দখিন আকাশে বৃষ্টি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩০/০৮/২০০৯ - ১:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নামঃ "আকাশনীলা"
ইমেইলঃ


অন্তরা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলো। কেনো যেনো মনে হতো পৃথিবীতে ও-ই একমাত্র মানুষ যে আমাকে বুঝতে পারে। আর যেদিন এই উপলব্ধি হয়েছিলো, সেদিন থেকেই ওকে আপন করে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা দেরি হয় নি। অন্তরাও বুঝতে পেরেছিলো সেটা। তাই আমাকে বন্ধু করে নিতে ও-ও কোনো কার্পণ্য করে নি।

কাছাকাছি বাসা হওয়ার সুবাদে এরপর থেকে ঘনঘন আমাদের যাওয়া-আসা চলতে লাগলো। ওর মাকে আমি ডাকতাম "সোনাম্মা" বলে। খুব আদর করতেন তিনি আমাকে। অন্তরার আব্বু ভীষণ বদরাগী মানুষ। সবাই খুব সমঝে চলতো তাঁকে। তিনি কথাও বলতেন খুব কম। উনার সাথে আমার হাতেগোনা কিছু কথা হয়েছে। তার বেশিরভাগই ছিলো "কেমন আছো?", "জ্বী, ভালো। আপনি?" গোছের। অন্তরার ভাই আকাশ ছিলো আমাদের চাইতে তিন বছরের বড়ো। আকাশ ভাইয়া আমাকে দেখলেই মুচকি হাসি দিতেন একটা। তার সাথেই মূলত প্রচুর আলাপ হতো আমার ও বাড়িতে। কখনো অ্যাসাইনমেন্ট বোঝার ছুতোয়। কখনো আবার অন্তরার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ জানিয়ে। আসলে ধীরে ধীরে কখন যেনো আকাশ ভাইয়ার প্রতি আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। অবচেতনেই। বুঝতেও পারি নি তা একদমই। আর সেটাই ছিলো অন্তরার সাথে আমার মনোমালিন্যের শুরু।

দিনটির কথা এখনো পরিষ্কার মনে আছে। বাইরে বৃষ্টি ছিলো জন্য কলেজে যেতে পারিনি। কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। মা বেশ কয়েকবার ডেকে গেছেন। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছিলো না। আমার ঘরের পাশেই একটা টিনশেড বাসা ছিলো। সেই বাসার চালে বৃষ্টি পড়ার ঝমঝম শব্ধ কেমন ঘোর লাগিয়ে দিতো। নিবিড় হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম কৌটায় করে সে শব্দ আটকিয়ে রাখলে কেমন হবে। শেষবার মা না এসে পাঠালেন রিমিকে। রিমি আমার ছোটো বোন। ও এসেই কাঁথা ধরে টানাটানি শুরু করলো। বিরক্ত হয়ে ওকে যেই না ধমক দিবো, ওমনি হন্তদন্ত হয়ে ঘরে অন্তরা এসে ঢুকলো। ওর চেহারা ছিলো থমথমে। বাইরের মেঘলা আকাশের চেয়েও। দেখেই বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। ইশারায় রিমিকে বাইরে যেতে বলে আমি সোজা হয়ে বসলাম। রিমি না বুঝে অন্তরার হাত ধরে আমার নামে বলা শুরু করে দিলো, কেনো আমি অতো বেলা অব্দি বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি। অন্তরা কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। একটা কথাও বললো না রিমির সাথে। চোয়াল আরো শক্ত হলো শুধু। তাতে আমার আশংকা আরো গাঢ় হলো। রিমিও এবার বুঝতে পারে। দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে আস্তে করে চলে যায় ও।

অন্তরাকে আমি বসতে বলি। কাঁথাটা সরিয়ে বিছানার এক পাশে জায়গা করে দেই। কিন্তু ও বসে না। দাঁড়িয়েই থাকে। অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙার জন্য আমি জিজ্ঞেস করি ওকে, কী হয়েছে রে? এবার ফুঁসে ওঠে ও। এক নাগাড়ে কিছুক্ষণ কি সব বলে, আমি বুঝতে পারি না। শুধু কয়েকবার আমার আর আকাশ ভাইয়ার নাম নেয় ও, সেটা বুঝি।

