নিন্দাইলে ফিনতে হয় ।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৯/২০০৯ - ৬:১১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটকাল থেকে একটা খনার বচন শুনে আসছি "নিন্দাইলে ফিনতে হয়"। তাই যতটা পেরেছি মানুষকে কম নিন্দানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার এক বন্ধু আছে নাম "পিয়াল", এখন বিদেশ বিভুঁই জীবন কাটাচ্ছে। সে আমার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠি। অনেক আকাম-কুকামের (অকাজ-কুকাজ) এর সহচর এবং অনেক আনন্দ-ফুর্তির সহযোদ্ধা। সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি পরনিন্দা আর পরচর্যা তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর ছিলো বিকৃত বিশ্লেষন। সব বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন, যেটা ব্যস্ত জীবনে সম্ভব না।

আজ এখানে ছোট পরিসরে তার জীবনের একটা বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা হলো। আসলে সচলের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার বাসনা মনের গহীনে জাগ্রত হলো। সে ছিল প্রেমিক টাইপের পুরুষ। মেয়ে ঘেষা স্বভাবের। ক্লাস নবম শ্রেনীতে পড়া থেকেই প্রেম করা শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষদিন পর্যন্ত বজায় রেখেছে। দেখতে খাটো হলেও মেয়ে পটাতে পটু ছিল। তাছাড়া বাবার আভিজাত্য এইক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই দীর্ঘ সময়ে সে অনেক গুলি মেয়ের সাথে প্রেম করেছে। কিছু নিজে মেয়ের পিছে ঘুরে ভাগিয়েছে আবার কিছু মেয়ে স্বেচ্ছায় তার প্রেমে পড়েছে। কিন্তু কোনটাই টেকসই হয়নি।

প্রেমের ক্ষেত্রে তার পছন্দের তালিকায় ছিল ছিপছিপে ধরনের মেয়েরা। একবার এক মোটা ধরনের মেয়ে "পিয়ালকে" প্রস্তাব দিতেই রেগে মেগে গরম। আমরাতো অবাক! যে ছেলে, মেয়ে ছাড়া কিছু বোঝে না, সে কেন প্রেমের লোভনীয় প্রস্তাবে উত্তেজিত? আমরা বন্ধুরা রহস্য উদঘাটনে তৎপর হলাম। কোনো রকমে ঠান্ডা করে নিয়ে গেলাম আইবি এর ক্যান্টিনে। গরুর মাংস দিয়ে ভর পেট পরাটা খাইয়ে জানতে চাইলাম আসল ঘটনা। পেট ভরা থাকলে যে মাথা ঠান্ডা থাকে সেটার আরেকবার প্রমাণ পেলাম। সে ঘটনার পেখম মেলে ধরল। পিয়াল বলল-"আরে আজ আমাকে বাংলা ছবির নায়িকা "মুনমুন-ময়ূরী" টাইপের এক মেয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। আমি কী বাংলা ছবির নায়ক?" আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। জিয়া নামের এক বন্ধু বলল-"ভালোই তো চিকন-মোটা দুইটার স্বাদ চেটে দেখতে পারতি।" পিয়াল বলল-"যা বেটা মোটা মেয়ে আমার দু'চোখের বিষ। কেমন নাদুস-নুদুস, খালাম্মা খালাম্মা লাগে। আর চিকন, ছিপছিপে ধরনের মেয়েরা বেশি সেক্সী হয়।" আমরা সবাই হো হো করে হাসলাম আর বললাম-"আমরাতো জানি না, তুই যেহেতু বলেছিস, আমরা মেনে নিলাম।"

পিয়াল আমাদের সাথে বিবিএ শেষ করে এমবিএ করার জন্য চলে গেলো অস্ট্রেলিয়া। যাওয়ার আগে যে ছিপছিপে ধরনের দোলা নামের মেয়েটার সাথে প্রেম করছিল তাকে বছর না ঘুরতে ভুলে গেল। আমাদের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে, ইমেইলে কথা হত। সেটাও আস্তে আস্তে কমতে কমতে শুণ্যের কোঠায় এসে পড়ল। তার বর্তমান প্রেমিকা মোটা না চিকন আমরা আর জনাতে পারলাম না। নিজেরাও লেখাপড়া শেষ করে প্রোফেশন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। জীবন চলতে লাগল প্রকৃতির ধরা বাধা নিয়মে। কেউ কেউ বিয়ে করল। তাদের বউ নিয়ে চলল চুলচেরা বিশ্লেষণ। মোটা না চিকন এই নিয়ে বিতর্ক। বন্ধুরা মোটা বললে স্বামী নামের বন্ধুটা মানতে নারাজ। যারা অবিবাহিত তাঁরা মেয়ে দেখতে গেলে পিয়ালের কথা কোরআনের আয়াতের মত মুখস্ত করে যায়। প্রথম দেখাতে খেয়াল করে মেয়ে মোটা না চিকন। এই নিয়ে পাত্রী দেখার বিড়ম্বনার শেষ নাই। একশত মেয়ে দেখেও কেউ কেউ বউ পছন্দ করতে পারে না। কারণ পিয়ালের ভাষ্য - "ছিপছিপে মেয়েরা বেশি সেক্সী হয়।"

