গন্দম | আট

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: শনি, ২৭/১০/২০০৭ - ৮:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১২ অক্টোবর, ২০০৬
সময়: বিকাল ৪:০০-৫:৫০-১০:৩০
বুমার্স, বনানী, ঢাকা ও
নিপুনের বাসা, গুলশান, ঢাকা

“আমার প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে দোস্ত! কিছু নিয়ে আসি। তুই খাবি কিছু?” বসতে না বসতেই উঠে দাঁড়ায় রাজীব।
“না! আজকে রোজা আছি। একেবারে নিপুনের বাসায় গিয়ে ইফতারী করবো” শুকনো মুখে বলে রানা।
“আইচ্ছা” মানিব্যাগ বের করতে করতে ফুড কাউন্টারের দিকে হাঁটা দেয় রাজীব।

ইতিউতি তাকিয়ে বুমার্সে ছেলেমেয়েদের ভিড় দেখে রানা। এই জায়গাটা মনে হয় না কখনো খালি থাকে। এলাকায় এই বুমার্স দিয়েই শুরু, এর পর আস্তে আস্তে একই ধাঁচে আরো অনেক স্পোর্টস রেস্তোরা গড়ে উঠেছে।

বুমার্সের পরিবেশটাই সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে রানার, আরামজনক ঠান্ডা আবহে ছিমছাম পরিপাটি একটা সজ্জা। এক দিকে এক সারিতে সাজানো চারটে পুল টেবিল, অন্য দিকে বসার জায়গা। সেখানে একটা টেবিলের সাথে আরেকটা টেবিলের একটা স্বস্তিকর দূরত্ব। বসার জন্য কাঠ স্টিলের চেয়ার গুলো তো আছেই, সেই সাথে আছে দেয়াল ঘেঁষে রেক্সিনে মোড়া মোটা ফোমের কিছু কাউচ। পুরো রেস্তোরাটাই খেলাধূলা বিষয়ক বিবিধ স্মারকে সাজানো। কিছু দূর পর পর আবার ছাদ থেকে নেমে এসেছে টেলিভিশন, যেখানে অবিরত ইএসপিএন কিংবা স্টার স্পোর্টস চলছে।

কোন রেস্তোরায় এতসব সুবিধে থাকলে খাবারের মানটা গৌন হয়ে পড়ে। কিন্তু বুমার্সের খাবার নিয়েও বড় কোন অভিযোগ কেউ করতে পারবে না। মেনুতে অল্প যে কয়টি পদ আছে সবগুলোই মুখরোচক, বিশেষ করে ওদের চিকেন চিলির তো জবাব নেই। তাই খেলতে অথবা খেলা দেখতে, আড্ডা মারতে, প্রেম কিংবা পেটপূজো করতে বনানীর ছেলেমেয়া আর আশেপাশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দ বুমার্স।

হাতের লাল ট্রে টেবিলে রেখে বসে পড়ে রাজীব। প্লেটের ‘ফ্রাইড রাইস’ কাঁটা চামচ দিয়ে ‘সুইট অ্যান্ড সাওয়ার চিকেনের’ সাথে মাখাতে থাকে, “তোর কাহিনী বল আগে।”

রাজীবের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সামনে কেমন জানি কুঁকড়ে যায় রানা, তাড়াতাড়ি বলে, “না... না... তুই বল আগে।”

বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায় রাজীব, “খাচ্ছি তো! তুই আগে বল না?”

“তুই আগে বল দোস। আমি পরে বলি!”

আর কথা বাড়ায় না রাজীব। কথা বলার জন্য একটু আগেই ফোনে যে ছেলেটা তড়পাচ্ছিলো সে এখন ধুনফুন করেছে কেন কে জানে। মুখে এক গাদা খাবার তুলে নেয় ও। এত ক্ষুধা লেগেছিল সেটা অফিসে বুঝতে পারেনি। এখানে এসেই নাড়িভুঁড়ি একেবারে মোচড় দিয়ে উঠেছে।

অফিসে একা একা বসে খেতে রাজীবের একদম ভাল লাগে না। বাবা এমনিতেও ভাইয়া টেকওভার করার পর থেকে দুপুরেই বাসায় চলে যান, খাওয়াদাওয়া করে, একটা ছোট্ট ঘুম দিয়ে বিকেলে আবার আসেন। এখন রমজানের অজুহাতে উনি অফিসেই আসেন না বলতে গেলে। আর ভাইয়াও এবার শপথ করে সব গুলো রোজা রাখছে।

রাজীব প্রথম, শেষ আর ২৫য়ে মিলিয়ে মোটে তিনটা রোজা রাখে ফি বছর। ছোট ছেলে, সেই পশ্রয়ে সে অপরাধ ওদের ধর্মভীরু পরিবারে সহজেই মাফ হয়ে যায়। মা নিজে রান্না করে রাজীবের হটবক্সের খাবার ভরে দেন। সেই অস্পর্ষিত হটবক্স এখনো গাড়িতেই পড়ে আছে! মা যখন দেখবেন আজও তাঁর প্রিয় ছোট ছেলে তাঁর যত্ন করে রান্না করা খাবার না খেয়েই বাসায় ফেরত এনেছে, একটা তুলকালাম হয়ে যাবে।

