আবার লিখতে বসলাম...

নীলকান্ত এর ছবি
লিখেছেন নীলকান্ত (তারিখ: শনি, ২৪/০৪/২০১০ - ১১:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলের জন্য প্রথম লেখা।কি লিখব ভাবতে ভাবতে মাথায় আসল অ্যালের কথা।
‘অ্যাল’। এক স্কটিশ। পুরো নাম অ্যালি ম্যাকডোনাল্ড। পেশায় সাংবাদিক। সস্ত্রীক বাস করছেন বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে।
অ্যালের সাথে আমার পরিচয় হয় জীমে। প্রথম যেদিন জীমে যাই সেদিন-ই দেখেছিলাম অ্যালকে। হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছে আর আপন মনে ব্যায়াম করছে। আর একটা কারণে চোখে পড়েছিল অ্যালকে। অ্যাল কোন কারণে খুব রেগে ছিল এক লোকের উপরে এবং জোরে জোরে চেচাচ্ছিল। তখন ভেবেছিলাম কোন দাম্ভিক বিদেশী গালি দিচ্ছে আমার জাত ভাইকে। পরে জানতে পারি আমার জাত ভাইটি ফ্লোরের উপরে থুথু ফেলছিল(continuously) । অ্যাল তাকে আগে একবার বলেছিল কাজটি না করতে, পরে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটি বারবার করায় অ্যাল গিয়েছিল রেগে। খাস বাঙালি আর কি! যা খারাপ তাই আবার করবে, যত মানা করা হোক না কেন!!!
সে যাই হোক। করিম ভাই( আসলে স্যার) ব্যায়াম করতেন আমার সাথেই। পেশায় শিক্ষক এবং আমেরিকা প্রবাসী। বলা উচিত বাবা মা খালি বাংলাদেশী, তিনি পুরোই আমেরিকান। যে কারণে অ্যালের সাথে তার ঘনিষ্ঠ হতে বেশি সময় লাগেনি। দুজন অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলে যেত আর আমি শুনতাম। আমার সাথে করিম ভাইয়ের ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই সূত্রে একদিন কথা হয় অ্যালের সাথে। কয়েকদিনেই বুঝলাম যতটা দাম্ভিক তাকে ভেবেছি ততটা কি তার কিছুমাত্র সে নয়।
যাকুজি(Jacuzzi )তে দেখতাম অ্যাল সব সময় হাতে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে পা ডুবিয়ে বসে আছে। জানতে পারলাম পড়ার নেশা তার বহু পুরনো। আমাকে কতগুলো বইয়ের নাম দিল আর পড়তে বলল। আমি সানন্দে সেগুলো নিলাম।
অ্যালকে নিয়ে এ লেখাটি লিখতাম না যদি না পরের ঘটনাটি ঘটত। গত ফেব্রুয়ারির ঘটনা(২০১০)। প্রতিদিন প্রায় সবাই (জীমে যারা যায়)একটু সময় হলেও ট্রেডমিলে দৌঁড়ায়। জীমে আবার ট্রেডমিলের সামনে টিভি রাখা। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে যাতে একঘেয়েমি না লাগে তার জন্য আর কি! বেলা তিনটা হবে তখন। অ্যাল দৌঁড়াচ্ছিল ট্রেডমিলে, কার্ডিও বিভাগে তখন কেবল অ্যাল একা। আশপাশের সবগুলো টিভি আর ট্রেডমিলগুলো তখন চলছে। অ্যালের দৌঁড়ানো শেষ হলে সে সুন্দর মত ট্রেডমিল থেকে নেমে সবগুলো ট্রেডমিল আর টিভি বন্ধ করে দিল!!!
জীমে সার্বক্ষণিক যেকোন কাজের জন্য ১০ জন লোক থাকে। ট্রেইনার তো আছেই। কিন্তু কারো মাথায় আসে না যে বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অথচ এক বিদেশী কিনা এ ব্যপারে সচেতন।
আমি খুব অবাক এবং লজ্জিত হয়েছিলাম। কারণ আমি নিজেও রুম থেকে বের হবার সময় সব সুইচ বন্ধ করিনা।
পরের কয়েকদিনও দেখলাম একই জিনিস। কেউ না থাকলে অ্যাল এসে সুইচগুলো অফ করে দেয়। অ্যালকে বললাম কথাটা আর জিজ্ঞাসা করলাম তুমি এটা কেন করলে? না করলেও তো পারতে। অ্যাল আমাকে বলল, “ আমি অপচয় করা পছন্দ করিনা। আমি ব্যবহার না করি আর একজন যাতে ব্যবহার করতে পারে সেবিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। তাছাড়া চিন্তা করে দেখো এই যন্ত্রগুলোতে যে পরিমাণ শক্তি লাগে তা দিয়ে কয়েকটা বাড়িতে বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে।”
অ্যালকে কি বলা উচিত? এক বিদেশী যে সচেতন? নাকি একজন মানুষ যে সচেতন? নাকি একজন বিদেশী বা একজন মানুষ যে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা কতটা অচেতন আর বলছে ‘সচেতন হও’।
এরপর থেকে আমি সচেতন। যেখানেই থাকি আশেপাশে কেউ না থাকলে বা নিজের রুম থেকে বের হয়ে গেলে সুইচগুলো অফ করে দেই।
গতকাল অ্যালকে বললাম কথাটা, “I have changed in a way because of you.”
অ্যাল আমাকে উত্তরে বলল, “ It’s good to know that at least somebody has changed.”
অ্যাল চলে যাচ্ছে সপরিবারে এ মাসের ২৯ তারিখ। কিন্তু সে বলেছে সে আবার আসবে, “ I like this country. Don’t worry I’ll back.”
অ্যাল ভালো থাকুক এই কামনাই করছি।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম।
বিজলি বাঁচানো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। সত্যিই এভাবে অনেক শক্তির অপচয় হয়, বিশেষত আমাদের মত গরীব দেশে। তবে সৌভাগ্যের কথা, আমাদের দেশে বিলেত-আম্রিকার মত জিম অত বেশি নেই... খাইছে

