"আমার জীবনে একজন বন্ধুকে পাওয়া"

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ৩০/০৯/২০০৯ - ১০:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সে আমার বয়সে কত ছোট আমি তখন জানতাম না, কখনো তাকে দেখেছি বলে মনে ও হয়না। খুব ব্যাস্ত মানুষ আমি। বুয়েটে সনি আপা মারা যাওয়ার মুভমেন্ট করতে গিয়ে বহুত বেজাত মানুষ দেখা হয়ে গেছে ততদিনে। একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাকে অনায়াসে আমার বন্ধুরা ঠেলে দিয়েছে নেতাদের দলে। কিন্তু আন্দোলন শেষ হলেই আমি সুবোধ বালকের মত টিউশানি আর পরা লেখা নিয়ে ব্যাস্ত। দেশের জ্ঞান আমার চেয়ে আমার বন্ধুদের কম হওয়ায় কোন আলোচনায় হইতো না তাদের সাথে, শুধু বই, চোথা আর পরীক্ষা বিষয়ে, কখনো কখনো তাদের সাথে দেখতে বসা আমেরিকান ছায়াছবি ঐ পর্যন্তই। সুতরাং অনেক বড় ভাই আমার প্রিয় মানুষ হয়ে উঠলো । চলাচল তাদের সাথেই সকাল বিকাল সব সময়। বন্ধুদের অনেক কথা শুনতে হয়েছে, আমি সোজা বলে দিয়েছি যেহেতু তোরা আমার চেয়ে কম জানিস জীবন সম্পর্কে তাই আমার তোদের কাছে থেকে কিছু শেখার নেই আমি যেখানে শিখতে পারি সেখানেই আমাকে যেতে হবে। তবু ও কাছা কাছি বয়সের কাউকে খুজতেছিলাম।

একদিন ক্লাস করে আসার সময় চশমা পড়া একজন ছেলের সাথে হঠাত কথা হয়, প্রথমেই আমি তার কথার ধরন দেখে চমকে উঠি , এমন কথা তো বুয়েটে প্রথম কোন জুনিওরের কাছে থেকে শুনলাম। এরপর ডাইনিং এ পাশাপাশি বসে খেলাম। অনেকটা কথা হলেও নাম , ব্যাচ কোন কিছুই জিজ্ঞেস করা হল না। রুমে এসে এক বড় ভাই এর সাথে কথা বললাম ছেলেটার ব্যাপারে, তিনি দেখি ছেলেটাকে চিনে ফেললেন , বললেন “পোলার নাম বাপ্পি” সে তার বন্ধুর সাথে একই রুমে থাকে এবং পোলা বেশি কথা কয়। আমি কই এই রকম পোলারেইতো আমি খুজতেছি। তারপর একদিন দেখি সেই পোলা আমার রুমের পাশের আর একটা রুমে উঠে পড়েছে। আলাপ আলাপ আলাপ কতো আলাপ সেই পোলার সাথে আমার। ভেতরে ভেতরে তখন অনেক অনুভূতি জন্মেছে দেশকে নিয়ে , দেশকে নিয়ে লেখাগুলোকে নিয়ে , দেশের মানুষের দুঃখকে নিয়ে। সারাদিন ক্লাস করে যখন রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত টিউশানি করতাম তখন মাঝে মাঝে চোখ ভিজে আসতো। মনে হত সাথের অনেকেই তো গিয়েছে বাসায় অনেক আগে, গোসল দিয়েছে, তারপর মায়ের হাতের রান্না খেয়ে আরামের একটা ঘুম, ঘুম থেকে উঠে চা খেয়ে টিভিতে একটু চোখ বুলিয়ে পড়তে বাসা, আগামীকাল হয়ত শ্রেনী পরীক্ষা আছে । আমি ছিড়েঁ চলেছি বাটার জুতো বছরে তিন জোড়া। সান্তনা ছিলো আমার সন্তানকে এই সব করতে হবে না, গ্রামের বাবা মার কষ্ট একটু হলেও কমাতে পারছি। সেই প্রেরণাই ঝাপ্সা হয়ে আসা চোখে আনন্দের ঝিলিক এনে দিত।