নিপুনের বাসায় ইফতারীর দাওয়াত আছে বলে আজ একটু আগে আগেই বাসায় যাচ্ছিল ও। পরিকল্পনা ছিল বাসায় গিয়ে গোসল করে আবার বেরুবে। পথিমধ্যে রানার ফোন। কি নাকি হয়েছে, এক্ষুনি বুমার্সে আসতে হবে। রাজীবেরও রানার সাথে একটা আলাপ ছিল, তাই ও আর না করেনি।

রাজীব কখনো নিজে গাড়ি চালায় না। বুমার্স থেকে ওর বাসা বেশি দূরে নয়, তাই ড্রাইভার চাচাকে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে ও রাস্তা পেরিয়ে বুমার্সে চলে এসেছে।

“তৃণার বন্ধুগুলোকে আমার পেইন লাগতেছে দোস্ত।” মুখের খাবার গিলে ফেলে বলে রাজীব।

“আবার কি হলো?”

“তৃণাকে অনেকবার বলেছি রাতের পার্টি গুলোতে যেন না যায়। সে সেই কথা শোনে না। বরং আমাকে বলে, আমি যে রাত পর্যন্ত তোদের সাথে আড্ডা দেই তাতে সমস্যা না হলে ওর পার্টিতে কেন আমার সমস্যা।”

“তুই কি বললি?”

“কি বলবো? তুই খেয়াল করেছিস নাকি জানিনা, তৃণার ফ্রেন্ড সার্কেল কিন্তু দ্রুত চেঞ্জ হয়ে যায়। এই ক'দিন আগেই জাফর-তানিয়াদের সাথে ঘুরতো না? এখন বলে ওরা বোরিং।”

“তৃণা এখন কাদের সাথে চলে?”

“জুনিয়র ছেলেমেয়েদের সাথে জুটেছে। শিমু, নাঈমা, তাপস ... চিনিস এদেরকে?”

“অবশ্যি চিনি। নাঈমা মেয়েটার বাম হাতে ট্যাটু না?”

“হুম!”

“মাম্মাআআআ! ওই মেয়ে তো চরম হট। টপ গুলো যে পরে না একেকটা... গায়ের সাথে সাঁটা... উমমম।”

মেয়েদের প্রসঙ্গ আসতেই রানার ম্যাদামারা মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সেটা খেয়াল করে মুচকে হাসে রাজীব। ছেলেটা মেয়েদের আলাপ পেলে আর কিচ্ছু চায় ন।

“ওদের গ্রুপটা কেমন তা তো জানিসই?”

“মিনিভ্যান গ্রুপ তো? সেটা সবাই জানে। কিন্তু তৃণা ওদের সাথে জুটলো কিভাবে?”

নর্থ সাউথের প্রথমবর্ষের দলটাকে সবাই ‘মিনি ভ্যান গ্রুপ’ নামেই চেনে। নামটা কোথায়-কিভাবে এসেছে সেটা নিয়ে ক্যাম্পাসে দু’টো গুজব চালু আছে।
একটা হলো, গ্রুপের ছেলেমেয়েরা নাকি তাপস নামের ছেলেটার (যাকে সবাই ডাকে টপসি) সাদা মাইক্রোর মধ্যে দরজা-জানালা বন্ধ করে হটবক্স বানিয়ে ধুমিয়ে গাঁজা খায়। দ্বিতীয় গুজবটা একটু বেশিই কদর্য। রানা শুনেছে সে মাইক্রোর ভেতরে নাকি পালাক্রমে ওদের নিজেদের মধ্যে গনযৌনমিলন হয়।

তৃণার ভাবমূর্তি এমনিতেই ভাল কিছু নয়, এখন যদি সত্যি সত্যি মিনিভ্যান গ্রুপে সাথে চলা শুরু করে তাহলে পুরানো গুজব গুলোকেই আবার উশকে দেয়া হবে। রানা তৃণাকে যতটা চেনে, জানে গনযৌনমিলনটা ওর সাথে ঠিক খাপ খায় না। কিন্তু মেয়েদেরকে নিয়ে বাজে কথা ছড়াতে কাহিনীতে সত্যতা প্রয়োজন পড়ে না। গুজবের কল হাওয়ায় চলে!

“জানি না!” নির্লিপ্ত ভাবে কোকের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলে রাজীব, “মেয়েটা ওদের সাথে রাত-বিরাতে বাইরে যাচ্ছে। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমার অসহ্য লাগে। ওর বাবা-মাও একদম যা-তা, কোন শাসনই করেন না। ওহ, ভাল কথা, তোকে বলা হয়নি - গতকাল ওদের সাথে অ্যাসপ্যারাগাসে গিয়েছিলাম।”

“কখন গেলি? বাংলাদেশের খেলা দেখিস নি?”

