প্রশান্তি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ০২/১০/২০১০ - ৪:৪৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রশান্তি
- সা’দ মাহবুব
।।১।।
তুমি বেরিয়ে পড়েছ বাড়ির বাইরে। ঝকঝকে তকতকে কালো পিচঢালা পথ ধরে ছুটেছ সৌন্দর্যের খোঁজে। সেই পথ মিশেছে পাহাড়ী নদীর বুকে। Trekking, paragliding, rafting শেষে তুমি পড়েছ স্বচ্ছ নীল সাগরের মাঝে। Scuba diving, surfing শেষে উঠেছ পরিষ্কার, শুভ্র বালির সৈকতে। স্বল্প বসনা ললনার চোখে চোখ রেখে তুমি হেসেছ আহ্বানের হাসি। রাতে তার সাথে গিয়েছ bar, pub আর club-এ। vodka, rum আর barboun এর জগতে। উন্মাদনা শেষে রাত্রি যাপন!!
কিন্তু আমি জানি, পরদিন সকালে তুমি অনুভব করেছ কিসের যেন অনুপস্থিতি। যাক গে, তুমি কি ভেবে দেখেছ কোথায় পেয়েছ তুমি তোমার সৌন্দর্যবোধ?
তুমি জন্মেছ এমন এক দেশে-যেখানে তুমি মুগ্ধ হতে বৃষ্টির ছটায় সিক্ত ঘাসের ডগায় সূর্যের প্রতিফলনে, তোমার চোখ থমকে যেত বিন্দু হয়ে শিশির জমা মাকড়সার জালে, কচুরিপানায় ছেয়ে যাওয়া ময়লা পুকুরের উপর ঝুলে থাকা কুয়াশার চাদরে, তুমি স্বস্তি পেতে গ্রীষ্মের দাবাদহ শেষে প্রথম বর্ষায় অকারণে ভিজে, তুমি adventure খুঁজে পেতে চিকন সিক্ত ধানক্ষেতের আল ধরে পথ চলতে, মাত্র একটি বাঁশের তৈরী সেতুর উপর দিয়ে নদী পার হতে, তুমি শিহরিত হতে প্রিয়তমার মৃদু স্পর্শে-আনত চোখের লাজুক মুখের চুম্বনে।
তুমি সৌন্দর্য খুঁজে পেতে তুচ্ছ ঘটনায়, সাধারণ দৃশ্যে-তাই তো তোমার চোখ চারিদিকে খুঁজে পায় সৌন্দর্য।
।।২।।
আমি জানি তুমি ছুটেছ স্বচ্ছল, সুন্দর, নিরাপদ ভবিষ্যতের আশায়। আমি জানি তুমি smart, তুমি আপন করে নিতে পার বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষকে, হাসি তামাশায় ভরিয়ে তুলতে পার আড্ডা, তোমাকে ছাড়া সব party যেন অপূর্ণ। তোমার মেধার আকুণ্ঠ প্রশংসা তোমার university র বিদেশী professor দের মুখে, তোমার যোগ্যতার বাহবা তোমার অফিসে। কিন্তু সবকিছু পেয়েও, সবার সাথে মিশেও তোমার চামড়ার রঙ এখনো সাদা করতে পারনি, হতে পারনি Australian বা American বা Canadian অথবা British।
তাইতো প্রতিরাতে তুমি অনুভব করেছ কিসের যেন অনুপস্থিতি। যাক গে, তুমি কি ভেবে দেখেছ কোথায় পেয়েছ তুমি এই যোগ্যতাগুলো?
তুমি জন্মেছ এমন এক দেশে-যেখানে আড্ডা হল দিনের চাহিদা, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে মেশার আকুতি হল মনের দাবি, ব্যস্ত দিন শেষে পরিবারের কাছে নিজেকে সমর্পণ। প্রচন্ড রোদে পানিহীন দিন, তীব্র গরমে load shedding, traffic jam এ থমকে যাওয়া ব্যস্ত, অস্বচ্ছল আর অনিরাপদ দিন শেষে ছিল কেমন যেন এক স্বস্তি! বর্ণনাহীন প্রশান্তি!!
।।৩।।
আমি জানি, তোমরা অনেকেই বিশ্বাস করনি আমার কথা। বিশ্বাস তো উপলব্ধির ব্যাপার। সেই উপলব্ধি অর্জন করতে আজ বেরিয়ে পড় দূর দুরান্তরে। বহু পথ ঘুরে যখন বিশ্বাস করতে পারবে তখন ফিরে যেও জন্মভুমির কাছে, গালাগালি কর আমাদের সমাজ ব্যাবস্থাকে, ধিক্কার দিও আমাদের অনৈতিকতাকে, চাইলে তুলনাও করতে পার তোমার ছেড়ে আসা স্বচ্ছল জীবনের সাথে। শুধু সবশেষে দুর্ভাগা দেশটিকে এক ইঞ্ছি এগিয়ে নেওয়ার জন্যে রেখ সামান্য একটু অবদান।
আমি বলে রাখি-অসংখ্য TV channel এর আহ্লাদ করে বাংলা ইংরেজী মেশানো কোনো VJ তোমার সাক্ষাতকার নেবেনা, শত শত নিরপেক্ষ(!) সংবাদপত্রের ক্ষুদ্রতম কলামেও আসবেনা তোমার নাম, FM radio র কোনো RJ-র মুখে ফুটবেনা তোমার প্রশংসা। শুধু রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময়ে তোমার ঠোটে ফুটবে এক চিলতে হাসি আর মৃত্যুর সময়ে স্বস্তি।
আর?
……বাংলাদেশের কোনো এক শহরতলীর বা শহরের অথবা গ্রামের একটি বৃক্ষ-ধুলোয় ভরা সবুজ পাতা ধূসর-শ্যাওলা ভরা তার ডালপালা-স্যাতস্যাতে মাটি-আগাছা ভরা একখন্ড উঁচু জমি-বিবর্ণ বাঁশের বেড়া আর তোমার নামফলক। নাম, জন্ম আর মৃত্যু তারিখ শেষে, ছায়াঘেরা সেই এপিটাফে, অনাবৃত অক্ষরে যে শব্দটি লেখা থাকবে তা হল---“প্রশান্তি”
[২০১৫/১৬ সালে “দূরত্ব” নামে একটা উপন্যাস বের হতে পারে, সেখান থেকে নেওয়া]


