ডিজিটাল ডিভাইড আর শিক্ষানীতি

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: রবি, ২৪/০৫/২০০৯ - ৭:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখাটার কথা ভেবেছিলাম অনেক আগেই - যখন সচলে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে লেখা হচ্ছিল। আমার ধারণা সমস্যা অনেক গোড়ায়, তাই গোড়া থেকেই সমাধান শুরু হওয়া উচিত।

অনেক বছর আগের কথা। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে নতুন কম্পিউটার এসেছে, ঘরের দরজাও খোলা। দেখি ভেতরে বেশ কয়েকজনে বসে কম্পিউটারে কিছু কাজ করার চেষ্টা করছে। টাইপরাইটার আগে দেখেছি, কম্পিউটারে টাইপ করতে অন্তত পারব, এটুকু বিশ্বাস নিয়ে বসে পড়লাম। আমার এক বন্ধু কিছুটা কম্পিউটার লিটারেট হয়েছে, সে ক'দিন হল ওই ঘরে আসা-যাওয়া করছে। সে আমাকে দেখাল কিভাবে বেসিক প্রোগ্রাম লিখতে হয়। সে আবার কোনো এক স্যারের কাজ করা দেখে দেখে শিখেছে। হেল্প ফাইল দেখে দেখে দুজনে মিলে বেসিক ব্যবহার করে ছবি আঁকা শিখলাম। নিজে শেখার মজাই আলাদা। শেষে যখন বুঝলাম মোটামুটি যেকোনো জ্যামিতিক ছবি আঁকতে পারছি তখনই ঘটল বিপর্যয়। স্কুলের শিক্ষকেরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে ওই ঘরটা তালাবন্ধ থাকবে, কারণ কম্পিউটার "দামী জিনিস", বাচ্চারা তা নিয়ে "খেলাধূলা করলে" তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কম্পিউটার শিখেছি, কিন্তু শিক্ষকদের ওই মানসিকতার কোনো পরিবর্তন দেখিনি। তারা মনে করেন, ছাত্রদের কম্পিউটার আর ইন্টারনেট নিয়ে ছেড়ে দিলে তারা কোনো কাজের কাজ করে না। আমি এখনও মনে করি, এটাই আমার ছাত্রাবস্থায় শিক্ষার অপূর্ণতার সবথেকে বড় কারণ। রিসোর্স থাকতেও আমি সব রিসোর্সে ঠিকমত অধিকার পেতাম না।

****

আমাদের দেশে এখন এক অদ্ভূত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সফটওয়ার শিল্পের কল্যাণে একশ্রেণীর লোক সৃষ্টি হয়েছে যারা কম্পিউটার তথা ইন্টারনেটে যথেষ্ট সময় কাটায়। তারা এর উপযোগিতাও বোঝে। তাই তারা তাদের আশেপাশে সবাইকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে উৎসাহও দেয়। আরেকটা বিরাট দল আছে যারা এখনও কম্পিউটার বা ইন্টারনেট দেখেনি, তাই তারা এর গুরুত্বও বোঝে না। দিনে দিনে যত ইন্টারনেটের আকার, দক্ষতা ও উপযোগিতা বাড়বে, তত প্রথম শ্রেণীর লোকজনে সহজে তথ্য ও জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। অপরদিকে, দ্বিতীয় দলে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়বে। যেহেতু আমাদের সমাজ আস্তে আস্তে শিল্পভিত্তিক থেকে পরিবর্তিত হয়ে জ্ঞানভিত্তিক হয়ে যাবে তাই তখন আমাদের সমাজের একটা বড় অংশ চির-অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, যেমনটা ঘটেছিল শিল্পবিপ্লবের ইউরোপে কৃষকদের ক্ষেত্রে। কিন্তু এই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি থেকে মুক্তি কোথায়?

