স্মৃতির ব্যাড সেক্টর থেকে

ধুসর গোধূলি এর ছবি
লিখেছেন ধুসর গোধূলি (তারিখ: বুধ, ১৮/০৩/২০০৯ - ১:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ঘটনা আংশিক ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে গেছে। কিছুতেই সেই অংশগুলো আর মনে করতে পারি না এখন। ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ ঘুম গেলো ভেঙে। খানিক চেষ্টার পরেও ঘুম না আসায় ভাবলাম মস্তিষ্কের ব্যাড সেক্টরে পড়ে যাওয়ার আগেই কয়েকটা ঘটনাকে ডিজিটাল ডায়েরীতে টুকে রাখি ডিজিটাল বাংলাদেশের অ্যানালগ নাগরিক এই আমি!

জীবনের প্রথম আকাশপথে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আর সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্সের খাবারের হাইব্রিড বৈশিষ্ট্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে যখন সিডনী এয়ারপোর্টে নামি ততোক্ষণে আমার শরীর হিউস্টন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হয়ে গেছে। খাবারের হাইব্রীড বৈশিষ্ট্য বলছি এইজন্য যে প্রথম ফ্লাইটে বাসমতি চালের ভাত, মাটন ভুনা প্রভৃতি মুখরোচক খাবার জুটলেও দ্বিতীয় ফ্লাইটে কী যে জুটেছিলো তা স্মৃতি থেকে পুরোই হারিয়ে গেছে। এই দুই পদের আকাশ-পাতাল প্রণালীতে রান্না করা খাদ্য যখন একই খাদ্যনালী আর একই মেইড-ইন-বাংলাদেশ পাকস্থলীতে গিয়ে জারণের জন্য ধ্বস্তাধ্বস্তি করছে তখনই হিউস্টন থেকে আমার প্রথম রকেটটা উৎক্ষেপিত হলো। সুশীল জনগণ এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াকে "পাদ" বলেই অভিহিত করেন। সুবিশাল ৭৭৭-এ বেশ কয়েকবার রকেটের সফল উৎক্ষেপণের পর সিডনী এয়ারপোর্টের এয়ারকণ্ডিশণ্ড আকাশ-বাতাস বাঙালী পদ্ধতি আর বৈদেশিক পদ্ধতির খাবারের কুস্তাকুস্তির বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে উৎক্ষেপিত বর্ণালী, গন্ধালী আর শব্দালী নানা রকেটে পরিপূর্ণ করে যখন বেরিয়ে আসলাম তখন দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে ছিলো দোস্ত 'এঞ্জেল' টুটুল। সে একা না। সাথে ছিলো 'মহামতি' শিপু। এই ব্যাটা আমাকে দেখেই টুটুলকে খোঁচা দিয়ে বলে, "ঐ যে আইছে আরেকটা 'স্যরি'!"

প্রথমে বাসে করে সেন্ট্রাল তারপর (খুব সম্ভবতঃ) ট্রেইন, আর তারপর টেক্সি করে গন্তব্য। বাসের ঘটনাটা মনে আছে। শিপু'র হাতে একটা কোকাকোলা লাইটের ছোট বোতল ছিলো। আমার টিকিট করেছিলো টুটুল। বাস থেকে নেমে অনেকটা দূর আমরা তিনজন আমার লাগেজটা ঠেলে, টেনে আনতে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি, হৈ হুল্লোড় করেছিলাম- এটাও মনে আছে। কিন্তু তারপরের ঘটনাটুকু পুরোটাই ব্ল্যাকআউট! এর পরের ঘটনা যেটা মনে পড়ে তা হলো টেক্সিতে ভাড়া উঠেছে ৬ ডলার চল্লিশ সেন্ট। সেটাও টুটুল দিলো। নেমে রাস্তার কোণায় সাইনবোর্ড খেয়াল করলাম, 'লিন স্ট্রীট'। এখানেই থাকতে হবে আমাকে। টুটুল আসল বোম্বাটা ফাটালো তখন। আসলে সে আর আমি এক সঙ্গে থাকবো না। ও আমাকে যেখানে তুলে দিচ্ছে সেটা তার পূর্বনিবাস। ও চলে যাচ্ছে আধাঘন্টা ট্রেইন পথের অন্য একটা সাবার্বে। এই বোম্বাষ্টিকে আমি কতোক্ষণ 'হা' করে থাকলাম।

রান্না বান্না কিছুই জানি না। আমার ফ্ল্যাটমেইট আসগর ভাই, ওর‌্যাকল নিয়ে মেতে থাকেন, আর কী জানি সব খান রেঁধে। একেবারেই বিস্বাদ, একবারই একটু মুখে দিয়েছিলাম। ধর্মকর্ম করেন, খুব সাদাসিধে মানুষ। আর থাকেন বাবু ভাই, পিৎজা হাটে কাজ করেন। মাঝে মাঝে অবশ্য রাতে ফেরার সময় পিৎজা নিয়ে আসতেন। এসে বলতেন, "নাও, খাও, তোমার জন্য নিয়া আসছি!" আমি গপাগপ মেরে দিতাম।

বৈদেশিক ঘোর কেটে গেলে, আমার হিউস্টন যখন স্বাভাবিক হয়ে এলো, যখন আর নিকট অতীতে যত্রতত্র রকেট উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা ক্ষীণ হলো, তখন পাকস্থলীর আয়তন কিছুটা কমলো। আর তখনই দরকার পড়লো আসল জিনিষের, ফুয়েল-এর মানে খাবারের। সমস্যা হলো, সব কিছুতেই বিচ্ছিরি রকমের গন্ধ, খাবো তো দূরের কথা গন্ধই সহ্য হয় না। ঘটনার বিবরণ জানিয়ে দিলাম টুটুলকে ফোন (নাকি টুটুলই ফোন করেছিলো, মনে নেই)। ও জানালো বিশ (ত্রিশ) মিনিটের মধ্যে আসতেছে। ৩ মিনিট পর আবার আমি ফোন দিলাম, লবন নাই। রাঁধতে হলে তো লবনও লাগবে!

