়েতে গাড়ীটা পার্ক করে পিছনের সীট থেকে ব্যাকপ্যাকটা বের করলো জালাল।

এই রকম দেরী হয়ে গেলে রুবী আগে মন খারাপ করতো। এখন আর করেনা। সে জানে যে সময় খারাপ। আমেরিকার জীবনে সেই আগের মধু আর নেই। তার উপর সংসারের খাঁইখরচা মেটাতে জালালকে এখন দুটো চাকরি করতে হচ্ছে। আশপাশের লোকেরা যে হারে দুমদাম চাকরি হারাচ্ছে, সেখানে দুটো চাকরিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে যদি কখনো সখনো দেরী হয়, তাতে মন খারাপ বা রাগ করতে নেই।

দেরী হলে বরঞ্চ জালালেরই মন খারাপ হয় বেশী। মেয়েটার সাথে আজকাল দেখাই হয় না বলতে গেলে। অত রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে পারেনা দোলা। ছোট মানুষ, তার উপর খুব সকালে স্কুলের জন্যে উঠে পড়তে হয়।

মাঝেসাঝে দু একদিন বাপের জন্য ঘুমচোখে জেগে থাকে মেয়েটি। জালাল ঘরে ঢুকলেই দৌড়ে এসে তার হাতটি ধরে বলে,‘আমি তোমার জন্যে জেগে আছি, ড্যাডি।’

ড্যাডি ডাক শুনে জালাল চোখ পাকায়। মেয়েটি দ্রুত বলে,‘ওহ স্যরি-আব্বু।’

আজকে কেন যেন বাড়ীতে ঢুকেই পরিস্থিতি থমথমে লাগলো। রুবী পিছন ফিরে সিংকে কি যেন ধুচ্ছিল। জালালকে দেখে একবার ঘাড় ঘোরালো। ব্যাস-ওইটুকুই।
হাতের ব্যাগটি টেবিলের উপর নামিয়ে রেখে সোফায় বসে জালাল। রাতের খাবার সে সাথে করে নিয়ে যায় কাজে।

রুবী তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে অন্য সোফায় বসে। ‘একটা ব্যাপার হয়েছে।’
জালালের বুক ধ্বক করে ওঠে। আবার কি হোল? আজকাল চারদিকে শুধু খারাপ খবর।
‘দোলার হাত দিয়ে ওর স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস গর্ডন একটা চিঠি পাঠিয়েছে। তোমার সাথে উনি কথা বলতে চান কাল সকালে।’

জালাল হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

‘আমার যাবার টাইম নেই। তুমিইতো সব সময় প্যারেন্ট-টীচার মিটিং অ্যাটেন্ড করো, তুমিই যাও। আমাকে খামাখা আবার যেতে হবে কেন?’
‘আমার মনে হয় এটা সাধারণ কোন মিটিং না। চিঠিতে মিসেস গর্ডন স্পেসিফিক্যালি তোমাকেই যেতে বলেছে কাল সকাল নয়টায়। দোলাকেও থাকতে হবে সেখানে।’
‘কেন-দোলা কি কিছু করেছে নাকি স্কুলে?’
রুবী মাথা নাড়ে। ‘আমিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। দোলাকে জিজ্ঞেসও করলাম যে আজকে কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা স্কুলে। সে তো কিছুই বললো না।’

জালালের হঠাৎ করে বড় ক্লান্ত লাগে। বিদেশে সবকিছুই নিজের হাতে করতে হয়। সাধারণতঃ সে সময় পায়না বলেই দোলার যাবতীয় বিষয়গুলো রুবীই সামলায়। বাচ্চা মানুষ করা বড়ই ঝামেলার জিনিস।

দোলার স্কুলটি এই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ভাল পাবলিক স্কুল। প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য জালালের নেই বলে পাবলিক স্কুলই ভরসা। বিদেশে থেকে মেয়েটা ভালো পড়াশুনার সুযোগটা যেন অন্ততঃ পায়। ওই স্কুলের কারণেই তারা এই জায়গাতে বাড়ী কিনেছে। আর সেজন্যে জালালকে দৈনিক কুড়ি মাইল বেশী ড্রাইভ করতে হয় কাজে যাবার জন্যে।

যদিও দোলা মাত্র থার্ড গ্রেডে পড়ে, কিন্তু স্কুলটিতে নানান রকমের জিনিসপত্র শেখায়। একমাস ধরে চললো ছবি আঁকা, তার পরের মাসে এলো পশুপ্রীতির উপর আলোচনা, আবার তারপর হয়তো এলো সাহিত্যচর্চা। রুবী মেয়েকে নিয়ে খুবই গর্বিত। কতকিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছে দোলা। অন্য কোন স্কুলে কি এইসব সুযোগ-সুবিধা থাকতো?

