তৃষিত সমুদ্র

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি
লিখেছেন সুমিমা ইয়াসমিন [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১১/০৭/২০১০ - ৪:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
সমুদ্রবালক জলের তৃষ্ণা নিয়ে হাত বাড়ায় আকাশবালিকার পানে। বিপুল জলরাশির ভিড়েও তৃষিত সমুদ্রবালক প্রতীক্ষার প্রহর গোনে, তৃষ্ণার জল নিয়ে আসবে আকাশবালিকা!

আকাশজুড়ে মেঘদল ভেসে বেড়ায়, এই বুঝি জল হয়ে ঝরবে! অথচ ঝরঝর জলের মুখরতা মেলে না অতো সহজেই। প্রহরের পর প্রহর যায়, মেঘদল ছোটে দেশ হতে দেশান্তরে। সমুদ্রজুড়ে থৈ থৈ করে নোনা জল। ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পরে সৈকতে। সমুদ্রজল মাথা কুটে মরে! উদভ্রান্ত সমুদ্রবালক যেন বুঝেও বোঝে না সমুদ্রজলের আকুতি। ঢেউয়ের কান্না, বাড়ায় জলের লবনাক্ততা। সমুদ্রবালক স্বপ্ন আর কল্পনার জালে জড়িয়ে রাখে নিজেকে।

দুই.
ক্লান্ত আকাশবালিকা তরী ভাসায় সমুদ্রে। কান পেতে শোনে ঢেউয়ের কান্না, সমুদ্রপাখিদের কলরব। আকাশবালিকা ঢেউয়ের গান শুনে প্রশান্তি লাভ করতে চেয়েছিল। কিন্তু গান কোথায়, ঢেউয়ের কান্না শোনা যায় অবিরাম!

আকাশবালিকা সমুদ্রপাখিদের ডেকে পাঠায় মেঘের রাজ্যে। সমুদ্রপাখিরা শোনায় ঢেউয়ের দুঃখের কাহিনী-- একসময় মনের আনন্দে গান গাইতো সমুদ্রঢেউ। ঢেউয়ের গান শুনে তালে-তালে নাচতো সমুদ্রপাখিরা। তাই দেখে বাতাসের উল্লাস বয়ে যেত উপকূল জুড়ে। এই উল্লাস, এই হাসিগান বেশি দিন সইলো না প্রকৃতিদেবী। এক সমুদ্রঝড়ের তাণ্ডব কেড়ে নিলো ঢেউয়ের কণ্ঠে ছিলো যত গান, সমুদ্রপাখিদের আনন্দ-নৃত্য, বাতাসের উল্লাস...!

তিন.
তৃষিত সমুদ্রবালক ছুটে বেড়ায় ক্ষিপ্র গতিতে। এক মহাদেশ পেরিয়ে যায় অন্য মহাদেশে। অস্থির সমুদ্রবালকের এতোটুকু শান্তি মেলে না কোথাও। বারবার ভুলের ফাঁদে আটকে পড়ে। তবু হাল ছাড়ে না সমুদ্রবালক। পথে পথে পড়ে থাকা মণিমুক্তাগুলো কুড়িয়ে নেয়। মালা গাঁথা হয় না। মালা গাঁথতে জানে না সমুদ্রবালক। কুড়িয়ে নেওয়া মণিমুক্তাগুলো টুপটাপ ঝড়ে পড়ে এখানে ওখানে। সমুদ্রবালক টেরও পায় না!

একসময় শূণ্য দুহাত দেখে জাগে হাহাকার! এভাবেই কী নিঃশেষ হবে সব! সমুদ্রবালকের তৃষ্ণা বাড়তেই থাকে। বিস্তৃত হতে থাকে কল্পনার জাল। সে-জালেই সমুদ্রবালক জড়িয়ে নিতে চায় আকাশের বুকে জমে থাকা মেঘগুলোকে।

চার.
দিন শেষে আকাশবালিকার ক্লান্তি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। মন্থর গোধূলীবেলায় সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিতে চায় সমুদ্র। কিন্তু ঢেউয়ের কান্না আর সমুদ্রের তৃষ্ণায় কাতর আকাশবালিকার প্রশান্তি মেলে না কিছুতেই। চারিদিকে ফেনিল যন্ত্রণা!

একটা ডানা ভাঙা সমুদ্রপাখি আত্মাহুতি দেয় সমুদ্রজলে। বুঝি-বা খুঁজে পেতে চায় নির্বানস্বাদ! আকাশবালিকারও সাধ হয় ওই সমুদ্রপাখির পথ ধরতে...। কিন্তু তার আগে সমুদ্রবালক ও ঢেউয়ের কষ্টগুলো মুছে দিতে আকাশবালিকা দ্বারস্থ হয় প্রকৃতিদেবীর। দিনমান আকাশবালিকার ধ্যান, অনুনয় বিননয়...। একসময় প্রকৃতিদেবী বর দেয় আকাশবালিকাকে। তাতেই দুটো ইচ্ছে পূর্ণ হয় আকাশবালিকার। সমুদ্রঢেউ ফিরে পায় গানের সুর; আর ঝুম্ বৃষ্টি নামে সমু্দ্রের বুকে!

ছবি: 
07/07/2009 - 5:46অপরাহ্ন

মন্তব্য

দীপু এর ছবি

জটিল! চলুক

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

দীপু, কী জটিল? আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।