পিজা হাটিয়ান জনসমাজঃ একটু অপ্রাসঙ্গিক ব্লগর ব্লগর

আশফাক আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন আশফাক আহমেদ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৯/২০১০ - ৮:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
ছোটবেলা থেকেই আমার ভয়াবহ রকমের ক্যামেরাভীতি। মনে আছে, বড় ভাইয়া যখন কাজিনদের গ্রুপ ফটো তুলতেন (তখন ক্যামেরা জিনিসটা এতো সহজলভ্য ছিলো না), আমার হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপতো। দেখে মনে হত, কেউ যেন আমার ম্‌ত্যুদন্ডাদেশ ঘোষণা করেছে। এক্ষুণি আমাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলাতে নিয়ে যাবে। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। যাই হোক, বড় হয়েও আমার ক্যামেরাভীতি পুরোপুরি যায় নি। বন্ধুরা যেখানে ক্যামেরার সামনে দিব্যি মুখ বেঁকিয়ে, দাঁত কেলিয়ে একটার পর একটা পোজ দিতে থাকে, সেখানে আশেপাশে একশ' গজের মধ্যে কোথাও ক্যামেরা অন হলেই আমার মুখচোখ শক্ত হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক মুখভঙ্গি উধাও হয়ে যায়। ঠিক যে কারনে আমার সিঙ্গেল পিকচার নেই বললেই চলে। ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করে আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড, মুকুল। কী কারণে জানি আমার একটা সুন্দর, স্মার্ট(!!!) সিঙ্গেল পিকচার লাগবে ওর। আমি বললাম, দোস্তো, এইসব গিয়াঞ্জামে আমি নাই। তুমি নিজেই একটা খুঁজে নাও। তো সে পূর্ণ উদ্যমে আমার সিঙ্গেল পিকচার খোঁজা শুরু করলো। এবং মোটামুটি আশর্য হয়ে আবিষ্কার করলো, ফেসবুকে এই গরিবের কোন সিঙ্গেল পিকচার নাই। যা আছে সব একগাদা বন্ধু-বান্ধবের সাথে তোলা। তাও যদি দীনহীনের বদনখানা ঠিকমত দেখা যাইতো কোথাও। ধরেন, কারো জন্মদিন বা বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রুপ ফটুক তোলা হচ্ছে, দেখা যাবে সবার পিছে সবহারাদের মাঝে যে ছেলেটা ভয়ার্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছে, সেটি এই অধম। আপনি যে ক্রপ করে পরে সাইজ করবেন, সে অবস্থাও নাই।

২.
ইদানীং আমার মধ্যে নতুন এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় এর নাম দেয়া যায় 'পিজা হাট সিন্ড্রোম'। ব্যাপারটা একটু খোলাসা করি। পিজা হাটে যারা ইফতার করতে যান, তাদের একটা অংশকে নিয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে। আগেই বলে নিই, আমার পর্যবেক্ষণে ভুল থাকতে পারে।

আমি খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ করেছি, আমার যেসব বন্ধুবর গতবার পিজা হাটে ইফতার করেছেন এবং পরে কানে ধরেছেন, না বাবা, পিজা হাটে আর না। পিজা হাটে ইফতার মানে এক ধরণের নগ্ন বিলাস। তাদের মধ্যে অনেকেই এবারও পিজা হাটে ইফতার করে এসেছেন এবং বাসায় এসে খোমাখাতা খুলে "আমরা রাশি রাশি খাওয়া ফেলে দেই আর গরিব-দুঃখীরা দুবেলা দুমুঠো খেতে পায় না" এই বলে বুক চাপড়ে কান্নাকাটি শুরু করেছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, নেক্সট ইয়ারেও একই ঘটনার পুনরাব্‌ত্তি ঘটবে। এবং পরের ইয়ারেও। পিজা হাটিয়ানদের প্রতি আমার কোন ব্যাক্তিগত ক্ষোভ নেই। তবু আমার মধ্যবিত্ত মানসিকতায় কেন জানি মনে হয়, হাজার টাকা খরচ করে ইফতার করাটার মধ্যে কেমন জানি একটা অশ্লীলতা আছে। সেই কথা আবার ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানানো এবং কিছুক্ষণ পরেই গরিবের জন্য মরাকান্না শুরু করে দেয়া---সব মিলিয়ে প্রসেসটাকে খুব বিচ্ছিরি মনে হয় আমার কাছে। গাঁজাখোরদের সাথে এই বিশেষ শ্রেণীর পিজা হাটিয়ানদের একটা মিল আছে। গাঁজাখোরেরা যেমন নেশা কেটে গেলে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে, তওবা করে জীবনে ঐ জিনিস আর ছোঁবে না এবং পরদিন রাতে আবার গাঁজার সন্ধানে ছোটাছুটি শুরু করে, ইনাদের আচার-আচরণও অনেকটা এমনই।

