১০১০

অনীক আন্দালিব এর ছবি
লিখেছেন অনীক আন্দালিব [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৬/২০০৯ - ৪:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নভেম্বরের এক শুকনো বিকেল। বিকেলের রোদ জমাট বেঁধে আছে তখনও, রাস্তায়। আমি গাড়িতে তল্পিতল্পা নিয়ে রওনা দিয়েছি। উদ্দেশ্য ১০১০।

১.
দরজা ঠেলে ঢুকতেই দুটো বিছানা, ডানদিকে লম্বালম্বি, বামদিকে আড়াআড়ি, দরজার পেছনে। চারকোনা ঘর। ঐপ্রান্তে আরও দুখানা বিছানা। ঘরের মাঝখানে দুটো বড়োবড়ো আলমারি দিয়ে মোটামুটি একটা বিভাজন তৈরি করা। আমি যখন ঢুকলাম, তখন কাউকে চোখে পড়লো না, অথচ ঘরে তালা দেয়া নেই। একটু ভিতরে গিয়ে দেখলাম আলমারির আড়ালের বিছানাতে একজন ঘুমাচ্ছেন, তার মাথার কাছে চেয়ারের উপরে রাখা টেবিল ফ্যান মৃদু শব্দে ঘুরছে। আমার হাতে গোল করে বাঁধা তোষক, ওটা মাটিতে রেখে আমি ঘুমন্ত মানুষটাকেই ডাক দিলাম।

সন্ধ্যা নামতে নামতেই সাকিব ভাইয়ের ফেলে যাওয়া আলনা, বাক্স, হ্যাঙার, তোষক, চাদর ইত্যাদি বাইরে বারান্দায় ছুঁড়ে ফেলা হলো। ঝুল এবং ময়লা পরিষ্কার করে আমি গোল করে বাঁধা তোষকটা মেলে দিলাম। টেবিল, বিছানা, চাদর, বালিশ। পায়ের কাছের জানালা দিয়ে বাইরে বাগানে জ্বালিয়ে রাখা টিউবলাইটের আলো এসে পড়ছে। আমি হেলান দিয়ে বসে থাকলাম আপাত অবস্থানে, কিছুটা ক্লান্ত এবং মলিন। ঘরের বাকি দুই বাসিন্দাও ফিরলেন। একজন ফিরেই ঘুম। আরেকজন মশারির ভিতরে উবু হয়ে বসে কী যেন করছেন। সাকিব ভাইয়ের মতো, এরাও কিছুদিন পরে ঘর ছেড়ে চলে যাবেন। বাকি থাকবে আড়ালে থাকা বিছানাধারী। রাত বাড়ে, কোলাহল, হাসি, খুচরো কথা ছিটকে ছিটকে যায় আমার চারপাশে। বুঝতে পারি এখানে মূলত বিযুক্ত এবং আলাদা আমি।