টুটুল এলো হাতে কিলো খানেক স্বাস্থবান মুরগীর ঠ্যাঙ নিয়ে। দেশে থাকতে মুরগীর ঠ্যাঙ নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগতো আমাদের। তাও কি, কড়ে আঙুলের মতো চিকন চিকন ঠ্যাঙ। মনে হয় একযোগে আমাদের দেশের সব মুরগীর ঠ্যাঙে পোলিও হয়েছে। টুটুলের হাতে ট্রিপল এক্স-এল সাইজের মুরগীর ঠ্যাঙ দেখে, আর এই জিনিষগুলো আমি একাই খাবো ভাবতেই মনটা চাঙা হয়ে গেলো। এইবার শুরু হলো টুটুলের ডেমনস্ট্রেশন। কীভাবে এই জিনিষ রান্না করতে হয়। আমি মনযোগ দিয়ে দেখি। প্রথমে একটা হাঁড়িতে ঠ্যাঙগুলো ছিলে, ধুয়ে রাখতে হবে। একটার উপর একটা না, সুন্দর করে সাইজ করে যেনো একটা ঠ্যাঙ থেকে আরেকটা ঠ্যাঙের দূরত্ব মিনিমাম কয়েক মিলিমিটার হয়। তারপর উপরের কাবার্ড থেকে হলদে, লাল, বাদামী, কমলা যতো রকমের পাউডার দেখা যায় সব নিয়ে একটু একটু করে ঐ ছড়ানো ঠ্যাঙের উপর ছড়াতে হবে। শুধু তাই না, ঐ কাবার্ডে বিভিন্ন বয়ামে রাখা আছে নানা আকৃতির, বর্ণের, সাইজের নানা কিসিমের পাতা, ফল কিংবা বিচি। ঐগুলাও কয়েক পিস করে হাঁড়ির মধ্যে ফেলতে হবে। লবন দিতে ভুলে গেলে একদমই চলবে না। যদিও প্রথম প্রথম কয়েকবার এমন হবে, তবে প্র্যাকটিস করতে করতেই এক সময় আর লবন দিতে ভুল হবে না। টুটুল বেশ সিনিয়র সিনিয়র পাট নিয়ে, বেশ ভাব নিয়ে একেকটা জিনিষ ঢালে আর আমি মাথার নিউরণে সেটা সাঁটাই। মনে মনে ভাবি, "আহা টুটুলটা কী স্মার্টই না হয়ে গেলো গত কয়েক মাসে!" (ও কিন্তু আসলেই আমার দেখা অসম্ভব স্মার্ট একটা ছেলে। যদিও স্মার্টনেসের সংজ্ঞা নিয়ে অনেকের সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে।)

এবার জামার ডান হাতের অংশটুকু একটু গুটিয়ে হাঁড়িতে ছড়ানো ঠ্যাঙগুলোকে বেশ ভালো করে খাবলাখাবলি করতে হবে। এই খাবলাখাবলির উদ্দেশ্য হলো এতোক্ষণ যে নানা বর্ণ ও রঙের পাউডার আর বিভিন্ন কিসিমের ফুল, পাতা, ফল দেওয়া হলো সেগুলো একসঙ্গে মেশানো। মোটামুটি আধামিনিটের মতো এই প্রক্রিয়া চালানো লাগবে। তারপর এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল মাখানো ঠ্যাঙের সাথে মিঠা নদীর পানি যোগ করতে হবে খোদার অশেষ মেহেরবানী পেতে হলে! পানির পরিমাণ নির্ধারণ করা লাগবে হাঁড়িতে রক্ষিত ঠ্যাঙে উলম্বভাবে হাতের অঙুলি দাঁড় করিয়ে। যখন পানি মধ্যমার প্রহম, দ্বিতীয় ভাগের সীমানা পেরিয়ে তৃতীয়ভাগ ছুঁবে, তখন মিঠা পানি বন্ধ করা থামাতে হবে। এটাই হলো পানির স্ট্যাণ্ডার্ড মাপ। এর বাইরে পানিকে না পেরুতে দেয়াই ভালো।

এই রেসিপিতে টুটুলের রেঁধে দেয়া মুরগীর ঠ্যাঙ পরবর্তী কয়েকদিন খেয়েছিলাম। তারপর ঠিক কবে, কোন অলক্ষুণে সময়ে আমি নিজের হাতে রেঁধেছিলাম সেটাও ব্ল্যাকআউটের কবলে পড়ে গেছে। প্রথম দিকের সেসময়ে বেশির ভাগ খাওয়াই হতো টুটুলের ওখানে। ইউনি থেকে ৪ লিন স্ট্রীট, রেডফার্ণের বাসার ফিরতে টুটুলের বাসার ওখানে নেমে যেতাম ওর সঙ্গে। তারপর খেয়ে দেয়ে রাতে চলে আসতাম। ওখানেই একদিন খেয়েছিলাম গরুর মাংস। রানা রেঁধেছিলো। খুব ছোট টুকরো করে কাটা গরুর মাংসের সাথে ব্যাঙের ছাতা দিয়ে। পেঁয়াজ পাতা কি তার সাথেই ছিলো নাকি সালাদের সাথে খেয়েছিলাম মনে নেই। তবে পেঁয়াজ পাতায় কামড় দেয়ার 'ঘচ' শব্দটা মস্তিষ্কে রয়ে গেছে।