পরদিন সকালে দোলা জালালকে দেখে খুবই খুশী। তারপর যখন সে জানলো সে আজকে জালাল তার সাথে তার স্কুলে যাবে, তখন তো তার আনন্দ আর ধরে না।

‘আজকে তোমাকে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে দেখাবো, ওকে আব্বু?’
‘ওকে মা- ওকে। কি নাম তার?’
‘ওর নাম হচ্ছে শার্লি। ওর সাথে আমি রোজ আমার লাঞ্চ শেয়ার করি।’
‘তুই তো আবার কিছুদিন পরেই ওর সাথে ঝগড়া করবি।’
দোলা এই কথায় বড়ই মর্মাহত হয়। ‘নো আব্বু- আই নেভার হ্যাড এ ফাইট উইথ শার্লি।’
‘এই- ইংরেজী বলছিস কেন? তোকে না বলেছি আমাদের সাথে বাংলা বলতে।’
‘ও- স্যরি। ফাইট এর বাংলা কি আব্বু?’
‘ফাইট এর বাংলা হচ্ছে যুদ্ধ।’
‘আচ্ছা।’

দোলার স্কুল থেকে জালাল সোজা কাজে চলে যাবে বলে রুবী আর এলো না তাদের সাথে।
‘আজকে বাপ-মেয়ে গল্প করতে করতে যাও। তবে সাবধান- দোলা কিন্তু কথা বলে তোমার কানের পোকা বার করে দেবে।’

স্কুলের প্রিন্সিপাল মিসেস গর্ডন অনেকদিন ধরেই এখানে আছেন। সাধারণতঃ প্রিন্সিপালেরা এমনিতেই মিশুকে স্বভাবের হন, কিন্তু ইনি তার থেকেও এক কাঠি উপরে।

তার অফিসে ঢুকেই মন ভালো হয়ে গেলো জালালের। কি চমৎকার করে সাজানো ঘরটি। জালালকে দেখে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে এলেন।
‘ওয়েলকাম টু ইউ, মিঃ ইসলাম।’
‘গুডমর্নিং, মিসেস গর্ডন।’
এবারে দোলার দিকে তাকিয়ে তিনি হাসলেন। ‘ইউ মাস্ট বী ভেরী প্রাউড অফ হার। শী ইজ সাচ আ ডিলাইট।’
জালালও হাসে। ‘ইয়েস উই আর। উই আর সো গ্ল্যাড দ্যাট শি ইজ ইন দিস স্কুল।’

পাশাপাশি চেয়ারে জালাল আর দোলা বসলো। মিসেস গর্ডন টেবিলে উল্টোদিকে গিয়ে বসলেন। জালাল খেয়াল করলো মিসেস গর্ডনের মুখের হাসিটি এখন আর নেই। এখন তার মুখ গম্ভীর।
‘মিঃ ইসলাম-এবারে তাহলে বলি, কেন আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি।’
‘নিশ্চয়ই। আমিও জানতে আগ্রহী।’
‘গতকাল আমার কাছে একটি সিরিয়াস বিষয়ে কমপ্লেইন এসেছে। আমি সেটা নিয়েই কথা বলতে চাই।’

জালাল চকিতে দোলার দিকে তাকায়। সেও খুব মনোযোগ দিয়ে মিসেস গর্ডনের কথা শুনছে।

‘দোলা কি কিছু করেছে?’
‘আসলে কমপ্লেইনটি দোলার বিরুদ্ধে ছিলনা।’
‘তাহলে?’
‘মিঃ ইসলাম, অভিযোগটি এসেছে তোমার বিরুদ্ধে। এবং অভিযোগটি বেশ সিরিয়াস।’

জালাল হকচকিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে নালিশ? আশ্চর্য্য! সে তো এই স্কুলে বলতে গেলে আসেই না। গত ছয় মাসে সে একবারও এখানে আসেনি।

‘তুমি ঠিক বলছো তো, মিসেস গর্ডন? আমার বিরুদ্ধে কে নালিশ করবে এখানে?’
মিসেস গর্ডনের গাম্ভীর্য্য একটুও টলকায় না।
‘আমি নিজেও প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে সবকিছু খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে ব্যাপারটি সত্যি।’
‘রিয়েলি? ব্যাপারটি কি আমাকে বলোতো।’

