আমি কান পেতে রই ০২: একটি আম গাছ ও কতিপয় দেয়াল

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি
লিখেছেন জোহরা ফেরদৌসী (তারিখ: সোম, ৩১/০১/২০১১ - ৯:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্মৃতি এক অদ্ভুত জিনিষ । তোরঙ্গে তুলে রাখা শাড়ীর ভাঁজের গন্ধের মত অতল থেকে কখন কোন গহন কথা, সুরকে তুলে আনবে, কেউ জানে না…

০১.

ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে খুব সাবধানে কাজলের পেন্সিল দু’চোখের কোল ঘেষে বুলিয়ে নিল রুপা । পাফে করে একটু সাদা পাউডার মুখের ওপর হালকা ঘষে দিল । তারপর কালো রংয়ের ছোট্ট টিপটা দুই ভুরুর ঠিক মাঝখানে বসিয়ে আয়নার নিজের মুখের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । নাহ, ঠিক হবে না । কী জানি, মা কি মনে করবে? কপাল থেকে কালো টিপটা তুলে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার এককোনায় লাগিয়ে রাখল । পিঠের ওপর বাঁধ না মানা বানের জলের মত ঘন কালো চুলগুলোকে বড় একটা রাবার ব্যান্ড দিয়ে পনিটেল করে উঠে দাঁড়াল ছোট টুলটা ঠেলে । শেষবারের মত আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল অনিমেষে, লাবন্যমাখা শ্যামলা মুখটি আলোয় ঝলমল করছে । কিসের আলো সেটা যেন কেউ বুঝে না যায় সেটাই রুপার এই মুহুর্তের ভয় ।

গতকাল বিকেলে যখন লিপি এসেছিল তখনই রুপা জানতো ও কোন খবর নিয়ে এসেছে । কেমন করে যেন মন জেনে যায় । শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে লিপি বাড়িয়ে দিয়েছিল খামটা, “নে পড়ে দেখ, কালিদাসের যুগতো আর নেই যে মেঘদূতের হাতে চিঠি পাঠাবে । তাই আমাকেই ডাকপিয়ন হতে হল ।” খুব লজ্জা করছিল রুপার, তবু লিপির সামনেই খুলতে হয়েছিল । খামের ভেতরে ছোট্ট চিরকুটে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছিল,

“আমার ঈশ্বর জানেন - আমার মৃত্যু হবে তোমার জন্য ।
তারপর অনেকদিন পর একদিন তুমিও জানবে,
আমি জন্মেছিলাম তোমার জন্য । শুধু তোমার জন্য ।

জানোইতো আমি কবিতা লিখতে পারি না । শুধু ঋণের বোঝা বাড়াই কবিদের কাছে । এবারে ধার করেছি নির্মলেন্দু গুনের কাছে । একবার কি দেখা হতে পারে, আগামীকাল?”

লিপিকে দেখেই রুপার এটা মনে হয়েছিল । রোজার এক মাস কলেজ ছুটি, রুপার বাসার বাইরে যাওয়ার কোন অজুহাত নেই । ধ্রুব যে এমন করে ওকে বার্তা পাঠাবে এ যেন রুপার জানাই ছিল । কিন্তু কী করবে রুপা? মাকে কী বলে বাড়ীর বাইরে যাবে? মার সামনে মিথ্যা বলতে গেলেই কেমন গলা বুজে আসে । মার দু’চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টি যেন রুপার পাঁজরের ভেতরে লুকানো সব গোপন কথাও এক নিমিষে পড়ে ফেলতে পারে । চিঠি পড়ে চুপ হয়ে যাওয়া রুপার মুখের দিকে তাকিয়ে লিপিই আবার কথা বলেছিল, “কী বলবি খালাম্মাকে? কিছু ভেবেছিস?”

কী বলবে রুপা? এই সতের বছরের জীবনে মাকে মিথ্যে বলার মত পাপ কখনো করতে হয়নি, ধ্রুবই রুপার জীবনের প্রথম পাপ । রুপার মুখের দিকে তাকিয়ে লিপিই বাতলে দিয়েছিল বুদ্ধিটা, “এক কাজ করি চল । খালাম্মার সামনে আমি তোকে বলে যাব বায়োলজি প্র্যাকটিকেল খাতার কথা, যেটা আমি আনতে ভূলে গেছি আজকে । কালকে তুই সেটা আনতে কলেজে যাবি ।”

রুপা তখনো ভয় পাওয়া গলায় বলেছিল, “কিন্তু বায়োলজি প্র্যাকটিকেল খাতাতো আমার কাছেই আছে…”

রুপার কথা শুনে লিপি হাসি চাপতে না পেরে বলেছিল, “গাধা, প্রেম করবি আর একটুও মিথ্যা বলবি না? তা’হলে খালাম্মাকে সত্যি কথাটাই বল, মা, আমি ধ্রুবর সঙ্গে দেখা করতে যাব । দেখ্‌, কী হয় ।”