“বালের খেলা! ১২৫ রানে রফিক এলবি হওয়ার পর আর দেখিনি। শ্রীলংকার সাথে অমন ফাইট দেবার পর কালকে কিনা করলো ১৬১, তাও ভাবলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে অন্তত্য চার-পাঁচটা উইকেট তো যাবে। নাহ! শালারা কোনো উইকেট না হারিয়েই ১৬২ রান তুলে নিল।” গলায় উম্মা নিয়ে বলে রাজীব।

“দোস্ত” অবাক হয় রানা, “তৃণার ব্যাপারটা নিয়ে কিন্তু তোকে মোটেই চিন্তিত মনে হচ্ছে না।”

“চিন্তিত মনে হচ্ছে না, কারণ আমি চিন্তিত না। আমি বিরক্ত! ওই গ্রুপসেক্স গ্রুপের সাথে মিশে তৃণা গ্যাংব্যাং মিস্ট্রেস হয়ে যাবে সেটা আমি মোটেই বিশ্বাস করি না। মেয়েটা আর যাই হোক আমার প্রতি প্রচন্ড অনুরত। কিন্তু বন্ধু বাছাইয়ে একটু নির্বোধ টাইপের। আমি যে ওকে বলছি ওর নতুন বন্ধুগুলো ভাল না, সেটা সে তার মাথাতেই নিতে পারছে না। ভাবছে প্রেমিকের অধিকার ফলাচ্ছি। তাই আরো বেশি করে মিশছে। এজন্যই ভেবেছি ওকে আমি আর কিছু বলবো না। আমার কি মনে হয় জানিস? ওরা তৃণাকে দলে নিয়েছে টাকার জন্য। কাল অ্যাসপ্যারাগাসেও দেখলাম তৃণা বিল দিল। এটা ক’দিন পরে বুঝতে পেরে ও নিজেই সরে আসবে।”

“অ্যাসপ্যারাগাসে হঠাৎ... ব্যাপারটা কি?”

“তৃণা বললো ওর বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। পাঁচজন না ছয়জন যেন ছিল - বাচ্চা সব! ওদেকে এনএসইউতেই দেখেছি, ওখানে একটা ফর্মাল চেনাজানা হলো আর কি। আর তৃণা চাচ্ছিল ওর যে বয়ফ্রেন্ড আছে সেটা সবাই জানুক।”

“তৃণা এটা একটা বুদ্ধিমানের মত কাজ করেছে কিন্তু।”

নিজের গ্লাসের কোক শেষ দেখে রানার গ্লাসটা তুলে নিল রাজীব, “এই উচ্চবিত্ত নতুন জেনারেশনটার সাথে আমাদের কিন্তু একটা বিশাল গ্যাপ।”

“কি রকম?”

“ইংলিশ মিডিয়ামের গথ-পাঙ্ক-ইয়ো ভাবচক্কর তো আমরা আমাদের বন্ধুদের মধ্যেই দেখেছি - ইংরেজীতে কথা, সৈয়দ শামসুল না পড়ে স্টিফেন কিং, ‘দলছুট' না শুনে ‘চিলড্রেন অব বোদম'। এখন সেই গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত এসেছে একটা ইন্ডি/পাকি ভাব।”

“ইন্ডি/পাকি ভাব মানে?”

“মেয়েগুলো কথায় কথায় পটপট করে হিন্দী বলে। আমাকে এক মেয়ে বলে কি শোন ‘সামাঝনা পাড়েগা ইয়ার’! আমি পড়েছি ফাঁপড়ে! জিজ্ঞস করলাম, কি পারেগা? পরে বুঝলাম এটা অনেকটা বাংলায় ‘বুঝতে হবে’র মত।”

হাঃ হাঃ করে হাসে রানা, “মেয়েরা তো আগে থেকেই হিন্দী সিনেমার ভক্ত। এতে নতুন কি?”

“আরে ব্যাটা, মেয়েরা অ্যামনে কথায় কথায় হিন্দী বলতো আগে?”

“তা অবশ্য বলতো না। ভারতীয় চ্যানেলের প্যানপ্যানে হিন্দী সিরিয়ালের প্রভাব এটা। আর পাকির ব্যাপারটা কি?”

“যে কয়টা ছেলে ছিল সবাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানকে সাপোর্ট করছে। আমি পড়েছি আকাশ থেকে। যে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ খেলছে সেখানে কেউ কখনো অন্যদেশ, তাও পাকিস্তান, সাপোর্ট করে?”

“আমাদের তমালও কিন্তু পাকিস্তানের সাপোর্টার!”

“পার্থক্য আছে। ওকে এক্ষুনি ফোন করে জিজ্ঞাস কর কোন দল সাপোর্ট করে। আমি নিশ্চিত ও বলবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বাদ পড়লে তখন বলবে পাকিস্তান। সেটা তাও মেনে নেয়া যায়।”

কপালে ভাঁজ পড়লো রানার, “ওরা কি বাংলাদেশের আগেই পাকিস্তানকে ধরেছে?”

“হুম! বলে কিনা ‘বাংলাদেশ ডাসন্ট হ্যাভ অ্যা চান্স, হোয়াটস দ্য পয়েন্ট অব সাপোর্টিং দেম'।”

“সাপোর্টিং দেম? ‘দেম’ বললো?” হা হয়ে গেল রানা।

“তা নাহলে আর বলছি কি?”

