If I could Save Time in a Bottle

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ৩০/০৪/২০০৮ - ৩:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক
"If I could save time in a bottle
The first thing that Id like to do
Is to save every day
Till eternity passes away
Just to spend them with you"

Jim Croce এর গানটা রাহাত শুনে যাচ্ছে সেই সকাল থেকে। আর চোখ বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে অবিরত। মনে হচ্ছে গানটা তাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছিল।

ভাগ্য ভালো বাসায় কেউ নেই এখন, অন্তত মন খুলে কাঁদতে পারছে সে। আফিসে যায় নি আজকে সে। ছুটি নিয়েছে এক সপ্তাহের। স্বাগতা অবশ্য অবাক হয়েছিল এক সপ্তাহের ছুটি নেয়ার কথা শুনে। কারণ রাহাত ছুটি বলতে গেলে নেয়ই না। ভীষণ কাজ পাগল ও।

স্বাগতার বহুদিনের স্বপ্ন কক্সবাজার বেড়াতে যাবে। কাজের ব্যস্ততা, টাকা পয়সার টানা টানি, বিভিন্ন কারণে কখন ও আর যাওয়া হয় নি কক্সবাজার।

সে জন্য, রাহাত যখন বলল, সে অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে, স্বাগতাও যেন তার স্কুল থেকে এক সপ্তাহের ছুটি ম্যানেজ করে, স্বাগতা ভারী অবাক হয়েছিল। তারপর রাহাত যখন কক্সবাজার যাওয়ার টিকেট দেখালো, স্বাগতা খুশীতে চিতকার করে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল।

অভাব মানুষকে কত অল্পতে খুশী হতে শেখায়!

দুই
রাহাত আর স্বাগতার পরিচয় বছর দুয়েক আগে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই। রাহাত এমনি এমনি দুষ্টামি করে স্বাগতাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছিল।

"যদি ও আপনাকে আমি চিনি না, তারপর ও আপনি যে অসম্ভব সুন্দর, একথা বলতে হলে নিশ্চয়ই আপনার পূর্ব পরিচিত হতে হবে না.."

স্বাগতা ও এমনি এমনি উত্তর পাঠিয়েছিল, "থ্যাঙ্কস, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে আমি আপনার সম্বন্ধে একি কথা বলতে পারছি না..."

শুরুটা হয়েছিল এভাবেই।

এরপর আস্তে আস্তে প্রথমে ফেসবুকে ম্যাসেজ আদান প্রদান, তারপর ম্যসেঞ্জারে কথা। এভাবেই ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগল। কিন্তু স্বাগতা তখনো অন্যরকম কোন কিছু ভাবে নি। এমনি গল্প করতো।

তারপর একদিন রাহাত খুব করে ধরলো দেখা করার জন্য। একি শহরে থাকি, এতদিন ধরে কথা বার্তা হচ্ছে, চলেন দেখা করি। স্বাগতা এটা সেটা বলে পিছলানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু রাহাত নাছোড়বান্দা।

অবশেষে স্বাগতা রাহাতকে ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে অপেক্ষা করতে বলল সকাল ১০ টায়।

তিন
রাহাত সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দাড়িয়ে আছে ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে। হুড তোলা কোন রিক্সা আসলেই আড়চোখে লক্ষ্য করছে।জানে, স্বাগতা ১০ টার সময় আসার কথা দিয়েছে, এবং খুব সম্ভব ১০ টার পরেই আসবে, ১০ টার আগে তো আসার প্রশ্নই উঠে না। তারপর ও প্রতিটা রিক্সা থেকে কোন মেয়ে নামলেই রাহাতের মনে হয় এই বুঝি স্বাগতা নামলো।

দেখতে দেখতে ১০ টা বাজলো, সাড়ে ১০ টা, ১১ টা, স্বাগতার আসার নাম নেই।

রাহাত কি করবে বুঝতে পারছিল না। মনে হচ্ছে স্বাগতা আর আসবে না। কিন্তু কেন? আর একটু দেখি আর একটু দেখি করতে করতে রাহাত ১ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলো।

এ পর্যায়ে রাহাত নিঃসন্দেহ হয়ে গেল যে স্বাগতা আসবে না। রাহাতের কেন জানি নিজের উপর খুব রাগ হল। এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিল বলে। কিন্তু ওর রোখ চেপে গেল। স্বাগতা আসুক আর না আসুক ও দাঁড়িয়েই থাকবে এখানে।

চার
স্বাগতা আজকে ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে যায় নি সকাল ১০ টার সময়। ইচ্ছে করেই। রাহাত হইতো ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে পরে চলে গেছে। আজকে অনলাইনে আসলে হয়তো রাগারাগি করবে।

ওদের কথা হত বিকাল ৬ টার দিকে। স্বাগতা সাইন ইন করলো, রাহাত অনলাইনে নেই। কি ব্যাপার? রাগ করলো নাকি? অন্যদিন তো এসময় অনলাইনে ই থাকে।

সন্ধ্যা ৭ টা বাজে, রাহাত নেই। ৮ টা বাজে, রাহাত নেই। স্বাগতার কেমন জানি লাগতে লাগল। হঠাত মনে হল, রাহাত এখনো ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে নেই তো? আবার একটু পরে নিজেই ভাবে, ধুর, এই সময়ে ও ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন?