৩.
ছোট মুখে আরেকটা বড় কথা বলি। আমরা ম্যাংগো পিপল তো কথায় কথায় আমাদের রাষ্ট্রনায়কদের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে ছাড়ি। তাদের বিলাসিতার উদাহরণ দিয়ে বলি, তিরিশ দিনে তিরিশটা ইফতার পার্টি দেয়ার কোন মানে আছে? এই অর্থ সাশ্রয় করে দেশের অনেক বড় বড় কাজ করা যেত। স্কুল করা যায়, হাসপাতাল করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এবার একটু নিজেদের দিকে তাকাই না কেন? আমরা নিজেরা কি বিলাসিতার কোন সুযোগ পেলে ছাড়ি? আমরা আমাদের স্কুল বন্ধুদের নিয়ে একদিন ইফতার করি, একদিন কলেজ বন্ধু্দের নিয়ে, একদিন ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের নিয়ে, আর গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো কথাই নেই। উনাদের অবস্থানটা একটু বিবেচনা করেন। সিনেস্টার, টক-শো স্টার, বিজনেস স্টার---দেশের সব স্টার ই তো উনাদের বন্ধুমানুষ। সব শ্রেণীর বন্ধুকে খুশি করতে গেলে তো মাশে তিরিশটার কম ইফতার পার্টিতে পোষায় না। একটু ভাবুন তো, উনারা উনাদের অবস্থান থেকে বিলাসিতা করছেন। আর আমরা করছি আমাদের অবস্থান থেকে। পার্থক্যটা বিলাসিতার কোয়ালিটিতে নয়, কোয়ান্টিটিতে। তাই অন্যদের শরীরের ঘা নিয়ে বিদ্রূপ করার আগে নিজেদের ঘা টা সারিয়ে নিই না কেন?

---আশফাক আহমেদ


মন্তব্য

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

ভাবনায় সংহতি।
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

দ্রোহী এর ছবি

ভাবনায় সংহতি।


কি মাঝি, ডরাইলা?

নাশতারান এর ছবি

সহমত।
গেলবার গিয়েছিলাম পিজা হাটে। ওটাই প্রথম। সেবার দেখেছি। রোজার মাসে পিজা হাট আনলিমিটেড পিজা অফার দেয় ইফতারির জন্য। সেখানে গেলে আমাদের বর্তমান ভোগবাদী লোলুপতা নগ্নভাবে চোখে পড়ে। আমি ৫০০+ টাকা দেবো এবং যেকোনো শর্তে সেটা উসুল করতে চাইব। আমার ক্ষিধা থাক বা না থাক, একের পর এক পিজার স্লাইস নিতে থাকব। আরো বেশি নেওয়ার জন্য হাতে ধরা স্লাইসটা পুরোপুরি খাবোও না। এবং খাওয়া শেষে সেই ধর্ষিত পিজাগুলোর নগ্ন স্তূপের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবো। আমরা লুটেপুটে খেতে শিখছি। শুধু অমুকের মতো করে কেন লুটতে পারছি না সেই আফসোসে নীতির ধুঁয়ো তুলে বুক চাপড়ে মরছি।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আপনার এই মন্তব্য পড়তে গিয়ে আবার সেই প্রিয় ডায়ালগ মনে পড়ছে,