মিসেস গর্ডন বড় করে নিঃশ্বাস নেন। তারপর বলেন,‘মিঃ ইসলাম, তুমি তো জানো যে আমাদের স্কুলটি এই গোটা স্কুল ডিস্ট্রিক্ট এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো স্কুল। আমরা এখানে অনেক কিছুই অ্যাডভান্সড লেভেলে পড়াই। এবং তার জন্যে প্রায়ই অন্যান্য স্কুল থেকে ভালো স্টুডেন্টরা এই স্কুলে ট্র্যান্সফার নিয়ে চলে আসে। ক’দিন আগে তেমনি একটি ছাত্র এসেছে। সে দোলারই ক্লাশে।’

জালাল এখনো ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেনা। এ সব কাহিনীর মানে কি? আমেরিকানদের এই এক দোষ? সব সময়ে তারা তিলকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তাল বানাবে।

‘ছেলেটির নাম নাদিম ইকবাল। দে আর ফ্রম পাকিস্তান। ক্লাশের টীচার যখন নাদিমের সাথে এক এক করে অন্য সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, তখন দোলা টীচারকে বলেছে যে সে নাদিমের সাথে কথা বলতে চায় না, তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়না। কেননা পাকিস্তানীরা খুব খারাপ লোক। বলাই বাহুল্য, এই ধরনের কথা শুনে টীচার খুবই অবাক হয়েছেন। ভাগ্য ভালো যে দোলা বুদ্ধি করে টীচারের কাছে গিয়ে কথাটি বলেছে যাতে আর কোন স্টুডেন্ট কথাটি শুনতে না পারে।
দোলার মতো এত শান্ত এবং ভদ্র মেয়ের কাছ থেকে এই ধরনের কথা টীচার মোটেই আশা করেনি। সে তখন দোলাকে আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞেস করেছে যে সে কেন এই ধরণের একটা কথা বললো। তখন দোলা তাকে বলেছে যে তার বাবা অর্থাৎ তুমি তাকে এই কথা বলেছো। তুমি কোন পাকিস্তানীর সাথে দোলাকে মিশতে বারণ করেছো।’

জালাল চুপ করে বসে থাকে। দোলা যা বলেছে, তা সম্পূর্ণ সত্যি কথা।

মিসেস গর্ডনও কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। বোধহয় তিনি জালালের কাছে থেকে কোন উত্তর বা প্রতিবাদ আশা করছিলেন।

সেটি না পেয়ে তিনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার কথা বলা শুরু করলেন,‘দেখো মিঃ ইসলাম, আমি তোমার দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস পড়েছি। আমি জানি গণহত্যার কথা, আমি জানি নারীর সম্ভ্রম লুটে নেওয়ার কথা। তোমার ভিতরে যদি কোন ঘৃণা থেকে থাকে, সে ব্যাপারে আমার বলবার মতো কিছু নেই। ইউ আর এন্টাইটেলড টু ইওর ওপিনিওনস এ্যান্ড ফিলিংস। কিন্তু তোমাকে এটাও বুঝতে হবে যে তুমি এখন বাংলাদেশে নেই, তুমি এখন ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকাতে বসবাস করছো।
আমাদের এই বিশাল দেশে কত রকমের মানুষ মাইগ্রেট করেছে, এখন তারা সবাই যদি তাদের নিজের নিজের ঘৃণাকে প্রকাশ করা শুরু করে, তাহলে এই দেশের আইনকানুন বলে কিচ্ছু থাকবে না। দিস কান্ট্রি ইজ আ গ্রেট মেলটিং পট, এখানে সব পরিচয়, জাতীয়তা মিলে মিশে এক হয়ে যাবে। আমি কি তোমাকে সব কথা বোঝাতে পারছি?’

জালাল নীরবে মাথা নাড়ে। সে বুঝতে পারে যে ধীরে ধীরে তার রক্তের গভীরে জেগে উঠছে এক প্রাচীন অজগর।

মিসেস গর্ডন বলেন,‘তুমি একবার তোমার মেয়ের দিকে তাকাও। কি নিস্পাপ দেবদূতের মতো মেয়েটি তোমার। তুমি কেন ওর হূদয়কে ঘৃণার বিষ দিয়ে কালো করে দিচ্ছ? একজন মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় যে সে মানুষ। কি তার ধর্ম, কি তার পরিবার, কি তার জাতি, সে সব প্রশ্ন পরে আসবে।’

দরজা খুলে রুবী অবাক হয়। ‘সেকি- তুমি কাজে যাওনি?’
জালাল রুবীকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢোকে। রুবীও উদ্বিগ্ন ভাবে তার পিছন পিছন আসে।
‘কি হোল স্কুলে? মিসেস গর্ডন কেন ডেকেছিল তোমাকে?’
জালাল ধপ করে সোফায় বসে। ফোঁস করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।