ক্লাসের পরে দুপুরে আড্ডার একটা প্রিয় জায়গা ছিল ক্যাফের সামনের চত্বর। অন্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরাও জমায়েত হতো। মাঝে মাঝে ফিল্ম সোসাইটির সন্ধ্যার মুভি শো দেখা হবে কী না সেটা নিয়ে কথাবার্তা। কারো কারো আড়াইটায় সেশনাল, তারা বেশিক্ষণ থাকতো না। সোয়া একটা দেড়টার দিকে ক্যাফের ভেতরে ভিড়, শোরগোল, খাওয়া দাওয়া, তেহারি বিশটাকা, ঝালফ্রাই বিশটাকা, খিচুরি তুলনামূলক সস্তা ও বিস্বাদ। তারপরে আড়াইটার পরে নিঝুম হতো সিরামিকের উঠান। চলাচল হলাহল কমে আসতো, আমরা কেউ কেউ বসেই থাকতাম এবং মাপার চেষ্টা করতাম কীভাবে রোদ নেমে যায়, বেলা পড়ে যায়। মাঝে মাঝে দুয়েকজন ছিটকে যেত হেঁটে চলে যাওয়া ওড়নার সাথে। আবার কিছু পরে ফিরেও আসতো, দুপুরের সময় অনেক দীর্ঘ ও ধীর বলে। ১০১০-এর সাথে যেসময়ে আমার সম্পর্ক হলো, সেই নভেম্বরের সময়, সেই আশু শীতের টান বা রোদের দাপটের সময়েই আমি ধীরে ধীরে ক্যাফের সাথে আলাদা হয়ে যাই। টের পাইনি কখন, ক্লাস শেষে বের হয়ে ডানের বদলে বামে যাওয়া শুরু হলো। গেইট পেরিয়ে রাস্তার ওপারের ছোট গেইট দিয়ে ঢুকলেই তিতুমীর। তারপরে পেছনের উইঙয়ে, ডানদিকের শেষের আগের ঘর ১০১০। ঘরে ঢোকার আগে প্রায়ই ১০১১এ উঁকি দিতাম। আদিরসাত্মকদাদা হাঁক ছাড়তেন, কিরে ***! কারো মুখে এমন আদরণীয় অশ্লীল সম্বোধনও সয়ে যেতে পারে, এটা আমার ধারণাই ছিল না। এখানে দুপুরের পরে ডাইনিঙের সমালোচনা জমে, মহিষের মাংস বা ছাইপাশ খেতে হচ্ছে বলে আমরা বড়োই বিরক্ত হই। ম্যানেজার কত টাকা মেরে নোকিয়া কি স্যামসাং কিনে ফেলছে ভেবে যারপরনাই হতাশ হই। বিছানাধারী ছাড়া আমাদের ঘরের বাকি দুই চাকরি পেয়ে চলে গেছেন বলে আমাদের ঘর মোটামুটি ফাঁকাই। আমরা দু'জনে রেক্সিনের ম্যাট বিছাই ঘরে, ঝেড়েপুঁছে ঝুল-টুল পরিষ্কার করি। ঘরে যারা আসেন, তারা বেশ চমৎকৃত হল আমাদের পারিপাট্যে। দু'টা কম্পিউটার, মাঝে মাঝে মুভি শো, সারাউন্ড সাউন্ডে আশেপাশের মুভিখোরেরা জমায়েত হয়, রেক্সিনের মেঝেতে মফস্বলীয় কায়দায় আমরা হাসি, শোরগোল করি। সেখানে আমি আর নিজের উচ্ছ্বাসটুকুকে আলাদা করতে পারি না। কেবলই মনে হতে থাকে, এটাই স্বাভাবিক, সবচেয়ে বাস্তব জীবন।

৩.
শীতের কম্বল থেকে ওম চলে গেলে, গরম বাড়ে। ঘরে একটাই ফ্যান, আমরা দু'জনেই সালমান খানের ফ্যান, এজন্য উদোম গায়েই বসবাস। বিছানাধারীর শেষ টার্ম। পাশ করলেই তিনি যে বিদেশে উড়বেন, সেখানে তার সুপারভাইজার যে একজন মহিলা প্রফেসর এবং তাঁর নাম লিসা। লিসার সাথে তার পত্রালাপের আমি নীরব সাক্ষী, মাঝে মাঝে ভাষাবিড়ম্বনা ঘুচোতেও সমান সহায়তাকারী। শেষপরীক্ষার আগে ১০১০এ আরো দুটো ছানাপোনা আমার মতোই উঠে আসে। দরজার দিকের দুইবিছানায়। তারা অতিশয় চঞ্চল, প্রগলভ। আমাদের ঘরে প্রচুর হৈচৈ জমা হতে থাকে। এভাবে একটা সময়ে দুপুরের ঘুম উবে যায়, শান্ত ঘরেই ডাইনিঙ-ম্যানেজার-মস্তকমুণ্ডন-গর্দভবৈঠন-গ্রামছাড়ন চলতে থাকে। বিছানাধারীর যাবার সময় ঘনিয়ে আসে। আমি বুঝতে পারি, এভাবে চলে যাওয়াটাই আসল সত্য, এবং তারপরে নিজের ব্যাপারেও সচেতন হই। চেষ্টা করি জড়িয়ে পড়া সুতোগুলো আলাদা করতে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। সব যোগাযোগ মানতেই হবে এমন তো কথা নেই- এমনটা ভেবেই আমি আলাদা ও বিচ্ছিন্ন হতে চাই। আমার খেয়ালে একবারও আসে না যে নিজের অজান্তেই আমি ধীরে ধীরে ক্যাফের ভীড় ভুলে গেছি, আর মনে নাই দুপুরের দৌড়, ঘাম, ওড়নাদের সৌন্দর্য।

