গল্প: পালাতে গিয়ে চির প্রস্থান।(শেষ-পর্ব)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৫/১০/২০০৯ - ১০:৩৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধন্যবাদ জ্ঞাপনঃ যারা আগের তিনটা পর্ব পড়েছেন তাদের সবাইকে অনেকঅনেক ধন্যবাদ।

গল্প: পালাতে গিয়ে চির প্রস্থান।(প্রথম পর্ব)
গল্প: পালাতে গিয়ে চির প্রস্থান। (দ্বিতীয়- পর্ব)
গল্প: পালাতে গিয়ে চির প্রস্থান।(তৃতীয়- পর্ব)

সবাই চুপচাপ, তারপর আবার শুরু করল, "ও এসেছিল বন্ধুদের সাথে। আমাদের একটু দূরে বসে বারবার আমার দিকে তাকাল, নিভা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে আমাকে বলল। আমি বললাম বাদ দাওতো, ঐদিকে তাকানোর দরকার নেই। আমাদের খাবার এল, আমরা খাইতে লাগলাম। স্বভাব বশতঃ আমিও দুই একবার তাকালাম, চোখে চোখ পড়ল। আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে মারিয়া। আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। ভয় পেতে লাগলাম যদি এসে সব বলে দেয়, আমার সব শেষ হয়ে যাবে।" বলে থামল।
"দোস্ত মারিয়াকে কি কিছু-------" শেষ করতে পারল না।
"নাটকা তোরে না কইছি ফাউল প্রশ্ন করবি না।" রেগে গিয়ে তমাল বলল।
"তারপর কী হল?" হাই তুলে জাকির বলল।
"আমাদের খাবার প্রায় শেষ, উঠব, ঠিক সেই সময় দেখালাম মারিয়া এগিয়ে আসছে, আমি ভাবলাম অন্য কোনো দিকে বা টয়লেটের দিকে যাবে। আমার ধারণা পাল্টে দিয়ে আমার টেবিলে এসে বসল। আমারতো অবস্থা খারাপ, ঘামাচ্ছি। নিভা একবার আমার দিকে তাকাল। তারপর মেয়েটার দিকে তাকাল। মারিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিভার দিকে তাকাল।" বলে আবার পানি খেল।
"তারপর--" এইবার তমাল নিজেই বলল।
"নিভার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল-আমি মারিয়া, আপনি? নিভা হ্যান্ডশ্যাক করে বলল-আমি নিভা। মারিয়া নিভাকে বলল-কতদিনের সম্পর্ক আপনাদের? নিভা আমার দিকে তাকিয়ে বলল-ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমিতো ঘেমে ভিজে যাচ্ছি, কী বলব বুঝতে পারলাম না। মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়েছি কয়েকবার। নিভা বলল-এই মাস দুই, কেন? উল্টা মারিয়াকে প্রশ্ন করে বসল নিভা। আমি যাই কই। মনে মনে আল্লাহ্ বললাম-বিধাতা এবারে মত রক্ষে কর। বিধাতা মনে হয় আমার কথা শোনে হাসছিল। আমার ডাকে সাড়া দিল না। মারিয়া বলল-আপনার বয় ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসা করুন। নিভা আমার দিকে তাকাল। আমি ভাবলাম, সোজা বলে দেই আমি ওকে চিনি না, কিন্তু আমি জানি বললে হবে না, কারণ ওর মোবাইলে আমার ছবি আছে, ঠিক দেখায় দিবে।"
কি বললি? "মাঝখান থেকে কথা কেড়ে নিয়ে এইবার জাকির জানতে চাইল, এর মধ্যে জাকিরের ঘুম হাওয়া হয়ে গেছে।

