ভুলে যাওয়া গল্প

টিউলিপ এর ছবি
লিখেছেন টিউলিপ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২০/০২/২০১০ - ১:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাঝে মাঝে কেন যেন কিছুতেই কাজে মন বসে না। এখন ল্যাবে বসে আছি, আজকের দিনের মাঝে দুইটা write up শেষ করতে হবে, অথচ মন চলে যাচ্ছে সেই ছোটবেলায়।

পড়তে শেখার পর থেকে সেটাকে কাজে লাগাতে কার্পণ্য করি নি। এক নিজের পাঠ্যবই ছাড়া যে কোন লিখিত জিনিস পেলেই সেটা পড়া নিজের পবিত্র কর্তব্য মনে করে এসেছি। কিন্তু ছোটবেলায় বড় হওয়ার খুব ইচ্ছে থেকেই মনে হয় রূপকথা পড়তে ভাল লাগত না তত, যতটা এখন লাগে।

আজকে মাথার মধ্যে তাও ছোটবেলায় পড়া একটা রূপকথা ঘুরছে। গল্পটা যখন পড়ি তখন আমার বয়স মনে হয় পাঁচ কি ছয়। কাহিনী ছিল অনেকটা এরকম, এক মায়ের ছেলে খুব অসুস্থ, মা দিন রাত তার পাশে বসে অক্লান্ত সেবা করে যাচ্ছে, একটুও বিশ্রাম নেই। যম ছেলেটার আশেপাশে ঘুরছে, মায়ের সতর্কতার কারনে কোন সুযোগ পাচ্ছে না ছেলেটার জীবন নেওয়ার।

এরকম অনেক দিন যাওয়ার পরে মা ক্লান্তিতে একটু চোখ বুঁজেছেন, এই ফাঁকে যম তার কাজ সেরে ফেলল। তার পরের কাহিনী মা কতদিন কত কষ্ট করে যমের পিছনে ছুটছে সেটা নিয়ে। যাই হোক, অনেক পরিশ্রমের পরে মা শেষ পর্যন্ত যমের মৃত্যুর বাগানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। যমকে জানিয়ে দিলেন ছেলেকে না নিয়ে যাবেন না সেখান থেকে। যম তখন মাকে নিয়ে গেল জীবন -মৃত্যুর কুয়ার কাছে। সেখানে ফেলে দিল একটা ফুল, বলল "এই হল তোমার ছেলের জীবন।"

ফুলটা পানিতে পড়ে ফুটে উঠল, তার মাঝে ভেসে উঠতে থাকল ছবির পর ছবি। দেখা গেল ছেলেটা বড় হয়ে হত খুবই অত্যাচারী অপরাধপ্রবণ এক মানুষ। যম এর পরে কুয়াতে ফেলে দিল আরেকটা ফুল, মাকে বলল "এই হল তোমার পাশের বাড়ির ছেলের জীবন।" সেই ছেলেটিও ছিল অসুস্থ। ফুলের গায়ে এবার ফুটে উঠল ভিন্ন ছবি, ছেলেটি বড় হয়ে কত মানুষের উপকার করছে সেই ছবি।

যম মাকে বলল এই দুজনের মাঝে একজনের জীবন আমি দিতে পারি। তুমি তোমার নিজের ছেলেকে ফেরত চাইলে অন্য ছেলেটিকে মরতে হবে।

মা নিজের ছেলেকে ফেরত না নিয়ে চলে আসলেন।

গল্পটা অনেক আগে পড়া, অনেক কিছুই ভুলে গেছি। কার লেখা, কোন বইয়ে পড়েছি তাও মনে নেই। কারো জানা থাকলে মনে করিয়ে দিলে খুশি হব।


মন্তব্য

নাশতারান এর ছবি

আগে কখনো্ শুনিনি গল্পটা। আমার মা হলে এতোটা মহৎ হতে পারতেন না সম্ভবত। মায়েদের ভালবাসা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্ধ হয়ে থাকে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

টিউলিপ এর ছবি

সহমত, আমার মাও একই কাজ করতেন। হয় তো নিজেকে প্রবোধ দিতেন এই বলে যে পরিণতি জানা থাকায় আরও সতর্ক হবেন লালনে। কিন্তু এটা তো ছোটদের জন্য একটা রূপকথা, আমার মনে হয়েছে এখানে বৃহত্তর কল্যাণে নিজের ভাল বিসর্জন দেওয়ার কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোটবেলায় সেটা কতটা বুঝেছিলাম সন্দেহ আছে। কিন্তু এখন জিনিসটা একাত্তরের মায়েদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

অন্য প্রসঙ্গ, ব-ফলা কিভাবে দেয়? কিছুতেই দিতে পারছি না, বিকল্প শব্দ খুঁজতে হচ্ছে।
___________________

মুক্তি আজিকে নাই কোনধারে
আকাশ সেও যে বাঁধে কারাগারে

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

নাশতারান এর ছবি

উদ্বিগ্ন=udwigno।
ঠিকাছে?