****

এই ডিজিটাল ডিভাইড নিয়ে ভেবেছিলেন সুগত মিত্রও। ১৯৯৯ সালে দিল্লীতে তিনি একটি সফটওয়্যার বহুজাতিকের অফিসের শিক্ষানীতি নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখেন তার বহুতল অফিসের বাইরে এক বিশাল বস্তি এলাকার শিশুরা প্রায় কোনো শিক্ষার সুযোগই পায় না। আর স্কুলের জন্য কম্পিউটার বরাদ্দ করলে সেই কম্পিউটার তালাবন্ধ ঘরেই পড়ে থাকবে। সরকারকে দিলে পুলিশ স্টেশনের মত করে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তাই ব্যতিক্রমী কিছু ভাবতে হত। তিনি নিজে স্বপরিকল্পিত শিক্ষানীতির প্রবক্তা ছিলেন। এই নীতি বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য উনি একটা নতুন প্রোজেক্ট উদ্ভাবন করলেন - যার নাম দিলেন হোল ইন দ্য ওয়াল (Hole in the wall) প্রোজেক্ট। তিনি অফিসের দেওয়ালে একটা গর্ত করে তাতে একটা কম্পিউটার কিয়স্ক (kiosk) রেখে দিলেন। সাথে রাখলেন ওয়েবক্যাম - বাচ্চাদের আচার-আচরণ লক্ষ্য করার জন্য। বড়রা যাতে এতে অধিকার স্থাপন না করতে পারে সেজন্য এগুলো বাচ্চাদের মত উচ্চতায় রাখা হল। মাউসটা একটা খোপের মধ্যে এমনভাবে রাখা হল যাতে বাচ্চাদের হাতই সেখানে ঢুকতে পারে। স্বভাবতই সেটা নিয়ে বস্তিবাসী বাচ্চারা খেলতে শুরু করল। খেলতে খেলতে তারা খুব দ্রুত কম্পিউটার ব্যবহার করতে শিখে গেল। উনি এরপরে কম্পিউটারের সাথে জুড়ে দিলেন হাই-স্পিড ইন্টারনেট। বস্তিবাসী ছেলেরা দ্রুত শিখতে শুরু করল, তাদের ক্লাসের পড়াতেও দ্রুত উন্নতি শুরু হল - বিশেষত ইংরেজী, অঙ্ক আর বিজ্ঞানে। এরপরেও এই পরীক্ষা অনেকবার ভারতের (পরে কম্বোডিয়াতেও) অনেক গ্রামে ও বস্তিতে চালানো হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বাচ্চারা কয়েক ঘন্টায় কম্পিউটার চালানো শিখে ফেলছে। তার পরে ইন্টারনেট - আরও পরে গুগল। তার পরে জ্ঞানের ভান্ডার হাতের সামনে পেয়ে যাচ্ছে। অনেকে প্রচুর গেমও খেলছে, গুগলের পাশাপাশি ডিসনি ডট কম তাদের প্রিয় সাইট। তার বক্তব্যে -

"হঠাৎ করে দেখা গেল তারা তাদের শিক্ষকদের থেকে বেশী জেনে ফেলেছে। শিক্ষকদের ক্লাসে এমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে যার উত্তর তারা নিজেরা জানেন না। কয়েকমাস আগে আমি নিজেকে একরকম চ্যালেঞ্জ করে তামিলনাডুর একটা গ্রামে কম্পিউটার কিয়স্কে ডি-এন-এ সম্পর্কিত অনেক ডকুমেন্ট রেখে দিলাম। আমার ধারণা ছিল ৬-১২ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষার ডকুমেন্ট অপ্রয়োজনীয় মনে হবে ও তারা এর কিছুই বুঝবে না। কিন্তু তিন মাস পরে, তাদের ওই ডকুমেন্ট-সংক্রান্ত বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে দেখলাম অন্তত ৩০% বিষয়ে তারা জ্ঞান অর্জন করেছে। আর তাও সব ইংরেজীতে পড়েই। "

মজার কথা, দিল্লীর বস্তির বাচ্চারা কিন্তু কম্পিউটারের টার্মগুলোই তখনও শেখে নি, তারা বরং নিজেদের মত কিছু কিছু নাম দিয়ে এগুলোকে চিহ্নিত করেছে। মাউসের নাম দিয়েছে "সুই" (সূচ) আর আওয়ারগ্লাসের নাম দিয়েছে ডম্বরু (ডুগডুগি)। তাদের বক্তব্য হল -

"যখন কম্পিউটার কোনো কাজে ব্যস্ত হয় তখন "সুই" থাকে না, তা "ডম্বরু" হয়ে যায়।"

পরীক্ষার কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ও চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ ছিল। প্রথমত, ইংরেজী বা অন্য বিজাতীয় ভাষা কোনোভাবেই শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা হয় না - যদি বাচ্চাদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরী করা যায়। প্রথমদিকে উনি হিন্দিতে কিছু লেখা ও লিঙ্ক বানিয়ে ডেস্কটপে রেখে দিতেন, যাতে থাকত কিছু হিন্দি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক। দেখা গেল বাচ্চারা সেসব পাত্তাই দেয়নি, তারা সরাসরি ইংরেজীতেই ইন্টারনেট সার্ফ করে গেছে। সব ইংরেজী শব্দের মানেও তারা বোঝে নি, কিন্তু ধীরে ধীরে কার্যকরী শিক্ষা পেয়ে গেছে তা থেকে। যেসব অঞ্চলের বাচ্চারা কিছুটা স্কুলশিক্ষা পেয়েছে, তারা ডিকশানারিও বের করে ফেলেছে ইন্টারনেট থেকে।