"আমি ঠাণ্ডা কোক খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলাম, তারপর বললাম আমরা বন্ধু ছিলাম। নিভা আমার কথায় আশ্বস্ত হতে পারল না। বলল শুধু বন্ধুত্ব? মারিয়া পাশে বসে মিটি মিটি হাসছে। হুট্ করে আমার আর মারিয়ার একটা ছবি দেখিয়ে বলল-ওর থেকে সাবধানে থাকবেন। আমিতো লজ্জায়-শরমে চুপ্‌সে গেলাম, দেখলাম নিভার চোখে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ। ছবিটা দেখে আমার দিকে তাকিয়ে ছি বলে পার্স নিয়ে হনহন করে ছুটে চলল। আমি পেছন পেছন ছুটে এলাম। নিভাকে আর থামাতে পারলাম না। নিভা সেই যে চলে গেল আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি, ফোন ধরে নি। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করলে রিসিভ করে চুপ করে থাকত, আমার কণ্ঠ শোনে কেটে দিত, পরে দেখলাম নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলল। আজ অনেকদিন পরে ওকে দেখলাম। " বলে টিস্যু দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে নিল।

সবাই শিপনের দিকে চেয়ে আছে কেউ কিছু বলছে না, আসলে এই পরিস্থিতিতে কিছু বলার থাকে না। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসেও সবাই যেন ঘামাচ্ছে। আসলে এটা শরীরের ঘাম না, মনের অস্থিরতা, বন্ধুর ব্যথায় সমব্যথিত হৃদয়। আনন্দ ভ্রমণ এসে বিরহের উপন্যাস শোনা। বাকীদের মধ্যে কারো চোখে পানি এসেছিল কিনা, সেটা অন্যরা লক্ষ্য করেনি। রাত প্রায় একটা বাজে। সবার চোখে ঘুম।
"চল আমরা কালকে ঢাকা ফিরে যাই।" সবাইকে অবাক্ করে দিয়ে শিপন বলল। সবাইতো হতভম্ব। কি বলবে বঝুতে পারছিল না।
"কী কস?" তমাল শুষ্ক গলায় বলল।
"হ্যাঁ আমার এখানে আর ভালো লাগছে না।" শিপন বলল।
"তাইলে ঢাকা কেন, বান্দারবান যাই।" বলল মিঠু।
"না আমার আর ভালো লাগছে না। তোরা থাক আমি কাল সকালে ঢাকা ফিরে যাবো।" শিপন জোড় দিয়ে বলল।
"তুই কী করে ভাবলি আমরা তোকে ছাড়া থাকব?" তমাল বলল। ভ্রমণ আপাতত বাদ। পরে আবার আসা যাবে।" তমাল বলল।
"হ্যাঁ বিষণ্ণ মন নিয়ে ভ্রমণ ভাল লাগবে না। তার চেয়ে ঢাকা ফেরত যাওয়াই ভাল।" জাকির বলল।
"ঠিক আছে যার যার রুমে চলে যা, সকালে দেখা যাবে।" তমাল বলল।
"আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি কাল ঢাকা চলে যাবো।" বাকীটা তোদের ইচ্ছা। আমি আমারটা জানায় দিলাম।" শিপন বলল।
সবাই আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেল।

সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই চুপচাপ। কেউ কিছু বলছে না। "তোরা কী ভাবলি?" প্রথম নীরবতা ভাঙ্গল শিপন।
"তোর যা সিদ্ধান্ত আমাদের কী এর ব্যতিক্রম হবে?" সবার দিকে চেয়ে সম্মতি নিয়ে তমাল বলল।
"তাহলে তাড়াতাড়ি নাস্তা করে রেডি হয়ে নে।" বলে শিপন তড়িঘড়ি করে উঠে গেল। শিপনের চলে যাবার দিকে সবাই চেয়ে আছে, দেখে নিভা ঢুকছে।

সকাল দশটায় সবাই নিচে এল। এর মধ্যে হোটেলের রুম চেক আউট্ করে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কেউ কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠল। গাড়ি ছুটে চলল ঢাকার উদ্দেশ্যে। গাড়ির ভেতর সুনসান নীরবতা। কোনো গানের আওয়াজও নেই।

চট্টগ্রামে দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা শুরু করল। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাউ ওয়ে উঠেই শিপন গাড়ি একশ-একশ ত্রিশপর্যন্ত তুলে টানতে লাগল। তমাল মিটারের দিকে তাকিয়ে দেখে ১৩০ কিঃমিঃ/ঘণ্টা বেগে গাড়ি চলছে।

