স্বপ্ন যখন পাহাড়সম (পর্ব-০১)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৮/০৭/২০১০ - ১০:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্রিগেডিয়ার স্যার জন হান্ট ও এডমন্ড হিলারী কর্ত্‌ক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি'র নিকট প্রদত্ত এভারেস্ট বিজয়ের উপর তৈরি রিপোর্টঃ(পার্ট-০১)

কোন সাফল্যই হঠাৎ করে আসে না।এভারেস্ট বিজয়ের জন্যও আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে সুদীর্ঘ তেত্রিশটি বছর।১৯২১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত মোটামুটি ১১টি বড়সড় অভিযান হয়েছে এভারেস্টকে জয় করার উদ্দেশ্যে।এর মধ্যে ৮টি অভিযান ই পরিচালিত হয়েছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি ও আলপাইন ক্লাবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে।সবগুলোই খুব সিরিয়াস অভিযান ছিল-একথা নিশ্চয়ই বলা যাবে না।তার কারণও আছে।একদিকে বৈরী আবহয়াওয়া,অন্যদিকে অভিযানকালে এতো বিচিত্র ও বহুমুখী সমস্যাকে ফেস করতে হয়-যে অভিযাত্রীরা তিন তিন বার পুরো বছর নষ্ট করেছেন কেবল এভারেস্ট জয়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট 'way'তৈরি করতে গিয়ে।উদ্দেশ্য ছিল পরের বছর ঐ 'way'তে তারা এভারেস্ট জয় করবেন।এমনটা ঘটেছে ১৯২১,'৩৫ ও'৫১ সালে।

আমাদের পূর্বসুরীরা আমাদের শুধু সঠিক 'way'ই দেখিয়ে দেন নি,অভিযানকালীন সমস্যাগুলোর সমাধানও বাতলে দিয়েছেন তারা।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এভারেস্ট জয়েও অনেকদূর এগিয়েছিলেন।বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নর্টন ও সমারভিল(১৯২৪),স্মিথ,হ্যারিস ও ওয়েজার(১৯৩৩)।এরা সবাই উত্তর দিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন।সুইস গাইড ল্যাম্বার্ট ও শেরপা লীডার তেনজিং আবার ১৯৫২ তে দক্ষিণ দিক দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন।মজার ব্যাপার হল,এরা সবাই মোটামুটি ২৮,০০০ ফিট পর্যন্ত উঠেছিলেন।আমাদের অভিযাত্রী দলের দায়িত্ব ছিল তাদের সেই অসপূর্ণ মিশনকে সম্পূর্ণ করা।

বড়সড় অভিযান পরিচালনা করা মোটামুটি ভয়াবহ এক কাজ।সেপ্টেম্বর,১৯৫২ থেকেই আমরা প্রিপারেশন নেয়া শুরু করি।সুইজারল্যান্ডে তখন শীতের মাঝামাঝি।সেই হাড় কাঁপানো শীতের মাঝেই আমরা দরকারী জামাকাপড়,খাওয়াদাওয়া ও অন্যান্য ইকুইপমেন্ট(নিশেষত অক্সিজেন ইকুইপমেন্ট)যোগাড় করে নর্থ ওয়ালেস এর পাহাড়গুলোতে ট্রায়াল দেয়া শুরু করেছি।বাই দ্যা ওয়ে,মূল অভিযানের তখনও ৫ মাস বাকি।

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে যতটুকু বুঝলাম,হিমালয়ের কোন সুউচ্চ চূঁড়ায় ট্রাই করার আগে 'উচ্চতা'র সাথে নিজেদের অভিযোজিত করে নেয়া দরকার।তো মিশন এভারেস্ট শুরুর বেশ কিছু আগেই আমরা হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।মে'র মাঝামাঝি সময়টাকে মিশন শুরুর জন্য 'পারফেক্ট' বলে মনে হল।জুন এর ১ তারিখ থেকে আবার ব্‌ষ্টি শুরু হতে পারে।মাঝের এই ১৫ দিন ঝড়-ঝাপটা কম থাকে বলে শুনেছি।শীতটাও এসময় কম পড়ে।এ সব ই অবশ্য স্ট্যাটিস্টিক এর কথা।আবহাওয়া যে কখন কোন মোড় নেয়-কেউ বলতে পারে না।এনিওয়ে,সব কিছু বিবেচনা করে আমরা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি নেপালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।১৫ মে আমাদের মিশন শুরু হবে।এই ফাঁকে দরকারী কিছু ট্রেনিংও সেরে নেয়া যাবে।

ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখ প্রধান অভিযাত্রী দলটি সমুদ্রপথে রওনা দিল।অল্প যে কজন বাকি রইলো,তারাও কিছুদিনের মধ্যেই প্লেনে নেপালের পথ ধরলো।আমাদের দলটি ছিল ১৩ জনেরঃচার্লস ইভান্স,টম বুঁর্দিলো,মাইকেল ওয়েস্টম্যাকট,জর্জ ব্যান্ড,উইলফ্রেড নয়েস,চার্লস উইলী,এডমন্ড হিলারী,জর্জ ল,আলফ্রেড জর্জ এবং আমি(অভিযাত্রী),ড.মাইকেল ওয়ার্ড(অভিযাত্রীদলের চিকিৎসক),ড.গ্রিফিথ পা(শারীরতাত্ত্বিক) এবং টম স্টবার্ট(ক্যামেরাম্যান)।একটু আশ্চর্যের ব্যাপার হল,এই দলের মাত্র ২জন এর আগে হিমালয়ে গিয়েছেন।