আমাদের ঘরে বিছানাধারীর জায়গায় উঠে আসে মোটামানুষ। মোটামানুষের বাসা খুব কাছেই, কিন্তু বেচারা সদাব্যস্ত, সদাদৌড়বিদ, মহাকেজো। কেঁচোর মত পড়ে থাকতেও দেখিনি কখনও তাকে। রোল বিচারে আমার থেকে দুই পরে, কিন্তু মানুষ বিচারে সম্ভবত আমি তার ধারে কাছে নেই। মোটামানুষের হৃদয় বড়ো হয় এটা শুনেছিলাম, আফসোস ছিল কাছ থেকে এমন কাউকে দেখিনি বলে। এই মোটামানুষের ঘরে ওঠার পর থেকে আমিও বুঝলাম আপ্তবাক্য এমনি এমনি উক্ত হয় না। (একারণেই হয়তো আমিও মোটা হচ্ছি, হৃদয়ের আয়তন বাড়ানো যায় না, শুধু স্থূলত্ব দিয়ে যদি ধোঁকা দেয়া যায়!) মোটামানুষ একা এলো না, সাথে আরও একজন মোটামানুষ এলো। বোঝার সুবিধার্থে আসুন আমরা পরেরজনকে গীটারিক বলি। তার সাথে আমার পরিচয় ঐ গীটার দিয়েই। মানুষটা পাঁচতলা হল-এর ছাদে বসে নিশুতি রাতে গীটার বাজাতো। আমি শুনতাম, মাঝে মাঝে মোটামানুষের সাথে গলা মিলিয়ে গাইতাম। শিশির পড়লে, আমার ঠাণ্ডা লাগতো এবং মোটামানুষ ও গীটারিক মাথা দুলাতো, "তোরে নিয়ে... যে কী করি!" আমি হেসে ফেলতাম নিরুপায়, কারণ আমি নিজেই জানি না নিজেরে নিয়ে কী করা উচিত!

আমরা তিনজন রিকশায় চড়তাম। আপাতশীর্ণ আমাকে কীভাবে চিপা ও চাপা খেতে হতো সেটা সহজেই অনুমেয়। আমরা রাত জাগতাম। বারান্দায় বা ফুটপাতে হেঁটে বেড়াতাম। সোডিয়ামের আলো আমাদের ভালো লাগতো বলে আমরা চা খেতে বেরুতাম। পলাশীর মোড় ঘুরলেই আদা-চায়ের মামা, আমরা সেখানেই নিরন্তর ফাঁকা রাস্তার পাশে বসে ট্র্যাফিক সিগনালের ওঠানামা দেখতাম। বাহনবিহীন চওড়া রাস্তায় মাঝে মাঝে মহিষের দল চলে যেত, দেখে আমরা অবাকও হতাম কিছুটা। কখনও কখনও আমাদের ক্ষিদে লাগত। ডাইনিঙয়ের ঝোলঝোলকিউবিকমাছ বা আগাছাশাক রুচতো না বলেই আমরা রিকশা চেপে সোহাগে যেতাম। কালাভুনার ঝালে মোটামানুষ খুশি হতো, গীটারিক আরো দুয়েকটা মরিচ নিত আর আমি নাকের জল চোখের জল এক করতাম। খাওয়াশেষে জ্বলন্ত জিহ্বায় আরো তাড়না আনতেই আমরা চা খেতাম। গীটারিক ফস্‌ করে একটা সিগারেট ধরাতো। আমরা ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে খচ্চর স্যার আর ক্লাসের সবচেয়ে বড়ো আবাল ছেলেটাকে নিয়ে হাসাহাসি করতাম।