“দেশটার যে কি হবে তাই ভাবি এসব শুনলে! ওদের হাতেই দেশের ভবিষ্যত।”

“বাদ দে! তোর কাহিনীটা বল।”

এতক্ষণ আলাপে ব্যাপারটা ভুলেই ছিল রানা। এখন হঠাৎ রাজীবের প্রশ্নে মনে পড়ে যাওয়ায় শিরশিরে একটা স্রোত বয়ে যায় ওর সারা দেহ জুড়ে। ব্যাপারটা হয়তো কিছুই না, কিন্তু খুব যন্ত্রনা দিচ্ছে ওকে!

“নওরীনের কথা মনে আছে?” আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো রানা।

হেসে ফেললো রাজীব, “থাকবে না কেন? গুটি বিশারদ তো? তোর প্রেমিকা?”

বিরক্তি চাপা দিতে পারলো না রানা। বন্ধুদের কাছে নওরীনের সেই কাজ আদায় করে নেবার ঘটনাটা বলার পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে। মেয়েটার কথা উঠলেই সবাই ওকে ওর প্রেমিকা প্রমান করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।

“সব সময় ফাজলামো ভাল্লাগে না দোস্ত! তাও ভালো কোনো মেয়েকে নিয়ে করলে একটা কথা ছিল। ধুমশী কূটনা একটা।”

“আহ হা! এভাবে বলে কেউ নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে? ধুমশী কে বললো? বলতে পারিস স্বাস্থ্যটা একটু ভালো! দেখতে তো মন্দ না।” মজা মজা মুখ করে বলে রাজীব।

“ধুর শালা! যেটা বলি সেটা আগে শোন মন দিয়ে। ওকে নিয়ে একটা কমপ্লেইন করার কথা বলেছিলাম না তোকে? মনে আছে?”

“হুম, আছে! সেটার কি অবস্থা?”

“অবস্থা সিরিয়াস। সেই কমপ্লেইন লেটার দেয়া হয়েছিল সুমন ভাইকে। উনি ঘটনা জেনে একটা তুলকালাম করেছেন।” কপালের দু’পাশের শিরা চেপে ধরে বলে রানা, “ভাবি, মানে সুমন ভাইয়ের বউ নাকি কিভাবে জেনে গেছে উনি পার্টিতে মডেলের সাথে কি করেছিলেন। সুমন ভাইয়ের ধারনা এ কাজটা নওরীনই করেছে। সেই রাগ ঝাড়তে তিনি কমপ্লেইন লেটারটা হাতে পেয়েই ধরাকে সরা করেছেন। নওরীনের গত দুই মাসের কল হিস্টরি বের করে লেটারের সাথে জুড়ে দিয়েছেন, সিনিয়র ভাইদের সাথে নিজে কথা বলেছেন।”

“বলিস কি! কাজটা কি আসলেই নওরীন করেছে নাকি?”

“আরে নাহ! আমার মনে হয় না। ও কেন খামাখা ভাবিকে কল করবে। কোন মানে আছে? তবে এই কেসটা এখন একদম উপরে চলে গেছে। সাধারণত কি হয় - এসব কমপ্লেইন লেটারে ‘শো কজ' করা হয়, ঝাড়ি-টাড়ি দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়, খুব বেশি হলে প্রমোশন-ইনক্রিমেন্ট আটকে দেয়া হয়। কিন্তু এবারে মনে হয় ওকে একেবারে ‘কিক আউট'ই করবে।”

“তাতে তোর মুখ বেজার কেন? এটাই তো চাচ্ছিলি তোরা... না কি?”

“না দোস্ত,” বিব্রত হয়ে গেল রানা, জিহবা দিয়ে শুকিয়ে আসা ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, “বাকি সবাই খুব খুশি, কিন্তু আমি আসলে এটা চাই নি। বাচ্চা একটা মেয়ে! ওর পরিবারের অবস্থা কি রকম কে জানে। হয়তো ওর বেতনেই সংসার চলে, হতে পারে না বল? এখন এভাবে হুট করে যদি চাকরী যায় বেচারী না জানি কত বড় সমস্যায় পড়বে। এভাবে বের করে দিলে অন্য কোথাও সহজে চাকরীও পাবে না। আমি খুব চিন্তায় আছি। মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে দোস্ত, খুব!! আমার কারনে একজনের এভাবে...” কাঁপা গলায় বললো রানা।

অবাক দৃষ্টিতে রানার দিকে তাকিয়ে থাকে রাজীব। ছেলেটার হাত থরথর করে কাঁপছে।

সেই ছোটবেলা থেকে দু'জনের পরিচয়। তাই মাঝে মাঝে মনে হয়, ওর পুরোটাই বুঝি চেনা হয়ে গেছে - আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত। আবার মাঝে মাঝেই দমকা ঝড়ের মত কোনো অজানা উপলব্ধি এসে সে বিশ্বাসটা ভিতটাতে এমন নাড়া দিয়ে যায়। মনে হয়, এতটা... এতটাই ভুল জানতাম!