তার কিছুদিন পর ৪ লিন স্ট্রীট ছেড়ে উঠে যাই টুটুলদের সঙ্গে, ১৮ রেইলওয়ে প্যারেড, বারউড-এ। এর মধ্যে রান্নায় ইম্প্রোভাইজ করা শিখে গেছি। সবাই রুটিন করে রান্না করি এখানে। প্রতি শিফটে দুইজন। একজন মূল বাবুর্চি আরেকজন 'কিচেন হ্যাণ্ড'। যে কিচেন হ্যাণ্ড সে থালাবাটি ধুয়ে দিবে, পেঁয়াজ কেটে কুটে সব রেডি করে দিবে আর যে মূল বাবুর্চি সে কেবল রান্না করবে। এবং ইচ্ছে করলে কিচেন হ্যাণ্ডকে ধুমায়ে ঝাড়িও লাগাতে পারবে, এটা তার পদাধিকার বল। এই বসায় লেবানিজ রুটি সেঁকতে গিয়ে ফ্রাইপ্যানের কিনারায় লেগে হাতে ঠোসা পড়ে গিয়েছিলো যার দাগটা এখনো অল্প বিস্তর রয়ে গেছে।

এরই মধ্যে রনি নামের এক বিশাল বপু ছেলের মা গেলেন সিডনী বেড়াতে। তো আন্টি আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিলেন রনি'র ম্যাডোব্যাংকের বাসায়। আমরা ৪ জন (শিপু যায় নি। কারণ কোনো এক বিচিত্র কারণে সে রনি এবং তার বাবা মাকে পছন্দ করতো না)। আমাদেরকে পেট পুরে খাওয়ালেন আন্টি। আমরাও মোটামুটি গড়িয়ে, পড়িয়ে যতো পারলাম ততো সাঁটালাম। পেটের মধ্যে সেদিন কারুরই দশমিক শূন্য এক বর্গ মিলিমিটার জায়গাও বোধকরি খালি ছিলো না। তো সেদিনের খাওয়ার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে রনি আমাদের সাথে মুভইন করলো, রেলওয়ে প্যারেডের বাসায়। আন্টি যতোদিন ছিলেন, বেশ মজার মজার রান্না রেঁধে খাওয়ালেন আমাদের। তাঁর হাতের ডাল চচ্চড়িটা মুখে লেগে ছিলো অনেকদিন। (এই জিনিষটা আমি একবারই রাঁধতে পেরেছিলাম, আর পারিনি।) রনিকে এই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হলো কিছুদিন পর। আমরাও তার কিছুদিন পর বাসা বদলালাম।

৩১-৩২ পার্ক এভিনিউ, বারউড- এই হলো নতুন বাসার ঠিকানা। বারউড স্টেশন থেকে বের হয়ে হাতের ডানদিকে একটু হাঁটলেই ওয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টার। তার সামনেই বারউড পার্ক। ওয়েস্টফিল্ডকে পেছনে রেখে পার্কের বাঁ দিক ধরে যে রাস্তাটা ভেতরে ঢুকেছে সেটাই পার্ক এভিনিউ। একদম শেষের চারতলা বাড়ি। আমরা থাকি টপফ্লোরে। আমাদের নিচেই থাকে এক বদমেজাজী বুড়ো মহিলা। যে কিনা আমাদেরকে পুলিশ ডাকিয়ে শাসিয়ে ছিলো একবার। আমরা নাকি রাত বিরোতে ধুপধাপ শব্দ করি, বুড়ি ঘুমাতে পারে না। এক রাতে বিশাল বপু দুই পুলিশ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে শাসিয়ে গেলো, "নেক্সট টাইম সেইম কম্প্লেইন- টু হান্ড্রেড বাকস্!" বুড়ি কিন্তু আমাদেরকে সামনে পেলে বেশ বন্ধুসুলভ ব্যবহার করতো, অন্ততঃ আমার সাথে যতোবার দেখা হয়েছে ততোবারই দেশের কথা জিজ্ঞেস করেছে, বাবা-মার কথা জিজ্ঞেস করেছে। এতো অল্প বয়সে মা ছাড়া থাকি কী করে, এই ভেবে উঁহু-আহা করেছে। অবশ্য এই বুড়িই একদিন 'বড়' প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাড়াহুড়ায় গাড়ি বেজমেন্টের খালি জায়গায় রেখে এসেছিলাম বলে সে তার লিপষ্টিক দিয়ে ড্রাইভিং সিটের কাঁচে লিখে রেখেছিলো, "don't park here, read the sign"। তারপর একটা বাঁকা তীর চিহ্ন যেটা ইণ্ডিকেট করছিলো বেজমেন্টের সেই 'সাইন'টাকে। আমি এর পরের অনেকদিন সেই 'কালিমা' মুছিনি, তক্কে তক্কে থেকেছি যখন বুড়ির গাড়িটা দেখবো এমন বেকায়দায় আর তখন অমোচনীয় কালি দিয়ে খাঁটি বাংলায় লিখে দেবো তার কথাগুলো।

