ছেলেমানুষী ছড়া

ফাহিম হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফাহিম হাসান (তারিখ: সোম, ০২/০২/২০১৫ - ১:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরীক্ষাতে লাড্ডু খেয়ে গাড্ডু মিয়া বলে -
ইশ্‌কুলেতে সবই যেন কেমন ধারায় চলে।
স্যারেরা সব প্রশ্ন করে চোখ পাকিয়ে তাকায়
ব্যাখ্যা ছাড়া বই থেকে সব কঠিন ছবি আঁকায়।
কোন কথাটা কেন এল নেই তো জানার সাধ্য
ছাত্র মানেই যেন শুধু পাঠ্য বইয়ের বাধ্য।
সায়েন্স টিচার হুকুম করেন সবাই যেন শিখে
জবা ফুলের সায়েন্টিফিক নামটা লিখে লিখে;
জোরে জোরে পড়তে হবে ল্যাটিন নামের লিস্টি
ঠোঁটের আগায় থাকতে হবে জীবের ডায়ানিস্টি।
এসব দেখে গাড্ডু মিয়ার মাথা এলোমেলো
নতুন করে শিখতে সে সব মায়ের কাছে গেলো।

প্রশ্ন ভরা মাথা সে তার রেখে মায়ের কোলে
রোজ বিকালে গাড্ডু মিয়া কথার ঝাঁপি খোলে।
মায়ের কাছে শুনতে পেল Hibiscus এর গল্প
জবার মত দেখতে এমন ফুল আছে যে অল্প!
যে সব গাছের কান্ডগুলো শক্ত মোটেই নয়
দেখতে ছোট-খাটো কিংবা ঝোঁপের মত হয়,
মায়ে-ছেলে ঘুরে দেখে বাসার চারিপাশ
হরেক রকম জবা গাছের বাগান জুড়েই বাস।

“বল্‌ দেখি এই গাছগুলো সব চিনব কেমন করে?”
- প্রশ্ন শুনে গাড্ডু মিয়া বসল নড়ে-চড়ে;
“ফুলের মাথায় মারবে উঁকি ছোট্ট কয়েক খন্ড
মাঝখানেতে থাকবে এক বিশাল পরাগদন্ড
;
তার মাথাতে দেখতে পাবে গুঁড়ো রেণুর কণা”
কথা শুনে গাড্ডু মিয়া হয়ে উঠে আনমনা।

চিন্তাকাতর চশমা চোখে শুনে মায়ের পুত্র
“... এই রেণুতেই লুকিয়ে থাকে গাছের জীবন সূত্র।
ফুলের গোড়ায় এরই মতন আরেক কণা থাকে
কণার সাথে কণার মিলন – নিষেক বলে তাকে।”
মৌমাছি বা পোকা যখন ফুলের ধারে যায়
গুঁড়ো গুঁড়ো রেণুর কণা সেঁটে বসে পায়;
ফুল থেকে ফুল, ফুলান্তরে বেড়ায় পোকা উড়ে
এমন করেই সবুজ গাছের সৃষ্টি জগৎ জুড়ে।
কিছু গাছের কণা আবার হাওয়ায় ভেসে চলে
জলজ গাছের কণা যেমন সাঁতরে বেড়ায় জলে।

এমনি করে রোজ বিকালে গল্প করার ছলে
মায়ের কাছে গাড্ডু মিয়ার পড়াশোনা চলে,
পড়া শেখার আসল উপায় জানা হল এই -
বইয়ের পড়া লেখা আছে বাড়ির বাগানেই।

--------------------------------------------

ছাত্রজীবনে জীববিজ্ঞান ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। আমার সৌভাগ্য স্কুল (সেইন্ট যোসেফ) এবং কলেজে (নটর ডেম) আমি দুর্দান্ত কিছু শিক্ষকের সাহচর্য পেয়েছিলাম যাদের উৎসাহে নানা বই-পত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। তবে শেখার হাতে-খড়িটা হয়েছিল বাড়ির বাগানেই - ব্যস্ত শহরের কোণায় একটা দোতালা বাড়ির ছাদ ভর্তি ছিল নানা গাছপালা। এখন নিসর্গপ্রেমী শিক্ষকেরা দুর্লভ, বাড়ির বাগান নেই বললেই চলে, খেলার মাঠ সংখ্যায় নগণ্য। ছোট ভাই-বোনেরা প্রকৃতির সান্নিধ্য ছাড়াই বড় হয়ে উঠছে মন খারাপ


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

পড়া শেখার আসল উপায় জানা হল এই -
বইয়ের পড়া লেখা আছে বাড়ির বাগানেই।

অনবদ্য!
মফস্বলের ছেলেমেয়েরা এখনো প্রকৃতির সান্নিধ্যেই বেড়ে উঠছে। যদিও ভালো শিক্ষকের সংস্পর্শ সেখানে দুর্লভ...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, স্পর্শ।
ঢাকার বাইরের স্কুলগুলো কী সুন্দর! বেশ অনেক বছর আগে কুমিল্লার কাছাকাছি একটা স্কুলে গিয়ে দেখলাম বিশাল বিশাল সব গাছ, বাচ্চারা সব হই হই করে মাঠে খেলছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ্‌ ! ভালো লাগলো ছড়ায় ছড়ায় লেখা পড়াশুনার সূত্র!
আজকাল শিক্ষকেরা অনেক ব্যস্ত কিনা !