বুমার্স থেকে বেরিয়ে নিপুনের বাসার উদ্দেশ্যে রিক্সা নেয় দু'জনে। তমাল আর ফয়সাল সেখানে আগে থেকেই বসে আছে।

নিপুনের গুলশানের বাড়িটা শুনশান, একতলা, গাছগাছালি দিয়ে ঘেড়া। ওর বিশাল রুমটা বারান্দার সাথে লাগানো, সে রুমে বাসার ভেতরে না ঢুকে বারান্দার দরজা দিয়ে ঢুকে পড়া যায়।

বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র নিপুনের বাসাতেই নিঃঝঞ্ঝাটে সিগারেট খাওয়ার সুযোগটা আছে। ওর বাবা-মা জানেন ছেলে আর ছেলের বন্ধুরা সিগারেট খায়, তাঁরা তাতে কিছু মনে করেন না!

নিপুনের বাসার আরেকটা মজা হলো, যতক্ষণ ওদের আড্ডা চলে ভেতর থেকে একটু পরপর গরম চা আর এটাসেটা নাস্তা আসতে থাকে।

এজন্য বাইরে না বসলে সাধারণত নিপুনের বাসাতেই আড্ডা দেয় ওরা। ইদানিং অবশ্য সবাই চাকরী-ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এই আড্ডাটা আগের মত আর ঘনঘন হয় না।

আজ অনেকদিন পর ইফতারের অজুহাতে সবাই একসাথে হয়েছে বলে কাজ কিংবা সম্পর্কের টানাপোড়নের বোঝা কাঁধ থেকে আপনাতেই পড়ে যায় - আড্ডা জমে ওঠে দ্রুত।

রাত দশটা পর্যন্ত ম্যারাথন আড্ডা চলে। রাজীবকে দ্বিধায় ফেলে এ সময়টা রাজীবের মোবাইলে বাসা থেকে মা ছাড়া আর কারও কল আসে না। বন্ধুদের সামনে তৃণাকে কল করার ইচ্ছাটা পাথর চাপা দিয়ে দাবিয়ে রাখে ও। আড্ডা থেকে বেরিয়ে সুযোগ আসে না। ফয়সাল আর ও একই এলাকায় থাকে। তাই একই রিক্সায় চড়ে বসে দু'জনে।

পথে ফয়সালের বাসা আগে পড়ে। ওকে নামিয়ে দিয়ে নিজেদের দুইতলা বাসায় নিচে দাঁড়িয়ে প্রথমেই মোবাইলে তৃণার নাম্বার টেপে রাজীব।

তৃণাকে নিয়ে ওর যে চিন্তা সেটা আজ ও কাউকে না বলে নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছে। মিনিভ্যান গ্রুপটা লিকার, মারিয়্যুনার গন্ডি পেরিয়ে ইয়াবাতে ঝুঁকেছে এটা ও তৃণার কাছেই শুনেছে। মাঝে মাঝে নাকি ওরা কোকেনও নেয়।

তিন দিন আগে ওদের সাথে প্রথম ইয়াবা নিয়েছে তৃণা। সেটা আবার সে নিজেই বড় গলায় বলে রাজীবকেও সেধেছে তৃণা। রাজীব ইয়াবা নেয়া তো দূরের কথা, প্রস্তাব শুনেই ছ্যাত করে জ্বলে উঠেছে।

প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছে সেদিন। সে ঝগড়ায় দু'জনেই দু'জনকে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে। তৃণা বলেছে, “রাজীব, ইউ আর অ্যাক্টিং লাইক মাই গ্রান্ডপা। লুক অ্যারাউন্ড ইউ অ্যান্ড ট্রাই টু ক্যাচ দ্য গ্রুভ, ইউ ওন্ডমাইন্ডেড ফাক!” রাজীব উত্তর দিয়েছে, “গ্রো আপ বিচ! ইউ আর নাথিং বাট অ্যা ওয়ানাবি... গেট রিয়েল।”

সে ঝগড়া যদিও মিটে গেছে পরদিনই দু’জন দু’জনকে স্যরি বলে, তবু মনে শংকা থেকে গেছে রাজীবের। তৃণা কিছুতেই নতুন বন্ধুদের সঙ্গ ছাড়বে না। যদিও ও প্রমিস করেছে আর কখনো ড্রাগস নেবে না, তবু ভয় হয়!

আসলে তৃণার মেডিকেল কন্ডিশন নরমাল হলে হয়তো এতটা চিন্তা করতো না রাজীব। কিন্তু তৃণা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিক। অপটু ডোজে কোনো উল্টোপাল্টো হলে কি জানি কি হয়ে যায় এ ভয়টাই ওকে সারাক্ষণ ভাবায়।

এ কথা ও বন্ধুদেরকে বলতে পারেনি, এমন কি রানাকেও নয়। এতদিন পরেও তৃণাকে ওর বন্ধুরা যে ঠিক পছন্দ করে না সেটা ঠিকই বোঝা যায়।

অনেকক্ষণ বাজার পর অবশেষে ফোনটা ধরে তৃণা।

ওপাশের টেকনো মিউজিকের উল্লাসে আবছা ভাবে তৃণার গলা কানে আসে রাজীবের, “হাই হানিইইই!”

তৃণার গলা শুনেই যা বোঝার বুঝে যায় রাজীব, গম্ভির ভাবে জিজ্ঞেস করে, “তৃণা, তুমি কি ড্রাঙ্ক?”