দ্বিতীয়ত, এদের শিক্ষাগ্রহণের পদ্ধতিটাও অন্যরকম। প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কার্যত কিছু লিডার তৈরী হয়ে যায় ভিড়ের মধ্যে থেকে। কেউ কেউ তাড়াতাড়ি শিখতে পারে, তারা কাজ করে যায়। কেউ কেউ ব্যাপারটা ভাল বোঝাতে পারে, তারা ভিড়ের উৎসুক জনতাকে বুঝিয়ে চলে। কেউ বা আবার দেখাশোনা করে যাতে সবাই কিছুক্ষনের জন্য বস্তুটা ছুঁতে-ধরতে পারে। দল-বেঁধে শিক্ষাগ্রহণের এই পদ্ধতি স্কুলেও আছে - কিন্তু স্কুলে তা বাইরে থেকে শেখানো হয়। এখানে একই পদ্ধতি নিজে থেকেই বাচ্চারা তৈরী করে নেয়।

এই পরীক্ষাগুলোর ভিত্তিতে উনি প্রস্তাব করেন যে একবিংশ শতকে উন্নয়নশীল বিশ্বে যেহেতু গ্রামাঞ্চলে ও বস্তি এলাকায় উপযুক্ত শিক্ষকের ও বইপত্রের অভাব বড় হয়ে দেখা যেতে পারে, তাই কম্পিউটারের মাধ্যমে কার্যকর শিক্ষা দিয়ে সম্পূর্ণ স্কুল-সিস্টেমের বাইরেও শিক্ষিত জনসাধারণ গড়ে তোলা যায়। অনেকেই মনে করেন শিক্ষকের ও স্কুলের অভাব কম্পিউটার দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। সুগত মিত্রের দাবী -

"যদি কোনো শিক্ষককে কম্পিউটার দিয়ে প্রতিস্থাপিত করাই যায় - তাহলে করাই শ্রেয়। ন্যূনতম শিক্ষার অধিকার পেতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেখানে কোনো লাল-ফিতে ছাড়াই কম খরচে যদি তার ৩০% শিক্ষাও সাধারণ জনগণের মধ্যে আনা যায়, তাহলে তা-ই কেন নয়? শুধু তাই নয়, ছাত্ররা ঝটপট শিখতে শুরু করলে দ্রুত শিক্ষকেরাও শিখতে বাধ্য হবেন - শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে"।

বর্তমানে দিল্লীতে চল্লিশ জায়গায় এরকম "হোল" বসানো হয়েছে। হায়দ্রাবাদে বসানো হয়েছে গোটা দশেক। পরের পদক্ষেপ - প্রত্যন্ত গ্রামে একে নিয়ে যাওয়া ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার পথে এই মুক্ত ও দলবদ্ধ স্বপরিচালিত শিক্ষাই প্রথম অস্ত্র হতে পারে উন্নয়নশীল যেকোনো দেশে। আর এই ডিভাইড দূর না করতে পারলে ই-কমার্স বা ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেলফ-লার্নিংও দেশে আনা সম্ভব নয়। যে কোনো মূল্যে এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে কার্যকরী শিক্ষা প্রণয়ন না করতে পারলে ভবিষ্যতে তার জন্য বড় ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।

একটা ট্রিভিয়া - সম্প্রতি স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের লেখক বিকাশ স্বরূপ বলেছেন তার লেখার অনুপ্রেরণা ছিল সুগত মিত্রের এই হোল ইন দ্য ওয়াল প্রোজেক্ট। প্রত্যুত্তরে সুগত মিত্রের দাবী - উনি নিজে লিখলে বইটার নাম দিতেন স্লামডগ নোবেল লরিয়েট - কারণ তার প্রোজেক্টের মূল লক্ষ্য ছিল বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া - বড়লোক বানানো নয়।

