হিন্দি সিনেমা টাইপ প্রথম প্রেম ও ৩২০ টাকা দামের একটি মাগে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ৩১/১২/২০০৭ - ৫:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০০ সালের শেষ দিক, হঠাত্‍ করেই একবারে হুমায়ুন আহমেদ-ইমদাদুল হক মিলনকে টপকিয়ে হিন্দি ষ্টাইলে এক মেয়ের প্রেমে পরে গেলাম.
এক নজর না, এক মুহুর্তের দেখা মাত্র।

কিছু বোঝার আগেই এটা বুঝলাম এই সেই মানুষ যার জন্যে আমি পরিক্ষায় ফেইল করবো, রাতের ঘুম হারাম হবে, ন্যাকা ন্যাকা কবিতা লেখা শুরু করলে অবশ্য একটু বাড়া-বাড়ি হয়ে যাবে, কিন্তু সেই ভয়াভয় সম্ভাবনাটাকেও উড়িয়ে দিতে পারছিলাম না সে সময়! কি যে অবস্থা! বেচারি আবার থাকে দেশের বাইরে! কিছুদিন পরই সে ফিরে গেল তার দেশে আর আমি মিশে গেলাম আর দশটা "হয়রান" হয়ে যাওয়া বেকারের মত.
-------------
বেশি বয়সের প্রথম সন্তানের মত বেশি বয়সের প্রথম প্রেমের সব বাড়াবাড়িই তখন আমার মধ্যে প্রকট। তা-ও বন্ধুরা আমাকে সহ্য করে যাচ্ছে.
--------------
দেশ থেকে আই এস ডি লাইন তখন যেমন খরচ সাপেক্ষ তেমনি মেয়ে ফোন ধরলো না ছোট ভাই সেটা বুঝতে বুঝতেই মাথায় হিসেব চলে কতটাকা বিল উঠলো! মানে একেবাড়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা!
অগত্যা চাকুরিহীন বেকার এই যুবক আলিফ লায়লা টাইপ এক স্বপ্ন দেখে ফেললো! তাকে বিদেশ যেতে হবে! সেই ক্ষণদেখা রাজকন্যার স্বপ্নের যে দেশে বসবাস সেখানে গিয়েই তাকে জয় করতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ! যে শোনে সে ই হাসে, ব্যাটা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পয়সা নেই সে যাবে বিদেশ! আবার বয়সে বড় কোন আত্বিয় বা ভাই বোনদেরকেও বলার প্রশ্নই ওঠে না, অতটা রোমান্টিক সমাজতো আর কোথাও গড়ে ওঠেনি এখনো।

সে যাই হোক, কি করে কি করে যেন বিদেশে আসার একটা ভিসাও পেয়ে গেলাম! পাওয়ার কথা না, ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টে আছে ৩৫ হাজার টাকা আর টিকেটের দামই হল ৩৮ হাজার! কিন্ত কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক ১০০ ভাগ জাল ফ্রী কাগজ দেখিয়েও আমি ভিসা পেয়ে গেলাম!
জিবনে কখনো এতবড় প্লেনে চড়িনি আবার স্মার্টনেসও দেখাতে হবে ষোল আনা, তার উপর কেমন জানি একটা ভয়-উত্তেজনা. . . . . . সব মিলিয়ে ঠান্ডা পানির নীচে দাড়িয়ে শাওয়ার করার সময় শিহরিত একটা দম বন্ধ হওয়া যে অনুভুতি হয়, আমরটা অবস্থাটাও খানিকটা সেরকম!

= = = - - - . . . .
এবারে ঝটপট, ফাষ্ট ফরোয়ার্ড,চলে আসি আসল কথায়, যার জন্যে এতদূর আসলাম, তার ঠিকানা ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিল। নিদিষ্ট দিনে তাকে ফোন করলাম, কথা হল। ঠিক হল আমি যাব ওদের বাসায়। পকেটে আমার দেশ থেকে অনেক কষ্টের জমানো টাকায় কেনা ছোট্ট কিন্তু চমত্‍কার একটি উপহার জিনিসটি কিনতে গিয়ে শেষ জমানো টাকাও শেষ। তাই হলমার্কে দেখা খুব সুন্দর একটি মাগ আর কেনা হল না (মাগের দাম ছিল ৩২০টাকা) নিজেকেই নিজে বললাম, ধ্যাৎ আমিকি পাগল না-কি সামান্য একটা চিনা মাটির মাগ কিনবো ৩২০ টালা দিয়ে! বিদেশ যাচ্ছি ওখানে কত সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে!
যা হোক,যাচ্ছি ওদের বাসায় অদ্ভুত এক উত্তেজনা, ভাল লাগা, ভয়, মিক্সড একটা ফিলিং! আমার হার্ট বিট আমি শুনছি তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু যে বড় ভাই কিছু না জেনে আমাকে ঐ বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি যদি কিছু টের পেয়ে যান তাহলেত মুশকিল!

আবারো ফাষ্ট ফরোয়ার্ড!
দেখা হল কথা হল পরে ফোনেও আলাপ হল. আস্তে আস্তে টের পেলাম কোথায় যেন ছন্দ পতন হচ্ছে। ধর্ম-বর্ন, কালচার…সমস্যা না…… তার পরও যেন কি একটা নেই! নেই তো নেইই!

হিন্দি সিনেমাকে বিট করা প্রেম, বিদেশে আসা, এখন ছন্দ পতন হলে কেমন লাগে?
‘‘পতন হতে দিব না’’ এই জিদের বশে ঝুলে রইলাম আরো কিছুদিন!