আমাদের চুরি পরা উচিত। (অফটপিক)

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হরফ এর ছবি

আবারও আপনার "চুরি"পড়ার কথা লিখতেই হল না? আচ্ছা এই চুরি বা চুড়ি-টুড়ি না পরে "লজ্জায় মাথা কাটা গেল" বা "ডুবে মরা উচিৎ" এসব লিখলে কেমন হয়? সবাই তো চুরি-র সাথে মাসকাওয়াথ বর্ণিত মেট্ওসেক্সুয়ালদের কথা এখনো জানেন না, তাই ভাবছিলাম আর কি, আপনিও একটু ভাবুন্না মাসকাওয়াথ।

"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"

ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে

নাশতারান এর ছবি

চুড়ি পরা উপমাটি আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়। কারণ মেয়েরাও চুড়ি পরে এবং চুড়ি পরেই তারা অনেক ফলপ্রসূ কাজও করে। আপনার বর্ণনামানিফ মেট্রোসেক্সুয়াল পুরুষ যারা, তারা নিজের হাউশ মিটিয়ে সেজেগুজেও কাজের কাজ কিছু করবেন বলে আশা রাখি। মেধা, চেষ্টা আর সদিচ্ছা থাকলে চুড়ি পরে, কান ফুঁড়িয়ে, ট্যাটু করেও কাজ করা যায়। সমস্যা হলো আমাদের দেশে একটা ফাঁপা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যারা মোড়ক দেখে আকৃষ্ট হয়। কিন্তু মোড়কের পেছনের শ্রমটুকু নিয়ে ভাবে না, অথবা এক অর্থে ভাবার সুযোগ পায় না। এদেরকে তৈরিই করা হচ্ছে বাজারে উপযুক্ত ভোক্তা হওয়ার জন্য। এদেরকে দোষ না দিয়ে সমস্যার মূলে যারা জল ঢালছেন তাদের নিয়ে ভাবলে কাজ হবে বরং।

অফটপিক: আপনার সিগনেচার লাইনের আগে <+hr+> [+ দুটো বাদ দিয়ে] জুড়ে দিন। দেখতে ভালো লাগবে, অহেতুক বিভ্রান্তিও এড়ানো যাবে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

<+hr+> লাগায় দেখলাম কী ঘটে ..


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

ব্যাপারটা আসলেই চিন্তা করার মতো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ক্ষিধা থাক বা না থাক, একের পর এক পিজার স্লাইস নিতে থাকব। আরো বেশি নেওয়ার জন্য হাতে ধরা স্লাইসটা পুরোপুরি খাবোও না। এবং খাওয়া শেষে সেই ধর্ষিত পিজাগুলোর নগ্ন স্তূপের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করবো।

চমৎকার পর্যবেক্ষণ। সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

চলুক

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল আপনার পর্যবেক্ষন। প্রতিবার ভাবি এবার যাবো পিজ্জা হাট এর ইফতার এ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন থেকে সাড়া পাইনা। মা এর বানানো ইফতারেই সুখ হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এক জেনারেশনের মেকী এলিটদের অনেক সমস্যা, অনেক হীনমন্যতা। এসব ঢাকতেই এরা পিৎজা হাট, কেএফসি, ম্যাককে স্ট্যাটাস সিম্বল বানিয়ে অথচ মুল জায়গায় এগুলো হচ্ছে পাড়ার চায়ের দোকান, গরীব মানুষের নিত্ত আয়োজন।
মন্দা দিনের ছোবলে ম্যাকডোনাল্ডসের বিক্রীবাট্টা বেড়ে গেছে কারন সাধারন একটা রেশটুরেন্টে ও একবেলার খাবার যে কোন ভাবেই ১৫-২০ পাউন্ড, ম্যাকের ৯৯ পয়সার বার্গারে পেটভরানো যায়।
পয়সা বাঁচানোর জন্য মানুষ বাচ্চার জন্মদিন করে ম্যাকের চিলড্রেন্স কর্ণারে, তিনপাউন্ডের হ্যাপি মিল প্যাকেজে।