পার্ক এভিনিউয়ের বাসায় রান্নার তেমন কিছুই মনে নেই, সবই ব্যাড সেক্টরে পড়ে গেছে। একদিন ইম্পরোভাইজ করতে গিয়ে মুগের ডাল রান্না করেছিলাম। ভালোই হয়েছিলো। তো চাইনিজ ফ্রাইপ্যানে রান্না করা সেই মুগডাল চুলার ওপর বসিয়ে গরম করে খেয়ে তারপর বেরিয়ে গিয়েছিলাম। বিকেলে যখন বাসায় ফিরে এসেছি তখন ঘরে ঢুকে দেখি ধূয়ায় একাকার। ভাগ্য ভালো রুমমেটদের একজন আমি বেরিয়ে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পরেই কী কারণে বাসায় ঢুকেছিলো! কড়াইটা আর ব্যবহার করা যায় নি। আমার যেদিন রান্নার ডেট থাকতো, আমি সবাইকে জিজ্ঞেস করতাম কে কী খাবে! একেকজন একেক খাবারের নাম বলতো। আমি টুকে রাখতাম, 'ঠিক আছে, তাই হবে' বলে। অবশেষে দেখা যেতো রাত ন'টা সাড়ে ন'টার দিকে ওয়েস্টফিল্ডের পাশের বার্গার কিং-এ নিয়ে গিয়ে সবাইকে একটা করে মেন্যু খাওয়াচ্ছি। এর পরে যতোবারই রুমমেটদের জিজ্ঞেস করেছি কে কী খাবে, তারা বলেছে, "কিছুই না, তুই সিম্পলী, দয়াকরে সাদা ভাত আর একটু ডাল রান্না কর। আর কিছু লাগবো না আমাদের।" বেচারাদের কপালে বেশিরভাগ সময়েই এই সাধারণ জিনিষও জুটতো না।

এখন আমি বেশ ভালোই রান্না করি। অন্ততঃ নিজের জন্য। নিজেই নিজের খাওয়া খেয়ে প্রশংসা করি। টুটুলের সেই প্রথম দিনের দেখানো খাবলাখাবলি রেসিপিতে ব্যবহার করা নানা বর্ণের পাউডারগুলো এখন সঠিক অনুপাতে ব্যবহার করতে পারি বেশিরভাগ সময়েই। মাঝে মাঝে অবশ্য এটা সেটা কম বেশি হয়ে খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে দেয়, কিন্তু ক্ষুধার রাজ্যে পুরো দুনিয়াটাই গদ্যময়। কিছুই স্বাদের কারণে ফেলনা যায় না। যে কারণে খাবার ফেলে দিতে হয় তা হলো, অনেক দিন থেকে ফ্রিজের জায়গা দখল করে রাখা। কখনো কখনো ঘরে খাওয়ার ইচ্ছে অথবা সময় কিংবা দুইটাই অনুপস্থিত থাকে। আবার কখনো এমনও হয় প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে কাৎরাই কিন্তু ঘরে খাওয়ার কিছুই থাকে না। যেমন আজকে, আমি যে কারণে ঘুমাতে পারছিনা তা হলো ক্ষুধা। আমার ভয়ানক ক্ষুধা লেগেছে। ঘরে ডিম আছে, বিস্কুট আছে। কিন্তু এই দুইটার একটাও খেতে ইচ্ছে করছে না। ভাবলাম একটা লেখা লিখে সময় কাটাই, ক্ষুধাটা মরে গেলে ঘুমিয়ে যাবো!

এই লেখাটা লেখার পেছনে আরও একটা কারণ আছে বটে। ফেইসবুকে শিপু তার ছবিতে করা আমার কমেন্টের একটা রিপ্লাই দিয়েছে। সেখানে সে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে যার একটা ফোঁটাও আমি মনে করতে পারছি না। বন্ধুবেষ্টিত হয়ে স্বর্ণালী সময় কাটিয়েছি, এই সময়গুলো আমার কাছে অনেক মূল্যবান। কোনো কিছুর বিনিময়েই আমি এই সময়গুলো হাতবদল করতে চাই না। কিন্তু স্মৃতির ব্যাড সেক্টরে পড়ে কতো ঘটনাই না হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে। এই লেখাটা লিখতে গিয়েও দেখলাম, অনেক কিছুই আমার অনুভূতিতে খুব শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আছে, আবার অনেক কিছুই দেখলাম শত চেষ্টায়ও মনে করতে পারছিনা। সে জায়গা গুলো একেকটা কালো ডট হয়ে আছে, কিছুই যেনো নেই ওখানে। পাছে এখানে উল্লেখিত টুকরো টুকরো ঘটনাগুলোও অমন একটা কালো ডট-এ পরিণত হয়ে যায়, এই ভয়েই ডিজিট্যালি টুকে রাখলাম সেই সময়ের অ্যানালগ আমাকে!


মন্তব্য

লীনা ফেরদৌস এর ছবি

Lina Fardows

হা হা হা , ঝাক্কাস লেখা!!! মুরগী রান্নার খাবলা খাবলী বর্ণনা শুনে যা রান্না জানতাম তাও ভুলে গেলাম। এর জন্য আপনাকে মাইনাস, হা হা হা

Lina Fardows

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভুলছেন তো কী হইছে? খাবলা খাবলি পদ্ধতিতেই শুরু করে দেন। নিজে না খেতে পারলে জনগণকে দাওয়াত করেন। কেউ না খেতে চাইলে তাদেরকে কষে মাইনাস দেন, তাও আমারে দেয়া মাইনাসটা ফিরায়া নেন আফা। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

'স্মৃতির ব্যাড সেক্টর' - উপমাটা বড়ই সৌন্দর্য হইছে। আপনার কপিরাইট করা না থাকলে এইটা আমার লেখায়ও ব্যবহার করতে চাই হাসি

