একটি আধাসত্য কাহিনী

আলমগীর এর ছবি
লিখেছেন আলমগীর (তারিখ: সোম, ১৯/০৫/২০০৮ - ৪:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফোনটা পাবার পর আতিকুল ইসলামের মেজাজটা চরম খিচে গেল। আলীগ, বিএনপি, জোট সব আমলেই আজ্ঞাবহ। সরকারী চাকরি করতে এসে ভং ঢং করলে নিজেরই ক্ষতি। বৌ-পোলাপানরে কে কোন দিক দিয়ে ধরে নিয়ে চলে যাবে। দরকার কী অত ভেজালের। কৃতজ্ঞতার ব্যপারটাও ভুলার না। আশি মণ ঘি খাওয়া ছেলেপেলেও বাদ পড়ছে; আর সে জায়গায় আতিকুল বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। খরচ কিছু হয়েছে অবশ্য, সেটা তুলতে এক বছরও লাগে না। ঘাট ঠিক রাখতে পারলে প্রমোশন পোস্টিং সব চাহিদা মতো হয়।

এতসব ভাবাভাবির সময় নাই। উপরের হুকুম, তামিল করতেই হবে। ধরপাকড় যে আতিকুল করে নাই তা না। কয়দিন আগেও জোটের মন্ত্রী কয়টারে ধরে এনেছে। কিন্তু ওইগুলা ভিন্ন কেস, ছোটলোক- ধরতে গেলে স্যার স্যার কইরা পার পায় না। কিন্তু এ বার যে হুকুম, সেটা তামিল করতে গিয়ে যে কী বিপদ হবে! জলপাই আমল, বন্দুকের ডগায় বইসা কে মশকরা করে? এনারে ধরতে হবে কেন, এই ব্যপারটাও ঠিক ধরতে পারে না। কড়া হুকুম বেআদবি করা যাবে না; ছোকড়া-চেংড়া অফিসাররা যেন তেড়িবেড়ি কিছু না করে ফেলে সেটাও দেখতে হবে।

আসসালামু আলাইকুম, চাচা। আমাদের আসলে কিছু করার নাই। খুব চাপে আছি বুঝতে পারছেন তো। বেঈমান দলগুলার প্রায় সবগুলা এখন জেলে। আমি তো চাচা একা না, আমারও বস আছে। তাদের মন রাখার জন্যে হইলেও একটু কষ্ট স্বীকার করেন। আমি সব ব্যবস্থা কইরা রাখছি। আতিকরে আমি নিজে ফোন কইরা দিছি। কোন রকমের বেআদবী হবে না। সন্ধা বাদেই সে যাবে। বজলুরে বলে দিছি জেলে আপনার কোন কষ্ট হবে না। আব্বার জন্য আপনেরা বহু ত্যাগ স্বীকার করছেন, তারে পাকিস্তান থাইক্যা আনছেন, নাগরিকত্বের প্যাঁচ থাইকা ছাড়াইছেন। আমি আপনাদের কোন মেহনতের কথা ভুলি নাই। কিন্তু এইবার ব্যপারটা আসলে আলাদা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একটু তকলিফ সহ্য করেন।

ভাতিজা বেক্কলটা আছে কোন লোম কামে! কর্ণেল হইয়াও যদি আমাদের কথা মত চলতে না পারে তবে তো তারে নিয়া আশা নাই। অবশ্য হতাশার কিছু নাই, জুনিয়র অনেক ছেলেদের ঢুকানো হইছে। আওয়াজ দিলে সময়মত তারা ঠিকই কায়েমি আন্দোলনে শরীক হবে। ভাবিসাব কথামতো বুবুর পার্টিরে টাইট দিছে। এই পরিকল্পনা না হইলে বিশেষ কিছু বিষয় জানাও যাইত না। "মীমাংসিত অতীত" নিয়া কয়টা লোক চিল্লাপাল্লা করে এইটা জানা জরুরী ছিলো। যাই হোক, ভাতিজা সব চাপ সামলাইতে পারে নাই বোধ হয়। দুদকের বেত্তমিজগুলা নিশ্চয়ই ওর কথা শোনে নাই। রাজ্জাক সাহেব দরখাস্ত তৈরি কইরা রাখছে। দাড়ি-পাল্লা ঘরেও নিজেদের মানুষ, তারা নিশ্চয়ই এই বেশরমীর হাত থাইকা রক্ষা করবে।