৯ টার সময় ও যখন রাহাত অনলাইনে এল না, তখন স্বাগতার খুব অস্থির লাগতে লাগল। ওর নিশ্চিত মনে হতে লাগলো, রাহাত এখনো ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে ও মাকে তানিয়াদের বাসায় যাওয়ার নাম করে বেরুলো। বলল, পরের দিন পরীক্ষা আছে, কিছু নোটের দরকার, ১০ টার মধ্যে ফিরে আসবে।

পাঁচ
স্বাগতা ইষ্টার্ণ প্লাজার সামনে এসে নামল রাত পৌনে দশটায়। ও বুঝতে পারছে, এত রাতে শুধু শুধু এখানে আসাটা বোকার মত কাজ হয়েছে। শুধু এক পলক দেখেই চলে যাবে সে, ভাবল মনে মনে।

রিক্সা ওয়ালাকে বললো, পঁচ মিনিট অপেক্ষা করেন ভাই, আমি আবার ফিরে যাব। রিক্সাওয়ালা বলল, জ্বি আপা।

ছয়
রাত প্রায় ১০ টা বাজে। ঠিক ১০ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে, রাহাত ভাবল, তারপর চলে যাবে। এখনো কি আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে জানে না, কিন্তু এতক্ষণ যেহেতু দাঁড়িয়ে আছে, সেহেতু কাটায় কাটায় ১০ টা পর্যন্তই অপেক্ষা করা যাক।

এমন সময় মনে হল যেন সে স্বপ্ন দেখছে। রিক্সা থেকে নেমে আসছে স্বাগতা।

সাত
পুরানো কথা মনে করে নিজেকে বড্ড সুখী মনে হতে লাগল রাহাতের। কান্না ও যেন একটু কমে এসেছে। স্বাগতার ও স্কুল থেকে ফিরে আসার সময় হয়ে এসেছে। ও স্কুলে গেছে শুধু ছুটির এপ্লিকেশন জমা দিতে। ও ফিরলেই খেয়ে দেয়ে দুপুরে রওয়ানা দিবে কলাবাগান থেকে। কিন্তু কিভাবে সে বলবে কথা টা স্বাগতাকে?

আট
সপ্তাহ দুয়েক আগে রাহাত গিয়েছিল রাজীবের চেম্বারে। রাজীব ডাক্তার,রাহাতের ছোটবেলার বন্ধু। রাহাতের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না বেশ কিছুদিন থেকে। কাউকে বলে নি। ভেবেছিল, এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে। অবশেষে একদিন থাকতে না পেরে ভাবল, রাজীবের ওখানেই যাওয়া যাক, অনেক দিন দেখা হয় না, আড্ডা ও মারা হল, ডাক্তার ও দেখানো হল।

স্বাগতাকে কিছু জানায়নি। একা একাই গিয়েছিল।

কিন্তু রাহাত কল্পনা ও করতে পারে নি, ওর জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ ওকে শুনতে হবে ওরই বাল্য বন্ধুর কাছ থেকে।

রাহাতের প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার ধরা পড়েছে। রাজীব বলেছে, আর ৩ থেকে ৬ মাস সময় আছে হাতে। শুনে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। রাজীব ও বসে ছিল অন্ধকার মুখ করে। অবশেষে আর কাউকে জানাতে না করে রাহাত বেরিয়ে এসেছিল রাজীবের চেম্বার থেকে।

নয়
কলিং বেল বাজছে। স্বাগতা চলে এসেছে। রাহাত গান বন্ধ করে দরজা খুলতে গেল।
স্বাগতার হাতে ২ টা কদবেল দেখা যাচ্ছে। কদবেল রাহাতের খুব প্রিয়।
কথাটা স্বাগতাকে কখন বলবে ও? কিভাবে বলবে?

গান টা এখনো মাথার ভেতর বেজে যাচ্ছে।

If I could save time in a bottle
The first thing that Id like to do
Is to save every day
Till eternity passes away
Just to spend them with you...