“দোস্ত আমাদেরতো ঢাকা ফেরার কোন তাড়া নেই, একটু আস্তে চালা। তাছাড়া আমি কখনো তোরে ৯০কিঃমিঃ/ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাইতে দেখি নাই। আজ তুই একটু রাফ চালাইতাছস। প্লিজ গতি বেগ শ্লো কর।” তমাল অনুরোধের করল শিপনকে।
“তুই কী আমারে কখনো এক্সিডেন্ট করতে দেখছস?” শিপন জানতে চাইল।
“দোস্ত দুর্ঘটনা কখনো বলে কয়ে আসে না। তাই সাবধান থাকা ভাল। তুই গাড়ি শ্লো কর।” এইবার তমাল জোড় দিয়ে বলল।
“ঠিক আছে” বলে শিপন গাড়ি ৯০ কিঃমিঃ/ঘণ্টা বেগে নামিয়ে আনল। পেছনে জাকির, সাজ্জাদ ও মিঠু ঘুমাচ্ছে। সাজ্জাদ হা করে আছে।
“পেছনে তিনটা দেখ কেমনে ঘুমাইতাছে।” তমাল পেছন দিকে তাকিয়ে বলল।
“থাক ঘুমাইতে দে।” শিপন বলল।

তমালের চোখও ঘুমে লালা হয়ে আছে, শিপনের বেপরোয়া ভাব দেখে আর ঘুমাইতে সাহস পাচ্ছে না। একটু ফাঁকা রাস্তা পেয়ে শিপন আবার গাড়ি ১০০কিঃমিঃ/ঘণ্টা বেগে চালাতে লাগল। গতকাল রাতে কারোই ভাল ঘুম হয়নি। শিপনের অনাকাংক্ষিত ঘোষণা সবাই মর্মাহত হয়েছে। সাতদিনের কথা বলে এসে দুই দিন পর প্রত্যাবর্তন সবাই মানতে পারছিল না। আবার বন্ধুর মানসিক দিকটা চিন্তা করে কিছু বলতেও পারছিল না। কেউ খুশি মনে গাড়িতে উঠে নি। তাই কোনো কথা না বলে সবাই ঘুমাচ্ছে। শিপনও ওদের মনঃকষ্ট বুঝতে পেরে কিছু বলছে না, তমালকেও কিছু বলতে না করেছে।

শিপনেরও ঘুম ঘুম ভাব। দুচোখ আগুনের মত লাল। গাড়ি চালাচ্ছে অসংলগ্ন ভাবে। একটু আগে একটা ছাগলের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছে। পেছন ফিরে তমাল দেখেছিল একটা বৃদ্ধ লোক মাথায় হাত দিয়ে কান্না করছে আর বিড়বিড় করে যেন কী বলছে। হয়তো ছাগলের শোঁকে বিহ্বল হয়ে তাদের অভিশাপ দিচ্ছে। সেই দিকে শিপনের কোন ভ্রূক্ষেপ নাই। গাড়ি এখন ১১০কিঃমিঃ/ঘণ্টা বেগে টানছে। তমালও কিছু বলছে না। চেয়ে আছে সামনের দিকে। মাঝে মাঝে শিপনের দিকে।

শিপন গাড়ি চালাচ্ছে কখনো কাউকে শাঁইড দিয়ে আবার কখনো ওভার টেক করে। শাঁই শাঁই করে গাড়ি ছুটে চলছে রাজধানী ঢাকার দিকে। শীতের শেষ বিকাল। সূর্যের তাপ কমে এসেছে। শিপন গাড়ির এসি বন্ধ করে দিয়ে হালকা শাঁইড উইন্ডো ফাঁক করে দিল। পেছনের সবাই একটু নড়েচড়ে বসল। মিঠু একবার চেয়ে দেখল। “কোথায় আমরা এখন?” চোখ বন্ধ করে মিঠু জানতে চাইল। “ফেনী পাড় হয়ে কুমিল্লার পথে।” সামনে থেকে তমাল বলল। ট্রাকের শাঁইরেন গুলি কানের মধ্যে এসে বিঁধে। এই রোডে এখন পাবলিক বাসের চেয়ে ট্রাকই বেশি চলে। ট্রাক গুলি মাঝে মাঝে পুড়ো রাস্তা কভার করে চলে, কাউকে শাঁইড দিতে চায় না। রাতপরও শিপন কাঁচা মাটির রাস্তায় নেমে ওভার টেক করে ছুটে চলছে।

