আমার নববর্ষ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৭/২০১০ - ৭:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ হতে শতবর্ষ পরে আমার এই লেখা কেউ পড়বে কিনা তা নিয়ে আমার কবিগুরুর মত তেমন টেনশন নেই। তবে ভাল হত যদি আমিই পড়তাম। তা আর হবে নারে। বয়স তো আর কম হল না। এই যে আজ আরেকটা বছর পার করলি। আমার নতুন বছর আমার কাছে একটু অন্যরকম। হয়ত সবার কাছেই। সব সময়ই চিন্তা করার চেষ্টা করি এই দিনেই একটা ধাপ উঠলাম। ব্যাপারটা এমন যে সারাটা বছর ধরে সিড়ির লেভেল বরাবর হাঁটি, এই দিনেই আমি ধাপটা অতিক্রম করি। অদ্ভুত এক মিথ্যা সিমুলেইশন। যাই হোক আজ আমার নববর্ষ।

মনে আছে যখন খুব ছোট ছিলাম তখম বেশ ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হত। বেশ বাহারী রকমের কেক থাকত, আর তাতে সুন্দর করে আমার নাম খোদাই করা থাকত। আমার আগ্রহ থাকত সেই নামের জায়গাটি আরাম করে খাব। আশে পাশে কে কি করছে সেদিকে আমার তেমন দৃষ্টি থাকত না। আমি তাকিয়ে থাকতাম কেকের দিকে, কখন হ্যাপি বার্থডে টু ইয়ু বলবে সবাই, আর আমি ফু দিয়ে মোমবাতি গুলো নিভাব। এটা দারুন এনজয় করতাম। এরপর ছুরি দিয়ে আস্তে করে কেক কাটব। তারপর সবাই হাততালি দিবে। তখনই আমি আমার চারপাশের জনতাকে দেখব। কিন্তু পরক্ষণেই আমার দৃষ্টি আবার কেকের দিকে চলে যেত। কারণ এখন যে আমাকে কেক খাওয়ানো হবে। সেও এক বিশাল ব্যাপার। প্রথমে আম্মু আমাকে খাওয়াত, তারপর আব্বু। এরপর একে একে অনেকেই। আর সাথে ছবি তোলাতো থাকতই। এখন অনেকদিন পর যখন পুরানো ছবিগুলো দেখি বেশ অবাক হই। সবাই আমাকে ঘিরে আছে। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই অপেক্ষা করছে সেই বিশেষ মুহুর্তুটির জন্য। কখন আমি কেক কাটব। সবার মধ্যমনি হলাম আমি। ভাবই আলাদা। আই অ্যাম দ্য ওয়ান। আহ্, এইরকম যদি সারা জীবন থাকত!

আরেকটু বড় হলে শুধু ঘরোয়া ভাবেই আয়োজন হত। তখনও মাঝে মাঝে কেকের উপর মোমবাতি থাকত। এখন যদি থাকে ত একটা অথবা না। কারণ বয়সের সাথে মিলাতে গেলে আর কেক খাওয়া হবে না, মোম খাওয়া হবে। তবে কেকের চেয়ে আমার আগ্রহ থাকত আম্মুর তখন যে রাজসিক রান্না করত তার প্রতি। সে এক অসাধারণ ভোজন! এই রান্নার কাছে স্টার বা নান্না মিয়ার কাচ্ছি ফেইল। গ্যারান্টেড।

এরপর জন্মদিন নিয়ে আর কোনো আগ্রহ থাকল না। এ আর এমন কি? এ ত প্রতি বছরই আসে যায়। এ নিয়ে আমোদ প্রমোদের তেমন কোনো মানেই হয় না। তারপরো বাসায় ছোট করে কেক আনা হত। আর আম্মু তার অসাধরণ রান্নার ঝাঁপি খুলত। এখন বরং ছোট ভাইয়ের জন্মদিনটাকেই দেখি কাছ থেকে। তার ভিতরের উত্তেজনাকে দেখি। তার অকৃত্রিম আনন্দকে উপভোগ করি। তাও বছর খানেক আগের কথা। এখন আর আমার কোন কিছুই করা হয় না।

সহস্র মাইল দূরে কোন এক নির্জন কোনায় একা বসে আমি এই প্রথম আমাকে দেখছি। আজ হতে দুই দশকেরও বেশি আগে এমনি দিনে সকাল দশটা কি সাড়ে দশটায় আমার জন্ম। সেদিন সারা দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছিল। এজন্যই হয়ত ঝুম বৃষ্টি আমার খুব পছন্দ। (তবে মার্কিন মুল্লুকের বৃষ্টি না, এটা চরম বিরক্তিকর)। সবাই বলেছিল আমি যখন জন্মেছিলাম তখন নাকি সারা ঘরই আলোয় আলোকিত হয়েছিল। আমি কিন্তু এই আলোকে আজ পর্যন্ত পাই নাই। হতে পারে আলো মিয়া আমার ভবিষ্যত দেখে নিজেই পালাইয়াছেন।

একে একে অনেক ছবিই ফ্ল্যাশের মত করে আসতে থাকে আমার মনের পর্দায়। ভাবি, এই কোনায় বসে থেকে কী লাভ? আমি বরং আমার আম্মুর পাশেই বসে থাকতে চাই। আমার এত কিছুর দরকার নাই। শুধু চাই বিকেল বেলায় বর্ষার গন্ধ মাখা সমুদ্র থেকে ভেসে আসা দমকা হাওয়া। যে হাওয়ায় চোঁখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হবে যেন অনন্তের মাঝে ভেসে যাচ্ছি।

আমি সবসময়ই বাসায় কেক কিনে রাখি। ছোটবেলা থেকে খেতে খেতে এটার প্রতি একটা আসক্তি জমে গেছে। আজ ফ্রিজ খুলে কেক দেখে মনে হল ওকে, আমি আমার জীবনের প্রথম একাকী জন্মদিন পালন করি। তারপর কেক আর ছুরি নিয়ে বসলাম। কেক কাটলাম, খেলাম। এরপর চারপাশে তাকালাম। হুমম, এখন বুঝতে পারলাম নতুন বছরে আমার প্রাপ্তি কী? আমার একা একা লাগে। দেঁতো হাসি

বি দ্রঃ আজকেই খেয়াল করলাম সচলায়তন আর আমার জন্ম একই তারিখে। এর জন্য অবশ্যই কাক আর তাল দায়ী। সচলায়তনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

=== অনন্ত ===
aunontoঅ্যাট ইয়াহু ডট কম


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!

অতিথি লেখক এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ, শিমুল ভাই হাসি

অনন্ত

[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে] এর ছবি

জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

লেখাটা পরে খুব ভালো লাগলো,ভালো থাকুন।।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। হাসি

অনন্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

শুভ জন্মদিন অনন্ত!

জহিরুল ইসলাম নাদিম

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, নাদিম। হাসি

অনন্ত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।