রুপা জানে এটা সে কিছুতেই বলতে পারবে না । ধ্রুব যে তার জীবনে কেন এল, আর সব কিছু ওলোট পালোট করে দিল । তার আজন্মের সত্য বলার সংস্কারকে ভেঙ্গে দেয়াই যেন ঢ্যাঙ্গা, ঝাকড়া চুলের তার্কিক ধ্রুবর একমাত্র উদ্দেশ্য । যখনই রুপা মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ের কথা বলে, তখনই হা হা করে ভীষন জোরে হেসে উঠে ধ্রুব, ঘুর্ণি বাতাসের এক ফুৎকারে ওর সব ভয় উড়িয়ে দেয়ার মত বলে উঠে, “মেয়ে, তুমি সাহসী হবে কবে?” রুপা জানে না, কবে কখন সে সাহসী হবে, আদৌ কখনো তার “সাহসী হওয়া” হবে কিনা । তাই লিপিকেই রুপার মায়ের সামনে গুছিয়ে মিথ্যে বলে যেতে হয়েছে । রুপার বায়োলজি খাতাটা আনতে সে আজ ভূলে গিয়েছে । কালকে যদি রুপা কলেজে যায়, তা’হলে সে সেটা রুপাকে ফেরত দেবে । আর এই ছুটিতে অনেকগুলো এক্সপেরিমেন্ট লিখেও রাখতে হবে । রুপার মা অবশ্য ব্যস্ত ছিলেন তখন খবরের কাগজের হকারের সঙ্গে কথায় । প্রতি মাসেই নটখটি বাধে খবরের কাগজের বিল নিয়ে । একটু খেয়াল না করলেই হকার বিল বেশী ধরিয়ে দেয় । একটা দৈনিক আর দু’টো সাপ্তাহিক পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাসহ বিলটা খুটিয়ে দেখে নিয়ে তবে বিল দেন রুপার মা । কাজেই লিপির কথায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেননি তিনি, নইলে ঠিকই ধরে ফেলতেন ওর মিথ্যে কথা ।

মায়ের সামনে আজকাল সব সময় কেমন এক অপরাধবোধ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় রুপা । কিছুতেই বলতে পারেনা ধ্রুবর কথা । অথচ ধ্রুবর ভাবনাও মাথা থেকে মুছে ফেলতে পারে না । হাজারবার আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করায় নিজেকে । কেন গিয়েছিল আন্তঃকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতার পরে বিজয়ী দলের দলনেতা ধ্রুবকে অভিনন্দন জানাতে? তারপর কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের সময়ে ধ্রুবর সঙ্গে আবার কথা হয়েছে রুপার বেশ কয়েকবার । লাজুক স্বভাবের রুপার প্রতিরোধের দেয়ালটা কখন যে ধ্বসে পড়েছে তা সে বুঝতেই পারেনি । যখন বুঝতে পেরেছে তখন থেকে শুরু এই টানাপোড়েন । কেন যে এল ধ্রুব ওর জীবনে!

রুপা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল মা বাজার নিয়ে ব্যস্ত । বাজার থেকে সদ্য আসা শাক সব্জি, মাছ কেটে বেছে গুছিয়ে রাখছেন দ্রুত হাতে । রোজার মাসে মার ব্যস্ততা অনেকগুন বেড়ে যায়, দম ফেলার ফুরসত নেই । রোজকার রান্না-বান্নার পাশাপাশি কোরান পড়া, ইফতার বানানো, প্রতিবেশীদের ইফতার দেয়া ইত্যকার নানাবিধ বাড়তি কাজের পাশাপাশি কিছুক্ষন বই পড়ার অবসর, সব মিলিয়ে মার দিনগুলো ঠাসা বুনোনিতে গাঁথা । তাই রুপা যখন মৃদু গলায় বলল, “মা, আমি যাচ্ছি কলেজে” তখন ওর মা মুখ না তুলেই বললেন, “আচ্ছা যাও, তাড়াতাড়ি এসো ।” তারপর চকিতে রান্নাঘরের জানালায় চোখ রেখে বলেন, “আসমানে মেঘ নেইতো? দেখ আবার ঝড়-তুফান না আসে ।” মার এই এক ভয়, ঝড়-তুফান । খুব ছোটবেলায় একবার বানকুড়ালী এক ঝড়ের সময় বাড়ি থেকে দূরে কাচারী বাড়িতে একা ছিলেন, সেই ঝড়ের বিধ্বংসী অভিজ্ঞতা তার মনে চিরকালের মত জায়গা করে নিয়েছে । কেউ ঘরের বাইরে যেতে নিলে প্রথমেই যা স্মরন করেন, তা’হল ঝড়-তুফান । মার কাছ থেকে এত সহজ়ে সম্মতি পেয়ে রুপার বুক থেকে যেন একটা ভার নেমে গেল । দরজার দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে শুনল, মা ডেকে বলছেন, “সাবধানে যেও ।”

