তুষার সন্ধ্যায় থেমেছি অরণ্যে : রবার্ট ফ্রষ্ট

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০২/০৯/২০১০ - ৩:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পূর্বলেখঃ
ফ্রস্ট নিজে এই কবিতাকে বলেছেন “a tricky poem”; এই চাতুর্য তাঁর কবিতায় যদিও সাধারণভাবে প্রাপ্য। ঘোড়সওয়ার যাচ্ছিলেন তুষার-ঝরা সন্ধ্যায়, বনভূমির ভেতর দিয়ে। সাদা তুষারে ভরে উঠছে বনস্থলী; কে মালিক এই বনভূমির তিনি জানেন না, তাঁর বাড়ি যদিও কাছাকাছি গ্রামেই। কিন্তু কি তাৎপর্য এই কথার, যখন ঘোড়সওয়ার বলেন, বনের মালিক জানবে না তাঁর ঘোড়া থামিয়ে বনভূমির সৌন্দর্য দেখার এই ঘটনাটি? এই না-জান ...পূর্বলেখঃ
ফ্রস্ট নিজে এই কবিতাকে বলেছেন “a tricky poem”; এই চাতুর্য তাঁর কবিতায় যদিও সাধারণভাবে প্রাপ্য। ঘোড়সওয়ার যাচ্ছিলেন তুষার-ঝরা সন্ধ্যায়, বনভূমির ভেতর দিয়ে। সাদা তুষারে ভরে উঠছে বনস্থলী; কে মালিক এই বনভূমির তিনি জানেন না, তাঁর বাড়ি যদিও কাছাকাছি গ্রামেই। কিন্তু কি তাৎপর্য এই কথার, যখন ঘোড়সওয়ার বলেন, বনের মালিক জানবে না তাঁর ঘোড়া থামিয়ে বনভূমির সৌন্দর্য দেখার এই ঘটনাটি? এই না-জানার ব্যাপারটি কি তাঁর কাছে স্বস্তিদায়ক? কেন? একধরনের কুহকাচ্ছন্নতার ভেতর থেকে তাঁকে জাগিয়ে তোলে তাঁর ঘোড়ার গলায়-ঝোলানো ঘুন্টির আওয়াজ : হঠাৎ তাঁর মনে পড়ে যায় তাঁর গন্তব্যের কথা-- বেলাবেলি তাঁকে পৌঁছুতে হবে সেখানে; যেতে হবে বহু মাইল, ঘুমোবার আগে; রক্ষা করতে হবে বহু প্রতিশ্রুতি; তারপর ঘুম, তারপর বিরতি এ যাত্রার। পাঠক ইচ্ছে করলে কবিতাটিকে পড়তে পারেন একটি চমৎকার প্রকৃতি-বর্ণনার কবিতা হিসেবে। আবার তিনি এতে খুঁজতে পারেন রূপক অর্থ-ও : ঐ বনভূমি মৃত্যুর হিমশীতল হাতছানি, তার ভয়াল সৌন্দর্যের প্রতীক সম্ভবত; পথিক চিরকালের যাত্রী, রবীন্দ্রনাথের গানের সেই চিরচেনা পথিক, যে চলেছে নিরন্তর। থামার অবকাশ তাঁর নেই; কেননা জীবনের নানা প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশা, নিজের কাছে, নিজের ও অন্যের কাছে, তাঁকে পূরণ করতে হবে। তবু অবসর বা ঘুম (মৃত্যু) তাঁকে হাতছানি দিয়ে থামতে বলে। বনভূমি হয়তো সেই মৃত্যুর প্রতীক, যার ভয়াল আকর্ষণ ঘোড়সওয়ারকে কিয়ৎকালের জন্যে বিমনা করে তোলে। তিনি গ্রস্ত হন মৃত্যুর কুহকে; আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে, এবং ঘোড়ার ঘুন্টি (“জীবনের অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগ!”) তাঁর চটকা না ভাঙালে, তিনি হয়তো এই কুহকিনী-সন্ধ্যায় আত্মঘাতী হতেন। অবশেষে জীবনের দাবীরই জয় হয়; পথিক আবার চলতে শুরু করেন, যদিও তাঁর ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাসটি অশ্রুত থাকে না: “And miles to go before I sleep” কথাটির দ্বিরুচ্চারণ এই ক্লান্তি ও বিবিক্তিকে সোচ্চার করে তোলে।

[খোন্দকার আশরাফ হোসেন, "ইঙ্গ-মার্কিন কবিতায় আধুনিকবাদ"]

STOPPING BY THE WOODS IN A SNOWY EVENING

Whose woods these are I think I know.
His house is in the village, though;
He will not see me stopping here
To watch his woods fill up with snow.