লেখা পড়ে তৃপ্ত হলাম। তয় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের হুরীদের মাঝে রকেট উৎক্ষেপনের মতো বেরসিক কম্ম করার সুতীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। তারচে আপনি বরং বেহুঁশ হয়ে পড়তে পারতেন যেমন আমি পড়ছিলাম।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হুঁশে ছিলাম কখন যে বেহুঁশ হবো!
আর রেকট যখন উৎক্ষেপিত হয় তখন কন্ট্রোল টাওয়ারের আর কিছুই করার থাকেনা 'রজার' আর 'ওভার' করা ছাড়া! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আলমগীর এর ছবি

কী কারণে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করছেন বলেন তো?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
আলমগীর এর ছবি

তাইলে ওয়েলকাম ব্যাক।
মেম্বর না আসার কথা ছিল। কী খবর তার

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মেম্বর মনে হয় শিউর না এখনো। বলতেছিলো আলা ফাকিং বামা নাকি আসলেই একটা 'বাল'।

কাম কাম ব্যাকের সময় এখনো হয় নাই জনাব। দেখা যাক কী হয়! জীবন সাজাতে আর জীবন বাঁচাতে(!) স্কয়ারের তেমন অবদান না থাকলেও সেরেণ্ডিপিটির বড়ই প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে হায়! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

কীর্তিনাশা এর ছবি

লেখা অত্যন্ত জটিল রকমের ভাল হইছে। তবে .......

ধুগো'দার এত্ত বড় এনালগ অস্ট্রেলিয়া কাহিনীতে কোন শ্যালিকার আবির্ভাবের কথা নাই। ওটা'ও কি ব্যাড সেক্টরে পড়ে গেল??

ঝাতি ঝানতে চায়...... হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

আমি যে কারণে ঘুমাতে পারছিনা তা হলো ক্ষুধা। আমার ভয়ানক ক্ষুধা লেগেছে। ঘরে ডিম আছে, বিস্কুট আছে। কিন্তু এই দুইটার একটাও খেতে ইচ্ছে করছে না।

আহারে.......

মুশফিকা মুমু এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি আপনার রান্না করার এক্সপেরিয়েনস দারুন লাগল। আমি শুধু হলুদের গুরা, মরিচের গুরা আর ধনের গুরার গন্ধটা চিনি, আমার আম্মুর রান্না ঘরে কোনো মসলার কৌটাতে কোনো নাম নাই, আমি গন্ধ নিয়ে দেখি কোনটা ভাল লাগে, যেটা লাগে সেটা দিয়ে দেই। আমার একলা থাকতে হলে হয়ত এতদিনে রান্নায় পাক্কা হয়ে যেতাম নয়ত না খেয়ে মরতাম।
এই লেখার সিরিজ করে ফেলেন, আপনি অসে আর কি কি শিখলেন কাহিনী সব শুনি। দেঁতো হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সাবাশ। তুমি আমার চাইতে অনেক বেশি চেনো। আমারে নাম ছাড়া যে গুঁড়াই নাকের সামনে ধরো, কোনো লাভ নাই। সবই আমার কাছে 'গরম মশলা' মনে হয়। সেইজন্য আমি প্যাকেট থেকে সহজে ঢালি না, ঐভাবেই রাখি যাতে অন্ততঃ বুঝতে পারি এইবার কোন 'গরম মশলা'টা ঢাললাম। দেঁতো হাসি

অসি কাহিনী পুরা বয়ান করা যাবে না। কারণ তখন এক পর্যায়ে তুমিও চলে আসবা। আর তুমি আসলে আমি কিঞ্চিৎ পঁচানী খাবো। কারণ তোমার কথা লিখতে গেলে তোমাকে পঁচানো হবে, আর তোমাকে পঁচালে আমার কপালে খারাবী আছে। লীলেন্দা বলছে তুমি নাকি ইদানিং অনেক "ইশমাট" আর "হ্যাণ্ডশেং" হয়া গেছো! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মুশফিকা মুমু এর ছবি

তাইলে থাক!
আর আমি কবে "ইশমাট" আর "হ্যাণ্ডশেং" ছিলাম না? দেঁতো হাসি ইডানিং বেশি "ইশমাট" আর "হ্যাণ্ডশেং" হয়া গেসি দেঁতো হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

tuli এর ছবি

মিষ্টি খাবার পছন্দ হলে ডিমের হালুয়া বানিয়ে খাওয়া যায়।
আমার বাবাইর খুব পছন্দ এই জিনিসটা ।
চাইলে রেসিপি জানাতে পারি...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- রেসিপি জানাইয়া লাভ নাই বাউলপত্নী। নিজেই বানায়া ফ্রীজে ডিপ কইরা রাখেন। কোন্দিন যে বাসায় হানা দেই কওন যায় না! তখন নাই কইলে কইলাম খবরাছে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রণদীপম বসু এর ছবি

যাক্, ধুগো তাহলে শালীবিহীন পোস্টও দিতে জানে...!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

আমি এখনো শুধু
আলুভর্তা আর ডিম ভাজি করতে জানি মন খারাপ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