কৌস্তুভ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। মনে কিছু না করলে একটা প্রশ্ন রাখলাম। ভাই/বোন, আপনার নামের উচ্চারণটা কি?একটু জানাবেন কারণ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে দেখলাম উচ্চারণ করার। কিন্তু কোনটাই নিজের কাছে ঠিক মনে হল না। ভাই, জীমের কথা বলছেন?ঢাকায় এখন মেলা জীম। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

কৌস্‌তুভ্‌। অনেকে নাম হিসাবে কৌস্তভ (কৌস্‌তভ্‌) ব্যবহার করেন বটে, কিন্তু সেটা অভিধান-বহির্ভূত। নাম ও বানান নিয়ে কদিন আগেই একটা পোস্টে ভাল কিছু আলোচনা হয়েছে, দেখেছেন হয়ত - http://www.sachalayatan.com/guest_writer/31663

এটা আমি ছেলেদের নাম হিসাবেই জানি, কখনও কোন মহিলাকে ব্যবহার করতে দেখিনি।

(জিম-এর উচ্চারণ হেতু আমি দীর্ঘ-ঈ দিতে পছন্দ করি না।) হ্যাঁ এখন কিছু বড় শহরে অনেক জিম হয়েছে, আর বেশ কিছু ছোট জায়গায় কয়েকটি জিম হয়েছে। কিন্তু সেভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নি। বিলেত-আম্রিকার মধ্যবিত্তদেরও অনেকের ঘরেই জিমের বিদ্যুৎচালিত উপকরণ, সেটা দেশে সেভাবে হয় নি এটাই বলছিলাম। অবশ্য এটা মজা করে বলা, আর তার প্রধান কারণ হল, বিলেতে কায়িক শ্রমের অভাব যেভাবে একটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সোভাগ্যবশত আমাদের দেশে সেটা এখনো ততটা প্রকট নয়। অবশ্য ভোগবাদ সেদিকেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কৌস্তুভ

নাশতারান এর ছবি

সচলে স্বাগতম হাসি

অ্যালের মানসিকতা প্রশংসনীয়। আমাদের আসলেই সচেতন হওয়া উচিত।
সবাই সচেতন না হলে আখেরে ভুক্তভোগী হব আমরা নিজেরাই। সত্যি কথা বলতে কী, হচ্ছিও। নিজেদের থুতুতেই হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

ভালো থাকুন। নিয়মিত লিখুন।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। ইচ্ছা আছে নিয়মিত লিখবার। অনেক আগে থেকে সচলের লেখা পড়ি। কিন্তু সময়ের অভাবে লিখতে পারতাম না।
সত্যি কথা কি, আমি আগে এই ব্যাপারে খুবই অসচেতন ছিলাম। নিজে কতদিন যে লাইট ফ্যান কম্পিউটার অন রেখে বাইরে চলে গেছি। নিজেরই এখন লজ্জা লাগে। আশা করি এখন আর এমন করব না।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সাবাশ দোস্তো...

তোর প্রথম লেখা হিসেবে খুবই ভালো হইসে। (যাক, জিম করে গুন্ডার মত্ন খালি শরীরই বানাস নাই, কিছু শিক্সসও... দেঁতো হাসি)

এইরকম সচেতনতার অভাব আমাদের মাঝে খুবই বেশি। খেয়াল করে দ্যাখ, বুয়েটেই ক্লাসের পরে পোলাপান লাইট ফ্যান চালু রেখেই ক্লাস থেকে বেরোয়। যে সবার শেষে বেরুলো, সে একটু ভুলোমনা হলেই অনির্দিষ্টকাল ধরে লাইট-ফ্যান গুলা চলতে থাকে...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

ঠিক বলছিস। কতদিন যে নিজেই ক্লাসে সবার শেষে বের হইছি লাইট ফ্যান না বন্ধ করে। অথচ ক্লাসে তো একটা মাত্র সুইচ বন্ধ করলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়(মেইন সুইচ আরকি)। দোস্ত ইমোসোনগুলো কিভাবে দেয়? চেষ্টা করছি দেওয়ার, পারিনাই। একটু যদি বলতি ভাল হতো।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

এই নে, পুরা খনি...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম লেখাতেই ফাটাইয়া দিছেন। রাজিব

নিবিড় এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

সচলে স্বাগতম।

ভালো লেখা।

বোহেমিয়ান এর ছবি

স্বাগতম । লেখা ভালো লাগল ।

বুনোপার কমেন্টে লাইক
নিজেদের থুতুতেই হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

নিজে সচেতন হই, অন্যদের ও করি
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সবাইকে তাদের মন্তব্যের জন্যে।আশা করি নিয়মিত লিখতে পারবো।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।