কাঠমুন্ডুতে এসেই আমরা ব্রিটিশ এ্যাম্বেসীতে একখানা ফরমাল হাজিরা দিলাম।এখান থেকেই আমাদের হিমালয়ের পথে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু হবে যাতে সময় নেবে আনুমানিক সতের দিন।আমাদের সাথে তখন সাড়ে ৭ টনের মত মালামাল।আপনাদের আন্দাজের সুবিধার্থে একটা তুলনা দেই,মিলিটারীতে সাড়ে ৩শ'র মত জোওয়ান নাকি এই পরিমান মালামাল নিয়ে মার্চপাস্ট করে।সে যাই হোক,এক দিন রেস্ট নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এর মধ্যে অভিযাত্রী দলের বাকি সদস্যরাও এ্যাম্বেসীতে এসে পৌঁছালো।শেরপা দলের গ্রেট লীডার তেনজিং ও তার দলবল নিয়ে হাজির হল সেখানে।রংচঙ্গে পোশাক পরা বিশ জনের মত শেরপাকে দেখলাম আমরা।এদেরকে দিয়েই হয়তো পর্বতারোহণের সবচেয়ে কঠিন অংশটুকু (মালামাল বহন) করানো হবে।এদেরকে চোখেমুখে অবশ্য খুশির ছটা।তেনজিং নিজে এদের মধ্যে থেকে ১১জনকে বাছাই করে দিল।মাস কয়েক আগেই নাকি তেনজিং একটি সুইস অভিযাত্রী দলের সাথে এভারেস্টে অভিযান করে এসেছে।ওর শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমাদের মনে একটু সংশয় ছিল বৈকি।ওকে দেখামাত্র কিন্তু সব সংশয় উড়ে গেল।

**হিমু ভাইকে ধন্যবাদ এরকম একটা কাজ করার জন্য আমাকে অলক্ষ্যে উৎসাহ দেয়ার জন্য।

**মূল লেখাটা যতটা গাম্ভীর্যপূর্ণ আমারটা তার ছিঁটেফোটাও হয়নি।এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দূঃখিত।


মন্তব্য

পুতুল এর ছবি

আপনার নামটা দিতে ভুলে গেছেন। চলুক। পাহাড়ে উঠার খুটিনাটি বিষয় আমরা একটু আন্দাজ করতে শিখি।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মুস্তাফিজ এর ছবি

ভালো একটা সিরিজ। তবে নাম থেকে নেভারেস্ট বাদ দিলে হয়না?

...........................
Every Picture Tells a Story

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভালো কাজ। কিন্তু আবারো সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি শুনতে হয়তো ভালো লাগবেনা, তবুও বলি-- দুটো বাক্যের মাঝে একটা করে স্পেস দিতে হবে। অর্থাৎ যেকোন বিরাম চিহ্নের পরে একটা স্পেস। এটা ভুলে গেলে চলবেনা।

মুর্শেদ: এরকম কিছু কি করা যায় যা অটোমেটিক্যালি এই স্পেস দেয়ার কাজটা করবে? বিশেষ করে যারা নতুন লিখছেন তাদের জন্য? (যদিও ব্যাপারটা লেখকেরই করা উচিত।)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অবশ্যই করা যায়। কিন্তু ইমপোজড ফরম্যাটিং আমার পছন্দ নয়। ফরম্যাটিং করার স্বাধীনতা এবং লিমিটেশন দুটোই লেখকের উপর বর্তানো উচিৎ বলে মনে করি। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত এর ছবি

চলুক

হিমু এর ছবি

কৃতজ্ঞ থাকবো যদি নেভারেস্ট শব্দটি শিরোনামে ব্যবহার না করেন। জন হান্টের রিপোর্টের সুপাঠ্য অনুবাদ যদি করতে চান, অনুগ্রহ করে একটি মানানসই শিরোনামও অনুবাদ করে নেন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

স্পর্শ এর ছবি

অনুবাদ ঝরঝরে হয়েছে। পুরোটা পাবার জন্য অপেক্ষা করছি। চলুক

আপনি একটা ভিন্ন শিরোনাম মন্তব্যের ঘরে প্রস্তাব করুন। মডারেটররা পরিবর্তন করে দিতে পারবেন। অথবা মেইল ও করতে পারেন সচলায়তন বরাবর।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

এই মুহূর্তে খুব ভাল কোন শিরোনাম মাথায় আসছে না।
মোটামুটি টাইপ একটা এসেছে---"স্বপ্ন যখন পাহাড়সম(পর্ব-০১)"
সম্মানিত মডারেটররা ইচ্ছা করলে চেঞ্জ করে এই শিরোনাম দিতে পারেন।
@প্রক্‌তিপ্রেমিক ভাইয়াঃ পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। স্পেস এর ব্যাপারটা আমি কখনো খেয়াল করি নি

কালো-মডু এর ছবি

লেখকের অনুরোধে শিরোনাম বদলে দেয়া হল। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

মামা কি ধারাবাহিক দিচ্ছেন? পুরোটা তো মনে হচ্ছে না এইখানে আছে!

--- থাবা বাবা!

অতিথি লেখক এর ছবি

চেষ্টা করবো মামা...
বাকিটা মডারেটরদের ইচ্ছাঃপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।