সূত্র - টেড টক

সংক্ষেপে আরেকটা ভিডিও হোল ইন দ্য ওয়াল ও স্লামডগ মিলিয়নেয়ার নিয়ে নিয়ে।

সাক্ষাতকার - প্রথমদ্বিতীয় লিঙ্ক। স্লামডগ মিলিয়নেয়ার নিয়ে এখানে


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

ইনফরমেশনে এক্সেস খুব দ্রুত-ই মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে চলে আসবে বলে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশেও "Hole in the wall" এর মত প্রজেক্টের প্রয়োজন রয়েছে।

সিরাত এর ছবি

দারুন লাগলো! আপনি প্রথম দুই প্যারায় যা বলেছেন বিল গেটস সম্পর্কে ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল আউটলায়ার্সে তাই বলেছেন, পার্থক্য হল, গেটস নানাভাবে এক্সেস পেয়েছিলন।

এটাকেও ১০,০০০ ঘন্টার মধ্যে ফেলে দেয়া যায়, সঙ্গে মেলানো যায় রবীন্দ্রনাথের আনন্দের সাথে শিক্ষা! বাচ্চারে এভাবে নিজেরাই ব্যাপক সময় দিয়ে নিজেদের ডেভেলপ করতে পারবে।

দুঃখ লাগে যদিও এই পিছিয়ে পড়া বিশাল শিক্ষকগণ এবং আগের প্রজন্মের জন্য; এদের বাঁচাবে কে? প্রমথ চৌধুরির মতানুযায়ী তো এদের পিষে ফেলা হয়েছে পুরোনো শিক্ষাব্যবস্থায়!

দময়ন্তী এর ছবি

আহা আমি অনেকবার ভেবেছি সুগত মিত্র'কে নিয়ে লিখব৷ কিন্তু তালেগোলে আর হয় নি৷
অনেক ধন্যবাদ দিগন্ত৷
------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

তানভীর এর ছবি

ভালো লেখা। ধন্যবাদ দিগন্ত।
ভারতে গ্রামের কৃষকদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাজার ও কৃষিতথ্য জানার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আজাদ আরেকটা প্রজেক্ট চালু করেছিলেন শুনেছিলাম। ওটা সম্পর্কেও বিস্তারিত জানার আগ্রহ রইলো।

হিমু এর ছবি

স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে আমাদের এক শিক্ষিকা ছিলেন মিসেস ত্রিবেদী। তিনি আমাদের সমাজবিজ্ঞান পড়াতেন। সমাজবিজ্ঞানের একটা বড় অংশ ছিলো ইতিহাস। মিসেস ত্রিবেদী প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকেছিলেন এক প্রলয়ঙ্করী মোটা বেত নিয়ে। থমথমে মুখে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, তাঁর পূর্বপুরুষ তিনটি বেদ মুখস্থ করেছিলো বলে তাঁর পদবী ত্রিবেদী। এরপর তাঁর শিক্ষা পদ্ধতির সাথে পরিচয় ঘটলো আমাদের, সেটি টিচার্স ট্রেইনিং ইনস্টিটিউটের গুণে পুষ্ট, নাকি তাঁর পূর্বপুরুষের বেদ মুখস্থ করার অভিজ্ঞতাসিঞ্চিত, তা বলা মুশকিল। বাড়ি থেকে একটা পাতা পুরো ঠোঁটস্থ করে আসতে হবে, তিনি ক্লাসে এসে দৈবচয়ন করে পাকড়াও করবেন কাউকে, যে পারবে না তাকে হাতের তালুতে বেত মারা হবে। মিসেস ত্রিবেদী ছোটখাটো ছিলেন, কিন্তু আসুরিক শক্তি দিয়ে মারতেন। আমি একবারই তাঁর প্রহারের শিকার হয়েছিলাম, আজও তাঁর কথা আমার মনে আছে, এবং শ্রদ্ধা বলতে যে জিনিসটা বোঝায়, তাঁর সম্পর্কে সেটা আমি আমার মনে পোষণ করি না। পরবর্তীতে আমি নিজের আগ্রহে নিজের দেশ, ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর নানা ইতিহাস মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে পড়েছি, আব্রাহাম ইরেইলির "জেম ইন দ্য লোটাস" বা "এমপেররস অব দ্য পিকক থ্রোন" একটানা পড়ে গেছি রূদ্ধশ্বাসে, মিসেস ত্রিবেদীর বেতের ভয়ে গেলা ইতিহাস হেগে বার করে দিয়েছিলাম সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার সময়ই।

শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কথা শুনলেই আমার কেবল মিসেস ত্রিবেদীর কথা মনে হয়। তিনি তাঁর ক্লাসের কিশোরদের মনে ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টির কোন চেষ্টাই করেননি, কোন ইন্টারঅ্যাকটিভ শিক্ষাপদ্ধতি প্রয়োগের কথা ভেবেও দেখেননি। আমাদের স্কুলে যদি তখন প্রাচীরের গায়ে এক নামগোত্রহীন কম্পিউটার থাকতো, মিসেস ত্রিবেদীর ক্লাসে একটা মাছিও হয়তো বসে থাকতো না।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটির কথা শুনলেই আমার কেবল মিসেস ত্রিবেদীর কথা মনে হয়। তিনি তাঁর ক্লাসের কিশোরদের মনে ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টির কোন চেষ্টাই করেননি, কোন ইন্টারঅ্যাকটিভ শিক্ষাপদ্ধতি প্রয়োগের কথা ভেবেও দেখেননি।
....................

আমারও স্কুলের সেই ত্রিবেদীদের কথা মনে পড়ে। গরু পিটিয়ে মানুষ করাটা যারা কর্তব্য মনে করেন।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

পুতুল এর ছবি

একটা ভাল আলোচনা শুরু করার জন্য দিগন্তদাকে ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ দিগন্ত
আমার কিছু কথা অনেকদিন থেকে কাউকে বোঝাতে পারছিলাম না নিজের ভেতরে কথাগুলোকে গোছাতে না পেরে

এই লেখাটা পড়ে সেই কথাগুলো একেবারেই গুছিয়ে ফেললাম

০২

প্রায় কাছাকাছি একটা কাজ করছি আমি এখন। শুরু করেছি
বাংলাদেশের গ্রামীণ শিশুদের কাছে আইসিটি নিয়ে যাওয়া...

অনেক বিষয় অনেক সহজ হয়ে উঠল এই লেখাটা পড়ে

নিবিড় এর ছবি

দারুন দরকারী এই আলোচনার জন্য ধন্যবাদ চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অনিকেত এর ছবি

দিগন্ত, খুব খুবই চমৎকার লেখা। এই নিয়ে আমি পিবিএস এ একটা ডকু দেখেছিলাম। মাঝে ভুলে গেছিলাম। অনেক ধন্যবাদ এই রকম আশা জাগানিয়া একটা লেখার জন্যে---

শুভেচ্ছা

তানবীরা এর ছবি

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার পথে এই মুক্ত ও দলবদ্ধ স্বপরিচালিত শিক্ষাই প্রথম অস্ত্র হতে পারে উন্নয়নশীল যেকোনো দেশে।

ঠিক তাই। চমৎকার লেখা।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ভুতুম এর ছবি

সুন্দর লেখা। বাংলাদেশে এরকম উদ্যোগ এই মুহূর্তে খুব দরকার।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শিক্ষাবিষয় নিয়ে আলোচনায় এতদিন গৌতমের লেখাগুলোর পেছন পেছন হাঁটতাম। আজ থেকে আপনারও পিছু নিলাম।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয় দিগন্ত, অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটা বিষয়কে সামনে আনার জন্য।
*************************************

আমাদের ছেলেকে জিজ্ঞেস করি, তোমাদের স্কুলে লাইব্রেরী নেই? ছেলের উত্তর, আছে তবে সেটা সবসময় তালাবদ্ধ থাকে। এই উত্তরে আমি অবাক হই না। বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই লাইব্রেরী নামে যে কয়েক আলমারী বই থাকে সেগুলো সব সময় তালাবদ্ধ থাকে। শিক্ষকদের যুক্তি, বাচ্চাদের জন্য খুলে দিলে বই ছিঁড়বে, নষ্ট করবে, চুরি করবে। আমার বোধে আসেনা কোনটি বইয়ের উত্তম ব্যবহার - বাচ্চারা পড়ে নষ্ট করলে নাকি কেউ না পড়ে ইঁদুর-উইপোকার পেটে গেলে!
*************************************

আশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে "ব্রডকাস্টিং ইউনিট" দেয়া শুরু হয়। নিশ্চয়ই সব স্কুল এই জিনিষটি পায়নি, কিন্তু যারা পেয়েছে তারা এর নূন্যতম ব্যবহারও করেনি। রেডিও শুনে বাচ্চারা যে শিখতে পারে এই ব্যাপারটাই আমাদের মহান শিক্ষকেরা মানতে চাননি। আরো পরে স্কুলের কেনা/পাওয়া কম্পিউটারগুলো প্রধাণ শিক্ষকের কক্ষ বা অফিস কক্ষের শোভাবর্ধন করেছে। কারো কোন কাজে লাগেনি। এক-আধটা স্কুলে হয়তো কম্পিউটারগুলো টাইপরাইটারের হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
*************************************

রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপগুলো নেয় তার মধ্যে ভালো অনেক কিছুই থাকে, কিন্তু প্রয়োগ পর্যায়ে সেগুলোর অবস্থা কী তা কমই খতিয়ে দেখা হয়। প্রদত্ত সুযোগের ফলে কাম্য উন্নয়ন হচ্ছে কিনা তা যাচাই করা হয় না। প্রায় কাছাকাছি হাল হয় বেসরকারী উদ্যোগগুলোরও। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সুফল সামষ্টিকক্ষেত্রে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারেনা।
*************************************

বই পড়লে বা কম্পিউটার ঘাঁটলে যে আখেরে লাভ হয় এই সত্য বোঝার মত জ্ঞান আমাদের শিক্ষকদের থাকলেও তারা মানতে চান না। সমস্যাটা "কালচারাল"। শিক্ষা গ্রহনের সাথে সাথে শিক্ষাকে ধারণ করতে না পারলে "শিক্ষার আলো" কোথাও পৌঁছাবে না।
*************************************

যে দেশে জীববিজ্ঞানের ক্লাশে এক রকমভাবে আর ধর্মশিক্ষার ক্লাশে আরেক রকমভাবে প্রাণের উৎপত্তির কথা বলা হয়, সেখানে শিশুরা ছোটবেলা থেকে শিখে যায় যা শেখানো হচ্ছে তার সব বিশ্বাস করার দরকার নেই বা পালন করার দরকার নেই। তারা শিখে যায়, ক্লাশের পড়া হচ্ছে পরীক্ষা পাশের জন্য; বাস্তবজীবনে চলতে হলে বাতাস বুঝে হাল ধরতে হবে। অনেকটা "রোটিকে লিয়ে লাল ঝাণ্ডা, চুনাবকে লিয়ে পাঞ্জা"র মত।
*************************************

এমন সব কারণেই শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে বার বার শেখানো "শিশুকে শারিরীক শাস্তি দেয়া যাবে না" কথাটি আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষকের মনে থাকে না। বিএড/এমএড পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথে দৃশ্যপটে কুৎসিত সব শারিরীক শাস্তি হাজির হয়। তাই হিমুর মাথায় ইতিহাস আর ঢোকেনা, ঢোকে বেতের হাত থেকে বাঁচার কৌশল। আর স্মৃতিতে ইতিহাস না থেকে শুধু বেত থাকে। কোন এক পূর্বপুরুষ চারটা বেদের মধ্যে তিনটা মুখস্থ করে থাকলেও অধস্থন পুরুষের কারো মনে-মাথায় বেদের শিক্ষা আর পৌঁছায়নি। বেদ শুধু নামের লেজেই টিকে আছে। শিক্ষকতার চাকুরী করলেই যে শিক্ষক হওয়া যায় না এটা কে বুঝবে?
*************************************

শিশুদের শিক্ষার ব্যাপারে কোন রকম এক্সপেরিমেন্ট চলবে না। এই কথার মানে হচ্ছে আমাদের দেশের মত কিছুদিন পর পর পদ্ধতি, কারিকুলাম, মূল্যায়ণ ইত্যাদি আগা-পাশ-তলা বদলানো যাবে না। এতে বিপুল সংখ্যক শিশুকে ভুল শিক্ষার বলি হতে হয়। সারাটা জীবন তাদের এই ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হয়। "মুক্ত ও দলবদ্ধ স্বপরিচালিত শিক্ষা"র ব্যবস্থা নিলে ব্যাপারটা আমাদের দেশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কিণ্ডারগার্টেন বা কওমী মাদ্রাসার মত লাগামছাড়া যেন হয়ে না যায়। কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রন না হোক নির্দেশনা ও পরামর্শ না থাকলে অনেক শিশুকেই ভুল শিক্ষার জের সারা জীবন টানতে হবে।
*************************************

মূলধারার শিক্ষার গুরুত্ব ও দাবীকে বিন্দুমাত্র না কমিয়ে কম্পিউটার/ইন্টারনেটের মাধ্যমে "ইনফোটেইনমেন্ট" বা "এডুটেইনমেন্ট"-এর ব্যবস্থা করাই উত্তম। এতে শিশুরা যেমন এ'ব্যাপারে আগ্রহী হবে তেমনভাবে কম্পিউটারও আস্তে আস্তে মূলধারার শিক্ষায় ঢুকে যাবে।
*************************************