৪.
১০১০এ আমার জীবনও ফুরিয়ে এলো, এবং আমাদের তিনজনেরই সময় ফুরলো। মোটামানুষের সবার আগে। সে বেরিয়েই চাকরি নিয়ে নিলো (পরে সেটা ছেড়েও দিল)। গীটারিক নিজের আলসেমি ও নবাবি আচরণে কয়েকমাস পরেই চাকরি পেল দিনবদলের ফাঁকিঝুকিতে। আমার তখনও ঘরের মায়া কাটেনি, আমি পড়েই রইলাম আরো কিছুদিন। ছানাপোনা দুইজনের পরে আরো একজন ঘরে জায়গা নিল। তারপরেও আরও কিছুদিন আমি চক্কর কাটলাম। সেসময়ে বুঝিনি, তবে এখহন মনে হয় এটারও দরকার ছিল হয়তো। আমি ১০১০এ সব বাস্তবতাকে বুঝে উঠিনি তখনও। শেষ শিক্ষাটা হয়ে গেল শেষ তিন মাসেই। তারপরে আমি গ্র্যাজুয়েট, আমি ১০১০এর প্রাক্তন। দরজা ঠেলে ভেতরে এলে অচেনা মুখ, দরজা ঠেলে বাইরে গেলেও অচেনামুখ। আমাকে মুখোশ পরতে হয়। সেটা আমার ভাল লাগে না। তাই আমি ১০১০থেকে দরজা ঠেলেই বেরিয়ে আসি। যেভাবে এসেছিলাম, সেভাবেই চলে গেলাম। ভেবেছি যে সব শিখিয়ে দিয়েছে ১০১০ আমাকে, কিন্তু বেরিয়ে আসার সময়েই জানলাম সবচেয়ে বড়ো সত্যটা। এতদিন, প্রায় তিনবছরে যেটা আমি জানতেই পারিনি। টেরও পাইনি কীভাবে ১০১০ আমার কাছ থেকে এটা লুকিয়ে রাখলো, আড়াল করলো!

ফিরে আসার পরেই জানলাম, জুড়ে যাওয়া বা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত মানুষ নিলেও সেখানে কতটা মানসিক ক্ষয় ঘটবে তা আগে থেকে বোঝার কোনই সুযোগ নাই।

***
১৬ জুন '০৯


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সবজান্তা এর ছবি

০০

লেখাটা একদম ছুঁয়ে গেল।

০১

১০১০-এ আমরা ছিলাম অনাবাসিক বাসিন্দা। কিন্তু যতোদিন আপনারা ছিলেন, ততোদিন প্রায় রোজই যাওয়া হতো। মাঝে মাঝে ভাবলে আশ্চর্য লাগে, নিজের ব্যাচের বন্ধুদের ফেলে ওইসময়টায় ঘাঁটি গেড়েছিলাম আপনাদের ওখানে। আপনাদের পরিচ্ছন্ন রুম, আলাদা প্লাস্টিকের আস্তরণ দেওয়া মেঝে আর কম্পিউটার ভর্তি সিনেমার খনি।

০২

মানুষগুলো সম্পর্কে আপনার মতামত চমৎকার হয়েছে।

রোল বিচারে আমার থেকে দুই পরে, কিন্তু মানুষ বিচারে সম্ভবত আমি তার ধারে কাছে নেই। মোটামানুষের হৃদয় বড়ো হয় এটা শুনেছিলাম, আফসোস ছিল কাছ থেকে এমন কাউকে দেখিনি বলে।

অংশটা দারুণ লাগলো।

০৩

এখনো মাঝে মাঝে যাই ১০১০-এ, কোন বিপদ আপদে পড়লে, তবে পুরানো পরিচিত মুখের প্রায়শ অনুপস্থিতিতে ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।

১০১০ এর সাথে টুকরো টুকরো স্মৃতি জড়িয়ে থাকার কারণেই কিনা, লেখাটা পড়ে বিষণ্ণ বোধ হচ্ছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

অনীক আন্দালিব এর ছবি

লেখার কলেবর আর আমার অবসর দু'টাই অনেককিছু লিখতে দেয়নি। আমি শুধু দীর্ঘসময় জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা লিখলাম সেজন্য। এখানে অবশ্যই আরেকজন আবাসীর কথা আসেনি, শুকনো টিয়াপাখি। তার সেন্স অফ হিউমার অনেক অনেক মন খারাপ সময়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে।

তারপরে ছিল সুবেশী-ভদ্রলোক, বগা-চাপাবাজ, তোমরা, ছানাপোনাদের বন্ধুরা, বিশেষত পিচ্চিক্যাডেটগুলা। এরা না থাকলে ঐ হৈচৈগুলো জমতোই না!
***
সেই ১০১০এ আর আমি নাই, আমার কম্পিউটারের সেই খনিও আজ মৃতপ্রায়, শুষ্কতর হয়েছে।

আমি অনেকদিন ১০১০এ যাই না। আমার খারাপ লাগে... ....