খিলখিলিয়ে হাসে তৃণা, মজা করে টেনে টেনে বলে, “নননননা তো!”

চোয়াল শক্ত করে আবার জিজ্ঞেস করে রাজীব, “তাহলে হাই? তুমি ড্রাগস নিয়েছো আবার?”

আবার অপ্রকিতস্থের মত হাসে তৃণা। বলে “রাজীব, ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হোয়াট হ্যাপেনড টুডে!”

“হোয়াট হ্যাপেনড?” অন্য প্রান্তের মিউজিক আর অনেক ছেলেমেয়ের সম্মিলিত চিৎকার এড়িয়ে তৃণার কথা বোঝার চেষ্টা করে রাজীব।

“টপসি আজ কি জোগাড় করেছে জানো?”

“কি জোগাড় করেছে?” দম বন্ধ করে জিজ্ঞেস করে রাজীব।

“‘ই'! আজ টপসি ‘ই' জোগাড় করেছে! থাইল্যান্ডেরটা না, আমস্টারডামেরটা। ক্যান ইউ ইমাজিন? কি-যে ফিলিংস, কি-যে ফিনিংস হচ্ছে... ইউ ক্যানট ইভেন ইমাজিন রাজু!” খলবলিয়ে একই কথা বার বার টেনে টেনে বলতে থাকে তৃণা।

মোবাইল কানে নিয়ে, মুঠো শক্ত করে, বজ্রাহতের মত এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রাজীব।

[চলবে...] © অমিত আহমেদ


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

এইত লাইনে চলে এসেছ বাপধন। ক্যারিঅন...

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভালো লাগার বেশ কিছু ব্যাপার ঘটলো।
প্রথমত: 'গন্দম' গতি পেলো। এরকম একটানা পড়ার মাঝে আয়েশের ব্যাপার আছে।
দ্বিতীয়ত: এ পর্বটা ভালো লেগেছে একটু অন্যরকম। যেটা বলেছিলাম, সমকালীন মানুষ - সে হিসেবে চরিত্র নির্মাণ , বিচরণে লেখকের দক্ষতায় আমি মুগ্ধ।
আহারে বুমার্স। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করতো - বুমার্সের চেয়ার টেবিলগুলোর সাথে কথা বলি। অসংখ্য প্রেম-অপ্রেমের সাক্ষী তারা। অনেক গল্পের প্লটও পাওয়া যেতো। মুখোমুখি নিউইয়র্কার ক্যাফে এখন নেই।

আগামী পর্বের অপেক্ষায়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

এটাকে একটা ইবুকে ট্রান্সফার করো তো ।খুজেঁ খুজেঁ পড়তে বেশ অসুবিধা হচ্ছে ।একজায়গায় রাখো ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

অরূপ ভাইয়ের সৌজন্যে গন্দম ইবুকে ট্রান্সফার করা হলো।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমিও ভাবতেছিলাম সে কথা। কিন্তু ইবুক ক্যামনে করে জানি না। আর ইবুকে দিলে পুরোনো পর্ব গুলোও প্রথম পাতায় চলে আসবে। সেটা এড়ানো গেলে এক্ষুনি করে ফেলি!


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

নিয়মিত হোক ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

এই সব ফিল ইন দ্যা গ্যাপস বিরক্তিকর এর ছবি

এই পর্বটা ভালো লাগে নি। কেন, বুঝিয়ে বলতে পারবো না মনে হয়। সাত নম্বর পর্ব, কিংবা কলকাতার কাহিনী লেখার সময় কাহিনীতে ঢুকে গিয়েছি খুব সহজে। মনে হয়েছে লেখক লিখাটা উপভোগ করেছে, পড়াটাও উপভোগ্য ছিল। এটা কেমন যেন, জোর করে লিখা। ক্যাম্পেইন ভিত্তিক গল্প থাকে না, বড় বেশি আদর্শিক কচকচানি থাকে যে, ওরকম লেগেছে। ঠিক সেরকমও না... ওকে, আদর্শিক লেখাগুলো তে কি থাকে? অল্প পরিসরে অনেক বেশি ইনফরমেশন ঢুকানোর চেষ্টা থাকে, কারণ পাঠক অজ্ঞ, তাই তো? আবার সেই ইনফরমেশনকে এনজয়েবল বানানোরও একটা লেইম প্রচেষ্টা থাকে। সরি, কিন্তু এখানে মনে হয় কাছাকাছি কিছু হয়েছে! একটা ইমম্যাচুয়ার অথোরিয়াল ইনভেশন ছিল, স্পুন ফেড হয়েছি পাঠক হিসেবে, ভালো লাগে নি।

উপন্যাসে কথোপকোথনে উত্তেজনা বুঝাতে এত '!' ব্যবহার করেছেন কেন? উপন্যাসে চ্যাট লিঙ্গো দেখতে এখনও অভ্যস্ত না চোখ টিপি... "আমি খুব চিন্তায় আছি। মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে দোস্ত, খুব!! আমার কারনে একজনের এভাবে...” কাঁপা গলায় বললো রানা!"

