গল্পের চরিত্র, লেখকের দায়

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
লিখেছেন আনোয়ার সাদাত শিমুল (তারিখ: শুক্র, ০৩/০৮/২০১২ - ৪:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রমজান আসতেই পর্দা পুষিদা বেড়ে গেছে।
বিটিভি এবং এটিএনের সংবাদ পাঠিকার মাথায় ঘোমটা উঠেছে। ঘোমটা টেনেছে রাস্তার পাশের দোকানগুলো। হাড্ডি জিরজিরে শরীরের শ্রমজীবি মানুষ কলা পাউরুটি পানি খেয়ে তাঁবুর ভেতর থেকে বেরুচ্ছে। ঘামে লেপ্টে যাওয়া শার্টের জীর্ণ শার্টের বোতাম খুলে রিক্সায় প্যাডেল মারছে। মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে ১১ নম্বরের দিকে যেতে ফায়ার সার্ভিসের পাশের ফুটপাথ।
পুরনো বইয়ের ভ্রাম্যমান দোকান।
চোখ বুলিয়ে দেখলাম, সেবা প্রকাশনীর পেপার ব্যাক বইয়ের সংখ্যা কমছে। গতবার আরো বেশি দেখেছিলাম। এবার বেড়েছে নীলক্ষেত প্রিন্টে শংকর, সুনীল, শীর্ষেন্দু, আশাপূর্ণাদেবী আর ইসলামী বইয়ের বাহার। স্কুল কলেজের বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। ধীর গতিতে দেখছি, আশেপাশে আরো কাস্টোমার আসছে, যাচ্ছে। কয়েক কিশোর কিশোরীকে দেখলাম টেস্ট পেপার খোঁজ করছে। এক তরুণ-তরুণী জুটি জোকসের বই চাচ্ছে।

১৯৮৪ সালে প্রকাশিত সেলিনা হোসেনের উপন্যাস 'পদশব্দ' পেলাম ভালো কন্ডিশনে। শাহরীয়ার শরিফের সায়েন্স ফিকশন, বেপরোয়া, নিলাম। কোনো এক সামিয়াকে লেখক অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন হাতে আঁকা কার্টুনসহ। বইটি উৎসর্গও করা হয়েছে সামিয়াকে। এক অথবা অভিন্ন মানুষ।
চোখ আঁটকালো, 'তালাক' নামের বইয়ে, লেখা আছে 'এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর আত্মকথা'। লেখকের নাম দেখে উলটে পালটে দেখলাম।
গত সপ্তাহে ফেসবুকে এক বন্ধুর স্ট্যাটাসে আলাপ দেখছিলাম এ বইয়ের। ফ্ল্যাপে লেখা ভূমিকা পড়ে আগ্রহ জাগলো। বইয়ের কাগজ বেশ ভালো, এর আগে হয়তো একবার বা দুবার পড়া হয়েছে এ বই, এমনই ঝকঝকে অবস্থা। দরদাম করে বেশ সস্তায় পেয়ে গেলাম।

বাসায় এসে পড়া শুরু করলাম। ২০০৫ সালের বই মেলায় প্রকাশিত। এর আগে নাকি এ উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে এক ট্যাবলয়েড দৈনিকে ছাপা হয়েছে ২০০৪এর অগাস্টের দিকে। তারপরেই নাকি তোলপাড় হয়ে গেছে। পাঠকের চিঠি ফোনে বাংলাদেশের প্রকশনার ইতিহাসে নাকি এক অভূতপূর্ব কান্ড ঘটে গেছে। প্রমাণ স্বরূপ কয়েকটা চিঠিও শেষে ছাপা হয়েছে, নির্ঘন্টে জানানো হয়েছে - সব লেখা ছাপালে বইয়ের দাম বেড়ে যেতো।
যাক, পড়া শুরু করলাম। গদ্যরীতি খুব সাদামাটা। অখন্ড মনোযোগ দেয়ার মতো কিছু নেই। তাই চোখ বুলিয়ে দ্রুত পড়ে ফেলা যায়।
বইয়ের পরিচিতিতে বলা হয়েছে - এক সেলিব্রিটি লেখক উচ্ছৃঙ্ক্ষল জীবন যাপন করতে গিয়ে ত্রিশ বছরের সংসার ভেঙে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিচ্ছেন। সেই স্ত্রীর আত্মকথার ছায়া অবলম্বনে লেখা।
হায়, আত্মকথা! হায় ছায়া!!
পাতার পর পাতা - গুল-ই-স্তান, হিমালয়, ঢা/বি-র শিক্ষক, তিন কন্যা, এক পুত্র, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, লেখকের ২ ভাই, ৩ বোন, কলোনীর বাসা থেকে বিতাড়ন, বাদল দিনের কদম ফুল, কোথাও কেউ নেই, আনিস, আবুল খায়ের, শাল্মলী পল্লী, এবং শাওন্তী।
এটা কি আর ছায়া থাকে?
হুমায়ূনের বিভিন্ন আত্মকথা টাইপ বইগুলো থেকে কাহিনী ধার করে, এর পরে সদ্য ডিভোর্সী স্ত্রীর মুখে ইচ্ছামতো কথা বসিয়ে গল্প ফাঁদা!!!
হুমায়ূন আহমেদ এতটাই নন্দিত এবং নিন্দিত যে তার বিগত স্ত্রী হয়তো কোনো এক কালে নিজের স্মৃতিকথা লিখতেন! সে দায়িত্ব নিজের কাঁধে কী করে নিলেন মিলান ফারাবী?
শুনেছি, মানবজমিনে ধারাবাহিকভাবে ছাপা হওয়ার সময় নাকি গুজব রটেছিল গুলতেকিনই লিখছেন ছদ্মনামে। অথচ 'তালাক'এ এমন অনেক শব্দ এবং সংলাপ উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো শুনলে গুলতেকিনও হয়তো অস্বস্তিবোধ করবেন।