গতবার দেশে একজায়গায় দাওয়াত খেতে গিয়ে পেলাম সার্ডিন। কৌতুহল বশতঃ জিজ্ঞেস করে জানলাম নামি দোকান থেকে আনানো হয়েছে। দাম ৫৫০ টাকা!
টিনের সার্ডিন হচ্ছে আমাদের মতো তস্য দরিদ্রের সবচেয়ে দুর্যোগ মুহুর্তের ভরসা। দাম ৩৫-৪৫ পেন্স! বাংলাদেশে যেটা ৫৫০ টাকা।

নব্য এলিটরা এটাকে ও স্ট্যাটাস বানিয়েছে। হুহু বাবা আমরা ৫৫০ টাকা দিয়ে বিদেশী মাছের টিন কিনে তোমাকে দাওয়াত খাইয়েছি!

বাবারা ফুটানী মারার আগে অন্ততঃ জেনে নে, আসলেই এইসব ফুটানীর জিনিস কিনা?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত এর ছবি

@ হাসান ভাই
নব্য এলিট কারা ? আসলে এলিট ব্যাপারটা কি ?
আর "ফুটানীর জিনিস" ব্যাপারটা কি আপেক্ষিক নয় ? ধরেন এখানে বিএমডাব্লিউ গাড়িকে অনেকে "ফুটানির জিনিস" হিসাবে ট্যাগিং করতে পারে, টয়োটাকে না (কিছু হাই এন্ডের এসইউভি বাদে যেমন ল্যান্ড ক্রুসার)। বাংলাদেশে কিন্তু টয়োটার কিছু সাধারণ সিডান কিনেই লোকজন ব্যাপক "ফুটানী" মারে।তখন যদি আমি আমেরিকা আর বাংলাদেশের তুলনা করা শুরু করি, সেটা মনে হয় ঠিক হবে না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

@অমিত, এলিটের তত্বীয় সংজ্ঞায় না গিয়েই বলি-বাংলাদেশের একটা শ্রেনীর হাতে যেকোন ভাবে টাকা এসেছে কিন্তু টাকার সাথেসাথে পার্শ্ব হিসেবে যে ভোগ,প্রদর্শন মানসিকতা এসেছে সেটাকে নিউট্রিলাইজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, সংস্কৃতিটা গড়ে উঠেনি। ফলে দেখবেন যে নতুন গাড়ী কিনে সে পাড়ার ভেতর অকারনে হর্ণ বাজায়- যাদের গাড়ি নেই তাদের দেখানোর জন্য।
এখানে গাড়ী কেনাটা দোষ নয়, দোষ হচ্ছে প্রদর্শনপ্রিয়তার বাড়াবাড়ি।

দেশে দেখেছি কেএফসি, পিজ্জাহাট এসবকেই বেশ স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে গন্য করা হয় অথচ আদতে এগুলো যে তেমন কিছু নয় সেটা তো আপনি ও জানেন। সে কারনেই উপরের মন্তব্য। এই আর কি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নাশতারান এর ছবি

এই কিছুক্ষণ আগেই আপনার গতরাতের মন্তব্যের কথা মনে হচ্ছিলো। আমরা স্কুলের বন্ধুরা মিলে আজগুবি কিছু করার কথা ভাবছিলাম। আমি বললাম শিশুপার্কে যাওয়ার কথা। অনেকদিন যাই না। সেখানে গিয়ে রাইডে চড়ে, বেলুন কিনে, পচা পচা আচার খেয়ে মজা করা যায়। যেমনটা ছোটবেলায় করতাম। বাধ সাধল আমাদের এক নব্য এলিট। শিশুপার্কে নাকি সব "গার্মেন্টস লেভেলের মানুষ" গিজগিজ করে। সে বসুন্ধরা সিটি যাবে। বিএফসি চিকেন খাবে। কাঁচা পয়সার ফুটানি দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেলো রেগে টং