অমিত আহমেদ এর ছবি

আপনার মতামত গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করেছি। পাঠক আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি সেটা সম্পূর্ণই আমার অক্ষমতা। ফিডব্যাক দিয়ে আমার বড় একটা উপকার করেছেন, অনেক ধন্যবাদ!

আমার একটা খোঁড়া কৈফিয়ত আছে। আমি খুব চেষ্টা করছি ব্লগীয় স্টাইলটা যেন আমার লেখায় চলে না আসে। এই লেখাটা একটু ইনফরমেটিভ ছিল মেনে নিয়েই বলছি আমার মনে হয় সেটা চোখে পড়েছে ধাপে ধাপে উপন্যাস পড়ার জন্য। এক সাথে পড়লে এ পর্বটা কাহিনীর সাথে মানিয়ে যেত বলেই আমার বিশ্বাস। গন্দমের প্রতিটা খন্ডই যদি টানটান রাখি তাহলে সম্ভাবনা আছে পুরো উপন্যাস একসাথে পড়ার সময় পাঠক হাঁফিয়ে/বোর হয়ে যাবেন।

"!" বেশি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও ঠিক। কিন্তু যতিচিহ্ন কি করে চ্যাট লিঙ্গো হয়ে গেল সেটা বোধগম্য হলো না! হাসি


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি খুব চেষ্টা করছি ব্লগীয় স্টাইলটা যেন আমার লেখায় চলে না আসে। এই লেখাটা একটু ইনফরমেটিভ ছিল মেনে নিয়েই বলছি আমার মনে হয় সেটা চোখে পড়েছে ধাপে ধাপে উপন্যাস পড়ার জন্য। এক সাথে পড়লে এ পর্বটা কাহিনীর সাথে মানিয়ে যেত বলেই আমার বিশ্বাস। গন্দমের প্রতিটা খন্ডই যদি টানটান রাখি তাহলে সম্ভাবনা আছে পুরো উপন্যাস একসাথে পড়ার সময় পাঠক হাঁফিয়ে/বোর হয়ে যাবেন।

লেখকের এ ব্যাখ্যা কি পাঠকের সাথে যোগাযোগ রক্ষার নিমিত্তে, নাকি অনান্য টানটান পর্বের চেয়ে পাঠককে আসলেই রিলিফ দিতে চেষ্টা? অমিত আহমেদ বলছেন - 'গন্দম' উপন্যাস। পাঠক হিসেবে যদি প্রশ্ন করি, উপন্যাসের উদ্দেশ্য কেমন হবে? সচলায়তনেই প্রস্তাব রেখেছিলাম - "উপন্যাসের ভেতর বাহির" আলোচনায় রচনার স্বাস্থ্য কিংবা বিস্তৃতি নিয়ে কিছুটা কথাবার্তা হয়েছিলো। সেখান থেকে আমার ধারণা - বপু কিংবা লিকলিকে যা-ই হোক না কেনো, উপন্যাস একটা সময়কে ধারণ করবে। এই সময়ের মানুষগুলোকে ধারণ করবে, তাদের জীবনাচরণকে তুলে আনবে। আমি ক্ষুদ্র পাঠক - সাহিত্যের রথী-মহারথীদের কাজ নিয়ে কথা বলার সাহস নেই, এমন কি হুমায়ূন আহমেদের এখনকার 'বিরক্তিকর' লেখাগুলোকেও তুচ্ছ করতে ভয় লাগে। সেজন্যই বোধ করি অমিত আহমেদের লেখা নিয়ে বিশ্লেষণে আগ্রহী হই বেশী।

ভালো লাগা না লাগার পেছনে অনেক রহস্যময় কারণ থাকতে পারে (এই কথাটা হুমায়ুন আহমেদের), তাই "এই সব ফিল ইন দ্যা গ্যাপস বিরক্তিকর" নিকের পাঠকের প্রতিক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে (আগেই বলেছি - এ পর্বটা আমার কাছে ভালো লেগেছে) জানতে ইচ্ছে করছে - লেখায় ইনফরমেশন ফিডিং কি পাঠকের স্পুন ফিডিং হয়? গন্দমের চরিত্ররা যখন 'বুমার্সে' যায় তখন কি পাঠককে বুঝিয়ে বলতে হয় - এটা জরদগব শহরের তরুণ-তরুণী? পাঠক "এই সব ফিল ইন দ্যা গ্যাপস বিরক্তিকর" এর মতামতকে আমি মোটেও উড়িয়ে দিচ্ছি না। বরং মতামতের গ্যাপটার গভীরতা সন্ধানেই বলছি - ইউনিভার্সেল ইভেন্টকে না টেনে আমাদের চারপাশের প্রতিদিনকার টুকরো টুকরো ঘটনা, সুখ-দু:খ, সময় (সৌরভের দলে অন্তর্ভুক্তি, বাংলাদেশ ক্রিকেটের হতাশা কিংবা অধুনা ইয়াবা) যখন অমিত আহমেদ টেনে আনেন, শব্দবন্দী করেন - তখন লেখকের 'লেইম প্রচেষ্টা'য় টার্গেট পাঠককে 'অজ্ঞ' বলা হয় কোন ভিত্তিতে?