My little horse must think it queer
To stop without a farmhouse near
Between the woods and frozen lake
The darkest evening of the year.

He gives his harness bells a shake
To ask if there is some mistake.
The only other sound's the sweep
Of easy wind and downy flake.

The woods are lovely, dark, and deep,
But I have promises to keep,
And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.

তরু সুশোভিত ছায়াবীথি যার, মনে হয় তারে জানি
এ গ্রামেই তার মমতা জড়ানো রয়েছে কুটিরখানি;
জানি সে আমায় দেখবে না হায় থামতে বাড়ীর পাশে
গাছের পাতায় শাখায় শাখায় তুষারেরা জমে আছে।

আমার ছোট্ট ঘোড়াটি অবাক! ভাবছে এটা কি হলো
সওয়ারী এখানে থেমেছে যে কেন, বড়োবেশী পথভুলো
এই ঘন বনে, তুষারে জমাট স্তব্ধ হ্রদের মাঝে
অতল আঁধার জমে আছে আজ সন্ধ্যার খাঁজে খাঁজে।

ঘন্টি বাজিয়ে, মাটিতে পা ঠুকে, চপলতা এঁকে রাখে
উঁচিয়ে দুকান জানতে চাইছে, ভুল হলো কোন ফাঁকে?
ঝিরি ঝিরি বায় পাতায় পাতায় বরফের কুচি ঝরে
থির হয়ে আছে সন্ধ্যার ছায়া আবছা অন্ধকারে।

অয়ি সুন্দরী, কৃষ্ণকলি, গহন অরণ্যানী
কথা দেয়া আছে প্রভাতের কাছে, তুমি মন কাড়ো মানি
অনেকটা পথ যেতে হবে মোরে শয্যা নেবার আগে
অনেকটা পথ যেতে হবে জানি ঘুমিয়ে পড়ার আগে।

পাদটীকা

  • ১. হিজলের সারি ডুবালো পা’দুটি শীতল দীঘির জলে
    কাজল-স্নিগ্ধ সন্ধ্যা সেখানে গানে গানে কথা বলে। *চরণ দুটি পরিমার্জিত হলো।
  • ২. ঝিরি ঝিরি বায় মনটা নাচায় পাতার পালক ঝরে *চরণটি পরিমার্জিত হলো।

মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

  • মূল কবিতাটা পড়া ছিলো। অনুবাদটাও পড়লাম। ভাবছি কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদক কতটা স্বাধীনতা পেতে পারেন। মূল কবিতা ও অনুবাদের অনেক পার্থক্য দেখে আশংকা হচ্ছে এটা কি আসলেই অনুবাদ নাকি মূল কবিতার ওপর ভিত্তি করে লেখা আরো একটি কবিতা।

  • আরো একটা বিষয় পরিস্কার না। পূর্বলেখটি কী আপনার লেখা নাকি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের লেখা? সেখানে দেখলাম লেখা হয়েছে -

    কিন্তু কি তাৎপর্য এই কথার, যখন ঘোড়সওয়ার বলেন, বনের মালিক জানবে না তাঁর ঘোড়া থামিয়ে বনভূমির সৌন্দর্য দেখার এই ঘটনাটি? এই না-জানার ব্যাপারটি কি তাঁর কাছে স্বস্তিদায়ক? কেন?

    আরোও দেখছি -

    তাঁর চটকা না ভাঙালে, তিনি হয়তো এই কুহকিনী-সন্ধ্যায় আত্মঘাতী হতেন।

    বনের মালিকের জানা বা না জানার বিষয়টি কবিতায় নেই। কিন্তু পূর্বলেখতে আছে। দ্বিতীয় উদ্ধৃতিতে আত্মঘাতী হবার প্রসঙ্গ কীভাবে এলো সেটাও আমার কাছে পরিস্কার না। এগুলো কবিতার আলোচনায় আরোপ করা বিষয় বলে মনে হয়েছে।

  • কবিতার অনুবাদ বা ভাবানুবাদ যাই বলি সেটা ভালো হয়েছে। পোস্ট লেখকের পরিচয় জানলে ভালো লাগতো।

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ভাই, ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যের জন্যে।

মূল কবিতাটা পড়া ছিলো। অনুবাদটাও পড়লাম। ভাবছি কবিতা অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদক কতটা স্বাধীনতা পেতে পারেন। মূল কবিতা ও অনুবাদের অনেক পার্থক্য দেখে আশংকা হচ্ছে এটা কি আসলেই অনুবাদ নাকি মূল কবিতার ওপর ভিত্তি করে লেখা আরো একটি কবিতা।

