'সিঁড়ি' পাঠ : শিশুদের সাহিত্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: রবি, ২৩/১২/২০০৭ - ১২:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছর পাঁচেক আগে মফস্বলের এক উঠতি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বার্ষিক স্মরণিকা হাতে পেয়েছিলাম। এলাকার গণ্যমান্যদের কঠিন ভাষার বাণী, পাতা ভর্তি বিজ্ঞাপন, অজস্রবার শোনা কৌতুকের মাঝে একটি লেখা পড়ে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলাম। কেজি ওয়ানের এক ছাত্রের লেখা গল্প:

"একদিন আমি স্কুল থেকে ফিরলাম বিকালে। বাসায় এসে দেখলাম আম্মু নাই। দাদু বললো - আম্মু নাকি মামার সাথে নানু বাড়ী চলে গেছে। আমার ছোট ভাইও গেছে। আমি কান্না শুরু করে দৌড়ে রাস্তায় চলে এলাম। আম্মুকে দেখলাম না। আবার কান্না করে করে দৌড়ে ঘরে চলে আসলাম। ঘরের কাছে আসতেই একটা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। হাঁটুর চামড়া অল্প কেটে গেল। ব্যথায় কান্না শুরু করলাম। হঠাৎ দেখি আম্মু এসে আমাকে কোলে নিলো। আমি ভেবেছিলাম আম্মু আমাকে বকা দিবে। কিন্তু আম্মু বকা দিলো না। কোলে নিয়ে অনেক আদর করলো। আম্মু আমাকে ফেলে নানুর বাড়ী যায়নি। আমি খুব খুশী হলাম।"

এটুকুই বিবরণ। শিশু মনের কী চমৎকার বর্ণনা। স্কুল থেকে এসে মা'য়ের দেখা নেই। ছোট ভাইকে নিয়ে মামার সাথে নানুর বাড়ী গেছে শোনে আরও মন খারাপ। রাস্তায় দৌড়ে গিয়ে মা'কে না দেখা। আবার ঘরে ফিরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে আঘাত পাওয়া এবং কান্নার মাঝে মা'কে পাওয়ার আনন্দ নিয়ে প্রাণবন্ত একটি লেখা!

কেনো জানি মনে হয় - শিশুদের খুব বেশী বেশী নৈতিকতা শেখানো কিংবা স্বপ্ন দেখানোর চেষ্টা থাকে পাঠাভ্যাসেও। সে কারণেই হয়তো শিশুদের লেখনীতে উঠে আসে -

সত্য কথা বলবো
ভালো কাজ করবো,
বেহেশতে যাবো
মজার ফল খাবো।

কিংবা

অন্তু হবে বড় ডাক্তার
গাড়ী ঘোড়া কিনবে
সব লোকে চিনবে
চোখে দিবে চশমা
চলে যাবে বার্মা।

কচি হাতের গল্পও মিথ্যাবাদী রাখালের চক্কর থেকে বের হতে পারে না। লোভে পাপ পাপে মৃত্যুর গল্পে নতুন ঢঙে লোভী লোকটি সেভেন আপ মনে করে কেরোসিনের বোতল মুখে ঢেলে দেয় ঢকঢক করে।

দৈনিক পত্রিকার শিশুদের পাতার সম্পাদকও ছড়ার ছন্দ-তাল নিয়ে কঠিন থাকেন। তাই তোমাদের চিঠি পেলাম বিভাগে ভাইয়্যা সুন্দর করে বলে দেন - "'বই'এর সাথে 'নেই' ছন্দ মিলেনি। আবারও লেখা পাঠাও। আগামীতে অবশ্যই ছাপা হবে।"

এসব ধরাবাধা নিয়ম কানুনে শিশুরা কতোটুকু স্বত:স্ফুর্ত হয়ে লিখতে পারে জানি না। তবে এবার বাংলাদেশ থিয়েটার অব অ্যারিজোনার প্রকাশনে 'সিঁড়ি' পড়তে গিয়ে শিশুদের চমৎকার কিছু লেখা পড়ে আবার মুগ্ধ হয়েছি।