সামনে রাস্তা একটু ফাঁকা। স্ট্যায়ারিং ধরে সোজা বসে আছে শিপন। অপর দিক থেকে ট্রাক, বাস প্রাইভেট আসছে হুহু করে। তমালের একটু চোখ লেগে এসেছিল। একটা ট্রাকের হর্ণের শব্দে লাল লাল চোখ নিয়ে তাকাল। চেতনা ফিরে পেয়েই শিপনের দিকে তাকিয়ে দেখে শিপন টান টান চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। একশর উপ্‌ড়ে গতি। শিপন দেখতে পেল ডান দিক থেকে একটা বুড়ী কুঁজো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে। বুড়ি তার গাড়ির সামনা সামনি, বামে কাটলে বুড়ি নির্ঘাত গাড়ির নিচে পড়বে। ব্রেক করলেও বাঁচানো যাবে না। অগত্যা গাড়ি ডানে কাটল। তমাল দেখল ফাঁকা রাস্তায় শুধুই শিপন গাড়ি ডান দিকে নিয়ে গেল। গাড়ি ১২০কিঃমিঃ/ঘণ্টা। তমাল চিত্তকার দিয়ে বলল-“শিপন গাড়ির গতি কমা, সামনে ট্রাক………” আর বলতে পারল না। ততক্ষণে……।

দলছুট।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

এই রকম সুদীর্ঘ একটা গল্প লিখে আপনি কী বোঝাতে চাইলেন? মেসেজ/গূঢ় বাণীর কথা বলছি না, গল্প পড়ে যে আরাম পায় পাঠক সে বিষয়ে আপনার কী মত? সব কটি পর্ব পড়লাম, তবে এমন শিরোনাম যে পড়ার দরকার ছিলো না শেষে কী হবে জানার জন্য। তবু ভাবলাম 'কী' জানলেও 'কীভাবে' নিয়ে কিছু বেরোতে পারে আপনার কলম দিয়ে।

খুঁটিনাটি ধরতে চাই না, কিন্তু বাংলা লিখতে গেলে ইংরেজিটাও যে সামান্য খেয়াল রাখতে হয়! শাঁইড জিনিসটা কী? দু বার লিখেছেন যখন, তখন ধরে নিচ্ছি টাইপো নয়। আর বানান ভুল নিয়ে কথা বাড়াবো না।

আপনাকে অনুরোধ, গণ্ডা গণ্ডা লেখার আগে কিছু বই পড়ুন। লেখার সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না। আপনাকে খোলাখুলি বলছি, সমস্যা অনেক। বানান এখন ভালো আগের চেয়ে, কিন্তু সে তো আসল জিনিস নয়। একটা গল্প যে লিখলেন, সেটা একটা গল্প হলো কি না সেটা তো ভাবতে হবে। এবং এটা বোঝা যাবে কী করে? পড়তে পড়তে আপনি প্যাটার্নটা বুঝতে পারবেন, কোনটা গল্প হচ্ছে আর কোনটা কিছুই হচ্ছে না। তখন লিখলে সে লেখা গল্প-পদবাচ্য হতে পারে, কিন্তু তার আগে কিছুতেই নয়। আমার ধারণা আপনি ঐ প্যাটার্নটা এখনো চিনে উঠতে পারেন নি।

