ব্রেকফাস্ট এট টিফানী

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: শুক্র, ২৭/০৭/২০০৭ - ১১:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছর পাঁচেক আগে রাতের বেলা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ব্রেকফাস্ট এট টিফানী গানটা শুনতে শুনতে ভিজ্যুয়ালাইজ করেছিলাম এইভাবে যে কোন এক উইকএন্ডের সকাল বেলা মনে হলো ব্রেকফাস্ট করবো শহরের যান্ত্রিকতা ছাড়িয়ে কোন গাঁয়ের পথের ধারের অচেনা কোন এক জায়গায়, কোন এক বৃদ্ধার কাঠের মেঝে এবং বেড়ার লাল ধূলোউড়া কোন রেস্টুরেন্টে।
জায়গাটা ডেফিনিটলী হবে অস্ট্রেলিয়ার সিবিডি এরিয়া ছাড়িয়ে, হাইওয়ে ধরে অনেকদূর। পথে যেতে যেতেই লাল সূর্যের দেখা মিলবে!

পাশে পড়ার টেবিলে বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা ছোট ভাই তখন বললো, আমারেও নিয়ো সাথে। আমি বললাম তুই কি মদ খাস? বলে, না। আমি তখন বলি, তাইলে তুই গিয়া কি করবি? আমি তো ওয়ার্লডের ফাইনেস্ট ওয়াইনে চুমুক দিমু তখন!
ছোট ভাই বলে, তা দিও, আমি নাহয় এক কাপ কফি নিয়াই বসুম নে। তাও এরম একটা সুন্দর জায়গায় আমারে নিয়া যাইও...।

ও যখন অনেক ছোট ছিলো। মানে একেবারে গেদাবাবু। তখন একদিন আমার সাথে হাঁটতে হাঁটতে জংলা মতো একটা জায়গায় আমি একটু জোরে পা চালাতেই পেছন থেকে ডেকে বলে, "মাজি বাই, তুমি আমারে আফ্রিকার জংকলে একলা ফালাইয়া যাবা গা"?

ওর কথা বলার একটা ঢং আছে সেই বাবুবেলা থেকেই। বলতে বলতে ভুলে যাওয়া কি বলছিলো। আমি বেশ মজা পেতাম ওর এরকম একটা নেগেটিভ কোয়ালিটিতে। থেমে থেমে কথা বলে, মনে হয় একটা শব্দ বলে পরেরটা খুঁজে বের করে তারপর মুখ দিয়ে বের করে।

প্রথম যখন আমাকে এয়ারপোর্টে বিদায় দেয় তখন আমার কোমর সমান ছিলো। সবার সাথে বিডায় নেবার সময় দেখি কে যেনো আমার শার্ট ধরে নিচের দিকে টানে। তাকিয়ে দেখি ও। আমি টাকাতেই শার্টের কোণা ছেড়ে দিয়ে হাতের উল্টাপিঠ দিয়ে চোখ মুছে। কাছে ডাকি আসে না।
দেশে ফিরে দেখি বিশাল বড় ব্যাটা হয়ে গেছে, আমার কাঁধ সমান। এসএসসি পরীক্ষা দিবে।

আমার যখন চলে আসলাম, এবার বিদায়ের সময় জড়িয়ে ধরে বিদায় দিলো। তিন ভাই জরাজড়ি করলাম একসাথে। এরই মাঝে কেটে গেলো কয়েকটা বছর। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার সেই থেমে থেমে কথা বলা গ্যাদা ভাইটাও বড় হয়ে গেলো। ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে উঠে গেলো। কথা ছিলো অনেক আগেই অন্য কোথাও, অন্য কোনখানে শুরু করার।

আজকে সেই দিন। অনেক গুলো দিনের গণণা শেষে আর আধা ঘন্টা পরে এমিরেটস এর ফ্লাইট থেকে বের হবে এক তরুণ, আমার ছোট ভাই। সেই গুটি গুটি পায়ে হাফপ্যান্ট পরে দৌঁড়ানো আমার বাবু-ছোট ভাইটি না, দেখা মিলবে গোঁফ-দাঁড়ি কামানো এক তরুণের।


মন্তব্য

হযবরল এর ছবি

আনন্দের খবর। কান্দিস কেন তুই ? ল্যাদা ভাইকে ভালবাসা।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

প্রথম যখন বাসা ছাইড়া বাইর হইলাম হলে থাকার জন্য, ছোট ভাইটা তখন পড়ে কেজিতে ... বিশেষ দুঃখিত মনে হয় নাই তারে ... বরং সে চিন্তায় ছিল কম্পিউটার আর গল্পের বই সব নিয়া যাব কিনা ... যখন দেখল সেই ভয় নাই তখনি সে নিশ্চিন্ত ...

