অভিমানী

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শনি, ২৮/০৫/২০১১ - ১:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কী বলছে? - কী বলছে বুঝি নাই, তুই শুইনা দেখ। আবোলতাবোল, একই কথা বারবার বলে, ঘুরায়া ফিরায়া বলে। - ছোটভাইরে পাঠাইছি তার রিঅ্যাকশন নিতে, মাইকেল জ্যাকসনের ঘুমান্তিসের পরের দিন। এমজে পপসম্রাট, তিনিও, সুতরাং সাম্মাদিক ফিচলামি।

কিছু একটা তো কৈছে? যা কৈছে দশবারো সেকেন্ড লাগায়া দে। - হ কৈছে, মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন যুগান্তকারী।

তিনি পপের সাথে হৃদয়ের হ্যাঁ? হৃদয়ের একটা মিলন ঘটাইছিলেন। তিনি অনেক আগে থাইকাই বৈসা বৈসা দেখতে পাইছিলেন একশ বছর পরের দুনিয়াটা। একশ বছর পরের দুনিয়াটা দেখছিলেন তিনি, তাই না? - ওকে। এইপর্যন্ত রাখেন। ভিডিও এডিটর বলে গুরুর বয়স হৈছে। কী কয় না কয়। - ধুরো মিয়া, বয়স হয় নাই। যা কৈছে কাজের কথা কৈছে, হুঁশেই কৈছে। মাইকেল জ্যাকসন ঐখানে বৈসা দেখতে পাইছিলেন দুনিয়া ধ্বংস হয়া যাইতেছে। একজাক্টলি কোনখানে বৈসা, গুরু সেইটা ক্লিয়ার করে নাই।

… তিনি আমার প্রাক-শৈশবের ঘটনা। তখন আমরা ভিএইচএস ফরম্যাটে ছিলাম। আমাদের যাবতীয় স্মৃতিতে ঝিরঝির কইরা বৃষ্টি হইত। এখনও হয়। কিন্তু এখন আর মনে কোনো স্মৃতিই জন্মায় না। এই শহরের, ঢাকা শহরের ভিতর-বাজারে ঢুকতে না ঢুকতেই আমাদের ভিসিআরটা নষ্ট হয়া যায়। খটখটা রোদের মধ্য রিওয়াইন্ড ফরোয়ার্ড ফিরি। কোনো স্মৃতি পয়দা হয় না।

এইরকমই বেকারত্বের মৌসুমে বসুন্ধরা মার্কেটে এসি খাইতে গেছিলাম, দোস্তরে নিয়া। দোস্তরে এইগান ঐগান গায়া জ্বালাইতে ভালু পাই। বসুন্ধরায় দেখি গোলাকৃতির ডিসপ্লেতে তিনি গান গাইতেছেন। অভিমানি, তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ? - শুনো, এইগান এখন আবজাব এনার্জি ড্রিঙ্কসের আবজাব জিঙ্গেল হৈছে। আমি সেই গান গায়া সারাদিন দোস্তরে জ্বালাইলাম। সেইদিন পান্থপথে বৃষ্টি নামাইতে পারছিলাম আমরা।

আমরা বস্তুত ভিএইচএস ফরম্যাট থাইকা মাঝেমধ্যেই আলাল-দুলাল-হাজিচানরে ডাউনলোড দিতাম। সেই দোস্ত এখন আম্রিকায়। সেইকালে তার বাসা ছিল চানখাঁরপুলের পিছেই। বর্ষাকালে এই খতর্নাক শহর এখনও টান মারে, আর আমি সুয়ারেজের স্রোতের ভিতর থাইকা শুনতে পাই, আলাল কৈ, দুলাল কৈ। এইকথা সত্য আমি রবির্দ্র স্বরলিপি আউরাইতাম এককালে কিন্তু তোমরা আমার স্মৃতিগুলারে হান্ডেড পার্সেন্ট নান্দনিক কৈরা তুলতে পারবা না, পারবা না।

