ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পর্ব-৯।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৮/০২/২০০৮ - ১২:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পাশের পর আমিও আর দশটা ছেলের মতো লেগে পড়লাম ভর্তিপরীক্ষা নামের যুদ্ধে।
কোথায় এপ্লাই করা যায়, সেই চিন্তায় কালঘাম ছুটে যায়। এক বন্ধু বললো, যে সে নেভীতে চেষ্টা করবে। আমি অবাক। পড়াশুনা ছেড়ে দিচ্ছিস নাকি?
"নাহ-তা ঠিক না। তবে নেভীর লোকদের ইউনিফর্মটা বেশ লাগে আমার। তুইও এপ্লাই কর না।"
আমার সমস্যা অন্য জায়গায়। সাঁতার পারিনা। অতএব নেভীর চিন্তা বাদ।

আমার বাবা ছিলেন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। হিটলারের ছোট ভাই বললে অত্যুক্তি হবে না। তিনি কথা বলতেন সংক্ষেপে। আমাদের দায়িত্ব ছিল সেটার অর্থ বের করে তারপর তা মেনে চলা।

সেই সময় তিনি একদিন বললেন,"বুয়েটে এপ্লাই করার দরকার নাই।"
আমি অবাক। কেন, বুয়েট আবার কি দোষ করলো? কিন্তু তার কথার ব্যাখ্যা চাওয়ার মতো সাহস নাই কারো। মায়ের কাছে গেলাম। বাবার এই আদেশের মর্মার্থ কি?
তিন দিন পর শানে নুজুল পাওয়া গেল। সেই আমলে বুয়েট গ্রাজুয়েটরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারী চাকরি করতো। প্রাইভেট ফার্ম তখনো তেমন খুব একটা ছিলনা। আইটি সেক্টরটাই তখন আমাদের কল্পনার অতীত ছিল। যাই হোক, বাবার মনে ধারণা হয়েছে যে বুয়েট পাশ মানে সরকারী চাকরি, সরকারী চাকরি মানে ঘুষ খাওয়া, আর ঘুষখোর তৈরী করার জন্য তিনি এক পয়সাও খরচা করতে নারাজ।

তাহলে পড়বো কি? কেন ডাক্তারী। বাবার ইচ্ছে আমি ডাক্তার হই। তার ভাষায়, "কোন ডাক্তার কোনদিন না খেয়ে মারা যায় না"। আরো একটি কারণে তিনি ডাক্তারী পছন্দ করতেন যে এই পেশায় গেলে কারো কাছে চাকরি করতে হবে না। তিনি নিজেও চাকরি করেন নি। ডাক্তার হতে বলার পিছনে তৃতীয় কারণটি ছিল যে এই পেশায় গেলে আমি হয়তো পড়াশুনা শেষ করে আবার নিজের শহরে ফিরে আসবো। বাবা-মায়ের কাছে থাকবো। ঘরের খেয়ে নিজের লোকের উপকার করবো।

বাবার মাস্টার প্ল্যানে আমার কোন আপত্তি ছিলনা। কিন্তু এক বন্ধু উপদেশ দিলো যেন আমি একটা ব্যাক-আপ প্ল্যান রাখি।"ধর-তুই যদি ডাক্তারীতে চান্স না পাস?"
কথাতো ঠিক। তাহলে কি করা যায়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটা দিয়েই রাখি।

সে আমলে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের ভর্তি পরীক্ষা আলাদা ভাবে হোত। দিলাম কয়েকটা। টিকেও গেলাম কয়েকটাতে। এর মধ্যে একটাকে বেছে নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। তারপর মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার পালা।

সে এক করুণ ইতিহাস। সংক্ষেপে, ডাক্তারীতে চান্স পেলাম না। ভাইবা পরীক্ষার আগে এক অঘটন ঘটলো যাতে আমার মাথার ভিতরে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। সেই ভাইবা পরীক্ষাটি ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ পরীক্ষা। সেখানে আমাকে দশটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তর দিতে পেরেছিলাম মাত্র একটার। এবং সে উত্তরও ছিল ভুল।

বাড়ী ফিরলে বাবা জিজ্ঞেস করলেন,"কেমন হোল পরীক্ষা?"
আমিও বাবারই ছেলে। পাশ কাটিয়ে যাবার সময় সংক্ষেপে বললাম,"এইতো।"