ছায়া অবলম্বনে বলে- লেখক কতোটা দায় এড়াতে পারবেন জানি না। তবে অন্য মানুষের, বিশেষ করে আলোচিত মানুষদের, স্মৃতিকথা কেউ এভাবে রঙ মিশিয়ে লেখার স্বাধীনতা পান কিনা সেটা বড় প্রশ্ন।
পাঠক হিসেবে বলবো, গল্পের মানুষগুলো এভাবে পুরোটা চেনাজানা হয়ে গেলে ছায়া সরে যায়। লেখকের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন আসে সামনে।


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পত্রিকাগুলির নোংরামি মাত্রা হারায়া ফেলছে। দেখার কেউ নাই।

অট: পৈণপাৎলুন্দা বলছিল লিখকের কুনো দায়িত্বশীলতা নাই। প্লাস আপনে ডিসর্কোন নির্মাণে অথরের ভূমিকাকে হাইপারবোলাইজ কর্লেন যে বড় চোখ টিপি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনার মন্তব্যের প্রথম বাক্যে একমত। দ্বিতীয় বাক্যে জ্ঞানার্জন করলাম। হাসি
৩য় বাক্য পুরা মাথার উপ্রে দিয়ে গেল। "ডিসর্কোন নির্মাণে" "হাইপারবোলাইজ" এগুলা কী! মন খারাপ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

৩য় বাক্য হইল উত্তরাদ্দীণূকতা।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ইয়াসির এর ছবি

হো হো হো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ওটাই ভাবছিলাম মনে মনে =)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আসলেই। কোন দিকে যেন যাচ্ছি আমরা। লেখকের নাম শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।

স্যাম এর ছবি

শাহরীয়ার শরিফের সায়েন্স ফিকশন, বেপরোয়া, নিলাম। কোনো এক সামিয়াকে লেখক অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন হাতে আঁকা কার্টুনসহ। বইটি উৎসর্গও করা হয়েছে সামিয়াকে। এক অথবা অভিন্ন মানুষ।

একটা ছোট গল্পের মতন এতটুকু---

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

সৌরভ এর ছবি

মিলান ফারাবি কে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

তিথীডোর এর ছবি

সেদিন ফেবুর বইপড়ুয়া গ্রুপে প্রথম এই লেখকের নাম জানলাম।
'জানার কোন শেষ নাই.../ জানার চেষ্টা বৃথা তাই।' চোখ টিপি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

কেউ না জেনে কিনলে তার প্রসঙ্গ বাদ, কিন্তু কেউ যদি প্রেক্ষাপট জানার পরও এই ধরনের বই কেনে এবং মূল্যবান কিছু সময় এই ধরনের বইয়ের পেছনে ব্যয় করেন, তাহলে ক্রেতা হিসেবে তিনিও কি দায় এড়াতে পারেন?

হিল্লোল

ফারুক হাসান এর ছবি

ক্রেতা বা পাঠকের দায়টা কি?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ক্রেতা হিসেবে অর্থ ব্যয় এবং পাঠক হিসেবে সময় ব্যয়/বিনিয়োগের দায়ভার নিতে তো বিন্দুমাত্রও আপত্তি নেই। কিন্তু, বই না কিনে/না পড়ে সঠিক "প্রেক্ষাপট" জানা যায় কি?

