এখনো হারিয়ে যায়নি স্বপ্ন

দেবোত্তম দাশ এর ছবি
লিখেছেন দেবোত্তম দাশ (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৯/২০০৮ - ৬:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

“এই কুত্তার বাচ্চা, বাঞ্চোৎ, খানকির পো, বের করে দে বলছি”, বলেই আবার মুখে সপাটে লাথি মারলেন আম জনতাদের মধ্যে হটাৎ করে গজিয়ে ওঠা একজন জনদরদী ভদ্রলোক !!!
পেছন থেকে আরেকজন চেঁচিয়ে বললেন হারামির বাচ্চাগুলোকে ন্যাংটো করে পাছায় বাম্বু দিয়ে দিতে হয়।

আবার হুমকি, কিরে!! দিবি না নাকি ? সপাটে গালে পড়লো বিরাশি শিক্কার এক থাপ্পড়।

“দাদা বিশ্বাস করুন, আমি ......” ফের মিথ্যা কথা ? কথা শেষ করতে না দিয়ে এবার তলপেটে লাথি।
এইটুকুন একটা রোগা-পটকা লোককে এতোগুলো লোক মিলে জানোয়ারের মতো পেটাছে, নাক দিয়ে গল-গল করে রক্ত, গায়ের নোংরা জামাকাপড় মারের চোটে ছিঁড়ে, ইস !!! মানুষ যে মানুষকে এভাবে মারতে পারে, তা এই অসহায় লোকটাকে না দেখলে বোঝা যেতো না। লোকটা মার খেয়ে একেবারে কুকড়েঁ গেছে।

শুওরের বাচ্চা,, চোদনখোর, শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি, এবার কিন্ত আর কেউ বাঁচাতে পারবে না বলে দিলাম ?

ঘটনা কি !!! চারিদিকে প্রচুর লোকজন জমে গেছে, গোল হয়ে বেশকিছু জনতা একটা অস্তিচর্মসার লোককে পেটাচ্ছে। কি ব্যাপার? নাঃ লোকটা নাকি লোকাল ট্রেন থেকে পকেট মেরে পালাচ্ছিলো।

কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি (যার বিবেক এখনো কলুসিত হয়নি, যে এখনো সুন্দর সুষ্ট সমাজের দিবাস্বপ্ন দেখে) সে বলে উঠলো, কেন শুধু শুধু লোকটাকে এভাবে মারছেন, তার থেকে একে পুলিশের হাতে দিয়ে দিন।
নো পুলিশ ফুলিশ, জাষ্ট শুট করে দাও, মন্ত্যব বাজারের থলে হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়া প্রৌড় প্রাজ্ঞজনের
ভীড়ে দাঁড়ানো কয়েকজন প্রৌড়ের ম্নতব্য শুনে মুখ টিপে হেসেও ফেলল।

হটাৎ করে রাস্তায় চা বিক্রী করা ছেলেটি দৌড়ে এসে বললো, মানিব্যাগ পাওয়া গেছে ।
ধীরে ধীরে দায়িত্ববান জনদরদী ভদ্রলোকেরা চুপিসারে সটকে পড়তে লাগলেন।

স্বপ্ন হারিয়ে না যাওয়া ছেলেটি শুধু একটা রিক্সা দাঁড় করালো, হাসপাতালে যে যেতে হবে ভাই !!!


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দুর্ধর্ষ

০২

আমার একেবারে পরিষ্কার একটা সমীকরণ মেলানো আছে
একমাত্র চোররাই রাস্তায় চোর পেটায়

মূলত যে পিটানগুলো তাদের নিজেদের পাওনা আছে
সেগুলো তারা ক্রিয়েটিভলি অন্যের উপরে প্রয়োগ করে

একইভাবে চরিত্র ফরিত্র নিয়ে কথা বলে সবচে চরিত্রহীন লোকরাই

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

কথা ঠিক লীলেন ভাই। মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা হিংস্র শ্বাপদদের দাঁত নোখ বের করা অবস্হায় না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
এরাই আমাদের সভ্য সমাজের বাসিন্দা, এরাই আমাদের সভ্য সমাজের পতাকা বহন করে চলেছে।

আজ স্বীকার করছি এই ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটেছিল, আমি ছিলাম সেই কলেজ পড়ুয়া, কিন্তু নাহ!!! আমি পারি নি সেই কাজ করতে যা আমার গল্পের স্বপ্নদেখা ছেলেটি করতে পেরেছিল। কুলোয় নি আমার সাহসে। সেইসব শ্বাপদদের সাথে লড়াই করার জোর ছিল না আমার কলজেয়। আমি শুধু পেরেছিলাম কলেজ না গিয়ে আমার বালিশ ভেজাতে। শুধু প্রার্থনা করছিলাম, হে পরম করুনাময় ওরা যেনো শাস্তি পায়।
আজো প্রতিবাদ না করার বিবেক দংশনে ভুগি।
শুধু ভাবি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে যেনো প্রতিবাদটুকু করতে পারি !!!

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অবদমন ।
-------------------------------------
"শিয়রের কাছে কেনো এতো নীল জল? "

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

দমন করার চেষ্টা চলছে
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

রণদীপম বসু এর ছবি

আয়নায় আপন মুখ !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

আমার মনে হয় আয়নার থেকে বেশী প্রয়োজন অর্ন্তদৃষ্টির ।
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক
_________________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

ধন্যবাদ
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অনিশ্চিত এর ছবি

সাধারণ ভদ্রলোকদের কথা বাদই দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কি একই কাজ করছে না। কিছুদিন আগে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি মেডিক্যালের শিক্ষার্থী একই ধরনের সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।

আসলে কোনো কারণে পৃথিবীর সকল আক্রোশ আমাদের মধ্যে জমা হয়ে আছে। ফলে জমাকৃত আক্রোশগুলো সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলো দমিয়ে রেখে কিংবা আক্রোশের মূলানুগ হয়ে আক্রোশের কারণগুলো চিহ্ণিত করে সেগুলোর মোকাবিলা করার চিন্তা কি আমাদের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আছে? শিক্ষার্থীদের আছে?

হয়তো আছে। কিন্তু কেনো যেনো তাদের সাথে আমার দেখা হয় না। যেমন সরাসরি দেখা হয় নি আপনার সাথে।

‌‌-------------------------------------
হাত বাঁধা, কিন্তু দড়ি মুক্ত - হায় পৃথিবী!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।