বন্ধনের মানুষেরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০০৮ - ১০:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(ক্যামেলিয়া আলম)

প্রতিদিন ঠিক এক ইঞ্চি করে একা হচ্ছি আমি । একা- বিস্ময়কর রকম একা।
যা আমি চাইনি - যা আমি চাই না।

এই সেদিনও মিথ্যের আবরণে নিজেকে ঢেকে নিয়ে হাজির হতাম মায়ের কাছে। বানিয়ে বানিয়ে একগাঁদা কথা বলে মিথ্যে
সান্ত্বনা নিয়ে আদায় করতাম পাখি হয়ে উড়বার সুযোগ। কখনও দীঘির কৃষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে - কখনও সংসদের সিঁড়িতে বসে - কখনও মাঠে বন্ধুদের জমজমাট আড্ডায় আবার কখনও বা কারও চোখের উদাস চাহনিতে নিজের ডানা দুটো রাখতাম। কী আনন্দ - কী আনন্দ - কী আনন্দ। দীবারাত্রি মুক্তি নাচতো আমারই চোখের তারায়। উচ্ছলতায় আমার জীবনের সব কিছুই কত উজ্জ্বল - কত স্বচ্ছ - কত শুদ্ধ। সেই স্ফটিক ভেলায় চড়ে আমি দুলতাম - দুলতো আমার মন - দুলতো আমার খোঁপার জিনিয়া।

ডানার সেই বাতাসের ঝাঁপটা হয়তো লাগল পরিবারে। পরিবারের বুদ্ধিদীপ্ত ভালোবাসার কথায় আচমকাই লোভের পাঁকে পড়ে গেলাম একটা স্বাভাবিক জীবনের। প্রকৃতিকে শুনেছি কষ্ট দিতে নেই তবে নাকি প্রকৃতি নিজ হাতে তার শোধ নেয়। প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে সেই ডানাগুলো গুটিয়ে বসতে চাইলাম। সংসারী হলাম আমি। কিন্তু ডানায় তো লেগেছে বাতাসের স্পর্শ। সেই স্পর্শ চরম কামার্ত মুহূর্তের চাইতেও কামার্ত। চরমভাবে পুড়ছি - চরম আরও চরম। একসময়ে সেই পোড়া গন্ধ যখন নাকে এসে লাগে ছিটকে উঠি। নেমে পড়ি দীঘির নীল জলে। সেই আগের কৃষ্ণ জলের ছোঁয়া পাই আবারও। ডানাগুলো ঠিক করতে গিয়ে দেখি ওর কিছু গেছে পুড়ে - কিছু পালক গেছে খসে। বাদবাকি ডানার দিকে তাকিয়ে ভাবি কাজ চালাবার মতন অন্তত আছে। আবারও শুরু করি ওড়া। সেই পুরনো সাথীদের কাছে ফিরে যাই - নতুন আরও সাথী জোগাড় করি। তীব্র আনন্দে বুক ভরে যায় আমার। মনে হয় এই তো ফিরে পেলাম সে--ই পাখির জীবন। আর চিন্তা কী? কে বলে পুরনো সময় হারিয়ে যায়?

পুরনো সময় যে হারায় না ঐ সংসদের সিঁড়ি তার সাক্ষী - সাক্ষী বেতবনের কাঁচা বেতের গন্ধ - দীঘির কৃষ্ণ জল আর উদাসী চাহনি - ঐ তো ও-ও তার সাক্ষী। আর ওগুলো আবারও পাই আমার এই পাখি জীবনে। তাই কিছুই যায় না আমার নিজের জীবন থেকে সময় আর বয়সটুকু ছাড়া।

সময় আর বয়স - এই দুই না চাওয়া সঙ্গী সর্বক্ষণ আমাকে আঁকড়ে ধরে থাকে। এত অপছন্দের সাথী এরা আমার! আর কী আশ্চর্য আমার এই পাশে না চাওয়া সাথীরাই আমাকে জানিয়ে দিল ‘তুমি কিছুই পাওনি - আগের মতো’