'অনুবাদ' কিম্বা 'ভাবানুবাদ' কথাটির কিন্তু উল্লেখ নেই কোথাও। ইচ্ছাকৃত বটে, যাতে 'অনুবাদকের স্বাধীনতা ও তার পরিধি' বিষয়ক বৈঠকী বিতর্কটিকে ছাপিয়ে পাঠকের কাছে কবিতার রস আস্বাদনই মূখ্য কর্ম হয়ে ওঠে। সিদ্ধান্তে বিচক্ষণতার কমতি থাকলে করজোড়ে মার্জনা চাইছি।
আরো একটা বিষয় পরিস্কার না। পূর্বলেখটি কী আপনার লেখা নাকি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের লেখা?

পূর্বলেখটি খোন্দকার আশরাফ হোসেনের লেখা। পূর্বলেখ শেষে বন্ধনীতে তাঁর নামটি উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পূর্বলেখসহ রূপান্তরিত লেখাটি দেখেছেন।
বনের মালিকের জানা বা না জানার বিষয়টি কবিতায় নেই। কিন্তু পূর্বলেখতে আছে। দ্বিতীয় উদ্ধৃতিতে আত্মঘাতী হবার প্রসঙ্গ কীভাবে এলো সেটাও আমার কাছে পরিস্কার না। এগুলো কবিতার আলোচনায় আরোপ করা বিষয় বলে মনে হয়েছে।

আপনার ও খোন্দকার আশরাফ হোসেনের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি দুজনের সাথেই ভিন্নমত পোষণ করি। কালোত্তীর্ণ কবিতার মহত্ত্ব তো এখানেই। বার বার পড়ার পরেও এর আবেদন ফুরোবে না কখনো। প্রতিবারই তৈরি হবে নোতুন অর্থ, নোতুন অভিজ্ঞান। নোতুন করে ভাবাবে বার বার, প্রতিবারই পাঠক বলে উঠবে, "ইউরেকা ! এমনটি তো আগে মনে হয়নি কখনো !"
কবিতার অনুবাদ বা ভাবানুবাদ যাই বলি সেটা ভালো হয়েছে। পোস্ট লেখকের পরিচয় জানলে ভালো লাগতো।

ভালো হয়েছে জেনে খুশী হলাম। তবে বোধকরি, ভালো হবার চাইতেও বেশী জরুরী আনন্দ দিতে পারার বিষয়টি। আসুন না সবাই মিলে আনন্দধারায় পুত-স্নান করে জীবনপাত্র সুধায় পূর্ণ করে তুলি! কই, পরিচয় গোপন করিনি তো ভাই, বৃক্ষের পরিচয় তো ফলে!

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতার পূর্বকথা, কবিতা, কবিতার ভাবানুবাদ তৎসঙ্গে হাসিবের মন্তব্যের জবাবে আপনার ব্যাখ্যা সবই নান্দনিকতার অনুপম বোধে কাতর। বড়ই সুন্দর।

অনন্ত আত্মা

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

আমরা সবাই তো মনোরম বিন্যাসে বোধের মজ্জায় অবিস্মরণীয় কিছু শব্দ ফোটাতে চাই। সেগুলো স্মরণীয় নাইবা হলো; জলের অক্ষরে যেন লেখা রয়। আপনার প্রেরণাটুকুই আমার শ্রেষ্ঠ পাথেয় হয়ে রইল।

অতিথি লেখক এর ছবি

"অনেকটা পথ যেতে হবে মোরে শয্যা নেবার আগে
অনেকটা পথ যেতে হবে জানি ঘুমিয়ে পড়ার আগে।"

কবিতাটি আগে পড়া ছিলনা।কবিতা ও তার অনুবাদ দুটোই চমৎকার।
এমন নির্ভুল ছন্দ এ যুগে কম দেখা যায়।
লেখক কে সাধুবাদ জানাই।

আকাশমীনা।

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

আপনার অকুণ্ঠ প্রশংসার জবাব দেবার ভাষা জানা নেই, তারচেয়ে আসুন সবাই মিলে একটি কবিতা পড়ি!

"If I could catch a rainbow, I would do it, just for you,
And, share with you, its beauty, on the days you're feeling blue.

If I could, I would build a mountain, you could call your very own.
A place to find serenity, a place just to be alone.

If I could, I would take your troubles, and toss them into the sea.
But, all these things, I'm finding, are impossible for me.

I cannot build a mountain, or catch a rainbow fair;
but, let me be, what I know best,
A Friend, who's always there."