গল্প অনেক ভাবে সার্থক হতে পারে। এক, শেষে একটা সত্যিকারের মোচড় দিয়ে। দুই, চমক হয়তে নেই তেমন, কিন্তু লেখার গুণে, অর্থাৎ চরিত্রদের মনের ভাব বিশ্লেষণ, বা কাব্যময় বর্ণনা, বা এই জাতীয় কিছু। সাধারণত নতুন লেখকের পক্ষে এই পদ্ধতি কঠিন, তার চেয়ে প্লট নিয়ে পাঠকতুষ্টি সোজা সে তুলনায়। তো সেই পথেই আপনি চলতে শুরু করতে পারেন। একটা করে ভালো ছোটো গল্প পড়েন, তারপর দুইটি বাক্যে তার কাহিনীটা লিখে ফেলেন। এই ভাবে দু শো খানা (বা আরো বেশি) গল্প পড়ে সারটুকু লিখে সংগ্রহ করেন। তারপর দেখেন এর মধ্যে কমন কী। কী সেই 'প্যাটার্ন'। কীভাবে লেখকেরা টুইস্ট আনছেন। এই ব্যাপারটা বোঝা হলে তারপর লিখতে বসেন, গ্যারান্টি দিচ্ছি আজকে যা লিখছেন তার থেকে ভালো হবেই। প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানোর কথা শুনে থাকবেন। সলতে হলে শুধু ভালো হয় তা তো নয়, বরং বলা ভালো সলতে ছাড়া প্রদীপ জ্বলবেই না। আপনি হয়তো ভাবছেন লিখতে লিখতে সলতে গড়ে নেবেন, কিন্তু লেখা শুরুর আগেই যে ঐ প্রস্তুতি দরকারি। না হলে লেখা আদৌ লেখার মতো হবে না।

আমার কথা শুনে খারাপ লাগাই স্বাভাবিক, তবে তাতে করে যদি কাজ হয় তো সেটাই আসল লাভ। আপনার লেখার উৎসাহ দেখেই আমি এই সময়টা বিনিয়োগ করলাম, আপনার লেখা পড়লাম ও মন্তব্যও সুদীর্ঘ হলো। আপনাকে অনুরোধ, এর উত্তর সশ্রদ্ধ চিত্ত না হওয়ার জন্য, আমি নেহাতই সাধারণ মানুষ, আপনার ঐ বিপুল শ্রদ্ধার ভারে শঙ্কিত হয়ে যাই! বরং নিরুত্তর থাকুন, এবং কিছুদিন লেখালেখি ফেলে সিরিয়াস ভাবে সাহিত্য পাঠ শুরু করুন, জোরেসোরে। ভালো লেখকদের লেখা পড়ুন শুধু। ছোটোগল্প পড়ুন সুবোধ ঘোষ, মাণিক ব্যানার্জি, বিমল কর, শরদিন্দু ব্যানার্জি, এবং রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের সবকটা খণ্ড। আমি কয়েকটা নাম দিলাম, আরো অনেকেই আছেন। আমি বাংলাদেশি উপন্যাস পড়লেও ছোটো গল্প বিশেষ পড়ি নি বলে বলতে পারছি না।

দু শো খানা গল্প পড়ে তার দু লাইনের জিস্ট লিখে সেটার অন্তর্নিহিত নক্সাটা আবিষ্কার করার পরেই লিখবেন, তার আগে উপোস দিন। সত্যি যদি লেখালেখিতে আগ্রহ থাকে তো এতে আপনার উপকারই হবে। আর যদি চটজলদি লিখে আনন্দ পেতে চান তো লেখা চালিয়ে যান, পাঠক কী ভাবলো না ভেবে। সেক্ষেত্রে জানাবেন, মডু ভায়েরা এই মন্তব্য মুছে দেবেন কারণ এর আর তো কোনো কাজ নেই আপনার পড়া ছাড়া।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুলত পাঠকদা আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে আপনার পরামর্শটা গ্রহন করলাম। আমি কী বোর্ড বিরতীতে গেলাম। যেদিন ভালো লিখতে পারছি বলে মনে করব,সেদিন লেখা জমা দিব। আপনাদের লেখা গুলো পড়ব।

তবে এই গল্পে আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি তা হল মাথা গরম করে, অতিরিক্ত টেনশন নিয়ে কোন কিছু করা ঠিক না। আর কিছু না।

আপনার দীর্ঘ পরামর্শমূলক লেখাটা আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।