প্রায় আধা ঘণ্টা পর অন্তরা একটু শান্ত হয়। হাতের ব্যাগ থেকে কয়েকটা পৃষ্ঠা বের করে ছুঁড়ে দেয় আমার দিকে। তারপর যেভাবে ঝড়ের বেগে এসেছিলো, সেভাবেই চলে যায় আবার। আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে থাকি। ঘটনা বোঝার চেষ্টা করি। এরপর বিছানার উপর থেকে কাগজগুলো তুলে নিয়ে দেখি সেগুলো ডায়েরির কিছু ছেঁড়া পাতা। আকাশ ভাইয়ার হাতের লেখা চিনতে সমস্যা হয় না।

সব মিলিয়ে হয়তো মিনিট দশেক লাগে আমার পুরোটা পড়তে। পড়ছিলাম আর আমার চারপাশ যেন কাঁপছিলো। হঠাৎ করেই খুব ঠাণ্ডা লাগে আমার। গলার কাছে মনে হয় যেনো কিছু আটকে আছে। চোখে অন্ধকার দেখি। মনে হয় যেন দেয়ালগুলো ধীরে ধীরে চেপে আসছে আমার দিকে। আমি বন্দি পাখির মতো আর্তনাদ করে উঠি। হয়তো চিৎকার করেছিলাম। ঠিক মনে নেই। শুধু মনে আছে রিমি ছুটে এসেছিলো। এসে আমাকে আঁকড়ে ধরেছিলো। জানতে চাইছিলো কী হয়েছে আমার। আমি বাকশক্তি হারিয়ে ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। ওর একটা কথাও আমার কানে ঢোকে না। ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যায় চারপাশ। ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাও যেনো থমকে দাঁড়িয়ে যায়।

অথচ বাইরে তখনো কিন্তু বৃষ্টি ঝরছিলো।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পুরাটাই উহ্য রেখে দিলেন?
বেশ ভালো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি তো খুব খারাপ ভাই ... কোন কিছুই বললেন না ...
লেখা সুন্দর।

/
রেশনুভা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার নিক নেমটা অনেক সুন্দর। আমার মেয়ের নাম আকাশলীনা রাখতে চেয়েছিলাম। কেউ রাজী হয়নি বলে রাখা হলো না। মন খারাপ

লেখাটা ভালো লাগলো। কিন্তু ডায়েরির সেই ছেঁড়া পাতাগুলোতে কী লেখা ছিলো জানালেন না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

ভালো লাগলো।

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

সৈয়দ আফসার [অতিথি] এর ছবি

ভাল লাগল অনেক।

ভাল থাকুন।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

বান্ধবী কি স্বপ্রণোদিত হয়ে ক্ষেছিল না আপনার সোনাম্মা'র কারনে, এটাও উহ্য থেকে গেলো

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ডাইরিতে কী লেখা ছিল, তা তো বললেন না! আমিও চিন্তা করে বের করতে পারলাম না!
................................................................................................

আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

রহস্যই থেকে গেল...

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লেগেছে।

জুহের,ঢাকা

অতিথি লেখক এর ছবি

সবাইকে পড়া এবং মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

@প্রকৃতিপ্রেমিক: পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছি ব্যাপারটা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টে প্রথম মন্তব্য করার জন্য।

@রেশনুভা: আপনি কি ভেবেছেন সেটা বলেন দেখি মিলে কিনা।

@নজরুল ইসলাম: ধন্যবাদ। আপনার মেয়ের নাম কি রেখেছেন এখন? ব্যাপারটা পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছি আর কি।

@ফিরোজ জামান চৌধুরী: অনেক ধন্যবাদ।

@সৈয়দ আফসার: অনেক ধন্যবাদ।

@শাহেনশাহ সিমন: আসলে খেপেছিল সেটাই মুখ্য। কার কারনে, তা না।

@পান্থ রহমান রেজা: কিছুই ভেবে পান নি?

@অতন্দ্র প্রহরী: হুম।

@জুহের, ঢাকা: অনেক ধন্যবাদ।

নিরা এর ছবি

লেখার বিষয়টি ভাল। নতুন ধরনের। কিন্তু ডায়রিতে কি লিখা ছিল জানতে মন চাইছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।