সব কিছু শোনার পর রুবী বললো,‘তা মিসেস গর্ডন খারাপটা কি বললো?’
জালাল অবাক হয়ে রুবীর দিকে তাকিয়ে থাকে। ‘তুমিও আমাকে এই কথা বলছো?’
‘শোন-আগে আমার কথাটা শোন। পরে রাগ করো। এই আমেরিকাতে আমরা যদি পাকিস্তানী না ইন্ডিয়ান, হিন্দু না মুসলমান, সাদা না কালো এই সব বিচার করা শুরু করি, তাহলে আমাদের এখানে আসাই উচিত হয়নি। আমাদের দেশে থেকে যাওয়াই উচিত ছিল। স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে আজ থেকে আটত্রিশ বছর আগে। তখন তুমি বা আমি কেউই জন্মাইনি। আমরা কেউই দেশের জন্যে যুদ্ধ করিনি, আমাদের বাবা-মা কেউই মারা যায়নি সেই সময়ে।’
‘তাই বলে আমি যুদ্ধের কথা ভুলে যাবো?’
‘তোমাকে তো আমি ভুলে যেতে বলিনি। যদিও বাংলাদেশের অনেকেই ভুলে গেছে। অনেকে উনিশশো একাত্তরকে এখন আর স্বাধীনতার সাল বলেনা, বলে গন্ডগোলের বছর। তাদেরকে তুমি কি বলবে?’
‘তাদের দায়িত্ব আমি কেন নেবো? আমি শুধু আমার মেয়েকে বলেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা, বলেছি পাকিস্তানীরা কিভাবে আমাদেরকে কুকুরের মত মেরেছে, বলেছি কিভাবে ওরা মেয়েদের সম্ভ্রমহানী করেছে। সেটা বলা আমার অন্যায়?’

রুবী অসহায়ের মতো মাথা নাড়ে। ‘আমি কি বলেছি যে সেটা অন্যায়? আমি যা বলছি তা হোল যে আমরা এখন আমেরিকায় থাকি। আমরা এই দেশে এসেছি একটা ভালো জীবনের জন্যে, আমাদের মেয়েটাকে একটা সুন্দর ভবিষ্যত দেবার জন্যে। তার জন্যে তুমি দুটো কাজ করছো, তার জন্যে আমরা এতদূরে এসে বাড়ী কিনেছি যেন মেয়েটা একটা ভালো স্কুলে যেতে পারে। এখন তোমার এইসব সেন্টিমেন্টাল কথার জন্যে যদি মেয়েটার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়, তাহলে কি সেটা ভালো হবে? তুমি কি তাই চাও? সত্যি করে বলো, যে তুমি তাই চাও। তাহলে আমার আর কোন কথা নেই।’

জালাল সেকথার কোন জবাব দেয়না। সে মাথা নীচু করে থাকে। সে জানে রুবীর প্রত্যেকটি কথা সত্যি।

‘এটাতো তোমাকে মানতে হবে যে আমাদের বাচ্চা এখন এখানে মানুষ হচ্ছে। সে বাংলাদেশের আর দশটা বাচ্চার মতো বড় হবে না। ভেবে দ্যাখো, দোলা কতটুকু বাংলা জানে? তোমাকে সে আব্বু ডাকতে গিয়ে প্রায়ই ড্যাডি ডেকে বসে। ওর কি দোষ? চারিদিকে যা দেখছে তাই শিখছে।’

রুবী জালালের পাশে এসে বসে। আলতো হাতে জালালের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। জালালের চোখে পানি আসে। নিজেকে এতো অসহায় তার আগে কোনদিন লাগেনি।

রুবীও জালালের কষ্ট টের পায়। সেও আঁচলে চোখ মোছে।

সেই রাতে জালালের ঘুম এলো না। অনেকক্ষণ বিছানায় ছটফট করে অবশেষে সে নীচে নেমে এলো। অন্ধকার লিভিং রুমের সোফায় সে চুপচাপ ভূতের মতো বসে থাকে।

তার মনে পড়ে গ্রামের নিয়ামত চাচার কথা। মুক্তিযুদ্ধে একটা পা হারিয়েছেন চাচা। সেখানে এখন কাঠের পা লাগানো।
চাচাকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাটতে দেখে জালাল জিজ্ঞেস করেছিলো,‘চাচা-কাঠের পা নিয়ে হাঁটতে আপনার কষ্ট হয়না?’
চাচা হাহা করে হেসেছিলেন,‘কষ্ট হবে কেনরে? মায়ের জন্য যুদ্ধে গিয়ে পা হারিয়েছি। বদলে মা তার বুকে জন্মানো জারুল গাছের এই কাঠ আমাকে দিয়েছেন। একে তো আমার মাথায় করে রাখা উচিত। এ আমার মেডেল রে জালাল, এ আমার মেডেল।’