পরের দুমাস কাটলো চরম আতংকে। রেজাল্ট বেরোলে বাবা কি করবে সেই শংকায় আমার রাতের ঘুম হারাম হোল।
কিন্তু আশ্চর্য্য-যেদিন রেজাল্ট বের হোল সেদিন বাবা কিন্তু আমার দুঃসংবাদে একটুও রাগেন নি। আমাকে ভালমন্দ কিছুই বলেননি কোনদিন। আজ বুঝি তিনি কতখানি আশাহত এবং বেদনাভারাক্রান্ত হয়েছিলেন। যদিও মুখে তাঁর কোন প্রকাশ ছিলনা।

আর কি? এবার ঢাকা যেতে হবে। "মোছ আঁখি, দুয়ার খোল, দাও বিদায়।" সুটকেস গোছানোর শুরু সেই থেকেই। আজ পর্যন্ত কতবার যে জিনিসপত্র প্যাক আর আনপ্যাক করলাম এই জীবনে তার হিসেব করতে গেলে বহু সময় লাগবে।

ঢাকা যাবার দুদিন আগে বাবা হঠাত্ মাকে ডেকে বললেন,"তুমি কিন্তু তোমার ছেলেকে বলে দিও যে আমি তার কোন রকম বেয়াদবী সহ্য করবো না।"
মা আমার সাত হাত পানির নীচে। আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি আরও নতুন কোন অঘটন ঘটিয়েছি কিনা। আমিও হতবাক। কেইস টা কি? ব্যাখ্যা পাওয়া গেল যথারীতি তিন দিন পর।
বাবাকে কে যেন বুঝিয়েছে,"ভাই সাহেব ছেলেকে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন সেতো ভাল কথা। কিন্তু মনে রাখবেন, ঢাকায় সবাই যায় একা কিন্তু ফিরে দুজনায়।"
একথা শুনে তো বাবার মাথায় হাত। সর্বনাশ-তার অপোগন্ড ছেলেটিকে কে যে কোথায় হাবিজাবি বুঝিয়ে কব্জা করে ফেলবে, কে জানে। তাই এই সতর্কবাণী।
এর টেক-হোম মেসেজ হচ্ছে,"ঢাকায় পড়তে যাচ্ছো, যাও। বাট নো প্রেম মহাব্বত।"
আমি শুনে হাসি। ভাবটা এমন যেন ঢাকার মেয়েরা সব কোমরে গামছা বেঁধে আমাকে ধরার জন্য বসে আছে।

যাবার দিন বাবা বললেন,"সামনে এগিয়ে যাও।" মা আঁচলে চোখ মুছলেন,"খোকা-ফিরে আসিস।" কোনটাই শেষমেশ করা হয়নি।

ঢাকাতে এসে আস্তে আস্তে মিশে যাই কার্জন হলের জীবনে। চারপাশে অসংখ্য ছেলেমেয়েরা কথায় কথায় হা হা হেসে ওঠে। আমি মুখ ফিরিয়ে নেই, ও জীবন আমার নয়। পড়াশুনা আর বন্ধুদের সাথে কেটে যায় টগবগে দুরন্ত সময়। কানে ভাসে বাবার সতর্কবাণী। মেয়েদের মুখের চাইতে বেশী আকর্ষনীয় মনে হয় কেমিক্যাল ইকুয়েশনকে। এইই ভাল আমার জন্য।

ভর দুপুরে একটি গাছতলায় বসে থাকা প্রেমিক যুগলকে দেখে মনে তাচ্ছিল্য জাগে। কবি না বলেছেন,"এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।" আমার যৌবনকে একটি গাছতলায় আটকে রাখার কথা চিন্তাই করতে পারিনা। নেমে পড়ি যুদ্ধের ময়দানে।

তুমি আশা হারিওনা বাবা- এবার আমি জিতবোই। যেমনটি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, তেমনি দৃঢ়তায় আমিও উচ্চারন করি,"ঘাতক তুমি সরে দাঁড়াও- এবার আমি গোলাপ নেবোই।" রাতের পর রাত কেটে যায় বিজ্ঞানের গোলকধাঁধাঁয়। ক্লান্তিতে মাথা নুয়ে আসে, কিন্তু তার পরও বইয়ের পাতা উলটে যাই। যুদ্ধ চলছে-যুদ্ধ। সাফল্যের গোলাপটি আমার চাইই চাই। কাঁটা যতই থাকুক না কেন।