দোতলার সিড়ি বেয়ে নেমে আসার সময় রুপার শান্ত মুখ দেখে কেউ বুঝবে না, ওর মনের মধ্যে তখন কী ভীষন ঝড় বয়ে যাচ্ছে । বাইরে ধীরস্থির ভাবটা প্রানপনে ধরে রেখে রুপা গেইট পেরিয়ে বাইরে এল । শুনশান পাড়ার রাস্তায় কোন রিক্সা চোখে পড়ল না । মেইন রোড থেকে অনেকটা ভেতরে এই পাড়ায় সাধারনতঃ রিক্সা থাকে না ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রুপা একটু দ্রুতলয়েই হাঁটতে শুরু করল । দু’টো বাঁক ফিরতেই হাতের ডানদিকে ভুঁইয়া সাহেবদের বাসা । রুপা বাসা থেকে বের হয়েই মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছিল যেন খালাম্মার সঙ্গে দেখা না হয় । রুপাদের পাড়ায় আরো অনেক খালাম্মা আছে, কিন্তু “খালাম্মা” বললে ওর বয়সী সবাই প্রয়াত ভুঁইয়া সাহেবের স্ত্রীকেই বোঝায় ।

ভূঁইয়া সাহেব এ পাড়ার প্রথমদিককার বাসিন্দা । মিরপুরের এই এলাকার উন্নয়নে তিনি অনেক কাজ করেছেন । সরকারী অফিসে ছোটাছুটি করে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সংযোগ থেকে শুরু করে নুড়ি বিছানো রাস্তায় ইট বিছানোর কাজ পর্যন্ত্য সব কাজেই তিনি সবার আগে উদ্যোগী হয়েছেন । তাই পাড়ার সবাই তাকে খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখত । সেই উদ্যোগী, কর্মী মানুষটি একদিন সকালে অফিসে গেলেন । দুপুরে খবর এল, অফিসে হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় সহকর্মীরা ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ । প্রতিদিনকার মত সেদিন সকালেও ভেজা চিড়া দিয়ে নাস্তা করেছিলেন । সেই চিড়ার বাটিতে মানুষটার হাতের ছাপ তখনো লেগে ছিল…

ভুঁইয়া সাহেবের মৃত্যুর পর তার পরিবারটির চারিদিকে যখন ঘোর অমানিশা, তখন তার অফিসের বড়কর্তারা বড় ছেলেটিকে চাকরী দিয়ে সাত সদস্যের এই পরিবারটিকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল । সেই থেকে খালাম্মাকে দেখা যায় বাসার সামনের ঝাকড়া আম গাছটার নিচেই দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটাতে । ঘর-দোরের কাজ কর্ম সব তিনি আগের মতই করেন । কিন্তু শব্জি কাটা থেকে শুরু করে চালের কাঁকড় বাছা ইত্যকার নানাবিধ কাজ যতটা সম্ভব তিনি সদর দরজার সামনে সিমেন্টের বাঁধাই করা সিড়িতে বসেই সেরে ফেলেন । আম গাছটা সারাবছর ছায়া দেয় তাকে । কে জানে, ওখানেই তার স্বামীর সাথে শেষবার কথা হয়েছিল, সেকারনেই কিনা তিনি ঐ জায়গাটিতে দিনের যতটা সম্ভব সময় কাটান । এপাড়ার বেশীর ভাগ বাড়িতেই এখনো সীমানা ঘিরে দেয়াল ওঠেনি, ভুঁইয়া সাহেবদেরও না । কাজেই, বাড়ির সামনের রাস্তা ধরে কেউ গেলে, তাকে দেখা যায় । পাড়ার মেয়েরা কোথাও যাচ্ছে দেখলেই অবশ্যম্ভাবীভাবে খালাম্মা ডেকে জিজ্ঞাসা করবেন, কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, কখন আসবে । আজ রুপার একটুও ইচ্ছা করছে না খালাম্মার প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ।

কিন্তু রুপার কপাল মন্দ, যথারীতি খালাম্মা আমগাছের নিচে বসে ফেরীওয়ালার সঙ্গে দামাদামী করছিলেন । রুপাকে দেখে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, “কই চললা রুপা? রোজায় কলেজ বন্ধ না?”

রুপা কোনরকমে জবাব দিল, “জ্বি খালাম্মা, কলেজ বন্ধ । আমার বান্ধবী প্র্যাক্টিকেল খাতা নিয়েছে, আনতে যাচ্ছি ।” বলতে বলতে রুপার কপালে চিকন ঘাম জমে যায়, গলা শুকিয়ে আসে । খালাম্মা বিশ্বাস করল কিনা কে জানে । শোনা না গেলেও রুপা দূর থেকে তার ঠোট নাড়া দেখে বুঝল, উনি বিড়বিড় করে কিছু বলছেন । খুব সম্ভবত বলছেন, “কিয়ের খাতা-মাতা । কে জানে কই যাইতাছে মাইয়া সাজগোজ কইরা । কেমনতরো মা বাপ বুঝি না । সেয়ানা মাইয়া কই যায় কোন খবরই রাখে না ।”

খালাম্মা মুখ ফিরিয়ে ফেরীওয়ালার দিকে মনোযোগ দেয়া মাত্র রুপা তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে শুরু করল । আবার একবার ওর মনে হল, ধ্রুব যে কেন এল ওর জীবনে!

