অর্থনীতির লোকগাঁথা

জিজ্ঞাসু এর ছবি
লিখেছেন জিজ্ঞাসু (তারিখ: রবি, ২৩/১১/২০০৮ - ৬:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অর্থনীতির সূত্র কমই জানা। কিন্তু অর্থনীতি নিয়ে বলার ইচ্ছার কমতি নেই। তাই আমার বলা কথাগুলো কোন বিশেষজ্ঞ মতামত হবে না। বরং হবে লোকে অর্থনীতিকে যেভাবে দেখে সেভাবে দেখা। গণমানুষ পরিবেশ, সামাজিক সম্পর্ক, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করে সাধারণত ফোকলোর বা লোককথা অনুসরণে। লেখাটা তাই অর্থনীতির লোকগাঁথা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ধ্বসকে সাধারণভাবে বর্ণনা করতে গেলে যেটা বলতে হয়, বাজার চাঙ্গায় ধনীর লাভ, বাজার মঙ্গায়ও ধনীর লাভ। বাজার ভাল থাকলে গরিব কোন রকমে বেঁচেবর্তে থাকে কিন্তু বাজার মন্দা হলে গরিব মরে - বংশপরম্পরায় ঋণের পাহাড় মাথায় নিয়ে মরে, চাকরি হারায়, আত্মহত্যা করে। যদি সহজভাবে দেখি - কিছুদিন আগে যে জমি কিনেছি ১০০ ডলারে তা আমি বাজার চাঙ্গা থাকার সময়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছি। এখন মন্দার সময় একই জমি কিনছি ৭৫ ডলারে। কেনার ক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছি। তেমনি বাজার ফিরে আসলে বিক্রি করে আরও বেশি লাভবান হব কারণ আমার এই জমি এখনই বিক্রি করার তাড়া নেই। অর্থাৎ আমার পয়সা আছে আমি সুযোগ বুঝে যুতসই দাম পেলে বিক্রি করব এবং লাভবান হব। সাধারণ জনগণের কাছে দিনযাপনের পয়সাই নেই তাদেরকে আরও কমদামে দিলেও তারা ওই জমি কিনতে পারবে না। একই কথা শেয়ার, বন্ড, সিকিউরিটি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যে ধনীরা তারা বাজারের সুবিধা আদায়ের জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করে। বাজার যদি পড়ে যায় তার সুবিধাও বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষে যায়। যেখানে স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এইসব ধড়িবাজির যাঁতাকলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয় গরিব খেটে খাওয়া মানুষের দল। চাকরি হারায়। মধ্যবিত্ত সামাজিক অবস্থান থেকে ছিটকে পড়ে। কেউ কেউ উদ্বেগটা ধরে রাখতে না পেরে আত্মহত্যাও করে।

আমেরিকার সরকার সবরকম পতনের হাত থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে তাদের সংসদে উদ্ধার প্রস্তাব পাশ করেছে। এটা এখন আইনে পরিণত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ সত্তর হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ করবে এসব পতনশীল বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পতন ঠেকাতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গাড়ি (ফোর্ড, ক্রাইসলার, জিএম), বাড়ির ব্যবসায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য। বলা হচ্ছে এসব টাকা যে সরকার ওসব পতনোন্মুখ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিবে এগুলো জনগণের টাকা। অর্থাৎ জনগণের করের টাকা। আমার প্রশ্ন সত্তর হাজার কোটি ডলার কি আমেরিকার কোষাগারে বেকার পড়েছিল যে তারা এসব টাকা আইন করে এমন এক লাভজনক বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে? উত্তর হল আমেরিকার কোষাগারে এবাবদ খরচ করার মত কানাকড়ি পয়সাও নাই। এ সবই প্রাক-কল্পিত ব্যয় হিসেবে কাগজে কলমে হিসেব নিকেষ করে কাকে কোন রীতিতে, কোন শর্তে কত পর্যন্ত টাকা দেবে তার পরিকল্পনা করা হয়েছে মাত্র। এ পরিকল্পনাও আবার একেবারে কংক্রিট কোন প্রকল্প না। একটা সীমাপরিসীমা নির্ধারণ করার কাজ করেছে মাত্র আমেরিকার সংসদ। শুধুমাত্র আমেরিকার বাজারকে ঠেস দেয়ার জন্য।