এনকিদু এর ছবি

লেখা খুব ভাল লাগল ।

মাত্র বিগত হওয়া জিনিস গুলো মনে করিয়ে দিলেন ।

আদা চায়ের মামা এখনো আছেন । শহীদ মিনারে চা বিক্রি করে দুইটাকায় ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অনীক আন্দালিব এর ছবি

মাত্র বিগত হলে ঠিক আছে, এখনও আপনার সুতোগুলো ছেঁড়েনি। কিছুদিন যাক, ধরেন বছর দুয়েক পরে, একটা গহীন টান দিবে এসব স্মৃতিগুলো। সেই নিরীহ আদা-চায়ের জন্য পরান আকুপাঁকু করবে!

পড়ার জন্য ধন্যবাদ এনকিদু।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে সূর্যসেন হলের ২২৬/ক রুমের দিনগুলির কথা মনে পড়ে গেল। ভার্সিটি জীবনের প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৪ জন মিলে একই রুমে থাকা, ফ্লোরে ঘুমানো, মাঝরাতে চানখাঁরপুলে খেতে যাওয়া কিংবা সারারাত তাস খেলে সকাল আটটার ক্লাস মিস করা কতসব ঘটনাবহুল ছিল সেদিন। আজ সেসব কথা মনে পড়লে কেমন মন খারাপ হয়ে যায়।

অনীক আন্দালিব এর ছবি

সবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের গল্পটা এরকমই। এমনি করেই চানখাঁড়পুলে খাওয়ার ফাঁকে দেখা হয়ে যেত ঢাবি'তে পড়া কলেজের বন্ধুদের সাথে। সেটাও অনেক ভালো লাগতো।

আমার এই তাসখেলার নেশাটা হয়নি কেন জানি। তবে সারারাত মুভি দেখে, বা স্মলভীল/হাউস এগুলো দেখে আটটার ক্লাস অবলীলায় মিস হয়ে যেত। হাসি

স্বপ্নাহত এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা আন্দালিব ভাই। পদ্য কিছু কিছু আমার এন্টেনার উপর দিয়া গেলেও আপনার গদ্য লেখার ঢং আসলেই অনন্য! দেঁতো হাসি

---------------------------------

তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস্‌ পাটুস্‌ চাও?!

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অনীক আন্দালিব এর ছবি

শুক'রিয়া', শুক'রিয়া'। চোখ টিপি
অ্যান্টেনা আর উবুন্টুর ছবি দেখে চিনলাম তোমাকে! হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত লাগল লেখাটা। আপনার গদ্যের হাত ভয়াবহ দারুণ। লেখার স্টাইলটা আমার কাছে খুব ভাল্লাগে।

আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিজের ভার্সিটি জীবন নিয়ে কিছু লেখার। আপনার লেখাটা পড়ে সেই ইচ্ছার কথা মনে পড়ে গেল। সময়গুলো কী দারুণই না ছিল, না? জীবনের সেরা দিনগুলো পার করে এসেছি। আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আপনার লেখা পড়ে খুবই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লাম (যদিও আমি বুয়েটের না)।

চাইলে এটাকে সিরিজ বানাতে পারেন কিন্তু। ভেবে দেখবেন আশা করি।

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিজের ভার্সিটি জীবন নিয়ে কিছু লেখার।

বৃথা বাক্যক্ষয় না করে এখুনি লিখে ফেলেন। পড়ার আগ্রহ হচ্ছ॥ সেই সাথে আপনার ব্যাপারেও অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে (আমি আসলে তেমন কাউকে চিনি না, একে একে চিনছি তো, তাই)।

সিরিজ করা হবে কি না তা এখনও বলতে পারছি না। অলরেডি আমি একটা সিরিজ লিখতে গিয়ে মিইয়ে গেছি, প্রথম পর্বের পরে আর কিছু বেরোয়নি! হা হা! আমার এমনই নিরেট মাথা। তাই এটা নিয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, মাথায় থাকলো, মনেও থাকলো, দেখা যাক। হাসি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো, অনীক।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এই হোস্টেল লাইফটা আমি আসলে মিস করেছি।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

স্বপ্নাহত এর ছবি

মিস্কর্রার্কিছু নাই। এখনো তো বালিকাই, নাকি?! খাইছে

---------------------------------

তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস্‌ পাটুস্‌ চাও?!

