"জল পড়ে পাতা নড়ে, জরিনার কথা মনে পড়ে"

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৮/০৩/২০০৮ - ১২:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

~জল পড়ে পাতা নড়ে, জরিনার কথা মনে পড়ে ~
সেই সময়গুলানে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যাইতো না। আলু গুদামঘরে তুইলা রাখার পর শুকনা ক্ষ্যাতে হাল দিয়া ফালাইয়া রাখলে উথালপাতাল বাতাস মিয়া ধূলা বেগমের সাথে গলাগলি করতো। চৈত্র মাসের খরায় ধূলার ঝড়ের হাত থাইকা বাঁচনের জন্যে আমরা স্কুল-বন্ধ পুলাপান বাঁশতলার নিচে জমির মিয়ার দোকানের পাশে আটাঁলে বসতে পারতাম না।
বড়দিঘীর পাড়ে ঘাসের উপর শুইয়া থাকতাম আধাদিন, আমাদের শয়নে স্বপনে তখন অঞ্জু ঘোষে আইসা হানা দিতো।

আমরা পুলাপান তখন বড়দিঘীর হানিফ সর্দারের অংশে মাছ ধরি, শামসুল মেম্বারের অংশে পানিতে ডুব দিয়া আসি।

বড়দিঘীর মালিকানা নিয়া অনেক ভেজাল হইসে; আগের বছর আশ্বিনে কফিলুদ্দি তার ভাই বাংটু রে দা দিয়া কোপানোর পেছনেও নাকি বড়দিঘীর সম্পত্তির অংশ নিয়া ভেজাল।
আমার সবচেয়ে কাছের লোক, আমাদের পুলাপান দলের মাথা আমার কেলাসমেট কিন্তুক তিন বছরের বড় মোশা মামার কাছ থাইকা শোনা গল্প।

ধূলার থাইকা বাঁচনের জন্যে আমগো মা-খালায় রান্ধনঘরে, সস্তায় পুরান কাপড় অদল-বদল কইরা কেনা ডেগচিতে ভাত রাইন্ধা পানি ঢাইলা রাখতো আর নতুন আলুর ভর্তা দিয়া আমরা পুলাপান বাড়িত আইসা পান্তা ভরপেট খাইতাম। তারপর লুঙ্গি দিয়া হাত মোছা হইলে, বাড়ির বাইরের বৈঠকখানা, রোজার মাসে যেইখানে কষ্টের তারাবির নামাজ পড়তে হইতো আমরা পুলাপানরে, সেইখানে গিয়া আমরা শুইয়া থাকতাম গাছের পাতার দিকে তাকাইয়া।

তো, সেইদিনও আকাশে সুর্য আছিলো, মৃদুমন্দ বাতাসে আমারো মন ছিলো উচাটন। আমার গান গাইতে ইচ্ছা করলো ভীষণ। সে ইচ্ছা পুরাপুরি ত্যাগের ইচ্ছা, মনের মধ্যে পুইষা রাখা অনেকদিনের ভাব যেনো একদিনেই বাইরাইয়া যাইতে চায়। আমি ধরলাম গান.. "না রে জরিনা....., আমি কি তোর আপন ছিলাম না?"

পড়বি তো তোর মালির ঘাড়ে, ব্যাটা ছিলো বৈঠকখানার পেছনে। আমার ঘরজামাই বাপে, শামসুল মেম্বারের সাথে কি জানি চাষবাসের আলাপ করতেছিলো। তারে ছুইটা যাইতে দেখলাম গোয়াইলঘরের পিছনে, বাইরায়া আসতে দেখলাম কঞ্চি নিয়া।

আমার তখন বয়স তেরো, পড়ি গঞ্জের স্কুলে কেলাস সেভেনে, জরিনা বিষয়ক বোধ জাগ্রত হওয়ার জন্যে বড়ই কাঁচা বয়স। কাজেই বুঝবার পারতেসেন, আমার বাপে কঞ্চি খুঁজতে গেছিলো ক্যান।

ক্লিওপেট্রা রূপী এই জরিনা কে, আর কঞ্চির দাগ কয়দিন ছিলো, আর আমার জীবনে জরিনার অবদানের ইতিহাস না হয় আরেকদিন শুইনেন। আইজকা এই পর্যন্তই।



----
তাসিফ আহসান দীপ্ত
tasif.ahsan at gmail.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ও জরিনা গেসস কিনা ভুইল্লা আময়ারে।অপেক্ষায় থাকলাম।
-নিরিবিলি

তাসিফ আহসান দীপ্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। এটাই আমার প্রথম লেখা এখানে।

দ্রোহী এর ছবি

জরিনার গল্প ছাড়েন। মাইয়াটা ক্যাডা?


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি
পরিবর্তনশীল এর ছবি

জরিনার লাইগা অপেক্ষায় থাকলাম দেঁতো হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

তাসিফ আহসান দীপ্ত:
আপনার প্রথম লেখাতেই জাঝা।
নিয়মিত লিখুন, সচল থাকুন।

তাসিফ আহসান দীপ্ত এর ছবি

নিরিবিলি, দ্রোহী, ধূসরগোধুলি, পরিবর্তনশীল, সাদাত শিমুল,
ধন্যবাদ, প্রথম লেখায় এইভাবে উতসাহ দেবার জন্যে। আশাকরি, এইরকম করে আরো লিখতে পারবো।

ধুসরগোধুলি, অঞ্জু ঘোষ এখনো সম্ভবত এই গল্পের কথকের মনে সবুজ হয়ে আছেন। দ্রোহী, কার কথা জিজ্ঞেস করছেন? জরিনার গল্প নিয়ে কথক আরেকদিন হাজির হবে না হয়।

ধন্যবাদ মডারেটরকে এই লেখাটা প্রথম পাতায় এনে দেবার জন্যে।
সবাইকে শুভেচ্ছা।

তাসিফ আহসান দীপ্ত
tasif.ahsan @ gmail.com

জাহিদ হোসেন এর ছবি

জরিনা বেগম তো এখন আমাদের ঘুম হারাম করে দিল। তারপর কি হোল তা জানা পর্যন্ত মনে হয় ঘুম আসবে না।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সৌরভ এর ছবি

খাইসে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

আর কত অপেক্ষা করাইবেন দীপ্ত ভাই?
তাড়াতাড়ি পরেরপর্ব দেন-
-
নায়েফ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।