০২.

শাড়ির আঁচলটা ভাঁজ করে কাঁধের ওপর গুছিয়ে সেফটিপিন দিয়ে আটকে দিচ্ছিল রুপা, মৃদুলা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, “মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় চোখ রেখে রুপা মেয়ের কথার জবাব দিল, “আমরা আগে যেখানে থাকতাম, তোমাকে সেখানে বেড়াতে নিয়ে যাব মৃদুলা ।”

“সেটা কত দূরে? সেটা কি ঢাকা সিটিতে, নাকি অন্য কোন সিটিতে মা? আমরা কীভাবে যাব?”

সাত বছরের মৃদুলার হাজার প্রশ্ন । আর হবেই না বা কেন? মায়ের সঙ্গে সে যে পাড়ি দিয়ে এসেছে অনেক দূরের এক দেশ থেকে । কিন্তু এটাই নাকি মৃদুলার দেশ, মৃদুলার মায়ের দেশ । মার সঙ্গে সে আগেও এসেছে এই দেশে, সব কিছু অন্য রকম । আগে যত বার এসেছে মা তাকে এখানে সেখানে নিয়ে গিয়েছে, বুঝিয়ে বলেছে সেই জায়গার কথা, মানুষের কথা । এবারে অবশ্য মা খুব কম কথা বলছে । বলবে কী, মার তো মা মরে গিয়েছে । কারুর যদি মা মরে যায় তা’হলে কি তার আর কিছু ভাল লাগে? কিন্তু মৃদুলার যে অনেক প্রশ্ন, তাই মার কষ্ট বুঝলেও মৃদুলা বেশীক্ষণ চুপ করে থাকতে পারে না । রুপা মেয়ের চুলে চিরুনি বুলাতে বুলাতে জবাব দেয়, “না মা, বেশী দূরে না । আমরা সিএনজি করে যাব ।”

সিএনজির নাম শুনেই মৃদুলা খুশি হয়ে যায়, কানাডায় এই রকম গাড়ি সে কখনো চড়েনি । যখন সাই সাই করে সিএনজি চলে, তখন দু’পাশের খোলা দরজা দিয়ে শো শো বাতাস চোখে মুখে লাগলে কী যে মজা লাগে । আরো ভাল লাগে যখন মা মৃদুলাকে এই ডিসেম্বরের হিমেল বাতাস থেকে বাঁচাতে কাছে টেনে নিয়ে নিজের শালের ভেতরে ঢুকিয়ে নেয় । ওহ, শালের চেয়েও মায়ের গায়ের ওমটা যে মৃদুলার কতবেশী ভাল লাগে!

নিজের গায়ে শালটা জড়িয়ে নিয়ে রুপা মেয়ের হাত ধরে সদর দরজার দিকে হাঁটে । দরজার ছিটকিনিতে হাত রেখে থমকে যায় রুপার হাত, পেছন থেকে কেউ কি বলে উঠল, “সাবধানে যেও”? নাহ্, কেউ নেই আর একথা বলার । রুপা আলগোছে ছিটকিনি থেকে হাত সরিয়ে মেয়ের হাত ধরে ।

রাজাবাজারের গলি থেকে মিরপুর রোডে এসে রুপা সিএনজির আশায় চোখ রাখে । ইচ্ছে করেই সকালের ব্যস্ত সময়টা পার করে বের হয়েছে রুপা, কিন্তু তারপরেও একটা খালি সিএনজিরও দেখা মেলে না । খুব বেশীক্ষন অবশ্য অপেক্ষা করতে হয় না, একটা খালি সিএনজি পেয়ে যায় রুপা । কিন্তু মিরপুরের নাম শুনে প্রথমে যেতে চায় না । তারপরে কী মনে করে রাজী হয়ে যায় মধ্যবয়সী সিএনজি চালক । রুপা মৃদুলার হাত ধরে উঠে বসে সিএনজিতে, তারপর মেয়েকে শাল দিয়ে পেচিয়ে নেয় গায়ের সঙ্গে । মানিক মিয়া এভেনিউ ধরে রোকেয়া সরনীতে পড়ে সিএনজি । হু হু করে বয়ে যায় হিমেল হাওয়া । সমস্তটা পথ মৃদুলা অনেক কথা প্রশ্ন করল, রুপা আনমনে কিছু জবাব দিল, কিছু দিল না । মৃদুলা জানে এই রকম সময়ে মা আসলে অন্য কোন পৃথিবীতে চলে যায়, মৃদুলার সব কথা তার কানেই যায় না ।