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

মন খুলে পাঁচ দাগালাম।
আপনার উপলব্ধি ভালো, এই উপলব্ধির স্থায়িত্বও ভালো। কিন্তু এই উপলব্ধির পুনরোৎপাদনে আবারও পিৎজা হাটে ইফতারির ডাকে যাওয়া, ভালো কথা না।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

পিজা হাটে ইফতার মানে এক ধরণের নগ্ন বিলাস। তাদের মধ্যে অনেকেই এবারও পিজা হাটে ইফতার করে এসেছেন

২০০৮ এর রোজাতে জন পাচেঁক প্রাক্তণ কলেজ বন্ধু নিয়ে পিজা হাটে গিয়ে ছিলাম সেই লোভনীয় ৫০০ টাকায় অসীম সংখ্যক পিজা খাওয়ার এক অমানুষিক উৎসবে।রোজা রেখে ছিলাম দেখে প্রথমে এই মানবিকতার বোধটি খুব কাজে লাগেনি। কিন্তু পরে মন খারাপ ছিল অনেক ক্ষণ। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন, আমার সেই বন্ধুদের কিন্তু কোন ভাবান্তর ছিলনা। চরম বিস্ময়কর হলো আমি সহ আর তিনজনের চাকুরী ছিল সে সময়, তাই মধ্যবিত্ত বাবার পয়সা এরকম নষ্ট করিনি দেখে খারাপ লাগাটার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। আর বেকার বন্ধুরা দেখলাম গোগ্রাসে পিজা খেয়ে চললো।:o

আর বিবিএ কমপ্লিট করা এক বন্ধু আবার সবাইকে হিসেব করে উপাত্ত দিচ্ছিল ঠিক কয় স্লাইস খেলে পয়সা উসুল হবো। অ্যাঁ অ্যাঁ
এরকম ছেলেমানুষী কিছু ভুল আসলেই মাঝে মাঝে পীড়া দেয় মন খারাপ(

শুভকামনা
সন্ধি
উত্তর মেরু

নাশতারান এর ছবি

আমরা তিন বন্ধু গিয়েছিলাম। তাও আয়োজন করে সীমাহীন পিজা গলঃধকরণ করতে নয়। আমার সাথের দুজন রোজা ছিলো আর ইফতারির শেষ মুহূর্তে আর কোথাও জায়গা পাওয়া যায় নি। আমি সাড়ে তিন স্লাইস, অন্য দুজন তিন আর চার স্লাইস করে খেতে পেরেছিলো। আমরা আনলিমিটেড অফারে মাথাপিছু যে পরিমাণ পয়সা ঢেলেছি, তিনজনে মিলে একটা আস্ত পিজার অর্ডার দিলে এর চেয়ে ঢের কম খরচ পড়ত।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তো জানতাম মানুষ পিজা হাটে জায়গা না পেয়ে অন্য কোথাও ইফতার সেরে নেয়।
ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগেই পিজা হাটের সদর দরজা জনমনিষ্যির জন্য বন্ধ হয়ে যায়

নাশতারান এর ছবি

আমরা যখন গুলশানে তখন ইফতারিতে আধা ঘন্টা বাকি। কোনো রেস্টুরেন্টেই জায়গা খালি নেই। এমনকি স্টারেও না। পিজ্জা হাটে ঠেসেঠুসে অন্যদের সাথে শেয়ারে একটা টেবিল পাওয়া গেলো বলেই বসে পড়লাম।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আল্লার নাম নিয়া রাস্তায় বইসা পড়তেন!

