আবজাব ০২

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: বুধ, ০৬/০২/২০০৮ - ৪:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

××মুহম্মদ জুবায়ের ভাই জিজ্ঞাসা করেছেন,“পরবর্তী যাচ্ছেতাই লেখা কখন আসছে?” তার সম্মানে দিলাম আরেকটা।××



আমাদের পাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা পাতি সংগঠন আছে। সংগঠনের নাম “বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন”। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কোন ছাত্র সংগঠন খুলতে হলে কমপক্ষে পনের জন ছাত্রের প্রয়োজন হয়। আমরা সর্বসাকুল্যে তেরজন ছাত্র। সুতারাং দুইজন প্রফেসরের নামও ছাত্র হিসাবে চালিয়ে দিতে হয়েছে। আপামর বাঙ্গালী সমাজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যে কোন পালা-পার্বনেই আমরা একটা ফাটাফাটি খাই-দাই এর আয়োজন করে ফেলি। সংস্কার ভাঙ্গা কোন কাজের কথা না, সুতারাং আবারও একটা খাই-দাই এর আয়োজন করা হয়েছে। খাই-দাই পর্ব হালাল করার জন্য প্রতিবারই কোন না কোন ছুতো খুঁজে বের করা হয়। এবারের ছুঁতোর নাম “বিজয় দিবস ও ঈদ পূণর্মিলনী”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার দুই বন্ধু সানজিদ ও নিপুনের মধ্যে সারাক্ষন কলহ বেধে থাকতো একটা তুচ্ছ কারনে। সানজিদদের বাড়ী ছিল কিশোরগঞ্জে, সে বেশ অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তান - নিপুনের ভাষায়, “নাই দেশের জমিদার”।

সানজিদের দাবী ছিল, তারা এতই সম্পদশালী যে তাদের পায়খানায় পিতলের তৈরি বদনা ব্যবহৃত হয়। আমরা কেউ কখনো সানজিদদের দেশের বাড়িতে যাই নি। নিপুন গিয়েছে, সুতারাং নিপুনের বক্তব্য সর্বাপেক্ষা যুক্তিপূর্ণ হবার কথা।

নিপুনের বক্তব্য হচ্ছে সানজিদদের পায়খানায় সত্যিই পিতলের বদনা ব্যবহৃত হয়, তবে সেটা কেবল মেহমানদের জন্য। বাকী সময়টা তারা পিতলের বদনাটাকে আলমারিতে রেখে দেয়। সানজিদদের বাড়ীর চারপাশে এত পানি যে বদনা ব্যবহার করার দরকারই পড়ে না। যাকে বলে “পানিতেই খায় পানিতেই হাগে”।

আগের কথায় ফিরে আসা যাক। “বিজয় দিবস ও ঈদ পূণর্মিলনী উপলক্ষ্যে” আমরা একটা পাতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আমি নিজে সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আর আমার বউ প্রধান সংগীত শিল্পী। একেবারে সানজিদের মতই অবস্থা – যাকে বলে নাই দেশের জমিদার।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে জোর রিহার্সাল এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিহার্সাল উপলক্ষ্যে দুইবার খাই-দাই ও করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই।

প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হবার সময় দেখি বউ আমার কি-বোর্ড নিয়ে বসে আঁ-আঁ-আঁ করছে। সেদিন বউ বসে আঁ-আঁ-আঁ করছিল, আমি পাশে বসে সুবোধ ছেলের মত একটা ম্যাপ বানানোর চেষ্টা করছি। হঠাৎ কি যেন কি হয়ে গেল। বউ আমাকে বললো, “এই, তুমিও আমার সাথে আঁ-আঁ কর।”

মানুষের অনুরোধে আমি ঢেঁকি গিলি, আর বউয়ের অনুরোধে এম্পায়ার এস্টেট বিল্ডিং গিলবো এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।

দুজনে মিলে আঁ-আঁ-আঁ করছি। আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। হঠাৎ করে শুনি পাশের দেয়ালে আঘাতের শব্দ।

আমার পাশের ঘরে থাকে পশ্চিম ভারতীয় বন্ধু শুভদ্বীপ মন্ডল। আমরা যে কোন প্রয়োজন দেয়ালে আঘাত করে মেসেজ আদান প্রদান করি। সুতারাং আঘাতে শব্দ শুনে আঁ-আঁ বন্ধ করে কান পাতলাম।