রোকেয়া সরনীর মেইন রোড ছেড়ে এক সময় ডানে মোড় নেয় সিএনজি । গলির মুখটায় কী প্রচন্ড ভীড়! তারপর পুরো রাস্তাটাই ভীড় ঠেলে ঠেলে এগুলো সিএনজি । যে পথটা এক সময় হেঁটে গেলে বিশ মিনিটে যাওয়া যেত, সেই পথটুকুই সিএনজিতে আসতে অনেক সময় লাগল । অথচ আগে রাস্তা ছিল ইট বিছানো, এখন পিচ ঢালা পাকা রাস্তা । কিন্তু হলে কী হবে, রাস্তার দুধারে সারি সারি অনেক মার্কেট হয়ে গিয়েছে । সেইসব মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভীড় উপচে এসে পড়ছে রাস্তায় । মার্কেট ছাড়াও উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো চেপে বসেছে রাস্তার দু’ধার, রুপার কাছে মনে হল রাস্তাটা অনেক সরু হয়ে গিয়েছে পিচের আস্তরনে ।

শেষ কবে এসেছিল রুপা এপাড়ায়? প্রথম যেবার রুপা কানাডা গেল, তখনো বাবা-মা এপাড়াতেই ছিলেন । প্রথম দু’বার এসেও তাদেরকে এখানেই পেয়েছে রুপা । তখনো মৃদুলার জন্ম হয়নি অবশ্য । তারপরেই এপাড়ার পাঠ চুকিয়ে কিছুদিন পল্লবীতে ছিলেন রুপার বাবা-মা । বাবার মৃত্যুর পর থেকে অবশ্য রুপার মা আরেক মেয়ের কাছাকাছি রাজাবাজারেই বাসা নিয়ে ছিলেন । মা বেঁচে থাকতে যত বার দেশে এসেছে, দেখতে না দেখতে গোনাগুনতির দিনগুলো ফুরিয়ে গিয়েছে । তাই গত আট নয় বছরে রুপা এপাড়ায় আর আসেনি ।

পাড়ায় ঢোকার মুখে রাস্তার এক ধারে কয়েকটা দোকান ছিল আগে । একটা মনিহারী দোকান ছিল যেখানে চা-বিস্কুট, চানাচুর, হজমী, জেট পাউডার, কাগজ-কলম ইত্যকার জিনিষ পাওয়া যেত । অসময়ের মেহমান এলেই মাতুর মনিহারী দোকানের চা-বিস্কুটের দরকার পড়ত । যদ্দুর মনে পড়ে আর ছিল একটা ইট, বালু, সিমেন্টের দোকান, আর একটা ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকান । এপাড়ার কেউ ড্রাই ক্লিনিংয়ের জন্য সেখানে যেত না । তবে পাড়ার শৌখিন মহিলাদের শাড়ি সেখানে টান টান ইস্ত্রি করা হত । শেষের দিকে বোধহয় একটা কাচা শব্জি আর মাছের দোকানও খুলেছিল ।

মোড়ের সেই দোকানগুলোর উল্টো দিকেই ছিল একটা বড় খেলার মাঠ । স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেলেই ছেলের দল সেখানে সারা দিন ফুটবল খেলত । শীতের সন্ধ্যায় কলেজ পড়ুয়া, সদ্য গোফ ওঠা ছেলেরা বড়দের সঙ্গে হ্যাজাক লাইটের আলোতে ব্যাডমিন্টন খেলত । সেই আলোর চারিদিক ঘিরে থাকত শীতকালের পোকা ।

কোথাও এখন আর সেই মাঠটা নেই । দোকান আর বসতি বাড়ীর উচু উচু দালান দখল নিয়েছে মাঠটার । দোকানের সংখ্যা বেড়ে পুরোদস্তুর মার্কেট হয়ে গিয়েছে । সম্ভাব্য সব জিনিষের সাইনবোর্ড দেখা গেল সেখানে । রুপারা প্রথম যখন এসেছিল তখন হাতে গোনা যেত কয়টা বাড়ী ছিল এপাড়ায় । রুপা স্কুল পার হয়ে কলেজের বছরগুলোতেও এখানে সেখানে তখনো বেশ কিছু প্লট খালি পড়ে ছিল ।পূর্ণিমার কাছাকাছি সময়ে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে ছেলে মেয়েরা পড়ার টেবিল থেকে রাস্তায় নেমে টিলু-এক্সপ্রেস, বরফ-পানি খেলায় মাততো । ইউনিভার্সিটির বছরগুলো পার হতে হতে সেই খালি প্লটগুলো ভরে আসলেও কেমন যেন খোলামেলা ছিল । এখানে ওখানে দু’একটা দোতলা তিনতালা বাড়ীও উঠছিল, কিন্তু আকাশটা তখনো অবারিতই ছিল । শেষ যেবার এসেছিল রুপা তখনো দো’তলা তিনতলার উচু বাড়ি দেখেনি । সেও হাতে গোনা কয়েকটা । এখন পাড়ার রাস্তা থেকে আর আকাশ দেখা যাচ্ছে না ।