আট বছর বয়েসী ফারহান রাহমান লিখেছে:

আমি জানি
এক ছিল রানী
ভালো লাগে তার
অনেক ঠান্ডা পানি।

আবার একই বলয়ে বেড়ে ওঠা সাত বছরের ফাতমা আবিদের ছড়া:

ছিল একটি রানী
সে খায় অনেক পানি
সে অনেক পচা
সেটা আমি জানি।

আরেকটু বড়, দশ বছরের শাইরা আহমেদ লিখেছে - মোটা মামা:

আমার মোটা মামা
নাম হলো তার গামা।
পরেন বিরাট জামা
এবার খাওয়া থামা।

তবে শাদীদ আহমেদের সাদামাটা কথা শিশুসুলভ ভাবনায় প্রকাশ পায় এভাবে:

ছিল এক প্রজা
সব সময় থাকে রোজা
তার নাই ক্ষুধা
জীবন খুব সোজা।

ভালো লেগেছে আফরা নাওয়ারের আমার আছে বাড়ি ছড়াটি :

আমার আছে বাড়ি
বাড়ির মধ্যে গাড়ী
গাড়ীর মধ্যে আমি
আমি পড়েছি শাড়ী।
বাড়ি গাড়ী শাড়ী
নিয়ে কাড়াকাড়ি।
কে চালাবে গাড়ী
কে পড়বে শাড়ী
কে নেবে বাড়ি
আমি কি বলতে পারি?

নয় বছর বয়েসী শাবাব সিদ্দিকের লেখাটি আরও সহজ:

আমি কবিতা পারি না
তাই লিখতে চাই না।
যখন বৃষ্টি দেখি
তখন কবিতা লিখি।

শাদিদ আহমেদের এ গল্পটিতে কল্পনার দূর্দান্ত মিশ্রণ:

এক দেশে ছিল একটি ছাগল। ছাগলটা অনেক অদ্ভূত, সবাই তাকে নাম দিয়েছে পাগল ছাগল। সে ঘরে থাকেনা। সে সবুজ ঘাস খায়না। সে হাঁটতে চায়না। সে থাকে পানির নিচে। সে খায় নীল ঘাস, সে সব সময় বসে থাকতে চায়। আর, তার একটি বন্ধু ছিল, তার নাম মাঠ। তার নাম মাঠ কারন সে সবসময়ই মাঠে থাকে। মাঠ আর পাগল ছাগল অনেক ভাল বন্ধু। একদিন তারা শহরে যাচ্ছে। পথে তারা পেয়েছে একটি বই। ছাগল বলল আমি এই বই খাব আমার খিদা লেগেছে। মাঠ বলল ঠিক আছে খা, কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি কিছু করতে পারবনা। তারপর ছাগল বইটাকে খেয়ে ফেলল। সে বলল দেখ আমার কিছু হয় নাই, চল শহরে চল, পাগল ছাগল আর মাঠ শহরে আসল। সে বলল মাঠ আমার ভাল লাগছে না, আমি তোমার ঘরে যেতে পারব ? মাঠ বলল ঠিক আছে কিন্তু তোমার কিছু হলে আমি কিছু করতে পারব না। তারপর তারা মাঠের বাড়িতে আসলো। পাগল ছাগল বলল মাঠ আমার ভাল লাগছে না। মাঠ তাকে ধরল। “আহা তোমার গায় জ্বর, দাড়াঁও আমি শহর থেকে ঔষধ আনব” মাঠ শহরে চলে গেল আর পাগল ছাগল ঘুমিয়ে গেল। মাঠ শহরের পথে দেখল একটি বই। বইটা দেখছে সে। এই বইটা হল সে বই যেটা ছাগল খেয়েছে। মাঠ বই খুলে দেখল ভিতরে সব গুলি পাতাতে বিষ। মাঠ বলল “আহা!” সে তার বাড়িতে দৌড়ে গেল। যখন সে আসল, সে দেখল পাগল ছাগল মাটিতে। সে নিঃস্বাস ফেলছে না। সে মরে গিয়েছে। সেই জন্য তোমরা সবাই কোন জিনিস খাবে না যেটা তুমি জাননা। তা না হলে তুমি পাগল ছাগলের মত হয়ে যাবে।"

পানির নিচে ছাগলের বাস। মাঠের সাথে তার বন্ধুত্ব! শেষে বই খেয়ে ছাগলের মৃত্যু!! পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায় প্রবাদটি কি শাদিদ জানে?