কোষাগারে নগদ টাকা নেই অথচ পৃথিবীজুড়ে তোলপাড় ‘সত্তর হাজার কোটি ডলার’ নিয়ে। কি মজার ব্যাপার দেখুন। বাঙলাদেশের মত কিছু দেশ বলছে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির মন্দা আমাদের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। কথাটা একধরণের ছেলেভুলানো কথা। আমাদের উপর প্রভাব পড়বে অনিবার্যভাবেই। কীভাবে ব্যাখ্যা করব না; কেউ যদি বিপরীত মত দেন তাহলে ব্যাখ্যা দিন। যাই হোক, আমেরিকার সরকার এখন চুরি করুক (ইরাক), ঋণ করুক (বিশেষ করে চীন থেকে) আর এধারকা মাল ওধার করুক, যেভাবেই পারবে তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে এই ‘সত্তর হাজার কোটি ডলারের’ আওতায় এনে খরচা করবে। আর জনগণতো আছেই। কাজ কর পয়সা কামাও; সরকারের কোষাগারে খাজনা না দিয়ে বাড়ি যেতে পারবে না কেউ। ব্যস। খাজনা দাও। বড়লোকের উদরপূর্তি কর। না হলে গরিবের অস্তিত্বই নাই।

বড় বড় ধনীদের কোম্পানি ধ্বসে গেলে অর্থনীতিই শেষ!!!


মন্তব্য

প্রফাইল এর ছবি

আমাদের অর্থনীতি আসলেই বিপদে পড়বে না। ওটা ত' এম্নিতেই জীর্ণ আর আধমরা।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই ঘটনায় আমাদের অর্থনীতি একেবারে যে অধরা থাকবে তা হয়তো নয়, তবে যতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে তার চেয়ে বেশি হৈ-চৈ হবে। এই হৈ-চৈ করবে বিশেষতঃ দুইটি শ্রেণী। এক, গার্মেন্টসওয়ালারা; দুই, পশ্চিমমূখী চাতক অর্থনীতিবিদ আর তাদের পেয়ারের লোকজন। গার্মেন্টসওয়ালাদের কাজই হচ্ছে কারনে-অকারনে হম্বি-তম্বি বাঁধিয়ে আধমরা সরকারের কাছ থেকে নগদ সুবিধা আদায়। সুতরাং হল্লা বাঁধানোর এই সুযোগ তারা ছাড়বেনা। আর চাতক অর্থনীতিবিদদের কথা কী বলব! পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তারা আর আঁচই করতে পারে না পায়ের তলার মাটি কবে, কেন সরে গেল?



তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আলমগীর এর ছবি

জিজ্ঞাসু লিখেছেন:
বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যে ধনীরা তারা বাজারে ধ্বস নামানোর জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করেছে এতদিন। তারা সুযোগ বুঝে তাদের শেয়ার, বন্ড বেশি দামে বিক্রি করে নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বসে আছে।

এ কথাটার ভিত্তি বা উৎস সম্পর্কে কিছু বলুন তো।

প্রফাইল এর ছবি

পাণ্ডব ভাগ্যিস চাতকদের ঘোমটা হরণ করেন্নি .... ওরা অবশ্য এম্নিতেই খ্যামটা এবং অধিক নর্তন-কুর্দনে ও মায়াক্রন্দনে বিশ্বাসী ............