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

রবার্ট ফ্রস্টকে নিয়ে উইকিতে কোনো বাংলা এন্ট্রি নেই। কেউ পারলে করে দিয়েন।

শিরোনাম এবং ক্যাটেগরিতে বানান ফ্রষ্ট। লেখার ভেতরে ফ্রস্ট। এটা ঠিক করে দিয়েন।

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

শিরোনামটি এই অধমের লেখা। পূর্বলেখটি শ্রদ্ধাস্পদ খোন্দকার আশরাফ হোসেনের। তাই এই ভিন্নতা স্বকীয়তাকেই লালন করে। বর্ণফেরের চিহ্ন রেখেই না হয় হলো শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির চাষাবাদ।

সংসপ্তক এর ছবি

আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতা গুলোর একটি। অনুবাদের চেষ্টা প্রশংসনীয় কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই পড়লাম না, আসল কবিতাটির স্থান আমার জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই।
.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

আপনার 'ইচ্ছে'কে হৃষ্টচিত্তে অভিবাদন জানাই।

রণদীপম বসু এর ছবি

And miles to go before I sleep.

ফ্রস্টের এই বাক্যটি সাহিত্যজগতে সম্ভবত মিথের পর্যায়ে উন্নীত একটা পঙক্তির মর্যাদা পেয়ে গেছে। কবিতাটা আগেও পড়েছি আমি। ইংরেজি খুব একটা আয়ত্ত করতে পারি নি। তবু উপরোক্ত পঙক্তিটা পাঠের সাথে সাথে যে এক অনির্বচনীয় উপলব্ধি মনকে আচ্ছন্ন করে দেয়, অাপনার অনুবাদের শেষ পঙক্তিগুলোতে সেই আচ্ছন্নতা পেতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। হতে পারে আমার সীমাবদ্ধতা। তবু আমার একান্ত নিজস্ব মতামত হচ্ছে কবিতার ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হলে ছন্দ বা অন্ত্যমিল বর্জন করা অধিকতর ভালো যদি গদ্য ঢং ও ছন্দে উপলব্ধিকে আরো ভালোভাবে চারিয়ে দেয়া যায়।

আমার ভিন্নমতে আপনার হতোদ্যম হওয়ার নিশ্চয়ই কোন কারণ নেই। সৃষ্টির ক্ষেত্রে লেখক অবশ্যই সার্বভৌম। তেমনি রসগ্রহণে সাফল্য বা ব্যর্থতার উপলব্ধি প্রকাশে পাঠক হিসেবে আমিও নাহয় একটু স্বাধীনতা প্রয়োগ করলাম। হা হা হা ! সৃজনকর্ম হিসেবে আপনি যেটুকু করেছেন, আমার দ্বারা হয়তো এটুকুও করা সম্ভব ছিলো না। আন্তরিকভাবে আপনাকে অভিনন্দিত করছি। ভালো থাকবেন। এরকম প্রচেষ্টা চলতে থাকুক। ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ইংরেজি খুব একটা আয়ত্ত করতে পারি নি। তবু উপরোক্ত পঙক্তিটা পাঠের সাথে সাথে যে এক অনির্বচনীয় উপলব্ধি মনকে আচ্ছন্ন করে দেয়, আপনার অনুবাদের শেষ পঙক্তিগুলোতে সেই আচ্ছন্নতা পেতে আমি ব্যর্থ হয়েছি।
ব্যর্থতার সবটুকু দায় আমার। ফ্রষ্টের বিশালতাকে প্রতিবিম্বিত করার মতো স্বচ্ছ খাঁটি বেলজিয়ান আয়না আমার নেই, অনেক পোক্ত গুণীর কাছেও বোধকরি পাওয়া যাবে না। তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি,কবিকেই তাঁর কবিতার নাব্যতার দায় নিতে হয়, পাঠককে নয়।
তবু আমার একান্ত নিজস্ব মতামত হচ্ছে কবিতার ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হলে ছন্দ বা অন্ত্যমিল বর্জন করা অধিকতর ভালো যদি গদ্য ঢং ও ছন্দে উপলব্ধিকে আরো ভালোভাবে চারিয়ে দেয়া যায়।
কিঞ্চিত একমত আমি, সচলায়তনে প্রকাশিত আমার "মান ভাঙানোর ছড়া"তে তার চিহ্ন রেখেছি। তবে কতটুকু ভাব ধারণ করলে কবিতা ভারাক্রান্ত স্হবির হয়ে পড়বে, গদ্যের ষ্টীম এঞ্জিন লাগিয়েও স্বচ্ছন্দে গগণবিহারী হতে পারবে না, সেটিরও বুঝি একটি বিবেচনা থাকা প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ থেকে কিছু উদ্ধৃতি নেয়া যাক, বোঝা যাবে, মোদ্দাকথা হল, সবগুলো উপাদানের মধ্যে একটি অপরূপ ভারসাম্যতা ফোটানোর মোহন খেলায় কবিকে সরু দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হয় প্রতিনিয়ত।