জালালের চোখ ভিজে আসে। নিয়ামত চাচা-আপনি আমাকে মাফ করবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের যত গল্প আপনি আমাকে বলেছেন, আমি এখন থেকে তা সব ভুলে যাবো। আমেরিকা নামের এই বিশাল মেল্টিং পটে আপনার জারুল গাছের পায়ের কোনই দাম নেই।

‘আব্বু’। নরম গলার একটি ডাক শোনা যায়।
জালাল ফিরে তাকায়। দোলা কখন যেন নীচে নেমে এসেছে।
জালাল চোখ মুছে বলে,‘তুই ঘুমাসনি?’
দোলা তার পাশে এসে বসে। ‘তুমি কি আমার উপরে রাগ করেছো?’
‘না তো। তোর উপরে রাগ করবো কেন?’
‘কেন আমি টীচারকে বলেছি যে নাদিমের সাথে কথা বলবো না, তাই। তারপর বলেছি যে তুমি আমাকে বলেছো ওদের সাথে না মিশতে।’
জালাল হাসে। ‘না মা, তার জন্যে আমি রাগ করিনি। তুমি তো মিথ্যে বলো নি।’

দোলা জিজ্ঞেস করে,‘ তাহলে মিসেস গর্ডন তোমাকে ইয়েল করেছে বলে মন খারাপ?’
জালাল আবারও হাসে। ‘ না মা- মিসেস গর্ডন আমাকে ইয়েল করেনি। সে বলেছে তোমাকে এইসব আজেবাজে কথা যেন আমি না শেখাই।’

কিছুক্ষন চুপ করে থাকে দোলা। তারপর আস্তে আস্তে বলে,‘কিন্তু আমি নাদিমের সাথে কোনদিনও কথা বলবো না।’
‘তুমি কথা বলতে পারো দোলা। আমি তাতে মন খারাপ করবো না।’
‘না ড্যাড-স্যরি, না আব্বু, নাদিম খুব বাজে ছেলে। ও আমাকে আজকে বলেছে, আমি নাকি স্টুপিড বাঙ্গালী। কাল থেকে ওর সাথে আমি কোন কথা বলবো না। আমি ওর সাথে ফাইট করবো।’
‘না মা-স্কুলে যেয়ে ফাইট করা ভালো না।’
‘ওই ফাইট না আব্বু। অন্য ফাইট। আমি ওকে কোনদিনও আমার চেয়ে বেটার গ্রেড পেতে দেবোনা। আই উইল ওয়ার্ক রিয়েল হার্ড, এ্যান্ড আই উইল বীট হিম এভরি সিংগেল টাইম। আই প্রমিস। আই উইল শো হিম হু ইজ দ্য রিয়্যাল স্টুপিড।’

জালালের হঠাৎ বুক ভেঙে কান্না পায়। সে মেয়েকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে।
‘তুই পারবি মা? তুই সত্যিই এটা করতে পারবি?’
‘অফকোর্স।’
স্বল্প আলোকে দোলার চোখেমুখে খেলা করে একটি শিশুর সরলতা এবং গভীর আত্মবিশ্বাস। জালাল মোহমুগ্ধের মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
‘থ্যাংক ইউ মা। আই এ্যাম সো প্রাউড অফ ইউ।’
‘দ্য ফাইট ইজ অন আব্বু।’
তারপর মুখ কাঁচুমাচু করে লাজুক স্বরে দোলা জিজ্ঞেস করে,‘ফাইটের বাংলা যেন কি? তুমি সকালে বলেছিলে।’
‘যুদ্ধ।’
‘ও ইয়েস-যুদ্ধ। স্যরি-আমি ভুলে গিয়েছিলাম। দ্য যুদ্ধ ইজ অন।’


মন্তব্য

স্বপ্নহারা এর ছবি

গত কয়দিন ধরে সচলায়তনে এসেও কমেন্ট করার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আপনার সব গল্পই অ-অ-অসাধারণ লাগে! কিন্তু এটির ব্যাপারে কি বলব! সকাল বেলা ল্যাবে এসে পড়লাম...কান্নায় চোখ ভিজে গেল!! খুব অসহায় লাগছে...ভীষণ মন খারাপ করে দিলেন। একই সাথে দিলেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সাহস। মাঝে মাঝে একা লাগে...সাহস হারিয়ে ফেলি। আমি আপনাকে দেখিনি, চিনিওনা...শুধু আপনার অনুগল্প থেকে যতটুকু জানি; কিন্তু আজ আপনাকে কাছে পেলে আমি পায়ের ধূলা নিতাম...
আরও চাই এমন লেখা!