সবগুলো বাড়ির সীমানার দেয়াল যেন চেপে আসছে রাস্তার ওপর । সিএনজি চালককে বেশ কসরত করে এঁকে বেঁকে রাস্তার পথচারীদের বাঁচিয়ে পাড়ায় ঢুকতে হল । এক সময় চালক জানতে চাইল, ঠিক কোথায় যাবে রুপা । একটু থমকে যায় রুপা, আসলেই ঠিক কোন বাড়ির গেইটে থামতে বলবে? কী মনে করে ওরা যে বাড়িটাতে থাকত, তার সামনেই এসে থামে রুপা । ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে মেয়ের হাত ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে গেইটের সামনে । গলা উচিয়ে দো’তলা থেকে তিন তলা হয়েছে বাড়িটা । চারিদিকে এক ফোঁটা জায়গা নেই । সারি সারি ইটের দেয়াল গ্রাস করে নিয়েছে সব কিছু । রুপার খুব ইচ্ছে করছিল একবার বাড়িটার ছাদে উঠে একটু দেখে আকাশটাকে । কিন্তু রুপা তা করে না, একবার শুধু মুখ তুলে ওপরে তাকায় । তারপর মেয়ের হাত ধরে ওল্টো পথ ধরে । দু’পাশে সরে সরে যায় অচেনা অনেক বাড়ির সদর দরজার পাশাপাশি চেনা বাড়ীগুলো…হাজী সাহেবের বাড়ী, রুনাদের বাড়ী, পল্লবদের বাড়ী, হাসান সাহেবদের বাড়ী… এক সময় রুপা এসে দাঁড়ায় ভুঁইয়া সাহেবদের বাড়ীর সামনে । সীমানা ঘেরা দেয়ালের ওপর গেথে দেয়া কাঁচের টুকরো, ধারালো পেরেক । লাল লোহার গেইটের কড়া ধরে নাড়তেই কিছুক্ষণ পরে নান্নু ভাই এসে দরজা খুলেন । রুপাকে দেখে বেশ আশ্চর্য্য হন, “আরে কেমন আছ, রুপা? আসো আসো, ভেতরে আসো ।”

নান্নু ভাইয়ের পেছন পেছন ভেতরে এসে দাঁড়ায় রুপা । বাড়ীর সামনের খোলা জায়গাটা জুড়ে উঠেছে আরেকটা দালান । আম গাছটার চিহ্ন মাত্র নেই । রুপার দৃষ্টি অনুসরন করে নান্নু ভাই বলেন, “তু্মিতো মনে হয় অনেকদিন পরে আসলা । আম্মা বেঁচে থাকতে গাছটা কাঁটতে দেন নাই । তাই জায়গাটা খালি পড়ে ছিল । এখন জায়গার যে দাম, খালি ফালাইয়া রাখা যায় না । তাই আম্মার মৃত্যুর পরে এই বিল্ডিংটা করছি আমরা ।”

তারপরেও আরো কিছু বলেন কি না নান্নু ভাই রুপার কানে যায় না । রুপা শুধু প্রশ্ন করে, “খালাম্মা নেই? কতদিন?”

“পাঁচ বছরতো হলোই ।” তারপর নান্নু ভাই ব্যস্ত হয়ে উঠেন, “চলো চলো ভেতরে চলো । চা খাবা ।”

রুপা অনিচ্ছুক পায়ে ভেতরে যায় । এক সময় ভেতর থেকে চা বিস্কুট আসে, কিন্তু কথা আর তেমন আগায় না । বিদায় নিয়ে মেয়ের হাত ধরে রুপা গেইটের দিকে আগায় । মৃদুলা মার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চায়, “মা, এটা কাদের বাড়ী?”

“আমার একজন খালাম্মার বাড়ী ।”

“তোমার আন্টির বাড়ী?”

“আহ্ মৃদুলা, কতবার বলেছি “আন্টি” বলবে না । উনি আমার খালাম্মা ছিলেন ।”

মার অসহিষ্ণু গলা শুনে চুপ করে যায় মৃদুলা । ছোট্ট মৃদুলা জানে না ওর মা তখন ফিরে গিয়েছে অনেক দিন আগের জীবনে । মনে মনে নাড়াচাড়া করছে সেই সব দিনগুলোকে যখন এই বাড়ীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শোনা যেত, “কই চল্‌লা এই অসময়ে, রুপা? ফিরবা কোন সময়?” এখনকার কোন অভিসারিকা যাওয়ার সময় কেউ কি ডেকে উঠে এমন করে? ডেকে উঠলেও সে ডাক কি দেয়াল পেরিয়ে পৌঁছায় কারুর কানে?