"ভাবকে কথাকে ছন্দের মধ্যে জাগিয়ে তুললেই তা কবিতা হয়। সেই ছন্দ থেকে ছাড়িয়ে নিলেই সে হয় সংবাদ; সেই সংবাদে প্রাণ নেই, নিত্যতা নেই।"

"অর্থের প্রবলতা বেড়ে উঠলে কবিতার সম্মোহন যায় কমে।"

"সাহিত্যের মধ্যে কারুকাজ, কাব্যে যার প্রাধান্য, তার একটা দিক হচ্ছে শব্দের বাছাই-সাজাই করা।"

"যেমন আছে শব্দের বাছাই তেমনি আছে ভাবপ্রকাশের বাছাইয়ের কাজ।"

"সর্বজনীন ব্যবহারে ব্যক্তিগত খেয়ালের যথেচ্ছাচার নিন্দনীয়।"

"প্রাকৃত জগৎ সকল কালের সকল স্থানের সকল তথ্য নিয়ে, সাহিত্যজগৎ সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষের কল্পনা-প্রবণ মন নিয়ে।"

আমার ভিন্নমতে আপনার হতোদ্যম হওয়ার নিশ্চয়ই কোন কারণ নেই।
ব্যর্থতা নয়, বোধকরি ব্যর্থতা ঢেকে রাখার অপচেষ্টা অপরাধ। জীবনানন্দকে উদ্ধৃত করার ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন,
"তাঁর প্রতিভার কাছে কবিকে বিশ্বস্ত থাকতে হবে; হয়তো কোন একদিন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতার সাথে তাঁর কবিতাবৃত্ত প্রয়োজন হবে সমস্ত চরাচরের সমস্ত জীবের হৃদয়ে মৃত্যুহীন স্বর্ণগর্ভ ফসলের ক্ষেতে বুননের জন্য"।
সৃজনকর্ম হিসেবে আপনি যেটুকু করেছেন, আমার দ্বারা হয়তো এটুকুও করা সম্ভব ছিলো না। আন্তরিকভাবে আপনাকে অভিনন্দিত করছি।
আফ্রিকার নির্জনতম কোণে বসেও আপনার আন্তরিক ভালোবাসার বেহেশতী সুঘ্রাণ পাচ্ছি! কাঁপন লেগেছে আমার মুগ্ধ মন পবনের অণুতে অণুতে। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

রণদীপম বসু এর ছবি

রবার্ট ফ্রস্ট নিজেই বলেছেন, অনুবাদে যেটুকু হারিয়ে যায় সেটুকুই কবিতা।

সে যাক্, রবীন্দ্রনাথের অনেক উদ্ধৃতি দিয়েছেন। আমি কিন্তু কবিতা হয়েছে কি হয়নি সে ব্যাপারে বলি নি। বলেছিলাম কবিতার রস ও ভাব উপলব্ধিতে আমার ব্যর্থতার কথা। সেটা অবশ্যই আমার সীমাবদ্ধতা, হয়তো নিজস্বতাও। যেমন রবীন্দ্রনাথের সমৃদ্ধ সব কবিতাগুলোর মধ্যে আমি কিন্তু তাঁর শেষ বয়সে লেখা গদ্যছন্দের 'বাঁশি' কিংবা 'হঠাৎ দেখা' কবিতার মধ্যেই বেশি রস পাই।

আর ভাবি, এই কবিতাগুলো যদি কবিগুরু ছন্দ-তাল-লয়-অন্ত্যমিল সাজিয়ে লিখতেন, তবে এখনকার মতো আচ্ছন্ন হতে পারতাম ?

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ভাই,
অনভিপ্রেত কূটতর্কে জড়িয়ে পড়ায় আমার নিজেকে খুব ছোট বোধ হচ্ছে। দেখুন তো, নিজেই বুলি কপচালাম বৈঠকী আলোচনা থেকে বেরিয়ে এসে রস আস্বাদনে বুঁদ হবার, আর নিজেই "সংসার বিরাগী হতে গিয়ে সংসারী হয়ে পড়েছি"। আপনার মহানুভবতাটুকু দিয়ে মার্জনা করবেন আমাকে। "যে আমাকে দেখিবারে পায়, অনন্ত ক্ষমায়, ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি।" শুভপ্রীতি !