পরের দিন আম্মা ফোন কইরা জানাইল বেচারা নাকি ঘুমানোর সময় হঠাৎ ফোঁপায়ে কান্না শুরু করছে, সেই কান্না আর থামে না ...

মনটা কি যে খারাপ হইছিল তখন ...

আপনার লেখাটা পইড়া হঠাৎ সেই কথাটা মনে পড়লো ...

আপনার ভাই কোথায় যাইতেছে, জার্মানী?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার ছোট কেউ নাই মন খারাপ
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অমিত এর ছবি

আমারো ছোট কেউ নাই। আমিই ছোট। বড় ভাইটা যখন চলে আসে বিদেশে, ১৯ বছর আগে, আমিও তখন গ্যাদা।মাঝের কোন এক ৬ মাস ছাড়া আর একসংগে থাকা হয় নি।
_____ ____________________
suspended animation...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার একটা ছোট ভাই আছে। সাড়ে চার বছরের ছোট। দেখতে পারে না আমাকে তেমন একটা। আমি বাইরে আসাতে খুবই খুশি হয়েছিল। এখন আবার আমার সাথেই!

ঝরাপাতা এর ছবি

সুখবর। কিন্তু আমাগোরে সচলের জঙ্গলে ফেলে মাঝখানে কই ডুব দিছিলেন?


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ঠিকাছে
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

তারেক এর ছবি

সেইম কেস অমিতদা। আমিও সবার ছোট। আর আমার ভাই বছর দেড়েক হইল কানাডাতে। বড় ভাই এখানে নাই, মজায় আছি। দেঁতো হাসি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ভোতা এর ছবি

'মাজি ভাই' কেমন আছে ছোট ভাইকে নিয়ে?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পেরেশানি আর কারে কয়, এতোদিন তো চলছি যেমনে খুশী তেমনে। এখন সেইটা সম্ভব হইতাছে না। ঠিকমতো যে গাঞ্জায় টান দিমু সেইটাও হইতাছে না। আমারে হেদায়েত করে... কই যাই!

সামার টাইম, রাস্তায় বাইর হইলে চোখ মুখ কুচকাইয়া থাকে আর আমি চোরা চোখে দেখি আর হাসি। হাসি বেচারা কি ঝামেলাতেই না পড়লো এই সময়ে এই দেশে আইসা।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হাজার দুয়ারীতে লেখা দিবো কিভাবে?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- - এ ইমেইল করো মিয়া।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'তুমি ভালো আছো ভাই? তুমি বেঁচে আছো খোকা?'

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- দাদাগো অনেক ঝামেলায় আছি। একেবারে রিয়েলটাইম ঝামেলা যারে বলে।
বেঁচে আছি এটা বলতে পারছি, কিন্তু ভালো আছি কিনা- সেটা বলার সাহস হয়না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হাসান মোরশেদ এর ছবি

বেঁচে থাকিস ভাই । বেঁচে থাকলে পরে, ভালো থাকার চান্স নেয়া যায় বারংবার
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মাশীদ এর ছবি

আহা তোরা দুই ভাই মিলে স্বল্পবসনা জার্মান বালিকাময় সামার কাটাচ্ছিস - তোদের চোখের ব্যয়াম হলেও সম্মিলিত জার্মান বালিকা সমাজের জন্য এর থেকে বাজে সামার আর কী হতে পারে!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বাজে বকিস না মহিলা।
আমার ছোট ভাই বাইরে বের হলে চোখ নিচু করে রাখে। আর আমি তো চশমা ছাড়া কিছুই দেখিনা, তবে চশমা থাকলে সেইটা অন্য কথা। চোখ টিপি

একটা গোপন কথা মনে রাখিস, জর্মন বালিকাদের দিকে সামারে একনজর তাকালে তারা দ্বিতীয় নজর কাড়াটা মেক শিউর করে। এখন আমারে জিগাইস না কেমনে করে, তাইলে কইলাম আমি লইজ্জা পাইতে পারি। দেঁতো হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

দ্রোহী এর ছবি

আমি একা! বড় একা! আমার আপন ভাই নেই!


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পুচকে দেশে গেছিলো, বেড়ানি শেষ কইরা আজকেই ইট্টু পরে জাহাজে উঠবো। বিশাল এক খাদ্য বোঝাই সপ্তম নৌবহর সাথে নিয়া আসতাছে শুনলাম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।