পাইনি? আমি চমকে উঠি। চমকাই আমার সেই উদাস চাহনির কাছে এসে প্রথম। আমার এই পাখি মনকে খুব বেশি দিন কাঁটতে দিল না সে। তার সেই উদাস চোখে মাঝে মাঝে দেখি লোভ চমকায়। আমি কেঁপে উঠি। বারবার নিজেকে বলি - আমি ভুল দেখেছি - আমি ভুল ভেবেছি। ওর সেই মাদক কথা আমায় তবুও টানে। আমি ভুলে যাই - আমি সংসারী - আমি ভুলে যাই - ওর কথায় আমার বুকের নাচন ভুল। আমি উদাস হই - আমি উদাস হতে চাই। সংসারের গুমোট অন্ধকারে আমার ডানার গন্ধ উৎকট আকারে ঘুরে বেড়ায় - বেঁচে থাকবার তীব্র বাসনায় আমি রঞ্জিত হই। তাই একটা খোলা মাঠ আমার বড়ো বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে আছে সপ্তবর্ণের আলো - আছে ঝড়ের তাণ্ডব - আর সেই তাণ্ডবের অঝোর ধারা। আমি সিক্ত হই সেই চক্ষু জলে - আমার জীবন সিক্ত হয়। কিন্তু সেই ঝড়ে আমি উড়ে যেতে চাই না - নিজেকে আবিষ্কার করতে চাই না গাছের ডালে আবরণহীন মৃত। কিন্তু সময় আর বয়স আমাকে কিছুদিন যেতেই বোঝায়, এ তোমার সেই কাক্সিক্ষত মাঠ নয় - এ মাঠ মরুভূমির যেখানে ঝড় বালু আর কাঁটা গাছ উপড়ে আনা ছাড়া আর কিছুই আনে না - আনা যায় না। খুব অল্প দিনেই মাঠের মরুতা আমার চোখে পড়ে। চোখে পড়ে তখনই যখন ঝড় ওঠে। ঝড়ে সত্যি সত্যিই দেখি ঐ সবুজ মাঠের গাছগুলো ছিল কৃত্রিম - সাজানো - শুধুই চোখ ঠকানো। আবিষ্কার করার পর থেকে আমার সেই কষ্টে মেলা ডানা ঝপ করে বন্ধ হয়ে যায়; আমি মুখ থুবড়ে পড়ি।

কষ্টে আবার নিজেকে টেনে তুলি। টেনে তোলে আমার সেই পুরনো মানুষেরা। ওড়াওড়ির মাঝে এই প্রথম বিধিনিষেধ তুলি। উদাস চাহনি বাদে পাখির জীবন চালাই আগের মতন। কিন্তু ওড়ার সেই তৃপ্তি আর পাই না। মাঝে মাঝে থেমে থেমে পড়ি। থামাটা কিন্তু উদাস চাহনির জন্য নয় - ভয় পাই এবার সবটাতেই। মনে হয় সংসদের সিঁড়িগুলো কি এবার আমায় অন্য চেহারা দেখাবে নাকি ঐ স্বচ্ছ কৃষ্ণ জল?
আহত আর ভীরু মন নিয়ে আমার পাখি চোখ বারেবারে এপাশ ওপাশ দেখে আর আমি একটা ঘূর্ণিতে আটকে পড়ি। সেই ঘূর্ণির ভয় কমাতে আমি এবার নিজেকে নিয়ে ভাবতে বসি। অনেক আকাশ কুসুম ভাবনায় নিজেকে আবৃত করে রাখি। আমার সেই আড্ডার সাথীরা আমার ভাবনার সাথী হতে চায়। আর আমি ভয় পাই আবার না সেই মরুঝড় দেখতে হয় আমাকে। আড্ডার সাথীদের কেউ কেউ আমায় দোষারোপ করে - কেউ কেউ আমায় ব্রহ্মাণ্ড চেনাতে আসে - কেউ কেউ আমায় ধমকায়। আমার পাখি মন বিক্ষিপ্ত হয় - বিরক্ত হয়। কিন্তু দূরে সরাতে পারে না। পারে না এই জন্য যে, ওরা তো কোনো কৃত্রিমতা দিয়ে আমায় ভোলাতে আসে না। বরং আমার ডানাগুলোর সুস্থতা দেখতে চায় - তাই হয়তো বা নিয়মের বিধিমালাগুলো আমার ওপর চাপায়। কিন্তু আমার যে বয়স বেড়ে গেছে - কারও বিধিমালা মেনে আর চলতে পারি না আমি। তবুও একা হয়ে যাবার ভয়ে ওদের সাথে ভাব রাখি। আর সবচেয়ে বড়ো কথা ওরা তো এই বিধিমালার ফাঁকে ফাঁকে আনন্দও দেয় আমাকে। আমি সেই নিংড়ানো আনন্দেরও তো কাঙাল।