ফুটনোটঃ

১. স্মৃতির এই গল্পের কিছু চরিত্র, ঘটনা স্মৃতির মতই মায়াময় ।

২. আগের পর্বটি এখানে


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

'প্রথম আমি কী দেখে মুগ্ধ হই, প্রথম কার হাত ধরি..
আমার প্রথম স্মৃতির এই সব প্রশ্নে আমি ঠিক কিছুই বলতে পারি না, বোকার মতো চেয়ে থাকি।
প্রথম অশ্রুবিন্দুর কথা কার মনে থাকে, তারপর এতো বৃষ্টি, এতো বর্ষা...
এতোদিনে চোখের জলে তার কোনো চিহ্নই আর নেই./আমি সেই আদ্যক্ষর কী করে দেখাব?'

নস্টালজিয়ার ভার নিতে আর ভাল্লাগে না! মন খারাপ
তবে লেখা ভাল্লাগেছে। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তিথী ।

প্রথম আমি কী দেখে মুগ্ধ হই, প্রথম কার হাত ধরি..
আমার প্রথম স্মৃতির এই সব প্রশ্নে আমি ঠিক কিছুই বলতে পারি না, বোকার মতো চেয়ে থাকি।
প্রথম অশ্রুবিন্দুর কথা কার মনে থাকে, তারপর এতো বৃষ্টি, এতো বর্ষা...
এতোদিনে চোখের জলে তার কোনো চিহ্নই আর নেই./আমি সেই আদ্যক্ষর কী করে দেখাব?

কোটেশনটা কার? তোমার নিজের লেখা থেকে নয়তো? খুব ভাল লাগল । তোমার লেখা হলেও আশ্চর্য্য হব না । তবে কেন যেন মনে হয় তুমি এখনো অনেক ছোট এত চোখের জলের জন্য । ভাল থেকো সব সময় ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তিথীডোর এর ছবি

'সেসব কিছুই আর মনে নেই – মহাদেব সাহা'

তুমিও ভাল থেকো আপু। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তিথী কবিতার নাম আর কবির নাম জানিয়ে দেয়ার জন্য । খুঁজে নেব কবিতাটা । মহাদেব সাহা আমার প্রিয় কবিদের একজন ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন লেখা ।
বুকমার্কে নিলাম ।

------------------------------
নিক : সবুজ পাহাড়ের রাজা

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ফাহিম হাসান এর ছবি

চমৎকার।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রেশনুভা এর ছবি

পড়ে আরাম পেলাম। চমৎকার লিখেছেন। ধ্রুব'র কী হল? সে কি হারিয়ে গেছে স্মৃতির ভীড়ে?

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

এই যাহ্, আপনি দেখছি ফুটনোটটা ভাল করে পড়ে দেখেন নি । স্মৃতির এই গল্পে সব চরিত্র কিন্তু সত্যি নয় । তারপরেও যদি ধ্রুবকে ভাল লেগে থাকে…আজ নাহয় তোলা থাক ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ লাগলো। তারাপদ রায়ের একটা কবিতা শেয়ার করছি।

পুরনো শহরতলিতে
তারাপদ রায়

আবার ফিরে এলাম,
আর একটু খোঁজ নিয়ে এলেই ভাল হত।

বাড়ির সামনের দিকে
একটা কয়লার দোকান ছিল
কাঠ, কয়লা, কেরোসিন - খুচরো কেনা বেচা,
কেউ চিনতে পারল না

দু'জন রাস্তার লোক বলল,
'এদিকে কোনো কয়লার দোকান নেই
গলির এপারে রাধানাথ দত্তের গ্যাসের দোকান
সেখানে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন।'
মনে আছে কয়লার দোকানের পিছনে ছিল বড় উঠোন,
কয়েকটা আম কাঁঠাল গাছ, ভাঙা বারান্দা, ঘর দোর।
এখন তো কিছুই নেই,
শুধু একটা নেমপ্লেট, 'নাগরিক'।
চারতলা বাড়ি, ষোলটা ফ্ল্যাট,
এরই মধ্যে কোনওটায় আমি ফিরে এসেছি।
কিন্তু কয়তলায়, কাদের ফ্ল্যাট?
স্বর্গীয় রূপকবাবুর পদবিটা যেন কী ছিল,
তাঁদের নতুন বাসাবাড়িতে এখন কে থাকে -
কোনও খোঁজখবর রাখি না,
শুধু মনে আছে তাঁর ভাইঝি টুলটুলি।
না। সেই বাড়িটা জগৎসংসারে আর নেই,
টুলটুলিকে কেউ চেনে না।
পুরনো শহরতলির নতুন পাড়ায় বোকার মতো ঘুরি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

তাসনীম, অনেক ধন্যবাদ কবিতার জন্য । খুব ভাল লাগল । সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিচারনে পড়েছিলাম, ভাল লাগা জায়গায় ফিরে যেতে নেই । ভাল লাগা স্মৃতিরা সেই আঘাত সইতে পারে না । যে জায়গার সব কিছুতে এক সময় “আমি” ছিলাম এত তীব্রভাবে, তার কোথাও আর আমার লেশ মাত্র নেই । সে যে কী তীব্র আঘাত!