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ভাই আমার-আপনার মন খারাপ করিয়ে দেবার জন্য নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। বিদেশে এমনিতেই মানুষের মন দুর্বল থাকে, তাতে যদি আবার কেউ বাতাস দেয়, তাহলে তো চোখ ভিজবেই (এই যেমন আপনার মন্তব্যটি আমার কাছেও খারাপ লাগছে)।
ক'দিন আগে সাইফ তাহসিনের একটা লেখা এসেছিল বিদেশে বসে বাংলা ভাষা ও সংষ্কৃতি কি ভাবে ধরে রাখা যায়, বা আমাদের পরের প্রজন্মদেরকে আমরা কিভাবে তা শেখাবো। ওটা নিয়েই ভাবছিলাম ক'দিন ধরে। ফল হিসেবে বেরুলো এই লেখাটি। অতএব সাইফই হচ্ছে মূল ক্রিমিন্যাল। উহাকে ধরা হউক!
আমি কোন পেশাদার লিখিয়ে নই। মাঝে মাঝে যখন একা থাকি, তখন মাথায় শয়তানের কারখানাটি চালু হয় নানান রকমের চিন্তা দিয়ে। সময় পেলে সেগুলোকেই চেষ্টা করি শব্দ দিয়ে বাঁধবার।
আপনারা সবাই যদি আমাকে উৎসাহ না দিতেন, তাহলে আমি এর কিছুই লিখতাম না। এই প্রসংগে আরো একটি কথা বলি। বছর দুয়েক আগে একবার মনে হোল যে আমার ছাত্রজীবনের বিবিধ কাহিনী ভুলে যাচ্ছি, সেগুলোকে লিখে ফেলা দরকার। সামহোয়্যারে লেখা শুরু করলাম একটা নিক নিয়ে। দেখি অনেকেই এসে তা পড়ছেন এবং রীতিমত তাগাদা দিচ্ছেন। আমিও তাদের উৎসাহে লিখে চল্লুম। শেষে দেখি বিরাট এক মহাভারত তৈরী হয়ে গেছে। ভালই হোল, এখন আমি ওই দিনগুলো বা তখনকার মানুষগুলোকে ভুলে যেতে পারি।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

না না, আপনি মন খারাপ করবেন না। আমার আসলে খুবই ভাল লাগে আপনার গল্প...কিন্তু এটা একেবারে হৃদয় কেড়ে নিল। আরো চলুক।

হতাশাবাদীর হতাশাব্যঞ্জক হতশ্বাস!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মূলত পাঠক এর ছবি

কী আর বলি, আমি বাংলাদেশি নই, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার অনুভূতি স্বভাবতই কিছুটা আলাদা। তারপরেও এ গল্প যে ভাবে ধাক্কা দিয়ে গেলো তারপরে বলার কথা খুঁজে পাচ্ছি না। মানুষ মানুষকে ঘৃণা করুক এ চাই না, তারপরেও আপনাদের ব্যথাটা বুঝতে পারি, শেয়ারও করি কিছুটা। কিন্তু সেই বেদনার ভিতর থেকে এমন আশার কথা, ভালোবাসার কথা যখন বেরিয়ে আসে তখন মনে হয় এ কথা আরো শুনি না কেন।

আপনি আরও লিখুন, অন্য বিষয় ছেড়ে এই নিয়ে লিখুন। সে সব লেখা খুবই ভালো, কিন্তু এ হলো দরকারি, আর এই স্বরের প্রতীক্ষা আমাদের অনেক দিনের। ঈশ্বর থাকলে তিনি আপনার কলমকে শক্তি দিন।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

মানুষ মানুষকে ঘৃণা করুক, তা চাই না। আবার মাঝে মাঝে ঘৃণা করতে ইচ্ছে হয়। এই টানাপোড়েনে বোধহয় আমরা সবাই থাকি।
আপনাদের সবার উৎসাহ পাই বলেই লেখালেখিটা করতে চেষ্টা করি। তা না হলে এর কিছুই হোত না।
আপনাদেরকে আর কতবার ধন্যবাদ দেবো?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

স্নিগ্ধা এর ছবি

আপনি অসম্ভব বুদ্ধিমান একজন মানুষ হাসি

গল্পটার অনেকগুলো মেসেজ, পেলাম হাসি

সবজান্তা এর ছবি
দুষ্ট বালিকা এর ছবি

খুব খুব খুব খুব খুব ভাল লাগল!

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ উপরের তিনজনকে। খুশি লাগলো।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

জাহিদ ভাই, কি বলব!! আপনে আমাকে আজকে যে সম্মান দিলেন, আমি এতটা সম্মান পাবার যোগ্য নই। আপনার ভাষায় এমন ক্রিমিনাল হওয়াও আমার চৌদ্দ পুরুষের সৌভাগ্য। লেখাটা মনে অনেক আশা জাগালো আর নানাভাবে ছুয়ে গেল। অসাধারণ!!