শুভদ্বীপ তার পশ্চিম বঙ্গীয় উচ্চারণে চিৎকার করে বলছে, “ওরে ! বউকে আর মারিস না রে ।”

কি সর্বনাশের কথা ! আমাদের সম্মিলিত আঁ-আঁ শুনে জনগন ভাবছে আমি ঘরের ভেতর বউ পিটাচ্ছি ! কালবিলম্ব না করে একটা ঝাড়ি দিয়ে বউয়ের আঁ-আঁ থামিয়ে দিলাম সেদিনের মত।

পরদিন সকাল বেলায় স্কুলে আসবো। বউ আবার কি-বোর্ড নিয়ে বসে আঁ-আঁ করে রাগ ভৈরবী শুরু করেছে।

আমি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম। ভোরবেলায় লোকজন যদি ভাবে আমি বউ পিটাচ্ছি তাহলেই সর্বনাশ। আমি বউকে বললাম, “এই কি কর? থামো বলছি।”

বউ নাকি স্বরে বললো, “এমন কর কেন? আমি একটু রাগ করি। ”

আমি ভেবে পেলাম না, দুই বেলায় এত রাগ করার পরও কি-বোর্ড নিয়ে বসে রাগ করার কি আছে?


মন্তব্য

অয়ন এর ছবি

“ওরে ! বউকে আর মারিস না রে ।”

হো হো হো

দ্রোহী এর ছবি

এ মার সে মার নয় হে!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

নিঘাত তিথি এর ছবি

ওরে রাগ ভৈরব রে... হো হো হো
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হালায় খাইষ্টা রে। এইসব কথা বলে আমাদের মতো কোমলমতি পুলাপানের হৃদয়ে গন্দমের বীজ বপনের চেষ্টা!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

দ্রোহী এর ছবি

ধুসরের মন্তব্যে বিপ্লব!


কি মাঝি? ডরাইলা?

কেমিকেল আলী এর ছবি

ভাবির একটা আ আ ইউটিউবে অথবা ইস্পিনসে আপলোড দেন বস!!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

... অনুরোধে এম্পায়ার এস্টেট বিল্ডিং গিলবো...

হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বউয়ের অনুরোধে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং গিলে ফেললেন আর আমার সামান্য আওয়াজে একটা দারুণ লেখা নামিয়ে দিলেন! কিন্তু বউকে নিয়ে যা লিখলেন, এখন আশংকা হচ্ছে ঘরে আপনার ভাত জোটে কি না। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

দ্রোহী এর ছবি

নিশ্চয়তা না থাকলে কি বউকে নিয়ে লেখার সাহস করে উঠতে পারতাম?


কি মাঝি? ডরাইলা?

নজমুল আলবাব এর ছবি

এক বেডা আর এক বেডি সমানতালে আঁ আঁ করবে আর লোকজন দেয়াল টুকবেনা? এইটা কেমনে? আমি হলেতো জানালা দরজার ফুটা খুজতাম হাসি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

দ্রোহী এর ছবি

সব্বোনাশ!!!!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

থার্ড আই এর ছবি

হ আলবাব ভাই,জানালা দড়জা দিয়ে যারা ফুটা খোঁজে তাদের জন্য পাশ্চাতে বিশেষ ব্যবস্থা আছে, এইটাকে বলে পিপ শো। একটা ছিদ্র দিয়া আপনে সব কিছু অনায়াসে দেখতে পারবেন, লন্ডনে মাত্র দুই পাউন্ড।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

হযবরল এর ছবি

বুঝলাম বউ পিটানো নিয়া বিশেষ ব্যস্ত আছো। এরমধ্যে আবার রাগ ও ঢুকছে। তোমারে ফোনায়া আমি ক্লান্ত। একটা ফোন দিও। ফোন নম্বর চেঞ্জ হয়ে থাকলে একটু জানাও।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমার কমেন্ট কই গেলো, ভায়েরা ভাই?

আপনাদের এ ব্যাপারগুলো শম্পা বলছিলো একদিন ।

দ্রোহী এর ছবি

কি জানি! আমি তো কমেন্ট ডিলিট করিনা কখনো। মডুরামেরা বলতে পারবে।

শম্পা ভালোই আছে। আপনার কথা মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আমি ভেবে পেলাম না, দুই বেলায় এত রাগ করার পরও কি-বোর্ড নিয়ে বসে রাগ করার কি আছে?

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।