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মনে হচ্ছে প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উপন্যাস। দেখি, আরো দুই চার পর্ব পড়ি, তার পর মন্তব্য করি। ভাই, আসল উপন্যাসেও কি এরকম ইংরেজী শব্দের ব্যবহার থাকবে? একটু কেমন যেন লাগলো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম ভাই, আমি প্রবাসে থাকি, দেশের কথা অনেক মনে হয়রে ভাই, তাই লিখছিলাম, আর নতুন কন পর্ব বের হবেনা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ! কি প্রশান্তি! আমার মনের সাথে মিল পেলাম আপনার ভাবনায়।
ভালো লাগলো।

সাবরিনা সুলতানা

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ সাবরিনা...ভালো বললে খুশী না হবার কোনো কারণ দেখিনা দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

চৈতন্যে শিস দিয়ে আলোড়ন তোলা হৃদকলমের টানে আঁকা একটি লেখা পড়ার সৌভাগ্য হলো! আপনাকে অভিনন্দন!
রোমেল চৌধুরী

অতিথি লেখক এর ছবি

লিখাটা পোস্ট করে যত না খুশী লেগেছিল, আপনার মন্তব্য পরে তার চাইতে বেশী খুশী লাগলো রোমেল ভাই, ধন্যবাদ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বিশাল কঠিন লাগলো। কঠিন মানে, কঠিন। মাথায় প্যাচ লাগানো। পাটিগণিতের মতোন। কিছুই বুঝার উপায় নাই। আমি আবার অংকে খারাপ! মন খারাপ



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইরে, আমিতো কঠিন ভাষায় লিখতে পারিনা, ওই যোগ্যতা আমার নাই

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌গল্পটা বুঝিনি, কিন্তু ভঙ্গীটা ভালো লেগেছে। ইংরেজী শব্দগুলো বর্জন করার চেষ্টা করলে আরো ভালো হবে।

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা কোনো গল্প না ভাইয়া, মনের কিছু এলোমেলো ভাবনা বলতে পারেন। ইংরেজী শব্দ বর্জনের কথা অনেকেই বলেছেন। কিন্তু ইংরেজী শব্দ বাংলায় লিখতে কেমন যেন লাগে মন খারাপ

সাদ মাহবুব [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ যারা মন্তব্য করেছেন। হ্যাঁ ভাই, আমি প্রবাসেই থাকি, দেশের কথা অনেক মনে হয় বলে লিখাটা লিখেছিলাম। ইংরেজী তো আমরা সবাই অল্প বেশী ব্যাবহার করি। আর ইংরেজী শব্দ ইংরেজীতেই লেখা টা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়

দিগন্ত বাহার [অতিথি] এর ছবি

সাদ মাহবুব অতিথি লিখেছেন:
কিন্তু আমি জানি, পরদিন সকালে তুমি অনুভব করেছ কিসের যেন অনুপস্থিতি

আমার কাছে অসাধারন ঠেকেছে...

সাদ মাহবুব অতিথি লিখেছেন:
বাংলাদেশের কোনো এক শহরতলীর বা শহরের অথবা গ্রামের একটি বৃক্ষ-ধুলোয় ভরা সবুজ পাতা ধূসর-শ্যাওলা ভরা তার ডালপালা-স্যাতস্যাতে মাটি-আগাছা ভরা একখন্ড উঁচু জমি-বিবর্ণ বাঁশের বেড়া আর তোমার নামফলক। নাম, জন্ম আর মৃত্যু তারিখ শেষে, ছায়াঘেরা সেই এপিটাফে, অনাবৃত অক্ষরে যে শব্দটি লেখা থাকবে তা হল---“প্রশান্তি”

এভাবে ইংরেজী শব্দ ব্যাবহারে সমস্যা দেখি না...চালিয়ে যাও সাদ...

সাদ মাহবুব [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ দিগন্ত, তোমার ভালো লাগছে শুইনা খুবই ভালো লাগলো। তোমার compliment পাইলে ভালো লাগে দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।