রাজ্জাক সাহেব কেস নিয়া আসছেন। রেজিস্ট্রার সাহেব সিরিয়াল এদিক সেদিক করে কজলিস্টে দিয়া দিছেন। বেঞ্চ এজন্যে একটু অস্বস্তির মধ্যে। সেইদিন ওরা রায় দিলো জরুরী আইনে জামিনের আবেদন করা যাবে না। এখন এ কেসটারে কেমনে কী করা যায়। দ্বীনের খেদমতের সুযোগ বারবার আসে না। মাওলানার সেবা করা মানে আখিরাতের চিন্তামুক্তি। কিন্তু হুকুম আছে আপাতত না
করতে হবে। যা করার আপিল বিভাগ করবে। রেজিস্টার সাহেবরে হুকুম দিয়া দেই, রবিবারের কজলিস্টে যেন পয়লা থাকে এই কেসটা।

আতিকুল ইসলাম তার ১৫০ জনের সাগরেদ নিয়ে হুজুরের সাথে সাক্ষাত করতে যান মগবাজারের বাসায়। রাস্তায় তালেবানে ওলুমেরা ভীড় করে আছে। গেটের দারওয়ানকে লম্বা সালাম দিয়ে বাসায় ঢুকার অনুমতি চায় আতিকুল; সাগরেদরা চারদিক ঘিরে রাখে। এ টুকু না দেখালে কালকেই বামঘেঁষা পত্রিকাগুলো এইটা সেইটা ছবি ছাপবে। অবশ্য তাদেরও টাইট অবস্থা। আতিকুলের খবর মাওলানাকে জানান দেয় তার শিষ্য। তারে বাইরে অপেক্ষা করতে বল, আর তুমি মুজাহিদ, কামরুরে ফোন লাগাও। মুজাহিদ, কামরু সবাই আগে থেকেই রেডি। মোবাইল পাওয়া মাত্র হাজির, সাথে যন্ত্রপাতি সহ পোলাপানও।

আস্সালামু আলা..। আপনারা মনে হয় বুঝতে পারছেন। ভাতিজা আমাদের এই বেশরমের হাত থেকে ট্যাকল দিতে পারে নাই। সে আমার কাছে ফোন কইরা মাপ চাইছে। তবে সে সব জায়গায় বইলা রাখছে। মুজাহিদ সাবেরটা এখনও কনফার্ম কিছু হয় নাই। হইলে জানাইবে বলছে। আমরা দ্বীনের খেদমতে সেই পাকিস্তান আমল থাইকা একসাথে আছি। আমি বন্দী হইলেও যেন আপনাদের মধ্যে সেই একতা থাকে। আর ভারপ্রাপ্ত আমির তো আমরা গত মিটিংএ ঠিক কইরাই রাখছি। মোবাইলে রেগুলার যোগাযোগে সমস্যা হবে না, ইনশাল্লাহ। আর রাজ্জাক সাহেব কাইল কোর্টে ফাইট দিছেন, রবিবারে আপিলে উঠবে। ওখানেও আমাদের দ্বীনদরদী ভাইজানরা আছেন, ওনারা দেখবেন। ইনশাল্লাহ কয়েকদিনের মধ্যেই এই ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। আসেন, যাবার আগে সবাই মিল্লা নামাজটা পইড়া লই।

এর মধ্যে হুড়মুড় করে বৃষ্টি নামে। আতিকুল ইসলামের বাহিনী আর কামরুর সাগরেদরা প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় অবস্থান করে।