রান্না মেহেরের রানা... থুক্কু, রানা মেহেরের রান্না

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রানা মেহের এর ছবি

হিহিহিহিহিহি দেঁতো হাসি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আলুভর্তা, ডিম ভাজি আর ডাল চচ্চড়ি- এই তিন জিনিষ হইলে আমার আর কিছু লাগে না। কিন্তু সমস্যা হইলো, আলু সেদ্ধ করতে হবে, ডিমটা কড়াইয়ে তুলে দিয়ে ভাজতে হবে, তারো আগে পেঁয়াজ-রসুন-আদা-মরিচ দিয়ে কতোক্ষণ খাবলাতে হবে- বহুত ভেজালরে ভাই। আরো শর্টকাট কিছু পারেন কীনা দেখেন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"এখন আমি বেশ ভালোই রান্না করি।"
জর্ম্মনদেশে যাবো চিন্তা করতেছি। চিন্তিত
লেখা তো অতি উপাদেয়...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আসেন, আইসা মাস খানেকের লাইগা রাইন্ধা দিয়া যান। তারপরের লটে কে কে আসতে চান, জায়গায় দাঁড়াইয়া হাত তুইলেন ভাইসব। এ-ই সুযোগ, লাস্ট কল, ধুগোরে খাওয়াইয়া দেন যে যা পারেন, এনশাল্লা আখেরাতে বহোত ফায়দা হবে ভাইসব!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

উরি !
কি শখ...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

বিপ্রতীপ এর ছবি

ভাল্লাগলো... চলুক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ব্যাপক মজা পেলাম।

"নেক্সট টাইম সেইম কম্প্লেইন- টু হান্ড্রেড বাকস্!"

বুড়ির গাড়িতে কি লিখতে পেরেছিলেন?

আর পুরোপুরি ধূসর হওয়ার আগেই আরো যত লেখা আছে সেগুলো ডিজিটাইজড করে ফেলেন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পুলিশের ঐ হুমকীর পর যদি আমাদের এক্টিভিটিজ দেখতেন! দুইশ টাকার টেনশনে রাতের বেলা যে-ই হাঁটে, পা টিপে টিপে হাঁটে। কথা বলে ফিসফিস করে। কিন্তু ঐ যে চোঙায় ঢুকালেও কোনো এক প্রাণীর লেঞ্জা সিধা হয় না। আমাদেরও অবস্থা হয়ে গেলো একই রকম, বেশ কিছুদিন পরেই। অবশ্য আর হুমকী ধামকী খেতে হয় নাই। দেঁতো হাসি

তবে বুড়ি অনেক সাফার করছে। তার দরোজার সামনে খালি কোকের ক্যানটা, লাচ্ছি খেয়ে তার গ্লাসটা, আর একদিন তো আমি একটা তোতাপাখির পুতুলই তার দরজার হাতলে টাঙিয়ে রেখে এলাম। বুড়ি অবশ্য এর পরেও আমাকে দেখলেও আলাপ জুড়ে দিতো, আর আমিও মুখে তালমিস্রী হাসি ঝুলিয়ে বুড়ির সঙ্গে খাজুরা গপ্প করতাম। হাসি

বুড়ি আমাকে তার গাড়িতে লেখার সেই সুযোগ দেয় নাই। মনে হয় যখন তখন তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বড়োই অনীহা ছিলো। চোখ টিপি

লেখার যেই ছিরি, আর যে কই কই কী কী লেখা আছে কে জানে! দেখি খুঁজে টুজে পাইলে 0101-এ কনভার্ট করে ফেলবো নে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নিবিড় এর ছবি

ধুগোদা আপনার স্মৃতিচারণ ভাল লাগল চলুক সিরিজ করা যায় নাকি?


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ধন্যবাদ নিবিড়।

সিরিজের চিন্তাটা অবশ্য মাথায় ছিলো প্রথমেই। কিন্তু চা খাওয়ার বাতিক আছে বলে শিরোনামের শেষে আর অংক বসাই নাই। দেখি সামনে কখনো এইরকম ইচ্ছা আবার চাগাড় দিয়া উঠলে নামায়া ফেলবোনে আরেক খন্ড। হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

এনকিদু এর ছবি

চলুক


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

রান্নায় হাতেখড়ি

রান্নাশিক্ষা পর্ব

ভুল করে বেশি মরিচ দেয়ার পর

অবশেষে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত:
রান্না অপেক্ষা রুটি-বিস্কুট উত্তম

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রানা মেহের এর ছবি

অবশেষে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত:
রান্না অপেক্ষা রুটি-বিস্কুট উত্তম

অথবা পট নুডলস হাসি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নুডলসরে ইমপ্রোভাইজ কইরা বাঙ্গু-ইটালিয়ান স্টাইলে রান্ধি আমি। জিনিষটা এক্কেরেই মন্দ হয় না! বিরাট সাশ্রয়ী, সময় আর পয়সা- সব। চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রান্নার মতো একটা দারুণ আনন্দময় কাজরে লোকজন কেন যে এতো ভয় পায়!!
আমি রানতে দারুণ মজা পাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ঐরকম বসন্তের কুকিলের মতো রান্না করার হলে ব্যাপারটা আনন্দময়ই ভাইসাব। কিন্তু যখন রান্না না করলে পেট যাত্রাবাড়ির জ্যামের মতোন থাইমা থাকে, ঐ পরিস্থিতিতে রান্না যে কতোটা কষ্টময়- জিনিষটা হাড্ডিতে হাড্ডিতে টের পাওন যায়! মন খারাপ

নোটঃ এইখানে পকেটে দশ টাকার একটা নোট নিয়া মোড়ের দোকানে ইচ্ছেমতো পুরি সিঙ্গারা আর চা খাওয়ার সিস্টেম থাকলে জীবনেও আমি রান্না ঘরে যাইতাম না। আর মাছে-ছয়মাসে-বছরে একবার রাইন্ধা সকল দোস্ত বন্ধুরে কইতায়, "আসো জনগণ খাইয়া যাও। ক্যান যে তোমরা রান্নার মতো এতো 'ইজি' জিনিষটারে ডরাও বুঝি না!"
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নীড় সন্ধানী [অতিথি] এর ছবি