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

যেমন রবীন্দ্রনাথের সমৃদ্ধ সব কবিতাগুলোর মধ্যে আমি কিন্তু তাঁর শেষ বয়সে লেখা গদ্যছন্দের 'বাঁশি' কিংবা 'হঠাৎ দেখা' কবিতার মধ্যেই বেশি রস পাই।

রণদীপম দা, রবীন্দ্রনাথের 'বাঁশি' সম্পর্কে আমার হাল অভিমত হচ্ছে, এটি গদ্যছন্দে লেখা কবিতা নয় বরং আদ্যোপান্ত ছন্দবদ্ধ কবিতা। এটি লেখা হয়েছে মুক্তক অক্ষরবৃত্তে। মিলিয়ে দেখবেন কি ব্যাপারখানা?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

And miles to go before I sleep,
And miles to go before I sleep.

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

আপনার চিরযুবা আকাংক্ষা প্রতিনিয়ত করুণাময় মহান আল্লাহের কৃপাবর্ষনে সদা সিক্ত-সজীব হয়ে থাক এই আমার কামনা।

সুরঞ্জনা এর ছবি

হুম।
আগের অনুবাদটাও পড়েছি, তখন আর মন্তব্য করিনি।

কবিতা খুব সুন্দর জিনিস। পড়ি যখন, তখন সেটা প্রত্যেকের কাছেই নিজস্ব কিছু হয়ে যায়।
অনুবাদ করা শক্ত কাজ। রবার্ট ফ্রস্টের বাণী উদ্ধৃত করি-

Poetry is what gets lost in translation.

আপনার কবিতা সুন্দর, তবে সেটা আপনি আপনার কবিতা বলেই যদি পোস্ট দিন, তো খুব ভাল হয়। বড়জোর শেষে বলে দিতে পারেন, ফ্রস্টের কোনো কবিতা থেকে ইন্সপায়ারড। কিন্তু এটা আপনারই কবিতা।

অনুবাদ বলে দিলে, জিনিসটা আমার কাছে যা দাড়াচ্ছে, তা ফ্রস্টের লেখা নয়।
তবে এটা তো আমার উপলব্ধি, লেখক হিসেবে গ্রহণ করা না করা অবশ্যই আপনার ইচ্ছার ব্যাপার।
আশা করি মন্তব্যে মন খারাপ করবেন না।

ভালো থাকুন।
............................................................................................
স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা।।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

বাহ, চমৎকার গোছানো একটি মন্তব্য কানে সুধা ঢেলে দিলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার খুব পছন্দের একটি কবিতা, কবিতাটা পড়ার পর কেমন যেন একটা ধীর প্রশান্তিতে ছেয়ে আসে মন।
অনুবাদটা আসলেই মুল কবিতার ভাবার্থ ঠেকে বেশ দুরে। সত্যি কঠা বলতে কি, অনুবাদটা ভাল লাগেনি।

সাজিদ.

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

প্রকৃত প্রস্তাবেই এমন খাপখোলা একটি মন্তব্য পরম বন্ধুর মতো প্রতিমুহূর্তেই একজন লেখককে আরো দায়িত্বশীল হতে সহায়তা করে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি ভবিষ্যতেও আপনাকে একই ভুমিকায় পাশে পাব।

তাসনীম এর ছবি

সুন্দর, তবে আগেরটার মত এটাও একই থিমে নতুন কবিতা মনে হয়েছে। নিঃসন্দেহে ভালো কবিতা।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ভাই,
আপনার সাহসে আবেশিত হয়ে এই লেখাটি পোষ্ট করেছিলাম। পর্ব ও মাত্রাগুলো একটু খেয়াল করুন, "তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়" কিম্বা "ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে" সাথে মিল রাখার চেষ্টা করেছি। পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের প্রতি একটু শ্রদ্ধা নিবেদন। প্রথম জীবনের কবিতামালায় ফ্রষ্টের তো পল্লীকবি রূপটিই ফুটে উঠেছে।

দিগন্ত মুদি এর ছবি

আমি একসময়ে একটা অনুবাদের চেষ্টা করেছিলাম, যদিও প্রচণ্ড অক্ষম তা:

হয়তোবা জানি আমি সুবিশাল গাছগুলো কার
তার যত ভিটেমাটি আছে এই গ্রামের ভেতরে,
যদিও সে আপাতত আমাকে দেখবে নাকো আর
থেমেছি যে তার হিমাবৃত বন দেখবার তরে।

