ছুটির দিন

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১১/১১/২০১০ - ১১:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রবিঠাকুরের "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে" গানটা শুনলেই আমার মধ্যে ছুটির আমেজ চলে আসে, জানিনা গানটার মধ্যে কি জাদু আছে! ছোটবেলায় পড়েছি, পরিশ্রম না করলে নাকি বিশ্রামের আনন্দ পাওয়া যায় না, মাঝে মাঝে অবশ্য এটাকে আমার মিথ্যা মনে হয় আবার মাঝে মাঝে মনে হয় চরম সত্যি। জানিনা কোনটা ঠিক!

স্কুলে থাকতে আমার সবচেয়ে প্রিয় দিন ছিল কোনটা বলতে পারবেন? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, শুক্রবার। কোন স্কুল নেই, পড়ালেখা নেই, খালি মাস্তি আর মাস্তি। শুক্রবার আসলেই মনটা খুশিতে নাচতো। সকালে উঠে নাস্তা করেই বন্ধুর বাসায় আড্ডা দিতে যেতাম, ফিরতাম সেই বারোটায়। গোসল করে জুম্মার নামাযে যেতাম, সেখানেও সেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা। দুপুরে টিভিতে শুরু হতো বাংলা সিনেমা। আমি আবার বাংলা সিনেমার ভীষণ পোকা ছিলাম। বিটিভিতে সেসময় দেখানো অনেক বাংলা সিনেমাই আমি দেখেছিলাম। বিকালে আবার যেতাম বাইরে খেলতে অথবা আড্ডা দিতে। তবে নাইনে উঠে শুক্রবারের ছুটিটা সেভাবে আর পাইনি। কোচিং থাকতো শুক্রবার বিকালে, যদিও কোচিং-এও ভালৈ আড্ডা জমতো। চোখ টিপি

কলেজে উঠে ছুটির দিন পুরৈ মাটি হয়ে যায় শুক্রবার কোচিং আর শনিবার প্র্যাক্টিকাল ক্লাসের কারণে। কলেজ লাইফটা আমার বড়ই সাদামাটা কেটেছে। মন খারাপ এটা নিয়ে মাঝে মাঝে আফসোসই হয়।

ইউনিভার্সিটিতে উঠে আবার ছুটির দিনের মজা পাওয়া শুরু করলাম। দুদিন করে ছুটি- বৃহস্পতি আর শুক্রবার। বৃহস্পতিবারতো বেশিরভাগ সময় সারাদিন মুভি দেখেই কাটিয়ে দিতাম। তবে আমি যেটা বেশি করেছি সেটা হচ্ছে বুধবার রাতেই বাসায় চলে যেতাম। হলে থাকায় সারা সপ্তাহে যাওয়া হতো না, তাই বুধবার আসলেই বাসায় যাওয়ার জন্য মনটা আকুলিবিকুলি করা শুরু করতো। হলে পাঁচদিন অখাদ্য খেয়ে খেয়ে বাসায় মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য বুধবার থেকেই যেন ক্ষুধা লেগে যেত। কোনমতে ক্লাস শেষ করেই বাসায় দৌড় লাগাতাম। বাসায় গিয়ে শুধুই খাওয়া আর টিভি দেখা। আমি বাসায় গেলেই আমার ছোটভাই বুঝতো টিভির রিমোটটি ছেড়ে দিতে হবে কেননা রিমোট হাতে না থাকলে আমি আবার টিভি দেখতে পারি না। দেঁতো হাসি যদিও প্রতিবারই দু-একটা বই নিয়ে যেতাম পড়বো বলে, সেটা যেভাবে যেতো সেভাবেই ফেরত আসতো, তবুও নিতাম। বাসায় গেলে এলাকার বন্ধুদের সাথেও আড্ডা দিতাম প্রচুর। শুক্রবার রাতে হলে ফিরে আসার সময় প্রতিবারই মনটা খারাপ হয়ে যেতো সেই বিরক্তিকর ক্লাস, সেশনাল আর হলের বিশ্রী খাবারের কথা চিন্তা করে। এই রুটিন পুরো ইউনিভার্সিটি লাইফ জুড়েই ছিল যদিনা খুব ইম্পর্টেন্ট কোন ক্লাসটেস্ট অথবা ঝামেলার সেশনাল না থাকতো। তবে বেরসিক স্যাররা প্রায়ই মিডটার্ম পরিক্ষা দিতো শনিবারে, সেসপ্তাহে আর বাসায় যাওয়া হতো না। মন খারাপ