মাঝে মাঝে কাজে ঢাকায় এলে বাবা আমার হলে আসেন আমাকে দেখতে। আমাদের ঘরের মেঝে ভর্তি সিগারেটের পোড়া টুকরো দেখে বাবা হয়তো ভাবেন এগুলো সব আমার রুমমেটদের কীর্তি। তার ছেলে নিশ্চয়ই এই জাতীয় নেশা-টেশা করতে পারেনা। আমি লজ্জায় গুটিয়ে যাই। মনে মনে বলি, "বাবা-তোমার ছেলে এত ভাল না।"
বাবা জিজ্ঞেস করেন,"পড়াশুনা ঠিকমতো হচ্ছে তো?"
আমি মাথা নাড়ি।
সবই ঠিকমতো হচ্ছে বাবা। এখন আমি আর সেই আগের খোকাটি নেই। এখন আমি অর্জুন। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখো, দেখো আমি কেমন ঋজু। লক্ষ্যভেদ আমি করবোই। ধনুকে জুড়েছি তীর, এই বিশ্ব চরাচরে আর কোন কিছুই নজরে পড়েনা আমার। নারীর সনাতনী মায়াকে উপেক্ষা করতে পারি আমি অনায়াসে।

আমি যেন কিংবদন্তীর সেই আদিম ব্যাধ,আমার ধনুকের ছিলা টানটান হয়ে আছে। আমার চোখে শুধুমাত্র গাছের ডালে বসে থাকা ছোট্ট সোনালী পাখীটির লাল চোখটি ছাড়া আর কিছুই নেই। জ্যামুক্ত আমার তীরটি এবার তার লক্ষ্যভেদে বিফল হবে না। বাবা-তুমি কোন চিন্তা করোনা।

বাবা এসবের কিছুই টের পান না। শুধু জিজ্ঞেস করেন,"আর কতদিন লাগবে তোর শেষ করতে?"

একদিন কে একজন বুদ্ধি দিল যে বিজ্ঞানের পাশাপাশি একটা বিদেশী ভাষা শেখা উচিত। তাহলে নাকি পিএইচডি করার সময়ে সুবিধা হবে (পরে জেনেছি এটি ডাহা মিথ্যে কথা)। যুদ্ধের ময়দানে যত অস্ত্র-সম্ভার বাড়ানো যায় ততই ভাল। ভর্তি হয়ে গেলাম বিদেশী ভাষার ক্লাশে। সেখানে পরিচয় হোল নাজমা আপার সাথে।

নাজমা আপা ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। খুব সম্ভবতঃ কেমিস্ট্রি পড়াতেন উনি। তিনিও বোধকরি আমার মতো একই রকম কোন বুদ্ধি শুনে বিদেশী ভাষা শিখতে এসেছিলেন। ভাষার ক্লাশের ছাত্র সংখ্যা তখন জনা আটেক হয়তো হবে। ক্লাশ হয় বিকেল পাঁচটার পর। সারদিন ধরে বিজ্ঞানের কচকচির পর বিদেশী ভাষার এবিসিডি শিখতে ভালই লাগতো।

নাজমা আপা কি এক অজ্ঞাত কারণে আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। ক্লাশের বিরতির সময় টুকটাক প্রশ্ন করতেন।
একদিন ক্লাশে এসে নাজমা আপা বললেন,"আজকে ক্লাশের পর তোমার একটু সাহায্য লাগবে। তুমি ফ্রি আছো তো?"
আমি মাথা নাড়ি। "কোন অসুবিধা নেই।"

ক্লাশ শেষ হবার পর বাইরে বেরিয়ে দেখি দুটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বয়েস পনেরো থেকে কুড়ির মধ্যে হবে। আপা বললেন,"নির্বাসিত, এরা আমার মামাতো বোন। ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। এদের জন্যেই তোমাকে লাগবে।"
"এদের জন্য আমাকে লাগবে মানে?"
"ভাবছি এদেরকে নিয়ে আজকে শিশুপার্কে যাবো। তুমি কি আমাদের সাথে থাকবে সেখানে? আমাদের সাথে কোন পুরুষ নেই বলে তোমাকে থাকতে বলছি।"