শুভকামনা রইলো।

অপর্ণা মিতু

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

হিমু এর ছবি

চলুক

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নটর ডেম কলেজে অমরেন্দ্র নারায়ণ (পদবী মনে নেই) নামে উদ্ভিদবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর লেখা উদ্ভিদবিজ্ঞানের বইটি আমার দেখা/পড়া বাংলা ভাষায় সবচে' সেরা উদ্ভিদবিজ্ঞানের বই। তো এখন অধ্যাপক অমরেন্দ্র নারায়ণের মতো শিক্ষক নেই। অমন পাঠ্যপুস্তকও নেই। এখনকার পাঠ্যপুস্তকগুলোকে নোটবইয়ের থেকে আলাদা করা যায় না। তাদের কনটেন্ট পড়ে বোঝা যায় না (পরীক্ষা প্রার্থনীয়)। আর শিক্ষকেরা না স্কুল/কলেজের ক্লাসে না কোচিং সেন্টারে পড়ান। সব জায়গাতে শিওর এন্ড শর্ট পদ্ধতি চলছে। প্রকৃতি থেকে পাঠ নেবার আনুষ্ঠানিক উপায় বাংলাদেশে আর সম্ভব না। অনানুষ্ঠানিক উপায় হয়তো আছে, তবে তাতে তাদের অভিভাবকদের আগ্রহ নেই। গ্ল্যামারাস হবার জন্য, সুপারস্টার হবার জন্য, উঁচু জিপিএ পাবার জন্য এসব আজেবাজে শিক্ষার দরকার নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

একটু তাড়াহুড়ো করে লিখেছেন নাকি? একথা কেন বললাম সেটা পরে বলছি। চোখ টিপি

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পরে আর কইলেন কই?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ফাহিম হাসান এর ছবি

পাঠ্যবইয়ের ব্যাপারে একমত পাণ্ডবদা। বিজ্ঞানের সব বইগুলোই কেমন নোটবই স্টাইলে লেখা, কোন প্রাণ নেই। পদার্থবিজ্ঞানের বইগুলোকে মজার সব এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে আকর্ষণীয় করা যেত, তার বদলে এখন ধারা বিবরণীর মত গতানুগতিক সব লেখা মন খারাপ

নটরডেম কলেজের আরেকটা জিনিস ভালো লাগত - প্রতিটা বড় গাছের গায়ে বৈজ্ঞানিক নাম লেখা ছিল।

এক লহমা এর ছবি

বা:! কবিতায় বিজ্ঞান, ভাল লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

মন মাঝি এর ছবি

দারুণস্‌! চলুক

****************************************

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

বিজ্ঞানকে বিষয়করে কবিতা এর আগে আমি মাত্র আর একটি পড়েছি। আপনার কবিতাটি ভালো লাগলো। আরো লিখুন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মর্ম এর ছবি

বাহ! হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন!!!

আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ

ফাহিম হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

কনীনিকা এর ছবি

দারুণ হয়েছে। সবই যদি এত মজার ছড়ায় ছড়ায় পড়তে পারতাম!

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ, আমারো ছড়া পড়তে খুবই মজা লাগে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

রংতুলি এর ছবি

সুকুমারীয় স্টাইলে ছড়া সাথে বিজ্ঞান, মজার কম্বিনেশন। হায়! এরাম ছড়ায় ছড়ায় যদি সব শিখে ফেলতে পারতুম, তাহলে জীবনে আর মোটা মাথা’র কলঙ্ক নিয়ে বিজ্ঞান থেকে শ’খানেক হাত দূরে থাকতে হতো না!

সুকুমারের ছড়াটা (স্মৃতি থেকে) তুলে দেয়া লোভ সামলাতে পারছি না -

পরীক্ষাতে গোল্লা পেয়ে হাবু ফেরেন বাড়ি,
চক্ষু দুটি ছানাবড়া, মুখখানা তার হাঁড়ি।
রাগে আগুন হলেন বাবা সকল কথা শুনে,
আচ্ছা করে পিটিয়ে তাকে দিলেন তুলো ধুনে।
রাগের চোটে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে তোলে,
পিসি ভাসেন চোখের জলে কুটনো কোটা ফেলে।
শুনে মায়ের বুক ফেটে যায় হায় কি হলো বলে,
আহ্লাদেতে আটখানা হয় পাশের বাড়ির ছেলে।

ফাহিম হাসান এর ছবি

সুকুমার রায়ের এই ছড়াটা যে আমার কী প্রিয়! এই ছড়াটার একটা ইলাস্ট্রেশান দেখেছিলাম লাল চ্যাপ্টা মতন একটা সঙ্কলনে।

আমাদের স্কুল-কলেজগুলোতে যে কী বিচ্ছিরিভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হয় মন খারাপ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আহা, সেরকম হাসি

দেবদারু, বাঁদরলাঠি আর সামনের কাঠবাদাম গাছটাকে মিস করি। এখন নাকি কলেজে ঢুকতে অনেক কড়াকড়ি।

ফাহিম হাসান এর ছবি

লিখতে লিখতে আপনার কথা মনে হয়েছিল হাসি
কলেজে ঢোকার কড়াকড়ির কথা শুনেছি। অ্যালামনাইদের ঢুকতে না দেওয়ার কারণ বুঝলাম না।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমিও সেটা ভেবেছিলাম যে আমার কথা ফাহিমের মনে হওয়ার কথা দেঁতো হাসি

তিথীডোর এর ছবি

হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

গগন শিরীষ  এর ছবি

ভাল লাগল অন্য রকম এই ছড়া পড়ে!

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর! হাসি

দেবদ্যুতি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পড়া শেখার আসল উপায় জানা হল এই -
বইয়ের পড়া লেখা আছে বাড়ির বাগানেই।

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।