জিজ্ঞাসু এর ছবি

@আলমগীর
শেয়ার বাজার বোদ্ধারা বলেন শেয়ার বাজার হল একধরনের জিরো সাম গেইম অর্থাৎ এখানে কেউ লাভবান হলে ধরে নিতে হবে অপর কেউ লোকসান গুণছেন। আমেরিকার ঋণবাজারের দ্বিতীয় স্তরের বাজার পরিচালনা করে ফ্রেডি ম্যাক ও ফেনি মে, যারা মূলত বিভিন্ন ব্যাংককে তাদের আবাসন ঋণের বিপরীতে টাকা দেয়। একটা ব্যাংকের অনেকগুলি আবাসন ঋণের একটা প্যাকেজ যদি ফ্রেডি ম্যাকের কাছে তারা পুনরায় বন্ধক দেয় তখন তারা তাদের তারল্য সঙ্কট কাটিয়ে আবার ঋণ বাজারে ক্রেডিট ফ্লো তৈরি করতে পারে। ফ্রেডি ম্যাক সেই প্যাকেজকে আবার বন্ড আকারে বাজারে ছাড়ে এবং বড় কোন বিনিয়োগকারী সেটা কিনে নেয়। এক্ষেত্রে এই বন্ড অনেক নিরাপদ কারণ এর পিছনে ব্যাকআপ হিসেবে লেনদেনকৃত বাড়িগুলো আছে। এই নিরাপদ বিনিয়োগ কিন্তু সাধারণ জনগণের পক্ষে করা সম্ভব না কারণ একটা বড় অঙ্কের অর্থযোগ আছে এর সাথে।

এক বন্ধুর কথা বলি। চার বছর আগে যে ব্যক্তির একলক্ষ বিশ হাজার ডলারের শেয়ার কিনেছেন ছয়মাসের মধ্যে তার দাম প্রায় আটলক্ষ ডলারে পৌঁছে যায় এক মিলিয়ন হবে এই আশায় যখন সে দিন গুণছে তখনই হঠাৎ একদিন সেই শেয়ারগুলোর দাম এক লক্ষ ডলারে নেমে আসে। তাহলে টাকাগুলো গেল কোথায়? কারো পকেটে গেছে। এবং এই কেউটা সবসময় সুনির্দিষ্টভাবে না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কর্পোরেট বিজনেসের প্রতিনিধিরাই হয়ে থাকেন।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

দিগন্ত এর ছবি

শেয়ার বাজার বোদ্ধারা বলেন শেয়ার বাজার হল একধরনের জিরো সাম গেইম

এটা একেবারে ঠিক কথা নয়, শেয়ার বাজার হল শর্ট টার্মে জিরো সাম গেম। কিন্তু লং টার্মে শেয়ার বাজার সাধারণত সবাইকেই লাভ দিয়ে থাকে। কিন্তু ধৈর্য ধরে বছরের পর বছর টাকা ফেলে রাখার ইচ্ছা বা চেষ্টা কোনোটাই কিছু মানুষ ছাড়া বাকিদের মধ্যে থাকে না। যাদের মধ্যে থাকে তারা বড়লোক হয়।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

তাহলে টাকাগুলো গেল কোথায়? কারো পকেটে গেছে।

এটা ঠিক নয়, আমি পারলে পরে আপনাকে বুঝিয়ে দেব। আলাদা পোস্টও দিতে পারি।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

এই বার আর লোকগাথা নাই রে ভাই চোখ টিপি
আমার কোন জ্ঞানই নাই অর্থনীতিতে, মিডিয়াতে, আশেপাশে যা শুনি তাই মাথায় ঘুরে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

@ আলমগীর
কথাটায় অসংগতি থাকায় মূল পোস্টে কিছু সম্পাদনা করেছি।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

জিজ্ঞাসু এর ছবি

দিগন্ত আপনি ঠিক বলেছেন লং টার্মে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু সবার পক্ষে দীর্ঘ সময় ধরে রাখা সম্ভব হয় না বলেই মনে হয়। দেশে যেসব বন্ধুবান্ধব শেয়ার বাজারের কার্ব মার্কেটে ব্যবসা করে তাদের কিছু অভিজ্ঞতা সুখকর না।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

আলমগীর এর ছবি

চালিয়ে যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।