তখন শিশুপার্ক ছিল ঢাকার একটি প্রধান আকর্ষণীয় স্থান। আর তেমন কোন ভাল জায়গা না থাকার জন্য এখানেই সবাই এসে হুমড়ি খেয়ে পড়তো।

শিশুপার্কে যেতে আমার তেমন কোন অসুবিধা ছিলনা, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে তার পরদিনই আমার একটা বড় পরীক্ষা ছিল। আর নিজেকে এই তিনজনের বডিগার্ড হিসেবে ভাবতে ভাল লাগছিলনা।
তাই আপাকে বললাম আমার সমস্যার কথা। আপা জানতেন যে আমি পড়াশুনা নিয়ে সিরিয়াস, তাই উনি আর জোরাজুরি করলেন না। তবে বললেন, আমাকে একটা কাজ করেই দিতে হবে। সেটা হচ্ছে তাদেরকে শিশুপার্ক পর্যন্ত এগিয়ে দিতে হবে।

আমাদের ভাষার ক্লাশ তখন হোত কলাভবনের চারতলায়। ওখান থেকে আমরা হাঁটতে হাঁটতে আর্ট কলেজের পাশ দিয়ে চলে গেলাম শিশু পার্কে। শেষ বিকেলের লালচে আলোয় আমাদের চারদিক মায়াময় হয়ে ছিল।

শিশুপার্কের সামনে বেজায় ভিড়। নাজমা আপা বললেন,"তোমরা এখানে দাঁড়াও। আমি যেয়ে টিকিট কিনে আনি।"
আপা চলে গেলেন। মেয়েদুটি আমার কাছেই দাঁড়ানো। আমরা একে অন্যের সাথে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছি। এই অসহনীয় নীরবতার ভার কাটানোর জন্য আমি রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। সামনে দিয়ে অসংখ্য গাড়ি রিক্সা স্কুটার চলে যাচ্ছে। অফিস ফেরতা লোকেরা ফিরে যাচ্ছে আপন আবাসে। চলন্ত কোন কিছু দেখার মধ্যে এক ধরণের সম্মোহনী নেশা আছে। আমি যেন রাস্তা থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না।
এমনি সময় কেন যেন দুরের একটি রিক্সার দিকে চোখ পড়লো। রিক্সাতে বসে আছে একটি মানুষ। এদিকেই আসছে যেন রিক্সাটি। আরো কাছে এলে মানুষটাকে যেন আরো চেনা চেনা লাগে। আরো কাছে আসে, আরো আরো কাছে এসে এক সময় আমাদের ঠিক সামনে এসে থেমে যায় রিক্সাটি।
পড়ন্ত বিকেলের রোদে ঘোর লাগা চোখে আমি দেখি, রিক্সায় বসে থাকা মানুষটি আমার বাবা। মিস্টার হিটলার নাম্বার টু।
বাবা আমাকে দেখলেন। আমার দুই পাশের দুই ললনাকে দেখলেন। তারপর বললেন,"হঠাত্ করেই ঢাকা আসতে হোল। তোর ওখানেই যাচ্ছিলাম।"
লজ্জায় এবং নিজের উপর রাগে আমার চোখমুখ লাল হয়ে ওঠে। ঠোঁটে কোন শব্দ ফোটে না।
বাবা আবার বলেন,"তুই বোধহয় এখন ব্যস্ত। আমি তোর চাচার বাসায় উঠেছি। পারলে দেখা করিস একবার।"

আমি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে বাবার ফিরে যাওয়া দেখলাম। নাজমা আপা ফিরে এলেন একটু পরেই। আমাকে দেখে কেমন যেন চমকে উঠলেন। "শরীর খারাপ নয়তো তোমার? এমন ফ্যাকাশে লাগছে কেন তোমাকে?"

সেই সন্ধ্যেবেলা মাথা নীচু করে আমি হেঁটে গেলাম গোটা পথটি। পরাজিত মানুষের মতোন। আমি যেন আর সেই লক্ষ্যভেদী ব্যাধ নই, নই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ অর্জুন। আমি যেন শুধুই পথভ্রষ্ট একজন সাধারণ মানুষ। বাবা কি ভাবলেন? কতখানি আশাহত হলেন তিনি? কতখানি শংকা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন তিনি? নিশ্চয়ই তিনি ভাবছেন যে একদিন আমি জোড়ে এসে তাকে সালাম করবো।

রাগ হোল নিজের উপর, রাগ হোল নাজমা আপার উপর, রাগ হোল নাম না জানা দুটি মেয়ের উপর। ঢাকা দেখার তোমাদের এতই শখ, শিশু পার্ক দেখার এতই শখ?