আমার ঘোড়াটা একে নিশ্চয়ই ভেবেছে বিস্ময়
আশেপাশে আস্তাবল না থাকার জন্যই থেমেছি।
বৃক্ষ আর বরফহৃদের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়
মৌসুমের সবচেয়ে আঁধারি সন্ধ্যায় যেন আছি।

টাট্টু নড়াচ্ছে গলার ঘন্টাটা-- অবাক ঝুনঝুনি
ইচ্ছা তার, জানবে সে, চলনে হলো কী ভুল কিছু?
চারিদিক শব্দহীন, শুধু আছে দ্রুততার ধ্বনি।
যা ছুটছে সহজ বাতাস আর তুষারচূর্ণের পিছু।

মানি, বৃক্ষের সারি অসামান্য,অন্ধকার ও ঘন।
কিন্তু আমাকেও কথা রক্ষা করতেই হবে জেনো।
ঘুমোবার আগে পেরুতেই হবে এ অরণ্যপথ
ঘুমোবার আগে পেরুতেই হবে এ অরণ্যপথ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমার তো মনে হয় ফ্রষ্টের কবিতাটির টোনের সাথে আপনার অনুবাদের টোনটি বরং বেশী মিলে গেছে। আপনার মন্তব্য নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। দেরীতে জবাব দেবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

উজানগাঁ এর ছবি

আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা। এই কবিতার একটা চমৎকার অনুবাদ আছে শামসুর রহমানের করা।

শীত সন্ধ্যায় বনের কিনারে

এই বন কার জানি বলে মনে হয়।
বুঝি বাড়ি তার ঐ গাঁয়ে নিশ্চয়;
জানবে না সে তা দেখছি দাঁড়িয়ে আমি
বন তার হলো এখন তুষারময়।

ঘোরাটা ভাবছে ব্যাপার চমৎকার।
খামার ছাড়াই কী যে লাভ থামাবার,
বন আর এই জমাট হ্রদের মাঝে
আজকে সন্ধ্যা সবচে' অন্ধকার।

ভুল হয়ে গেছে ভেবে সে শব্দ করে
নাড়ায় ঘুন্টি, এবং বনের 'পরে
শুধু আরেকটি শব্দ যাচ্ছে শোনা :
হালকা বাতাসে বরফের কুচি ঝরে।

কাজল গভীর এ-বন মধুর লাগে,
কিন্তু আমার ঢের কাজ বাকি আছে।
যেতে হবে দূরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে,
যেতে হবে দূরে ঘুমিয়ে পড়ার আগে।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

এই তো কয়দিন আগে। আমার অনুবাদটি পড়ে মাসুদুজ্জামান স্যার মন্তব্য করলেন কবি শামসুর রাহমানও অনুবাদ করেছেন কবিতাটির। আমিও খুঁজছিলাম অনুবাদটি। আর আজকেই এখানে পেয়ে গেলাম। ধন্যবাদ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

১৯৮৬ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ঢাকায় এসে বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের ১৫ নম্বর রূমে উঠেছিলাম মামার কাছে। সেখান থেকে কলাবাগানের ফ্রেণ্ডস কোচিং সেন্টারে কোচিং করি আর অবসরে নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের দোকানে বই ঘাটি। এভাবেই একদিন পেয়ে গিয়েছিলাম শামসুর রাহমান অনূদিত ফ্রস্টকে।

সেখানেই এই অনুবাদটি পড়েছিলাম। মাত্রাবৃত্তের ৬+৬+২ চালে ও ক-ক-খ-ক অন্ত্যমিলে (শেষ স্তবক ছাড়া, সেখানে ক-খ-ক-ক অন্ত্যমিল) নিঃসন্দেহে এটি একটি সফল অনুবাদ। মূল কবিতায়ও প্রথম তিনটি স্তবকে ক-ক-খ-ক অন্ত্যমিল। শুধু তাই নয় শেষ স্তবকে ক-ক-ক-ক অন্ত্যমিল। আরো লক্ষ্য করুন, প্রথম স্তবকের তৃতীয় চরণের সাথে দ্বিতীয় স্তবকের তৃতীয় চরণের ও তৃতীয় স্তবকের তৃতীয় চরণের সাথে চতুর্থ স্তবকের তৃতীয় চরণের দূরবর্তী অন্ত্যমিল। ফ্রস্ট এখানে এগিয়ে।