… কিন্তু তার সহিত আমার মোলাকাত এই ঘটনারও বছরকয় আগে। খুবই সামান্য মোলাকাত, এই নিয়া বিরাট গর্বের কিছু নাই। তারপরও মনে দাগ রাইখা যাওয়া বিষয়, ভুলা যায় না।

ইনভার্সিটির সুইমিং পুলে নামছি। পানি খাইতেছি কম খাবি খাইতেছি বেশি। ইন্সট্রাকটর হাল ছাইড়া দিছে। আমি ইন্সট্রাক্টররে ডাকি, সে শুনে না। সেইসময় ভুস কইরা মাথা জাগাইলেন তিনি, প্রথমে চিনি নাই, সাঁতারের চশমা, চোখে ক্লোরিন। তিনি বললেন, দুইটা হাত সমান কৈরা আস্তে আস্তে পানি সরায়া দাও। এমনে কৈরা আগাও, পারবা। পারবা না? একবার মনে হইল পারব।

না, পারি নাই। আমি এখনো বডি ভাসাইতে পারি, সাঁতার পারি না। আগাইতে পারি না। আমরা এই ঢাকা শহরের পোলাপাইন তো, বেশিরভাগই ডুইবা যাই। দুয়েকটা খালি ভাসতে পারে। বছরকয় আগে, আমি স্বচক্ষে দেখছিলাম, তিনি সাঁতরায়া সাঁতরায়া আগায়া যাইতেছেন, যতদূর যাওয়া যায়। আজম খানরে নিয়া আমার আর কোনো স্মৃতি নাই এই ভাসারুগো দুনিয়ায় ...


মন্তব্য

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

স্মৃতিচারণ ভালো লাগল।

আজম খান শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে এই কামনা করি।

আয়নামতি1 এর ছবি

মন খারাপ

কুটুমবাড়ি [অতিথি] এর ছবি

আজম খান জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। স্কয়ার হসপিটালে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।

তারাপ কোয়াস এর ছবি

পপ সম্রাটের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।


love the life you live. live the life you love.

guest_writer এর ছবি

হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাবে না়়়
বসেরে টিভির বাইরে খালি দেখ্সি কনসাটর্ এ। একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়া স্টেজ এর এই মাথা থেইকা ওই মাথা গান গাইতাছিলো আর খালি দৌড়াইতাছিলো। "সম্রাট" নাকি কি একখান নামের সিনেমা করছিলো বস। মনে আছে
গোলাপী লুঙগি পইড়া তার নাচাকুদা দেইখা দুঃখ পাইছিলাম। কলেজ জীবনের কত স্মৃ্তির সাথে যে বসের গান জড়ায়া আছে ।লাইফের লগে জাবড়াজাবড়ি-মাইরপিট আর এদিক ওদিক ধান্দালি করতে করতে সব ধোঁয়াশা হইয়া গেলো কেমন জানি়়়
শুনলাম তাঁর ফুসফুস বলে আর কাম করতাসেনা।
ওনারে নিয়া লিখার লাইগা ধন্যবাদ।

-মেফিস্টো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

তিনি বললেন, দুইটা হাত সমান কৈরা আস্তে আস্তে পানি সরায়া দাও। এমনে কৈরা আগাও, পারবা। পারবা না? একবার মনে হইল পারব।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