আমি যদি আমার সামনে থাকা সুযোগটা না নেই তাহলে নিশ্চিতভাবেই অন্য কেউ সুযোগটা নিয়ে নেবে। সুযোগকে অবহেলা করার মত বিলাসিতা কি আমাকে মানায়?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাইফ এর ছবি

বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই লাইব্রেরী নামে যে কয়েক আলমারী বই থাকে সেগুলো সব সময় তালাবদ্ধ থাকে।

আপনার সাথে একমত @ ষষ্ঠ পাণ্ডব। স্কুলের লাইব্রেরীতে অনেক বই থাকা সত্বেও মনে পড়ছে না ৫টার বেশী বই পেয়েছিলাম কিনা।

আর শিক্ষকদের কথা কি বলব, তারা টেকনোলজির নাম শুনলেই প্যান্ট খারাপ করে ফেলেন, শিখবেন কিভাবে তারা নতুন জিনিষ? আর কোন জিনিষ যে মুখস্ত না করে বোঝা সম্ভব, তা তো তারা জানেনই না।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার পথে এই মুক্ত ও দলবদ্ধ স্বপরিচালিত শিক্ষাই প্রথম অস্ত্র হতে পারে উন্নয়নশীল যেকোনো দেশে। আর এই ডিভাইড দূর না করতে পারলে ই-কমার্স বা ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেলফ-লার্নিংও দেশে আনা সম্ভব নয়। যে কোনো মূল্যে এখন কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে কার্যকরী শিক্ষা প্রণয়ন না করতে পারলে ভবিষ্যতে তার জন্য বড় ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।

একমত@ দিগন্ত।

খুব জরুরি কথাগুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। চলুক


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

স্বাধীন এর ছবি

দিগন্ত, খুবই চমৎকার লেখা।

গৌতম এর ছবি

১.
প্রচলিত সমাজকাঠামো যেরকম, এসব ডিজিটালের চরিত্রও সেভাবেই নির্ধারণ করা হবে, অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইড টিকিয়ে রাখার জন্য যা কিছু করা দরকার তার সবকিছুই করা হবে। যদিও বিভিন্ন দিক দিয়ে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেটা কোন অর্থে ডিভাইড দূর করা তা পরিষ্কার নয়, বিশেষ করে বাংলাদেশে।

২.
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময় একাধারে আইসিটি ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের আনাগোনা বেশ বেড়ে গেছে। তাঁদের একটি বিরাট অংশ শিশুদের শিক্ষায় কম্পিউটার ব্যবহার করার কথা বলছেন। লক্ষণীয়, আইসিটি আর কম্পিউটার এক জিনিস নয়। তারপরও তাঁদের সাথে আলাপচারিতার সুবাদে বুঝার চেষ্টা করছি- ঠিক কীভাবে কম্পিউটার বা আইসিটিকে স্কুল লেভেলের শিক্ষার সাথে ম্যাচ করা হবে। দুঃখের সাথেই বলি, যারা এটা নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চাচ্ছেন, তাদের পরিকল্পনাটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। দক্ষিণ কোরিয়ার মডেল এদেশে খাপেখাপ কাজ করবে, সে আশা বাতুলতা। কিন্তু যারা বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে চান, তাদের কাজকর্ম বা কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, দেশের সব বিদ্যালয়গুলোতে একটা করে কম্পিউটার দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

৩.
গুণগত শিক্ষা সম্পর্কে আমরা সবাই খুব চ্যাঁচাই। কিন্তু গুণগত শিক্ষাটা আসলে যে কী বস্তু, তা নির্ধারণ করা খুবই শক্ত কাজ। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত শিক্ষায় গুণগতমানের সংজ্ঞাটা নির্ধারণ করতে পারে নি।

৪.
উপরের তিনটি পয়েন্ট বলার কারণ হলো- শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটি বা কম্পিউটার ব্যবহার করে কীভাবে পরিবর্তন আনা যাবে, সেই রূপরেখাটা বাংলাদেশে এখনও কেই কনক্রিটভাবে দিতে পারছে না। মনে রাখা দরকার, কম্পিউটার একটা যন্ত্র মাত্র। আর একটা যন্ত্র কখনই এককভাবে একটা ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে পারে না। কিন্তু যন্ত্রটাকে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করতে পারলে পরিবর্তনের হারটা খুব বেশি করে ত্বরান্বিত করা যায়। আমরা অনেকেই যন্ত্রটাকে বুঝতে পারছি, যন্ত্রের পারিপার্শ্বিকতাটাকে বুঝতে পারছি না।

