জীবন থেকে নেয়া

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৫/২০০৮ - ১১:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক
আখলাক সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তার অন্ধকার জায়গাটায়। রাত ১১ টার মত বাজে। যদিও ঢাকার তুলনায় খুব বেশি একটা রাত না, তারপর ও রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা।

আখলাক সাহেবের প্যান্টের পকেটে একটি ধারালো ছুরি, আর হাতে একটি মুখোশ। তিনি অপেক্ষা করে আছেন কোন এক রিক্সায় কোন এক যাত্রীর জন্য। কম বয়সী দম্পতি বা প্রেমিক প্রেমিকা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। এরা সারাক্ষণ একটা না একটা কিছু নিয়ে হাসাহাসি করতেই থাকে। এদের ভয় দেখানোটা একটা মজাদার ব্যাপার হবে।

বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, একটা রিক্সা দেখা যাচ্ছে। রিক্সায় ২৯/৩০ বছরের একটি ছেলে, আর ২৪/২৫ বছরের একটি মেয়ে। সাজগোজ দেখে মনে হচ্ছে কোন বিয়ের দাওয়াত খেয়ে ফিরছে।

আখলাক সাহেব মুখোশটি পরে নিলেন। পকেটে একবার হাত দিয়ে দেখে নিলেন ছুরিটি জায়গামত আছে কিনা।
-এই রিক্সা দাড়া।
রিক্সাটি দাঁড়িয়ে পড়লো। ছেলে মেয়ে দুটি হাসাহাসি করছিলো। ওদের হাসাহাসি থেমে গেল। মেয়েটিকে বেশ আতংকিত দেখাচ্ছে। ছেলেটি কিছুটা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
-আপনারা কি স্বামী-স্ত্রী?
-তা দিয়ে আপনার দরকার কি? ছেলেটি বললো।
-আমার দরকার কি, এটা এখনই টের পাবে। বলে তিনি পকেট থেকে ছুরিটি বের করলেন।
মেয়েটি ভয়ে চিতকার করে উঠলো।
ছেলেটি বলে উঠলো, দেখুন, আমাদের কাছে খুব বেশী টাকা পয়সা নেই, যা আছে, দিয়ে দিচ্ছি।
- তোর কাছে টাকা কে চেয়েছে? বলেই তিনি ছুরিটি মেয়েটির গলায় ধরলেন। মেয়েটি ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
-ওর কোন ক্ষতি করবেন না, খবরদার। ছেলেটি দূর্বল গলায় প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল।
-চুপ! একদম চুপ! এই মেয়ে, তুমি গান পারো?
মেয়েটি বিস্ফোরিত চোখে তাকাচ্ছে।
- কি গান পারো? ধমকে উঠলেন তিনি।
মেয়েটি কোনমতে বলল, হ্যাঁ।
-একটা গান গাও। গান ভালো হলে ছেড়ে দিব, ভালো না হলে...
মেয়েটি কাঁপা কাঁপা গলায় গান শুরু করল।
-এই ছেলে, তুমি গান পারো?
ছেলেটি মাথা নাড়ল।
-তাহলে তুমি ও ধরো।
দুজন গান গেয়ে যাচ্ছে।

মিনিট খানেক শুনে আখলাক সাহেব হাত তুললেন
-হয়েছে এবার। থাম।
বলেই তিনি ঘুরে হাটতে শুরু করে দিলেন। আসতে আসতে রাস্তার বাঁকে হারিয়েও গেলেন।
রিক্সাওয়ালা কোথেকে যেন গুটি গুটি পায়ে হেটে হাজির হল।

কেঁদো না। মেয়েটিকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল ছেলেটি। লোকটা একটা পাগল ছিল।

দুই
রাত ২ টা। আখলাক সাহেব লিখে যাচ্ছেন। উপন্যাসটা আজ রাতের মধ্যেই শেষ করতে হবে। কালকে সম্পাদক সাহেবের আসার কথা।

এবারের উপন্যাসটা তিনি লিখেছেন এক তরুন দম্পতিকে নিয়ে।
এক রাতে দম্পতিটি দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরছিল। রাস্তায় ছিনতাইকারীর আক্রমন...
মেয়েটির আকস্মাত ভয় পাওয়া, এবং এর পর অপ্রকিতস্থ হয়ে যাওয়া নিয়ে উপন্যাসের কাহিনী। এ কাহিনী হিট না হয়েই যায় না।

গত তিন বছর ধরে তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক।

(রেনেট)


মন্তব্য

গৌতম এর ছবি

দারুণ তো! ভালো বুদ্ধি বের করেছেন লেখক। তবে পাবলিকে একদিন ধরলে কিন্তু পরের একবছর লেখালেখি বন্ধ থাকবে...
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ...ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

একটানে পড়ে ফেল্লাম। ভাল্লাগলো। রেনেট কি আপনার ভালো নাম?

সৈয়দ আখতারুজ্জামান

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমার ও ভাল লাগল।
রেনেট আমার আসল নাম। তবে নামটা ভাল কিনা আমি জানি না।
~রেনেট

রায়হান আবীর এর ছবি

ভালো লাগছে।
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহা .... সরি রেনেট সমালোচনা করতে পারলাম না, আমার কাছে আপনার এ লেখাও বেশ ভালো লাগল দেঁতো হাসি
আইডিয়া টা দারুন।

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কত কিসিমের মানুষই আছে এই দুনিয়ায়, না? হো হো হো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হাসি
মজা পাইলাম ।

নিঝুম এর ছবি

ভাগ্যিস জীবনানন্দ সাহেব এই উপায় জানতেন না। কত বারই যে মরতে হত তা না হলে...
------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

চমৎকার বুদ্ধি তো !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍পদ্ধতিটি মজার কি না, জানি না। তবে এমন পদ্ধতির প্রয়োগ সুস্থ মনে হয় না আমার।

গল্পটা ভালো লাগলো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

পরিবর্তনশীল এর ছবি

রহস্য একে একে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।
আমিন!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- একবার কি একটা নাটকে জানি দেখেছিলাম হুমায়ূন কাকু নায়ককে দিয়ে রিক্সা টানিয়েছে। কারণ সেই নায়কটিও লেখক ছিলো। কে যেনো পরে নাটকের নায়ককে জিজ্ঞেস করেছিলো, ক্যান্সারের রোগীর চরিত্র ফোটাতে হলে কি তবে লেখককে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে হবে নাকি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা নিয়ে পাঠকপ্রিয়তা পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রেনেট ভাই সে সত্যটাই আবার তুলে আনলেন।

ভাল লেগেছে লেখাটা। ধন্যবাদ।

ফেরারী ফেরদৌস

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পাইলাম পড়ে ! অনেক অনেক ধন্যবাদ !

সাইফ তাহসিন এর ছবি

রেনেট মিয়া, লেখাটা সত্যের খুব কাছাকাছি লাগল, সত্য হইলে ভয় পাইব, কোন সন্দেহ নাই। আর ধরতে পারলে আখলাক মিয়ার চরিত্র পাল্টায় দিব চোখ টিপি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।