শেষে বলি তালহা আবিদের ছড়াটি:

আমি খাইনা ভাত
পাইনা কোন স্বাদ।
আমি খাইনা পানি
সেটা খারাপ জানি।
আমি খাই অনেক খিচুড়ী
আমার আছে ছোট ভূঁড়ি।
স্বপ্নে দেখি আবার
খাচ্ছি আমি খাবার।

সাহিত্যের অনেক প্রাজ্ঞজন হয়তো ভ্রু কুঁচকে অনায়াসে এ লেখাগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে ভিনদেশে বেড়ে ওঠা এ শিশুদল ভীষণ প্রতিভার অধিকারী। মুক্ত ভাবনায় লেখালেখির সুযোগ পেলে এদেরই কেউ কেউ সহজেই তুচ্ছ করে দিবে অনেক তথাকথিত শিশু সাহিত্যিককে।

শেষে সুন্দর একটি প্রকাশনার জন্য 'সিঁড়ি' সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।


মন্তব্য

শেখ জলিল এর ছবি

ভিনদেশে বেড়ে ওঠা এ শিশুদল ভীষণ প্রতিভার অধিকারী। মুক্ত ভাবনায় লেখালেখির সুযোগ পেলে এদেরই কেউ কেউ সহজেই তুচ্ছ করে দিবে অনেক তথাকথিত শিশু সাহিত্যিককে।
...কথাগুলো দারুণ লাগলো। আসলে একজন শিশুর চোখ দিয়েই শিশুদের দেখা উচিত।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও সম্পূর্ণ একমত আপনার শেষ কথাগুলোর সাথে। আসলেই তাই...শিশুদের চোখে শিশুদের আর শিশুদের মাঝে আগামী দেখতে হবে।

খুব ভালো লেগেছে....ধন্যবাদ।

.............................................................
প্রীয়ক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

জলিল ভাই/প্রীয়ক : অনেক ধন্যবাদ ।

হিমু এর ছবি

আবিদ সাহেব দেখি প্রতিভাপ্রজ মানুষ। দুই মেয়েই হাত খুলে লিখছে। কংগ্র্যাটস ভাই।

আমার অনেক গোপন ইচ্ছার মধ্যে একটি ছিলো বাচ্চাদের স্কুলের মাস্টার হবার। যদিও এটা হওয়ার যোগ্যতা বা ধৈর্য, কোনটাই নাই এখন, কিন্তু মাঝে মাঝে ঘোরের মধ্যে ভাবি, ঘিঞ্জি শহর থেকে দূরে কোন স্কুলের পাশে খোলা আকাশের নিচে আমি মাস্টারি করছি, আমার সামনে একগাদা পিচ্চি, তারা চোখ বড় বড় করে শুনছে আমার জানা গল্পগুলি। তাদের হয়তো খালি পা, কিংবা ছেঁড়া জামা, তাদের হয়তো ভালো স্কুলে পড়ার মতো পয়সা নাই, কিন্তু অফুরন্ত কৌতূহল নিয়ে তারা প্রায় প্রতিদিনই আসছে আমার খোলা আকাশের স্কুলে। আমিও হয়তো বেঁচে আছি ওদের হাতে ধরিয়ে দেয়া কলাটামূলাটাকচুটার ওপর।