বজলুল ইসলাম বড় ভয়ে আছেন। বিরাট মেহমান আসছেন আজ তার আস্তানায়। এর আগে এমপি, মন্ত্রী অনেকজনকেই তিনি ঘর চিনিয়ে দিয়েছেন। সবাই তাকে সমীহ করেছে। মোবাইল দিয়ে একটু কথা কবে, এর জন্য ব্যানা হুদা তো পায়ে পড়ে যায় পারলে। শালারা জনগণেরে দেয়া বাঁশ এখন নিজেই নিজের ...। এই নেতারা আগেও এখানে আসছে; সিস্টেম সব জানে। কোন ঝামেলা হয় না এদের সামলাইতে। বিশেষ মেহমান সেই ৭১এর পর আর এদিকে আসেন নাই। উনার কোন দিক দিয়া কোন তকলিফ হয়ে না যায়, এ জন্য খুবই দুঃশ্চিন্তা। তারপর স্যার আবার নিজে ফোন করে বলে দিয়েছেন, মাওলানার যেন কোন বেইজ্জতি না হয়। তার জন্য বিশাল একটা রুম সাফসুতরো করতে হচ্ছে। কোনদিন ছোট ঘরে থাকেন নাই, আহারে। খাবার দাবার নিয়া কোন চিন্তা ছিলো না কারো। বড় মেহমান আবার বেনমাজীর হাতের
খাবার খান না, এইটাও হুকুম। জেলের মধ্যে মুক্তি একটা দুইটা ঘাপটি মাইরা আছে কি না কে জানে। মাওলানারে খুবই সাবধানে রাখতে হইব।

নামাজ শেষ করে, মোলাকাত পর্ব। এরকম মোলাকাত আরো একবার করেছিলো তারা ১৪ডিসেম্বরের। মোলাকাত-মোসাহাবা শেষ হলে আতিকুল ইসলামের ডাক পড়ে। আতিকুল সামনে এসেই লম্বা করে একটা সালাম দেয়। স্যার আপনার একটু কষ্ট করে আমাদের সাথে যেতে হবে, উপরের আদেশ স্যার। মাওলানা কোন কথা বলেন না, গেটে রাখা গাড়ীর দিকে এগিয়ে যায়। পিছনে দলের বড় বড় নেতারা।

গেটের সামনে জটলা। দলের তালেবানরা ভিড় করে আছে। সাংবাদিকরাও আছে- এইগুলারে একটা বড় শিক্ষা দিতে হইব। কালকের পত্রিকায় তারা আমার ছবি ছাপব। তালেবানেরা আমাকে নিতে দিবেনা- নারায়ে তকবির-আল্লাহু আকবার। ধস্বাধস্তি শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানী কিস্তি টুপিটা এক হাতে ধরে কোনমতে গাড়ীতে উঠে বসে মাওলানা। তালেবানরা নাছোড়বান্দা- গাড়ী যেতে দিবে না, রাস্তা আটকে আছে। আতিকুল ইসলাম কী করবে বুঝতে পারে না। আবার হুজুরের কাছে আবদার করতে হয়। মাওলানা পাতিদের হুকুম দেয়, ঝামেলা না বাড়াইতে।


মন্তব্য

আলমগীর এর ছবি

তথ্যগত সংশোধনী:
১. নিজামীর টুপিটা সম্ভবত জিন্নাহ, কিস্তি না।

তীরন্দাজ এর ছবি

একেবারে আসল জায়গাতে ঘা দিয়েছেন আলমগীর। সাবাস!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

জেলের ভেতর দুই-একটা মুক্তি থাকলেই বা কি আর করবে ? মুক্তিরা আজকাল মুক্ত অবস্থায়তেই চাকরের মত থাকে আর জেলে গেলে কী হালে থাকে কে জানে । আর এই সমস্ত রাজাকার আর পা-চাটা মন্ত্রীরা থাকে 'ডিভিশনে' । দেশের লোকের ট্যাক্সের পয়সায় এদের জন্য ভাল থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ।

- এনকিদু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কাহিনী 'আধাসত্য' বলে তো মনে হলো না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আলমগীর এর ছবি

জানি। কিন্তু ব্যঙ্গ করে লেখা যে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আরে এইটাতো একটা মাস্টারপিসের পর্যায়ে পইড়া গেছে জনাব।
আপনাকে এরজন্য জাঝা দেওয়া হইবে, এবং তাহা অবশ্যই পরকালে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

রাজাকারটা জেলে গেল ঠিকই, কিন্তু তার লঘু পাপে, গুরু পাপে না! কবে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে....

সাবলীল লেখার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।

- ফেরারী ফেরদৌস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঞঁ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।