অভিযোজনের সংলাপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি
লিখেছেন অছ্যুৎ বলাই (তারিখ: শুক্র, ১১/০৪/২০০৮ - ৫:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এইডা মনে করেন স্বভাব। বদ-স্বভাব। তেলা মাথায় তেল দিলে খরচা কম পড়ে; কিন্তু শুকনা উষ্কা মাথায়ই তেলের শিশিটা ঢালতে বরাবর হাত নিশপিশ করে। মাথার তেমুন কোনো লাভ হয় না, তয় চেষ্টা করেছি বলে একটা আত্মতৃপ্তির ভাব থাকে। ফিজিক্সের ফর্মূলা অনুসারে অবশ্য সেই তৃপ্তি পুরাটাই ইথারীয়। পাত্থর ঠেইলা ঠুইলা ঘামায়া গ্যালেও কাম হইবো তখনই, যখন পাত্থর নড়াইতে পারবা, হেয় নড়ন চড়ন নট মানে বগলের ঘামে প্যান্ট ভিজা গ্যালেও কোনো লাভ নাই।

ধুর, হেয়ালি-ফেয়ালি বাদ দিয়া কামের কথায় আসি। কথা হইলো খেলাধুলায় পক্ষ-বিপক্ষ সাপোর্ট-বিরোধিতা নিয়া। খুব ছোটবেলায় পাকিস্তান সাপোর্ট করতাম। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই। ৩০ লাখ মানুষের জীবনের ইতিহাসের চেয়ে এই ইসলামী ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরাটাই বোধহয় আমাদেরকে আগে শেখানো হয়; 'খেলার সাথে পলিটিক্স মেশাবেন না' ফতোয়ায় বিপুল সংখ্যক পাকি সাপোর্টারের মস্তিষ্কের একটা অংশ ঝামা দিয়ে ঘষে অকেজো করে দেয়া হয় শিশুকালেই। কেউ সে লুপ থেকে বেরোতে পারে, কেউ পারে না। আমি বেরিয়েছিলাম। এমনিতে আমি রাশির দোষে দুর্বলতর দলের সাপোর্টার। তার মধ্যে ভালোবাসি ফাইটিং স্পিরিট, সততা, অসম্ভবের লিস্টি থেকে সবকিছুকে বাদ দেয়ার হিরোইজম। সনাতন বুদ্ধির সাথে যায় না ব্যাপারটা। অভিযোজনই বেঁছে থাকার সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু সহজ উপায়কে কেন যেন তেমন ভালো লাগে না, নিরামিষ মনে হয়। অস্ট্রেলিয়ার সাপোর্ট করলে যেমন কোনোরকম টেনশনবিহীন অবস্থায় খেলা দেখে মনের আনন্দে বাতাসে ফুঁ দিয়ে চলা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করলে তার ঠিক উলটা। অনেক পরিশ্রমকে এক নিমিষে ধবংস করার ক্ষমতায় বাংলাদেশের সাথে এদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবুও ভালো লাগে। ব্রায়ান লারার বীরত্ব; কিংবা দুঃখিত দুঃখিত মুখগুলোর প্রতি মায়া, অথবা গেম স্পিরিট - কি জন্য ভালোলাগাটা কাজ করে জানি না। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা মানে আমাকে টিভির সামনে বসতেই হয়।

আজও বসলাম। সারাটা বিকেল এবং রাতের অর্ধেকটা। শ্রীলংকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ। এর আগে টেস্ট সিরিজে ফাইট করে সমতা আনায় তাদের প্রতি বিশ্বাসের নিক্তিটা খুব খারাপ অবস্থায় ছিলো না। তবুও দলটা যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪৯ রানে ৫ উইকেট নেয়ার পরেও তারা প্রতিপক্ষকে ২৩৫ রান করতে দেয়। ফিফটি রানের পরপর দুটি পার্টনারশীপের পরেও তাই গুম হয়ে বসে থাকি, খেলা দেখে যাই, ভরসা করেছি তো মরেছিই। যথারীতি উইকেটের মড়ক নামে, ব্রাভো-চন্দরপলরা আবারও কাউন্টার অ্যাটাক করে ফিরে আসে চালকের আসনে, তারপর রান নিতে গিয়ে দুজনেই এক প্রান্তের উইকেটকে ভালোবেসে ফেলে রানআউট হয়, ছক্কা মেরে পরের বলে একজন অক্কা পাওয়ার পরেও আরেকজন তাকে অনুসরণ করে। এরাও ভুল থেকে কিছু শেখে বলে মনে হয় না। শেষ দুই বলে ১০ রান দরকার। আশা ছেড়ে দেই। ক্যাপ্টেন ক্রিসের হাতপা ছেড়ে এলিয়ে বসা দেখে মনে হয়, তার আশা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তারপরেও চন্দরপলের মত 'টেস্ট' প্লেয়ার শেষ বলে ৬ মেরে জয় করে অসম্ভবকে। কৃপণ ভাস হঠাৎই কেমন দিলখোলা রানের খনি হয়ে যায়!