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

টিউলিপ এর ছবি

স্বাগত জানাই সাহায্যকে। ঠিকাছে।
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

আশরাফ মাহমুদ এর ছবি

আমি-ও পড়ি নি। তবে মায়েরা অন্ধের মতো ভালবাসে, সেটাই আমার কাছে শ্রেষ্ঠফুল।

==============================
ঢাকার মৌন ঘ্রাণে বকুলফুলের নাভি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ

টিউলিপ এর ছবি

আসলে গল্পটা আমার ঠিকমত মনে নেই বলে আমি পুরোটা গুছিয়ে লিখতে পারি নি। মায়ের অন্ধ ভালবাসার প্রকাশ এই গল্পেও আছে। মায়ের মৃত্যুর বাগানের দিকে যাওয়ার সময় মা রাস্তার সন্ধান চান অনেকের কাছে। বিনিময়ে নিজের কণ্ঠ, চোখসহ অনেক কিছুই দিয়ে দেন তাদের। সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে যাওয়ার পথের বর্ণনাটুকু এত কষ্টের ছিল যে আমি পারলে সেই জায়গাটুকু বাদ দিয়ে পড়তাম। মৃত্যুর বাগানে যখন মা পৌঁছেছিলেন, তার অবস্থা ছিল অস্কার ওয়াইল্ডের হ্যাপি প্রিন্সের মত। কিন্তু নিজের ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য জেনেশুনে আরেকজন মায়ের বুকে আঘাত দেওয়া, তাও আবার দুই ছেলের তুলনামূলক ভবিষ্যত দেখার পরে, এভাবে গল্পটা শেষ করলে গল্পটা তো মনে এত দাগ কাটত না আমার।

তবে বললামই তো, গল্পটা যখন পড়ি তখন আমার বয়স খুবই কম। এখন পড়তে পারলে হয় তো অন্যরকম লাগত।

___________________

মুক্তি আজিকে নাই কোনধারে
আকাশ সেও যে বাঁধে কারাগারে

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

তিথীডোর এর ছবি

গল্পটা আমিও পড়িনি,
তবে পড়তে ইচ্ছে করছে...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

টিউলিপ এর ছবি

অনেক খুঁজেপেতে গল্পটার নাম পেলাম। হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের " The story of a mother"। তবে আমি কাহিনী বলতে বেশ ভুল করেছি মনে হয়, মায়ের ছেলেটিরই দুটি সম্ভাব্য পরিণতি ছিল সেখানে। এখানে পাবেন কাহিনী সংক্ষেপ। মূল গল্পটা এখনো খুঁজে পাই নি।
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

এই গল্পটা মনে পড়ছে না।
কিন্তু ঐ গল্পটা কার যেন? স্নেহময়ী মাকে ফেলে এসে এক অপরূপ সুন্দরীকে বিয়ে করেছে ছেলে। সারাদিন পূজা করে রূপসীকে। কিন্তু মায়ের প্রতি এখনো ছেলের কিছু হৃদয়াবেগ আছে বুঝতে পেরে হিংসায় জ্বলে উঠল সুন্দরী বউ। জামাইকে বলল, আমাকে সত্যিকার ভালোবাস, এটা তখনই বিশ্বাস করব, যখন তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ড কেটে এনে আমার হাতে তুলে দেবে!
রূপের মোহে পাগল ছেলে তখনই ছুটল মায়ের কাছে। মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে দৌড়ে আসতে লাগল বউয়ের কাছে। ঘরে এসে ঢোকার সময় চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল! হাত থেকে হৃৎপিণ্ড পড়ল ছিটকে!
সেই হৃৎপিণ্ড কথা বলে উঠল তখন, খোকা, তোর লাগে নি তো?
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

টিউলিপ এর ছবি

The Ballad of a mother's heart
------Jose La Villa Tierra

The night was dark,
For the moon was young,
And the Stars were asleep and rare,
The clouds were thick,
Yet Youth went out,
To see his Maiden fair.

Dear one,
he pleaded as he knelt before her feet in tears.
My love is true,
Why you have kept me waiting all this years?
The maiden looked at him.
Unmoved it seemed,
And whispered low.

Persistent Youth,
You have to prove by deeds,
Your love is true.
"There's not a thing
I would not do for you, Beloved" said he.
"Then, go." said she. "To your mother dear,
And bring her heart to me.

Without another word,
Youth left and went to his mother dear.
He opened her breast and took her heart!
But he did not shed a tear.

Then back to his Maiden fair,
He run unmindful of the rain.
But his feet slipped, And he fell down,
And loud, he groaned with pain!

Still in his hand he held the prize,
That would win his Maiden's hands.
But he thought of his mother dear,
So kind,so sweet,so fond.

And then,
he heard a voice!
Not from his lips,
But all apart!

"Get up" it said.
"Were you hurt,Child?"
It was his mother's heart
___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

চোখের আড়ালে ছিলো... ভালো পোস্ট।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।