আকাশ-জানালা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৮/০৭/২০১০ - ৬:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


সবে ভোর হলো। আলো গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে। জানালা খোলা। বাতাসও আছে। জানালার সামনে লোহার পাত বসিয়ে পাখিদের বসার জায়গা করে দিয়েছি। বাড়িতে গাছপালা ভালোই আছে। ওগুলোতে পাখিরা থাকে। ঠিক সামনে একটাই বাড়ি। চারতলা। আটটা বারান্দা। নানা দৃশ্য। সকালের দৃশ্য।

বুড়ো দাদু বই পড়ছেন। কি বই কে জানে।
একজন দাঁত মাজছেন। ঘ্রোঁ-ঘ্রা- হ্যাক থু। থু থু রাস্তায়।রাস্তা সাদা। বুকে বানরের মত লোম।
মা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে।
তসবীহ হাতে একজন।
এক কিশোর দাঁড়িয়ে। কানে মোবাইল। চোখে রাত জাগার ক্লান্তি, মুখে ঝকঝকে গোপন ভালোবাসা।
গাছে পানি ঢালছেন একজন। শরীরে রাতের দোমড়ানো জামা। খেয়াল নেই।
হাতে চায়ের কাপ। চোখে স্বপ্নালু দৃষ্টি।
ইজি চেয়ার দুলছে। দুলছে মানুষ। সাথে স্বপ্ন কিংবা দুস্বপ্ন।

দু বাড়ীর মাঝে রাস্তা। পাশেই ড্রেন। ড্রেনে বয়ে যায় নগরজীবনের কালো দায়ভার। তার উপরেই অলিখিত ডাষ্টবিন। পলিথিনে মোড়ানো আবর্জনা। শবের মত ন্যাপকিন। গায়ে স্বপ্নভঙ্গের মেটে রঙ।

রাস্তার পাশে ইলেক্ট্রিক কেবল ঝোলে। ওতেও পাখিরা বসে। কখনো মরেও যায়। তাও বসে।

জানালার সামনে পাখিরা আসে। নাচে। গান শোনায়। ঝগড়া করে। কখনো ভালোবাসাবাসি। চারটা চড়ুই। তিনটা শালিক। বেশ কিছু দামড়া কাক। ভালোই মাস্তান।

ওরা এসে বসে। আমার সাথে কথা বলে। চিক-চিক-চিরিক। কা-কা-কা-ওয়া। আমিও বলি। কেউ ভয় পায়। কেউ বেশ চটপটে। ওরা খায়। খাবার দেই তাই আসে। রুটির টুকরো, সাদা ভাত, কখনো ভাঙ্গা চাল। কখনো চোখে কৃতজ্ঞতা, কখনো সন্দেহ।

জানালার উপরেই দুটো ঘুলঘুলি। চড়ুই বাসা বেধেছিলো। রাজ্যের ঘাস লতা-পাতার সংসার। একসময় শিশুদের আগমন। একটু পর পর শিশুদের দেখতে ত্রস্ত মায়ের ছুটে আসা। মাকে পেলেই শিশুদের আনন্দের চিৎকার। আমি শুনতাম। সন্ধায় বাবার ফিরে আসা। মাঝে মাঝে ওই দম্পতির ঝগড়া । ভালো লাগতো। বাচ্চারা উড়তে শিখলো। সে কি কষ্ট। ওড়া শিখে বাচ্চাদের সে কি আনন্দ। মায়ের গলা ঘেঁষে বসে থাকা। মায়ের আদর। একটু ওড়া, বিশ্রাম, আবারো ওড়া। এখন ওরাই হয়তো আমার জানালায় বসে। সকালে খাবার খায়। সারাদিন মুক্ত আকাশটা ওদেরই। মনের আনন্দে উড়ে বেড়ানো। নীল মেঘ, কালো মেঘ। সোনা ঝরা রোদ। সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া ঝির ঝিরে বাতাস।

ওদের দেখি। আমাকে ওরা আকাশের কথা বলে। মুক্তির কথা বলে। আমি শুনি। মাঝে মাঝে ক্লান্তি নিয়ে আমার কোমরের নীচটা দেখি। শুকানো, পাটকাঠির মত।

ওদের আকাশ দিগন্ত ছুঁয়েছে। আমার আকাশ আমার জানালায়। আকাশ-জানালা। আমার জীবন।

--------
মানিক চন্দ্র দাস
manikchandradas10[অ্যাট]gmail[ডট]com


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাহ্

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় প্রকৃতিপ্রেমিক,
ধন্যবাদ। ভালো আছেন? ভালো থাকবেন।
মানিক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এই আর ভালো থাকা। চলে যাচ্ছে আরকি। আমি তো আপনার ফ্যান হয়ে যাচ্ছি মনে হয়। ভালো ভালো লেখা দিতে থাকুন।

অতিথি লেখক এর ছবি

দৃশ্য বর্ণনা সুন্দর লাগল।


ছেড়া পাতা
ishumia@gmail.com

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছেড়া পাতায় চন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা না? হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ছেঁড়া পাতা। আচ্ছা আপনারা এতো সুন্দর নাম কোথায় পান বলুন তো। একজন বিষণ্ণ বাউন্ডুলে, একজন প্রকৃতি প্রেমিক, একজন ছেঁড়া পাতা। আপনাদের নাম দেখেই আমি মুগ্ধ। ভালো থাকবেন।
মানিক

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে [অতিথি] এর ছবি

অসাধারন।।অসাধারন।।অসাধারন।।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে,
ভাই আপনার নামটা চমৎকার। ধন্যবাদ। ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
মানিক

[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে] এর ছবি

হাসি

রিম্মী চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

অসাধারন গল্পটা........................... আমার খুব ভাল লেগেছে পড়ে......... মনে হয়েছে আমিও গল্পের মধ্য আছি.................................।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় রিম্নী,
ধন্যবাদ। আপনার কমেন্টটা সুন্দর। ভালো থাকবেন।
মানিক

ওডিন এর ছবি

খুব ভাল লাগলো। হাসি

______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় ওডিন,
ধন্যবাদ।
--------------------মানিক

নিবিড় এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।