নিজেকে যখন প্রশ্ন করি, শামসুর রাহমানের অনুবাদ পড়ার পরও কেন এই কবিতাটি অনুবাদে আগ্রহী হলাম। উত্তর পাই দুটি। এক, আনন্দসন্ধান। এই অনুবাদ কর্ম আমাকে প্রচুর আনন্দ দিয়েছিল। শামসুর রাহমানের অনুবাদ পড়ে মনে হয়েছিল মূল কবিতাটি অনুবাদে আরো গীতলতা চাইছে। তাই একটি পর্ব বাড়িয়ে মাত্রাবৃত্তের ৬+৬+৬+২ চাল বেছে নিয়েছি আর অন্ত্যমিলগুলোকে মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা নিয়ে আরো নিকটবর্তী করেছি।

আমার অনুবাদ কেমন হয়েছে সেটি জানালেন না কিন্তু!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

হাসি

এই কবিতাটার একটা অনুবাদ করার একটা ব্যর্থ চেষ্টা আমিও করেছিলাম। আর এটা ছিল আমার প্রথম অনুবাদ।

গহীন অরণ্যের আঁধারে
আছে কিছু শপথ,
পেরুতে হবে দীর্ঘ পথ,
ঘুমিয়ে পড়ার আগেই।

হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাহ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

দিগন্ত মুদি এর ছবি

আগের খসড়াটা কিঞ্চিৎ সংস্কার করেছিলাম পরে, সেটাও একটু উপস্থাপন করি হাসি

হয়তোবা জানি আমি সুবিশাল গাছগুলো কার
তার ভিটেমাটি আছে অদূরেই--গ্রামের ভেতরে,
যদিও সে আপাতত আমাকে দেখবে নাকো আর
থেমেছি যে তার হিমাবৃত বন দেখবার তরে।

আমার ঘোড়া তো একে নিশ্চয়ই ভেবেছে বিস্ময়
কাছে আস্তাবল নেই--তবু কেন বিরতি এখানে!
বৃক্ষ আর বরফহৃদের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়
মৌসুমের সবচে আঁধারি সন্ধ্যা নেমেছে উদ্যানে।

টাট্টু নড়াচ্ছে গলার ঘন্টা-- অসামান্য ঝুনঝুনি
যেন সে জানতে চায়, চলনে হলো কী ভুল কিছু?
চারিদিক শব্দহীন, শুধু আছে দ্রুততার ধ্বনি।
যা ছুটছে সহজ বাতাস ও তুষারচূর্ণদের পিছু।

মানি, বৃক্ষসারি প্রেমময়,অন্ধকার আর ঘন।
কিন্তু আমাকেও কথা রক্ষা করতে হবেই জেনো।
ঘুমোবার আগে পার হতে হবে এ অরণ্যপথ
ঘুমোবার আগে পার হতে হবে এ অরণ্যপথ।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মন্তব্যে কেন? স্বতন্ত্র পোষ্ট হিসেবেই দিন না। এ কবিতার আবেদন তো ফুরোবার নয়। ছন্দবিন্যাস একটু পরখ করে নিলে এটি একটি দারুন পোষ্ট হবে বলেই মনে হয়। কারণ টোনটি বেশ লাগে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কাজি মামুন এর ছবি

হিজলের সারি ডুবালো পা দুটি শীতল দীঘির জলে
কাজল-স্নিগ্ধ সন্ধ্যা সেখানে গানে গানে কথা বলে।

যদি 'ঐ বনভূমি মৃত্যুর হিমশীতল হাতছানি' হয়ে থাকে, তাহলে ''Between the woods & frozen lake/The darkest evening of the year' এর অনুবাদ উপরের লাইনদুটো কি করে হয়? অনুবাদক তো মনে হচ্ছে, ফ্রস্টের এই অতি বিখ্যাত কবিতাটিকে নিছক 'প্রকৃতি বর্ণনার কবিতা হিসাবে'ই দেখতে আগ্রহী!

ঝিরি ঝিরি বায় মনটা নাচায় পাতার পালক ঝরে
থির হয়ে আছে সন্ধ্যার ছায়া আবছা অন্ধকারে।

এখানেও অনুবাদকের একই দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়। যখন 'sound of easy wind and downy flake' বনভূমির বনভূমির অপার নৈঃশব্দ্য ও রহস্যময়তার ইঙ্গিত-বাহি, তখন অনুবাদকের মন নাচছে ঝিরি ঝিরি বায়!
আমি একজন সাধারণ পাঠক মাত্র। আশা করি, অনুবাদক বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করবেন।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার যুক্তিকে তো কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারছি না। কবিতাটি নিয়ে আবার বসবো। মাত্র ক'টি শব্দকে পাল্টিয়ে দিতে হবে হয়ত। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পাঠকের অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষনকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে কবিতাটি পরিমার্জিত হলো।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।