এইখানে পকেটে দশ টাকার একটা নোট নিয়া মোড়ের দোকানে ইচ্ছেমতো পুরি সিঙ্গারা আর চা খাওয়ার সিস্টেম থাকলে জীবনেও আমি রান্না ঘরে যাইতাম না।

বাঙালাদেশ কী মজার দেশ!! তাইতো আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় এত ভালবাসি হাসি

তানবীরা এর ছবি

আমি এর পরের অনেকদিন সেই 'কালিমা' মুছিনি, তক্কে তক্কে থেকেছি যখন বুড়ির গাড়িটা দেখবো এমন বেকায়দায় আর তখন অমোচনীয় কালি দিয়ে খাঁটি বাংলায় লিখে দেবো তার কথাগুলো।

আমি এটা প্রতিনিয়ত করি আর যত্তোদিন বিদেশ করব করে যাবো। জীবনটা যেনো ক্যামন হয়ে গ্যালো, বাংলাদেশরে খারাপ বল্লে ওদের সাথে ঝড়গা করি আবার ওদেরকে খারাপ বল্লে দেশের লোকের সাথে ঝড়্গা করি। সারা পিরথিবীই পরতিপক্ষ হইয়া গ্যালো।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এইত্তা হয় তাতাপু। মন খারাপ কইরেন না। বড় হইলে সব ঠিক হয়া যাবো। কিন্তু সেই বুড়ি তো আমার দেশকে খারাপ বলেনি, আমার প্রকৃতির ডাক চরমে ওঠায় যে আমি গাড়ি নিয়ে 'ইমার্জেন্সী ল্যাণ্ডিং' করেছি সেইটা সে আমলে নেয় নাই। আমার দুঃখটা সেইখানেই। অনেকটা সময় ধরে অপেক্ষা করেছি বুড়ির কোনো ইমার্জেন্সী ল্যাণ্ডিং-এর কিন্তু ভদ্রবুড়ি আমাকে সেই সুযোগটা দেয় নাই! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অনিকেত এর ছবি

ধুগো, খুব মজা পেলাম----আমার নিজের অনেক ঘটনার সাথে মিলে গেল--
খালি তফাৎ হল এইখানে যে, তুমি শেষমেষ ভাল 'রাধুনী' হতে পেরেছ---আমি যেই তিমিরে, সেই তিমিরেই-----

এইটাকে সিরিজ করার চিন্তাটা আসলেই মাথায় রেখো বস---

শুভেচ্ছা---

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ধন্যবাদ অনিকেত'দা। সিরিজ করার জন্য যে জিনিষের দরকার তা হলো আসলে সঠিক মালমশলা, পাইকারী 'গরম মশলা' না। হাসি

তারপরেও আপনি যখন বলছেন, দেখি মাথায় কখনো কিছু খেলে কীনা! চোখ টিপি

আমাকে রাধুনী না বলে খাওনী বললে হয়তো আরো বেশি যথাযথ হতো। তাও ব্যাপার না। সবই সই। দেঁতো হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

কল্পনা আক্তার এর ছবি

মজারু হয়েছে। ধুগোয়িত স্মৃতির বর্ণনা হাসি

............................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- তাতো বুঝলাম, কিন্তু আপনি যে বললেন পোলিশ পরী নিয়ে এদিকে রওনা দিবেন তার কী হলো শুনি? চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমিও কিন্তু রান্না পারি! ভাত, ডিম সিদ্ধ ও ভাজি, আলু ভর্তা এই কয় পদ মাত্র! হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আরে কন কী! অনেক পদ পারেন দেখি। এইবার এগুলারে শংকর করেন, ইম্প্রোভাইজ করেন, এর লগে তারে মিশাইয়া খাবলান কতোক্ষণ, দেখেন আরও কয়টা বাইর হয়! চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনিস মাহমুদ এর ছবি

একটা জিনিসই আমি রাঁধতে পারি, সেটা হল গরম পানি। আমার রান্না করা গরম পানি খেলে মনে রাখতে হবে।

উদ্ধৃতি: সুশীল জনগণ এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়াকে "পাদ" বলেই অভিহিত করেন।

জিনিসটির সঠিক ও শোভন সংজ্ঞা: বিপথে নির্গত ঢেঁকুর (সৌজন্য: সংসারে এক সন্ন্যাসী)

খুবই ভাল লেখা। এটা দিয়ে সিরিজ করার জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।

.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...

.......................................................................................
Simply joking around...

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রেনেট এর ছবি

খুবই চমতকার লাগলো। বিষয়বস্তু, লেখার ধরন, সবকিছুই। ক্লাসিক ধুসর গোধূলী চলুক
---------------------------------------------------------------------------
If your father is a poor man, it's not your fault ; but If your father-in-Law is a poor man, it's definitely your fault.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ধুসর গোধূলি এর ছবি
ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

কয়েক ভাগে পড়লাম লেখাটা। পুরনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটা সময় কী যে দিন গিয়েছে! প্রবাসে প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়, তাই ভাগে ভাগে পড়া।

রান্না করতে পারি মোটামুটি ভালই। তবে সেটা আজকের জ্ঞান। গতকালের কথা অনেক দিনের পুরনো ইতিহাস।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মনে করেন আমরা যারা আছি বায়ে খেদানো মায়ে তাড়ানো, তারা দেশে গিয়া "সচল ভাত ও খাবারায়তন" নামে হোটেল ব্যবসা খুইলা বসলে কেমন হয়? ওয়েটার নিয়া টেনশন নাই, মার্কেটিং নিয়াও না, সাইনবোর্ড লেখার জন্য তো খাট্টুনিশ আছেই। সব জায়গায়ই তো লুক আছে আমাগো। চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি

আমি পড়ি নাই।

=========================================
অনিকেত প্রান্তরে ভেসে বেড়াই

'

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ লেখা ধুগো'দা। খুবই মজা পাইলাম। সেইসাথে খুব ভালোও লাগতেসে যে আপনার "লেখালেখির খরা" অবশেষে কাটসে।

আমি ভাত, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি, ডিম ভর্তা, চা, নুডলস জাতীয় রান্নাবান্না টুকটাক পারি। মাঝে মাঝে বাসায় যখন একা থাকতে হতো আগে (দুইতিনদিনের জন্য হয়তো), আমার তো রান্নাঘরে ঢুকতেই ইচ্ছা করতো না। মনে হতো না খেয়ে থাকি, অথবা পাউরুটির উপর দিয়ে চালাই। বেশিরভাগ সময় অবশ্য তাই করতাম। বৈদেশে প্রতিদিন রান্নাবাটি করে খাওয়া যে কী বিশাল পেইনের কাজ, সেইটা বুঝলাম, এবং আপনার প্রতি সমবেদনা জানাইলাম খাইছে

বেশ ক'মাস আগে আমার মেসেঞ্জারের ডেসক্রিপশন ছিলো - "অ্যানালগ ম্যান ইন আ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড" দেঁতো হাসি

ব্যাড সেক্টর রিমুভ করেন, বা রিপেয়ার করেন। আধুনিক যুগ, সবই সম্ভব হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখালেখির খরা তো কাটে নাই বস। দাবড়ানির উপর আছি, সেটা হয়তো আপনি টের পাইছেন। জবাবও দিবার পারতাছি না! হাসি

পাউরুটি জিনিষটা আমার চোখের বিষ, কিন্তু খাইতে হয় রে ভাই, কিচ্ছু করার নাই। বাটে পড়লে সিংখ মশাইও পাউরুটি খায়।

আধুনিক যুগ আইসা পড়ছেনি? পুরা চেসিস বদলানোর কোনো সিস্টেম নাই আধুনিক যুগে? হাসি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখা পড়েই বুঝসি "খরা" কাটসে। দাবড়ানির উপর থাকার কারণে হয়ত টাইম পাইতেসেন না, কিন্তু সেইটা আলাদা ব্যাপার। আর জবাব দেয়া নিয়া আপনে বস একদমই টেনশন কইরেন না তো! এইটা কোন ব্যাপার?! ইমার্জেন্সি কিছু তো আর ছিল না হাসি

পাউরুটি খাইতে আমারও কেন যেন ভাল্লাগে না, তবুও ঠেলায় পড়ে মাঝে মাঝে আর কি... মন খারাপ

পুরা চেসিস বদলায়া কী করবেন শুনি! চিন্তিত

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- পারুটি হইলো একটা জঘণ্য জিনিষ, তারপরেও এইটাই গলাধঃকরণ করা লাগে, মোড়ের দোকানে তেল ছাড়া পরোটা পাওয়া যায় না যে! মন খারাপ

চেসিস বদলায়া ফেলবো, কারণ পুরান জিনিষ ঝামেলা করে। আ হোল নিউ স্টার্ট, যা আছে কপালে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তানভীর এর ছবি

আমি হইলাম রান্নাবান্নার ব্যাপারে পিপুফিশো মানুষ। এই খাবলা-খাবলি রান্নাও তাই কপালে জুটত না। আপনে সেইদিক থিকা অনেক ভাগ্যবান !

লেখা মজারু হইছে। তয় হিউস্টনরে অকারণ পচানির তেবরো নিন্দা জানাই। রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র আসলে ফ্লোরিডায়, হিউস্টনে আছে শুধু কন্ট্রোল টাওয়ার।

কনফুসিয়াস এর ছবি

মজা পেলাম। এই ধরণের ব্যাড সেক্টরিয়ান স্মৃতি আমারও কিছু আছে, দৌড়ের ওপর থাকার কারণে সম্ভবত স্মৃতিগুলা পার্মানেন্ট জায়গা বানাবার টাইম পায় নাই।
এনিওয়ে, আমিও একসময় রান্না ভালই পারতাম, গত দুই বছরে অবশ্য এই জিনিস প্রায় ভুলতে বসেছি বউয়ের কল্যাণে। একসময় কেউ একজন আমার রান্না করা মুরগী খেয়ে আমাকে নোবেল প্রাইজ কেড়ে এনে দিতে চেয়েছিলো, এই কথাটা এখন আমার বউ একদমই বিশ্বাস করে না! মন খারাপ
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- কুংফু বস, সংসদে বিরোধী দলের কাজ কী? সরকারী দলের কোনো কাজই বিশ্বাস না করা। আপনে যে মুরগীতে নুবেল পাইছিলেন এটা বিশ্বাস না করলে আপনেরই মঙ্গল বস। কীদর্কার খাল কেটে নীল তিমি আনার! পরে দেখা যাবে পার্টটাইম না একেবারে ফুল টাইম ডিউটি দিতে হচ্ছে নুবেল প্রাইজের পিছনে। দেঁতো হাসি

ব্যাড সেক্টরিয়ান জিনিষগুলো রিকভার করে ফেলুন যতোমং শীঘ্রমং। একটা সময় দেখবেন পুরোই হারিয়ে গেছে। খুঁজে পাওয়া যাবে না আর! দৌড়ের উপর বস থাকাই লাগবে, এটা ব্যাড সেক্টর না, পার্মানেন্ট অমোচনীয় কালিতে লেখা হয়ে গেছে আমাদের কপালে। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।