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

এইটা নিয়ে বইপড়ুয়া তে একটা ছোটখাট আলোচনা দেখেছিলাম। মিলান ফারাবী, এইটা না খালি এই জাতীয় নাকি তার আরো লেখা আছে। নিন্দনীয়। কিন্তু এই ধরনের নিন্দনীয় কাজ বন্ধের উপায় কী?

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

গৌতম এর ছবি

অনৈতিক।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অরফিয়াস এর ছবি

নোংরামি সংক্রামক, কিন্তু আফসোস ভদ্রতা নয় !!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

আইলসা এর ছবি

চলুক

নিটোল এর ছবি

আসলে আহাম্মকির কুনু সীমা নাই।

_________________
[খোমাখাতা]

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দায়িত্বজ্ঞানহীনতার চূড়ান্ত নিদর্শন! হুমায়ূন-নাটক যে আরও কতভাবে কতখানে মঞ্চস্থ হবে!

সাবেকা এর ছবি

মিলান ফারাবী শুনেছি নিউইয়র্কে থাকেন । তার আরো বই আছে । অবশ্য আমি নাম বলতে পারবনা কোন বই এর । তবে একবার বাংলাদেশের কোন একটা টিভি চ্যানেল ধরিয়ে উনার 'টক শো' দেখছিলাম হ্যাঁ করে, মনে আছে ।

হিমু এর ছবি

হুমায়ূনের ইতিহাস নিয়ে দেয়ালপনা করছেন মিলান ফারাবী।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ডঃ হুমায়ূনের মৃত্যুর পর শাওনের উইচ হান্ট সহ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করতে দেখলাম পত্রিকাগুলোতে। এগুলো আসলেই বন্ধ হওয়া দরকার।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

মিলন ফারাবী নামটা চেনা চেনা লাগছে। সেবার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো কি এই ব্যক্তি?

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

সাবেকা এর ছবি

উনি মিলান ফারাবী, স্ত্রীলিঙ্গ দেঁতো হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সম্ভবতঃ পুরুষ। বইয়ে লেখা আছে স্ত্রী পুত্রসহ থাকছেন। এরকম।।।

নিলয় নন্দী এর ছবি

বইমেলার মাসে দৈনিক পত্রিকায় চোখ রাখলে বইয়ের বিজ্ঞাপনে মিলন ফারাবির নামটা দেখতে পারবেন।
এই লেখক কী লেখেন আসলে তা জানি না।
কোথাও তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে শুনি নি।
এই প্রথম তাঁকে নিয়ে বা তাঁর বই নিয়ে লেখা পেলাম। খাইছে

রমজান মাসের আংশিক বর্ণনা ভালু পাইলাম। হাসি

Mahbub-Un-Nabi  এর ছবি

এই লেখক / লেখিকা মানব জমীনে নিয়মিত ধারাবাহিক উপন্যাস লিখতেন ।একটা ছিল মনে হয় চামেলী হলের মেয়েরা সম্ভবত জাহাংগীর নগর বিশাববিদ্যালয় নিয়ে লেখা ।

আর “তালাক” প্রসংগে বইযের ব্যাক অথবা এডে ছিল “আলোচিত বড় মানুষের অনালোচিত কথা । শমী , মিমি বিপাশা সহ এসব সত্য কি মিথ্যা ” এ টাইপের কিছু ।

উনার লেখার ভাব ভংগি বা ধরন ডকু ড্রামার মতোন ।ঠিক উপন্যাস না সাংবাদিকের জার্নাল বা রিপোর্ট তা বোঝার উপায় নেই ।

হুমায়ূনের র ‍র্মৃত্যুর পর জনগণ (!) যে অসভ্যপানায় নেমেছে এ বইটা তাদের অনেকের কাছে দলিলের মর্যাদা পাবে ।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

রোজার সময়ে এই সিজনাল পর্দাপুষিদায় আমি বরাবরই অস্বস্তিতে ভুগি। পরিচিত গন্ডির অনেককেই কেমন যেন নাটুকে নাটুকে লাগে। আবার রোজা শেষ হতে যা দেরি... ইয়ে, মানে...

শেষের অংশ নিয়ে কিছু বলার নাই। মন খারাপ

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অমি_বন্যা এর ছবি

এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় । মনে আসলেই যাকে তাকে নিয়ে যা হয় কিছু একটা লিখে ফেললাম - এই জাতীয় বিষয় রোধে যথাযথ অথরিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।

ইশতিয়াক এর ছবি

নামটা মিলান ফারাবি না, মিনা ফারাবি।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কার নাম মিনা ফারাবি?
মিনা ফারার কথা বলছেন?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমি ফেইসবুকে হুমায়ূন আহমেদ এর পারিবারিক প্রসঙ্গের যেকোন পোস্টে স্প্যাম রিপোর্ট দিতেছি সপ্তাহখানেক ধইরা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।