সপ্তাহ খানেক পর কি একটা লম্বা ছুটিতে বাড়ি গেলাম। মাকে জিজ্ঞেস করলাম ঢাকা থেকে ফিরে বাবা আমার সম্পর্কে মাকে কোন কিছু বলেছেন কিনা। মা বললেন, "নাতো। কি ব্যাপার? কি করেছিস তুই আবার?"

ঢাকা ফিরে গেলাম ভূতগ্রস্থের মতো। অর্জুন, আমি অর্জুন। সোনালী পাখিটির লাল চোখ আমার চাইই চাই।

যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ রেজাল্ট বার হোল, সেদিন বাবাকে ফোন করেছিলাম।
"বাবা-আমি পাশ করেছি। ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট।"
ফোনের ওপাশে একটি লম্বা নিঃশ্বাসের আওয়াজ এলো। তারপর ভেসে এলো তার চেনা ভারী এবং গম্ভীর গলাটি।
"এখানকার পড়াশুনা শেষ তাহলে?"
"জ্বী বাবা।"
"এখনই চাকরি-টাকরি খুঁজতে যেয়োনা কিন্তু। আরো সামনে যেতে হবে। বাইরে যাবার চেষ্টা করো।"
"জ্বী বাবা।"
"তোর রেজাল্ট কি যেন বললি?"
"ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট বাবা।"
"সত্যি বলছিস?"
"হ্যাঁ বাবা, সত্যি।"
"তোর রেজাল্ট তো তাহলে খুবই ভাল হয়েছে। আমার খুব ভাল লাগছে, আমার খুব খুশী লাগছে।"

তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার হিটলার বাবা হাসতে লাগলেন। আমিও তার সাথে হাসতে থাকি। টেলিফোনের তার বেয়ে শুধু আমাদের সম্মিলিত হাসিটি এপাশ ওপাশ যাওয়া আসা করে। চোখের পানিটি কিন্তু যার যার চোখেই লেগে থাকে।

পিছনে হাত বাড়িয়ে তূণ থেকে তুলে নেই নতুন তীর। লাগাই ধনুকে। এবার আমার নতুন লক্ষ্য চাই। আমি অর্জুন, এবং আমি প্রস্তুত।


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

"তুমি কিন্তু তোমার ছেলেকে বলে দিও যে আমি তার কোন রকম বেয়াদবী সহ্য করবো না।"

আমি যেন কিংবদন্তীর সেই আদিম ব্যাধ,আমার ধনুকের ছিলা টানটান হয়ে আছে। আমার চোখে শুধুমাত্র গাছের ডালে বসে থাকা ছোট্ট সোনালী পাখীটির লাল চোখটি ছাড়া আর কিছুই নেই।

পিছনে হাত বাড়িয়ে তূণ থেকে তুলে নেই নতুন তীর। লাগাই ধনুকে। এবার আমার নতুন লক্ষ্য চাই। আমি অর্জুন, এবং আমি প্রস্তুত।

অসাধারণ ... অন্যগুলির মতই ...

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়বার এবং পছন্দ করার জন্য।

-নির্বাসিত

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই সিরিজটি গোড়ার দিকে মিস করে গেছি। এখন মাঝপথে এসে ধরতে চাই না। লক্ষ্য রাখছি, শেষ হলে সবগুলো একত্রে পড়বো। আমার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখা না!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে এই সিরিজটির প্রতিটি পর্বই স্বাধীন। আগের বা পরের পর্ব না পড়লেও চলবে।
কোন এক সময়ে পড়বেন আশা রাখি।

-নির্বাসিত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

নাম না দিলেও চিনতে অসুবিধা হলো না।
অর্জুনকে সবাই চিনেই নেয়।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

রানা মেহের এর ছবি

লেখা চলুক নিরবাসিত।
খুব ভালো লাগে পড়তে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আপনার হাতে যাদু আছে
---------------------------------
মহিব
ভাবসাব দেখে মনে হইল "উনি একজন মানুষ"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
-জাহিদ হোসেন (এ কে এ নির্বাসিত)

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।