একবার ঈদের দিন রাস্তায় বইসা দোকান থাইকা কেনা মিস্টি-মুষ্টি খাইছিলাম। আশা আছিলো সামনের বাড়ির জানালা খুইলা কোনো রূপসী ললনা ডাইকা ঘরে নিয়া চাইরটা ভাত-মাংস খাওয়াইবো। কিন্তু পাপিষ্ঠা ললনারা আমাদের মনের সেই দাবী-আরজি কোনোটাই শুনে নাই। এইটা অবশ্য বছর দশেক আগের ঘটনা।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাকে তাইলে ভাগ্যবানই বলতে হবে।
এবার বন্ধুরা মিলে স্টারে গেলাম ইফতার করতে, গিয়ে দেখি জায়গা নাই। কী করা?
আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করলো স্থানীয় এক ললনা। সেই রূপসী তার ঘরে আমাদের ডাইকা নিয়া নান আর কাবাব খাওয়াইলো।
বাই দ্যা ওয়ে, নান আর কাবাব কিন্তু নিজেদের পয়সায় কিনা। আর স্থানীয় ললনা আমাদের ব্যাচমেট।

বোহেমিয়ান এর ছবি

চলুক
আপনার বোধের প্রতি শ্রদ্ধা
_________________________________________

_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!

নিবিড় এর ছবি

দেখতে দেখতে আরেক ঈদ চলে গেল তবে মনে হয় গত রমজানে যা লিখেছিলেন ঘটনা তার থেকে তেমন ঊনিশ বিশ হয়নি।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

গত রমজানে যা লিখেছিলেন ঘটনা তার থেকে তেমন ঊনিশ বিশ হয়নি।

স্যাড বাট ট্রু

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ভাবনায় সংহতি।

আমি ভাই বরাবরই বাঙালী খাবারের ভক্ত। বিদেশে গেলে আমার খাবার জোটাতে বেশ অসুবিধা হয়। আর চাইনিজ-মোঘলাই-ইটালিয়ান-কেএফসি-এইসব আমার একটুও ভালো লাগেনা। ঠেকায় না পড়লে কখোনোই খাইনা। আমার স্ট্যাটাসে কাজ নেই, ভুঁড়ি ভাসিয়ে দিয়ে ডাল, আলুভর্তা, সব্জী আর দু'টুকরো গরুর গোশত দিয়ে খেতে পেলেই চলবে, স্ট্যাটাস লাগবে না। যারা স্ট্যাটাস দৈন্যতায় ভূগছে, তাদের প্রয়োজন নিত্য নিত্য স্ট্যাটাস সিম্বল খুঁজে বের করা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

আশফাক আহমেদ এর ছবি

স্ট্যাটাস লাগবে না। যারা স্ট্যাটাস দৈন্যতায় ভূগছে, তাদের প্রয়োজন নিত্য নিত্য স্ট্যাটাস সিম্বল খুঁজে বের করা।

চলুক

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

পাঠক এর ছবি

আমাদের ভোগবাদী মানসিকতার কথা কি আর বলবো.........রোজা আসলেই শুরু হয় পাগলের মতো শপিং.......ছোট বাচ্চাদের কথা ঠিক আছে..........কিন্তু ধাড়ী ধাড়ী মানুষগুলো যখন হাজার হাজার টাকা দিয়ে পাঞ্জাবী বা শাড়ী কিনে তখন আমার স্রেফ ঘৃণা হয়..মানুষগুলোকে পোকার মতো লাগে.......কুৎসিত...........বড্ড কুৎসীত লাগে........

নীরা

আশফাক আহমেদ এর ছবি

ছোট বাচ্চাদের কথা ঠিক আছে..........কিন্তু ধাড়ী ধাড়ী মানুষগুলো যখন হাজার হাজার টাকা দিয়ে পাঞ্জাবী বা শাড়ী কিনে তখন আমার স্রেফ ঘৃণা হয়..মানুষগুলোকে পোকার মতো লাগে.......কুৎসিত...........বড্ড কুৎসীত লাগে........

মন্তব্যে সহমত

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তারেক অণু এর ছবি

সহমত

আশফাক আহমেদ এর ছবি

ধন্যবাদ, অণুদা হাসি

-------------------------------------------------

ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।