আমার কাঙালিপণার জেরে ওরা যা বলে আমি তাই তাই করার চেষ্টা করি। ওরা যখন বলে ওড়ো তখন আমি উড়ি আর যখন বলে এখন যাও বিশ্রাম নাও। আমি একটু ভেবে বিশ্রাম নিয়ে নেই। ওরা হয়তো তাতেই খুশি হয় বা খুশির ভান করে। আর আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিধিমালার ফাঁকে ওরা আমাকে কিছুদিন রেখে তারপর ছাড় দেয়। আমি ফুরুৎ করে নিয়মের বেড়া গলে উড়ে পালাই। আনন্দ আর আনন্দে কাঁটে আমার জীবন। কিছুদিন মুক্ত হাওয়ায় রোদের রঙে আমার পালক হলুদাভ হয় - সবুজ লেগে লেগে বুকটুকু সবুজ আর শ্যাওলা ধরা কৃষ্ণ জলের দীঘি দেখে দেখে চোখ বাদামি হয়। এবার ওদের চোখেও চমক লাগে। আমাকে জানায় যে, ওদের তৈরি বিধিনিষেধগুলো আসলে ভুলই ছিল। আমি সুখী হই। আবার ওদের আপন লাগে। একেবারে ওদের শরীরের কাছাকাছি চলে যাই। এমন এক সময়ে এই বনের পাখিটিকে একদিন আড্ডার একজন বনে আমন্ত্রণ জানায়। আমি সংসার ভুলে উড়ে উড়ে যাই। বুনো বাতাস নিতে - পাতার নিঃশব্দ ধ্বনি কান পেতে শুনতে। চারপাশে মৌ মৌ গন্ধে আমি মাতোয়ারা হয়ে উঠি। আমার ডানায় বনের হাওয়াগুলো শিরশিরিয়ে যায়। আমি শিহরিত হই - রোমাঞ্চিত হই। আচমকা সেই রোমাঞ্চে কাঁপুনি লাগে। আমার বয়স আবিষ্কার করায়, ওর আর আমার চাওয়া বন ভিন্ন। ও চায় বনে এসে সৌরিক হতে আর আমি চাই বনপাখি হতে। ওর কুৎসিত চেহারা আমাকে বিভ্রান্ত করে - আমার স্বপ্নে দেখা বনটি এক নিমিষে হয়ে যায় খড়ির কাঠ প্রাপ্তির স্থানে। আমি থমকে যাই - বিস্মিত হই - ওর দেয়া অপমানের বিছুটি আমার মনকে খর করে। আমি দিকভ্রান্ত হয়ে আবার ঘূর্ণির পাঁকে পরি। তীব্র কষ্ট বেদনা ভুলতে আমি উচ্ছ্বসিত হবার ভান করি। আর করি আবার একটা ভুল।

উচ্ছ্বসিত হবার অভিনয় করতে গিয়ে আনন্দে মাতি সবার সাথে যখন তখন। আড্ডার আরও একজন আমাকে নষ্ট পাখি নামে ভাবে। আর ভেবেই ক্ষান্ত হয় না সে, আমার চারপাশে ফুল - লতা - বৃক্ষকে চিৎকার করে বলতে থাকে যে আমি একটা নষ্ট পাখি। আমি একটা নষ্ট পাখি। আমায় ঠাঁই যেন ওরা কখনও না দেয়। বৃক্ষ - লতা - পাতা থমকায়। অবিশ্বাসী চোখে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখে। ওদের বিস্ময়ের চোখ আমাকে কুপিত করে। আমি আহত হই - আহত হই - আহত হই। আমার আহত চোখ দেখে, কী জানি কেন - ওদের মায়া হয়। ওকে উপচে আমায় কাছে টেনে নেয়। কিন্তু তবুও আমার সেই পুরনো মন আর ফেরে না। আর আমি একাকী হয়ে - বিস্মিত হয়ে চুপ করে বসে থাকি।