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

দেঁতো হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনীক আন্দালিব এর ছবি

সুলতানা, মিস করেছেন কেন বলছেন, বাসায় থাকতেন নাকি? আমার আবার উল্টা প্রথমে ক্যাডেট, তারপরে মাঝে দু'বছর বাসায় থেকে আবার পরের তিন বছর বুয়েটের হল। সব মিলিয়ে ঘরের বাহির। বাইরে থাকার এই জীবনটা কেমন জানি না, তবে প্রচুর স্মৃতি আর মানুষ জড়িয়ে গেছে জীবনে এটা বলতে পারি।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

হুম।
সবটা সময় বাসা থেকেই... মন খারাপ
আর অনীক, 'সুলতানা' নামটার চেয়ে 'শিমুল' নামটা অনেক বেশি কিউট না? হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আমি সম্বোধন নিয়ে ঝামেলায় থাকি, পুরোটাই বলতাম, কিন্তু টাইপ করতে আলসেমি লাগলো। মন খারাপ

এখন থেকে না হয় 'শিমুল'ই চলুক।

রানা মেহের এর ছবি

খুব ছুঁয়ে যাওয়া লেখা অনীক
একটা কথা বলবো?
এই লেখাটাকে সিরিজ করলে বোধহয় ভালো হবেনা
তার থেকে এমনি থাক।
যখন ভালো লাগবে লিখবেন ১০১০ এর অন্য কোন ঘটনা।
(পরে সিরিজ হয়ে গেলে আমার দোষ নেই) হাসি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনীক আন্দালিব এর ছবি

ঠিক ঠিক! সিরিজ করলে মোটেই ভালো হবে না! দেঁতো হাসি আমি তো এমন সাজেশন পেয়ে বর্তেই গেলাম।

আমার লেখালেখি পুরোটাই স্পন্টেনিয়্যাস একটা তাড়না থেকে আসে। ইচ্ছা হলো, লিখে ফেললাম। এই লেখাটাও তেমনি, ঝিম দুপুরে কিছুই ভালো লাগছিল না, সকাল থেকেই ফেলে আসা মুখগুলো, মানুষগুলোকে মনে পড়ছিলো, তাই লিখে ফেললাম। সিরিজ মাথায় নিয়ে লিখিনি, তবে ১‌০১০-এর কথা হয়তো আরও বলা হবে। তিনবছরের জীবন তো এক লেখায় সেরে ফেলা যায় না!

[এই মন্তব্য লিখতে লিখতেই একটা মেইল পেলাম। সবজান্তা'কে করা মন্তব্যে যে শুকনো মানুষটার কথা বলেছিলাম, সে কিছু মধুরমতন গালিবিতরণ শেষে ক্ষোভ ঝেড়েছে, কেন তার কথা মূল লেখায় নেই বলে। মন খারাপ ]

রানা মেহের এর ছবি

মধুরমতোন গালির প্রতিক্রিয়ায়
শুটকা ভাইয়ের কোন গলি ঘুপচি নিয়ে
লেখা নামিয়ে দিন একটা চোখ টিপি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অনীক আন্দালিব এর ছবি

দেখা যাক। আপনার উৎসাহ দেয়া দেখে খুবই ভাল লাগছে। শুকনো টিকটিকি অবশ্য লেখা পড়ে বেশ খুশিও হয়েছে। সেইসাথে আরেকবন্ধু সকালে ফেসবুকে জানালো। যারা গত দু'বছর ধরে এই জীবনটাকে মিস করছে, তারা এই লেখার সাথে সবচেয়ে বেশি একাত্ম হয়েছে। তাদের জন্যে হলেও হয়তো আরো লিখতে হবে।

আবারও ধন্যবাদ আপা। হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি কখনো হলে থাকি নাই। কিন্তু ধরেন ঢাবির জগন্নাথ হলের ১১১ একসময় অঘোষিত আমার রুম ছিলো... কতো কতো ঘটনা...