আমি ছুটির দিনের আসল মজা পেয়েছি এই বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে। এখানেতো কাজ থাক আর না থাক ইউনিভার্সিটিতে যেতেই হয় সপ্তাহের পাঁচদিন, ছুটির দিনদুটো তাই মধুর মত মনে হয়। উইকএন্ডে এজন্য কোন কাজই করিনা যত কাজই থাকুক না কেন। অবশ্য যদি সেরকম কোন ডেডলাইন/পরীক্ষা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা, কিন্তু সেটা ব্যাতিক্রম আর আপনারাতো জানেনই "ব্যাতিক্রম উদাহরণ নয়।" হাসি
এখানে শুক্রবার আসলেই মনে হয়, আহ! সামনের দুইদিন কোন কাজ নেই (সপ্তাহের রান্না ছাড়া হাসি ), কি মজা। আমি শুক্রবার রাত থেকেই মুভি দেখা শুরু করে দেই যা শেষ হয় রবিবার রাতে গিয়ে। মাঝে যদি কোন দাওয়াত থাকে তাহলেতো ভালৈ, খাওয়াদাওয়াটা চমৎকার হয়। আর দাওয়াত না থাকলেও কুচপরোয়া নেহি, নিজের যা রান্না সেটা দিয়েই ভুরিভোজ চলে। দেঁতো হাসি
তবে ছুটির মজা সবচেয়ে ভালো জমে যদি সেটা লঅঅঅং উইকএন্ড হয়। সেটার সাথে অন্য সপ্তাহের ছুটির তুলনা চলে না। হাসি
ছুটির দিনের আরেকটি মজা হচ্ছে ইচ্ছেমত ঘুমোতে পারার মজা। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না হওয়াটা আমার কাছে ছুটির দিনের ইউনিক গিফট। আমার প্রায়ই উঠতে অনেক বেলা হয়, ব্রান্চ করি একবারে, এরপরে শুরু হয় মুভি দেখা পর্ব।

আজ ছুটির দিন নিয়ে এত প্যাচাল পারার কারণ হল, কাল আমার এখানে সরকারী ছুটির দিন, মনটা বেশ ভালো। তাই অনেকদিন পরে কিছু একটা লিখে ফেললাম সাহস করে। কালকে কয়েকটি মুভি দেখতে হবে সেটার একটি লিস্ট মনে মনে তৈরী করেছি, দেখা যাক কয়টা শেষ পর্যন্ত দেখতে পারি।

সবাইকে আগাম ছুটির দিনের শুভেচ্ছা। টাটা বাই বাই। দেঁতো হাসি

পাগল মন


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ট্যাগিং দুইবার করে হয়ে গেল কেন বুঝলাম না? অ্যাঁ

পাগল মন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্কুলে থাকতে সবচেয়ে বোরিং ছিলো শুক্রবার। অন্যদিনগুলোই কতো সুন্দর। সকালে বাজার থেকে পয়সা মারা, সাড়ে এগারোটার দিকে স্কুলের সামনে পজিসন নেওয়া, তখন মেয়েদের ছুটি হতো [এই রে, ইভটিজার না কিন্তু আমি], বন্ধুদের সঙ্গে বাঁদরামি, স্কুলে না গেলে এতো বন্ধুর সাথে বাঁদরামো হবে কীভাবে?
কর্মজীবনেও শুক্রবার কোনো আলাদা মাহাত্ম নেই আমার। যে কয়টা চাকরী করছি, শুক্র শনি বলতে কিছু নাই, কাজ মানে কাজ, কাজ নাই মানে অবসর।
এখন তো শুক্রবার এলেই ভয় লাগে উল্টো। সপ্তাহের অন্য দিনগুলো সুন্দর ঘরে বসে কাটাতে পারি, কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে রাত অব্দি ব্যস্ততার সীমা নেই। এই তো শুক্রবার... সকালে কোনটা ছেড়ে কোনটায় যাবো তা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সন্ধ্যাতেও একই অবস্থা!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার স্কুলের বন্ধু আর বাসার বন্ধু প্রায় একই, তাই স্কুলে না গেলেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে কোন সমস্যা হতো না।
আর জবতো বেশিদিন করিনি, সেখানে অবশ্য শনিবারও অফিসে যেতে হতো। তবে শুক্রবারটা ভালই যেতো। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, টিভি দেখা আর ডেটিং। চোখ টিপি

পাগল মন

তিথীডোর এর ছবি

স্কুলে থাকতে সবচেয়ে বোরিং দিন ছিলো শুক্রবার।
বাবা-মা দু'জনেই বাসায় থাকতেন ঐ দিন, ফাঁকিবাজি কিংবা দুষ্টুমিতে বিশেষ সুবিধা হতো না তাই.. চোখ টিপি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।