আমাদের ভাষা আমাদের সংস্কৃতি -পর্ব ১

আরশাদ রহমান এর ছবি
লিখেছেন আরশাদ রহমান (তারিখ: মঙ্গল, ০৯/১০/২০০৭ - ১২:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করতেই শিউরে ওঠতে হয় আর যে পথে আমরা এগুচ্ছি তাতে ভবিষ্যতের কথা ভাবতে অনেক সাহসের প্রয়োজন। আমার এই লেখার বিষয় হাজারো সমস্যা নিয়ে নয় বরং এমন একটি বিষয় যার জন্য সশস্র সংগ্রামের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন আমাদের সদিচ্ছা এবং সচেতনতা। আমার এই লেখার বিষয় আমাদের ভাষা, আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি। আমরা কি জানি ভবিষ্যতে আমরা কোন ভাষায় কথা বলবো? ভবিষ্যতের সে ভাষাটা কি হিন্দি? আজ থেকে দশ বারো বছর পরে হিন্দিতে কথা হয়তো বলতে হবেনা তবে সে ভাষাটা যে এখনকার এই বাংলা হবেনা সে ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত যদিনা সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। বড় একটি রাষ্ট্রের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে আমদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে আমাদের নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে। নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখার ইচ্ছা থাকতে হবে। হিন্দি আগ্রাসনে পশ্চিম বাংলা বদলে যেতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ কেন? বাংলাদেশ আর পশ্চিম বাংলার অবস্থানতো এক নয়। পশ্চিম বাংলার ভাষা-সংস্কৃতি বদলে যাক তা আমি চাইনা কিন্তু ভারতের প্রদেশ হিসাবে সেখানে হিন্দির প্রভাব বেশি পড়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলার অস্তিত্ব রক্ষা করার দায়িত্ব পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের চেয়ে আমাদের অনকে বেশি এবং পরিবেশ অনকে অনুকূল। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা নিজেরাই যেন চাই হিন্দিতে মিশে যেতে। অন্য দেশের ভাষা এবং সংস্কৃতি আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে কিন্তু তা নিজেদেরটা বিকিয়ে দিয়ে নয়। শিল্প, ভাষা ও সংস্কৃতির বিনিময় একটি দেশকে করতে পারে সমৃদ্ধ। শুধু ভারতীয় নয় আমাদের জানতে হবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি। জানতে হবে অন্য দেশের ইতিহাস। কিন্তু আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যখন আমরা নিজেরাই ধ্বংস করছি নিজেদের ইতিহাসকে, ধ্বংস করছি বাংলাকে। আমরা যে ভাবে হিন্দি চর্চা করছি তা সমৃদ্ধতা থেকে বঞ্চিত এবং তার ফলাফলও ভয়াবহ।

আর কালক্ষেপণ না করে কিছু একটা করা জরুরী দরকার যা জনগণের মনে পরিবর্তনের সূচনা করবে। কেউ কেউ বলতে পারেন জনগণ কেন? পরিবর্তনটা হওয়া দরকার রাজনৈতিক নেতাদের, পরিবর্তন দরকার নীতি নির্ধারকদের। কিন্তু আমি মনে করি ওদেরকে এর জন্য আংশিক ভাবে দায়ী করা উচিত, বাকিটা আমাদের। বাঙালি জাতির চরিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে আমরা অনেক খানি বদলে গেছি। পরিবর্তন হয়েছে সমষ্ঠিগত ভাবে সমাজের সকল স্তরে এবং এই পরিবর্তন যেন অনিচ্ছাকৃত নয়। হিন্দির আগ্রাসনে বাংলা বদলে যাক এ যেন আমাদের সকলেরই কাম্য। জনসংখ্যার সিংহভাগ হিন্দিকে এতটা আপন করে নিয়েছে যে হিন্দিকে আর ভিনদেশী মনে করা যায়না। এমনকি রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিশ্বাস হিন্দির প্রসারতায় কোন অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়নি। তাই দেখা যায় রাজনৈতিক বিশ্বাসে কেউ একদিকে এমন কট্টর ভারত বিদ্বেষী যে কিনা ভারতকে তার প্রাপ্য সাধুবাদ থেকেও বঞ্চিত করে, আরেকদিকে সেই হিন্দি চর্চা করে বাংলার পাশাপাশি নয় বরং বাংলাকে বাদ দিয়ে। তেমনি দেখা যায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যে যুবকের ধর্মান্ধতা ঘোচাতে পারেনি হিন্দি ছায়াছবি কিংবা নায়িকাদের নৃত্য পারদর্শিতা তাঁকেই হিন্দু বিদ্বেষী এক উদার হিন্দি প্রেমী করে তোলে। হিন্দি ছায়াছবি, নাটক এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান গুলো সাধারণত শিশু সহ সপরিবারে উপভোগ করা হয়। ইংরেজী ছায়াছবির মত কোন বিধি নিষেধ বিবেচনায় আনা হয়না। একটা সময় ছিল যখন হিন্দি ছায়াছবির অনেক গান বা দৃশ্য পরিবারের সবাই মিলে দেখার যোগ্য মনে করা হতোনা। কিন্তু যেদিন থেকে আমাদের অবাধে হিন্দি দেখার সুযোগ হলো সেদিন থেকে ধীরে ধীরে আমাদের সহনশীলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখন অনেক সময় এমনও হিন্দি ছায়াছবি বা অনুষ্ঠান সপরিবারে কোন রকম সংকোচ ছাড়াই দেখা হয় যা কিনা ইংরেজীতে হলে শিশুদের দেখার অযোগ্য ঘোষনা করা হতো পাশ্চাত্যের সমাজ ব্যবস্থাতেও। এমনি ভাবে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে আমাদের ভাষা, বদলে যাচ্ছে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি।
(অসমাপ্ত)


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পর্ব-১ পড়লাম ।
এতোটুকু আমাদের চেনা আশংকা,ভীতিকর বাস্তবতা । পরের পর্ব নামুক ।
আগ্রাসন তো আছেই,এর প্রতিরোধ কি আদৌ সম্ভব? প্রতিরোধের জন্য কি কৌশল দরকার? জানালা বন্ধ করে দেয়া নাকি নিজেদের শেকড়টাকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরা?

চলুক ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায়..

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আলোচনা শেষ হোক,তখন মন্তব্যের খাতা খুলতে যাবো।

আরশাদ রহমান এর ছবি

হাসান মোরশেদ ধন্যবাদ। প্রতিরোধ অবশ্যই সম্ভব। কৌশল স্থান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। তবে প্রথমত এটা যে একটা সমস্যা তা মানার জন্য সচেতনতা আনতে হবে।
প্রকৃতিপ্রেমিক ও আরিফ জেবতিক ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।