এই গল্পটি লেখার তাড়নায় শুধু যে সেই চির চেনা জায়গাটি হারিয়ে গিয়েছে তাই না, সেই সময়ের প্রকৃতি, আবেগ, সম্বোধনও বিলুপ্ত হয়েছে! আমার একটি ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষন আছে । আমার ছোটবেলায় আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশীদের খালা, খালু, মামা, মামী, কাকু, চাচী এই সব সম্বোধন করতাম । কখন যে সেই ডাকগুলোর জায়গা নিয়ে নিল আন্টি, আংকেল!

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা সবসময়ই ভাল লাগে, এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। ভাল থাকবেন। -রু

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ, রু । আপনিও ভাল থাকুন ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

রানা মেহের এর ছবি

কী মায়াভরা গল্প।
বানকুড়ালী ঝড় টা কী?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ রানা মেহের । বানকুড়ালী ঝড়টা হচ্ছে ছোট খাট টর্নেডো । প্রবল গোলাকার ঘূর্ণি বাতাসে সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যায় । খুব স্বল্পস্থায়ী, কিন্তু ব্যাপক তার প্রতিক্রিয়া ।

আমার ছোট বেলায় আমি এই নামেই শিখেছিলাম । হতে পারে এটি একটি আঞ্চলিক পরিচয়

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ধূসর স্বপ্নরা এর ছবি

অসাধারণ লাগল লেখাটি ... পড়তে পড়তে আসলেই পুরোনো দিন গুলাতে চলে গিয়েছিলাম ...

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ ধূসর স্বপ্নরা পড়ার জন্য । পেছনে ফেলে আসা দিনের কোন স্মৃতি কখন সামনে এসে দাঁড়াবে কেউ জানে না …

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বর্ণনার গুণে গল্পের প্রথম অংশ লেখকের জীবন থেকে নেয়া বলে মনে হয়।
শেষের অংশ পড়ে মনে হয় তা না পড়লেই ভালো ছিল। সন্দেহ হয়, লেখকও চেয়েছিলেন শেষের অংশটুকু কখনো না লিখতে। ওই অংশে কেবল মৃদুলাকেই ভালোবেসে গ্রহন করা যায়।
আপনার লেখা অসাধারণ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

বর্ণনার গুণে গল্পের প্রথম অংশ লেখকের জীবন থেকে নেয়া বলে মনে হয়।

সব লেখকের সব লেখাইতো কোন না কোনভাবে তার জীবনের অভিজ্ঞতা, তাই না? এই লেখাটি পুরোপুরি স্মৃতিচারন না, গল্পের মত করে তুলে আনা কিছু স্মৃতির মোহমায়া ।

অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য ও সময় করে মন্তব্য করার জন্য । আমার অতি সাধারন স্মৃতির গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে দেখে খুব ভাল লাগছে ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

অতিথি লেখক এর ছবি

পেছনে ফেলে আসা দিনের কোন স্মৃতি কখন সামনে এসে দাঁড়াবে কেউ জানে না …বর্ণনার গুণে গল্পের প্রথম অংশ লেখকের জীবন থেকে নেয়া বলে মনে হয়।ভাল লাগা জায়গায় ফিরে যেতে নেই । ভাল লাগা স্মৃতিরা সেই আঘাত সইতে পারে না । যে জায়গার সব কিছুতে এক সময় “আমি” ছিলাম এত তীব্রভাবে, তার কোথাও আর আমার লেশ মাত্র নেই । সে যে কী তীব্র আঘাত! গল্পেরশেষের অংশ পড়ে মনে হয় তা না পড়লেই ভালো ছিল। সন্দেহ হয়, লেখকও চেয়েছিলেন শেষের অংশটুকু কখনো না লিখতে। ওই অংশে কেবল মৃদুলাকেই ভালোবেসে গ্রহন করা যায়।
আপনার লেখা অসাধারণ।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কাউসারআলম2020

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ কাউসার ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

বাউলিয়ানা এর ছবি

ভাল লেগেছে...
সিরিজ পড়ছি হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ধন্যবাদ বাউলিয়ানা । ঠিক সিরিজ হিসেবে কিন্তু লিখছি না । স্মৃতিচারন লিখব বলেই শুরু করেছিলাম । কিন্তু এই পর্বে এসে মনে হল একটু স্মৃতির গল্প বলি । স্মৃতির সঙ্গে একটু কল্পনা মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে হল...

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

বইখাতা এর ছবি

খুবই ভাল লেগেছে।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ বইখাতা পড়ার জন্য ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।