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ভাই-সম্মান কেউ কাউকে দেয় না। যার যার সম্মান সে নিজেই অর্জন করে। আর আপনি তো ক্রিমিন্যাল মানুষ, আপনাকে আমি সম্মান করতে যাবো কোন দুঃখে?
লেখাটি যদি আপনার মনে আশা যোগায়, সে আমার বড় পাওয়া।
ভাল থাকুন।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

জাহিদ ভাই, আপনে আমার আদর্শ হয়ে যাচ্ছেন, ক্রিমিনালের আদর্শ হওয়া কি পোসাবে আপনার? হো হো হো আপনাকে আবারও শত সালাম হৃদয়ে দেশপ্রেমের জোয়ার আনার জন্যে, দোয়া করি আপনার লেখার উৎসাহে কখনও ভাটা না পড়ে হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এত গল্প যে প্রতিবারই পাশ কাটিয়ে যেতে চাই, কিন্তু প্রতিবারই পড়ে ফেলি। এ গল্পটা আপনার অনুগল্পগুলোর মধ্য একটু ভিন্নতর। অনেকগুলো মেসেজ আছে।

আপনাকে আর কত প্রশংসা করবো বলেন? সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণ দিয়ে আপনার পোস্ট পড়া শুরু হয়েছে, এখনো পড়েই যাচ্ছি!

মূলত পাঠক এর ছবি

ওঃ, ঢাবি নিয়ে সেই লেখাটা আপনার লেখা? আমার প্রথম দিকে সচলপাঠের কারণ ঐ লেখাটাই ছিলো, তখন নামে কাউকে চিনতাম না তাই লেখকের নাম মনে রাখি নি। তাহলে তো আপনি আমায় সচলে এনেছেন একরকম, বলাই যায়!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লেখক তখন ছদ্মনামে লিখতেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো গল্পটা... জাহিদ ভাই তো পুরা ফর্মে আছেন... চালিয়ে যান বস...

কিন্তু অনেক মেসেজ। গল্পের মধ্যে মেসেজের গন্ধটা বেশি হয়ে গেলে পড়তে একটু অস্বস্তি হয়। আমার মনে হয় একবার রিভাইজ দিলে এই গল্পটাই, এই বক্তব্যটাই আরেকটু কম মেদ নিয়ে হাজির হতে পারে।

এটা আমার একেবারেই পাঠক হিসেবে মন্তব্য। আশা করছি জাহিদ ভাই কিছু মনে করবেন না। আবারো বলছি, আপনি এখন ফর্মে আছেন বলে মনে হচ্ছে, দুহাত খুলে লিখে যান। পড়তে থাকি। দারুণ হচ্ছে। একটার চেয়ে আরেকটা দারুণ।
ছোট ছোট ভাবনা থেকে কী দারুণ গল্প তৈরি করে ফেলছেন... চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনার মন্তব্যটি মন দিয়ে পড়লাম। গল্পটিকে খুব বেশী মেসেজ দিতে চাই নি (আসলে আমি কখনোই গল্পে মেসেজ দিতে চাইনা), তারপরে ঘটনা এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করতে যা যা বলতে হয়, সেগুলোকে বয়ান করেছি মাত্র। তবে আপনি যা বলেছেন, সেটিও মেনে নিচ্ছ।
ফর্মে আছি এ কথাটা বলা ভুল। এই মুহুর্তে হাতে কিছুটা সময় আছে আমার। আর অলস মস্তিষ্ক যে কিসের কারখানা, তাতো আমরা সবাই জানিই।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার পড়ার সময় কেন যেন মেসেজটা চোখে লাগছিলো... এটা আমারও সমস্যা হতে পারে...
আপনার লেখায় তো "দারুণ লাগলো" এর বেশি কিছু লেখতে পারি না। তাই চান্স পেয়ে বলে দিলাম... চোখ টিপি

আপনার ঢাবি সিরিজটা পড়া ছিলো না। আজ হাতে যে সময় ছিলো তা না। কিন্তু প্রথম পর্বটা পড়তে বসলাম এমনি... তারপর আর ফিরতে পারলাম না... পুরোটা সিরিজ এক বসায় শেষ করে এখন চোট মাথা সব নষ্ট করে বসে আছি।

দারুণ একটা সিরিজ... আপনার তো মেগা সিরিয়াল লেখা উচিত। প্রতি পর্বের শেষে ক্লিফ হ্যাঙ্গারগুলো অসাধারণ। পরের পর্ব না পড়ে উপায় নাই।