অনেক উচ্চাকাঙ্খার মতো এ-ও সফল হবে না, জানি। আমার চামড়ার নিচে অনেক কিছুর জন্য কাঙাল আমিই হয়তো আমার এই মাস্টার আমিকে গলা টিপে মেরে ফেলবে একদিন। তাই মাঝে মাঝে চেষ্টা করি বাচ্চাদের জন্য কিছু লিখতে। হয় না কিছুই।

প্রবাসী এই ক্ষুদে লেখকরা বাংলাকে আরো ভালোবেসে বড় হয়ে উঠুক। আর সচলে আগত অনাগত শিশুদের জন্যও কিছু কলকাকলির আয়োজন যেন আমরা করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হিমুর স্বপ্নের কথা জেনে ভালো লাগল। কোন না কোন একদিন তোমার স্বপ্ন অন্যভাবে হলেও সার্থক হোক - এই কামনা করি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হিমু ভাই স্কুলের টিচার হলে বাচ্চারা অনেক আগ্রহে পড়ালেখা করতো, অন্তত: পিচ্চিতোষ গল্পের লোভেই।
লেখা প্রসংগে, শাদিদ আহমেদকে কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে আগামীর সম্ভবনাময় এক ব্লগার। হাসি

হিমু এর ছবি

সুমন আর শিমুলকে ধন্যবাদ।

প্রবাসী বাঙালি শিশুদের বাংলা ভাষা চর্চার কাজে লাগবে এমন যে কোন প্রকল্পে আমি স্বেচ্ছাশ্রম দিতে সম্মত আছি।

সচলায়তনের পক্ষ থেকে কিছু করা গেলেও খারাপ হয় না। অন্তত একটা ব-e দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকার একটি নামকরা বিদ্যালয়ে শিশুদের বলা হয়েছিলো কার কী ভালো লাগে লিখতে।

আমার পরিচিত এক শিশুর তখন ছোট্ট ভাইটিকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত। স্বাভাবিকভাবেই দুদিন আগেও সে যতোটুকু আদর-মনোযোগ পেত, তা সে পাচ্ছে না। তার অনুযোগ- সবাই খালি তার ভাইকে আদর করে।

এ অবস্থায় সে লিখেছিলো- আমার ভালো লাগে মায়ের কোলে ছোট্ট ভাই হয়ে শুয়ে থাকতে।

... শিক্ষক তাকে শূন্য দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেননি ছোট্ট এই শিশুর মানসিকতা-কল্পনাপ্রিয়তা-বোধ-সৃজনশীলতা-আকাঙ্ক্ষা।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের কল্পনা শক্তিকে দাবিয়ে রেখে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর করে। খুবই দুঃখজনক এই প্রবনতা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

@অতিথি লেখক:
"আমার ভালো লাগে মায়ের কোলে ছোট্ট ভাই হয়ে শুয়ে থাকতে।"
এটা বোঝার জন্যই শিশুর চোখে শিশু দেখা দরকার।

এ মুখস্তের প্রবণতায় মাঝে মাঝে শিক্ষকরাও বিগড়ে যান। ঢাকার এক স্কুলের ক্লাস ওয়ানে পরীক্ষায় প্রশ্ন ছিল: কানা বগীর ছা কোথায় বাস করে?
(বইয়ের ছড়া: ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে কানা বগীর ছা)
সঠিক উত্তর নিয়ে মহা তুলকালাম। কেউ লিখেছে - আমাদের গাঁ'য়ে বাস করে, কেউ লিখেছে তালগাছের ওপরে বাস করে, কেউ কেউ লিখেছে - আমাদের গাঁ'য়ের তালগাছের নিচে বাস করে। এরকম নানাবিধ উত্তর। সবচে' স্মার্ট বাচ্চাটি লিখেছিল - "কানা বগীর ছা ঐখানেতে বাস করে"।
"ঐখানেতে" কোথায় সেটা টিচার খুঁজে নিক। হা হা।

হিমু এর ছবি

খুবই জটিল উত্তর হো হো হো!