বাপ্পি আমার রুমে প্রায়ই আসতো, আমি কতবার যেতাম সেটার তো কোন শেষ নেই। আস্তে আস্তে তার সাথে অন্য ধরনের একটা যোগাযোগ স্থাপন হল। শুনলাম সে লেখা লেখি করে। বই ও পাবলিশ করেছে, বিষয় বস্তু “বিজ্ঞানের কল্প কাহিনী” , বইয়ের নাম “শন ইয়েট ও একজন”, বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও এ ধরনের বই আমার ভালো লাগে নাই, সে এখন যে মহা মানবে লেখুক না কেন। কিন্তু বইয়ের শেষ লেখাটা পড়লাম, ফর্মা বেঁচে যাওয়ায় সে একটা কবিতা ছপিয়ে দিয়েছে। কবিতা পড়ে মন্ত্র মুগ্ধের মত কিছুক্ষন বসে থাকলাম। কি অদ্ভুত সুন্দর লেখা তার । মনে হলো আর একজন হুমায়ুন আজাদ। বললাম খুব সুন্দর হয়েছে। আমি আমার কবিতার খাতা তখন লুকিয়ে বেড়ায় তার কাছে থেকে। কি সব ছাই লিখেছি ? এই ছেলের কলমের একটা ছোয়াঁতে আমার সব তুলোর মত উড়ে যেতে পারে। সম্ভ্রম বাচঁনো দায় হয়ে যায়। আস্তে আস্তে আরো কাছে আসি, সে কবিতা লিখলেই আমার কাছে আসত অথবা আমি গেলেই তার লেখার ডায়রীতা উল্টে দেখতাম , কোনটা শেষ , কোনটা শুরু করেছে, মাঝে মাঝে ছোট গল্প লিখত। আবার বিপদে পরে গেলাম , বুঝতেছিলাম না কোনটা বেশি ভাল লিখে , গল্প নাকি কবিতা। দুজনেরই বালিকা বান্ধবী না থাকায় অনেকটা সময় পেতাম, যখন ক্লাস থাকত না তখন কি পরিমান যে ঘোরা ঘুরি করেছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। আমার নিজের বন্ধুদের চেয়ে সে আমার আপন বেশি মাঝে মাঝে এমনও মনে হয়েছে। আমি এই লেখাটা এত সাহস নিয়ে লিখতে পারছি কারন আমার বন্ধুদের ভেতরে কারো পড়বার বাতিক নেই, তাই আমি নিশ্চিন্তে পার পেয়ে যাব বলতে পারেন। আস্তে আস্তে ছোট ভাই থেকে তার উন্নতি হতে থাকে আমার হতে থাকে অবনতি। ইচ্ছাকৃত অবনতি বলা যেতে পারে। সে আমাকে আজ ও ভাই বলেই ডাকে আমি তার নাম ধরেই ডাকি কিন্তু ওটুকুই, বাকি সব বন্ধুত্ব। আমার সাথের অনেক বন্ধুই এখন কোথায় আছে আমি জানি না, কিন্তু আজ ও তার সাথে আমার যোগাযোগ আছে। অনেক কিছু শিখেছি তার কাছে থেকে, বিশেষত লেখা নিয়ে এবং পড়া নিয়ে । সে আমাকে একজন ভাল পাঠক করে তুলেছে। আজ যখন দেখি সেদিনের সেই ছেলেটা আজকের নিয়মিত একজন গল্পকার হয়ে উঠেছে , তার ভাষা শৈলীর প্রশংসা করছে তখন মনে মনে গর্বিত হই এই ভেবে যে এই গল্পকারের বেড়ে উঠা আমি দেখছি , দেখছি তার পূর্নতা প্রাপ্তির উদাহরন । তার গল্প আজ অন্য মানুষ চুরি করে ছাপিয়ে দেয়। যখন গর্ববোধ করি তখন ভাবি আমি কি তার বড় ভাই, বন্ধু, নাকি অন্যকিছু। বন্ধু শব্দ ছাড়া অন্য কিছুই আমার কাছে আর ততোবেশি উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয় না।

বেচেঁ থাকো ইমরুল কায়েস তোমার লেখা গল্পকবিতা এ দেশের সাহিত্যের ভান্ডারকে আরও শক্তিশালী করুক। আমার কাছে থেকে কি পেয়েছো জানি না , তবে আমি পেয়েছি একজন মুক্ত চিন্তার মানুষ, পেয়েছি একটি শক্তিশালী কলমের দেখা আর নিজের জীবন নিয়ে জুয়া খেলে বারবার জিতে যাওয়া একজন যোদ্ধাকে।

গরীব
সাউথ কোরিয়া


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাহ্... মজা তো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম ভালো লাগল।

দলছুট।
=========বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।