আপনার লেখা সত্যি দারুণ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আমাদের সবার জীবনেই দেখি এমন কত শত দারুণ ঘটনা ঘটে যায়!

ধন্যবাদ আপনাকে, লেখাটা পড়ার জন্য। হাসি

সাইফ এর ছবি

১০১০ এ সিনিমা দেখতে মন্চায়, আরো গল্প শুনতে চাই, সিরিজ করেন আর নাই করেন, লেখা দেন, তাহলেই আমরা খুশি, খুব ভালো লাগলো লেখাটা

অনীক আন্দালিব এর ছবি

১০১০এ সিনেমাপাগলেরা দেশ-বিদেশ নানা জায়গায় ছিটকে পড়ছে। এখন সম্ভবত তারা আর সময় পায় না সিনেমা দেখার, রাত জাগার, হা হা করে হাসার, এমনি এমনি দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার।

গল্প বলতে আমার ভালোই লাগে। দেখি, সামনে লিখবো। হাসি

ভুতুম এর ছবি

চমৎকার। মাত্র পিছে ফেলে আসা সময়ের গন্ধ পেলাম যেন, মনটা খারাপ খারাপ হয়ে যাচ্ছে ...

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

অনীক আন্দালিব এর ছবি

মাত্রই ফেলে এসেছেন, টান বা মন খারাপের তান দু'টাই বেশি লাগবে। আর কিছুদিন যেতে দিন, দেখবেন এই মন খারাপের মাত্রা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভালো লাগলো খুব। জীবনে অনেক রকম অভিজ্ঞতা হলেও দেশের এই "হলে থাকা"টা হলো না। বাইরে রুমমেট নিয়ে থেকেছি প্রচুর, কিন্তু একই ঘরে থাকিনি। একই জায়গায় থাকা মানুষগুলোর মুখে সেই সময়ের গল্প শুনেই গেলাম খালি। কত আবেগ নিয়ে সবাই বলে। আব্বুর মুখে শুনে আসা গল্পগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।

মোটা সবাই হতে পারে, কিন্তু আমাদের "মোটা"র মত বড় সবাই হতে পারে না। হাসি

অনীক আন্দালিব এর ছবি

মোটা সবাই হতে পারে। তবে মোটামানুষের মত না হলে সেই মোটাত্ব ক্রমাগত ক্রিটিকের মুখে পড়তে থাকে। খাইছে

তানবীরা এর ছবি

অসম্ভব মন ছুঁয়ে যাওয়া একটা লেখা। নিজের ছাত্র জীবন মনে পড়ে গেলো। টি।এস।সি, লাইব্রেরী, পাবলিক লাইব্রেরী, কলাভবন আর আমার নিজের প্রিয় সেই এন। এক্স বিল্ডিংটা। আরো চাই, সিরিজ হলে আমার অসুবিধা নাই।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার কপাল ভালো, আমি হল-এ থাকি নাই। নাইলে এমনিতেই স্মৃতি নিয়ে ব্যারাছ্যারা অবস্থা, হল লাইফের গুলোও যোগ হলে আমি নাই হয়ে যেতাম। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া, এসেছি, লিখেও ফেলেছি...দুটো লেখা...

'হে নাবিক, হে নাবিক, জীবন অপরিমেয় নাকি'
আর
' এ মনে যতন করে বিফল প্রেমের বীজ বুনেছে হায়, বিনা কারনে...'

দেখ দেখ...পিলিজ...

দুষ্ট বালিকা/ সায়কা...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

রুমমেট জুতের হলে এক ছাদের নিচে একত্রবাস বড়ো আরামের কাজ। লইজ্জা লাগে

খুব ভাল্লাগলো লেখাটা পড়তে! হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার তো ১০১০ শুধু। কিন্তু আপনি আমাকে ৩০৩, ৩২৯,৩৩৩,২২৬-এর কথা মনে করিয়ে দিলেন। সবথেকে বেশি টানে ৩৩৩ আর ২২৬। ২২৬ আমার সিঙ্গল রুম ছিল, দেড় বছরের মধ্যে ৩ মাসও সিঙ্গল থাকতে পারিনি কিন্তু কী ভালোটাই না লাগত। ইস!

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।