একসময় বুঝলাম চোখ বন্ধ করে লেগে আছি ঠিকই কিন্তু নিজেকে কেমন যেন বোকা বোকা লাগে! এটা কিভাবে সম্ভব? ‘যার জন্যে এত কিছু তাকে না পাওয়া টাইপ ছোট লোক বা Idiot’-না নিজের ইমোশনটার অপমান হয়ে যাচ্ছে মনে করে বেশ আপসেট হয়ে গেলাম।
নিজের চোখে দেখা আজ পর্যন্ত সবচেয়ে সুন্দরি একজন নারীকে আমার ভাল লাগবে না তাতো হয় না! শেষ পর্যন্ত, দুই পক্ষই মেনে নিলাম আমাদের মধ্যে যা আছে তার চেয়ে ‘নেই’-টাই বেশি। অতএব, আজ দুজনার দুটি পথ......
অনেক অনেকদিন পরে আত্নস্থ্ করতেতে পারলাম আমার সেই সময়কার সেই অনুভুতি Idiotic আর বাড়াবাড়ি ইমোশন, আমার ঐসব হিন্দি সিনেমা বা কলেজ পড়ুয়া ঘুম হারাম হওয়া আবেগগুলোই আমাকে সাহয্য করেছে আজকের আমি হতে। তাই নিজেকে আর বোকা লাগে না । পাগলের মত প্রেমে পড়ার চাইতেও বড় পাগলামি হত সেই ইমোশনের কারনে যদি চখ বন্ধ করে লেগেই থাকতাম সেটা। এটা বুঝতে গিয়ে আমাকে আরো আমি হতে হয়েছে। জয়হোক আমার আমির।

পরিশেষঃ
আমার তখন তত স্বচ্ছল নয় এক বন্ধু প্লেনে ওঠার আগের রাতে ৩২০ টাকা দামের সেই মাগটা আমাকে কিনে দিয়েছিল। এমনভাবে সে মাগটা দিয়েছিল যেন, আমি যে টাকার অভাবে মাগটি কিনতে পারিনি ও যে সেটা জানে আমি সেটা বুঝতে না পারি! সেইদিন একজন বলল এত পুরানো মাগ ফেলে দেন না কেন, কতই বা দাম এটার? কি উত্তর দিব আমি, কত দাম এটির?

মির্জা


মন্তব্য

অনিকেত এর ছবি

মির্জা ভাই,

স্বপ্নের কাছাকাছি এক বাস্তবতার সময়ে আপনি নিঃশ্বাস নিয়ে এসেছেন। আপনি ভাগ্যবান।

আমার সকল শ্রদ্ধা তাদের জন্য যারা এই পাথর সময়েও সবুজ রাখে তাদের হৃদয়। এই হিসেবী সাবধানী লোকের ভীড়ে এখনো কিছু লোক কেবল যে স্বপ্ন দেখে, তাই নয়, সেই স্বপ্নের জন্য বাজী রাখে তাদের সকল কিছু। আমার সশ্রদ্ধ সালাম আপনার মত মানুষের জন্য যারা এখনো হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিতে পিছু পা হননা।

শুভেচ্ছা।

ঝরাপাতা এর ছবি

ভালো লেগেছে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লাগলো

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

মির্জা,

জানিনা আসলেই ঠিক করেছেন কিনা?
অনেক সময়,স্থান,পাত্র আছে যখন দেমাগ নয় দিলের কথা শুনতে হয় প্রবল ভাবে। আমার মনে হয় কথাটা ঠিক। আপনি কেন তা করলেন না?
হয়তো সেটা করলে এখন থেকে আরো বেশী মানসিক তৃপ্তিতে থাকতে পারতেন।
হয়তো.......।
........................................................
প্রীয়ক

আরিফ জেবতিক এর ছবি

একমত নই@প্রীয়ক ।
যখন বুঝতে পারবেন যে কিছু একটা কাজ করছে না আর আগের মতো , তখন সেটাকে আকড়ে ধরে রেখে কোন লাভ নেই ।

হয়তো উল্টোটাও হতে পারতো ।
হয়তো আজীবনের জন্য একটা মানসিক অশান্তি কেনা হতো জীবনের দামে ।

ধ্রুব হাসান এর ছবি

ভাইজান প্রত্তমে স্বওয়াগম এই ভার্সুয়াল ভূমে, চালাইয়া যান।
আমাদের সবার জীবনেই কি প্রথম প্রেম হিন্দি সিনেমা টাইপ (যা ওয়েষ্টার্ণ মুভি দ্বারা আক্রান্ত!) নয়? মাথায় একটা আইডিয়া এসছে, চলেন একটা জরিপ চালাই প্রথম পেমে সাক্সেসফুল মানুষগুলারে নিয়া! দেখা যাক কতভাগ মানুষ জীবনের মধ্যভাগ বা শেষভাগে এসে এখনো সেই আবেগে তাড়িত যা তার ছিলো একসময় জীবনে তার আরাধনা! বড় অদ্ভূত এই জীবন এত নাটক এত কাহিনী, শেষে আবার একি না পাওয়ার বিরহ! চলেন আমাদের পরিচিতদের নাম গোপন রেখেই শুরু করি জরিপটা (নাম গোপন করতে হবে ঘর যাতে না ভাঙ্গে)! যাউজ্ঞা লেখাটা পড়ে মজা পাইছি...cheers

নজমুল আলবাব এর ছবি

তুমিও তাইলে পেরেমে পড়ছিলা... হাসি

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।