অনুভূতিটা চমৎকার। হয়তো এরকম অনুভূতির জন্যই এই সাপোর্ট, এই ভালোলাগা। অভিযোজিত হওয়ার চেয়ে তেলের শিশিটা শুষ্ক মাথায় ঢালার হাজার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যেই হয়তো এরকম একটি অনুভূতির জন্মরহস্য।

আগামীকাল আবার বাংলাদেশের সোনার ছেলেদের খেলা আছে। ইদানিং কী যে হয়েছে। সোনার ছেলেদের নিয়ে আবেগটা আর তেমন কাজ করে না। অভিমান? ধৈর্য্যের পরীক্ষায় ডাব্বা? নাহ, ঠিক মনে হয় না তা। দূরত্বই বাড়ছে হয়তো। সোনাই যখন পুঁড়ে ছাই হয়ে যায়, সে পোঁড়া সোনার ছেলে দিয়ে আমি কি করবো? এস্কেপ রুট ধরছি? হতেও পারে অভিযোজনমন্ত্রেই অভিযোজিত হচ্ছি দিনদিন। কম তো হলো না বেঁচে থাকার বয়স!


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বড়ই কঠিন কথা। পেটে বহুদিন পর সেদ্ধ চাউলের গলা ভাত আর সাথে দু'য়েকটা তরকারী ঠিকঠাক মতো পড়লে এমন কথা বাইরায়।
নিজে কিচেন আর ঘর- দৌড়ের উপর থাকলে এতো সার্থকতার সহিত খেলা দেখার বেইল হৈতো!

শইল ভালো?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

দিগন্ত এর ছবি

এমনিতে আমি রাশির দোষে দুর্বলতর দলের সাপোর্টার।

এইটা আমিও বটে কিন্তু ক্রিকেটে আমার দলগুলো তো আর জয় পায় না ... আয়ারল্যান্ড বা বারমুডার জয় কবে যে দেখব ... এদিকদিয়ে ফুটবল ভাল, মাঝে মাঝেই অঘটন ঘটে।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সত্তর দশকের শেষের দিক থেকে নব্বুইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের পাকিস্তানভক্তি তুঙ্গে ছিলো। সেই সময়ে পরিচিতদের মধ্যে পাকিভক্তদের সঙ্গে প্রচুর তর্ক হতো। আমার ঘাড়-ত্যাড়ামির চূড়ান্ত সময়ে বলতাম, পাকিস্তানের বিপক্ষে যে টীমই খেলুক, আমি তার সমর্থক, এমনকি মালদ্বীপ হলেও। আমার নিজের দেশ খেললে (তখনো বাংলাদেশ ক্রিকেটে কেউ নয়) তাকে সমর্থন করতাম। আর বিদেশী দলকেই যদি করতে হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় কেন? কেননা, তারাই তখনকার সেরা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

বলাই'দা নি:সন্দেহে ঝানু স্পোর্টস রিপোর্টার হতে পারতেন।

একটা ক্রীড়ায়তন সেকশন খুলে বলাই'দাকে দায়িত্ব দেয়া হোক। আমরা এরকম আরও লেখা পাই।

তীরন্দাজ এর ছবি

এখনো ক্রিকেটে পাকিদের সমর্থন করি...শুধুমাত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হলে না।

ভিতরে একবার ঢুকলে পাল্টানো যায় না আর! মুস্কিল!

**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্বপ্নাহত এর ছবি

ছোট থাকতে আমিও পাকিস্তানের সাপোর্টার ছিলাম।এখন না।যুবায়ের ভাইয়ের মত অবস্থা আমারো।পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে দলই হোক তাকেই সাপোর্ট করবো।খেলায় অন্য কিছু টানা ঠিক না- এমন উদার মনের সাপোর্টার বোধহয় কোনদিনও হতে পারবোনা।

বেঁচে থাকার বয়স খুব কম না হলেও একেবারে বেশিও হয়নি।অভিযোজিত হবার সময় তাই এখনো শেষ হয়ে যায়নি।দেখা যাক...

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।