পাঠক "এই সব ফিল ইন দ্যা গ্যাপস বিরক্তিকর"-এর মন্তব্যে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া থাকতো না, কিন্তু লেখক অমিত আহমেদ টানটান কিংবা ঢিলেঢালার পর্বের লেভেল দিয়ে আমার আগ্রহকে উসকে দিয়েছেন। অমিত আহমেদ কি আসলেই স্পুন ফিডিং করলেন?

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমি মনে হয় বিষয়টা বোঝাতে গিয়ে আরো কনফিউজিং করে ফেলেছি। আমার একটা পোস্ট আমি গন্দম লেখার নেপথ্য কাহিনী কিছুটা বর্ননা করেছিলাম। এখানে আবার বলি।

প্রথমে ব্যাখ্যা দিতে হয় কেন আমি "২০০৬ মার্চ-ডিসেম্বরের ঢাকা" আর "২০০৭ ফেব্রুয়ারীর কোলকাতা" এই দুই সময়কে কেন্দ্র করে লেখা শুরু করলাম। অন্য যেকোন সালের যে কোন মাস, এমনকি কোন সাল-সময় উল্লেখ না করেই (যেটাই প্রচলিত প্র্যাকটিস) লেখাটা লিখতে পারতাম। তা না করে কেন আমি দুই হপ্তা ইন্টারনেটে একটানা সময় কাটিয়ে এ দুটো সময় বেছে নিলাম। এর কারণ হচ্ছে, এই দুই সময়ে ঢাকা কলকাতায় অনেক ঘটন-অঘটন ঘটেছে যা আমার মনে হয়েছে ফ্রেমে কিছুটা ধরে রাখা দরকার। এই দুই সময়ের ঘটনা দিয়ে আমাদের সময়ের একটা কাঠামো দেয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয়েছে, এবং গন্দমে আমি তাই করার চেষ্টা করছি। কোলকাতা বেছে নেয়ারও কারন আছে, সেটা ক্রমে প্রকাশিত হবে। উপন্যাসটির কোন অংশই হুট করে লেখা নয়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে "উপন্যাস একটা সময়কে ধারণ করবে। এই সময়ের মানুষগুলোকে ধারণ করবে, তাদের জীবনাচরণকে তুলে আনবে" শিমুলের এ কথাটা আমি বিশ্বাস করি এবং সেটা মাথায় রেখেই প্লট সাজানো হয়েছে। লেখক হিসেবে আমি একগুঁয়ে, তাই গন্দমের জন্য যে ফরম্যাট আমি মাথায় রেখেছি কোন মতেই সেটা থেকে আমি বেরিয়ে আসবো না (যে লেখার যে ছক মাথায় আছে তাই রাখি, মন্তব্য-সাজেশন গুলো জমা রাখি অন্য লেখার জন্য)। তাই করতে গিয়ে আমি ব্যর্থ না সফল সেটা সম্পূর্ণ ভাবেই পাঠকের বিবেচনার বিষয়।

এবার আমার "গন্দমের প্রতিটা খন্ডই যদি টানটান রাখি তাহলে সম্ভাবনা আছে পুরো উপন্যাস একসাথে পড়ার সময় পাঠক হাঁফিয়ে/বোর হয়ে যাবেন" এ বক্তব্য নিয়ে। আমি এটা বলেছি আমার লেখার ক্রমবিন্যাস (অরগানাইজেশন) নিয়ে, ধরণ (স্টাইল) নিয়ে নয়। "এই সব ফিল ইন দ্যা গ্যাপস বিরক্তিকর" এর আমার প্রচেষ্টাকে "খোঁড়া" কিংবা "জোর করে গেলানোর চেষ্টা" মনে হতেই পারে মনে হতেই পারে, সেটা ব্যক্তিগত বিষয় বলেই আমি তার জবাব দেবার প্রয়োজন বোধ করিনি। কেবল জানিয়ে দিতে চেয়েছি, একটানা একই রকম লেখা একঘেঁয়ে লাগতে পারে তাই চ্যাপ্টার ভেদে কিছুটা ব্যতিক্রম রাখার চেষ্টা করছি। একটা আবেগী চ্যাপ্টারের পর একটা বাস্তববাদী চ্যাপ্টার, একটা বাস্তববাদী চ্যাপ্টারের পর একটা সামাজিক, এরপর কর্পোরেট... এরপর হয়তো আবার আবেগী। আবার কলকাতার পটভূমিতে লেখায় এসেছে অনেক কলকাতার লিঙ্গো। এজন্য চ্যাপ্টার ভেদে পাঠকের ভাল-মন্দ বাড়তে-কমতে পারে। একটা কথা না বলে পারছি না, লেখার ধরন পর্ব ভেদে বদলালেও আমার তথাকথিত ইনফরমেশন ফিডিং কিন্তু সব পর্বেই আছে। হঠাৎ এই পর্বে চোখে পড়ার মত কি করলাম সেটাই একটু ভাবাচ্ছে - এটা কি লেখার সমস্যা, না ইনফরমেশনের সমস্যা!

এই উপন্যাস আর ৮-১০ পর্বের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।