(রেনেট)


মন্তব্য

নিঝুম এর ছবি

তুইও তো কান্না কাটিতে কম যাস না !!লেখা ভালো হইসে। সব শেষে কদবেলের কথাটা দেইখা ভাব্লাম, ফাজলামি করস নাকি!!!
--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

অতিথি লেখক এর ছবি

ও...।হুমম...তুই বলার পর পড়ে দেখলাম...শেষের লাইন্টা একটু ঘোলাটে হয়ে গেল বোধ হয়...কদবেল ভালো লাগার কথা কখন কিভাবে বলবে এটা বুঝাতে চাই নি...কদবেল তো স্বাগতা হাতে করে নিয়েই এসেছে, রাহাতের কথা মনে করে।
যা বলতে চেয়েছিলাম, রাহাত চিন্তা করছে, ওর ক্যান্সারের কথা কখন, কিভাবে স্বাগতা কে বলবে...
ধুর...এখন কারেকশন করার ও উপায় নাই মন খারাপ
~রেনেট

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ইসস, খুব কষ্ট লাগছে, আপনি এত্ত ভালো লিখেছেন :'(
মিনি উপন্যাস টা আরো বড় করলে আরো ভালো লাগত হাসি

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার কাছে শেষের লাইনটা অপাংক্তেয় মনে হয় নি। ঠিকি আছে। হাসি

ছোট গল্প যেহেতু, পাঠক যেকোন ভাবেই তার পরিসমাপ্তি চিন্তা করতে পারে। চলুক

ইয়া হাবিবি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

তারেক এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে।
জিম ক্রোচে'র এই অসাধারণ গানটা আমার ভীষণ প্রিয়। এটা গাওয়া হয়েছিল বোধহয় তার নবজাতক সন্তানের উদ্দেশ্যে হাসি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

পুরুজিত এর ছবি

হঠাৎ খেয়াল হল, দু বছর আগে বাংলাদেশের মানুষের ফেসবুকে এক্সেস ছিল না, সবার জন্য উন্মুক্ত হয় সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ। অবশ্য, একটু ভবিষ্যতের ঘটনা ভেবে নিতে আপত্তি নেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

হাহা...আপনি তো মশাই ভারী ঘাঘু লোক! অবশ্য গল্পের কোথাও সময়ের কোন উল্লেখ নেই।
~রেনেট

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্পটা বালো লাগলো... আপনার লেখা আগেও পড়েছি... কখনই অপচেস্টা মনে হয়নি...
চলুক... পড়ুক...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

উদাস এর ছবি

ভালো লাগলো বেশ। ছোট আকারের একটা উপন্যাসই তো হয়ে গেলো রীতিমতো। এটাকে মনে হয় অণু উপন্যাস বলা যেতে পারে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

... আর আমি ফেসবুকে কখনোই ঢুকলাম না। আজকেই একটা একাউন্ট খুলতে হবে।
গল্প দারুণ লাগল।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

রায়হান আবীর এর ছবি

আমার ফেইসবুক আছে...কিন্তু আমার জীবনে এমন কিছু ঘটেনা ক্যান... মন খারাপ

---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা কথা আছে না...স্বপ্নে যদি খেতেই হয়, তাহলে পোলাও খেতে দোষ কি?
তেমনি আমার গল্পের নায়ক নাহয় ফেসবুক থেকে অপরূপ কোন সুন্দরী মেয়েকে পটিয়েই ফেলল হাসি
আমার ও তো ফেসবুক আছে। তা আমার কপালে আর সুন্দরী জুটলো কই? মন খারাপ
~রেনেট

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমারও তো ফেসবুক আছে আমার জন্য তো কেউ রাত ১০ টা পর্যন্ত দারায়ে থাকেনা মন খারাপ

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা হয়েছে।

আমারও ফেসবুকে একাউন্ট আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল - মেয়ে নয়, একটা ছেলে আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে বলেছিল আমার বন্ধু হতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আপনি কেন আমার বন্ধু হতে চান?" প্রত্তুতর এলো, "তোমার প্রোফাইল পিকচার এ তোমার চেহারা খুব cute & innocent লেগেছে। তাই।"

আমি প্রমাদ গুনলাম!

ফেরারী ফেরদৌস

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর লেখা হয়েছে।

আমারও ফেসবুকে একাউন্ট আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল - মেয়ে নয়, একটা ছেলে আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে বলেছিল আমার বন্ধু হতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আপনি কেন আমার বন্ধু হতে চান?" প্রত্তুতর এলো, "তোমার প্রোফাইল পিকচার এ তোমার চেহারা খুব cute & innocent লেগেছে। তাই।"

আমি প্রমাদ গুনলাম!

ফেরারী ফেরদৌস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

উরি!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।