দ্য পিকচার অব ডোরিয়ান গ্রে | ৭ম পর্ব |

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৯/০৭/২০১০ - ১০:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ৭ : বিপর্যয়

গাড়িতে চড়ে থিয়েটারের উদ্দেশে চলেছেন দুই বন্ধু—লর্ড হেনরি এবং বাসিল। ডোরিয়ানও আছে সাথে। তাঁরা দুজনই একটু উৎকণ্ঠায় আছেন সিবিল ভেনের কথা ভেবে। সত্যি বলতে কি, এমন একটি তন্বী সুন্দরী, যে কিনা ডোরিয়ানের হৃদয় দখল করে নিয়েছে, কৌতূহলী করে তুলছে তাদের দুজনকে। মেয়েটি কি তাঁদেরও আকৃষ্ট করতে পারবে? নাকি ডোরিয়ান আরও যোগ্য স্ত্রী বেছে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছে?

একজন হৃষ্টপুষ্ট ম্যানেজার, দুহাতে রত্নখচিত আংটি-পরা, পথ দেখিয়ে তাঁদের নির্ধারিত আসনে নিয়ে গেল। ‘রোমিও এবং জুলিয়েট’ নাট্যের দৃশ্য এটা, নাটুরেরা জীর্ণ কাপড় পরিহিত। হঠাৎ, তুমুল করতালির মধ্যে সিবিল ভেন খিল-আঁটা মঞ্চে পা রাখল। তার হাতগুলো যেন শীতল আইভরি দিয়ে তৈরি। হ্যাঁ, সে নিশ্চিতভাবেই মোহনীয় দেখতে, লর্ড হেনরি ভাবলেন, তাঁর দেখা অন্যতম আকর্ষণীয় নারী।

তাঁরা তিনজন পালাটির একটা বিখ্যাত দৃশ্যে তাকে অভিনয় করতে দেখলেন। এটা ছিল একটা সাড়া জাগানো ও নাটকীয় মুহূর্তের দৃশ্য, যা সিবিল অনেকবার করেছে এর আগে। প্রতিবার সে দর্শকশ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখত। কিন্তু আজ রাতে, কী এক অদ্ভুত কারণে সিবিলকে অমনোযোগী আর ভোঁতা দেখায়। তার মুখে আনন্দের কোনো ছাপ পড়ে না যখন, যেমনটি জুলিয়েট করে, সে রোমিওর দিকে তাকায়। তার কথাগুলো কেমন মেকি শোনায়।

সিবিল খুবই বাজে অভিনয় করল। আস্তে আস্তে ডোরিয়ান গ্রের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসছিল। বাসিল এবং লর্ড হেনরি সিবিলের অভিনয়কে অনভিজ্ঞ হিসেবে রায় দিয়ে বাতিল করে দিলেন। সত্যি, দেখতে সে কমনীয়, কিন্তু তার অভিনয় জঘন্য। নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক শেষ হলে সিটি বাজানোর শব্দে হল ভরে উঠল।

লর্ড হেনরি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন, গায়ে কোট চাপাচ্ছেন। ‘সে বিশিষ্ট সুন্দরী, ডোরিয়ান, কিন্তু সে অভিনয় জানে না। চলো যাই।’

সিবিলের ব্যর্থতা ডোরিয়ানকে বিপদে ফেলে দিয়েছে। তার প্রিয় বন্ধুদের সামনে সে অপমানিত বোধ করছে। ‘আমি দুঃখিত তোমাদের একটি সন্ধ্যা অপচয় হলো,’ সে ক্ষমা চাইল। ‘সে একটি নগণ্য, তুচ্ছ অভিনেত্রী।’

‘এভাবে কথা বলো না, ডোরিয়ান। বিশেষ করে তুমি যাকে ভালোবাসো তার সম্পর্কে,’ বাসিল সতর্ক করলেন। ‘আমার ধারণা মিস ভেন আজ অসুস্থ। শিল্পসাধনা থেকে প্রেম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