=======
বছর তিনেক পর হঠাৎ একদিন পিয়ালের ফোন। সে এখন আমেরিকাতে আছে। আমরা জেনে খুশি হলাম। আমাদের চমকে দিয়ে বলল-সে আমেরিকার সিটিজেন এক বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে লোভনীয় ও আকাংক্ষিত গ্রীনকার্ডের জন্য। আমরা আনন্দিত হলাম যে পিয়াল প্রেমের খেলার যবনিকা টেনে বিয়ে করতে যাচ্ছে জেনে। আমরা ওর বউকে দেখার জন্য ইমেইলে ছবি পাঠাতে বললাম। সে আপত্তি জানাল। পাঠাতে রাজী হলনা। ওর মন্তব্য তোরা বাজে, আমার বউকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবি। আমরা আর কিছু বলিনি।
========

এর এক বছর পর আবার পিয়ালের ফোন ও বউসহ বাংলাদেশে আসছে। আমরা বাংলাদেশে যে সব বন্ধুরা আছি তাঁরা মিলে পরিকল্পনা করলাম ওর বাসায় গিয়ে দেখা করার। ও যেদিন এল তার পরের শুক্রবার সব বন্ধুরা মিলে ওর বাসায় গেলাম। চার বছর পর বন্ধুর সাথে দেখা, আড্ডা জমতে শুরু করল। আমরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসেও ভিতর দিকে চেয়ে থাকলাম। আমাদের চোখ জোড়া পিয়ালের বউকে খোঁজতে লাগল। এক সময় খাবারসহ পিয়ালের বউয়ের আগমন। আমরা ভেবেছিলাম ভদ্র মহিলা হয়তো পিয়ালের কোনো খালাম্মা। সবাই উঠে কোরাস সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। পিয়াল নিরস বধনে উঠে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল "তোদের ভাবি" । আমরা সবাই দপ করে সোফায় বসে গেলাম। কেউ একজন সরে পিয়ালের বউকে বসতে বলল। আমরা একেকজন একেকজনের চোখে চোখে অনেক কথাই বললাম। সবাই পিয়ালের মুনমুন-ময়ূরী ধাচের বউ দেখে বাংলা ছবির পোষ্টারের দিকে চোখ বন্ধ করে তাকালাম। আমি মোটামুটি নিশ্চিত কেউ কোনো পার্থক্য খোঁজে পায়নি।

কিছুক্ষণ আড্ডায় শরীক হয়ে পিয়ালের বিদেশী বউ বোরিং হয়ে ভিতরে চলে গেল। তার বোরিং হওয়ার প্রধান কারণ সে ভাল করে বাংলা বলতে পারে না এবং আমাদের আড্ডার অনেক ভাষাই সে বোঝে না। ভাবি চলে যাওয়ার পর সবাই পিয়ালকে চেপে ধরল। জিয়া জিজ্ঞাসা করল-" দোস্ত, মোটা মেয়েরা কী সেক্সী হয়!!!!" সবাই কোরাস হো হো করে এসে উঠল। এক সময়ের ছিপছিপে মেয়ের অন্ধ ভক্ত পিয়াল কোনো কথা না বলে বলল-"দোস্ত আগে বুঝিনি -নিন্দাইলে ফিনতে হয়।"
===========
দলছুট।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

"নিন্দাইলে ফিনতে হয়"__ আপনার বন্ধু পিয়ালও এতে একমত ।
তবে লেখার শুরুতে- ' কিন্তু আমার এক বন্ধু আছে' -এ রকম বাক্য যোগ স্ববিরোধীতা নয় কি, দাদা?
এস হোসাইন

-------------------
"মোর মনো মাঝে মায়ের মুখ"

অতিথি লেখক এর ছবি

স্ববিরোধীতার ব্যপারটা বুঝলাম না। সেতো একমত হয়েছে যখন লোভের কারণে, গ্রীণকার্ডের জন্য মোটা মেয়েকে বিয়ে করেছে তখন। সে কিন্তু ছাত্র জীবনে মোটা মেয়েদের দেখতে পারত না।

একটু খেয়াল করে পড়লে ব্যপারটা বুঝা সহজ হত।

ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

দলছুট।

=============বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা পাইলাম , বহুত মজা ।

অনুপম ত্রিবেদি ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

দলছুট।

=============বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সন্দেহ নেই- এই লেখাটা আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে...। ভালো লেগেছে- আরো লিখুন...

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

দলছুট।

=============বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

উন্নতি হচ্ছে। প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। ৩ দিলাম।

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।

ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।

দলছুট।

=============বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।