একাকী সময়ের কষ্ট এড়াতে কতভাবে না নিজেকে কাজে জড়াই। কাজ, কাজ আর কাজ দিয়ে ভুলিয়ে রাখি নিজেকে। নষ্ট পাখি নামদাতা আর সৌরিককে এড়াতে সবুজ বুকখানি একটু কেটে ওদের নাম ধারণ করা কালচে রক্ত ফেলে দেই। আমার আরও প্রিয় মানুষেরা আমায় দোষারোপ করে বলে যে, দুদিন পর ওদের নামের রক্তগুলোও ফেলে দেবো। ওরা ভাবে যে আমার আড্ডার বন্ধুরা আমার স্বার্থের প্রয়োজনের আর আমি থমকানো মন নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। বন্ধু কখনও স্বার্থের প্রয়োজনে হয় এ তো কখনও ভাবিনি। আমার কষ্ট পাওয়া মনের জড়ানো কথাকেই ওরা সত্য বলে আঁকড়ে ধরে আর আমাকে আঙুল তুলে দেখায় যে, স্বার্থপর! স্বার্থপর! স্বার্থপর!

আমার ডানাগুলো আর বাতাসের গন্ধে উদ্বেলিত হতে চায় না। বাতাসের ঝাপটা এখন শীতল মনে হয়। তাই নিজেকে আরও কাজের মাঝে ডুবিয়ে ঘরকুনো হয়ে যাই। ভাবি যে বর্ণের পাতাতেই নিজেকে ধরে রাখব। ছুটে ছুটে বর্ণ আনি এখান থেকে সেখানে - সেখান থেকে এখানে। সারাক্ষণ বর্ণের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখি। দীঘির জল আর বাতাসের চাইতে মূক বর্ণগুলো হয়ে ওঠে আমার পরম সাথী। আমি পরিতৃপ্ত হয়ে আবার স্বাভাবিক হই। অনেকদিন পর ডানা ঝাপটাই - আমি সুখী হই। আর আশ্চর্যের কথা আমার সবুজ বুক আবারও শিরশিরিয়ে ওঠে যা অ-নেক দিন আগে হারিয়েছিলাম। আমি বাদামি চোখে নীল আকাশ দেখি প্রাণ ভরে। অনুভব করি আকাশের ঐ নীলিমা ঠিক আমার চোখের মাঝখানটিতে এসে লাগল। আরও অদ্ভুত সুন্দর হল আমার চোখ। তবে সবচেয়ে অবাক হলাম যে, আমার দৃষ্টি মনে হচ্ছে আরও স্বচ্ছ। আমি অভিভূত হয়ে পরীক্ষা করতে চাইলাম - যা ভাবছি তা কি সত্যি? দূরের একটা সবুজ বনভূমির দিকে দৃষ্টি রাখলাম। বিস্ময়াভিভূত হয়ে দেখতে পেলাম গাছের প্রতিটি পাতা। গাছের পাতায় চোখ রাখলাম দেখলাম রঙিন পোকার বসতি। ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কুচি করে কাটছে পাতাটা। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম ওর ভোজন। মাঝপথে থেমে গেলো - তাকাল এপাশ ওপাশ - আশ্চর্য আমি সব দেখতে পারছি। দৃষ্টি এবার সরালাম গাছের কাণ্ডে। পিঁপড়ের সারি দল বেঁধে যাচ্ছে - কারও মুখে লাল বিন্দু - কারও মুখে সবুজ আবার কারও মুখে বাদামি। একটা ডালে ছোট পাখি এসে বসল - আমি চিনলাম ও টুনটুনি। টুনটুনির ছোট শরীরের কাছে যেতেই দেখলাম ওর ডানার একটি পালক কালচে সোনালি। বাতাস এসে হানা দিচ্ছে ওর সেই ডানায় আর ও আয়েশে চোখ বুঁজে ফেলছে।

আমার দৃষ্টির এই অদ্ভুত উত্তরণে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা জানালাম। আকাশ ডেকে উঠল। দলে দলে মেঘেরা আনন্দের নৃত্য শুরু করল। সেই নৃত্যে সিক্ত হলাম আমি। জলবিন্দু আমার প্রতিটি রোমকূপ গড়িয়ে পাতালে হারিয়ে গেলো। জলের স্পর্শে আমার হাত পা শরীর দোল খেল। আর একবিন্দুও স্থির থাকতে পারলাম না আমি । মাতাল হয়ে গেলাম বাতাসের গন্ধে - জলের স্পর্শে। মাভৈ মাভৈ তানে আমি আবারও উড়তে শুরু করলাম।