আপনার লেখা আসলেই অসাধারণ... হ্যাটস অফ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মামুন হক এর ছবি

অন্য ফাইট। আমি ওকে কোনদিনও আমার চেয়ে বেটার গ্রেড পেতে দেবোনা। আই উইল ওয়ার্ক রিয়েল হার্ড, এ্যান্ড আই উইল বীট হিম এভরি সিংগেল টাইম। আই প্রমিস। আই উইল শো হিম হু ইজ দ্য রিয়্যাল স্টুপিড।’

--জাহিদ ভাই, এই কথাগুলো আমার নিজেরও।
এই গল্পটা আগের সবগুলো গল্পকে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার বিশ্বাস।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমার মনে হয় যে আমরা ব্যক্তিগত কৃতিত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করতে পারি। সবাই যদি এক একটি ভাল উদাহরণ সেট করতে পারি, তাহলেই সেটি দেশপ্রেম দেখানো হবে বলে আমার বিশ্বাস।
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো। এগিয়ে যান নির্ভয়ে!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

কাজী আফসিন শিরাজী [অতিথি] এর ছবি

আপনি তো দূর্দান্ত লিখেন! দারুন ফ্লো লেখায়। আমি তো আপনার দুটো গল্প পরেই আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম। খুব ভাল লাগল, আরো লিখুন। লেখা লিখিতেই প্রকৃত মুক্তি ও বিকাশ...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

গল্পটা পোস্ট হবার সাথে সাথেই পড়সিলাম...
একদম মন ছুঁয়ে যাওয়া একটা গল্প। ভীষণ ভালো লাগলো, জাহিদ ভাই। এর বেশি কী-ই বা বলবো। কিছু কিছু লেখা থাকে, যেগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না; যা-ই বলা হোক না কেন, তা কোনভাবেই যথেষ্ট বলে মনে হয় না। আপনার এই লেখাটা ঠিক সেরকম।

কলম (অথবা কীবোর্ডে হাত) থামাবেন না। চালিয়ে যান লেখালেখি। এরকম আরো বহু গল্প বেরোক আপনার হাত দিয়ে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ লাগলো। আমাদের গল্প এটা .........আমাদের অহংকার ধারণ করবে উত্তর প্রজন্মও।

নৈশী ।

দময়ন্তী এর ছবি

সচলে আমার পড়া গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প৷ আমি পাঠক হিসাবে, কারো লেখা যদি একটা ধারাবাহিকতায় পড়ি, তাহলে গল্পের মধ্যে কিছু বার্তা আশা করি৷ এই গল্পটায় সেটা এত সুন্দরভাবে এসেছে যে চমত্কার লাগল৷
------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ উপরের চারজনকে। আপনাদের সাপোর্ট না পেলে এর কিছুই লেখা হোত না। ভাল থাকুন।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ভুতুম এর ছবি

আপনার প্রসংশা করতে করতে হাঁপিয়ে গেলাম। ঠিক করেছি আপনাকে আর ভালো কিছু বলবো না।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

মেসেজটা ছোট একটা বাচ্চাকে দিলেও সবার জন্যই প্রযোজ্য। লেখা যথারীতি উত্তম জাঝা!

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ধন্যবাদ শাহেনশাহ আর ভুতুম!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সমুদ্র এর ছবি

এই লেখাটি পড়তে এসে সামহোয়ারইন এ আপনার "নির্বাসিতের আপনজন" সিরিজের লিংক পেলাম এবং আমার ঘুমাতে দেড় ঘন্টা দেরি হয়ে গেলো। নাহ, এর দায় আপনি এড়াতে পারেন না।
আপনার চমৎকার লেখার ভক্ত হলাম আজ থেকে। অফ টপিকে আর একটা কথা শুধাই, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কি ডাইরি লিখতেন আপনি? নাহলে এত খুঁটিনাটি কিভাবে মনে রেখেছেন! অসাধারণ।
ওই সিরিজটা বই আকারে বের করার কথা ভেবেছেন কি?

"Life happens while we are busy planning it"

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাহিনী যে সত্যি তা বলিনি কোথাও।
বই বের করা জিনিসটি দেশের বাইরে বসে সামাল দেয়া খুব দুরূহ। ইচ্ছে তো অনেক কিছুই হয়, কিন্তু শেষে কোন কিছুই আর হয়ে ওঠেনা।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

রেনেট [অতিথি] এর ছবি

গল্পটি পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।

প্রশংসা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অভিবাদন আপনাকে।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

টেক্সটবুকে এই গপপো? বাপরে!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

পাহাড়   এর ছবি

গল্পটি পড়ে চোখে জল এলো। খুব সুন্দর লেখা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।