হাঁটুপানির জলদস্যু

নজমুল আলবাব এর ছবি

এরেই বলে সু লেখক। শিমুল বলেইতো এমন দারুন সমালোচনা পেলাম। নয়ত সচলে তাত্বিককথামালাসমৃদ্ধখটমট সমালোচনা পড়েতো আমাদের দাত ভেঙ্গে যায় অবস্থা।

সিড়ি আর তার লেখকদের জন্য শুভকামনা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শুকরিয়া ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বাহ্ চমৎকার শিমুল!

প্রবাসে এই কটা বাঙ্গালী বাবা-মা কি কষ্ট করে যে তার সন্তানদের বাংলা শেখান তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভাস্কর ভাইয়ের কষ্ট করে এই স্কুল পরিচালনা করা, বাচ্চাদের লেখা প্রকাশ করা দেখলে ভীষণ আনন্দ বোধ হয় - যাক একজন অন্ততঃ বাংলাদেশ কে দ্বিতীয় প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছেন। এদের ভরসায়ই মাঝে মাঝে প্রবাসে থেকে যেতে লোভ হয়।

আর শিমুল যখন এই প্রচেষ্টাকে এত চমৎকার ভাবে মূল্যায়ন করে তখনও ভীষণ আনন্দ হয়। এই ভেবে যে কেউ কেউ তো এদের কষ্টটার মূল্যায়ণ করল!

শিমুলের পোষ্টের লিংক পাঠিয়ে দিচ্ছি সেইসব বাবা-মার কাছে যা প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানকে বাংলা শেখাচ্ছেন। দারুন খুশী হবেন তারা।

অনেক ধন্যবাদ শিমুল।

সিঁড়ির লিংকটা এখানে দিয়ে রাখি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মুর্শেদ ভাই:
আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে। প্রবাসের গতিময় জীবনে বাচ্চাদের বাংলা শেখানো, বাংলা চর্চা খুব সহজ হয়ে হয়তো ওঠে না। পরশু এক ফ্যামিলির সাথে দেখা হলো। বাচ্চাদের চেহারা টিপিক্যাল ইন্ডিয়ান গড়ন। মা ইন্ডিয়ান। কথায় কথায় বচ্চাদের বাবার সাথেও পরিচয় হলো। ভদ্রলোক বাংলাদেশী। ইতালী থাকেন অনেক দিন। বাচ্চারা ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলে, ইংরেজী শিখছে, বাংলা পারে না। একটা ফর্মে দেখলাম ন্যাশনালিটি লিখছেন - 'ইটালী'। হারিয়ে গেলো বাংলা, বাংলাদেশ। এটা হয়তো বাস্তবতা। এমন প্রতিকূলতায় বাংলা স্কুল চালানোর জন্য জনাব ভাস্কর এবং সংশ্লিষ্টদের বড়সড় অভিনন্দন জানাতেই হয়, সাথে বাচ্চাদের বাবা-মা'দেরও। অনেক আদর এবং শুভেচ্ছা অ্যারিজোনার সব বাঙালী শিশুর জন্য।

হিমু এর ছবি

প্রবাসী বাঙালি শিশুদের জন্য সচলায়তন একটা বাংলা লেখার প্রতিযোগিতা আয়োজন করলে কেমন হয়?


হাঁটুপানির জলদস্যু

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো প্রস্তাব। তবে নিয়মিত ব্লগ পড়ার অভ্যাসও বাচ্চাদের মাঝে গড়ে তোলা দরকার। প্রবাসে বাংলা চর্চা এবং সমকালীন বাংলাদেশের নিবিড় ছোঁয়ার জন্য ব্লগ হোক অন্যতম মাধ্যম।

নিঘাত তিথি এর ছবি

বাহ, কি সরল-সুন্দর, ছোটমনিদের লেখাগুলো। আর অনেক আদর নিয়ে লেখা শিমুলের রিভিউটিও।

"আমি খাই অনেক খিচুড়ী
আমার আছে ছোট ভূঁড়ি"