উড়তে উড়তে আমি যখন অনেক দূর যাবার কথা ভাবছি ঠিক তখনই আমার আড্ডার অন্য বন্ধুরা এসে ঘিরে ধরলো। আনন্দে আমি আবারও উদ্বেলিত হলাম। কতদিন পর ওদের কাছে কইলাম প্রাণের কথা - মনের কথা। মন আমার হালকা হয়ে গেলো। উচ্ছ্বাসের উত্তাপ গায়ে মেখে আমার ভোর মধ্যাহ্ন অপরাহ্ন রাত্রি গড়াল। পুলকিত বেশে আবারও আমি নিজেকে রাখলাম মুক্ত হাওয়ায়। কিন্তু ঐ যে বয়স আর সময় আমাকে বারবার দাঁড় করায় সত্যের লেলিহান শিখায় - তার থেকে আমার মুক্তি কই?
কিছুদিন যেতেই দেখলাম আমার বন্ধুদের চোখে আমি যেন এক পোড়ো মন্দির। কেউ কেউ আমার সকল প্রাপ্তি নিয়েই প্রশ্ন তোলে - কেউ কেউ সেই প্রাপ্তি নিয়ে করে উপহাস। কোন প্রাপ্যই নাকি আমার নিজের নয় অন্যের। সকলে আমায় দয়া করে! আমি হোঁচট খাই কিন্তু ভেঙে পরি না। আমার এক কালের সাথীরা একটু একটু করে আমার দূরে সরতে থাকে। শরীরে নয় মনে।

আকাশ থেকে পাওয়া স্বচ্ছ চোখের দৃষ্টিতে ওদের সোনালি রুপোলি বুকগুলো দেখতে পাই আমি। আর অবাক বিস্ময়ে দেখি যে, সেখানে আমাকে নিয়ে ওদের কারও করুণা, কারও ঈর্ষা, কারও বিরক্ত জমে আছে। আমার এক কালের সাথীরা! আমার জন্য নেই যাদের বিন্দু ভালোবাসা। আজ আমার ডানা দুটো আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ায়। চারিদিকে শুধু শূন্যতা। ভয়ে মাঝে মাঝে চোখ বুঁজে থাকি। আলো দেখা চোখ সেই অন্ধকারও সইতে পারে না বেশিদিন। দৃষ্টি খুলি দেখি এবার পুরো পৃথিবীই আঁধারে ঢাকা। সেই আঁধারে আমি পথ হাতড়ে চলি। হোঁচট খাই - উঠে দাঁড়িয়ে রক্তকণা চুষে নেই - মাটি হাতড়ে ঘন দুর্বা ঘাস নিয়ে দাঁত দিয়ে চিড়ে আঘাত পাওয়া স্থানগুলোয় বুলাই। একটু একটু করে আঁধার কাটে। আমি পরিষ্কার পথ দেখতে পাই। কিন্তু দেখি সেই পথে সবকিছুই একাকী। বুড়ো বট গাছ একাকী দাঁড়ানো - দীঘি এখন কালো ডোবা আর দূরে একটাই শূন্য মাঠ। আকাশে দৃষ্টি রাখি - সেখানেও আর অজস্র আলো দেখতে পাই না। দেখি একটি মাত্র সূর্য - আর একটি মাত্র চাঁদ।

বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে সেই পথে দৃষ্টি রাখি। আরও জোড়ে শ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করি - তারপর ঐ পথে পা বাড়াই।
২৩ এপ্রিল, ২০০৭


মন্তব্য

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বর্ণের পাতাতেই মুক্তি! বর্ণেই আশার বাণী! বর্ণেই থাকুন!
ভালো থাকুন। সুখী হোন।
আপনার লেখাটা ভালো লেগেছে।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মানুষ আমি আমার কেন পাখির মতো মন....

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অন্তরবাদ্যি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

উড়ার প্রযুক্তি জানলেই ওড়া যায় না
উড়তে হলে জানতে হয় উড়ার রাজনীতি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সেই ওড়ার রাজনীতিই নাহয় শিখিয়ে দেন।
তবুও উড়ি...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মাপ করে দেন
উপদেশ দেয়া শিখলেও বুদ্ধি দেয়াতো শিখিনি

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মাহবুব লীলেন লিখেছেন:
উড়ার প্রযুক্তি জানলেই ওড়া যায় না
উড়তে হলে জানতে হয় উড়ার রাজনীতি

১০০% একমত।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লতার একটা গান আছে, 'বড় বিষাদ ভরা রজনী'। খুবই টেরেজিটিক গান, গালো লাগবো। গানের দুঃখে মনের দুঃখে কাটাকাটি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।