৫.
সুগত মিত্রের কাজটা প্রশংসনীয়। কিন্তু সেটার যথাযথ প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব সীমিত পরিসরে, পরীক্ষণ পর্যায়ে। বাংলাদেশ বা ভারতের মতো লার্জ সোসাইটিতে সীমিত পরিসরের চরিত্র আর বিশাল পরিসরের চরিত্র এক হতে দেখা যায় নি কখনোই (বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে)।

৬.
উপর্যুক্ত সবগুলো কথাই বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বলা। ভারতে এ নিয়ে বেশ কিছু কাজ হচ্ছে বলে শুনেছি। অনুরোধ থাকবে সম্ভব হলে সেগুলোর লিংক দেওয়া।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সাইফ এর ছবি

অসাধারান একটি পোস্ট, অনেক কিছু জানতে পারলাম, আপনার সাথে একমত, আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকার, আর শিক্ষিত সমাজে যারা মুখ উচা করে বুক ফুলিয়ে বলবেন, 'আমি কম্পিউটার চালাতে পারি না, তাদের জনসম্মুখে ৫০ টা বেত্রাঘাতের বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করা উচিৎ। আপনাকে ধন্যবাদ দিলে ছোট করা হবে এরকম একটা পোস্ট দেবার পর।

মামুন হক এর ছবি

খুবই প্রয়োজ়নীয় একটি লেখা। আমাদের দেশেও এ ধরনের প্রজেক্ট দরকার। সচলবাসীরা দেখেন না ভাই আমরা নিজেরাই কিছু শুরু করতে পারি কিনা। আমার খুব ইচ্ছা সক্রিয়ভাবে জড়াতে, আছেন কোন মুমিন ভাই রাস্তা দেখাবেন?
গ্রামে গ্রামে বাচ্চারা কম্পিউটারে লেখা পড়া শিখছে, ভাবতেই মন শান্তিতে ভরে যায়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

দুর্দান্তিস লিখা এট্টা!! বহুদূরের এক শহরে বসে পড়েছি আর আঙ্গুল কামড়েছি কিছু লিখতে না পারার হতাশায়। একটা বড় মন্তব্য লিখার আশা রইল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এই একাউন্টটি কোন মডারেটরের নয়। এই একাউন্ট থেকে মডারেশন করা হয়না, কিংবা এই একাউন্টের কর্মকান্ডের দায়ভার সচলায়তন নেবে না।

s-s এর ছবি

দিগন্ত , চমৎকার একটা চিন্তাশীল লেখা। এটা অন্য সব গিমিকের মতো আরও একটা গিমিকে পরিণত না হোক, আমি শুধু সেই আশা করি। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব, এবং বদলে দেবার কাঠামোটি খুবই আনকোরা, সন্দেহ নেই, কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি শিক্ষিত সমাজের মধ্যে নয়, অশিক্ষিত আর অর্ধ শিক্ষিত জন গোষ্ঠীতেও এই ডিভাইড আ্যন্ড রুল পলিসি কাজ করে , প্রাযুক্তিক সমানাধিকারের থেকেও অন্য অনেক বেসিক নীড পূরণের ক্ষেত্রে এই অসাম্য এতোটাই প্রকট, বাংলাদেশে এটি "ফকিরনীর হাতে মোবাইল ফোন দেয়া" ধরনের নীচ বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবে কি'না এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। নিম্নবর্গীয়দের নিয়ে কাজ করার আত্মশ্লাঘা শুধু উচ্চ বা মধ্যবিত্তই নয়, সেমি-নিম্নবিত্তরাও ভোগ করে , শ্রেণী অসমান সমাজে এই রকম উদ্যোগ দেখলে বুকে বল পাই, কিন্তু ডিভাইড আ্যন্ড রুল পলিসি দূর হবার সন্দেহের কাঁটাটা থেকেই যায়।

দিগন্ত এর ছবি

আলোচনায় সময়মত অংশগ্রহণ করতে পারলাম না বাবা হবার আনন্দে। পরের পর্ব লিখে পুরোদমে আসছি।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

এরিক এর ছবি

অসাধারণ লেখা

দিগন্ত এর ছবি

ধন্যবাদ ।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।