মহা সুইট। হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ওদের লেখার এ স্টাইলটাই ভালো লেগেছে খুব। "আমি খাই অনেক খিচুড়ী/আমার আছে ছোট ভুঁড়ি" কিংবা " আমার আছে বাড়ি/বাড়ির মধ্যে গাড়ী /গাড়ীর মধ্যে আমি/আমি পড়েছি শাড়ী।"

গীতিকবি এর ছবি

শিমুল,
"সিঁড়ি"র ছোটদের বিভাগের উপর আপনার চমত্‌কার রিভিউর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আপনার লেখা এবং অন্যান্যদের উত্‌সাহব্যঞ্জক মন্তব্যে প্রবাসের শিশু-কিশোররা বাংলা সাহিত্য চর্চায় আরো উত্‌সাহী হবে এবং অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের উত্‌সাহিত করবেন।

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

গীতিকবি:
আপনাদের উদ্যমী প্রচেষ্টাকে সীমাহীন সম্মান জানাই।
সাথে শুভকামনাও।
বুক পকেটে এক টুকরো বাংলাদেশ।

ঝরাপাতা এর ছবি

গ্রন্থকীট মাস্টারমশায়ের বুঝতে বেগ পেতে হলেও একজন ঠিকই বুঝতেন শিশুদের মনের কথা, তাইতো অনেক আগেই দাড়িওয়ালা বুড়ো বলে গেছেন মনের কথাটি-

মা যদি হও রাজি,
বড় হয়ে আমি হবো খেয়াঘাটের মাঝি।

শিমুলকে ধন্যবাদ অনেক অনেকদিন পরে আবারো সহজ সরল চোখে দেখার-ভাবার উপলক্ষ্য করে দেয়ার জন্য।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

গীতিকবি এর ছবি

আমাদের বাংলা স্কুল (শিকড় বাংলা স্কুল) এর বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী বাংলায় টাইপও করতে পারে। অন্যান্য বাংলা স্কুলেও হয়তো এরকম অনেককেই পাওয়া যাবে।
হয়তোবা সচলায়তন শিশু-কিশোরদের জন্য একটি বিভাগ "কিশোরায়তন" চালু করতে পারে - যেখান থেকে তৈরী হতে পারে অনেক শিশু-কিশোর বাংলা ব্লগার।

____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"

হিমু এর ছবি

আপাতত আলাদা বিভাগ করা না গেলেও প্রবাসী শিশুদের জন্য লেখালেখির একটি উদ্যোগ আয়োজনের ব্যাপারটিকে আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। সময়-সামর্থ্য-সুযোগের সমন্বয় ঘটলেই আমরা ঘোষণা দেব।


হাঁটুপানির জলদস্যু

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

খুবই ভালো হবে। অনেক ধন্যবাদ, হিমু ভাই।

কনফুসিয়াস এর ছবি

আলোচনা মচৎকার। পিচ্চিদের লেখাগুলো মুগ্ধ হয়ে পড়লাম, নিজের পিচ্চিবেলার কথা মনে পড়ে গেলো!
হায়, তখন কেন যে ভ্রাতঃ শিমুলের সাথে পরিচয় ছিলো না, নইলে আমার কবিতাগুলো তার কাছে পাঠিয়ে দেয়া যেত! হাসি
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মহাত্মন কনফুসিয়াসের বড়বেলার কবিতাগুলো বড্ড কঠিন মনে হয়। পিচ্চিবেলারগুলোও সেরকম হওয়ার কথা খাইছে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এই পোস্টটি আগে মিস করেছিলাম , এখন সেরা পোস্টের লিস্ট দেখে পড়ে ফেলা গেল।
আমি নিশ্চিত এই শাদিদ আহমেদের মতো ম্যাজিক রিয়েলিজম সাহিত্যে খুব একটা বোধহয় লেখা হয়নি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিক।
শাদিদ আহমেদকে বাংলা ব্লগস্ফিয়ারের লেখালেখির জগতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছি।

এই ফাঁকে ধন্যবাদ জানাই তাঁকে- যিনি এ পোস্টকে সেরা পোস্ট হিসেবে রায় দিয়েছেন। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।