‘এ ব্যাপারে চিন্তা করো না, ডোরিয়ান,’ লর্ড হেনরি উপদেশ দিলেন। ‘আমার তো মনে হয় না তুমি বিয়ের পরেও বউকে দিয়ে অভিনয় করাতে চাইবে। তাই, কী আসে যায় এতে? বাসিল এবং আমার সাথে ক্লাবে চলো। আমরা সিবিল ভেনের রূপকে উদ্দেশ্য করে পান করব।’

কিন্তু ডোরিয়ানের দুঃখ বন্ধুদের সান্ত্বনায় দূর হওয়ার নয়। ‘দূর হও!’ সে চিৎকার করল। ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’

প্রদর্শনীর বাকি সময়টুকু সে নিশ্চুপ বসে থাকল। তারপর ঝড়ের বেগে ঢুকল সিবিলের সজ্জাকক্ষে। মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে। মুখে বিমূঢ় চাউনি। চোখ জ্বলছে ভাটার মতো। শরীর থেকে যেন গরম আভা ঠিকরে বেরোচ্ছে।

‘কত্ত বাজে অভিনয় করলাম আজ!’ সে চেঁচাল।

‘ভয়ংকর,’ উত্তর এল। ‘এটা ছিল একটা জঘন্য অনুষ্ঠান। তুমি কি অসুস্থ?’

‘আমি আর কখনোই ভালো অভিনয় করতে পারব না,’ আনমনা কণ্ঠে সে বলল। ‘তুমি বুঝবে না, বুঝবে তুমি? যখন তোমাকে চিনতাম না, অভিনয় ছিল আমার জীবনের একমাত্র বাস্তবতা। এই প্রথম, আজ রাতে, আমি রঙ্গমঞ্চের মেকি, তুচ্ছ রূপটি দেখতে পেয়েছি।’

‘তুমি আমাকে এর চেয়ে ভালো কিছু দিয়েছ। তুমি আমাকে বুঝতে শিখিয়েছ ভালোবাসা কী? কোনো মঞ্চ আমার জন্যে যতটুকু, তার চেয়ে তুমি অনেক বেশি কিছু! আমার প্রেম! আমার প্রিন্স চার্মিং! তুমি আমার সব!’

‘কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারনি কী করেছ? তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাকে হত্যা করেছ,’ ডোরিয়ান ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দিল। কঠোর চোখে তাকাল মেয়েটির দিকে। ‘আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, কারণ তুমি ছিলে সেরা। কারণ তোমার ছিল এত্ত প্রতিভা! এখন দেখছি তুমি বোকা আর ভাসা-ভাসা। কী গাধাই না ছিলাম একটা! আমি আর তোমাকে দেখতে চাই না!’ সে রাগে চেঁচিয়ে উঠল।

সিবিল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কী করে তার প্রিন্স চার্মিং এত নিষ্ঠুর হতে পারে? সে তো বলেছে ভালোবাসে তাকে, চুমু খেয়েছে তাকে, বিশ্বের সবকিছু এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কেন সে এত বদলে গেছে? সিবিল কাঁদতে শুরু করল, কাঁদতে কাঁদতে মেঝের ওপর আছড়ে পড়ল। নিজের জীবন রক্ষায় ডোরিয়ানের হাঁটু আকড়ে ধরার চেষ্টা করল। ‘দয়া করো, প্রিয়তম। আমি কঠোর পরিশ্রম করে উন্নতির চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি আরও ভালো অভিনেত্রী হয়ে উঠব। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যেয়ো না,’ সে মিনতি করল।

ডোরিয়ান তার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকাল, ওপরের ঠোঁট বেঁকে যাচ্ছে তীব্র অবজ্ঞায়। মেয়েটির কান্না তার বরফ-কঠিন হৃদয়ে একটুও আঁচড় কাটতে পারছে না। সিবিলকে একপাশে ছুড়ে মেরে গোড়ালির ওপর ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল।

‘আমি যাচ্ছি,’ শান্ত, পরিষ্কার কণ্ঠে সে বলল। ‘আর দেখা হবে না। তুমি আমাকে প্রচণ্ড হতাশ করেছ।’

ডোরিয়ান আর দেরি করল না। ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল থিয়েটার থেকে।

***
পূর্ববর্তী পর্ব
ছবি-সূত্র : www.alcorngallery.com/LC/LC_display.php?i=8

কুটুমবাড়ি


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।