জি.এম.তানিম এর ছবি

গুরু গুরু

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

একটা সময় ছিলো যখন যে যতো বড় ব্যান্ড বা শেঠ্‌ গায়ক হোক, তাদের/তার কনসার্টে গুরুর কোনো গান গাইলে গালি অবধারিত ছিলো - কখনো কখনো জুতাও। রবিবার না শুক্রবারে দুপুর ৩:১০ মিনিটে রেডিওর ঢাকা-খ'তে "কল্লোল" নামে পপ্‌ গানের অনুষ্ঠান হতো। আমরা এইচএমভির লোগোর মতো রেডিওর সামনে বসে থাকতাম গুরুর গান শোনার জন্য। কোনো সপ্তাহে গুরুর গান না শোনালে আমরা গালাগালি করে উঠতাম। ঈদের দিন সন্ধ্যায় নাজমা জামান-পিলু মোমতাজ-ইতি আলম-জানে আলম-ফেরদৌস ওয়াহিদ-ফকির আলমগীর-ফিরোজ সাঁই-কুমার বিশ্বজিত-এম এ শোয়েব-এন্ড্রু কিশোরের গানের অনুষ্ঠান হতো। আমরা চাতকের মতো বসে থাকতাম এইসব গান কখন শেষ হবে! কখন গুরু আসবেন!!

গুরু থাকুন আর চলেই যান - গুরু গুরুই থাকবেন সব সময়!

অভিমানী, তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে ............


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মাত্র ৪দিন আগে, এই মাসের ২৪ তারিখে পিলু মমতাজ মারা গেছেন।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

হায়! হায়!! এই খবর তো পাই নাই। তাঁর সেই বিখ্যাত গান "একদিন তো চলে যাবো পরের ঘরণী হবো আঁচলে বাঁধতে পারবি না" এখনো কানে বাজে।

ভ্রম সংশোধনঃ

একটা সময় ছিলো যখন যে যতো বড় ব্যান্ড বা শেঠ্‌ গায়ক হোক, তাদের/তার কনসার্টে গুরুর কোনো গান না গাইলে গালি অবধারিত ছিলো - কখনো কখনো জুতাও।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

খবর


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

আমার নিঃসঙ্গ কৈশোরে কী যে প্রভাব ছিল তাঁর। খুব খারাপ লাগছে।

না, পারি নাই। আমি এখনো বডি ভাসাইতে পারি, সাঁতার পারি না। আগাইতে পারি না। আমরা এই ঢাকা শহরের পোলাপাইন তো, বেশিরভাগই ডুইবা যাই। দুয়েকটা খালি ভাসতে পারে। বছরকয় আগে, আমি স্বচক্ষে দেখছিলাম, তিনি সাঁতরায়া সাঁতরায়া আগায়া যাইতেছেন, যতদূর যাওয়া যায়। আজম খানরে নিয়া আমার আর কোনো স্মৃতি নাই এই ভাসারুগো দুনিয়ায় ...

মারাত্মক।

তিন লাইনের কবি এর ছবি

খুবই সামান্য মোলাকাত, এই নিয়া বিরাট গর্বের কিছু নাই। তারপরও মনে দাগ রাইখা যাওয়া বিষয়, ভুলা যায় না।

একমত। আম্রিকাবাসী দোস্ত কে মনে হয় বুঝতে পারতেছি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

না, পারি নাই। আমি এখনো বডি ভাসাইতে পারি, সাঁতার পারি না। আগাইতে পারি না। আমরা এই ঢাকা শহরের পোলাপাইন তো, বেশিরভাগই ডুইবা যাই। দুয়েকটা খালি ভাসতে পারে। বছরকয় আগে, আমি স্বচক্ষে দেখছিলাম, তিনি সাঁতরায়া সাঁতরায়া আগায়া যাইতেছেন, যতদূর যাওয়া যায়। আজম খানরে নিয়া আমার আর কোনো স্মৃতি নাই এই ভাসারুগো দুনিয়ায় ...

গুরু গুরু

ওডিন এর ছবি

আমি একবার ওনার বাসায় গেছিলাম। কিন্তু ওনার সাথে কি কথা হইছিলো কিচ্ছু মনে করতে পারতাছি না। আজম খানরে নিয়া আমারো কোনো স্মৃতি নাই এই ভাসারুগো দুনিয়ায়

মন খারাপ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

চমৎকার!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ধন্যবাদ


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।