দোয়া করবেন যেন ভালো লেখা নিয়ে আসতে পারি।

দলছুট।

হিমু এর ছবি

মূলত পাঠকের সাথে প্রচণ্ড রকমের সহমত।



হাঁটুপানির জলদস্যু আলো দিয়ে লিখি

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু ভাই আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি আপনার লেখা পেলেই পড়ি, শিখারও চেষ্টা করি। বই পড়ার বিকল্প নেই, পড়ার কোন শেষও নেই। আপনাদের সাথে একমত। নূতন হিসেবে আপনাদের ন্যূতম প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারায় দুঃখিত। তবে আপনাদের কথা মত চলার সিদ্ধান্ত নিলাম। যতদিন ভলো কিছু লিখতে না পারুম ততদিন লিখবো না। বই পড়ব, শুধু বই পড়ব।
ধন্যবাদ।
দলছুট।

মূলত পাঠক এর ছবি

আপনি যে পজিটিভ ভাবে নিয়েছেন কথাটা এইটা দেখে ভালো লাগলো (যদিও সশ্রদ্ধচিত্তের ভার এখনো পিছু ছাড়ে নি হাসি )। কতোদিন লিখবেন না এর যাতে একটা আন্দাজ থাকে সে জন্যেও ঐ দুশো গল্পের সংখ্যা, ওটা কোনো বিশেষ হিসেবনিকেশ করে বানানো নয়, তবে দুশোতে হয়ে যাওয়া উচিত বলেই মনে হয়। খুব সে পড়ুন, এবং ঐ দু লাইনে সারাংশ লেখাটা কিন্তু জরুরী। ওটা না হলে আভ্যন্তরীন নক্সাটা চোখে ধরা পড়তে নাও পারে।
অল দ্য বেস্ট!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পাঠুদা। দুইশত বই পড়তেও অনেক সময় লাগবে, তাছাড়া দুইশত বই কিনতে টাকাওতো লাগবে। তবে আমি অনলাইন থেকেই পড়ার চেষ্টা করব। তবে আমি পড়বোই। যেদিন দুইশত গল্প পড়া শেষ হবে সেইদিন আপনাকে মেইল দিব। দয়া করে আপনার ইমেইল ঠিকানাটা এখানে দিয়ে দিন।
ধন্যবাদ।

মূলত পাঠক এর ছবি

বই লাইব্রেরিতে পাবেন না কিছু? সব কেনা তো সত্যিই মুশকিল। আর দুশো বই পড়তে বলি নি, দুশো খানা গল্প পড়ার কথা বলেছিলাম, খান কুড়ি বইয়েই পেয়ে যাবেন।

মেইল আই ডি এখানে দিতে একটু সংকোচ হয়। পাঠান্তে আপনি আমার কোনো লেখায় যদি মন্তব্য করতে পারেন, তখন আলাপ করা যাবে এ নিয়ে। আশা করি তাতে সমস্যা নেই? আর সত্যি বলতে কী, আমাকে জানানোটা আসল ব্যাপার নয়, আপনি তখন একটা লেখা পোস্ট করলে পাঠকদের মতামত থেকেই আন্দাজ পেয়ে যাবেন পরিবর্তন কতদূর কী হলো তার।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

মূলোদাই যা বলার বলে দিয়েছেন। বানানের উন্নতি হচ্ছে। এবার কন্টেন্টে জোর দিন। হাসি

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

মূলত পাঠক এর ছবি

দেরি করে ফেলেছো সিমনকুমার, আর তো পাবে না ওঁকে। উনি তো "দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায়" নিয়েছেন অলরেডি।

এই লেখায় নিক-এর নিচে যে মেইল আইডি'টা নিজেই লিখতেন সেটা একবার যদি নতুন ছদ্মনিক নেওয়ার আগে খেয়াল করতেন, তাহলে তবু রক্ষা ছিলো। আমাকে একজন দেখালেন, কৃতিত্বটা তাঁরই। আমি শুধু চুমূপমা দেখে সন্দিহান হয়েছিলাম।

ঐ জন্যই তো মুরুব্বিরা বলেন, খুউব খিয়াল কইরা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।